#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(১৯)
হাসপাতালে এসে একটা ক্লাস এটেন্ড করে নিজের কেবিনে বসে আছে আঁখি,আদৃতের বর্তমানে কোনো ক্লাস নেই,অন্য কাজও নেই তেমন তাই আঁখির কেবিনে চলে আসলো।
″মে আই কাম ইন হিটলার?″
″আরে ডা.সাহেব আপনি?আসুন।তা হিটলার ডাকটা কবে ছাড়বেন?″
″হিটলারকে হিটলার ডাকব না তো কি ডাকব?″
″কি হিটলারি করলাম আপনার সাথে আমি? ″
″তা তুমিই তো ভালো জানো।″
″ছয় বছর আগের কথাগুলো এখনও মনে নিয়ে বসে আছেন।এমনও তো হতে পারে হিটলার আঁখি এখন বদলে গেছে।″
″হিটলার আঁখি কখনও বদলাতে পারে না,পরশু সকালেই রিপোর্টার লিজানকে ভরা সমাজে থাপ্পড় মেরে তাকে সঠিক জবাব দিয়ে এসে যদি আজ বলে সে বদলে গেছে তবে কি করে মানা যায় বলো?″
″আরে কিছু কিছু লোক এমন আছে যাদের উপস্থিত মূহুর্তে সঠিক জবাব না দিলে তারা সায় পেয়ে মাথায় ওঠে, যা আমি কখনও মেনে নেই না।″
″এটাই তো হিটলার আঁখি,আমার মতে প্রতিটা মেয়েকে তোমার মতো হওয়া চাই।″
″বাহ,ডা.নিরামিষও কারো প্রশংসা করতে পারেন আমি জানতাম না,এত বড় পরিবর্তনের কারণ জানতে পারি এবার?″
″এটা কোনো পরিবর্তন না,মানুষ কখনও কখনও নিজের পছন্দের মানুষের খুশির জন্য তার রঙে রেঙে যায়,আমার ক্ষেত্রেও এমনই কিছু মনে করতে পারো।″
″তা সেই মানুষটা কে জানতে পারি? ″
″আছে একজন,যাকে খুব করে চাই আল্লাহর কাছে রোজ মোনাজাতে।″
আঁখির চোখে গভীর চাহনি স্থির রেখে মনের গহীনের লুকানো সত্য যেন তাকে বুঝানোর চেষ্টা করে গেল আদৃত,আঁখিও অপলক চাহনিতে তাকিয়ে আদৃতের মুখে না বলা সত্য তার চোখের মধ্যে দিয়ে বোধগম্যে নেওয়ার সম্ভবপর চেষ্টা করতে লাগল,যেখানে নিজের জন্য অসীম ভালোবাসার গভীরতাই খোঁজে পাচ্ছে আঁখি,যার হয়ত কোনো শেষ নেই।তবে তাতে বিশ্বাস করে উঠার সক্ষমতা নেই তার।বড্ড অস্বাভাবিক অনুভুতি হলো আঁখির এতে,তাই আদৃতের উপর থেকে চোখ সরিয়ে নিল,কেবিনে তখন প্রবেশ করল ইন্সপেক্টর জিসান তার ফোর্স সহিত।আঁখি বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল তাকে।
″আরে ইন্সপেক্টর জিসান আপনি?″
″হ্যাঁ আমি ডা.আঁখি,আপনার সাথে কিছু দরকারি কথা ছিলো।বসতে পারি?″
″হ্যাঁ, অবশ্যই।″
″জিসান বিচক্ষণ এক দৃষ্টি আদৃত আর আঁখি উভয়ের উপর বুলিয়ে আদৃতের পাশের চেয়ারে বসল।এবার বলা শুরু করল।
″হ্যাঁ তো মিস আঁখি,আমার আবার সময় কম তাই সোজা পয়েন্টে আসি।আপনি গত পরশু রিপোর্টার লিজানকে পাবলিক প্লেসে থাপ্পড় মেরেছেন,উনার সাথে আপনার সমস্যা হয়েছিল আর কাল রাতেই তাকেও নির্মমভাবে হ*ত্যা করা হয়,কলি আর লিজান মা*র্ডা*র কেসে আপনি বর্তমানে মেইন সাসপেক্ট,তাই বলুন কাল রাত ১১ টার সময় আপনি কোথায় ছিলেন?″
″আমার বাড়িতে, কেনো?″
″তার কি কোনো প্রমাণ আছে আপনার কাছে?″
″অবশ্যই,আপনি আমার বাড়ির সিসিটিভি ফোঁটেজ চেক করতে পারেন,রাত ১১ টায় আমি আমার খাবার টেবিলে বসে ডিনার করছিলাম,আপনার বিশ্বাস না হলে সেখানকার ফোঁটেজ আপনি চেক করে নিতে পারেন আমার বাড়ি গিয়ে।আমি আমার কাজের লোক আর গার্ডদের বলে দিচ্ছি,আপনি নির্ধিদায় যান।″
কথাগুলো বলেই আঁখি তার একজন গার্ডকে ফোন করল।
″আমির একজন ইন্সপেক্টর আসবেন,নাম জিসান হাসান,উনাকে আমার বাড়ির সকল স্থানের সিসিটিভি ফোঁটেজ দেখিয়ে দিবে,উনি যেদিনের আর যে ক্ষণের দেখতে চাইবেন সব।″
″ওকে ম্যাম।″
ফোন কেটে এবার বলল আঁখি।
″এবার আপনি যেতে পারেন।″
″ধন্যবাদ, আপনি না বললেও আমি তা করতে যেতাম,আর তা করতে আপনি আমাকে আটকাতেও পারতেন না,কিন্তু ভাবলাম এর আগে আপনাকে বলে নেওয়া যাক,আমি আবার অপরাধীদের সবসময় একটা সুযোগ দিতে পছন্দ করি।″
″আপনি এতো আত্নবিশ্বাসের সাথে কিভাবে বলতে পারেন যে আঁখিই অপরাধী?ভুলে যাবেন না প্রমাণ ব্যতীত আপনার কাউকে মন গড়া অপরাধী বলার কোনো ক্ষমতা নেই।″
″ক্ষমতা নিয়ে আমার সাথে কথা বলতে আসবেন না ডা.আদৃত।আপনি আপনার কাজ করুন,আমাকে আমার কাজ শেখাতে না আসলে খুশি হবো।″
আদৃত আরও কিছু তাকে বলবে এর আগেই আঁখি বলল।
″ইট’স ফাইন ডা.আদৃত,উনাকে উনার কাজ করতে দিন,আমি জানি আমি কে আর আমি কি করতে পারি। বাকি তো সন্দেহ যে সেই করতে পারে,করতে দাও,প্রমাণ ব্যতীত কারোই কিছু করার থাকে না,এখন সে পুলিশ হোক বা কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী।″
″অভার কনফিডেন্ট ভালো না ডা.আঁখি।প্রমাণ সহিত কথা বলতে আসব আপনার সাথে।″
″আমিও অপেক্ষা করব আপনার।″
আঁখি নির্ভয়ে ইন্সপেক্টর জিসানের জবাব দেয়,ইন্সপেক্টর জিসান প্রস্থান করেন সাথে সাথে,আঁখি এবার টেবিলে রাখা গ্লাস থেকে গ্লাস ভর্তি পানি এক টানে খেয়ে নেয়।আঁখির হাবসাব দেখে আদৃতের কেমন জানি লাগল,যেন আঁখিকে স্বাভাবিক দেখা যাচ্ছে না,আদৃত কিছু বুঝে উঠার আগেই আঁখি জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে পরে গেল।
বেশ চিন্তিত হয়ে বসে আছে জিসান,আঁখির বাড়ির সিসিটিভি ফোঁটেজ চেক করে এসেছে,লিজানের মৃ*ত্যু*র সময় আঁখি তার বাড়িতেই ছিল,এমনকি কলির মৃ*ত্যু*র সময়ও আঁখি তার বাড়িতে ছিল সিসিটিভি ফোঁটেজ মোতাবেক।তবে কে খু*ন করল এদের!সবকিছু তো আঁখিকেই ইশারা করে,কিন্তু সে একসাথে দুই স্থানে কিভাবে থাকতে পারে!কলি আর লিজানের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের মৃত্যুর সময় তো আর ভুলও দেখাতে পারে না।কিছু ভেবে মিলাতে পারছে না জিসান,হঠাৎ তার একজন কনস্টেবল আসলো তার কাছে।
স্যার,আপনি বলেছিলেন প্রমত্ত অঙ্গনা নামের ৬ বছর আগের ফাইল বের করতে,কিন্তু তা বের করতে গিয়ে বেশ পুরাতন একটা আলমারি থেকে প্রমত্ত অঙ্গনা নামের আর একটা ফাইল বেড়িয়ে আসে,যেটা প্রায় ১৩ বছর পুরোনো।
কথাটা শুনে অনেক আশ্চর্য হলো জিসান,কন্সটেবল এর হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে নিল টান দিয়ে। ফাইলটা খোলে কৌতূহল ও মনোযোগ সহকারে পড়তে শুরু করল।
ফাইলের লেখাগুলো পড়ার পর বাকরুদ্ধ হয়ে গেল ইন্সপেক্টর জিসান,১৩ বছর আগে একজন পুরুষ খুন হয়েছিল যার লা*শে*র পাশে প্রমত্ত অঙ্গনা নামটা পাওয়া যায়,তারপর আরও ১৫ টা খুন হয় সব কয়টা লা*শে*র পাশে একই নাম ছিল,কিন্তু আলাদা বিষয় সেই সকল লা*শে*র পাশে প্রমত্ত অঙ্গনা নামটা লিখা থাকার সাথে কয়েকটা বাক্যও লিখা ছিল।সেগুলো এই ফাইলে এতো বিস্তারিত ভাবে দেওয়া না থাকলেও জিসান লক্ষ করল আলাদা একটা বিষয়।৬ বছর আগে যখন একজন পুরুষের খুন হয়েছিল তখন তার লা*শে*র পাশে প্রমত্ত অঙ্গনা লেখাটার সাথে লেখা ছিল।
কারো অকাল মৃত্যুর আসল কারণ জীবিত অবস্থায় মানায় না।
৪ বছর আগেও তিনটে খু*নের প্রথম একজন পুরুষের মৃত্যু হয় যার লাশের পাশে লিখা ছিল,
ইচ্ছের বিরুদ্ধে নারীর লাজ হরণকারী বেঁচে থাকার অধিকার রাখে না,
প্রমত্ত অঙ্গনা।
কিন্তু এর পরবর্তী দু’ইটা লা*শে*র পাশে প্রমত্ত অঙ্গনা নাম ব্যতীত অন্য কোনো বাক্য পাওয়া যায় নি, ১৩ বছর আগের ফাইল অনুযায়ী প্রমত্ত অঙ্গনা তার নামের সাথে খু*নে*র কারণ বলে দেয়।কিন্তু ৪ বছর আগের শেষ সেই দুই খু*ন আর এখন কলি আর লিজানের খুন এই চারটে লা*শে*র পাশে প্রমত্ত অঙ্গনা নাম ব্যতীত কিছুই পাওয়া যায় নি,এর মানে কি হতে পারে!এই প্রমত্ত অঙ্গনা ১ জন,না দু’জন। এমনও হতে পারে কেউ আসল প্রমত্ত অঙ্গনার নাম নিয়ে নিজে খু*ন করে বেড়াচ্ছে। সব কিছুই যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে জিসানের,অনেক ভাবনার পর জিঙ্গেস করল হাবিলদার ফয়েজকে জিসান।
″ফয়েজ সাহেব ১৩ বছর আগে প্রমত্ত অঙ্গনা কেস কে দেখছিল আপনি জানেন?আপনি পুলিশ ফোর্সে অনেক আগ থেকে আছেন,আপনি জানতে পারেন বলে মনে হয় আমার।″
″স্যাঁর যতটুকু জানি ইন্সপেক্টর ইশতিয়াক কেসটা দেখছিলেন,কিন্তু আমি শুনেছি এ বিষয়ে, জানিনা তেমন কিছু।″
″ইশতিয়াক সাহেবের বাড়ির এড্রেস জোগার করে দিতে পারবেন আমায়?″
″ইয়েস স্যার,আমি দেখছি।″
স্যালাইন চলছে আঁখির,অচেতন হয়ে পরে আছে একটা কেবিনের বেডে,পাশে আদৃত বসে আছে।খুব ইচ্ছে হলো তার আঁখির মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার,তার হাতটা ধরার,তবে হাতটা ধরতে গিয়েও ধরল না।ব্যাথাভরা স্বরে বলল।
তোমার অগোচরে কখনও তোমাকে স্পর্শ করি নি আর করবও না,আমার ভালোবাসায় যে কোনো অবিত্রতা নেই সুখপাখি।আমি যদি পারতাম তবে এক নিমিষেই তোমার সব অশান্তির কারণ দূর করে দিতাম, নিয়ে যেতাম তোমাকে এক নতুন সুখের ছোঁয়ায়,যেখানে দুঃখ তোমায় দূর থেকেও দেখে যাওয়ার সাহস জুটিয়ে ওঠতে পারত না।সেই স্বাধীন, চঞ্চল আঁখি কখনও আর দুঃখের সাগরে তলিয়ে যেতে পারত না,আমারই দোষ ছিল আঁখি সেদিন যদি ওভাবে চলে না যেতাম,জো*র করে নিজের ভালোবাসা নিজের কাছে ধরে রাখতে চাইতাম তবে হয়ত আজ আমাদের দু’জনেরই জীবন সুখে ভরপুর হতো।কিন্তু তুমি চিন্তা করো না,আমি ফিরে যখন এসেছি তবে আর তোমায় কোনো পিছুটানে পরতে দিব না।মিথ্যে হাসির আড়ালে আর কখনও তোমাকে লুকোতে দিব না সত্য ব্যাথা,তোমার চেহারার হাসিতে শুধু সত্য সুখ লুকিয়ে থাকবে তুমি দেখে নিও।
আঁখির দিকে তাকিয়ে আদৃত কথাগুলো বলছিল হটাৎ আঁখির জ্ঞান ফিরে,চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে সামনে আদৃত বসে আছে।
আঁখি ঝটপট উঠে বসলে আদৃত তাতে বাঁধা প্রদান করে।
″কি করছ?শুয়ে থাকো,তোমার শরীর অনেক দূর্বল, ইউ নীড রেস্ট। ″
″আই এম ফাইন ডা.আদৃত,তা আমাকে এখানে কে এনেছে?আর স্যালাইন কে দিলো?″
″সামনে বসে থাকা আসত এক জলজ্যান্ত মানুষ দেখতে পাও না?″
″তার মানে আপনি আমায় কোলে করে এখানে এনেছেন?″
″তো আমি তোমায় আর কিভাবে আনতে পারতাম?″
″তাই বলে আপনি আমাকে না বলে,আমার অগোচরে আমায় কোলে নিবেন!″
″প্রয়োজনে নিয়েছি আঁখি,এমন ভাব করছ যেন আর কখনও নেই নি,একসময় নিজে থেকেই কোলে চড়ার ধান্দা করতে যখন তখন আর এখন ক্ষেপে ওঠছ।″
″একসময় উঠতাম বলে আপনি আমায় রোজ কোলে নিবেন এখন?আর তখন আমি ১৮ বছরের তরুণী ছিলাম আর এখন ২৫ বছরের মেচোয়ার একজন নারী,তাছাড়া আমাদের সম্পর্ক এখন আলাদা।″
″কোন বইতে লিখা আছে ১৮ বছরের মেয়ে কোলে ওঠতে পারবে আর ২৫ বছরের নারী পারবে না।″
″আপনি খুব বেশি লজিক খোঁজছেন বলে মনে হয় না?″
″তুমি খুব বেশি লজিক দেখাতে চাইছ বলে মনে হচ্ছে না?″
″আপনি কিন্তু এবার অতিরিক্ত বিরক্ত করছেন।″
″তুমি কোথায় কম করছ?″
″আপনি যে আসত ঢেঁড়স ছিলেন সেই আসত ঢেঁড়সই রয়েছেন একটুও বদলান নি।″
″হ্যাঁ আর তুমি সেই ঢেঁড়সের পঁচা অংশ।″
কথাটা শুনে আঁখির হাসি চলে আসল,হাসতে হাসতে বলল।
″ঢেঁড়সের পঁচা অংশ এ কেমন উপাধী?হা হা হা।″
″বেশ করেছি তোমার সাথে কথায় জিতে উঠার ক্ষমতা আমি কোথা থেকে জুটাবো,মুখে তো কথার ফুলঝরি,এবার চুপ করে শুয়ে পরো,স্যালাইনটা শেষ না হওয়া অব্দি জায়গা থেকে নড়বে না।″
″আপনি বললেন আর আমি করলাম, তাই না?মোটেও এমনটা ভাববেন না,আমি একদম ঠিক আছি,কাজ আছে আমার।″
আঁখি উঠে যেতে নিচ্ছিল,আদৃত আঁখিকে টান দিয়ে বসা থেকে বালিশে শুইয়ে দিল যাতে আদৃত বেশ ঝুকে আঁখির উপর চলে গেল,দু’জনের চোখে চোখ পরল,দু’জনের ঘন নিশ্বাস উপছে পরছে একে ওপরের উপর,হৃৎস্পন্দন দ্রুতগতির হয়ে গেল মুহুর্তেই দু’জনার,পুরাতন সেই সুপ্ত অনুভুতিগুলো নাড়া দিয়ে গেল দু’জনেরই মনে।তবে অল্প সময়ে আঁখি স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসলে আদৃতের বুকে আলত ধাক্কা দিল ওঠে যাওয়ার জন্য,ধাক্কাটাতে আদৃতও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসে আঁখির উপর থেকে উঠে বসল। বেশ শান্ত গলায় বলল আদৃত।
″সবকিছুতেই জেদ ভালো না আঁখি,আমার সাথে ঝগড়া করার ইচ্ছে, করো ইচ্ছেমতো কিন্তু নিজেকে কষ্ট দিয়ে না।ঘুমিয়ে থাকো,সুস্থ হয়ে গেলে ইচ্ছেমতো ঝগড়া করে নিও।″
″ঝগড়া আপনি শুরু করেন,আমি না।″
″না তুমি কেন শুরু করবে,ঝগড়া কাকে বলে তুমি তো জানোই না।″
আদৃতের কথায় দাঁত কেলিয়ে হাসি দিল আঁখি।আঁখির মুখের সে দুষ্টু হাসি মন ভুলালো আদৃতের,আঁখি ইচ্ছে করেই তার সাথে ঝগড়া বাঁধায় জানে আদৃত,আদৃতের সাথে ঝগড়া করা যে তার একসময়কার সব থেকে পছন্দের একটা অভ্যেস ছিল।অভ্যেসটা এখনও আঁখি যেতে দেয় নি জেনে মনে বেশ শান্তি পেল আদৃত,এবার বলল।
পারোও বটে তুমি,ঘুমোয় এবার, ঘুমের ঔষধ দিচ্ছি খেয়ে নাও, এমনিতেই ঘুম চলে আসবে।
রিয়াদ দেখা করতে এসেছে আজ আদ্রিশের সাথে,দু’জন বেশ সময় থেকে গল্পে মগ্ন একে ওপরের সাথে।আজ আদ্রিশ রিদিকাকে নিয়ে বাইরে যাবে বলেছিলে কিন্তু হঠাৎ রিয়াদ আসলেই যাওয়া কেন্সেল করে দিল সে।সেই কবে থেকেই রিয়াদকে নিয়ে পরে আছে,আদ্রিশ রিয়াদকে পেলে যেন দুনিয়া ভুলে যায় এমনটা মনে হয় রিদিকার,এখন থেকে নয় যবে থেকে এ বাড়িতে এসেছে রিদিকা তখন থেকে দেখছে এই রিয়াদকে নিজের জীবনের একটা আলাদা অংশ মনে করে আদ্রিশ,দু’জন ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে দূর থেকে তাদের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে তাকিয়ে আছে রিদিকা।
″রিয়াদ কি করব বল?আঁখিকে তো কোনোমতে আর ধরে রাখতে পারছি না।″
″আরে চিন্তা করিস না,এই মেয়েদের পিছন বেশি ঘুরলেই এমন,পাত্তা দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে দেখ এমনিই পিছন পিছন এসে ঘুরঘুর করবে।″
″আঁখি এমন না রিয়াদ।″
″আরে ঘুরে ফিরে সকল মেয়েরাই একই সেইম।″
চলবে……..
#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(২০)
আদৃত আঁখিকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে তাকে ঘুমোনোর কথা বলে কেবিন থেকে বেরুতে যাবে তখন সেখানে প্রবেশ করলেন ডা.আশরাফ ও ডা.আহিল সম্পর্কে আঁখির বড় ভাই।আহিল ছুটিতে ছিল,তবে তার বোন হাসপাতালে জয়েন করেছে শুনে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে নি,আজকেও ছুটি ছিল কিন্তু বোনকে দেখার আশ আর লুকোতে না পেরে চলে আসলো।এসে যখন শুনল তার বোন অজ্ঞান হয়ে পরে গেছে তখন তার ভিরতের অস্থিরতা কতগুণ বেড়ে গেছিল তা শুধু সেই জানে,তবুও নিজেকে কঠিন মানবরূপে উপস্থাপন করার দৃঢ় প্রচেষ্ঠা নিয়ে আসলো বোনের সন্নিকটে,ডা.আশরাফও মেয়ের অবস্থা সম্পর্কে জেনে নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে পারেন নি,দু’জনের ভিতরে অস্বাভাবিক ভাবটা থাকলেও বাহিরের দিক থেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক হয়ে থাকার চেষ্টা করে আসলেন। ডা.আশরাফ জিজ্ঞেস করলেন আঁখিকে।
ডা.আঁখি আপনার না কি শরীর খারাপ?
আঁখি জানে তার বাবা তার শরীর খারাপ শুনে অস্থির হয়ে আছেন যা উনি আঁখিকে বোঝাতে চাইছেন না কিন্তু আঁখি তা ঠিকই বুঝে নিতে পেরেছে,যার ফলস্বরূপ তার মনে এক উৎফুল্ল ভাব ছেঁয়ে গেল,তার বাবা ও ভাই তার উপর রেগে থাকলেও তাকে নিয়ে ভাবাটা বন্ধ করে নি তারা,এখনও আঁখিকে তারা ঠিক আগের মতোই ভালোবাসে,আঁখির জন্য যে তা খুব বড় পাওনা।আঁখি এবার বেশ খুশি মনে ঠোঁটের কোণে অল্প হাসি টেনে বলল।
″তেমন কিছু না স্যার,এমনিই একটু শরীর দূর্বল।″
″খবর পেয়েছি আপনার শরীর খুব দূর্বল,ডাক্তার আদৃত আপনার চেক আপ করেছেন,আপনাকে ছুটি দেওয়া হলো,বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নিন,শরীর ভালো হলে তখন এসে হাসপাতাল জয়েন করে নিবেন।″
কাঠকাঠ কন্ঠে কথাগুলো বলে চলে গেলেন ডা.আশরাফ,এবার আহিল বলল।
নিজের খেয়াল রাখবেন ডা.আঁখি,এতো বেখেয়ালি থাকলে হয়?
অতঃপর আহিলও চলে যেতে নিলে আঁখি উঠেই তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিল।ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলতে লাগল।
ভাইয়া ক্ষমা করে দে আমায়,বাবা মায়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোনো ক্ষমতা আমার নেই রে ভাইয়া,কিন্তু তুই তো আমার সেই ভাইয়া যে কখনও আমার উপর রাগে না,আমায় সবসময় মাথায় তুলে রাখে,যার চোখে আমার কখনও কোনো দোষ থাকে না,যার জন্য সে ম*র*তে বা মা*র*তে কখনও দ্বিধা করবে না তার দিক থেকে আজ কিভাবে সে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।এই ভাইয়া তুই না ২ ঘন্টার বেশি আমার সাথে কথা বলে থাকতে পারতি না তবে আজ তো ৩ বছর পেরিয়ে গেল,কিভাবে কথা না বলে আছিস বল?ভুল করে গেছি ভাইয়া,আদ্রিশের মিথ্যে ভালোবাসা হারানোর ভয়ে তোমাদের সাথে জড়িয়ে থাকা অকৃত্রিম ও সত্য ভালোবাসার বন্ধনের অসম্মান করলাম আমি,তার সাজাও তো পাচ্ছি আর সাজা দিস না,সহ্যের সীমা অতিক্রম হয়ে গেছে আমার,আল্লাহ আমাকে ছাড় দেন নি দেখ।দয়া করে আর পর করে রাখিস না।
আঁখির কথায় চোখের জমে আসা জল উপচে পরল,তবুও নিজেকে দূর্বল পরতে দিলো না আহিল,চেয়েও আঁখির দেওয়া ক্ষত সে ভুলতে পারে না,তাই অনেক করে নিজেকে সামলালো,আঁখিকে নিজের থেকে খুব সাবধানে ছাড়িয়ে নিল যাতে তার হাতের স্যালাইনের সুচের জায়গায় সে ব্যাথা না পায়।অতঃপর পাক না ফিরেই চলে গেল সে বেগতিক পায়ে।
আঁখি সেই জায়গায় হুমড়ি খেয়ে পরে কাঁদতে লাগল।
কয়েক মুহুর্তেই ইন্সপেক্টর ইশতিয়াক এর বাড়ির এড্রেস পেয়ে গেলো জিসান,কিন্তু তার বাড়ি গিয়ে উল্টো আরও নিরাশতায় পরল সে।তার স্ত্রীর কাছ থেকে জানা যায় ইশতিয়াক নিজেই ৭ বছর আগে প্রমত্ত অঙ্গনার হাতে খু*ন হয়।তার লা*শে*র পাশে লিখা ছিল।
অপরাধী হয়ে অপরাধীকে খোঁজে বেড়ানো হিসেবটা মিলে না।ল*ম্প*ট*দের নাশ তো হয়েই থাকে।
প্রমত্ত অঙ্গনা।
তার স্ত্রী জুলেখার কাছ থেকে আরও জানা যায়।ইশতিয়াক একজন চরিত্রহীন লোক ছিলো,মেয়েদের কুনজরে দেখত সে।অনেক নারীর সাথেই তার অ*বৈ*ধ সম্পর্ক ছিল, স্ত্রীকে অনেক মারধরও করত সে,তার একটা ছেলেও আছে,স্ত্রীর যাওয়ার কোনো জায়গা না থাকায় সবকিছুর পরও স্বামীর ঘরে পরে থাকত। কিন্তু ইশতিয়াকের হঠাৎ মৃত্যু হয়,তার স্ত্রী এতে অনিশ্চয়তায় পরে যান নিজের আর ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে,অতঃপর এর কয়েকদিন পরেই একটা কোম্পানি থেকে উনার জন্য জব অফার আসে। অথচ উনি এসবের কথা কখনও ভাবেনও নি।উনি এসএসসি পাশ হওয়ায় কোম্পানি টাতে পিয়নের পোস্ট পান উনি তাও সম্পূর্ণ সে কোম্পানির উদ্যোগে,উনি আজও এর পিছনের কারণ খোঁজে বের করতে পারেন নি।কোনো কোম্পানি কেনই বা নিজে থেকে এসে উনাকে জব অফার করবে,কিন্তু সব মিলিয়ে নিজের জব আর স্বামীর পেনশনের টাকায় ভালো যাচ্ছে জুলেখার দিন।তবে প্রমত্ত অঙ্গনা সম্পর্কে আর কিছু জানা নেই জুলেখার।
জিসান কিছুই ভেবে বের করতে পারছে না,কে এই প্রমত্ত অঙ্গনা? চায় কি সে?ইন্সপেক্টর ইশতিয়াককেও মেরে ফেলেছে এবার সে ১৩ বছর আগের কেসটা সম্পর্কে জানবে তো জানবে কি করে!
আঁখির স্যালাইনের সুচ এর জায়গাটা খুব ভালো করে দেখছে আদৃত,সুচটা জায়গা বিচ্যুত হয়েছে কি না।আঁখি অপলকে দেখে যাচ্ছে তাকে,আদৃত কতো খেয়াল করছে তার,একটু আগেই তো ফ্লোর থেকে সযত্নে তুলে তাকে বেডে বসাল।মুছে দিল তার চোখের জল,এবার কতো যত্নসহকারে তার পরিচর্যা করছে।কেন আদৃত এমনটা করে,এমন যত্ন,এমন দরদ তো আদৃত সেই বছর খানিক আগেও দেখাত আঁখিকে কিন্তু তখন যখন এসবের কোনো মানে ছিল না আদৃতের কাছে তবে এখন কীভাবে কোনো মানে থাকবে!সত্যিই কি আদৃত শুধু মনুষ্যত্ব থেকে আঁখির জন্য এমন করে!এবার আঁখি মুখ ফোটিয়ে জিজ্ঞেস করে বসল।
″কেন আমার জন্য এতো করেন আপনি?সবাই তো ছেড়ে চলে গেছে আপনিও চলে যান,কেন আছেন আমার পাশে?″
″বেঁচে থাকতে কখনও তোমাকে ছেড়ে যাব না আঁখি।″
″চাই না আমার কাউকে,যখন পাশে থাকার ছিল তখন তো ছিলেন না আর আজ যখন একা বাঁচতে শিখে গেছি তবে আজ আসছেন পাশে থাকতে।″
কথাটা বলে আঁখি দু′হাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগল।আদৃত এবার তার মাথায় সহানুভূতিময় হাত রেখে বলল।
ভুল করেছিলাম আমি,যার মাশুল আমায় দিতে হয়েছে প্রতিটা ক্ষণে,সে ভুল আর দ্বিতীয় বার করব না আঁখি কথা দিলাম।
আদৃতের কথা পুরো হতে না হতেই আঁখি ঝাপটে ধরল তাকে,মুখ গুজল তার বুকে,অতিরিক্ত কান্নায় ফুঁপানোর হার এবার বেড়ে গেছে তার অনেক,ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে আধভাঙ্গা বাক্যে প্রকাশ করতে লাগল সে তার মনোভাব।
কেন আদ্রিশ এমন করল,বলেন না?মনের পীড়া সহ্য করার ক্ষমতা জুটিয়ে উঠতে পারব না এ ভয়ে তার জন্য আমার সব ছাড়লাম, তবে সে কেন আমার জায়গায় অন্যকে বসাল।কেন?বলেন না,কি কমতি ছিল আমার মধ্যে?কেন আজ আমি একা হয়ে গেলাম,কেনো?এই ভুলের কি কোনো ক্ষমা নেই বলেন না ডা.আদৃত?
আঁখির বলা প্রতিটা অক্ষর আদৃতের বুকে গিয়ে যেন তীরের ন্যায় আঘাত করছে,আঁখির কান্না ধুমরে মুচরে দিচ্ছে তার হৃদয়,যার চোখে কখনও জল সহ্য করতে পারে না আজ তার জল থামানোর জন্যই কোনো বাক্য খুঁজে পাচ্ছে না আদৃত,তবে আদ্রিশকে ইচ্ছে করছে তার শেষ করে দিতে,আঁখির কষ্টের কারণকেই উপরে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার মূল থেকে।আঁখির পীড়া নাড়িয়ে দিয়েছে আদৃতকে,চোখ জলে টইটম্বুর হয়ে গেছে মুহুর্তেই,দু’ফোটা জল গড়িয়ে পরল এবার গাল বেয়ে,আদৃত শুধু আঁখির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তাকে শান্তনা প্রদানের অল্প প্রচেষ্টা করতে থাকল।
বেশ খানিকক্ষণ সময় আদৃতের বুকে মুখ লুকিয়ে কান্না করল আঁখি, অনেক দিন পর যেন সত্য ও শান্তির এক আশ্রয় তার মন হালকা করার বড় এক মাধ্যম হয়ে ওঠল।হ্যাঁ মনটা এবার বেশ হালকা লাগছে আঁখির,তবে আচমকা এক দুর্বোধ্যতা আঁকড়ে ধরেছে তাকে,একসময় যে বুকে ঠাই খুঁজতে কোনো দ্বিধা দন্দ ছিল না আজ সে বুকখানাতে ঠাই নিতে এক জড়তার মারপ্যাঁচে জড়িয়ে গেছে আঁখি।আদৃতকে ছেড়ে দিয়ে নিজেকে অতি স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করল সে।আদৃত এবার হাত বাড়িয়ে তার দু’চোখ আবারও মুছে দিল,আলতো স্বরে বলল।
হিটলার আঁখির চোখে এই জল মানায় না,আমাদের হিটলার কবে থেকে অন্যের দেওয়া শোকে কাতর হওয়া শিখে গেল!দেখো কেঁদে কেঁদে কি হাল করেছো নিজের,পুরো চেহারা লাল হয়ে আছে,এবার বন্ধ করো এসব,আর যেখানে কথা আশরাফ আঙ্কেল আর আহিলের উনারা তোমাকে অনেক ভালোবাসেন।দেখে নিও একদিন না একদিন তোমাকে আবারও আপন করে নিবেন তারা।
আদৃতের বলা এই কয়েকটা বাক্য আঁখির মনকে অসীম এক প্রশান্তির ছোঁয়ায় মাতিয়ে তুলল।মনে এলো তার অদম্য এক তৃপ্তিময় অনুভুতি,সবকিছু ফিরে পাওয়ার আশ্বাসটা হাজারগুণ বেড়ে গেল।বরাবরের মতোই আদৃতের কয়েকটা কথাই আঁখির ক্ষতে ওষুধের কাজ করল।
আজ স্ত্রী মাসুমার সঙ্গে অনেক ঝগড়া করে এসেছে রিয়াদ।তাকে ছেড়ে দিতে চায় সে,কিন্তু মাসুমা তাকে ছাড়বে না কোনো কিছুর বিনিময়েও,তার সন্তানদের অগোছালো একটা জীবন দিতে রাজি না মাসুমা,তাই সে রিয়াদকে ছাড়ছে না,এদিকে রিয়াদের মন ভরে ওঠেছে মাসুমার উপর,প্রেম করে বিয়ে করলেও এখন আর মাসুমাকে চাই না তার।নতুন বিয়ে করার জন্য এদিক ওদিক লু*চ্চা*মি করে বেড়াচ্ছে,আজ ঝগড়া করে সোজা পা*বে*ই চলে আসল রিয়াদ,এখানে এসেই পাশের বাড়ির মিসেস ইশানা হাফিজ কে দেখতে পেল,তার সাথে বেশ কিছুদিন থেকে আপত্তিকর কথাবার্তা হয় রিয়াদের, প্রায়ই ফোনে কথা বলে,অনেকদিন থেকেই তার উপর নজর রিয়াদের,স্বামী বড়লোক কিন্তু বেশ বৃদ্ধ, টাকা কামাই করতে গিয়ে অর্ধেক জীবন পার করে দিয়েছে,আর টাকার বল আছে বলেই এ বয়সে যুবতী মেয়ে বিয়ে করতে পারল।ইশানার বয়স কম,তার উপর থেকে সুন্দরী, স্বভাব চরিত্রেরও কোনো ঠিক ঠিকানা নেই,স্বামীর টাকায় ফুর্তি করাই তার মুখ্য কাজ,স্বামী সুন্দরী বউ পেয়েছে তাই তার উপর কখনও কোনো কথা বলে না,তাকে তার ইচ্ছে স্বাধীন ছেড়ে দিয়েছে,অন্ধের ন্যায় বিশ্বাস করে তাকে– যার লাভ ইশানা সবসময়ই নিয়ে থাকে।আজকেও একটা পাব এ এসেছে,স্বামী দেশের বাইরে,তাই ফুর্তি করবে আজ রাতভর এখানে ইশানা।হঠাৎ রিয়াদকে দেখে তার ভালোলাগার পরিমাণ দ্বিগুণ হলো,রিয়াদের মতো সুদর্শন পুরুষকে কাছে পাওয়ার তৃষ্ণা তার বহুদিনের।ইশানাকে দেখে রিয়াদেরও সুপ্ত মনের ভাসনা জেগে উঠল,ম*দে*র গ্লাস নিয়ে তার পাশে গিয়ে বসল,ইশানার সাথে অ*শ্লী*ল*তা*র সহিত কথা বলা শুরু করল,আচমকা ইশানা এসে তার কোলে বসে পরল হাতে ম*দে*র গ্লাস নিয়ে,ইশানা তার গ্লাস থেকে কিছু আংশিক ম*দ রিয়াদের মুখে ঢেলে দিল,অতঃপর রিয়াদ কা*মু*ক*তা*য় তাকে জড়িয়ে ধরতে নিলে ইশানা নে*শা*ক্ত হেসে উঠে ডান্স করতে শুরু করল।রিয়াদও সাথে উঠে গেল,একসাথে দুজন একে ওপরের গায়ে ঢলে পরে নাচতে লাগল,ডান্স করে করে ইশানা রিয়াদকে একটা কক্ষের দিকে আসার জন্য ইশারা করল তারপর সেদিকে হাঁটাও ধরল।রিয়াদও তার পিছু নিল।কিন্তু হঠাৎ ভিরের মধ্যে ইশানাকে কোথাও হারিয়ে ফেলল রিয়াদ,এদিক ওদিক খোঁজতে লাগল কিন্তু ইশানাকে কোথাও পেল না।ক্ষণিক পর ইশানার নাম্বার থেকে ফোন আসলে রিয়াদ ফোন ধরল।
″হোয়্যার আর ইউ বেবি?″
″বেবি আমি পা*বে*র বাইরের পিছনের দিকটায় আছি চলে আসো।″
″পিছনের ওই গাছগাছালি পূর্ণ জঙ্গল টাইপ জায়গায় কি করছ তুমি?
″চলে আসো না বেবি, আজ না হয় জঙ্গলে মঙ্গল করব দু’জন।″
″ওকে বেবি তুমি যেখানে বলবে আমি আসতে রাজি,অপেক্ষা করো আমি আসছি এক্ষুণি।″
অতঃপর পা*বে*র বাইরে চলে গেল রিয়াদ,পিছনের দিকটা বেশ গাছগাছালি পূর্ণ একটা জায়গা,সেখানে গিয়ে কাউকে পেল না রিয়াদ,আশেপাশে খোঁজতে লাগল ইশানাকে,কোথাও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না,তাই ভিতরের দিকে আর একটু ঢুকে তাকে খোঁজার চেষ্টা করল তার নাম নিয়ে,কিন্তু কোথায় তার সাড়া পেল না,হঠাৎ মাথায় আঘাত পেল,কিছু বোঝার আগেই জ্ঞান হারাল রিয়াদ।
অচেতন অবস্থায় পরে থাকা রিয়াদকে লোকারণ্য থেকে দূর করার প্রচেষ্ঠায় তার পা টেনে এক জনশুন্য নির্জন জায়গার দিকে হাঁটা ধরেছে হুডি পরা অজ্ঞাত সে জন, টানতে টানতে রিয়াদকে জনমানবহীন একটা জায়গায় নিয়ে আসে অবশেষে, রিয়াদের নাকে বেশ সময় টিপ দিয়ে ধরে থাকলে তার জ্ঞান ফিরে আসে অল্প সময়ে,জ্ঞান ফিরে আসলেও বুজে ওঠতে পারে না সহজে কিছুই,আশপাশ আর সামনের হুডিওয়ালা ব্যক্তিকে দেখে হকচকিয়ে যায় বেশ,নে*শা*ভ*রা কন্ঠে বোকার মতো প্রশ্ন করে তাকে।
″কে তুমি?আমাকে এখানে কেনো এনেছ?″
″কেনো রিয়াদ বেবি জঙ্গলে মঙ্গল করবে না?″
″তুমি ইশানা নও,কে তুমি?ইশানা কোথায়?
″পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে সে রূপসী,কিন্তু তোর অপেক্ষায় বসে আছে এখনও,বলছে তোকে সাথে নিবে,যার জন্য এতো আয়োজন।″
″কি যা তা বলছ!কে তুমি,আমাকে এখানে এনেছ কেনো বলো?″
″আমি প্রমত্ত অঙ্গনা,তোর মৃ*ত্যু হয়ে এসেছি।″
দেরি না করে সাথে সাথেই রিয়াদের বুক বরাবর ছু*রি ঢুকাতে গেলে রিয়াদ নিজেকে বাঁচাতে পাশে সরে যায় যাতে ছু*রি*ঘা*ত রিয়াদের পেটে পরে,রিয়াদ আঁতকে ওঠে যন্ত্রণায়,তবুও নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা ছাড়ে না,অজ্ঞাত ব্যক্তি আবারও তার বুকের দিকে ছু*রি ধরলে রিয়াদ ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দিলো,আর ছোটতে শুরু করল।
রিয়াদ লোকারণ্যের খোঁজে ছোটছে,চিৎকার করে লোক ডাকছে তাকে বাঁচানোর জন্য।প্রমত্ত অঙ্গনা নামের অজ্ঞাত সে জন তার পিছন ছোটছে,মনে যে নেই তার কোনো ভয়,রিয়াদের শেষ যেন আজ না দেখে যাবে না।রিয়াদকে সে বেশ ভিতরে নিয়ে গিয়েছিল যার ফলস্বরূপ রিয়াদ এতো ছোটেও লোকারন্য খোঁজে পায় নি এখনও,তাছাড়া নে*শা*তে ভরপুর শরীরে অতিরিক্ত দৌঁড়াবেই বা কেমনে,দৌঁড়াতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পরে গেল রিয়াদ,অজ্ঞাত সে ব্যক্তি আবারও তার উপর ঝাপিয়ে পরে তাকে ছু*রি*ঘা*ত করতে চাইলে তার সাথে ধস্তাধস্তি করে রিয়াদ এবারও সরে যেতে সক্ষম হলো,যাতে ছু*রি*ঘা*ত রিয়াদের পায়ের দিকটায় পরল,রিয়াদ আবারও নিজেকে ছাড়াতে পারল সে অজ্ঞাত ব্যক্তির দাপট থেকে, কোনোরুপ তাকে ধাক্কা দিয়ে উঠে পালাতে লাগল রিয়াদ।
চলবে………