#প্রীতিলতা❤️
#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury
#৭ম_পর্ব (প্রথম খন্ড)🍂
সাকলাইন ভাইয়া আর ভাবি এখান থেকে সোজা ভাবির বাপের বাড়িতে গেছেন। ভাবির মা নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কয়টা দিন ওখানে থেকে আসবেন তারা। স্টেশন থেকেই সোজা চলে গেছেন গাড়ি ঘুরিয়ে।
থাকার মধ্যে স্টেশনে রয়ে গিয়েছিলাম শুধু আমি সাফওয়ান আর পুতুল। মেসেজ আসার কারণে আমি ওদের পেছনে পড়ে গিয়েছিলাম। পরে আবার মহাশয় যখন ক্ষেপে গেলেন তখন পুরো স্টেশন দৌড় করালো। আমাকে আর পুতুলকে।
তখন দৌড়ে এসে বাইরে বের হয়ে দেখি মহাশয় গাড়িতে উঠে বসছেন সবে। আমার ভারী রাগ হলো ঠোঁট ফুলিয়ে মুখ দিয়ে ফু দিয়ে সামনে থাকা চুল গুলো উড়িয়ে দিলাম। কি বদমাইশ ছেলেরে বাবা…! পুরো স্টেশন দৌড় করিয়ে ছাড়লো আমাকে।
পুতুল আমার হাত ছেড়ে দিয়ে গাড়ির সাইড গ্লাসে গিয়ে জোরে জোরে আঘাত করে বলল,
— ওই ভাইয়া। তুই আমাদেরকে এইভাবে দৌড় করালি কেন? ব্যথায় আমার পা টনটন করছে।
সাফওয়ান মুখে কোন কথা না বলে গাড়ির দরজার লক খুলে দিলেন। পরে আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বললেন,
— গাড়িতে উঠে বসো না হলে বাকি রাস্তাটুকু তোমাদের দুজনকে হেঁটে যেতে হবে।
পুতুল রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
— ভাইয়া আমি তোর চুল ছিঁড়ে দেবো।
আমি পেছন থেকে পুতুলের পিঠে টোকা দিয়ে চোখ দিয়ে গাড়িতে উঠে ইশারা করলাম। না এ ব্যাটার কোন ভরসা নেই। যদি সত্যি সত্যি তাই করে। কথা না বাড়িয়ে আমি আর পুতুল একসাথে গাড়িতে উঠে বসলাম। সাফওয়ানো গাড়ি স্টার্ট দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।
_________🌺🌺________
গাড়ি এসে থামলো “সুখনীড়”ভিলার সামনে। সাফওয়ান দুইবার গাড়ির হর্ন দিতেই দারোয়ান চাচা এসে গেট খুলে দিলেন। তারপর স্মুথলি বাড়ির পার্কিং লটে গিয়ে গাড়ি থামালেন তিনি। রেলস্টেশন থেকে বাড়ির পথ খুব বেশি দূর নয় ২০ মিনিটের রাস্তা।
এটুকু পথ আসতে আসতেই পুতুল আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে। গাড়ি পার্কিং লটে সুন্দর করে পার্ক করে রেখে সাফওয়ান গাড়ি থেকে বের হয়ে এসে পুতুলকে ডাকতে লাগলেন। এ মেয়ে প্রচন্ড ঘুমকাতুরে।
তাই শত ডাকাডাকির পরেও চোখ মেলে তাকালো না। বাধ্য হয়েই সাফওয়ান আবার ওকে কোলে নিল। আমিও গাড়ি থেকে বের হয়ে দরজা লাগিয়ে তাদের পেছনে পেছনে আসতে লাগলাম। মেইন ডোর বেল বাজাতে রহিমা খালা এসে দরজা খুলে দিলেন।
সাফওয়ান পুতুলকে নিয়ে সোজা দোতলায় চলে গেল। রহিমা খালা বলল,
— পুতুলকে ডাকার প্রয়োজন নেই। বড় ম্যাডাম আর সাহেবের সাথে পুতুল খেয়ে নিয়ছিল। ও আর এখন খাবেনা ঘুমাচ্ছে ঘুমাক। আমি বরং তোমাদের জন্য খাবার গরম করছি ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো। খেয়ে নেবে।
আমি সম্মতি জানিয়ে উপরে চলে এলাম। সাফওয়ান রুমে নেই তারমানে সে পুতুলের ঘরেই আছে। আমি এই ফাঁকে ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ঢিলেঢালা কুর্তি আর ধুতি পায়জামা পড়ে বের হয়ে এলাম। ওড়না টা বিছানার উপর রেখে পাশে বসে পড়লাম।
কাজ চোরা মেয়ে আমি। অনেকদিন পরে আজ একটু কাজ কর্মের চাপ বেশি থাকায় একেবারে হাঁপিয়ে গেছি। নিচে যেতে ইচ্ছে করছে না। অলস ভঙ্গিতে হেঁটে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসলাম। মাথা থেকে পাঞ্চক্লিপটা ছাড়িয়ে চুলগুলো ছেড়ে দিলাম চুলগুলো আঁচড়ে নিবো বলে।
যতই ক্লান্ত থাকি না কেন চুল বেনী করে না ঘুমালে আমার ঘুম আসে না। চিরুনি হাতে নিয়ে চুল আঁচড়াতে শুরু করেছি এমন সময় মহাশয়ের আগমন।
আমি তার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে নিজের কাজে মন দিলাম। আয়নায় চুলের জট ছাড়াতে ছাড়াতে হঠাৎ আয়নায় ভেসে ওঠা একটা অদ্ভুত জিনিস চোখে পড়লো আমার।
সাফওয়ান আলমারি থেকে টি-শার্ট আর ট্রাউজার বের করছিল। কিন্তু হাতে কি যেন একটা হয়েছে। ক্ষত চিহ্নের মতো। আমি উঠে গিয়ে তার পেছনে দাঁড়াতেই সে আমাকে পাত্তা না দিয়ে পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।
বিরক্তিটা আমার মুখটা কুঁচকে গেল। এক ঝলক দেখে ভালোই বুঝেছি হাতটা ভালই কেটেছে কিন্তু কেটেছে কিভাবে?
__________🌺🌺___________
আমি চিরুনি ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে ড্রয়ার টেনে ফাস্ট ইনবক্স বের করে সাফওয়ান এর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিছুক্ষণ পর টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হলেন তিনি।
দেখে মনে হচ্ছে গোসল করেছেন। আজব মানুষ! এখনো পুরোপুরিভাবে ঠান্ডা না পড়লেও রাতের দিকে ভালোই ঠান্ডা পড়ে। এই রাতে ঠান্ডার মধ্যে কে গোসল করে? একমাত্র উনিই করে।
এই 12 দিনে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি উনি যখনই বাহিরে থেকে এসেছেন, তখনই গোসল করেছেন। উনার এই হাইজেনমেন্টেইন ব্যাপারটা আমার দারুন লাগে। বলতে গেলে পুরো মানুষটাকেই আমার ভালো লাগে।
উনার দিকে তাকিয়ে এ সমস্ত ভাবার মাঝে আবার উনি আমার কে সাইড কাটিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চলে গেলেন। না আমি যে একজন মানুষ এই ঘরে আছি, উনার সামনে সোফায় বসে আছি।উনি কি তা চোখে দেখতে পান না নাকি অনুভব করতে পারেন না?
আমি এমন অদ্ভুত মানুষ জীবনে দেখিনি।
শুনেছি বিয়ের পর পুরুষ মানুষ নাকি সব সময় বউয়ের চারপাশে ঘুরঘুর ঘুরঘুর করে। আর একে দেখো।
আমি নির্লজ্জের মত সারাদিন তার পেছন ঘুরঘুর ঘুরঘুর করছি কিন্তু কোন পাত্তাই পাচ্ছিনা। সঙ্গে সঙ্গে আমার মন বিদ্রোহ করে বলল,
*কিসের নির্লজ্জতা হে মেয়ে? ওখানে যে দাঁড়িয়ে আছে। সে সম্পর্কে তোমার স্বামী হয়। তোমার একমাত্র বৈধ সম্পদ। তাকে ভালবেসে তার পেছনে ঘুরঘুর করা নির্লজ্জতা নয়। বরং এটা তার প্রতি তোমার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।
আমি উঠে ওনার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। চুলের ব্রাশ করতে করতে আয়নার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলেন,
— কী?
—আপনার হাত কাটল কি করে?
চুলে ব্রাশ করা থেমে গেল। আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চিরুনিটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে দিয়ে বললেন,
— কিছু না, গাড়ির গ্লাসে লেগে কেটে গেছে।
আমাকে কি আপনার পুতুল মনে হয়। বুঝিয়ে দেবেন বুঝে যাব। গ্লাসে লেগে বুঝি এতটা কেটে যায়।দেখে তো মনে হচ্ছে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। স্টেশনে যাওয়ার সময় তো আপনার হাতে কোন আঘাত ছিল না এমনকি আপনি যখন আমার উপর রাগ করে চোখের আড়াল হয়ে গেলেন, তার আগেও তো আপনার হাত ঠিক ছিল তাহলে।
কথাটা বলতেই সাফওয়ান কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে গেল। আরো খেয়াল করলাম কি যেন ভাবতে ভাবতে মুখের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল তাই। কিঞ্চিত রাগ ফুটে উঠলো তার মুখে।
— কিছু না। তাছাড়া আমি আপনাকে কেন এত কৈফিয়ত দিবো?
— হাহ তাও ঠিক। আচ্ছা আপনাকে কৈফিয়ত দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। এখন এখানে চুপচাপ হয়ে বসুন।
— কেন?
—আপনার হাতে মেডিসিন লাগাবো।
— রাখবে না।
— সেটা আপনাকে বুঝতে হবে না। আমাকে বুঝতে দিন এখানে চুপচাপ হয়ে বসুন।
তাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে টেনে সোফায় বসিয়ে দিলাম। পরে ফার্স্ট এইড বক্স খুলে ক্ষতটা আগে পরিষ্কার করে নিলাম। তারপর ঔষধ লাগিয়ে দিতে দিতে
তার দিকে নজর পড়তেই দেখলাম সে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি মুচকি হেসে বললাম,
— কী সৌভাগ্য আমার ,মহাশয়ের দেখি তার স্ত্রীর প্রতি দৃষ্টি দিয়েছেন।তা কী বলতে চাইছেন বলে ফেলুন।
তৎক্ষণাৎ সাফওয়ান শীতল কন্ঠে সতর্কবাণী শোনালেন,
— ” এবার থেকে যখন বাইরে বের হবেন। বোরকা পরে বের হবেন। বোরকা ছাড়া আপনাকে যেন বাইরে হতে না দেখি…..!”
চলবে…..❣️
#প্রীতিলতা❤️
#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury
#৭ম_পর্ব এর (শেষ খন্ড)🍂
ঔষধ লাগিয়ে দিতে দিতে তার দিকে নজর পড়তেই দেখলাম সে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি মুচকি হেসে বললাম,
— কী সৌভাগ্য আমার। মহাশয়ের দেখি তার স্ত্রীর প্রতি সদয়ের দৃষ্টি পড়েছে। তা কী বলতে চাইছেন বলে ফেলুন।
তৎক্ষণাৎ সাফওয়ান শীতল কন্ঠে সতর্কবাণী শোনালেন।
— ” এবার থেকে যখন বাইরে বের হবেন। বোরকা পরে বের হবেন। বোরকা ছাড়া আপনাকে যেন বাইরে হতে না দেখি।”
************
আমি তার কথায় চমকে উঠে তার দিকে তাকিয়ে পড়লাম। হাতের কাজ এমনি এমনি থেমে গেল। কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করলাম হঠাৎ আমাকে এমন কথা বললেন কেন?
আমার দৃষ্টি দেখে উনি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন
উনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন অনেক অধিকার বোধ খাটিয়ে তিনি কথাগুলো বলে ফেলেছেন। আমতা আমতা করে বললেন,
— না মানে ঘরের বাহিরে এখন কোন মেয়েই নিরাপদ নয়। তাই বললাম আর কি। তাছাড়া শাড়ি ক্যারি করতে আপনার অনেক অসুবিধা হয় সেটা দেখেই বোঝা যায়। যা সামলাতে পারেন না তা পড়েন কেন?
আরো চমকে গেলাম। আজ কী আমার চমকে যাওয়ার দিন। উনি আমার ব্যাপারে ভাবছেন….!
তার মানে স্টেশনে কি কিছু হয়েছিল। আমার চোখের আড়াল হয়ে যাওয়ার পরে থেকে দেখছি এই হাতের আঘাত। আবার হঠাৎ করে বলছেন আমাকে বোরকা পরার কথা। যেটা পরে কমফোর্টেবল না সেটা পড়তে নিষেধ করছেন।
তার মানে কি আমার জন্য উনি হাতের এই আঘাত পেয়েছেন?
ভাবতে ঠোঁটের কোলে হাসি খেলে গেল আমার। সমীকরণ টা মিলেছে তবে। মাথা নিচু করে আমি আবার নিজের কাজে মন দিলাম।
উনার দিকে না তাকিয়েও বুঝতে পারলাম উনি আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমি আবারো হাসলাম।
ওষুধ লাগিয়ে হাতটা ব্যান্ডেজ করে দিলাম। ক্ষতটা ভালোই গভীর হয়েছে। এরপরে যদি আবার আঘাত লাগে রক্ত বেরোবে তার সাথে সাথে ইনফেকশন হয়ে যাওয়ার ভয় আছে। সবকিছু গুছিয়ে ডেসিন টেবিলের ড্রয়ারে রেখে। সাফওয়ানের দিকে তাকিয়ে বললাম,
— আপনি বসুন আমি নিচ থেকে খাবার নিয়ে আসি আপনার জন্য।
— আমি খাব না। ইচ্ছে করছে না। মাথাটা ব্যথা করছে আমি ঘুমাবো।
আমি কন্ঠের জোর বাড়িয়ে কিছুটা বিরক্তির সাথে বললাম
— খেয়ে ঘুমাবেন। মেডিসিন খেতে হবে। না হলে ব্যথা আরো বাড়বে। আপনি বসুন আমি খাবার নিয়ে আসছি।
ঘর থেকে বের হতে গিয়ে খেয়াল আসলো গায়ে ওড়না নেই। আবার ফিরে এসে বিছানার উপর থেকে ওড়না নিতে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাফওয়ান প্রশ্ন করে উঠলেন,
— এমনি সময় তো প্রশ্নের ঝুলি নিয়ে বসেন। কেন করেছি এটা কেন বললাম। আপনাকে বোরকা কেন পরতে বললাম প্রশ্ন করবেন না?
আমি মুচকি হেসে গায়ে ওড়না জড়িয়ে নিয়ে তার উদ্দেশ্যে বললাম,
—- আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছি। উত্তর পেয়ে যাওয়ার পরেও যদি আবার এক প্রশ্ন করা হয় সেটা হচ্ছে বোকামির পরিচয়। আর আমি এতটাও বোকা নই।
সাফওয়ান ও যেন এবার কিছুটা ভড়কে গেলেন। আমার কাছ থেকে হয়তো এমন উত্তর আশা করেননি তিনি। আমি বেরিয়ে আসলাম রুম থেকে।
_______🌺🌺_______
খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকতেই দেখি সাফওয়ান বিছানায় আধা শোয়া হয়ে বসে আছেন। কপালে এক হাত ঠেকিয়ে। আমি নিঃশব্দে ঘরে প্রবেশ করলাম। খাবার গুলো সেন্টার টেবিল এর উপর রাখার শব্দের হাত সরিয়ে আমার দিকে তাকালেন। তারপর উঠে এসে সোফায় বসলেন।
আমিও তার পাশে বসলাম কিন্তু দূরত্ব বজায় রেখে। তার প্লেটে খাবার গুছিয়ে দিয়ে। গ্লাসে পানি ঢালছিলাম আর আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম তিনি কিছু খুঁজছেন। আমি পানির গ্লাসটা প্লেটের পাশে এগিয়ে দিয়ে বললাম,
— কিছু খুঁজছেন?
— একটা স্পুন দরকার। না হলে আমি খেতে পারব না।
আমি ওনার সামনে থেকে প্লেট টা নিজের হাতে নিয়ে খাবার মাখতে শুরু করলাম। তারপর একটা লোকমা তৈরি করে তার মুখের সামনে ধরে বললাম,
— বউয়ের হাত থাকতে স্পুন কেন?
সাফওয়ান আমার হাতে থাকা প্লেটের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
— আমাকে দিন আমি খেতে পারব আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।
— আমার কষ্ট নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না । নিজের কষ্টটা আগে বুঝুন। আব চুপচাপ আমার হাতে খেয়ে নিন। নিচে খালা কিন্তু ঘুমিয়ে পড়েছে।
আপনি অবশ্যই চাইবেন না এখানে এমন কোন সিনক্রিয়েট হোক যে খালা নিচ থেকে উপরে উঠে আসেন।
— তুমি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছো?
— উহু। সাবধান করছি। এবার চুপচাপ খেয়ে নিন।
— তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো
আমি কিঞ্চিত হেসে বললাম,
— আপনার যদি তাই মনে হয় তাহলে বাড়াবাড়ি করছি। You know what.Everything is permissible with the husband.
বিপরীতে সাফওয়ান চুস হয়ে গেলেন। প্রথমবার তাকে কথার জালে আটকে দিতে পেরে নিজের মধ্যে পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে আমার। আপনাকে তো সোজা আমি করবোই সাফওয়ান। সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকাতে হয় এ পাঠ আমার খুব ভালো করে পড়া আছে।
কি হলো এবার হা করুন। হাত শুকিয়ে যাচ্ছে আমার। এক প্রকার বাধ্য হয়েই অনিচ্ছা সত্ত্বেও হা করলেন তিনি। তার মুখের রিঅ্যাকশন দেখে আমার পেটের মধ্যে হাসির ব্লাস্ট হচ্ছে কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করা যাবে না। অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে বললাম,
— হাত ঠিক না হওয়া পর্যন্ত এবার থেকে তিনবেলা আপনাকে আমার হাতেই খেতে হবে।
মুখে খাওয়ার নিয়ে হু হু করে কি বললেন সাফওয়ান তা বুঝতে পারলাম না। তাই বললাম,
— মুখের খাবারটা শেষ করে তারপরে কথা বলুন। আপনার বউ পালিয়ে যাচ্ছে না।
টেবিল থেকে পানি নিয়ে কিছুটা পানি খেয়ে বললেন,
— যখন মা-বাবা বাড়িতে ছিল ভিজে বিড়াল সেজে বসেছিলে আর এখন যেই মা-বাবা ঘরের বাইরে চলে গেছে। ভাইয়া ভাবিও নেই ওমনি নিজের আসল রূপ দেখাতে শুরু করে দিয়েছে। তোমরা মেয়েরা যে কত রকমের বহুরূপী হতে পারো? আমার তা খুব ভালো করে জানা আছে।
— এ্যাই এক মিনিট এক মিনিট। আগে হা করুন খাবারটা নিন তারপরে বলছি। মেয়েরা বহুরূপী হয়, আপনি কয়টা মেয়েকে চেনেন হ্যাঁ? সেদিন রাতে না বললেন আপনি কাউকে পছন্দ করেন না। তাহলে মেয়েদের ব্যাপারে এত জ্ঞান আসতেছে কোথা থেকে আপনার?
সাফওয়ান আমার দিকে রাগিদৃষ্টি দিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললেন,
— আমি কি তোমার মত চোখ ,কান বন্ধ করে হুশ জ্ঞান হারিয়ে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করি।
আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম,
—- হাহ আসছে আমার কত জ্ঞানী বাবা। সারা শরীর দিয়ে ঝরে ঝরে পড়ছে তার জ্ঞান।
সোফায় বসে সাফওয়ান আমার দিকে তেড়ে এসে বললেন,
— তোমাকে তো…
অবস্থা বেগতিক দেখে আমি দেরি না করে সাথে সাথে ভাতের লাস্ট লোকমাটা তার মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে বললাম,
— প্রশংসা করতে ইচ্ছে করছে? তা করুন না ।আমি শুনেছি তো।স্বামীর মুখের প্রশংসা স্ত্রীদের খুব ভালো লাগে। তেমন আমারও ভালো লাগবে।
মুখে আর কিছু বললেন না তিনি। কিন্তু চোখ দিয়ে এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন মনে হচ্ছে এখনই ধ্বংস করে ফেলবেন। তাই আমিও আর কিছু বললাম না। পাগল খেপিয়ে কাজ নেই বাবা। চুপচাপ খেয়ে উঠে পরলাম।
সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছে নিচে যার উদ্দেশ্যে বের হতে গিয়েও পিছনে ফিরে সাফওয়ানের উদ্দেশ্যে বললাম,
— একটা বিষয় খেয়াল করলাম বুঝলেন।আপনি কিন্তু এতক্ষণ আমার সাথে তুমি সম্মোধন করে ঝগড়া করলেন। আরও
একটি বিষয় খেয়াল করলাম যে রাগ করলে আপনাকে একদম কুমড়ো পটাশ এর মতো লাগে । তাই আমি আপনাকে “কুমড়ো পটাশ” বলে ডাকবো।
_______🌺🌺______
পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে ছোট ছোট হামি দিয়ে উঠে বসতে গিয়ে চুলে বেশ জোরেশোরে টান খেলাম। ব্যথায় মুখটা বিকৃত হয়ে গেল। আবার আগের জায়গায় শুয়ে পড়লাম। এই হচ্ছে চুল বেঁধে না ঘুমানোর ফল। চাপা পড়া চুলগুলো আস্তে ছাড়িয়ে।
পাশে তাকিয়ে দেখলাম সাফওয়ান আমার থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে বালিশে ঘুমিয়ে আছেন। দুজনের মধ্যবর্তী দূরত্ব খুব কম। প্রথমে চমকে উঠলাম পরে মনে পড়লো কাল রাতে তার মাথা ব্যাথা করছিল।
আমি তার মাথা মালিশ করে দিচ্ছিলাম । এক পর্যায়ে যখন বুঝতে পারলাম তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। তখন আমি এক দুঃসাহসিক কাজ করে বসলাম।
তার বালিশে মাথা রেখে তার বাম হাতের বাহু জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে চোখ বুঝে নিয়েছিলাম। প্রথমে অস্বস্তি আর ভয় করলেও পরে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতে পারিনি।
এখন দেখছি কম্বলের নিচে তার বুকে মুখ বুজে ঘুমিয়ে ছিলাম এতক্ষণ। আরো একটা অবাক করার বিষয় সাফওয়ান তার ডান হাতটা আমার কাঁধের কাছে দিয়ে রেখেছিলেন।
আমি ধীরে ধীরে উঠে বসে সাফওয়ানের মুখের উপর ঝুঁকে পড়লাম। আরো একটা দুঃসাহসিক কাজ। নির্দ্বিধায় কপালে একটা চুম্বন এঁকে দিলাম।
গুড মর্নিং ডিয়ার ।
মাশাল্লাহ..! কত সুন্দর কিউট তুমি। কতো কিউট করে ঘুমিয়ে আছো। কিন্তু এখন যদি তুমি জেগে থাকতে তাহলে বোধহয় লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলতে। সাধে কি আর তোমার নাম কুমড়ো পটাশ দিয়েছি।
রাগ করলে তোমার মুখটা একদম লাল হয়ে যায়। তখন দেখতে একদম মিষ্টি কুমড়ার মত লাগে। তাই তুমি আমার কুমড়ো পটাশ। শুধুমাত্র
প্রীতিলতার কুমড়ো পটাশ❤️
#চলবে…..❣️