নীল হতে নীলান্তে পর্ব-৭+৮

0
431

#নীল হতে নীলান্তে
#লেখিকাঃ তামান্না
সপ্তম পর্ব

অর্নিতা- খুব ভালো অভিনয় করতে পারেন আপনি!

অরুপ- সেতো পারি, জানেন অভিনয়ের জন‍্য আমার মামা আমাকে নিতে চেয়েছিল!

অর্নিতা- তাই নাকি?

অরুপ- কনফিডেন্সের সাথে জ্বী! আব্বুর জন‍্য যেতে পারিনি!

অর্নিতা- আপনার মামা কি করতেন?

অরুপ – চলচ্চিত্র পরিচালক ছিলেন! মামা এখনো আমাকে বলে ভাগনে ও সব তোমার ধারা হবে না আমার সঙ্গে এসো! নায়ক বানাবো তোমাকে! তুমি হবে নায়ক আমি হবো তোমার মাথার উপর ছায়া দুলাভাইয়ের কথায় চলবে নাকি? সে এসব বুঝে নাকি!

অর্নিতা- ওহ,খুব ভালো বলেছেন, আচ্ছা আপনারা সবাই তাহলে আসুন! কাল সন্ধ‍্যায় আমাদের মিশন শুরু!

অরুপ- আপনাকে পৌছে দি….

অর্নিতা- আরে লাগবে না! আমি গাড়ি নিয়ে এসেছি তা দিয়ে যাবো, কাল যাই নি হয়তো ড্রাইভার বলেনি তাই বাবা শুনেনি। আজ আবার আপনার সাথে গেলে চিন্তা করবে।

অরুপ – আচ্ছা!

অর্নিতা তার গাড়ি করে বাসায় চলেগেল। অরুপ ফরহাদ, জামিলরা বাইরে কিছুক্ষণ কাটিয়ে তারা ও চলেগেল বাসায়।

পরেরদিন,,,,,

অরুপ, অর্নিতা, জামিল ফরহাদ সবাই এসেছে একসাথে। স্টেশন এ তবে অরুপের সাজ ওদের থেকে আলাদা। অরুপ আগের সাজে থাকলেও তারা সবাই একই রঙ্গের পোশাক পরে এসেছে।

অর্নিতা জিন্স আর টিশার্ট পরে মাথায় একটা ক‍্যাপ পরেছে। তাকে দেখে বুঝার উপায় নেই সে মেয়ে বা ছেলে। কাধ সমান চুল আর লম্বাটে শরীরে তার পোশাকটিও ফুটে উঠেছে।
অর্নিতারা সবাই গাড়িতে বসে আছে।

অরুপ গিয়েছে রুবেলের সঙ্গে দেখা করতে।
অরুপ- আসলামুআলাইকুম ভাইসাব!

রুবেল – অলাইকুম আসল্লাম! আইছেন যোহোন হুনেন!
এই নিয়া কারো কাছে কইতে পারবেন না। নাইলে জায়াগার উপর চান্দে উঠাই দিবো!

অরুপ- আমি কিছু করমু না ভাই!

রুবেল – আইচ্ছা চলেন যাই!

রুবেল, অরুপ মিলে স্টেশন থেকে বেরিয়ে বাসে আসলো। অরুপকে ফলো করে অর্নিতা ও তার সঙ্গিদের নিয়ে একত্রে আসছে।

রুবেল – ভাই ওহোন আমাগোরে গুলিস্তান যাওন লাগবো!

অরুপ- গুলিস্তান? কিয়ের লাইগ্গা?

রুবেল – আরে মিয়া হেনেই তো আসল জিনিস!

অরুপ ভাবলো ঝামেলা করে লাভ নেই তাই বলে দিল – হো চলেন।

কিছুক্ষণের মধ‍্যেই রুবেল আর অরুপ মিলে গুলিস্তানে চলে এসেছে,এখানকার একটি সরু গলি দিয়ে তারা যাচ্ছে। অরুপের কাছে যায়গায় টা কেমন যেন! গিন্জি পরিবেশ!
একদম নতুন জায়গা তার জন‍্য! ঢাকা শহরে থাকলেও এমন পরিবেশ এ কমই আসা হয়েছে তার।

অর্নিতা অরুপের পিছু নিয়ে অনেকদূর চলে এসেছে।
অর্নিতা ফোন করল অরুপকে, অরুপ রুবেল এর দিকে তাকিয়ে ফোন ধরলো। রুবেল তার দিকে ফিরে চেয়ে আছে।

অরুপ ফোন ধরেই অর্নিতার আগেই বলে উঠলো-

হো বউ কও কি কইবা?

অর্নিতা- আপনি যায়গায় টা ভালো করে চিনে রাখুন।

অরুপ- বউ আমি তো গুলিস্তানের এই গলিতে আইছি!

অর্নিতা- আচ্ছা শুনুন ও যেন না বুঝতে পারে!

অরুপ- হো বউ বুঝছি! এত বুদ্ধি দেওন লাগবো না!

রুবেল- ভাবি ফোন করছে?

অরুপ- হো! আমারে বুদ্ধি দেয় ঢাহা শহরে কেমনে চলতে হইবো।

অপরপাশ থেকে, জামিল, ফরহাদ হাসছে।

অর্নিতা কঠিন মুখ করে বলে উঠলো – বি সিরিয়াস!
এটা কোন হাস‍্যকর মুহুর্ত নয় যে হেসে যাবেন!

Follow me! Watch the gps system! Where they going now?
ফরহাদ হাসি থামিয়ে চলতে লাগলো।
____________________________________

নিরিবিলি যায়গায়! কোন মানুষই নেই, একটি কারখানার ভিতর ডুকলো তারা। এটি মূলত একটি পরিত‍্যক্ত ফ‍্যাক্টরী!
গার্মেন্টস ফ‍্যাক্টরীহিসেবে কিছুই নেই এখানে। বাহিরে সাইনবোর্ড অনুযায়ী ভিতরে তেমন কোন কিছুই নেই।
পুরোনো কিছু সেলাই মেশিন আছে তাও জায়গার তুলনায় অনেক কম নেহাতই তিন চারটে হবে।
যায়গাটা এই অবৈধ ব‍্যাবসাহীদের জন‍্য ঠিকই আছে।
অরুপ ভালো করে দেখছে। দেখতে দেখতে রুবেলকে প্রশ্ন করে উঠলো-
অরুপ- রুবেল ভাই মহাজন কই?

রুবেল- অপেক্ষা করেন! আসতেছে! এইতো চইলা আইবো।

অরুপ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে লাগল। আজ এই মহেন্দ্রক্ষণ সে ছাড়বে না! একটা কেইস জিতে যাওয়া মানি তার জন‍্য স্পেশাল একটা মোমেন্ট!

মহাজন আসলেন অন‍্যান‍্যদের সঙ্গে কথা বলেই ,
রুবেল এর সঙ্গে অরুপকে দেখে চমকে যান।
কিরে রুবেল এইডা কেডা?

রুবেল- ভাই এ কালকে কইতাছিল আমার লগে আপনার সাথে দেখা করার লাইগা নিয়া আইছি।

মহাজন রুবেলকে ডেকে নিয়ে বলল- তুই ওরে সব কইছোছ?

রুবেল- হো!

মহাজন – আরে শালা করছে কি! হারামজাদা কারে না কারে কইতি গেলি।

রুবেল- আরে এইডা গিয়া বাইরে কিছুই কইবো না!
মহাজন রুবেল কে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়ে অরুপের কাছে আসলেন,
কি চাই তোর?

অরুপ- মামা আমারে ভালোমানের কিছু গান্জা দেন!

মহাজন – গান্জা আবার ভালোমানের হয়? এই প্রথম হুনলাম!

অরুপ- এই যেমন ধরেন বিদেশি! বড় বড় বোতল!
খামু মামা!

মহাজন- তোর চেহারা দেখছোত? ওইগুলা কিনা তো দূর ধরতে পারবি নাকি?

অরুপ- মামা আমার শান্তি নাই ঘুম নাই নিদ্রা নাই একটা দেন!

মহাজন – দূর হও! এই রুবেল কারে ধইরা লইয়া আইলি। শুন তুই এইগুলা কিনতে পারবি না।
পাও ছাড়! ছাড় কইছি!

অরুপ- না ছাড়ুম না!

মহাজন তার পকেট থেকে পিস্তল নিয়ে, অরুপকে গুলি করে বসলো।

অরুপ একটা আর্তচিৎকার দিয়ে লুটিয়ে পরলো মাটিতে।

অরুপের সঙ্গে ব্লুটুথ এর মাধ‍্যমে সংযুক্ত ছিল অর্নিতা ও জামিলরা সবাই।
গুলির শব্দ তারা বাহিরে থেকেই শুনেছে।

অর্নিতা ভয়পেয়ে গেল অরুপের কিছু হলো নাতো?
অরুপ একটু বাড়াবাড়ি বেশিই করতে যায় সব সময়।
অর্নিতা ফরহাদকে উদ্দেশ্য করে- ফরহাদ আপনি আর আপনারা সবাই থাকুন এখানে।
আমি আর জামিল যাচ্ছি ভিতরে।
জামিল আমি যাবার পর আপনি আমার পরে যাবেন।
অর্নিতা সবাইকে এগুলো বলতে বলতে সেই কারখানায় এসে ডুকে পরলো।

অরুপকে গুলি করে হাতে পিস্তল নিয়ে দাড়িয়ে আছে মহাজন। রুবেল ও অন‍্যদের বকে যাচ্ছে।

অরুপ পা ধরে কিছুক্ষণ কাতরাতে কাতরাতে সেখানেই
পরেগেল………

চলবে।

#নীল হতে নীলান্তে
#লেখিকাঃ তামান্না
অষ্টম পর্ব

অরুপকে গুলি করে হাতে পিস্তল নিয়ে দাড়িয়ে আছে মহাজন, রুবেল ও অন‍্যদের বকে যাচ্ছে।

অরুপ পা ধরে কিছুক্ষণ কাতরাতে কাতরাতে সেখানেই
পরেগেল।

অর্নিতা সেই বিল্ডিংয়ে ডুকে পরল। হাতে তার একটি মাত্র পিস্তল। জামিল অর্নিতার কথা শুনল না সে ও ভিতরে প্রবেশ করল। অর্নিতা ভিতরে ডুকেই দেখল সেখানে অরুপ পরে রয়েছে।
আর মহাজন তার লোকদের সাথে বকাবকি করছে।
মহাজন তার পিস্তল নিয়ে অরুপের মাথায় তাক করার আগেই অর্নিতা তার হাতে গুলি করে দিলো।

লোকগুলো অর্নিতাকে এই যায়গায় দেখে ভয় পেয়ে গেলো। অর্নিতার গুলির আওয়াজে ফরহাদ আর তার লোকেরা হুড়মুড়িয়ে ডুকে পরল। অর্নিতা গুলি করে মহাজনের মাথায় তাক করেছে সেই পিস্তল।

অর্নিতা ফরহাদকে উদ্দেশ্য করে – অরুপকে নিয়ে আপনারা হসপিটালে নিয়ে যান।
আর শুনুন এখানে কি হয়েছে তা বাইরে জানানোর প্রয়োজন নেই। আরেকটি কথা অরুপের গুলি লেগেছে এটাও যেন কোথাও প্রচার না হয়!

অফিসার- মহাজনকে উদ্দেশ্যে করে।ম‍্যাডাম একে কি করবো?

অর্নিতা- একে নিয়ে যান কেরানিগঞ্জের জেল হসপিটালে। আর শুনুন সেখানকার ওসিকে বলবেন একে যেনো কড়া পাহারায় রাখা হয়।
মোটকথা ওর সঙ্গী সাথীরা যেন টের না পায়। ও আমাদের হাতে ধরা পরেছে এবং আমাদের হাতে ওদের সবকিছু চলে এসেছে।
ওদের সবাইকে আমাদের স্পেশাল ইনভেস্টিকেশন ব্রান্চে নিয়ে যান।
কোনভাবেই এদের ছাড় দেয়া যাবে না!

মহাজনকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জেল হসপিটালে। আর তার সঙ্গী সাথীদের কে নিয়ে অর্নিতা তাদের অফিসে চলে গিয়েছে।
সবাইকে স্পেশাল ব্রান্চে পাঠিয়ে দিয়ে অর্নিতা ডাইরেক্টর স‍্যারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছে।
প্রতেকটা ব্রান্চ বা প্রত‍্যেকটা সরকারি কর্মক্ষেত্রে ডাইরেক্টর বা মহাপরিচালক থাকে। আর এখানেও একজন মহাপরিচালক থাকে।

ডাইরেক্টর স‍্যার – তোমার কি মনেহয় ওর লোকেরা জানেনি?

অর্নিতা- স‍্যার আমি পুরোপুরি বলতে পারছিনা তবে আমার মনেহয় এই বিষয়টা গোপন করা প্রয়োজন।

ডাইরেক্টর স‍্যার- অর্নিতা প্রত‍্যেকটা পদে শত্রুরা আঘাত করার আগেই বা মাঠে নামার আগে তাদের প্রতিপক্ষের জোড় সম্পর্কে ধারনা করেই নামে। এটা নিশ্চয়ই জানো?
যদি আরেকটু সহজ করে বলি-
তারা আগে থেকেই আমাদের সম্পর্কে সব জানতো!
তাহলে কি মনে হয়? তোমাকে বা তোমার সেই মহাজনকে তারা দ্বিতীয়বার সুযোগ দিবে?
কখনোই তারা তাকে সুযোগ দিবে না।
এই সমস্ত অপরাধের আর অপরাধীদের পিছনে বড় হাত আছে! সেইসব হাত গুলো খুব বড় হয়! আমরা তাদের দেখতে তো পারবো তবে ধরতে বা ছুতে পারবো না।

অর্নিতা- তাহলে আমরা এখন কি করবো স‍্যার?
আমাদের সহকর্মী হাসপাতালের বেডে পরে আছে।
ওরা হাজার হাজার অন‍্যায় করে ওরা পাড় পেয়ে যাবে। আর আমাদের মত সৎ কর্মঠ অফিসাররা ওদের হাতের পুতুল হয়ে থাকবে?

ডাইরেক্টর স‍্যার- শান্ত হও অর্নিতা তোমার বাবার গর্ব তুমি। ঠান্ডা মাথায় সব কাজ করো!
অরুপকে নিয়ে আমি ও অবাক হয়েগেছি।
এটা চিন্তার বিষয়! দুটোই চিন্তার বিষয়! তবে তোমাকে সবকিছু ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে। ওরা এখন ও হয়তো সব কিছু জেনে নিজেদের স্থান পরিবর্তন করে ফেলেছে।

অর্নিতা মাথা নিচু করে -জ্বী স‍্যার,

ডাইরেক্টর স‍্যার- আমাদের এখন অরুপকে দেখে আসা উচিৎ,
______________________________

অরুপকে আইসিউতে রাখা হয়েছে। অপারেশন করে গুলি বের করে ফেলেছে ডাক্তার রা।
অরুপ এখন গভীর নিদ্রায় আচ্ছাদিত।

পাশেই অরুপের মা কান্না করছে। অরুপের বাবার মুখে কোন শব্দ নেই পাথর হয়ে বসে আছেন।
অরুপদের আত্মীয় সজনদের কাউকে জানানো হয়নি অরুপের ব‍্যাপারে।
কারন উপর মহল থেকে নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে অরুপের গুলিবিদ্ধের কথা যেন কেউ না জানে।
তার গুলি বিদ্ধের কথা জানামানি। সাধারণ মানুষদের মধ‍্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা।

অর্নিতা আইসিউর বাইরে অবস্থানরত অরুপের মায়ের কাছে গিয়ে বসল।
সন্তানের এমন অপ্রত‍্যাশিত দুর্ঘটনা হয়তো কোন মাই চান না।

চলবে।