#প্রেমনদীর_মাঝি
#পর্ব_৮
#মুসফিরাত_জান্নাত
টেবিলের উপর কয়েকটা প্রশ্ন ব্যাংক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে রয়েছি আমি।একের পর এক পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছি আর কলম কামড়াচ্ছি।এই কাটখোট্টা প্রশ্ন দিয়ে সাজানো বইগুলো উনি আমাকে বিশ্লেষণ করতে বলেছেন।কিন্তু কিভাবে কি বিশ্লেষণ করবো তাই বুঝতে পারছি নাহ।প্রশ্ন আবার কেমনে বিশ্লেষণ করে?এসব পড়াশোনার জটিল বিষয় মাথায় ঢোকে না আমার।এক ডোজ পড়ার প্যারা পেটে পড়তেই সব কেমন গুলিয়ে এলো।ওনার বিকেলে দেওয়া অনুপ্রেরণা সব লাটে উঠে গেলো এখন।তার পরিবর্তে হানা দিলো এক রাশ বিরক্তি।ওনি কড়া গলায় বলে দিলেন এই ব্যাপারে কোনো রকম হেল্প করবেন না।কিছু কিছু পথ নাকি অন্যের হাত ধরে পাড়ি দিতে নেই।সেই পথ নিজের বুদ্ধি ও প্রচেষ্টায় পাড়ি দিলে তবেই অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়।আর অন্যের সাহায্য পারি দিলে সফলতা অর্জন হয় ঠিকই, কিন্তু শিক্ষার ঘাটতি থেকে যায়।প্রশ্ন পত্র বিশ্লেষণ তার মধ্যে একটা।এই যুক্তি দিয়ে আমার কাধে এই গুরু দ্বায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছেন তিনি।অথচ এর ক ব ঠ কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।ওনাকে আবারও বললাম হেল্প করতে কিন্তু কোনো উত্তর দিলেন না।বরং ওভাবেই বিছানায় ফোন নিয়ে বসে রইলেন।ভাব ভঙিমা এমন যেনো এই ঘরে ওই ফোন ছাড়া সব ধুলা ময়লা।অন্যদিকে দৃষ্টি দেওয়ায় বারণ।ওনার এমন অভিব্যক্তিতে বিরক্ত হলাম আমি।মনে মনে কয়েকটা কড়া বকা দিলাম।বেটা খাটাশ কোনহানকার।
দীর্ঘ সময় আমাকে একইভাবে বসে থাকতে দেখে উনি ফোনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললেন,
“কোন কোন টপিক থেকে প্রত্যেক বছর প্রশ্ন ঘুরেফিরে এসেছে ওগুলো খুঁজে বের করো।”
এই সাজেশনের বিপরীতে আমার খুব করে মুখ ভেংচি কেটে মনপুরা সিনেমার চঞ্চল চৌধুরীর বলা ডায়ালগটা বলতে ইচ্ছে করলো,
“হইছে, আপনার আর দরদ দেখানো লাগবে না।বেইমানের বেইমান।”
কিন্তু মুখে কিছু বললাম না।বরং ওনার উপদেশ মোতাবেক কাজ চালালাম।বেশ কিছু সময়ের ব্যবধানে প্রশ্ন বিশ্লেষণ শেষে গুরুত্বপূর্ণ টপিক গুলো নোট করে নিলাম।একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন প্যাটার্ন একেক রকম।তাই কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন হয় সেগুলোও খুঁজে বের করলাম।অনেকক্ষণ এই কাজ করার পর ক্লান্তি ভর করলো শরীর জুরে।একঘেয়ে কাজে বিরক্তিও লাগছিলো।খুব করে ইচ্ছে করছিলো এখান থেকে উঠে যাই।কিন্তু ওই খাটাশ ব্যক্তির জন্য তা সম্ভব হচ্ছিল না।উনি পাহারাদার হয়ে বসে ছিলেন এখানে।ওনার দৃষ্টি ফাঁকি দিয়ে একবার উঠতে নিয়েও ধরা পড়ে গেলাম।উনি ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখেই বললেন,
“কাজ অসম্পূর্ণ রেখে উঠতে নেই।তোমার নিজের কাজ নিজের। অন্য কেও করে দিবে না।তাই পরবর্তীতে চাপ বৃদ্ধির চেয়ে সময়ের কাজ সময়ে করো।”
ওনার কথায় থমকে গেলাম আমি।আমি যে উঠে যাচ্ছি তা উনি দেখলেন কি করে?উনি তো গভীর মনোযোগে ফোন স্ক্রল করছেন।তবে এদিকে ধ্যান এলো কিভাবে?অদ্ভুদ মানব।আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ওমনি উঠতে নিলাম।তখন উনি দৃষ্টি দিলেন আমার দিকে।কণ্ঠে কাঠিন্যতা মিশিয়ে বললেন,
“তুমি যদি ভেবে থাকো ঠিকঠাক পড়াশোনা না করে এমনি এমনি আমার টাকা নষ্ট করবে, তা হলে তা ভুলে যাও।আমার উপার্জনের টাকা আমি কখনো বৃথা যেতে দেই নি আর দিবোও না।এতোগুলা টাকা খরচ করে বইগুলো সাজিয়ে রাখার জন্য কিনিনি।ওগুলোর সঠিক ব্যবহার না হলে তোমাকে..।”
“না হলে কি করবেন আমাকে?চিবিয়ে খাবেন?”
ওনার কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম আমি।উনি চোখ দু’টো সরু করে ভাবলেশহীন ভাবে বললেন,
“চিবিয়ে না খাই তবে…।”
বাক্যটা সম্পূর্ণ করলেন না উনি।তবে ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বুঝিয়ে দিলেন তার অপ্রকাশিত গীতিকাব্যের বাকি অংশ।লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নিলাম আমি।অসভ্য কোথাকার!
ওনাকে মনে মনে বকা দিয়ে নিজের কাজে আবারও মনোযোগী হলাম আমি।লজ্জা দূর করার চেষ্টা এটা।সফলও হলাম।একটু পর সৃষ্টিকর্তা করুনা করলেন আমার উপর।খালামনি রাতের খাবারের জন্য ডাক দিতেই দৌড়ে ডাইনিং এ চলে গেলাম।উনি পেছন থেকে কি যেনো বললেন তা কানেই দিলাম না।ওসব শুনে নিজের বিপদ বৃদ্ধি করবে কে!একটু পর উনিও এসে খাওয়ায় যোগ দিলেন।
_____
ডাইনিং টেবিলে বসে আমি আবিষ্কার করলাম আজ রান্নায় হরেক রকমের পদ সাজানো হয়নি।শুধু এক পদের ভাজি ও মাছের তরকারি দিয়ে ভাত শোভা পাচ্ছে টেবিল জুরে।বিষয়টা লক্ষ্য করে বিষ্মিত হলাম আমি।এ বাড়ির টেবিলে দারিদ্র্যতার পেছনের গল্প হিসেবে যা থাকে তা হলো মানসিক বিপর্যয়।একমাত্র ঘোর বিষাদের আঁধারই কেবল এই বাড়ির কিচেন ও টেবিলে প্রভাব ফেলে।অন্যথায় খাবার টেবিল বেশ রমরমা থাকে।মুখ তুলে সবার পাণে তাকালাম আমি।নিশি বেশ স্বাভাবিক ভাবেই ভাত খাচ্ছে।খালামনির চোখ মুখ শুকনো বটে তবে খুব একটা বিচলিত নন।তবুও কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত লাগছিলো ওনাকে।তারপর রহিমা চাচির পানে তাকালাম আমি।সবচেয়ে বিধ্বস্ত ওনাকেই লাগছিলো। চোখে মুখে কেমন বিধ্বস্ততার চিহ্ন লেপ্টে আছে।কিছু কি হয়েছে তাহলে?এক বিষাদের রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন কোন বিষাদের আগমন হলো আবার?প্রশ্নটা মনে জেঁকে বসতেই জিজ্ঞেস করলাম আমি।
“কিছু কি হয়েছে?”
উত্তর হিসেবে যা পেলাম তাতে চরম অবাক হলাম।চাচি ভেজা গলায় বললেন,
“তোমার চাচার সাতে এল্লা ঝামেলা হইছিলো সকাল বেলা।উনি সেই তহনই রাগ হইর্যা বাড়ি থেইক্যা বারায়া গেলো।যাওয়ার সময় কইলো উনি বলে আরেকহান বিয়া হরবো।আমার সাতে আর সংসার করবো না।”
কথাটা বলে উনি ডুকরে কেঁদে উঠলেন।ওনার কান্না দেখে খালামনি বিরক্ত হয়ে বললেন,
“আহ রহিমা, এখানে কান্নার কি হলো?মুখে বললেই কি মানুষ বিয়ে করে নাকি?”
খালামনির কথার প্রভাবে চাচির কান্না কমা বাদ দিয়ে বৃদ্ধি পেলো।
“উনি এইব্যার হত্যি বিয়্যা হরবো আম্মা।আর ফির্যা আইবো না।উনি এক কতার মানুষ।আমি ওনাক চিনি।”
কথাটা বলে কান্নার বেগ বৃদ্ধি করলেন উনি।আজ সকালেও যে মানুষটা আমাকে নিয়ে কটুক্তি করছিলো, সেই মানুষটাকে এখন বেশ অসহায় লাগছিলো।আজ সারাদিন কিছু খায় নি উনি।সকাল থেকে ধুম মে’রে আছেন।রান্নাও করেননি।এ কারণে টেবিলের সজ্জায় এমন দারিদ্র্যতা জেঁকে বসেছে।মানুষটাকে দেখে কেনো যেনো মায়া হলো আমার।সকালের কথা আর মনে রাখতে পারলাম না।ওনাকে খুব করে স্বান্তনা দিতে ইচ্ছে করলো।ভালোবাসার মানুষের জন্য করা ছটফটানি সহ্য করতে পারলাম না আমি।ওনাকে শান্ত করতে কিছু বলতে যাবো ওই মুহুর্তেই কলিং বেল বেজে উঠলো।রহিমা খালার চোখমুখ চকচক করে উঠলো।উনি একটু আগে রহিম চাচা ফিরবে না বললেও চাচা ফিরেছে আশা করে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললেন।সত্যি চাচা ফিরে এসেছে।চাচির চোখ মুখ আলোকিত হলো।নিজে থেকেই আলাপ জুরে দিলেন চাচার সাথে।আমরা সামনে থাকায় একটু ইতস্ততও করলেন।ওনার ভিতরের খুশি ভাব প্রকাশ করলেন না।চাচা নিজের অবস্থান জানান দিয়ে নিচতলায় ওনাদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরে চলে গেলেন।সেদিকে তাকিয়ে চাচি ভেজা চোখ মুছে বললেন,
“আমি জানতাম ও আইবো।আমাক থুইয়া উনি জীবনেও অন্য মাইয়াক বিয়া করবো না।আমাক তো মেলা ভালোবাসেন উনি তাই না।”
চাচির কথায় হেসে ফেললাম আমরা।একটু সময়ের ব্যবধয়নেই তার কথার কত রঙ বদল।খালামনি স্মিত হেসে বললেন,
“এখন ঘরে যা।যার জন্য এ বেলা রান্নাও করিস নি তার খাবার ব্যবস্থা কর।”
অনুমতি পেতেই চলে গেলেন চাচি।সেদিকে তাকিয়ে ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লাম আমি।অভাব নাকি মানুষের ভালোবাসা কমায়।অথচ কতো অভাবের মাঝে এই বয়সেও এদের দাম্পত্য জীবনে কতো ভালেবাসা।চাচার বাড়ি না ফেরায় চাচির উৎকন্ঠা,ক্ষনে ক্ষনে কেঁদে ওঠা,চিন্তাগ্রস্ত চিত্ত আবার চাচা ফেরার পরের আবেগ, খুশিতে চকচক করা মুখশ্রী সব দু চোখ ভরে দেখতে লাগলাম আমি।একটু বিচ্ছেদের পরের মিলনে কতো মধুময় অনুভুতি ওনাদের।এটা বেশ ভালো লাগার সৃষ্টি করলো আমার মনে।পরক্ষনেই কি একটা ভেবে নিভৃত ভাইয়ের দিকে তাকালাম আমি।নিজ মনে খেয়ে যাচ্ছেন উনি।শুরু থেকেই নিরব।এখানে এতো কিছু হয়ে গেলো সেখানে কোনো ধ্যানই নেই ওনার।ওনাকে দেখে তপ্ত শ্বাস ছাড়লাম আমি।রহিমা চাচিদের সাথে নিজেদের অবস্থানের তুলনা করলাম।ওনাদের সংসার অভাবের চাদরে মোড়ানো হলেও কতো ভালোবাসায় পূর্ণ।অথচ আমাদের দাম্পত্য জীবনে কোনো অভাব না থাকলেও ভালোবাসার চিহ্ন নেই। একদম অগোছালো সংসার।কখনো তা ঠিক হবে কিনা তাও জানিনা।
আজ রান্নার স্বাদ ভিন্ন ছিলো।রান্না যে খালামনি করেছেন তা স্পষ্ট।এ কারণেই হয়তো পদ সংখ্যা এতো সামান্য হয়েছে।তবুও তৃপ্তি নিয়েই খেলাম আমরা।খালামনির রান্নার হাত যে একদম খারাপ নয়, তা আজ বুঝিয়ে দিয়েছেন।
_____
পরদিন সকাল যেনো একটু দ্রুতই নামলো।সাথে দ্রুত গড়ালো সময়।আজ আমার এডমিশন কোচিং এর প্রথম দিন।আমাদের ব্যাচ শুরুর সময় ঘনিয়ে আসায় বাসা থেকে বের হলাম আমি।আজ প্রথম দিন উপলক্ষে কোচিং এ পা দিতে একটু অস্বস্তি হচ্ছিলো আমার।কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করে পরিচিত মুখ দেখতেই ফট করে সেই অশান্তি গায়েব হয়ে গেলো।চটপট করে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বন্যার কাছে গেলাম আমি।আমাকে দেখতেই জড়িয়ে ধরে চেঁচিয়ে উঠে সে বললো,
“আরে দোস্ত তুই?কেমন আছিস?”
বন্যার কথার জবাবে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,
“আস্তে চেঁচা মাইক।কানের নাড়িভুড়ি ফুটা হয়ে গেলো তো!”
আমার কথায় কণ্ঠ নামিয়ে ফেললো ও।ভ্যাবলাকান্ত মার্কা হাসি দিয়ে বললো,
“তোকে দেখে উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম।সত্যি তুই এসেছিস?”
“নাহ আমার পঁচা গলা অ’তৃপ্ত পি’শাচ সত্ত্বা এসেছে।”
রগড় করে বললাম আমি।ও একটু দ্বিধা করে বললো,
“না মানে তুই এখানে কি মনে করে আসছিস?তুই না, না পড়ার অনশনে নেমে বিয়ে করলি!”
“কিন্তু বিয়েটা এমন বান্দাকে করছি,যে আমাকে পড়ানোর জন্য অনশন শুরু করে দিছে।বাধ্য হয়ে আসতে হইলো।”
দুঃখী দূঃখী গলায় উত্তর দিলাম আমি।তারপর এ অবধি ঘটা সব ঘটনা খুলে বললাম।এটা নিয়ে দাঁত কপাটি করে হাসলো ও।আমাকে মাইনকা চিপায় পড়তে শুনে বেশ খানিকক্ষণ মজা ও নিলো।একটু পর এখানে প্রবেশ করলো শায়লা আপু।তিনি এসে আমাদের পিছনের বেঞ্চে বসলেন।ওনাকে দেখে কুশল বিনিময় করলাম আমরা।উনি আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র।গতবছর এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ করে প্রেমিকের সাথে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন।ওনার প্রেমিকদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন।তার বছর না ঘরতেই ওনাদের বিচ্ছেদ হলো।একদম ভেঙে পড়লেন উনি।বিধ্বস্ত হয়ে কিছু দিন জীবন কাটালেন।তারপর একদিন হুট করে সিদ্ধান্ত নিলেন ভার্সিটিতে এডমিশন পরীক্ষা দিবেন। যেখানে যেখানে সেকেন্ড টাইম পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ আছে তার সব গুলাতে চেষ্টা করবেন।নতুন করে জীবন গুছাবেন।তখন থেকেই শুরু হলো তার জীবনের নতুন অধ্যায়।আসলে আমাদের ভালোবাসার অতি চেনা রঙ যখন একই নীল আকাশের নিচে বিবর্ণ হয়ে যায় তখন সব পানসে হয়ে যায় আমাদের নিকট।অসহায় হয়ে পড়ি আমরা।এই অসহায়ত্ব কাটানোর একমাত্র উপায় নতুন করে জীবন গোছানো।উনিও তাই করছেন।
কোচিং সেন্টারের প্রত্যেকটা বেঞ্চে আমি এক ভিন্ন ভিন্ন গল্প আবিষ্কার করলাম।বিভিন্ন আর্থিক অবস্থার সব মানুষ একই লক্ষে এই বেঞ্চে নিজেদের স্থান দখল করেছে।কতো মানুষ কত না পাওয়ার গল্প নিয়ে স্বপ্ন পূরণের প্রেরণা নিয়ে এসেছে।এদের কতো জনের জীবনে কতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে।প্রত্যেকের জীবনের ভিন্ন ভিন্ন সংগ্রামী জীবনের গল্প আমার শিকড় নাড়িয়ে দিলো।মানুষ কতো অবস্থানেই না থেকে স্বপ্ন দেখে যাচ্ছে।অথচ আমি ক্ষুদ্র এক সংসারে নিজেকে আবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলাম।নিজের ভাবনার জন্য লজ্জা হলো আমার।ভীষণ লজ্জা।
এই লজ্জার মাঝে কোচিং শেষ করে ফুটপাতে হাটছিলাম আমি।সামনে রিকশার স্তুপ পড়ে রইলেও সেদিকে মন দিতে ইচ্ছে করলো না।এক অন্য রকম জীবনের সাক্ষাৎ পেলাম আমি।কতজন নিজ বাড়ি ছেড়ে মেসে এসে পড়ে রয়েছে শুধুমাত্র স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে।কেও কেও দু’টো পয়সা বাঁচাতে কতো দূরের পথ পায়ে হেঁটে পড়তে আসছে এখানে।আবার ফিরেও যাচ্ছে পায়ে হেঁটে।কেও কেও আবার বড় ভুংভাং করে সময় কাটাচ্ছে।ওদের প্রত্যেকের কথা চিন্তা করতে করতে রিকশা নিতে খেয়ালই হলো না আমার।আমি ফুটপাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলাম।হটাৎ আকাশ ভেঙে ফোটা ফোটা বৃষ্টি নামলো।আমি তাকিয়ে দেখলাম বৃষ্টি থেকে রক্ষার্থে অনেকে বিভিন্ন দোকানের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিলেও অনেকে সময়ের বিবেচনায় ভিজে ভিজেই পথ পাড়ি দিচ্ছে।কতো বেকার সমাজের গন্ধ ভেসে এলো এই বৃষ্টির সাথে।তাদের কারো হয়তো দু একটা টিউশনি আছে।যেখান থেকে দু’টো পয়সা আসে, যা দিয়ে তার মাস চলে।এমন বেকারদের কি এই বৃষ্টির পানি গায়ে মাখলে চলে?
আমি অবাক হয়ে আজ বিভিন্ন শ্রেনির মানুষের জীবনের গল্প পড়তে লাগলাম।কতো বিচিত্র অনুভুতির শিকলে আবদ্ধ হচ্ছিলাম।আকাশে উড়ে বেড়ানো ভাঙা মেঘের মন যে আমাকেও ভিজিয়ে দিচ্ছিলো, সেদিকে খেয়ালই করলাম না আমি।ওদের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে লাগলাম।হটাৎই গায়ে এই ভিজে পানির স্পর্শের আড়ালে অন্যরকম এক উষ্ণতা পেলাম আমি।মাথায় পড়ন্ত টুপটাপ পানিও যেনো ফুরুৎ করে গায়েব হলো।আমি অনুভব করলাম কেও পাশে দাঁড়িয়েছে আমার।তার মাথায় ধরা ছাতার তলে আমাকেও জায়গা দিয়েছেন।তা খেয়ালই হলো না আমার।হটাৎ উনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“বৃষ্টিতে ভিজছো কেনো?জ্বর বাঁধানোর সখ হয়েছে নাকি?”
আকষ্মিক গলা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম আমি। এক চেনা মুখ ভেসে উঠলো দৃষ্টিপটে।অসময়ে নিভৃত ভাইকে এখানে দেখে অবাক হলাম আমি।বিষ্ময় মাখা কণ্ঠে বললাম,
“আপনি এখানে?”
সেই মুখটা অমায়িক এক হাসি উপহার দিলো।প্রতিউত্তরে বললো,
“হু,বৃষ্টির মাঝে ছাউনি হতে এসেছি।”
চলবে