প্রিয়_ভালোবাসা পর্ব-০৬

0
2812

#প্রিয়_ভালোবাসা

#নিশাত_তাসনিম

#পর্ব:৬

—“যে ছেলে টাকা দিবে মা-বাবার কাছে সেই বেষ্ট ছেলে!একবার টাকা না দিলে আর সে ছেলে, ছেলেই নয়।টাকা নেওয়ার সময় কত অভিনয় করে,আদর করে এরপর টাকা দিয়ে দিলে আর খবরও রাখে না,যত্তসব!!”

—“কিরে কাকে এসব বলছিস?”

—“আর বলো না মা,,,রাফি এবার তার বাবা মাকে টাকা দিতে পারে নি,এখন আর সে ভালো না,এখন উনাদের মেঝো ছেলে ভালো।”

—“ওহ।”

এদিকে আমি উনাদের দিকে ডেবডেব করে চেয়ে আছি,কি বললো?আর উনিই বা কী বুঝলেন?এরা এমন শর্টকাট কথা বলে কেনো?
শাশুড়ি মাকে প্রশ্ন করতেই উনি বললেন,,,রাফি নাকি অনুভবের অফিসের কর্মচারী,বেচারা এবার ফ্ল্যাট কিনায় তার বাবামাকে টাকা দিতে পারেনি,তাই এখন উনারা রাফিকে উল্টাপাল্টা বলেছেন। আরো কী কী বলেছেন যা আমার মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে।

♦♦

—“একবার দিলে কী হয়?শুধু ২মিনিট কথা বলবো,প্লিজ।আমি উনাদের ছাড়া কোথাও কখনও থাকি নাই তো, তাই বলতেছি।প্লিজ শুধু ২মিনিট কথা বলবো।”

গত কয়েকমিনিট থেকে উনার কাছে আকুতি-মিনতি করতেছি, বাড়ীতে কথা বলার জন্য কিন্তুু উনি এমন ভান করতেছেন যেনো কিছু শোনেনি। এবার খুব কান্না পাচ্ছে,জোরে জেরে কেঁদে দিতে পারলে কলিজা টা ঠান্ডা হতো।

উনার এমন গা ছাড়া ভাব দেখে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম,মনটা খুশি করতে ছাদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।যদিও এতোটা সুস্থ হই নি তাও মন সুস্থ করতে খোলা জায়গায় যেতে ইচ্ছে হলো।এখানে আসার পর থেকে এখনো পুরো ঘরটা ভালো মতে দেখা হয় নি,তাই ভাবলাম আগে পুরো ঘর দেখবো।যেই ভাবা সেই কাজ, পুরো ঘর ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।প্রত্যেক টা জিনিসের কারু কাজ দেখে আমি মুগ্ধ, কি সুন্দর করে সাজানো ঘর।

সবগুলো রুম ঘুরে ঘুরে দেখার সময় হঠাৎ কিছু একটা চোখে পড়লো,আমি দ্রুত গিয়ে ওইটা তুললাম।দরজার চিপায় কিসের ছবি।আমি ছবিটা দেকার আগে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম আলমারির উপরে কার্নিশের পাশে এ্যালবাম উল্টো করে রাখা।বুঝলাম ওখান থেকেই পড়েছে।ছবিটা উল্টো করে দেখতেই আমি থমকে গেলাম।আমার হাত-পা কাঁপতে লাগলো।আমি ভালো করে ছবিটা দেখতে লাগলাম,কিন্তুু এর মধ্যেই হুট করে কেউ আমার হাত থেকে ছবি টা নিয়ে গেলো,আমি তাকিয়ে দেখলাম অনুভব।

আমি কিছু জিজ্ঞাস করবো তার আগেই উনি আমার হাতে ফোন দিয়ে বললেন,”নেও তোমার মামী ফোন দিয়েছে।”

আমি কোনোরকম কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,,,”ছছছবববি।”

উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি কেমন গাবড়ে গেছেন,উনি আমাকে বললেন,,,”কি ছবি?কই ছবি?আগে তুমি তোমার মামীর সাথে কথা বলো,উনি তোমার সাথে কথা বলবে।এতো সময় থেকে তো বলছিলে উনার সাথে কথা বলবে,এই নেও উনি লাইনে আছেন।তাড়াতাড়ি বলো।”

উনি আমাকে জোরপূর্বক ফোন কানে ধরিয়ে দিলেন।ফোনের ওপাশে মামী অনবরত হ্যালো বলেই যাচ্ছেন।কিন্তুু আমার মাথায় বারবার ছবির কথাই ঘুরতেছে।আমি ছবিতে স্পষ্ট দেখেছিলাম,” অনুভবের সাথে আমার মতো মেয়ের ছবি।কিন্তুু ছবির মেয়েটার মতো আমি জামাকাপড় পরি না।কিন্তুু কীভাবে সম্ভব?আমি তো অনুভবকে এর আগে কোনোদিন দেখি নি।”

আমি ফোন কেটে দিয়ে পিছনে ঘুরে অনুভবের কাছে গিয়ে বললাম,,”আমি ছবিটা দেখবো।ওটা দেন।”

উনি দিতে প্রথমে দিতে চায় নি কিন্তুু আমি জোর করে নিয়ে নিলাম।এবার ছবিটা দেখে আমার হুশ উড়ে গেলো।ছবিতে আমি নই উনার সাথে অন্য কোনো মেয়ে।কিন্তুু আমি স্পষ্ট দেখেছিলাম উনার সাথে আমার ছবি।

আমি অস্থির অস্থির হয়ে বললাম,,,”এটা কীভাবে সম্ভব?আমি দেখেছিলাম ছবিতে আমার ছবি।এটা ওইটা নয়,ওই ছবি কই?

উনি অবাক হওয়ার ভান করে বললেন,,,”কি আবোলতাবোল বলতেছো?তোমার ছবি কই থেকে আসবে?তুমি কী পাগল হয়েছো নাকী?হয়তো ওটা তোমার ভ্রম ছিলো। ”

আমি মাথা নেড়ে বললাম,,,”না না! আমার ভ্রম নয়,আমি সত্যি দেখেছি আমার ছবি।কিন্তুু কীভাবে?

উনি এবার এক ধমক দিয়ে বললেন,,”যতসব আজাইরা কথা,তোমার আমাকে দেখে কী পাগল মনে হয়?তুমি বলো তোমার সাথে কী আমার আগে কখনও দেখা হয়েছে নাকী যে ছবি আসবে।হুম আমি সব বুঝি এসব আমাকে বশ করার জন্য তাই না?এত অভিনয় কীভাবে পারো?এসব করে কোনো লাভ নেই,আমি তোমার ফাঁদে পা দিবো না।।আর কথা বললে বলো না হলে আমার ফোন দিয়ে দেও।”

আমি ভাবলাম,হুম উনি ঠিকই বলছেন,আমারই মনের ভুল।আর তাছাড়া আমি তো ওমন জামা-কাপড় কখনো পরিই নাই।কিন্তুু আমি ছবিতে দেখেছিলাম আমি আর উনি একসাথে দাড়িয়ে আছি।উফফ এতো কিছুর ভাবার সময় নেই এখন কথা না বললে পরে দিবে না।তাই ফটাফট মামীকে ফোন দিলাম।

মামী ফোন ধরতেই উনাকে সালাম দিলাম।উনিও সালামের উত্তর নিলেন।আমি সবার কথা জিজ্ঞাস করতে লাগলাম,কে কেমন আছে?মামিও সবার কথা বললেন।কিন্তুু মামীর কন্ঠ শুনে মনে হলো উনি আপসেট। তাই আমি মামীকে জিজ্ঞাস করলাম,, “মামী কী হয়েছে,তোমার মন খারাপ কেনো?”

মামী আমার প্রশ্ন শুনে তড়িৎ গতিতে বললেন,,”আর বলিস না,আমার দ্বারা কিছুই হয় না।আমি কোনো কাজের নই।”

মামীর কথা শুনে আমও ভ্রু কুচকে বললাম,,”কেনো, কী হয়েছে?”

মামী এবার প্রচন্ড আক্ষেপ নিয়ে বললেন,,”আমি এতো নরম মনের মানুষ,আমি এতো সহজ সরল, আমি এতো বোকা যে ওদের সাথে কথায় পেরে উঠতে পারি না,কারো সাথে ঝগড়াটাও ঠিক মতো করতে পারি না।।”

মামীর কথা শুনে আমার স্ট্রক করার মতো অবস্থা বলে কী?মামাী আর সহজ-সরল,মামাীর সাথে কেউ পারে নাকী?আমি তাও কোনোরকম দুঃখী ভাব নিয়ে বললাম,,”কী হয়েছে মামী, আমাকে খুলে বলো।”

মামী হতাশ হয়ে বললেন,,”পাশের ঘরের মর্জিনার আম্মা, আছে না?ওই বেডির সাথে ঝগড়া হয়েছে।আমি না কিছু বলতেই পারি নি, সব ভুলে গেছি।একটা পয়েন্টও মনে হয় নাই, সব খেয়ে ফেলেছি,আর বেডি আমারে এত্তগুলা কথা শুনাই দিছে।”

আমি বললাম,,”আহারে,থাক,কেঁদো না।”

মামী বললেন,,”হুম বলেই হঠাৎ বলে উঠলেন এই রে আমার একটা পয়েন্ট মনে পড়ছে,দাড়া বেডির শুনাই দেই।”

আমি তড়িৎগতিতে বললাম,,”না না। মামী এখন থাক পরেরবার ঝগড়া করতে আসলে বইলা দিও। ”

মামী বুঝার মতো করো বললেন,,”তুই ঠিক বলেছিস।এই রে আমার আবার আরেকটা পয়েন্ট মনে পড়ছে।ওরে কতগুলি মনে পড়ছে।না, না, আমি এখনই এসব শুনাই দিয়ে আসবো।”

আমি মামীকে বললাম,,”মামী এখন তুমি গেলে ওরা কী বলবে?পরেরবার বইলো।

মামী বললো,,”পরেরবার যদি মনে না আসলো?আমার যে কী হয়ে যায় সব ভুলে যাই।না না আমি এখনই বলবো,না হলে পরে ভুলে যাবো।”

আমি মামাীকে বুঝাইতেছি, না যেতে। কিন্তুু কে শুনে কার কথা।ফোনটা কেটে দিছে,নিশ্চয়ই এখন আবার ঝগড়া করতে যাইবে।আর আমাকে বলে কী না উনি ঝগড়া করতে পারে না!!

চলবে,,,