#বেস্টু
#পর্ব_০৮
#Ariyana_Nur
সেই কখন থেকে বসে আছি জানু,মনুর জন্য। কিন্তু বদ দুইটার একটারো আসার খবর নাই।বাবা,মা এ বাড়িতে চলে এসেছে। একটু পর শয়তান দুইটায় একসাথে বাড়িতে প্রবেশ করল। আমি ওদের দেখে ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম…
—ঐ কই মরতে গেছিলি তোরা???তোদের আসতে এতো সময় লাগে???আমি সেই কখন থেকে তোদের জন্য অপেক্ষা করছি???
মনু কিছু না বলে এসে আমাকে এক হাতে জরিয়ে ধরে কাদতে লাগলো।ওকে কাদতে দেখে আমি তো আহম্মক হয়ে গেলাম!!ও কাদছে!!ওর মতো ছেলেও কাদতে পারে!!!
ও কিছুক্ষণ কান্না করার পর আমি ওকে বললাম….
—আরে তুই যে মাইয়া মানুষের মত কানতে পারিস তা তো আমাদের জানা ছিল না।ঐ জানু ভিডিও কর।আর তোর গার্ললফ্রেন্ডা যদি জানে তুই মাইয়া মানুষের মত কাদতে পারিস তাহলে আমাদের মান সম্মান আর থাকবো।আল্লাহ দড়ি ফালাও উইঠা যাই।
(এখন যদি আমি ওর সাথে ভালো করে কথা বলি তাহলে ও আরো ভেংগে পরবে।তাই আমি এভাবে কথাগুলো বললাম)
ও আমাকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলল….
—বান্দর ছেরি…জীবনেও ভালো হবি না।
জানু এবার কাদো কাদো হয়ে বলল…
—জানস বেবি ও না আমারে ধইরা কাইন্দা আমার সুন্দর জামাটার মধ্যে ওর চোখের পানি নাকের পানি ভরাইয়া ফালাইছে।
আমি এবার আমার জামা চেক করে বললাম….
—দেখতো জানু আমার জামায় আবার ভরাইছেনি।ওরে দিয়া তো বিশ্বাস নাই।
মনু আমাদের দুজনের মাথায় গাট্টা মেরে বলল…
—যা তোদের সাথে কোন কথাই নাই।
আমি আর বেবি দুজন ওর দু হাত জরিয়ে ধরে বললাম…
কথা না বলিস সমস্যা না।কিন্তু আমাদের ড্রেস কিনে দিস।তোর চোখের পানির নাকের পানির ড্রেস পরবো কে??
এই বলে আমরা তিনজন একে ওপরের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলাম। আমাদের কাহিনী দেখে সবাইও হাসতে লাগলো।
সবাই মনে করে একজন ছেলে আর মেয়ে কখনো বন্ধু হতে পারে না।তাদের এই বন্ধুত্ত একদিন ভালো লাগা থেকে ভালোবাসায় রূপ নেয়। আসলেই কি তাই???
না…এই কথায় আমি কেন যেন একমত হতে পারছি না।সবার ক্ষেত্রে এমন হয় না।সব সম্পর্কে ভালোবাসা থাকবেই। কিন্তু একেক জনের জন্য ভালোবাসা একেক রকম।
(আর কিছু বললাম না ।দেখি ওদের ভালোবাসা কোন পযর্ন্ত পৌচ্ছায়)
______________________
সেই কখন থেকে আপুকে সবাই মিলে বিয়ের জন্য রাজি হতে বলছি কিন্তু তার এক কথা সে ভাইয়াকে বিয়ে করবে না। ভাইয়ার সাথে নাকি তাকে মানায় না।তাই সে ভাইয়াকে বিয়ে করতে পারবেনা।
এদিকে আমরা ছোটরা আপুকে রাজি করাতে পারছিনা।আর ঐ দিকে বড়রা বিয়ের ব্যবস্থা করছে।
মনুও আপুকে অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু তাতেও কাজ হয় নি।আমি পায়চারি করছি আর ভাবছি আপুকে কিভাবে রাজি করাতে পারবো। কিছুক্ষন পায়চারি করে আপুর সামনে ধপ করে বসে বললাম….
—কি সমস্যা তোমার আমাকে খুলে বলতো???আমার ভাইয়া কোন দিক দিয়ে দেখতে খারাপ???
আপু আমার হাত ধরে বলল….
—দেখ কেন তোমরা এমন পাগলামো করছো।আর আমি কখন বললাম তোমার ভাই দেখতে খারাপ।আমি তোমার ভাইয়ার যোর্গ না।তিনি আমার চেয়ে ভালো মেয়ে পাবে।পাগলামি করোনা বোন।
আমি আপুর হাত শক্ত করে ধরে বললাম….
—আচ্ছা আপু তোমার আর আমার মধ্যে কে বেশি সুন্দর???
আপুর মনে হয় আমার এমন কথা শুনে থ হয়ে গেল।
আপু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে মিস্টি হাসি দিয়ে বলল….
—কি বলছো এসব।তুমিই আমার থেকে বেশি সুন্দর।
আমি ঠোট উল্টে বললাম…
—মিথ্যে বলছো কেন???তুমি আমার থেকে বেশি সুন্দর।জানো আমার না যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সে দেখতে পুরো ধলা বান্দর থুক্কু কুরিয়ান হিরোদের মত।তুমিই বল আপু,তার সাথে কি আমায় মানায়???আমি কি আর সে কি???আমার না তাকে বিয়ে করতে মন চাচ্ছে না যদি দুদিন পর সে আমাকে অবহেলা করে?? মেনে না নেয়???
আপু আবার একটা মিস্টি হাসি দিয়ে বলল…
—কোন সম্পর্ক টিকে থাকার জন্য সুন্দর্য বা যোর্গতার প্রয়োজন হয় না।শুধু প্রয়োজন হয় মনের মিল।মনের মিল থাকলে কালো,ফর্সা,লম্বা,খাট,ধনি,গরিব এসব কোন কিছতেই কোন সমস্যা হয় না।
—তাহলে তুমি কেন বিয়েতে রাজি হচ্ছো না। পিছন থেকে কথাটা বলে ভাইয়া সামনে এসে দাড়ালো।ভাইয়া আবার বলল…
—দেখ আমি জানিনা আমি তোমাকে কতটুকু সুখে রাখতে পারবো।কিন্তু আমি চেষ্টা করবো যাতে আমি সব সময় তোমায় সুখে রাখতে পারি।বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।
আর বুড়ি ভালই তো বুদ্ধি হয়েছে।কিভাবে মানুষকে তার কথার জালে তাকেই আটকাতে হয় তোর থেকে শিখতে হবে।এই বলে ভাইয়া চলে গেল।
ভাইয়া চলে যেতেই নিহাদ ভাইয়া আপুকে বলল….
—বাহ ভাবি বাহ…কেয়া বাত হায়।আমাদের ভাইয়া…যার নাকি মেয়ে মানুষ দেখলেই এলার্জি শুরু হয়ে যায়।কথা বলাতো দূর তাকায় পযর্ন্ত না।সে তোমাকে আমাদের সামনে এভাবে প্রপোজ করে ফেলল।আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না।ভাইয়া যদি তোমাকে প্রপোজ না করতো তাহলে আমিই তোমাকে বিয়ে করে ফেলতাম।
আপু মাথা নিচের দিকে দিয়ে বসে আছে।উপর দিকে তাকাতে পযর্ন্ত পারছে না।ভাইয়া যে এমন কিছু বলবে সে মনে হয় কখনো কল্পণাও করেনি।আর এদিকে নিহাদ ভাইয়া তাকে নিয়ে আরো মজা করছে।
জানু নিহাদ ভাইয়ার সামনে গিয়ে বলল…
—তুমি এমন ব্যাঙ এর মত ফালাচ্ছো কেন???নিজের চেহারা আয়নায় দেখেছো???আর ভাইয়ার কথা বলছ যে, দেখতে হবে না ভাইটা কার।(ভাব নিয়ে)যা বলবে সরাসরি বলবে আমাদের মানহার মত।দেখলে না একটু আগে কি সুন্দর আমাদের হবু জিজুর জন্য ছটফট করছিল।তার বিরহে তো বেচারি পাগল হয়ে যাচ্ছে।কত….
ওকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বললাম….
—হারামী,শয়তান,বান্দর,কুত্তা,বিলাই তোরে জুতা মারুম।কোন সময় আমি ঐ খচ্চর ধলা বান্দর এর জন্য ছটফট করলাম।আর কি কলি আমি ঐ খাম্বার জন্য পাগল হইয়া যাচ্ছি।দাড়া তুই….
এই বলে আমি ওর দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই ও দিল ভৌ দৌড়।আমিও ওর পিছে দৌড় দিতে যাব এমন সময় দরজায় চোখ পরতেই আমি দাড়িয়ে গেলাম।আর এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম দেখি নতুন করে যদি কোন দরজা পাই এই রুম থেকে পালানোর জন্য।কেননা সামনে…..
#চলবে
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)