#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব -২১
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা
আদ্রিয়ান মেঘাকে কোলে নিয়ে আদ্রিয়ান এর বেডে শুইয়ে দেই। এরপর মেঘার চুলে কিছুক্ষন হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। প্রায় ১ ঘণ্টা লং শাওয়ার নিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয়। গায়ে ব্ল্যাক কালারের টি-শার্ট আর ব্ল্যাক ট্রাউজার পড়া। এক পলক মেঘার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মোবাইল নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। কাল দাদীমা আসবে লন্ডন থেকে। এতদিন দাদীমা তার ফুফির কাছে ছিলো। দাদীমা কে অবশ্য মেঘার কথা জানানো হয়েছে। খুশিও হয়েছে সেটা জেনে যে তার নাতির জীবনে কারো তো আগমন ঘটলো। যে কিনা আদ্রিয়ান এর কালো রঙের দুনিয়া কে উজ্জ্বল করতে এসেছে। বয়স টা হয়তো একটু কম। তাতে কি আদ্রিয়ান তো আছেই। সব কিছু সামলিয়ে নেবে। এত টুকু ভরসা তার নাতির উপর আছে।
আদ্রিয়ান ফোনে আসাফ কে তার দাদীমার বাংলাদেশে ল্যান্ড করার সময় টা জেনে নিলো। কারণ সেই তার দাদীমা কে রিসিভ করতে যাবে। আর কালকেই আরো কিছু কাজ বাকি আছে। আদ্রিয়ান রুশকে কিছু ইনফরমেশন কালেক্ট করতে বললো। কারণ মেঘার জীবন এখন সংকটে। কারো নজর মেঘার উপরে পড়েছে। প্রথম প্রথম সে বিষয়টা যেভাবে দেখেছে বিষয়টা সেরকম নয়। এখানে অন্য কিছু ঘাপলা আছে। আর সেটা মেঘার থেকেই জানা যাবে। কিন্তু মহারানী ঘুম থেকে উঠলে তো। অবশ্য মেঘা ঘুম থেকে উঠলেই আদ্রিয়ান এর কঠিন রূপের সম্মুখীন হতে হবে টা ভেবেই বাকা হাসলো আদ্রিয়ান। এরপর মেঘার পাশে বসে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে
“জান খুব পাখা গজিয়েছে তোমার তাইনা? তাইতো আমার চোখের আড়াল হয়ে গোটা ১০ ঘণ্টা নাগালের বাইরে ছিলে। এই ১০ ঘণ্টা খুবই যন্ত্রণা দিয়েছো গো। ১০ ঘণ্টা কে ১০ বছর মনে হয়েছে আমার। (বুকের দিকে ইশারা করে) এই যে দেখছো এই জায়গায় খুবই টর্চারিং যন্ত্রণা দিয়েছে। মনে হচ্ছিল তুমি আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেছো। যার নাগাল হয়তো আমি আর পাবো না। মন টা বড্ড অশান্ত হচ্ছিলো। কিন্তু যখন তুমি আমার বুকে মাথা রাখলে তখনই সেই যন্ত্রণা নিমিষেই ভ্যানিশ হয়ে গেলো। দেখলে তো তুমি যেমন আমায় যন্ত্রণা দাও তেমনই সেই যন্ত্রণা কে চোখের পলকেই উধাও করে দাও। কিন্তু আজকে অনেক বেশিই যন্ত্রণা দিয়ে দিয়েছো। এর শাস্তি তো তোমাকে পেতে হবে। উহু সেই শাস্তিতে কোনো শারীরিক যন্ত্রণা থাকবে না। থাকবে মানসিক যন্ত্রণা। যেইভাবে আমি তরপেছি সেই ভাবে তোমাকেও তড়পাতে হবে। খুব কঠিন ভাবেই। কিন্তু তা কেবল আমার সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেই। এতদিন আমার ভালোবাসা দেখেছো। এখন আমার কঠিন সত্তা কে দেখবে জান।”
কথা শেষ করেই মেঘার কপালে আলতো করে চুমু খেলো। এরপর মেঘাকে জড়িয়ে ধরেই লাইট নিবিয়ে ড্রিম লাইট অন করে শুয়ে পড়লো। আজ একটা শান্তির ঘুম দিবে। কারণ তার জান টা তার বুকের মধ্যেই শুয়ে আছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই আদ্রিয়ান ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলো মেঘার সাথে। আর তাদের এই মনোরম দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে থাকলো ধরাধামের এই সুন্দর প্রকৃতি। প্রেম এর সঙ্গী চাঁদ ও তারা।
__________________________
কিভাবে আদ্রিয়ান মায়াবতীর খবর পেলো? আমিতো সব কিছু আমার মত করে দেখছিলাম। ইশ যদি মায়াবতী আমাকে আঘাত না করতো তাহলে হয়তো এতক্ষন মায়াবতী আমার বুকের মধ্যে থাকতো। কিন্তু না এখন তো সে আছে আমার চরম শত্রুর বুকে। না না আদ্রিয়ান এইবারও জিততে পারে না। আমার নারী পাচার এর এতো বড় ক্ষতি করলো আমি কোনো পদক্ষেপ নেই নি। শুধু মাত্র মায়াবতী কাছে ছিলো তাই। কারণ আদ্রিয়ান এর বড়ো দুর্বলতা তো আমার কাছেই ছিল। সেটা দিয়েই তাকে আমি গো হারানি হারাতে পারতাম। কিন্তু না আমার সব দিকেই লস হলো। কিভাবে কিভাবে কিভাবে আদ্রিয়ান তুই সব কিছুতেই জিতে যাইস? কিভা,,,,,,,,,,,,,,বে?
চিৎকার করেই পাশের টেবিলের সব কিছু ভেঙ্গে ফেললো। এরপর ফুলদানি নিয়ে মিররের দিকে নিক্ষেপ করলো। প্রচন্ড ক্ষোপে
সব কিছুই ভাঙতে লাগলো। মনে হচ্ছে যেনো রুম তাতে খন্ড প্রলয় আরম্ভ হয়েছে। কি এক প্রতিধ্বনি যা বারি খাচ্ছে প্রত্যেক দেওয়াল জোরে।
“ঠিক করনি মায়াবতী। আমাকে অবহেলা করে ওই আদ্রিয়ান এর বুকে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছো। না না আমি এটা কিছুতেই হতে দেবো না। কিছুতেই না”
বলেই পাগলের মতো হাসতে লাগলো। যেনো কোনো সাইকো। দরজার বাইরে গার্ড রাও ভয় পাচ্ছে ভেতরে ঢুকতে। তাছাড়া তাদের নিস্ফল কাজে প্রচন্ড ভাবে রেগে আছে অচেনা লোকটি। তাদের জান নিয়ে তার হাত থেকে ফিরতে পারে নাকি সেই গ্যারান্টি নেই। একে একে সবাই ভয়য়ে কাপছে। আর একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে।
_______________________
সকালের স্নিগ্ধ রোদের ছোঁয়ায় মেঘার ঘুমটা হালকা হলো। আস্তে আস্তে চোখ খুলে চারিদিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো সে এখন কোথায় আছে? এরপর যখন ভালো ভাবে খেয়াল করলো তখন দেখলো সে তার বরাদ্দ কৃত রুমেই আছে। এরপর আস্তে আস্তে কালকের ঘটনা গুলো একে একে মনে পড়তে লাগলো। চারিদিকে তাকিয়ে আদ্রিয়ান কে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির দেখা মিললো না। এরপর ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো ১০.৩০ টা। এটা দেখেই চোখ বড় করে ফেললো। সে এতক্ষন ঘুমিয়েছে। আর কেউ তাকে জাগাইও নি। আদ্রিয়ান হয়তো এতক্ষণে অফিসে চলে গেছে। মেঘা তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে একটা ওড়না ভালোভাবে জড়িয়ে নিলো। শীত শীত লাগছে খুব। বসন্তের মাঝেও শীতের প্রকোপ এখনও বহমান আছে। তাই কখনো গরম তো কখনো শীত। মেঘা চুল গুলিকে হাত খোঁপা করে রুম থেকে বের হয়ে নিচে যেতে লাগলো। হঠাৎ করেই কোনো মেয়ের হাসির শব্দ পেলো নিচে থেকে। তাই সেই হাসির উৎস খুঁজতে খুঁজতে নিচে নামতে লাগলো। মধ্য সিঁড়িতে এসেই বুক টা ধক করে উঠলো। চোখটাও জ্বলছে খুব। অতি প্রিয় মানুষটির সন্নিকটে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত অন্যকোনো নারীর প্রতিভা থাকে তাহলে সেই দৃশ্য বিষের মত বিদবে অম্বরে অক্ষিপটে। যেমন টি সামনের দৃশ্য দেখে মেঘার মনেও ভয়ংকর প্রলয় হচ্ছে। প্রিয় ব্যাক্তিটি কে হারানোর প্রলয় হয়তো বা নয়।
সোফায় আদ্রিয়ান এর সাথে সুন্দরী এক রমণী গা ঘেঁষে বসে আছে। বসে আছে বললে ভুল হবে মেয়েটি আদ্রিয়ান এর কাঁধে মাথা রেখে প্রচন্ড হেঁসে হেঁসে কথা বলছে। যেনো রাজ্যর কথা জমে আছে। আর আদ্রিয়ানো না হাসলেও মেয়েটির হাত ধরে কিসব বলছে। এসব দৃশ্য দেখলে যে কারোরই মেঘার মতো অবস্থা হবে। কিন্তু তবুও মেঘা নিজেকে সামলিয়ে নিচে নামলো। কারণ তাকেও বিষয় টা পরিষ্কার করে জানতে হবে। তাই নিচে এসে তাদের অপজিটে দাড়ালো। আর তাদের প্রেমলঙ্গ মুহুর্ত গুলো ভঙ্গ করার জন্য গলা ঝাড়া দিলো। নিজেকে দুর্বল করলে চলবে না।
কারো গলার ঝাড়া পেয়ে দুইজনই সামনের দিকে তাকালো। আদ্রিয়ান মেঘা কে দেখে কোনো রকম রিয়্যাক্ট করলো না। কিন্তু সেই রমণী হা করে তাকিয়ে থাকলো। যেনো চরম অবাক হয়েছে। মুখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে
“ওয়াও হাও কিউট!!! আদ্রিয়ান তোমাদের বাসায় এই কিউট মেয়েটি কে? ও গড!!
বলেই মেয়েটি মেঘার কাছে গিয়ে মেঘাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখতে লাগলো। আর প্রচন্ড খুশিও হলো।
“আদ্রিয়ান এটাতো একদম ডল গো? কে তুমি ডল প্রিন্সেস?”আর আদ্রিয়ান তোমাকে কোত্থেকে এনেছে? ইশ আমি যদি ছেলে হতাম তোমাকে এখনই কাজী ডেকে এনে বিয়ে করে ফেলতাম। ”
মেয়েটির কথায় মেঘা লজ্জা পেলো। এটা তো দেখা যায় পাগলের মত কখন থেকে কি সব বলে যাচ্ছে তাও আবার আদ্রিয়ান এর সামনে। আদ্রিয়ান মেয়েটির আস্ত রাখবে নাকি সেটা নিয়েই এখন মেঘার চিন্তা হচ্ছে।কিন্তু মেঘাকে অবাক কিরে দিয়ে আদ্রিয়ান এমন কিছু বললো যে মেঘার চোখে পানি চলে আসলো।
“নিশু তুমিও না। যাকে তাকে দেখলেই তোমার এসব কথা গুলোই প্রাথমিক পার্ট হয়ে দাঁড়ায়। আর এই মেয়ে এতোটাও সুন্দর না যে তোমার প্রশংসায় লজ্জা পাবে।”
“উফ আদ্রিয়ান তুমি আমাকে এইভাবে বলতে পারলে? শুনো সুন্দর কে তো সুন্দর বলবই। কারণ এটা প্রসংসারই জিনিস। উল্টো যদি প্রসংশা না করি তখন তো আমার পাপ হবে। নো নো আমি এই বয়সে পাপ করতে পারবো না গো। এতে আমার জায়গা জাহান্নামে হবে। তুমি কি চাও তোমার নিশু জাহান্নামে যাক।”
“উহুম্ম একদম না।”
“সেটাই। আচ্ছা বলো না মেয়েটি কে?”
“এই বাড়ীর আশ্রিতা। বিপদে পরে ছিলো তাই আমার এখানে রেখেছি। আর বয়স টাও অল্প যার জন্য অন্য কোনো জায়গায় রাখিনি।”
আদ্রিয়ান এর একেক টা বাক্য মেঘার কানে সুলের মত বিদছিল। মনে হচ্ছে গরম লোহার খনি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে এই বাড়ীর আশ্রিতা? কই সেতো ইচ্ছে করে এখানে আসেনি। তাকে তো জোর পূর্বক আনা হয়েছে। এতদিন তো আদ্রিয়ান কোনো ভাবেই বুঝতে দেইনি যে সে এই বাড়ীর আশ্রিতা। বরং তাকে এই বাড়িতে রেখে সব চেয়ে আপন করেই বিহেভ করেছে। মনেই হয়নি এটা তার নিজস্ব ঠিকানা নয়। হ্যা প্রথম প্রথম তার বিরক্ত লাগতো। কিন্তু এখন তো মায়াজালে ফেঁসে গেছে খুবই গভীর ভাবে। যাকে দুই চোখে দেখতে পারতো না আজ সেই ব্যক্তিই প্রতিটা নিশ্বাসের স্পন্দন্ধন হয়ে দাঁড়িয়েছে। হ্যা মেঘা আদ্র কে ভালবেসে ফেলেছে। তাও এমন ভাবে যে এর থেকে পিছু হঠা অসম্ভব। কিন্তু আদ্রিয়ান এর হঠাৎ এমন আচরনের মানে কি? এমন কি হয়েছে যে আদ্রিয়ান কাছের মানুষ থেকে অপরিচিত ব্যাক্তিদের মত আচরণ করছে?
“সে যাই হোক। আদ্রিয়ান ওকে কিন্তু আমাদের বিয়ে পর্যন্ত রাখতেই হবে? কোনো মানে শুনবো না। কোনো জায়গায় পাঠানো চলবে না এই ডল কে!”
“অবশ্যই নিশু। আমাদের জীবনের এত বড় একটি শুভ দিন আসছে সেটাতে তো সবাইকে থাকতেই হবে। আচ্ছা তোমার কথাই ওকেও আমাদের শুভ দিনে সামিল করবো। ঠিক আছে? এখন যাও নিজের রুমে ফ্রেশ হয়ে নাও অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছো। দাদিমাও হয়তো রেস্ট নিচ্ছে। আমার অফিসের লেট হয়ে যাচ্ছে। এরপর তো বিয়ের শপিংও আছে। তুমি তৈরি থেকো। আমি এসে নিয়ে যাবো। ঠিক আছে?”
“অক্কে মাই হেরো”
বলেই নিশু মেঘার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উপরে চলে গেলো। কিন্তু রেখে গেলো কারো কাচ ভাঙা মন। যা কিছুক্ষন আগেই একটি শব্দ শুনেই সকট হয়ে আছে। মনে হচ্ছে তার পুরো পৃথিবীটা ঘুরছে। হঠাৎ করেই কিছুর আওয়াজে বাস্তবে ফিরলো। কিন্তু চোখের অবাধ্য অশ্রু ঝরছে। সামনে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান নিজের ঘড়ি পড়ছে। হয়তো এখনই অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা দিবে।
“মেয়েটি কে, আদ্র? আর কাদের বিয়ের কথা চলছে?”
“সেটা জেনে তুমি কি করবে? ছোটো মানুষ ছোটো মানুষের মত থাকো।”
“হ্যা সেটাই ছোটো মানুষ। তা ঠিক আমি হয়তো বয়সে ছোটো। কিন্তু বোঝার মত বয়স আমার হয়েছে সেটা আপনি ভালো করেই জানেন। ওহ হ্যা আপনি কেনো বলতে যাবেন এতো কিছু আমি তো এই বাড়ির আশ্রিতা তাইনা। হ্যা ঠিক আশ্রিতা আমি এই বাড়ীর।”
“দেখো তোমার ফালতু বক বক শোনার সময় আমার নেই। তাই পথ থেকে সরে দাঁড়াও। সামনে তোমার ফাইনাল পরীক্ষা তাই পরীক্ষাতে মনোযোগ দাও এসব বিষয় তোমার না জানলেও চলবে।”
“কিন্তু আমার যে খুব জানতে ইচ্ছে করছে, আদ্র?”
“কেনো জানতে ইচ্ছে করছে?”
“সেটা আমি জানি না কিন্তু আমাকে জানতে হবে! আর সেটা বলতে বাধ্য আপনি!”
“আমিতো কোনো কিছুতেই বাধ্য নয়। আমার জীবনের রুলস যেমন আমি তৈরি করেছি তেমনই আমার কোনো ব্যাপারে কাকে জানাবো আর কাকে জানাবো না সেটাও আমিই ঠিক করবো”
মেঘা আদ্রিয়ান এর কথা শুনে আর কিছু বলতে পারলো না। তবুও কাঙ্ক্ষিত উত্তরের আশায় আদ্রিয়ান এর দিকে করুন চোখে তাকিয়ে থাকলো। আদ্রিয়ানো মেঘার দিকে এক পলকে তাকিয়ে থাকলো।
“নিশু আমার বাগদত্তা। দুইদিন পর আমাদের বিয়ে। তার জন্যই সে লন্ডন থেকে দাদীমা কে নিয়ে এসেছে। আর কিছু জানতে চাও?,,,,,
#চলবে_কি?
#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব -২২
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা
“নিশু আমার বাগদত্তা। দুইদিন পর আমাদের বিয়ে। তার জন্যই সে লন্ডন থেকে দাদীমা কে নিয়ে এসেছে। আর কিছু জানতে চাও?,,,,,
আদ্রিয়ান এর কথা শুনে মেঘার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরলো। যা দেখে আদ্রিয়ান এক পলক দেখে মেঘাকে ডিঙিয়ে বের হয়ে গেলো। মেঘা আদ্রিয়ান এর যাওয়া টা দেখলো। কিন্তু পিছু থেকে ডাকার আর সাহস পেলো না। আদ্রিয়ান এর বাগদত্তা আছে কিছুদিন পরে বিয়েও। তাহলে সে এখানে কি করছে। কি সম্পর্ক নিয়ে এখানে থাকছে আর থাকবে? আগে তো আদ্রিয়ান এর প্রিয় মানুষ ভাবতো দেখেই নিজেকে সময় দিচ্ছিলো সম্পর্ক টা গড়ার। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে আদ্রিয়ান তার ফিলিংস নিয়ে খেলেছে। বিদ্রুপ এর মত তাচ্ছিল্যের মতো হাসলো। তার মতো মেয়েকে আদ্রিয়ান এর মতো এত নামকরা মাফিয়ার প্রিয় ব্যাক্তি হওয়া নিতান্তই হাস্যকর ব্যাপার। কিন্তু তারও তো এখানে দোষ নেই আদ্রিয়ান যেভাবে তাকে জিনিস গুলো অনুভব করিয়েছে সেই ভাবে যেকোনো মেয়েই তার প্রেমে পড়বে। মেঘাও পড়েছে গভীর প্রেমে। যে গভীরতা মাপার সাধ্য হয়তো মেঘারও নেই। কিন্তু সেই প্রেমের গভীরতা বুঝানোর জন্য যেই মানুষটা কে প্রয়োজন সেইতো এখন অন্য কারো সম্পত্তি। তার আলিঙ্গনের সীমানার বাইরে বলে মনে হচ্ছে। মেঘার ছোট্ট মাথায় এতো প্রেশার নিতে পারছে না। তাই যখনই পেছনে ঘুরবে তখনই সামনে কাও কে দেখে ভয় পেয়ে দুই কদম দূরে সরে গেলো। বুকে হাত রেখে জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে সামনের ব্যাক্তিটির দিকে তাকালো। এর আগে এনাকে কোথাও দেখেছে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু কিছুটা হয়তো আন্দাজ করতে পারছে কে হতে পারে।
“এই যে বুড়ি তোকে দেখার অনেক ইচ্ছে ছিলো। আজ মনে হয় সেই ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। ছবিতে তোকে দেখলেও সামনাসামনি দেখার জন্য আমার তো তরই সইছিল না গো বুড়ি”
সামনের ব্যাক্তিটি মেঘার কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে থুতনিতে হাত দিয়ে চুমু খেলো। এরপর কিছুক্ষন এক ধেনে তাকিয়ে থাকলো।
“আপনাকে ঠিক চিনলাম না দাদীমা? আমি যদি ভুল না হয় আপনি কি উনার দাদিমা?”
“বাবভাহ্ উনি টা কে গো বুড়ি?”
“কিছুক্ষন আগে যে গেলো তার কথায় বলছি”
“কিন্তু কিছুক্ষন আগে তো আমি আমার নাতিন কে যেতে দেখলাম”
“আমি উনার কথাই বলছি”
“আমি ছিলাম না এতোদিন। এর মধ্যেই আমার ছোটো অ্যাটিটিউড জামাই কে নিজের দলে টেনে নিলি? দম আছে বলতে হবে তোর!”
হঠাৎ করে দাদীমার কথার মর্ম বুঝতে পারলো না। আর দাদীমা এইভাবেই বা নিজের নাতিনের বিষয় নিয়ে তার সাথে রসিকতা করছে।
“দাদীমা আমি তোমার নাতিকে বশ করতে যাবো কেনো? যে আমার নয় তাকে কি বশ করা যায় আদো !”
“কেনো কালো যাদু করবি! দেখবি সে তোরই হয়ে আছে এবং থাকবে”
বলেই দাদীমা দুষ্ট হাসলো আর মেঘাকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো করবে কিনা। মেঘাও দাদীমার কথা শুনে চড়ক গাছ। আনা ভাবতো দাদীমা হয়তো আদ্রিয়ান এর মতই গম্ভীর বদমেজাজি হবে কিন্তু না ইনি তো দেখা যায় এর উল্টোটা।
“কি হলো বুড়ি কি এতো ভাবছো? আমার কাছে কিন্তু কালো জাদু করতে পারে এইরকম অনেকের সাথে যোগাযোগ আছে! খবর দেবো কি?”
“না না দাদীমা, আপনি যেমন টা ভাবছেন উনার সাথে আমার তেমন সম্পর্ক নেই। উনি এখানে অনেক আটকে রেখেছে যার জন্য আমি এখানেই আছি এতদিন। আর উনাকে উনি বলার কারণ হলো উনি আমার বয়সে অনেক বড় আর নাম ধরেও তো ডাকা যায়না। তাই আর কি উনি বলেই সম্বোধন করি”
“ওহ,,,তাই নাকি বুড়ি? তাহলে একটা কাজ কর আদ্রিয়ান কে ভাইয়া বলে ডাকিস এতে উনি উনি করতে হবে না। আমার আবার এসব ডাকে আমার উনার কথা মনে পড়ে।”
বলেই দাদীমা হালকা মুচকি হেসে লজ্জা পাওয়ার মতো করতে লাগলো। মেঘাও বুঝতে পারলো না দাদীমা কোন উনার কথা বললো। নিজের ভাবনাকে নিজের মধ্যে না রেখে জিজ্ঞেসই করে ফেললো
“উনি বলতে তুমি কার কথা বলছো? ”
“আদ্রর দাদাজানের কথা বলছি রে। জানিস তো আমিই উনাকে উনি বলেই বলতাম। জামাই বলে কথা সাথে আবার ১৫ বছরের বড় ছিলো। এত বড় লোককে তো নাম ধরে ডাকা যেতো না। তাই উনাকে উনি বলেই সবার কাছে সম্বোধন করতাম। তাই তুই যখন উনি বললো তখন আমার নিজের পুরাতন কথা গুলো মনে পড়লো।”
দাদীমা কথা গুলো বলেই মেঘার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো।
“কিরে বুড়ি তোর মুখ এমন শুকনো লাগছে কেনো? খাইস নি এখনো? দুইদিন পরে বাড়িতে বিয়ে আর তুই যদি এখনই এরকম হয়ে যাস তখনতো অসুস্থ হয়ে পড়বে। তখন আমার নাতিতার বিয়ে হবে কি করে?”
“দাদীমা আমি শুকিয়ে গেলে বা অসুস্থ হলেতো তোমার নাতির বিয়ে বন্ধ হবে না। বিয়ে চলতে থাকবে। এখানে আমি কোত্থেকে আসলাম?”
“ওমা বিয়ে বাড়িতে কেউ অসুস্থ থাকলে তখন তো সেটা বিয়ে বাড়ি লাগে না। তখন তো হসপিটাল আর কমিউনিটি সেন্টারের লেটেস্ট ভার্সন হয়ে যায়।”
“চিন্তা করো না দাদিমা আমার জন্য তোমার নাতির বিয়ে আটকাবে না”
“তা নাহয় আটকাবে না কিন্তু তবুও”
“আচ্ছা অনেক তো কথা বললে দাদীমা। তোমরা এসেছো কখন?”
“এইতো দুই ঘণ্টা হবে। আরে আমার বয়স হয়েছে এখন কিন্তু তবুও দেখ আমি একদম স্ট্রং”
এইরকম দাদিমার সাথে অনেক কথা বলতে লাগলো। কথা বলতে বলতে মেঘা আর দাদীমা ডাইনিং টেবিলে গিয়ে সকালের নাস্তা খেয়ে নিল। এরপর আরো কিছুক্ষন মেঘা দাদীমা কে তার রুমে দিয়ে এসে নিজের রুমে ঢুকলো। কিছুদিন পর ফাইনাল পরীক্ষা প্রচুর পড়তে হবে। তার আব্বুর অনেক ইচ্ছে মেয়েকে ডক্টর বানাবে। পড়ার চিন্তা মাথায় আসতেই সে টেবিলে তাড়াতাড়ি পড়তে বসলো। কিন্তু ভুলে গেলো আদ্রিয়ান এর বিয়ে নিয়ে ঘটনা।
_______________________
অনেক্ষন ধরেই আদ্রিয়ান আসাফ কে ডাকছে। কিন্তু আসাফ তখন থেকে মুচকি মুচকি হাসছে আর কিছু ভাবছে। যার জন্য আদ্রিয়ান এর ডাক শুনতে পারছে না। আদ্রিয়ান যখন এতো ডাকার পরও শুনলো না তখন আদ্রিয়ান এর হাতের কলম টি নিয়ে আসাফের গায়ে ছোরে মারলো।
গায়ে কিছু পড়াতে আসাফ সপ্নের দুনিয়া থেকে বাস্তব দুনিয়ায় ফিরলো। এতক্ষন তার প্রেয়সীর কথা ভাবছিল। যার সাথে তার অনেক কষ্টে ফ্রেন্ড শিপ হয়েছে। এখন প্রতিদিনই তার সাথে কথা হয়। আস্তে আসাফ আরো বেশি মিশে যাচ্ছে মেয়েটির মায়ায়। এত কেনো আকৃষ্ট করে তাকে তার প্রতি।
হঠাৎ করেই এসব ভাবনা ভাঙলো সামনের যম রাজকে দেখে।
“কি ব্যাপার আসাফ কোন জায়গায় শুনতে ঘুরতে গিয়েছিলে? ডাকতে ডাকতেও তোমার সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না?ইদানিং দেখছি বেশির ভাগই কিছু নিয়ে ভাবো আর হাসো!”
“না না স্যার। তেমন কিছু না। সরি স্যার আর এমন হবে না”
“শোনো তোমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে কিছু বলছি না । কিন্তু তুমি আমার ছোটো ভাই এর মত তাই কিছু কথা বলি। আমি জানি তুমি তন্বীর পিছনে পড়ে আছো। হয়তো আসার কিরণ দেখছো তাই হয়তো সব কিছুই তোমার রঙিন লাগছে। কিন্তু তোমাকে পুরো বিষয়টা যে বুঝতে হবে। আদো তন্বী তোমার সাথে সারাজীবন থাকার মতো কিনা। বা সে ইচ্ছুক কিনা! আর তাই আগে থেকেই এইভাবে নিজের ভাবনা গুলো বাঁচিয়ে রাখো। ফিউচার অনেক সুন্দর হবে”
আসাফ মনোযোগ সহকারে নিজের স্যারের কথা শুনলো। আসলেই সে সম্পর্ক টা তৈরি করতে খুব দ্রুত করছে। কিন্তু আদ্রিয়ান এর কথাই বুঝতে পারলো, সম্পর্ক তৈরি করতে তাড়াতাড়ি করতে নেই। এতে ভুলের পরিণাম বেশি। আর সম্পর্ক ভাঙারও ”
আসাফ আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে সালাম জানালো। আর ধন্যবাদ দিলো তাকে সঠিক পন্থা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। এরপর আসাফ আদ্রিয়ান এর সাথে মিলে কিছু পেন্ডিং কাজ করলো। গত কয়েকদিন নানা ধরনের কাজের চাপ ছিল বিধায় কিছু কিছু ফাইলের কাগজের কাজ শেষ করতে লাগলো।
প্রায় তিন ঘন্টা লাগলো কাজ গুলো সারতে। এরপর সব কিছু ঠিকঠাক করে আসাফ নিজের ডেস্ক এ গেলো অবশিষ্ঠ কাজ গুলো করতে।
#চলবে_কি?