প্রিয়_ভালোবাসা পর্ব-০৭

0
2945

#প্রিয়_ভালোবাসা
#Nishat_Tasnim
#পর্ব:৭

কারো শরীরের দুই অংশ দেখার পর আমার পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো।চিৎকার দিতে গিয়ে মুখ চেপে ধরলাম।আমার ইতোমধ্যে হাঁপানি শুরু হয়ে গিয়েছে।

আমি ভালো করে দেখতে যাবো তার আগেই কারো পায়ের শব্দ শুনলাম,সাথে সাথে লুকিয়ে পড়লাম পর্দার আড়ালে।আমি এখনও কাঁপতেছি,জীবনে কখনও এমন কিছু দেখি নি,তাই শরীর কাঁপছে।কিন্তুু কার বডি ছিলো?মেয়ের নাকী ছেলের?শরীরের দুই খন্ড, বাকীগুলো কই?চোখের সামনে ওটা ভেসে উঠতেই শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো!

কিছুক্ষন আগে মামাী ফোন কাটার পর আমার আবার ছবির কথা মনে পড়ে গেলো,নিজের মনকে কিছুতেই মানাতে পারছিলাম না।তাই চুপিচুপি আবারো ওই রুমে চলে আসলাম খুঁজতে।

কিন্তুু এসেই দেখলাম রুমটাতে তালা মারা।তালা দেখেই ভ্রু দুটি কুচকে ভাবতে লাগলাম একটু আগে যখন এসেছিলাম তখন তো তালা দেখি নি,এখন তালা কেনো?নিশ্চয় কোনো গন্ডগোল আছে।আশেপাশে ভালো করে চাবি খুঁজতে লাগলাম,কিন্তুু কোথাও পেলাম না।বিষন্ন মন নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়াতেই দেখলাম ফুলদানির ভেতর কিছু দেখা যাচ্ছে,আমি দ্রুত ভালো করে চেক করতেই দেখলাম চাবী।

চাবী নিয়ে হাসি মুখে দরজা টা খুলে আবার লাগিয়ে দিলাম।পুরো রুম খুজেও কিছু পেলাম না,আলমারির উপরের এ্যালবামটাও নেই।টুল নিয়ে ভালো করে দেখেও পেলাম না,টুল টা নিয়ে যখন ওয়ালের সাথে রাখলাম তখন কেমন যেনো শব্দ করে উঠলো।আমি দ্রুত টুলটা সরিয়ে ওয়ালে আঘাত করতেই আবারো শব্দ করে উঠলো।আমার ধারনা পিছনে কিছু আছে,তাই একটু ঘাটাঘাটি করতেই হুট করে একটা দরজা খুলে গেলো।আমি তো পুরো অবাক, এখানে সিকরেট রুম আছে?

ঘুটঘুটে অন্ধকার কিছুই দেখা যাচ্ছে না,হাত দিয়ে এদিকে ওদিকে খুঁজে লাইটের সুইচ পেলাম।লাইট জ্বালাতেই আমার সামনে একটা রেফ্রিজারেটর দেখতে পেলাম।সবকিছু কেমন ভয়ানক লাগছিলো, অনেক দ্বিধাদন্ধ নিয়ে একটা ড্রয়ার খুলতেই দেখতে পেলাম কারো শরীরের দুই অংশ,সাথে সাথে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।বরফ দিয়ে ঢাকা, আরো কত কিছু দেওয়া ছিলো।ভালো করে দেখার আগেই তো কে চলে আসলো।

আমার কাঁপুনির কারনে পর্দা বারবার নড়ছে।হঠাৎ দেখলাম ওই ব্যক্তির পায়ের শব্দ আমার দিকে আসছে।আমি পুরো গাবড়ে গেলাম,কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।আমি আস্তে ওখান থেকে সরে দরজার কাছে চলে গেলাম।পিছনে না তাকিয়ে পা টিপে টিপে ওখান থেকে বের হয়ে দ্রুত গতিতে রুমে চলে আসলাম।

রুমে ঢুকে জগ থেকে পানি ঢেলে গটগট করে খেতে লাগলাম।পরপর তিন গ্লাস খাওয়ার পর আমার হাঁপানি কমতে লাগলো।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে বিছানায় বসলাম।আল্লাহ গো কী দেখলাম এটা?এত ভয়ংকর, চোখ বন্ধ করলেই চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো।

—“কি হলো কী ভাবছো?”

হটাৎ কানের কাছে কারো আওয়াজ পেয়ে ভয়ে পেয়ে গেলাম।সাথে সাথেই কেঁপে উঠলাম।কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,,,”কককী ককই কককী ভাবছছি?”

–“তাই নাকী? তো এতো তোতলাচ্ছো কেনো?”

—“ওই ওই ওই,,

—“হুম,,ওই কী?

—“কিছছু নননা,আসলে ওখানে তেলাপোকা দেখেছিলাম।”

–“হুম,গেস্ট রুমে তেলাপোকা থাকে আগে তো জানতাম না!”

আমি এবার চমকে উঠলাম,,কেঁপে কেঁপে বললাম,,”মমানে??

উনি এবার সামনে এসে বললেন,,,”ওই রুমে কেনো গিয়েছিলে?তোমাকে টাকা দিয়ে কিনে আনা হয়েছে সো আমার কথা মতো চলবে,এদিক ওদিক জাসুসি কেনো করো, হোয়াই?প্রথমবার বলে মাফ করে দিলাম, নেক্সট টাইমে সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো।”

এমনিতেই ভয় পাচ্ছিলাম তার উপর এমন শান্ত গলার ধমকিতে আরো ভয় পেয়ে গেলাম।উনি আমার সামনে থেকে উঠে গিয়ে ওয়ারড্রব খুলে কিসের বক্স বাহির করলেন।বক্স নিয়ে আমার সামনে এসে বসলেন,বক্স খুলতেই দেখলাম ব্যান্ডেজ বের করছেন।আমি চুপচাপ বসে সব দেখতে লাগলাম।

উনি ব্যান্ডেজ করতে করতে বললেন,,,”এতো উড়া ভালো নয়,না হলে ডানা কেটে যাবে।এখানে আমি যেভাবে বলবো ওভাবে থাকবে,একদম বুদ্ধি ব্যবহার করতে যাবে না।আর চলতে ফিরতে একটু দেখে শুনে চলো না হলে কোনদিক দিয়ে বিপদ আসবে বুঝতেও পারবে না।”

এদিকে আমি ভাবতে লাগলাম উনি আমাকে দেখলো কীভাবে?আর উনি জানলেনই কীভাবে আমার হাত থেকে ব্লিডিং হচ্ছে?

উফফ শিট!!!মনে হয় ওখানে আমার হাতের রক্ত লেগেছিলো,ইশশ রে!

উনি আমার দিকে তাকিয়ে আমার হাবভাব বুখতে পেরে বাঁকা হেসে বললেন,,”বাহ্ এত দ্রুত বুঝে গেলে?ব্রিলিয়েন্ট বাট এখানে ভুলেও তোমার ওভার স্মার্টনেস দেখাবা না।কি বললাম বুঝেছো তো?”

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম হুম বুঝেছি।

উনি বক্স রাখতে রাখতে বললেন,,” যা দেখেছো তা দুঃস্বপ্ন মনে করে ভুলে যাও,এতে তোমারই ভালো হবে।”

আমি ঘাড় ঘুরিয়ে উনার দিকে তাকালাম,তার মানে উনি সব বুঝে গেছেন।আমি যা দেখেছি তা ভুল ছিলো না।উফফ কী হচ্ছে কী,এত কনফিউশান?
_____________________

শাশুড়িমায়ের রুমের সামনে উঁকিঝুকি করতেছি উদ্দেশ্য উনার থেকে সব জানবো।কিন্তুু তার আগেই ভেতরের কথা শুনে থমকে গেলাম।শাশুড়িমা কাউকে বলছে,,”না,না,আমি ওকে তেমনই বলেছি যেমনটা বলতে বলেছো।আর এক্সট্রা কিছু বলিনি।না, না, আর কিছু বলবো না।”

উনার কথা শুনে আমি হতবাক। হচ্ছে টা কী?আমি তো কিছুই বুঝতে পারতেছি না,এরা কী সবাই আমার সাথে ষড়যন্ত্র করছে?কিন্তুু কেনো?কেউ আপন নয়, সবাই মিথ্যাবাদী।এদের থেকে সাবধানে চলতে হবে।

আমাকে নিজে নিজে সব বের করতে হবে,কাউকে কিছু বলা যাবে না।আমি জেনেই ছাড়বো এরা সবাই কেনো আমার সাথে এমন করছে?কিন্তুু কার কাছ থেকে জানবো?আমার কাছে তো ফোনও নেই আর না কেউ আমার সাথে কথা বলে।

আপন মনে হাঁটতেছি আর ভাবতেছি কী করা যায়?হঠাৎ সামনে থেকে কেউ বলে উঠলো,,–“মেম একটু সাইড দিন।”

চোক তুলে তাকিয়ে দেখি বাসার এক মেইড,আমি একপাশে সরে মেইডের দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই হঠাৎ আমার মাথায় এক বুদ্ধি আসলো।মুখে হাসি ফুটিয়ে গন্তব্যে রওনা দিলাম।

রান্নাঘর খুঁজে পেতে বড় বেগ পেতে হয়েছে।এত বড় ঘর কই কী আছে ঠিক মতো জানিও না।রান্নাঘরে ঢুকেই দেখলাম ১০/১২ জন মেইড কাজ করছে।আমি সবাইকে আড়চোখে ভালো করে দেখে নিলাম,অদ্ভুদ ব্যাপার আমাকে দেখেও ওরা কেউ কিছু বলছে না, নিজের মতো কাজ করতেছে।

আমি পানি খাওয়ার ভান করে একটু বয়স্ক মেইডকে বললাম,,”পানি দিতে,উনিও বিনা বাক্যে দিয়ে দিলেন।

এবার আমি হাঁসফাস করতে লাগলাম।কীভাবে জিজ্ঞাস করবো আর কী জিজ্ঞাস করবো ভেবে পাচ্ছি না।

আমি একটু মেকি হাসি দিয়ে বললাম,,”উনি খুব ভালো তাই না?”

আমার কথায় মেইড টি বলে উঠলো,,”উনি কে?”

আমি একটু লজ্জা ভাব নিয়ে বললাম,,,”অনুভব।”

মহিলা-মেইডটি এবার আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে বলে উঠলো,,”হ্যা,উনি মনের দিক দিয়ে খুব ভালো।”

আমি কিছু বলবো তার আগেই পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো,,,”ওরা কেউ কিছু বলবে না।তুমি কী জানতে চাও আমাকে বলো আমি বলবো।”

আমি পিছনে ফিরে চমকে উঠলাম,ওমা উনি দরজায় হেলান দিয়ে দুই হাত বুকে ভাজ করে দাড়িয়ে আছেন।উনার মুখে রয়েছে রহস্যময়ী হাসি।

আমি কোনোরকম হেসে বললাম,,,”কই কী জিজ্ঞাসস করছি?আমি তো শুধু পানি খেতে এসেছিলাম।”

উনি হাতের ভাজ খুলে সোজা হয়ে দাড়িয়ে ভ্রু কুচকে বললেন,,”তাই নাকী?আচ্ছা চলো তোমাকে কিছু দেখাবো।”বলেই আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলেন।

এদিকে আমারর বুক ভয়ে লাফাতে লাগলো।কারন একটু আগেই উনি আমাকে বলেছিলেন আমি যেনো ব্রেন না চালাই।উফফ, আমি যে কী, একটু আশেপাশে দেখে বলা উচিত ছিলো,কিন্তুু উনি এখানে কেনো এসেছেন?

বিছানায় বসে মনে মনে আল্লাহ ডাকতেছি,ভেতরে যেমন ভয় পাচ্ছি উপরে তা একটুও বুঝতে দিচ্ছি না।আমি ভয় টা পাচ্ছি কারন উনি আমার সামনে কত ধরনের অস্ত্র বিছিয়ে রেখেছেন যার মধ্যে মাএ কয়েকটা জিনিস আমি চিনি বাকি গুলো কোনোদিন দেখিও নি।

ছুরি,কাঁচি,বন্দুক, মেশিন সবকিছুর মধ্যেও আমার চোখ ঘুরে ফিরে ডানপাশের তিন নম্বর জিনিসটার দিকে যাচ্ছে। কি সুন্দর ওটা, কিন্তুু কী?

–“উনি আমাকে জিজ্ঞাস করলেন এগুলার মধ্যে সবচেয়ে ভালো লাগে কোনটা?

আমিও কোনো কিছু না ভেবে ছোট ওইটা দেখিয়ে দিলাম।উনি রহস্যময়ী হাসি দিয়ে ওইটা নিয়ে উপরের কভার খুলে ফেললেন,ওমা খুলতেই দেখি কী সুন্দর অসাধারন কাজ করা ছুরি।

উনি ছুরিটা আমার দিকে এগিয়ে দিতে আমি হাত বাড়ালাম।কিন্তুু উনি ছুরিটা আমারা হাতে না দিয়ে আমার হাতের তালুতে বসিয়ে এক টান দিলেন,সাথে সাথে রক্ত বের হতে লাগলো আর আমি এক চিৎকার দিয়ে হাত সরিয়ে ফেললাম।

চলবে,,,,