#পূর্ণতা❤️
#তানজিলা_তাবাচ্ছুম❤️
১৮.
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে চাঁদ। আজকে পূর্নিমা রাত। আকাশের চাঁদের আলোতেই সব কিছু দেখা যাচ্ছে।আলোক দরজা খুলে ঢুকলো। ফোনে কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।আলোকের হাসির আওয়াজে চাঁদ পিছনে ঘুরে তাকালো।
‘আচ্ছা তাই?[হেসে হেসে]
‘________
‘আচ্ছা ইন শা আল্লাহ। রাখলাম।’
বলতে বলতে ব্যালকনির দিকে গেল আলোক। চাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে বলল,
‘হেই মাই সাইনিং মুন।’
চাঁদ আলোকের দিকে তাকালো।আলোক রেলিং ধরে বলল,
‘এক চাঁদ আরেক চাঁদ কে দেখছে! ওয়াও।’
চাঁদ হালকা হাসলো।আলোক আর কিছু বলল না।আলোক চাঁদ দুজনেই আকাশের চাঁদ দেখছে।a অনেকক্ষণ পর আলোক বলে উঠলো,
‘জানো চাঁদ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নিবর আছে না? যার কথা তোমাকে বলেছিলাম?’
চাঁদ আলোকের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো।
‘আল্লাহর রহমতে ও দুটো যমজ মেয়ের বাবা হয়েছে।আমার তো ভাবতেই কি আনন্দ লাগছে। জানো আল্লাহ্ যখন খুশি হন তখন তিনি কন্যা সন্তান দেন।’
চাঁদ হাসলো।আলোক অনেকটা এক্সসাইডেড হয়ে বলল,
‘ওর বেবিরা এখন ওর শশুর বাড়িতে আছে। এখান থেকে অনেক দূরে , তা না হলে যেতাম।আগের সপ্তাহে হয়েছে বেবি। জানো বেবি দুটোর নাম না অনেক সুন্দর রেখেছে। নিজেদের নামের সাথে মিলিয়ে।’
চাঁদ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
‘একজনের নাম রেখেছে নিরা। নিবিবের ‘নি’ আর ইরার ‘রা’, দুটোকে একসাথে ‘নিরা’।আর আরেকজনের নাম ‘ইরানি’। ইরার ‘ইরা’ আর নিরবের ‘নি’ একসাথে ‘ইরানি’।নাম দুটোর অর্থ ও অনেক সুন্দর।’
চাঁদ হাসলো। হটাৎ আলোক বলে উঠলো,
‘আচ্ছা!চাঁদ আমরাও না আমাদের মেয়ের নাম আমাদের নামের সাথে মিলিয়ে রাখবো ইন শা আল্লাহ্।’
হটাৎ আলোকের এমন কথায় চাঁদ একটু হিমশিম খেলো।আলোকের দিকে ভ্রু উচুঁ করে তাকাতেই আলোক বলল,
‘কিন্তু আমাদের নাম একসাথে মিলে?চাঁদ আর আলোক একসাথে ‘চালক’ হয়ে!আলোক চাঁদ ও একসাথে করলে ভালো নাম হয় না।’
অনেকটা করুন কন্ঠে বললো আলোক।তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারো বলতে লাগলো,
‘আচ্ছা আমার আলোক নাম থেকে আলো আর তোমার চাঁদ নাম থেকে___
তারপর ভাবতে লাগলো আলোক সাথে চাঁদ ও।একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে তারা।আলোক অনেক বিস্ময় নিয়ে বললো,
‘চাঁদ থেকে চাঁদনী।’
প্রথমে চাঁদ খুশি হলেও পরক্ষণে নাম টা শুনে তার মুখে কেমন বিষন্নতার ছাপ ফুটে উঠে।চাঁদ চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করে।তার চোখ ছলছল করছে।আলোক চাঁদের পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,
‘চাঁদ পাখি আর ইউ ওকে?’
আলোকের কণ্ঠ শুনে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে তারপর চোখে খুলে হাসি মুখে আলোকের দিকে তাকিয়ে ইশারায় তাকে বুঝানোর চেষ্টা করে সে ঠিক আছে।আলোক একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
‘তাহলে ফাইনাল ‘চাঁদনী আলো’ নাম হবে আমাদের মেয়ের ইন শা আল্লাহ্। শোনো আমরা আল্লাহ্ কাছে দুয়া করবো যাতে আমাদের প্রথম সন্তান কন্যা হয়।’
চাঁদ লজ্জা পেয়ে আলোকের থেকে মুখ সরিয়ে নেয়।আলোক বুঝতে পেরে শুধু হাসলো।তারপর আবার আলোক প্রশ্ন ছুড়লো,
‘বাট সাইনিং মুন ওর ডাক নাম কি হবে? চাঁদনী বাকি আলো?এখন তো দেখি এটা নিয়ে আমার তোমার ঝগড়া হয়ে যাবে।কি রাখা যায়?’
ভাবতে লাগলো।চাঁদ হাত দিয়ে ইশারা করলো আকাশের দিকে।আলোক দেখে বললো,
‘রাত?’
চাঁদ অসম্মতি জানালো।
‘পূর্ণিমা?’
আবারো চাঁদ অসম্মতি জানালো।তারপর নিজেকে তার আলোক কে ইশারা করে হাত দুটোকে চেপে ধরলো।আলোক কিছুক্ষন ভেবে বোঝার চেষ্টা করলো তারপর বললো,
‘তুমি আমি একসাথে কি হয়?
চাঁদ মুখটাকে গোমড়া করলো।তারপর আলোকের হাত টা ধরে কিছু লেখে দেখানোর চেষ্টা করলো।আলোক বোঝার চেষ্টা করে বললো,
‘পূর্ণতা?’
চাঁদ হেসে সম্মতি জানালো।আলোক হাসলো।
‘নট ব্যাড।চাঁদ আলোকের পূর্ণতা। হাউ সুইট ।মা শা আল্লাহ নাম। চাঁদের আলোকে পূর্ণতা। আহা।’
আলোকের ফোনটা বেজে উঠলো।আলোক ঘরে ঢুকে ফোনটা ধরলো।কিছুক্ষন কথা বলার পর আচমকা কারেন্ট চলে গেলো। কিন্তু অন্ধকার হলো না কারন বাহিরের চাঁদের আলোতে এই রাত আলোকিত হয়ে গেছে সাথে কিছুটা আলো ঘরেও প্রবেশ করেছে।চাঁদ ব্যালকনি থেকে ঘরে আসলো।আলোক কথা বলতে বলতে চাঁদকে বললো,
‘চাঁদ ওই ড্রয়ারে ক্যান্ডেল আছে’
চাঁদ গিয়ে বের করলো।তারপর আলোক বললো,
‘আগুন জ্বালাও।’
কথাটা শুনার সাথে সাথে চাঁদের হাত থেকে মোমবাতি গুলো পড়ে যায়।আলোক চাঁদ কে বললো,
‘কি হলো চাঁদ?ক্যান্ডেল গুলোতে আগুন জ্বালাও।’
চাঁদ এক পা করে পিছাতে শুরু করে।জোরে জোড়ে শ্বাস নিতে শুরু করে।চোখ বয়ে পানি ঝরছে তার।আর মাথা দিয়ে খালি না না করছে।আলোক হালকা আলোতে বুঝতে পারছে না আলোক ফোন রেখে মোমবাতি জ্বালালো।তারপর হাতে মোমবাতি নিয়ে চাঁদের দিকে ঘুরল।দেখলো চাঁদ কাদঁছে।আলোক চাঁদের দিকে এগিয়ে বললো,
‘কাদঁছ কেনো চাঁদ?কি হয়েছে?’
বলে আলোক এগোচ্ছে চাঁদের দিকে।কিন্তু চাঁদ কাদঁছে আর মাথা দিয়ে না না করছে আর হাত দিয়ে আলোক কে দূরে যেতে বলছে।আলোক এক হাতে মোমবাতি নিয়ে চাঁদের কাছে গিয়ে ওর হাত ধরতেই চাঁদ হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।হটাৎ চাঁদ এমন করছে কেনো আলোক বুঝতে পারছে না। চাঁদ আপ্রাণ চেষ্টা করছে নিজের হাত ছাড়ানোর।আলোক হাত ছাড়তেই চাঁদ দৌড় মেরে দড়জা খুলতেই ,
‘আরে চাঁদ। তোমার কাছেই আসছিলাম।’
আশা বললো।কারেন্ট যাওয়ায় আশা ভেবেছিল চাঁদ হয়তো ঘরে একা আছে।কারণ আলোক তো বাহিরে ছিল। আশার হাতে টর্চ লাইট। আশা লাইট টা দিয়ে চাঁদ কে ভালো মতন দেখতেই অফুরুন্ত কন্ঠে বলে উঠে,
‘চাঁদ মামনি কি হয়েছে? তুমি কাদঁছ কেনো?’
‘আলোক কিছু বলেছে?’
তারপর শক্ত গলায় আলোক কে ঢাকলো আশা।আলোক আসতেই আশা রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
‘আলোক কি বলেছিস চাঁদ কে? ও কাদঁছে কেনো?’
আলোক অসহায়ের এর মত বললো,
‘জানি না মা হটাৎ ওর কি হলো!আমি শুধু বললাম মোমবাতিতে আগুন জ্বালাও।’
আলোকের কথাটা শুনতেই চাঁদের পুরো শরীর শিউরে উঠলো।তার কান্নার বেগ বেড়ে যায়। আলোক কাছে আসতে চাইলে চাঁদ হাত দিয়ে তাকে দূরে যেতে বলে আর খালি মাথা দিতে না না বলে কিছু বলতে চাইছে। আশা চাঁদ কে নিজের কাছে এনে বলে,
‘কি হয়েছে মামনি?আমাকে বলো?আলোক কিছু করেছে বা বলেছে?আমাকে বলো।’
চাঁদ কিছু বলছে না শুধূ কেঁদেই চলছে। আশা আলোক কে বললো,
‘আমি ওকে আমার সাথে নিয়ে যাচ্ছি।আজকে ও আমার সাথেই থাকবে। তোর বাবা আসলে অন্য রুমে ঘুমাতে বলিস।’
বলে পাশে রুমে নিয়ে গেল আশা চাঁদকে। আলোকের রুমের পাশেই তার রুম। ওরা যেতেই আলোক বলে উঠলো,’হটাৎ কি হলো তোমার চাঁদ পাখি?আমার সাথে এমন করলে কেনো?’ বলে আলোক ঘরের ভিতরে ঢুকলো।চাঁদের হটাৎ এমন আচরণ সে কিছুতেই হজম করতে পারছে না। হটাৎ ও এমন করলো কেনো?মনে হচ্ছিল যেন আলোক তাকে মারতে চাচ্ছে আর চাঁদ পালানোর চেষ্টা করছে।আলোক আর কিছু না ভেবে গিয়ে শুয়ে পড়ল। মাথায় একটা হাত দিলে। আজ পাশে চাঁদ কে ছাড়া কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার।আলোকের শুধু একটা কথাই ভাবছে আর চিন্তা করছে হটাৎ তার চাঁদের কি হলো?আলোক কে এতটাই ভয় পেলো কেনো?কিছুই বুঝতে পারছে না আলোক।
#চলবে….
[*রি-চেক করা হয়নি]