প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব-১৭+১৮

0
189

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(১৭)

আদৃত রেডি হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে,শায়েলা মির্জা তাকে নাস্তার জন্য ডাকতে যাবেন তার আগেই আদৃতকে বেড়িয়ে আসতে দেখলেন।

″আরে বাবা তুই কোথায় যাচ্ছিস?নাস্তাটা করে যা।″

″না মা তাড়া আছে,আজকে হাসপাতালে প্রথম দিন,স্পেশাল কেউ আসছে যেতে হবে তাড়াতাড়ি। চলি।কথাটা বলেই আদৃত বেড়িয়ে গেল।″

ছেলের উৎফুল্ল মনোভাব বুঝে ওঠতে পারলেন মা,স্পেশাল কেউ কথাটা মনে উনারও খুশির জোয়ার তুলল।অবশেষে উনার ছেলে কি জীবনে এগুতে চলেছে!মনে আশাটা প্রস্ফুটিত হলো উনার।

সময়ের আগেই চলে এসেছে আদৃত,নতুনদের আগমণের জন্য মেডিকেল কলেজে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে।একে একে সবাই সে সমারোহে যোগদান করছেন।নতুন ছয় জন ডাক্তার নেওয়া হয়েছে, সবাই ইতিমধ্যে উপস্থিত হয়ে গেলেও আঁখির খোঁজ নেই,যদিও অনুষ্ঠান শুরুর অনেক সময় বাকি এখনও তবুও আদৃতের মনে নেই একটুও প্রশান্তি, গেটের দিকে চোখ রেখে বসে আছে কবে তার সুখপাখিকে একপলক দেখতে পাবে।অবশেষে আর ধৈর্য্য ধরে রাখতে না পেরে গেটের দিকে যেতে নিলে আঁখির গাড়ি গেটের ভিতরে প্রবেশ করল,গাড়ি থামলে ভিতর থেকে নামল আঁখি,অপলকে তাকিয়ে আছে আদৃত তার প্রিয়সীর দিকে,সেই কাজল টানা চোখের প্রেমে যে আজ আবার নতুন করে পরল সে।ঘন লম্বা সেই চুল,সেই মায়াবী চেহারা সারাদিন তাকিয়ে থাকলেও যে মন ভরবে না আদৃতের,এর চেহারায় মায়ায় কাটিয়ে দিতে সারাজীবনও কম পরে যাবে তার, গাড়ি থেকে নামতেই আঁখির চোখ গেল আদৃতের ওপর,মুগ্ধ চাহনিতে তাকিয়ে আছে সে।এই মুগ্ধতা তো আঁখি এর আগেও অনেক বার আদৃতের চোখে নিজের জন্য দেখেছিল কিন্তু তার এক অংশও তো সত্য ছিল না তবে আজকের অংশকে কিভাবে সত্য মানা যাবে!না এ মুগ্ধতা আঁখির জন্য হতে পারে না।এবার আঁখির খেয়াল গেল আদৃতের পরণের শার্টের ওপর,শার্টটা কেমন জানি পরিচিত লাগল আঁখির,চোখ পরল আঁখির শার্টের কলারের ওপর যেখানে ছোট্ট করে আঁখি লিখা,যেটা আঁখি নিজে আদৃতের শার্টে লিখিয়ে দিয়েছিল,শার্টটা কি করে ভুলতে পারে আঁখি,তারমানে এটা আঁখির দেওয়া আদৃতকে প্রথম শার্ট।আঁখির মনে এবার গভীর প্রশ্ন ঘোরপাক খেতে শুরু হলো।

ডা.আদৃত তো কখনও আমায় ভালোবাসেন নি তবে আমার দেওয়া শার্ট এখনও কেনে সামলে রেখেছেন?এর কি মানে হতে পারে।যদি ভালোই না বেসে থাকেন তবে ৭ বছর আগের শার্ট কেন সামলে রাখবেন?

গুড মর্নিং আঁখি।

″মুগ্ধতা কাটিয়ে আদৃত স্বাভাবিক অবস্থায় আসার চেষ্টা করে সকালের শুভেচ্ছা জানালে আঁখির ধ্যান ভাঙল, হাসিমুখেই জবাব দিল।″

″গুড মর্নিং ডা.আদৃত।কেমন আছেন?″

″এইতো আলহামদুলিল্লাহ।তুমি?″

″আল্লাহ যেমনটা রেখেছেন।″

″হুম,তা এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি করবে ভিতরে চলো।″

″হুম চলুন।″

অতঃপর দু’জনই সমারোহে অংশগ্রহণ করল।

আদ্রিশের মন ভালো নেই বুঝতে পারছে রিদিকা, রাতেও শুধু রিদিকার ক্ষততে ওষুধ লাগিয়ে ওকে ঘুম পারিয়ে ওর কক্ষ থেকে চলে এসেছিল সে।আদ্রিশের গালের কালচে দাগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তাকে কিছুই জানাল না আদ্রিশ,বর্তমানে রেডি হয়ে বেড়িয়ে যাবে তখনই রিদিকা সামনে এলো।

″কোথায় যাচ্ছো আদ্রিশ ব্রেকফাস্ট করবে না?″

″না রিদিকা,ইচ্ছে নেই।তোমার হাত এখন কেমন আছে?″

″এখন ঠিক আছে,আগে বলো কোথায় যাচ্ছো?তোমার গালের দাগ সম্পর্কে ও কিছু বললে না,আমি জানি তোমার মন খারাপ,আমি তো তোমার স্ত্রী আমার সাথে তো সব শেয়ার করতেই পারো,বলো না কি হয়েছে?″

″এখন ভালো লাগছে না রিদিকা,পরে বলব,কাজ আছে যাই,তুমি তোমার খেয়াল রেখো,ভাবি আর মা তারা কিছু যদি বলে তোমায় তবে আমাকে ফোন করো কেমন।কিছু লুকোতে যেও না আবার,এখন চলি আমি।″

″রাতে কবে ফিরবে?″

″রিয়াদের সাথে যাব একটু,তাই ফিরতে দেরি হবে।″

″রিয়াদ,রোজ কি ওর সাথে সময় কাটানো জরুরি?″

″একটাই বেস্ট ফ্রেন্ড আমার,দিনশেষে ওর সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে।আঁখির ওকে নিয়ে কখনও কোনো সমস্যা হয় নি,আশা করি তোমারও হবে না।″

কথাটা বলে চলে গেল আদ্রিশ।

সমারোহে নতুন আসা সকল ডাক্তার একে একে নিজেদের কিছু মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করলেন,ঠিক সেভাবে আদৃতও করল,এবার আঁখির পালা,আদৃত মনোযোগ সহকারে আঁখির বলা প্রতিটা লাইন শ্রবণ করছে।আঁখির বক্তব্যে বেশিরভাগ নারীদের নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে তোলার অনুপ্রেরণা রয়েছে,অতঃপর বক্তব্যের শেষের দিকে বলল আঁখি।

সব শেষে এটাই বলব,আমাদের সবাইকে মা বাবার সম্মান করা উচিৎ, কখনও তাদের অবাধ্য যাওয়া উচিত না,একটা সন্তান গড়ে তুলতে মা বাবা যে ত্যাগ স্বীকার করেন তা হয়ত আমরা কেউ কখনও পারব না মা বাবার জন্য,তাই বেশি কিছু না হলেও তাদের কথার মান তো আমরা দিতেই পারি। জানিনা অন্যেরা কি ভাবে কিন্তু আমার মতে যতই শিক্ষিত হয়ে যাওয়া যায় না কেন মা বাবার দোয়া ব্যতীত জীবনে সফলতা কখনও আসে না,কমতি টা একদিকে হলেও থেকেই যায়।ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মা বাবা এটাই কামনা।আবারও আসসালামু আলাইকুম সবাইকে।

মেয়ের শেষের বক্তব্য হৃদয় নাড়াল আশরাফ খানের,মেয়ের অনুতপ্ততা অনুভব করতে পারলেন উনি তার বক্তব্যের শেষে বলা প্রতিটা অক্ষরে।

আজকে প্রথম দিন তাই নতুন কাউকেই কোনো কাজ দেওয়া হয় নি,সবাই যার যার মতো সবার সাথে পরিচিত হচ্ছে, ঘুরে হাসপাতাল টা দেখে নিচ্ছে।আঁখিও দেখছে আবার মন ভরে হাসপাতাল টা,বাবার গড়া হাসপাতাল, নিজে ডাক্তার হলেও বাবার এই কলেজে পড়ে নি সে।বাবা কখনও চান নি কেউ বলুক নিজের মেয়ে বলে নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে ডাক্তারি পাস করিয়ে দেওয়া হয়েছে,কেউ তার মেয়ের যোগ্যতায় কলঙ্ক মাখুক তার সুযোগ উনি কখনও কাউকে দিতে ইচ্ছুক ছিলেন না,তাই অন্য বড় মেডিকেল কলেজে পড়িয়েছেন উনি মেয়েকে,তবে হাসপাতাল টায় আঁখি অনেক বার এসেছে,এখানে জমে আছে আঁখির আদৃতের সাথে কাটানো কতো স্মৃতি, আঁখি এখানে আসতই আদৃতকে পেরেশান করতে।কথাটা ভাবনায় ধরা দিতেই মুচকি হাসল আঁখি।কতো না বিরক্ত করত সে আদৃতকে,এভাবে কোনো ছেলে কোনো মেয়েকে উত্তপ্ত করে বলে মনে হয় না যেমনটা আঁখি আদৃতকে করত।ভালোবাসতো যে তাকে বড্ড,স্বপ্ন দেখেছিল তাকে নিয়ে,তাদের বিয়ে হয়ে,দু’টো গলুমলু বাচ্চা হবে,একটা ছেলে একটা মেয়ে,দু’জন মিলে দু’জনকে মানুষ করবে,কতো শত খুনসুটি বাঁধাবে একে ওপরের সাথে তবে দিনশেষে ভালোবাসায় ভুলিয়ে দিবে মনের সকল মনেমালিন্যতা।কিন্তু কি তে কি হয়ে গেল।সবকিছুই যদি সত্যিই স্বপ্নের মতো সহজে সাজানো যেত তবে জীবনটা নিশ্চয়ই বিষাদময় হতো।কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন,তা মানিয়ে নেওয়া দুর্বোধ্য হলেও এটাই সত্য।

কলেজের পিছনে একটা মাঠ,মাঠের এককোণে একটা বড় আকারের বট গাছ,তার নিচে বসার জন্য উপযুক্ত জায়গা বানিয়ে দেওয়া আছে,আঁখি সেখানে বসেই ভাবনার জগতে বিচরণ করছিল,তখন হটাৎ এসে আদৃত তার পাশে বসল।

অল্পক্ষণ দু’জনেই নিরবতা বজায় রাখল,অতঃপর আঁখি বলল।

″তা এতোদিন কোন হাসপাতালে ছিলেন?″

″আমেরিকাতে একটা হাসপাতালে ছিলাম।″

″আমেরিকাতে!কিন্তু কেন আপনি তো কখনও দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করতে চান নি,তবে হঠাৎ এমন চিন্তা মস্তিষ্কে নাড়া দিয়ে উঠার কারণ জানতে পারি?″

″কাউকে সুখী করতে গিয়ে নিজের অনিচ্ছার পথটাই বেঁছে নিতে হলো।″

″আপনি একটুও বদলান নি,ঘুরিয়ে কথা বলার অভ্যেস কবে যাবে আপনার বুড়ো দাদু হয়ে গেলে?″

″তুমিও তো একটুও বদলাও নি,খবরদারি করার অভ্যেস যায় নি।″

কথাটা শুনে আঁখি বেশ খক করে হেঁসে তাকালো আদৃতের দিকে,টোল পরা গালের সে মোহনীয় হাসি এতবছর পর আবারও চোখ ভরে দেখতে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে হলো আদৃতের।আঁখি হাসিমুখেই বলল।

″হাসেন না কেন?যতো যা হয়ে যাক না হাসার পণ টা এখনও ভাঙেনি আপনার তাই না?″

″হাসানোর নির্দিষ্ট জন জীবনে না থাকলে কিভাবে হাসিখুশি বাঁচা যায় বলো?″

আঁখি আদৃতের বলা কথাটা শুনে তাকানো স্থির রাখল তার দিকে, গভীর দৃষ্টিতে তার মনোভাব যেন পড়ে নিতে চাইল তার চোখের মাধ্যমে,ঠিক তখন একজন নার্স এসে ডাক দিল তাদের।

স্যার, ম্যাম, ডা.আশরাফ রায়হান আপনাদের ডেকেছেন।

নার্সের কথায় দু’জনেরই ধ্যান ভঙ্গ হলো,ওঠে চলে গেল দু’জন একসাথে আর কোনো কথা বলল না।

রাত প্রায় ১১ টা,রিপোর্টার লিজান তার বাসস্থানে ফিরছে,বাড়ির সরু রাস্তা দিয়ে নিজের বাইকে চড়ে যাচ্ছে সে,মাথায় আটছে হরেক কুবুদ্ধি, আঁখির থাপ্পড়ের জবাব সে দিয়েই ছাড়বে,এতবড় অপনাম সে সহজে মেনে নিবে না,আঁখিকেও সমপরিমাণ ফিরিয়ে দিবে।তাকে নিয়ে কি এমন খবর ছাঁপলে আঁখি কোথাও মুখ লুকানোর আশ্রয় পাবে না ভাবনাটা পেরেশান করে তুলেছে তাকে,তার ভাবনাকে বিরক্তিতে পরিণত করল হঠাৎ তার বাইকের চাকায় সমস্যা হয়ে যাওয়া।সহসা বাইকটার চাকায় কিছু লাগলে তা চলার গতি হারিয়ে ফেলে,লিজান পরে যেতে নিলে কোনোরূপ ভারসাম্য ধরে রাখে ,বাইক থামিয়ে রাস্তায় কীল পরে থাকতে দেখে, রাস্তায় এতো কিল পরে থাকতে দেখে বেশ ঘাবড়ে যায় লিজান,এটা কারো কোনো বিছানো জাল নয় তো ওর বিরুদ্ধে, রাস্তাটাও বেশ জনশূণ্য,এতো রাতে এখান দিয়ে লোক সমাগম কম,মনে ভয় নাড়া দিয়ে গেল লিজানের,বাইকটাকে টেনে নিয়ে বাড়ির দিকে দ্রুগতিতে যাওয়ার চেষ্টায় এগিয়ে যাবে তার আগেই পিছন থেকে লিজানের মাথায় পরল ভারি কিছুর আঘাত।মাথায় হাত দিকে পাক ফিরতেই হুডিওয়ালা কেউ তার বুক বরাবর একটা ধারালো ছু*রি পুরোটা ঢুকিয়ে দেয়,লিজান চিৎকার করে মাটিতে পরে কাতরানো শুরু করেছে,হুডিওয়ালা সে ব্যক্তি এবার হাঁটুগেড়ে তার সামনে বসে তার বুক থেকে এক টান দিয়ে ছু*রি টা বার করল,নিশ্বাস ধরে আসা কন্ঠে,কাপন্ত ঠোঁটে খুব কষ্টসহকারে তাকে প্রশ্ন করল লিজান।

″কে তুমি?আমাকে কেন মারছ?প্লিজ আমাকে মেরো না।″

″আমি তোর মৃত্যু, প্রমত্ত অঙ্গনা,তোকে যে আজ মরতেই হবে।″

অতঃপর সাথে সাথে ছু*রিটা লিজানের কপাল বরাবর ঢুকিয়ে দিলে লিজান সাথে সাথেই মৃ*ত্যু বরণ করল।

তার পাশে রক্তে ভিজে যাওয়া মাটিতে সে অঙ্গাত ব্যক্তিত্ব বড় বড় অক্ষরে লিখে দিল প্রমত্ত অঙ্গনা নামটি।

রাত প্রায় ১ টায় ফিরল আদ্রিশ বাড়িতে,কাজের মেয়ে রহিমা দরজা খুলে দিলো আজ,এখন তো রোজ রিদিকা দরজা খুলে দেয় তার জন্য,আজ কোথায় সে?উত্তরের আশা আদ্রিশ জিজ্ঞেস করল তাকে।

″রিদিকা কোথায়?″

″জানিনা স্যার,অনেক্ষণ ধরে দেখি নি।″

″হুম, আমি দেখছি।″

আদ্রিশ রিদিকার খোঁজে তার কক্ষের দিকে গেল।কিন্তু কক্ষের কোনো প্রান্তে রিদিকাকে খোঁজে পেল না সে,কক্ষ থেকে বেড়িয়ে যাবে তখনি রিদিকা হুটহাট প্রবেশ করল সেখানে।আদ্রিশকে দেখে কিছু অস্বাভাবিকতা থাকলেও স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন করার চেষ্টা করল।

″আদ্রিশ কখন এলে তুমি?″

″এই তো এলাম,তুমি কোথায় ছিলে।″

″ছাঁদে ছিলাম।″

″এতো রাতে ছাঁদে কি করছিলে?″

″ওই তো,তোমার অপেক্ষা করছিলাম,সময় পার হচ্ছিল না তাই ভাবলাম ছাঁদে গিয়ে চাঁদ দেখা যাক।″

″হুম।″

চলবে…….

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(১৮)

রাত ১ টা,আদৃতের ঘুম আসছে না,বার বার আঁখির স্মৃতি মনে ভাসছে,সারাদিন আঁখির সংস্পর্শে কাটিয়ে এসেও যে মনটা ভরে উঠে নি তার।আঁখির সাথে কথা বলতে বড্ড ইচ্ছে করছে। আঁখির কথা ভাবতে ভাবতে গিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকল,সুখপাখি নামের নিচে অনলাইন লেখা দেখে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটল তার,আজ ছয় বছর পর সেই নাম্বারে আবার মেসেজ পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হলো আদৃত,আসসালামু আলাইকুম লিখে সেন্ড করবে এর আগেই ওপর পাশ থেকে মেসেজ আসলো।

আসসালামু আলাইকুম ডা.সাহেব।

আঁখির তরফ থেকে মেসেজ পেয়ে আশ্চর্য হলো আদৃত।তাড়াতাড়ি জবাব দিলো।

″ওয়ালাইকুম আসসালাম।কি করছ হিটলার?″

″আপনার কথা মনে করছি।″ল

আদৃত কথাটার জবাবে অবাকত্বের ইমোজি দিলে আঁখি তার বদলে হাসির ইমোজি দিলো।আদৃত ভালোয় জানে আঁখি এসব মজা করছে।আদৃত আবার জিজ্ঞেস করল।

″তা ঘুম রেখে এতো রাতে অনলাইনে কি করা হচ্ছে?জানতে পারি?″

″ঘুম না আসলে যা হয় আরকি,টাইম পাস।তা আপনি কি করছেন? আমার কথা মনে করছেন না তো?″
রসিকতার ছলে বলল আঁখি কথাটা।উত্তর দিলো আদৃত।

″হতেও পারে।″

″কখনও সম্ভব না।″

″কেনো?″

″সাত বছর আগে যা হয় নি তা সাত বছর পরে হবে উক্ত আশা রাখাটা বোকামি হবে না?″

″এমনটাও তো হতে পারে আশাটা না করা বোকামি হবে।″

″ভালোবাসার মানুষ চিনতে তো আঁখি সারাজীবন বোকামি করে আসছে আগামীতে আর করবে না নির্ধিদায় থাকতে পারেন।ভালো থাকেন,শুভ রাত্রী।

অতঃপর আর দেরি না করে আঁখি অফলাইন চলে গেল।পুরনো সে ক্ষতগুলো মুহুর্তেই জাগ্রত হয়ে গেল তার।ফোন রেখে দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করে ঘুমানোর চেষ্টাতে মন দিল।

আদ্রিশ ক্ষিপ্ত হলো নিজের উপর।

ধূর, কই আঁখি নিজে থেকে কথা বলছিল আর আমি ওকে মানসিক একটু প্রশান্তি দেওয়ার বদলে উল্টো ওর মন খা*রা*প করে দিলাম।
আঁখি ঠিকই বলত আমি নিরামিষ,মেয়ে পটানোর নামে আসত ঢেঁড়স,তখন ওর এসব কথায় বিরক্ত হলেও এখন দেখছি এটাই সত্যি,যে বয়সে লোক ২ টা সন্তানের বাবা হয়ে যায় সে বয়সে আমি এখনও একজনের মনে রাজত্ব করে ওঠতে পারি নি,বিয়ে তো দূরেই থাক।ধূর, কি যে করি…
বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে দিল আদৃত।

″কি হয়েছে আদ্রিশ?কিছু তো বলবে?তোমার গালের দাগগুলো কিসের ছিল?তোমার মন খারাপ কেন?″

″আঁখির জন্য।আঁখিকে আনতে গিয়েছিলাম তখন ও আমার সাথে কু*কু*রে*র মতো আচরণ করে।আমি ওকে সত্য ভালোবাসি রিদিকা কিন্তু ও আমার ভালোবাসার মর্ম দিল না।″

″কি!ও তোমায় মেরেছে!কী করে করতে পারে ও তা!সব আমার জন্য হয়েছে,আমি তোমাদের জীবনে না আসলে এমনটা হতোই না,আমি চলে যাব তোমাদের জীবন থেকে,দেখবে আঁখি ঠিকই ফিরে আসবে তোমার কাছে,আমার আর কি কপালপোড়া যেভাবেই পারি বাকি জীবন কাটিয়ে নিব।আমি কাল সকালে নিজে যাব আঁখিকে আনতে।″

রিদিকা কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বললে আদ্রিশ তাকে বুকে টেনে নিল,তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল।

″না রিদিকা,অনেক হয়েছে আর না।তুমি কেন নিজের সুখ ত্যাগ করবে ওর জন্য যেখানে ও তোমার কথা ভাবতেও চায় না,ও আমাকে ছাড়া ভালো থাকতে চাইছে ওকে থাকতে দাও,আমিও বেশি মর্ম দিয়ে গেছি ওকে,ও ডিভোর্স দিবে তাই না?ঠিক আছে আমিও সাইন করব সে কাগজে,যখন উপলব্ধি করবে সত্যিই আমাকে হারিয়ে যাচ্ছে তখন কেঁদে কেঁদে ফিরে আসবে আমার কাছে।″

″আর যদি ফিরে না আসে।″

″ও আসবে,আমি জানি ওর মনে আমার জন্য সীমাহীন ভালোবাসা বিদ্যমান,যে আমার জন্য সব ছাড়তে পারে সে আমাকে কখনও ছাড়তে পারে না,কোনো কিছুর বিনিময়েও না।″

″হুম,আচ্ছা ঠিক আছে,এখন তুমি শুয়ে পরো,আমি দোয়া করব আঁখি যাতে ফিরে আসে।আমি এখন চলি।″

চলি বলে রিদিকা যেতে নিলে আদ্রিশ তার হাত ধরে নিল।

″কোথায় যাচ্ছো?″

″আমার রুমে।″

″তোমাকে যেতে হবে না,আঁখি নিজেই নিজের অধিকার হারিয়েছে,ফিরে আসলে ওর কক্ষ নিয়ে দেখা যাবে,বর্তমানে তুমি এখানে আমার সাথে থাকবে।″

কথাটা শুনে রিদিকার চেহারাতে খুশির উজ্জ্বলতা ফুটে উঠল,ঝাপটে ধরল আদ্রিশকে,তার বুকে মাথা গুঁজল।

চারিদিকেই আঁখির নাম শোনা যাচ্ছে, প্রথমত রিপোর্টার লিজানকে পাবলিক প্লেসে থাপ্পড় মারার ভিডিও কেউ ভাইরাল করে দিয়েছে সামাজিক গণমাধ্যমে, হিটলার আঁখি নামে পরিচিতি পেয়েছে আঁখি,যাতে তরুণ তরুণীরা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছে,অপরদিকে সেই লিজানের অপ্রত্যাশিত মৃ*ত্যু আঁখির উপর পুলিশকে আঙুল তুলতে বাধ্য করেছে।টেলিভিশন খুললে খবরে আর ফোন হাতে নিলে সামাজিক গণমাধ্যম সব জায়গাতেই আঁখির বিচরণ,এসব বহুল চাপে আঁখির নিশ্বাস নিতেও যেন দূরুহ লাগছে,সত্যিই আজ দূরে কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে করছে আঁখির।ঘর থেকেও বেরুনোর কোনো মানসিকতা নেই বর্তমানে আঁখির,তবুও মন মানিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরুল,আজকে বেশ সকাল বেড়িয়েছে,আদ্রিশের ফ্রেন্ড রিয়াদ ওকে কিছু আর্জেন্ট প্রয়োজন বলে কফিশপে ডাকাল,আঁখি যদিও বলেছিল তার বাড়িতে চলে আসতে তবে রিয়াদ তাকে কফিশপেই আসার জন্য অনুরোধ করল,আঁখি বলল হাসপাতালে যাওয়ার আগে ৫-১০ মিনিটের সময় ও রিয়াদকে দিতে পারবে তাতেই রিয়াদ রাজি হয়ে গেল।আঁখি আসার আগেই রিয়াদ এসে সেখানে তার অপেক্ষা করছিল।আঁখি এসে তার দু’জন গার্ড সহিত রিয়াদের বিপরীত দিকে গিয়ে বসল।রিয়াদ এবার বেশ অস্বাভাবিকতা নিয়ে বলল।

আসলে আমি তোমার সাথে প্রাইবেট কিছু কথা বলতে চেয়েছিলাম।

আঁখি রিয়াদের মনোভাব বুঝতে পেরে তার গার্ডদের একটু দূর হয়ে দাঁড়াবার ইশারা করল,কথামতো গার্ডগুলো একটু দূর হয়ে দাঁড়ালো। এবার আঁখি বলল।

″আশা করি যা বলার তাড়াতাড়ি বলবে রিয়াদ,আমি কিন্তু তোমাকে সময় বেশি দিতে পারব না,তোমার ভালোয় জানা আছে।″

″হুম,তোমাকে তো পাওয়াই যায় না,এখন যখন হাতের নাগালে পেয়েছি তবে যা বলার পরিষ্কার বলে দিব। ″

″বলো কি বলবে?″

″ওই বলছিলাম যে তোমার সাথে আদ্রিশ এমনটা করবে কখনও ভাবি নি আমি,ওকে আমি বেস্ট ফ্রেন্ড মনে করতাম ভালো মানুষ মনে করতাম,কিন্তু ও কি করল,তোমার মতো পেয়েকে হাতছাড়া করল সামান্য ওই রিদিকার জন্য।কতো বড় বোকা ও,ছিঃ…ওর জায়গায় আমি হলে কখনও এমনটা করতাম না,তুমি এডাল্ট,আত্ননির্ভরশীল,সাহসি,তার উপর সুন্দরী এমনটা করার কথা হয়ত কখনও কোনো পুরুষই ভাবত না যেমনটা আদ্রিশ করেছে।ওকে বন্ধু বলতেও লজ্জা হচ্ছে আমার।″

″তুমি কি বলতে চাও রিয়াদ?পরিষ্কার করে বলো।″

″দেখো আঁখি অনেকদিন ধরেই তোমার সাথে আমার চ্যাটে কথা হয়,হয়ত তুমি ভালোয় বুঝে গেছো আমার মনোভাব,এখন আর ঘুরিয়ে কিছু বলতে চাই না তোমায় আমি।আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি আঁখি,সত্যি বলছি আদ্রিশের মতো কখনও তোমাকে ঠকাব না।″

″হুম বুঝলাম,তা তোমার আগের স্ত্রী আর দুটো সন্তানকে কি করবে ভেবেছো?″

″আরে ওদের নিয়ে তুমি চিন্তা করো না তো,মাসুমা কে তো এমনিতেই ছাড়ছি আমি,ওর সাথে ভালো যাচ্ছে না আর আমার,আর যেখানে প্রশ্ন আমার বাচ্চাদের ওরা মাসুমার কাছেই থাকবে ওদের ভরণ পোষণ আমি দিব,আমিও তো একজন উকিল টাকার কমতি হবে না তুমি জানোই,ডিভোর্সের ব্যপারটাও দেখে নিব।″

সহসা আঁখি রিয়াদের এক হাত অতি স্বাভাবিক
ভাবে খামছে দাঁত কটমট করে বলতে শুরু করল।

পাবলিক প্লেস তাই সিন ক্রিয়েট করতে চাইছি না,এমনিতেই অনেক প্যারায় আছি,নইলে এখনই তোর এমন জায়গায় এমনভাবে মা*র*তা*ম যে আবারও বাচ্চা জন্মদানের যোগ্য থাকতি না,শা**লা লু**ই**চ্ছা,কতো ভালো ভাবতাম তোকে,কিন্তু কয়েকদিনে তোর সাথে চ্যাটে কিছু কথা বলে বুঝতে পারলাম তুই কেমন।আমি তো এমনিই তোর কথার উত্তর দিতাম আদ্রিশের বন্ধু ভেবে কিন্তু তোর মনোভাব বুঝতে পারার পর তোকে এরিয়ে চলি অবশেষে তুই দেখিয়ে দিলি তোর আসল রুপ,আদ্রিশের ফ্রেন্ড তুই তোর কাছ থেকে আশাও আর কি করা যেতে পারে।জানিস আমার মতে তোদের মতো পুরুষের উপর কোনো কেস না করে তোদের একদম প্রাণে মে*রে ফেলা উচিৎ। নোং*রা কোথাকার। আর যেনো তোকে আমার সামনে না দেখি,নইলে আঁখি কি জিনিস দেখিয়ে দিব।

কথাগুলো বলে আঁখি উঠে চলে গেল,হাতে যন্ত্রণা হলেও রিয়াদ এতসময় দাঁত চেপে তা সহ্য করছিলে,আঁখি চলে গেলে হাতের দিকে তাকালো,আঁখির নখগুলো বেশ ক্ষত করেছে তার হাতে,র**ক্ত বেড়িয়ে গেছে এতসময়ে।

আদ্রিশ ডিভোর্স পেপারে সাইন করার জন্য হাতে কলম নিয়েছে।সাইন করার জায়গায় গিয়ে যেন আর শক্তি জুটিয়ে উঠতে পারছে না সে জায়গায় কলম বসানোর,কতো কিছুর পর যে আঁখিকে সে নিজের করে পেয়েছিল তাকে এতো সহজে কেমনে হারিয়ে দেবে!না আঁখি তো তার জন্য অসাধ্য এক সাধনা ছিল।যাকে সে তার বুকের চূড়ায় জায়গা দিয়েছে,তার সর্বাঙ্গে তো আঁখির বাস।হাজার ছেলের প্রেমিক হৃদয়ে ছু*রি চালিয়ে জয় করেছিল সে আঁখিকে,তার আঁখির জোরি দেওয়ার মতো নারী আর একটাও আদ্রিশ কখনও দেখে নি,এমন এক রমণীকে হাতছাড়া সে কিভাবে করবে!না ভাবতেই তো ধম বন্ধ লাগছে আদ্রিশের,কি করবে সে?

আদৃত ফোন করল আঁখিকে,আঁখি গাড়িতে বসে আছে বেশ বিরক্তি নিয়ে।আদৃতের ফোন আসলে সে বিরক্তি কিছুটা হলেও দূর হলো,আদৃতই যে প্রথম এবং শেষ ব্যক্তি যার কোনো কাজেই কখনও আঁখির বিরক্তি আসে নি।ফোন ধরল আঁখি।

″হ্যাঁ ডা.সাহেব,বলুন?″

″আসছো হাসপাতালে?″

″হুম, এখন তো সার্জনের সাথে প্রফেসরও,ক্লাস ও জয়েন করতে হবে না আসলে পারি?তা আপনি আসছেন?″

″ভুলে যাবেন না,প্রফেসর শুধু তুমি একা নও।″

″হুম,তবে চলে আসুন প্রফেসর সাহেব।″

″আসছি প্রফেসর সাহেবা,তা রাখি হাসপাতালে দেখা হচ্ছে ″

″হুম।″

ফোন কেটে দিয়ে বেশ খুশি মনে কক্ষের বাইরে বেড়িয়ে আসল আদৃত,আস্তে আস্তে তার আর আঁখির সম্পর্কের তিক্ততা দূর হচ্ছে তার আর কি চাই।আঁখিকে ফিরে পাওয়ার কোনো পথ বাদ রাখবে না আদৃত এবার।

ড্রয়িংরুমের সোফায় মিডি ড্রেস পরে বসে আছে রিংকি,ইশিকা তাকে নানান রকম জেরা করছে।

″তুমি কি অস্ট্রেলিয়া থেকে এখানে এসেছ শুধু ভাইয়ার সাথে দেখা করবে বলে?″

″হ্যাঁ,ও এতদিন থেকে এসেছে যাওয়ার নাম নিচ্ছে না,তাই ভাবলাম এসে ওর খোঁজ নেই,এমনি তো ফোনও ধরে না,তাছাড়া বাংলাদেশে কখনও আসা হয় নি এক সুযোগে বাংলাদেশ দেখাও হয়ে যাবে সেই ভাবনায় চলে আসলাম।″

″আমার ছেলে আর যাবে না।আমি ওকে বিয়ে করাব।তুমি যখন এসছো দু’দিন ঘুরে চলে যেতে পারো।″

″মা,কি বলছ এসব?…বাবা তুমি মাকে একটু বোঝাও আমি ভাইয়াকে ডেকে আনি।″

শায়েলা আর আরিয়ান মির্জা একপাশে দাঁড়িয়ে আছেন।রিংকিকে প্রথম দেখায়ই পছন্দ হয় নি শায়েলা মির্জার।
আরিয়ান মির্জা উনার স্ত্রীকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন।

″শায়েলা তুমি তো মেহমানদের সাথে কখনও এমনটা করো না,তবে ওর সাথে এমনটা করছ কেনো?″

″আরে দেখছ না,শেউলা গাছের পে*ত্নি আসছে আমার ছেলের ঘাড়ে চড়বে বলে।কাপড় দেখো ওর।″

″কি শায়েলা শিক্ষিত হয়ে এমনটা করছ!এটা আজকালকার ফ্যাশন।তাছাড়া ও আমেরিকায় বড় হয়েছে″

″গো*ল্লা মারো তোমার ফ্যাশন,শিক্ষিত হলেই যে হাঁটুর উপর কাপড় পরতে হবে এটা কোন বইয়ে লিখা আছে।আমার মেয়েও তো শিক্ষিত কই কখনও এমন কিছু পরতে দেখি নি তো,আঁখিও তো ধনী বাপের একমাত্র মেয়ে ছিল,কখনও তাকে তো এমন কাপড় পরতে দেখি নি,ফ্যাশন করবে ঠিক আছে সীমানার ভিতরে করলেই তো হয়।শরীর দেখিয়ে আবার কেমন ফ্যাশন?″

″ইশ তোমাকে বোঝানোর ক্ষমতা আমার দাদারও নেই হয়ত।মা ছেলের মনের দড়ি ঘুরে ফিরে আঁখিতেই সীমাবদ্ধ ″

″আর ওখানে থাকবেও সীমাবদ্ধ,কারণ আঁখির জায়গা নেওয়া ক্ষমতা যার তার নেই।লাখে একটা মেয়ে আঁখি।″

তাদের কথার ফাঁকে আদৃত চলে আসলো সেখানে।রিংকিকে দেখে অবাকত্বের সাথে বিরক্তি ভাব নিয়ে বলল।

″তুমি এখানে কি করছ?″

″তোমার খোঁজে এসেছি, তুমি তো ফোনই ধরো না,দেশে কবে ফিরছ?″

″আমি আমেরিকা আর যাব না,তোমার এখানে এভাবে আসা ঠিক হয় নি,এসেছ ভালো কথা,এখানে থাকো কয়েকদিন বেড়িয়ে যাবে,ইশিকা ওর জন্য যেকোনো একটা গেস্ট রুম রেডি করাও।″

কথাটা বলে চলে গেল আদৃত,শায়েলা মির্জা মনে মনে অনেক খুশি হলেন।

চলবে…….