#প্রেম_থেকে_অপ্রেম
#পর্ব১৯
#রাউফুন
সেদিন রাতের মতোই আবারও একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেলো। মালা দেয়াল ঘেঁষে শুয়েছে আজকে। ওঁদের বেড টা দেয়ালের সঙ্গে লাগানো৷ খাটের পূর্ব পাশেই জানালা। আর তার পা টা পুর্ব দিক করা রয়েছে। বারান্দা টা দক্ষিণে। সেদিন দক্ষিণের জানালার কাছে শব্দ হলেও আজ ঠিক তার পায়ের কাছের পূর্ব দিকের জানালার কাছে শব্দ হচ্ছে। এটা খুবই স্বচ্ছ আর চিকচিক শব্দ যা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। মালা তখনো গভীর ঘুমে যায়নি আর সে সময় ই তার কানে এই শব্দ টা এসেছে। হঠাৎ ওর মনে হলো সরু কিছু ওর পায়ের নিচে সুরসুরী দিচ্ছে। ভয়ে আঁতকে উঠলো সে। হাত পা অবশ হয়ে এলো। সেই মুহুর্তে বিকট শব্দে ওর ফোন টা বেজে উঠলো। সে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন নিয়ে দেখলো সেই হুমকি দেওয়া নাম্বার থেকে কল আসছে। সে না চাইতেও ফোন টা রিসিভ করলো।
‘ফোন ধরতে এতো সময় লাগে? জানালা থেকে তোমাকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। ও আমার লোক।’
মালা আস্তে করে উঠে বারান্দায় গিয়ে ফিসফিস করে কথা বললো, ‘হোয়াট? তার মানে গতকাল রাতেও আপনার লোক ছিলো। সেই লোকই ওই অদ্ভুত কাজ করেছে?’
‘এতো কথা বলতে পারবো না। যে গর্দভ টাকে পাঠিয়েছিলাম ওটা সঠিক জানালার কাছে না গিয়ে ভুল জায়গায় গেছিলো। আর তাই আজকে আবার পাঠাতে হলো।’
‘কি চান এই রাত বিরেতে?’
‘কিছুই না। শুধু তোমার স্বামীর কাছে যে ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল গুলো আছে সেগুলো চাই।’
‘ইমপসিবল। আমি ওগুলো কিছুতেই দিতে পারবো না।’
‘না পারলে সমস্যা নেই। আমরা দ্বিতীয় অপশন বেছে নিচ্ছি। আমার লোক যেহেতু ঠিক তোমার রুমের বাইরে যেতে পেরেছে সেহেতু ঔশীর রুমের বাইরে গিয়ে জানালা দিয়ে ওঁকে বাইরেও নিয়ে আসতে পারবে!’
‘এই খবরদার ঔশীর দিকে হাত বাড়াবেন না।’
‘তাহলে আমার কথা তো তোমাকে শুনতেই হবে। না শুনলে যেটা বললাম সেটাই করবো। শুধু একটা কল সব বদলে যাবে। আর হ্যাঁ প্রিহান কে জানানোর চেষ্টাও করো না। মহা ধুরন্ধর স্বামী তোমার৷ সে কোন সময় কোন গতিবিধিতে চলে বলা দুষ্কর। এখন ফাইল টা হাতে না পেলে তোমার স্বামী কালই কোর্টে প্রেজেন্ট করবে সেগুলো। আর আমি চাই ওগুলো যেনো কোর্ট অব্দি না যায়।আমার ফাইলটা চাই ই চাই। আর যদি তুমি না দাও তাহলে আরও অনেক কিছু হতে পারে!’
‘আমি দিচ্ছি।’ দাঁত কিড়মিড় করে বললো মালা।
মালা জলদি গিয়ে রুমের আলমারিটা খুললো। কোনো রকম শব্দ করলো না। প্রিহানের ঘুম ভারী এটা সে প্রথম রাতেই বুঝতে পেরেছে। এতো সহজে তার ঘুম ভাঙবে না। ফাইলগুলো বের করার পর তার মাথায় অন্য কিছু খেলে গেলো। সে ফাইল খুলে আসল ফাইলটা একটা সেইভ জায়গায় রেখে দিলো। আর একটা খাতা থেকে কিছু সাদা পাতা আর কিছু লিখিত পাতা উপরে দিয়ে আড়া-আড়ি ভাবে বেধে দিলো, এবং সেগুলো ফাইলের মধ্যে রাখলো। লোকগুলো এই নকল কাগজ গুলো নিয়ে বেরিয়ে গেলে দেখলেও সমস্যা নেই। কারণ লোকগুলো এতো টাইট সিকিউরিটির মধ্যে এখানে দ্বিতীয়বার আসার সাহস করবে না। আর যেহেতু লোকটা বললো, কাল প্রিহান কোর্টে ফাইল গুলো প্রেজেন্ট করবে সেহেতু ভয় নেই। সে কাগজ গুলো ফাইলে ভরে সেটা নিয়ে আস্তে আস্তে বিছানার কাছে গিয়ে নিঃশব্দে জানালা খুললো। ফ্লাশ লাইট অন করতে মালার চোখে পরলো একটা কালো মোষের মতো লোক স্টিলের মইয়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে চট করে একটা ছবি তুলে নিলো। লোকটা ফ্ল্যাশিং দেওয়াতে চোখ মুখ কুচকে আবার তাকালো। বুঝতে পারলো না এটা ফ্লাশ লাইট নাকি ক্যামেরার লাইট। মালা জলদি করে ফাইল টা দিয়ে জানালা লাগিয়ে দিলো। আবার তার কাছে কল এলো। যথারীতি রিসিভ করে বললো,
‘আপনার কথা মতো ফাইল টা দিয়ে দিয়েছি। এখন যেনো আর আমাকে কল না করা হয়। আর আপনি আপনার কথা রাখবেন। ঔশীর কোনো ক্ষতি করবেন না।’
‘এতো সহজে কি তোমাকে ছাড়া যাবে? আরও অনেক কাজ আছে যেগুলো করতে তোমাকেই লাগবে!’
‘এই বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না হ্যাঁ! ঔশীর ক্ষ’তি করার কথা দ্বিতীয় বার ভাববেন না।’
‘এই সরো তো। ম্যালা ফ্যাচ ফ্যাচ করো না।’
কল কেটে গেলো। মালা হতাশ হয়ে কিছু একটা ভাবলো। ইতি মধ্যে মালা বুঝতে পারলো লোক গুলো চাই না প্রিহান তাকে কোনো ভাবেই সন্দেহ করুক। তাই তো তাকে বাইরে কোথাও না ডেকে নিজেদের লোকজন কে এই রিস্কের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। তার মানে মালাকে তারা আবার কাজে লাগাতে চাই। সে জন্যেই এতো তারাতাড়ি মালাকে নিয়ে প্রিহানের মনে সন্দেহের বীজ বোপন করতে দিতে চাইছে না। আর এই সুযোগ টাই মালাকে কাজে লাগাতে হবে। মালা কন্টাক্ট লিষ্ট ঘেটে একজন এর নাম্বার খুঁজে বের করলো। ডায়াল করতেই মুহুর্তেই রিসিভ হলো। মালা লোকটাকে হ্যালো বলার সুযোগ ও দিলো না। সে তীব্র শীতল কণ্ঠে বললো,
‘কোথায় থাকেন যে কল দিলে পাওয়া যায় না। একবার কল ধরলে চার পাঁচ দিন হাওয়া। মনে রাখবেন এরপর থেকে আমি যখন কল করবো সাথে সাথে উঠানো চাই। আমি একটা নাম্বার, একটা ছবি, সাথে একটা ভয়েস পাঠাচ্ছি। নাম্বার থেকে সকল তথ্য আমার চাই আর ভয়েস টা সেটা চেক করে বলুন এটা আসল ভয়েস নাকি নকল। আর হ্যাঁ আমার মনে হচ্ছে একটা অনেক বড় গ্যাং রয়েছে। তাদের প্রত্যেকটা ব্যাক্তির খোঁজ আমি দুইদিনের মধ্যে চাই। এট এনি কস্ট।’
‘ওকে ডিয়ার।’ ছোট করে উত্তর এলো অপরপ্রান্ত থেকে।
কথোপকথন শেষ হলো এখানেই। সে আস্তে আস্তে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো। একবার ঘুমন্ত প্রিহান কে পরখ করে নিলো সে। হঠাৎই মনে হলো তার প্রচন্ড খিদে পেয়েছে।সে যে রাতে না খেয়ে আছে এটা তার ই ফল।কিন্তু সে ঠিক করেছে প্রিহান নিজে খেতে না বললে, আর নিজের হাতে না খাইয়ে দিলে পানিও খাবে না। তার জেদ উঠে আছে কোনো একটা কারণে। হইতো কারণ টা সে জানে আবার জানে না।
•
সকালে ব্রেকফাস্ট করে তারাহুরো করে প্রিহান বেরিয়ে গেলো। আজকে তিন-চার বছর আগের কেস টার প্রথম হেয়ারিং। একটাও কেস আন-সলভড নেই প্রিহানের তিন বছরের উকালতির ক্যারিয়ারে। অথচ তার মনে হচ্ছে জীবনে প্রথম কোনো কেস সে হারবে। অবশ্য সে তো সবে তিন বছর থেকেই উকালতি করছে। মাত্র থার্টিন আপ সে। অথচ এতো কম বয়সে কত জটিল কেস সে লড়েছে এবং জিতেওছে। এই কেস টার মতো জটিল কোনো কেস ই লাগে নি তার কাছে। সে ভেতরে নার্ভাস থাকলেও ফেস নরমাল রাখার চেষ্টা করলো। তার বিপক্ষে যে লইয়ার কেস লড়ছেন সেও খুব দক্ষ এটা প্রিহান খুবই ভালো ভাবে খোঁজ নিয়েছে। তবে প্রিহানের কাছে যা কিছু প্রুভ রয়েছে তা দিয়ে কেস টা সর্ট আউট করতে পারবে। কেস অনেকটাই তার ফরে থাকবে এটা নিশ্চিত প্রিহান।
প্রিহান তারাহুরোতে মালা খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছে। এদিকে মালার অভিমানের পারদ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েই চলেছে। মালা ঘরে গিয়ে হ্যান্ড ব্যাগ নিয়ে বেরোতে যাবে তখনই তাকে টেনে ধরলেন খোদেজা। তিনি ইশারায় বললেন,
‘খেয়ে যাও মা। তুমি তো সকালে কিছু খাওনি।’
‘দুঃখিত মা! আমি এখন খেতে পারছি না। আমার বেরোনো টা খুবই জরুরি। আমায় ক্ষমা করবেন আপনার কথা না শুনার জন্য।’
সে আর কিছু না বলে বেরিয়ে এলো বাড়ি থেকে। দূরে নির্জন একটা স্থানে গিয়ে তার নতুন একটা সীম ইউস করে কাল রাতের উঠানো ছবিটি প্রিহান কে হোয়াট’স অ্যাপে পাঠিয়ে দিলো। আর লিখলো,
‘আজকে আপনার কেস লড়তে এই ছবিটি ভীষণ ভাবে কাজে আসবে। কেস টা আরও এগিয়ে থাকবে আজকে আশা রাখছি। বি স্ট্রং ম্যান! বি স্ট্রং!’
টেক্সট করেই সীম টা খুলে সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে দুটো ভাগ করে ফেলে দিলো মালা। সামনা-সামনি না হোক আড়াল থেকে তো সে প্রিহান কে সাহায্য করতেই পারে। প্রিহান হইতো জানেও না যে তার বিরুদ্ধে আড়াল থেকে কত রকমের কন্সপিরেসি চলছে। এভাবে সে কিছুতেই প্রিহান কে হারতে দিতে পারে না। যেভাবেই হোক এর রহস্য ভেদ করে প্রিহান কে তার সাহায্য করতেই হবে।
#চলবে