বেস্টু পর্ব-০৯

0
1672

#বেস্টু
#পর্ব_০৯
#Ariyana_Nur

সেই কখন থেকে সাদের এক কোনে জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে আছি।রাগে আমার শরীর জ্বলছে।এখন যদি আমি ঐ হারামি বান্দর দুইটাকে পেতাম না তাহলে ওদের উত্তম মধ‍্যম দিতাম।

তখন জানুর পিছনে দৌড় দিতে গিয়ে দেখি খচ্চর খাম্বা মনে মি:আরহাম দাড়িয়ে আছে হিরো স্টাইলে।তাকে দেখেই তো আমার জান যায় যায় অবস্থা।কি না কি বলে আমায়।সে আমাকে অবাক করে দিয়ে আমাকে উদ্দেশ্যে করে বলল….

—মিসেস ঘাস ফড়িং ভাবিকে নিয়ে নিচে আসো কাজি চলে এসেছে।

আমি তো তার কথা শুনে কতক্ষন থ’মেরে দাড়িয়ে থেকে আপুকে নিয়ে নিচে গেলাম।আমাদের সবার উপস্থিতিতে আপু আর ভাইয়ার বিয়েটা সুন্দর ভাবেই হলো।বাবা আপুর বাবাকে ফোন করে সব জানিয়েছে।তাকে বাবা অনেক বুঝিয়ে রাজি করিয়েছেন।

ভাইয়ার বিয়ের পর সবাই খাওয়া দাওয়া করার পর বেবি আর মনু আমাকে জোর করে সাদে নিয়ে আসে।আর আমাকে সাদে এই জমের সামনে রেখেই ওরা সাদের দরজা বাহির থেকে লাগিয়ে দেয়।

অনেকক্ষন ধরেই দুজনে চুপ করে দাড়িয়ে আছি।কারো মুখেই কোন কথা নেই।নিরবতা ভেংগে তিনিই বলল….
—নিচে যে কথাগুলো বলেছিলে তা কি তোমার মনের কথা???

আমি কাপা কাপা গলায় বললাম….
—নিচে তো কত কথাই বলেছি আপনি কোন কথার কথা বলছেন???

তিনি গম্ভীর গলায় বললেন….
—তখন ভাবির সামনে যা বলেছিলে???

আমি অবাক হয়ে বললাম…..
—ভাবি!!!আপনার ভাবি আসলো আবার কোথার থেকে!!!

তিনি আগের মতই বলল…
—তোমার ভাইয়ার বউ কি আমার ভাবি হয় না স্টুপিট।

—ও…আপনি আপুর কথা বলছেন।

—তোমার ভাইয়ার সাথে তার বিয়ে হয়েছে এখন তো ভাবিই হবে তোমার।নাকি আপু বলারই ইচ্ছা আছে।

আমি আনমনেই বলে ফেললাম….
—আরে এটা তো ভালই।ভাবিকে আপু বললাম।পারলে আমি তো আমার জামাইরে দুলাভাই ডাকি।

উনি অবাক হয়ে বললেন….
—কিহহহ?????

তার কথায় আমার হুস হলো আমি কি বলে ফেলেছি।আমি কথা ঘুরানোর জন‍্য বললাম….

—আপনি আমাকে এখানে এতক্ষন ধরে কেন দাড় করিয়ে রেখেছেন???আমি গেলাম আমার ঘুম পাচ্ছে।

এই বলে চলে যেতে নিলেই তিনি ধমক দিয়ে বললেন….
—এক পা এগিয়ে দেখ পা ভেংগে তারপর ঘরে বসিয়ে রাখব।

আমি তার কথা শুনে ভালো মেয়ের মত চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম।তিনি আবার বললেন…
—আমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উওর পাই নি।

আমি চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম।আমার চোখের পানি টলমল করছে।কথাই বলবোনা তার সাথে আমাকে কেন ধমক দিল।কি এমন বলেছি যে ধমক দিতে হবে।আমি মাথা নিচের দিকে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

উনি একটু আমার সামনে এগিয়ে এসে বলল…

—একদম কান্না করবে না।আর কথা বলছো না কেন??এমনি তোমার ঐ কথা শুনে আমার মাথা গরম হয়ে আছে।তার মধ্যে তুমি আমার প্রশ্নের উওর না দিয়ে চলে যেতে চাচ্ছ।

আমি এবার ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলাম।আসলে আমার আপনজনরা আমার সাথে একটু জোরে কথা বললেই আমার কান্না আসে।আরতো উনি আমাকে ধমক দিয়ে কথা বলছে।আচ্ছা উনি আমাকে ধমক দেওয়ায় আমার এতো খারাপ লাগছে কেন???ধুর…আর ভাবতে পারছিনা।

উনি আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে আবার ধমক দিয়ে বললেন….

—দেখ আমি তোমাকে তুমি যেমন তেমনি পছন্দ করেছি।আমার জন‍্য তোমাকে বদলাতে হবে না।তুমি যেমন আছো আমি চাই সারাজীবন এমনি থাক।আর আমি যেন তোমার এসব পাগলামি সারা জীবন সর্য‍্য করতে পারি।কেননা আমার এই পাগলি ঘাস ফড়িং কেই পছন্দ।আর একটা কথা কখন নিজেকে ছোট করে দেখবে না।কেননা আমার জিনিস কে খারাপ বলার অধিকার আমি কাউকে দেইনি।আর আমার এই সাদা রং যদি তোমার পছন্দ না হয় তাহলে তুমি চাইলে প্রতিদিন কালি মেখে কালো বানিয়ে রাখতে পার।তাতে কিন্তু আমার কোন সমস‍্যা নেই।ভালো থেক নিজের খেয়াল রেখ।এই বলে তিনি মুচকি হেসে সেখান থেকে চলে গেল।

আর আমি হা করে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।আর ভাবতে লাগলাম আমাকে কি থ্রেড দিয়ে গেল নাকি অন‍্য কিছু।

______________________

নিচে গিয়ে দেখি জানু,মনু,আপু,নিহাদ ভাইয়া বসে কথা বলছে।আর কেউ আছে কিনা সেদিকে আমার দেখার খবর নাই এবংদেখার কোন ইচ্ছাও নাই।আমি কতক্ষনে ওদের দুইটারে উওম মধ‍্যম লাগাবো সেই চিন্তায় আছি।আমি কোন কথা না বলে ওদের দুইটারে মারতে লাগলাম।সাদের থেকে আসার সময় একটা গাছের ডাল ভেংগে নিয়ে এসেছিলাম।সেটা এখন কাজে লাগাচ্ছি।ওরা আমার হাত থেকে পালাতে লাগলো। পালাতে পালাতে মনু বলল…

—আরে তুই আমাদের কেলাইতাছোস কেন??? কি করছি আমরা???তোরে আবার ভুতে ধরে নাই তো???

জানু হাপাতে হাপাতে বলল….
—আরে তুই যে কি কছ???ওরে ধরবো ভুতে ঔ তো একটা পেত্নী।তোর মত পেত্মীরে যে,আমাদের জিজু কি দেইখা পছন্দ করল???

আমি সোফায় ধপ করে বসে হাপাতে হাপাতে বললাম….
—শয়তান,বান্দর,কুত্তা তোদের একেকটারে জুতা মারুম।বান্দর গুলি আমারে সাদে ঐ হনুমানের সামনে একা রাইখা কেন আসছোস।আর ঐ হনুমানটা আমারে সাদে একা রাইখা আসছে।দেখ ভয়ে আমার হাত পা কাপতাছে।

—নিহাদ তোর বোনকে লবন পানি খেতে দে।দেখ বেচারি ভয়ে কেমন জড়সড় হয়ে আছে।

সাইডের থেকে কথাটা কে বলল তাকে দেখার জন‍্য তাকিয়ে দেখি টারহাম এক কোনায় বসে আছে।এবার আমি নিজেকে নিজেই গালাগালি দিতে লাগলাম।কোন কথা বলার আগে কেন যে আগে দেখে নেইনা সামনে কে আছে।আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম।

জানু হাপাতে হাপাতে বলল….
—জিজু দেখেন আপনার জন‍্য আমাদের পিঠে কতগুলো তাল পড়ল।আমরা যেন আমাদের ট্টিট টা সময়মত পাই।

উনি হাসতে হাসতে বলল….
—চিন্তা করো না শালি সাহেবা তোমাদের ট্টিট তোমরা সময় মত পেয়ে যাবে।

জানু হাসতে হাসতে বলল…
—থাঙ্ক উও সো মাচ জিজু….

—থাঙ্ক বলার দরকার নেই।শালিকার জন‍্য তো একটুক করতেই পারি।আর শালি সাহেবা আপনার বান্ধুবিকে একটু বেশি করে লবন পানি খাইয়ে দিও।তা না হলে বাচ্চা মানুষ সারারাত ভয়ে ঘুমাতে পারবেনা।

তার কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো।আর আমার শরীরে জ্বলছে।আমাকে বাচ্চা বলছে,তাহলে এই বাচ্চাকে বিয়ে করার জন‍্য এমন পাগল হচ্ছে কেন।হুহ…ঢং দেখলে বাচি না।

#চলবে

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন‍্যবাদ)