#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#সূচনা_পর্ব
রাস্তা দিয়ে তিড়িংবিড়িং করে যাওয়ার সময় হঠাৎ কোনো কিছু সাথে ধাক্কা খেয়ে ধপাস করে পড়ে গেলো পুতুল।কপাল খানিকটা ছি’লে গেছে মনে হয়,নির্জন রাস্তায় আবার কোন খাম্বা এসে পড়লো কে জানে!
মাথায় হাত চেপে ধরে বসে আছে, সদ্য বাজার থেকে আনা কালো গোলাপের চারা গুলো পিশে গেছে।সামনে তাকিয়ে দেখে একটা সাদা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে,এই গাড়ি দিয়েই হয়তো সে ধাক্কা খেয়েছে।পাশেই পরে থাকা চারাগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে পায়ে হাত দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে দেখার জন্য গাড়িতে কে আছে,যেই থাকুক তার তো আজকে খবর আছে।পায়ে হাত দিয়ে উঠার চেষ্টা করে কিন্তু গাড়ির সামনে থেকে তার হাটুতে লাগায় আর উঠেতে পারে না,ফলে আবার সেখানেই বসে থাকে।রাগে জিদ্দে এখন আর চিল্লাতেও মন চাচ্ছে না।তখন গাড়ি থেকে নেমে এলো একজন সুদর্শন পুরুষ!
যাকে দেখে পুতুল তো পুরাই টাস্কি,এ আবার কে?এই গ্রামে কোনোদিন দেখেছি বলে তো মনে হয়।চুরি ডাকাতি করতে আসলো নাকি?না না চুরি করতে আসলে তো আর গাড়ি নিয়ে আসতো না,আর দেখতেও তেমন মনে হয় না,চোখে আবার সানগ্লাস কিন্তু কে এই মুরগী?
ভাবনার মাঝেই ছেলেটি পুতুলের সামনে এসে হাটু ভাঝ করে বসে বাহুতে হাত দিয়ে বলল,
-উফসস এই পিচ্চি মেয়ে দেখে শুনে চলতে পারো না?এমন তিড়িংবিড়িং করে রাস্তায় কেও চলে?তোমার কি কোনো জ্ঞান নেই,সেই তো তুমিই ব্যথা পেলে,, যাও বাসায় যাও!
শেষে কথাটা বেশ ধমকের স্বরেই বলল ছেলেটি!পুতুল এখনো হা করেই তার দিকে তাকিয়ে আছে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দিলো সে আবার আমাকেই বকছে?রাগটা চট করেই মাথায় ধরে বসলো,এইবার যেনো পুতুল কথা বলার শক্তি আবার ফিরে পেলো শুধু শক্তিই না তেজও বহুত এসেছে,এইবার দেখি এই ছেলের ভাব কই যায়।
-কিহ?আমাকে নিজের এই আদ্দিকালের গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে এক্সিডেন্ট করিয়ে আবার আমাকেই বকা হচ্ছে তাও আবার পিচ্চি বলে?এই আপনি জানেন আমি কে?আমার বাবা কে?আমার পেশা কি?আমার বাবার পেশা কি?অবশ্য জানলে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন না।আর এইযে আপনি আপনার এই আদ্দিকালের গাড়িদিয়ে আমাকে ধাক্কা দিলেন না এরকম তিন চারটে গাড়ি আমাদের বাসায় ধুলোজমে পড়ে আছে।আবার আসছে আমাকে ধমক দিতে!
এতুটুকু কথার জবার এতো বড় আর এমন কিছু হবে তা কোনোক্ষণেই বুঝতে পারে নি ছেলেটি,যা এখন দেখেও নিচ্ছে।অবশেষে এতুটুকু একটা পিচ্চি মেয়ে কিনা তাকে শ্বাসাচ্ছে,টাকার গরম দেখাচ্ছে।এইবার রাগে মাথার রগ ফুলে উঠলো ছেলেটির।সামনে তাকিয়ে দেখে মেয়েটি ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে,তা দেখে সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেয়েটি চিল্লিতে বলতে লাগলো,,
-এই এই তুই আবার ওই ইমনের চ্যালাপেলা নাতো?আমাকে মারতে আসছিস ওই ইমন্নাইর সাহসতো কম না আমার ভাই এর কাছে মার খেয়ে আবার তার চ্যালাপেলাকে পাঠিয়েছে আমাকে মারার জন্য!ওকে তো আমি মেরেই ফেলবো তার আগে মারবো তোকে।
বলেই সেখানে রাস্তায় বসেই ছেলেটির গলা টিপে ধরলো।আর সেই ছেলেটি পুতুলের তুই তুকারি শুনে এখনো হা করেই আছে। পুতুলের নরম হাতের ছোয়ার তার কোনো রকমি লাগছে না কিন্তু পুতুল তার সর্বো শক্তি দিয়ে সামনের ছেলেটির গলাটিপে ধরে আছে।আর না পেরে শেষে গলা ছেড়ে কারো নাম ধরে ডাকতে থাকে,তখন সামনে কারো দৌড়ে আসার শব্দ হয়।পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে ভেবে নিজের গলা থেকে পুতুলের হাত ছাড়িয়ে ছূটে গাড়ি নিয়ে চটজলদি চলে যায়।যাওয়ার আগে বলে যায়,,
–I’ll see you more…!
এদিকে ছেলেটির ছুটে পালানো দেখে পুতুল এইবার শিউর হয়ে যায় এটা ইমনেরি পাঠানো লোক।তখন তাদের সামনে এসে হাজির হয় দুটো মেয়ে,ছোট মেয়েটি পুতুলকে জড়িয়ে ধরে বলে,,
-ফুপি ফুপি তোমার কি হয়েছে তুমি এভাবে রাস্তায় বসে আছো কেনো?মা মা দেখো ফুপির কপাল ছিলে গেছে,
পুতুল কিছু বলতে যাবে তার আগের পাশের মেয়েটি বলে,
-এ কিরে পুতুল তোর এই অবস্থা হলো কি করে?নিশ্চয় রাস্তায় লাফালাফি করে হাঠছিলি কেনো যে তকে ছেড়ে গেলাম।ইশশ দেখতো কি হাল করেছিস নিজের তোর ভাই জানলে তো আমাকে পিটাবে,
-আরে না ভাবিপু ওইযে ইমন…
-ইমন?ইমন কথা থেকে আসবে আবার,ইমনকে তো তোর ভাই কবেই মেরে হসপিটালে পাঠিয়ে দিয়েছে!
-আরে ইমন হসপিটালে তো কি হয়েছে ওর সাথিরা আছে না,তারা হয়তো।
-ওর সাথিরা আবার কে জুহাদ সজীব?
-আরেহ না হয়তো নতুন কেও..!
-তোকে কত বার করে বললাম গার্ড নিয়ে বাসা থেকে বের হতে,আশেপাশে কত শত্রু আছে তুই জানিস না?আচ্ছা থাক বাদ দে এগুলো তর ভাই অথবা বাবা কে বলার দরকার নেই পরে আরো ঝামেলা হবে।
-ধুর কিন্তু আমার গোলাপ ফুলের চারা?কত কষ্ট করে সাত গ্রাম খুজে এই চারা গুলো পেয়েছিলাম তাও নষ্ট হয়ে গেলো এ এ এ..!
-আরে মেয়ে তুই এখন বাড়ি চল গোলাপের চারা পরে খুজে আনা যাবে।নয়তো এমপিদের বাড়ি থেকে নিয়ে আসিস।
-ওই দারোয়ান হা’লায় দিবে না।
-তুই বাসায় চল বাবাকে দিয়ে আনাবো নি!
তারপর তারা দুজন ধরে পুতুলকে বাসায় নিয়ে গেলো।
_________
এদিকে,,,
ও খালাম্মা এইবার তো একটু রেস্ট দেন।সকাল থে,মেলা কাম করছি!আমগো তো একটা জান আছে নাকি?
বাড়ির সিড়ি মুছতে মুছতে কথা গুলো বলল রিনা।তার কথা শুনে সামিয়া বললেন,,
-সবসময় তো শুয়ে বসেই থাকিস আজকে না হয় একটু বেশি কাজ কর তার জন্য তো এক্সট্রা টাকা দিবোই বললাম তো।কত বছর পর আমাদের বাড়িতে আমার ছেলে আসবে তার জন্যই তো এতো আয়োজন!নে নে জলদি কাজ গুলো শেষ কর আর গিয়ে দেখে বাগানে কারা কিভাবে কাজ করছে,একটু উনিশ বিশ হলে কিন্তু তোর খবর আছে।
-হ হ কোনো ভুল হইলে তো আমারি দোষ আমি তো সব নষ্টের মূল।
বলেই হাক ছাড়তে ছাড়তে বাগানের দিকে চলে গেলো রিনি।তা দেখে পেছন থেকে মুচকি হাসলো সামিয়া।মেয়েটা সেই ছোট্ট বেলা থেকেই তাদের বাসায় কাজ করে যাচ্ছে সব কোথায় ছ্যানছ্যান বেশি করে,তবে মনের দিক দিয়ে অনেক ভালো।এই বাড়ির এক জন সদস্যর মতোই বেড়ে উঠেছে সে।
তখন পেছন থেকে এমপি সাহেব মানে সামিয়ার হাসবেন্ড সিরাজ বলে উঠলো,
-এদিকে সব কিছু ঠিকঠাক আছে তো?সামির কিন্তু এয়ার্পোট থেকে গাড়িতে উঠে গিয়েছে আসতে বেশি সময় লাগবে না।
-হ্যা গো সব ঠিকঠাক!কত দিন পর আমাদের ছেলে আমাদের বাসায় আসছে বলো তো।
-কত দিন পরে নাকি বলো কত যুগ পরে,আজ থেকে আমাদের বাড়িটা ভরে উঠবে বলো।
-হ্যা এখন শুধু ছেলের বিয়ে দিতে পারলেই হলো শান্তি!
-আগে তো ছেলে বাড়ির চৌকাঠে পা দিক তারপর না হয় বিয়ের কথা ভাবা যাবে।
-হুম! তো চেয়ারম্যান সাহেবরা কখন আসবে?
-বলেছে তো বিকালে আসবে।
-আচ্ছা তুমি যাও দেখো ছেলে কদ্দুড়!
প্রায় ১২বছর পর নিজের বাড়িতে পা রাখলো সামির!সব কিছু কেমন অচেনা হয়ে গিয়েছে বাড়ি রাস্তা ঘাট সব।কিন্তু শুধু একি রয়ে গেছে তার বাগান!যা শুধু সম্ভব হয়েছে তার করা নির্দেশ আর মার যত্নে।না হলে কবেই এই বাগান মিলিয়ে যেতো।
বাড়িতে আসার পর থেকে সেই খেয়েই যাচ্ছে তো যাচ্ছেই থামার নাম নেই।নিজে থামতে চাচ্ছে এমননা, মা এবং বাবার কথায় এতো খেতে হচ্ছে,মনে হচ্ছে এখনি সব খাইয়ে মোটা বানিয়ে দিবে।অবশেষে আর না পেরে রেস্ট নেওয়ার বাহানা করে রুমে চলে গেলো।রুমটারো পরিবর্তন ঘটেছে ফার্নিচার অল্প সংখক থাকলেও ঘরে এইগুলোই মানিয়েছে।
ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুতেই ঘুমের দেশে চলে গেলো সামির।
চলবে…!