বেস্টু পর্ব-১০

0
1808

#বেস্টু
#পর্ব_১০
#Ariyana_Nur

সকাল বেলা দরজার খটখট শব্দে ঘুম ভেংগে গেল আহাদের।আহাদ ঘুম জরানো কন্ঠে বলল….

—দরজা খোলা আছে।

আহাদের শব্দ পেয়ে মিসেস শিকদার রুমে প্রবেশ করে বলল…

—কিরে তুই এখন পরে পরে ঘুমাচ্ছিস।নিধিরা যে আমাদের বাসায় আসবে সেই খবর আছে???

আহাদ ঘুম জরানো কন্ঠে বলল….
—মামনি প্লিজ মাএ ৫মিনিট।

—তোর এই ৫মিনিট আর শেষ হবে না।তারাতারি ওঠ।তা না হলে তোর ভাইকে ডাক দিব।

আহাদ তারাতারি করে উঠে বলল…
—কেন সকাল সকাল এই মাসুম ছেলেটাকে ভয় দেখাচ্ছ???
তোমার ঐ বজ্জাত ছেলে এখন যদি আমাকে ঘুমাতে দেখে তাহলে আমার খবর আছে।

—তা এতই যখন আমার ছেলে বজ্জাত তাহলে তাকে কিছু বললে উল্টো রাগ কেন করিস??

—আমার ভাইকে আমি বজ্জাত কেন আরো কিছু বলল কিন্তু কাউকে কিছু বলতে দিব না।হুহ….

মিসেস শিকদার হেসে বলল…
—ড্রামাবাজ এবার তারাতারি ফ্রেস হয়ে নিচে আয়।

—ওকে তুমি যাও আমি আসছি।

এতক্ষন আহাদ যার সাথে কথা বললেন তিনি হলেন মিসেস মুনিয়া শিকদার।আহাদ তার কাছেই থেকে পড়াশুনা করে।কেউ তাদের দেখলে বলবে না যে তারা মা ছেলে নয়।আহাদ তাকে মায়ের মতই সম্মান ও স্রদ্ধা করে।আর তিনিও আহাদ কে নিজের ছেলের চোখে দেখে।
দুনিয়াতে রক্তের সম্পর্ক ছাড়া কিছু কিছু সম্পর্ক আছে যার গাট অনেক মজবুত হয়।আর তাদের কাছে রক্তের সম্পর্কও ফিকে পরে যায়।

__________________________

আমি সেই কখন থেকে শাড়ি হাতে নিয়ে বসে আছি।কিন্তু পরিয়ে দেওয়ার মানুষ পাচ্ছি না।জানুকে কয়েক বার ফোন দিয়েছি প্রতিবারি বলছে ৫মিনিটের মধ্যে আসছি।আল্লাহয় জানে ওর ৫মিনিট কখন শেষ হবে।আমি জোরে চিৎকার দিয়ে বললাম….

—ভা…বি…..
তুমি যদি ২মিনিটের মধ্যে আমার রুমে না আসো তাহলে কিন্তু আমি তোমার সাথে যাব না।

আমার কথার একটু পরেই ভাবি রুমে প্রবেশ করে বলল…
—কি হয়েছে তোমার?? এভাবে ডাকছো কেন???

আমি রাগি শুরে বললাম…
—সেই কখন থেকে শাড়ি নিয়ে বসে আছি কেউ তো আমাকে পরিয়ে দিবে নাকি আমি যাব না।

ভাবি আমার মাথায় গাট্টা মেরে বলল…
—ভাই বোন দোনটা এক।রাগ মনে হয় তাদের নাকের ডগায় থাকে।

আমি আবাক হয়ে বললাম…
—ও…মা…
তুমি এক সপ্তাহে আমাদের চিনে ফেলেছ!!!

তিনি আবার আমার মাথায় গাট্টা মেরে বলল…
—আর ড্রামা করতে হবে না।এবার আস আমি শাড়ি পরিয়ে দেচ্ছি।

___________________

তাহিয়া তাড়াহুরো করে মানহাদের বাড়িতে প্রবেশ করছে আর একা একাই বিরবির করে বলছে…..

—জানু আজ তোর খবর আছে।বেবি সেই কখন বলেছে এসে ওকে শাড়ি পরিয়ে দিতে আর তুই এখন এলি।তোর কপালে আজ শনি,রবি সব আছে।

তাহিয়া তাড়াহুড়ো করে উপরে যেতে নিয়ে একজনের সাথে ধাক্কা খেল।তাহিয়া মাথা উঠিয়ে দেখে নিহাদ দাঁড়িয়ে আছে।তাহিয়া রাগি গলায় বলল…
—দেখে চলতে পারো না।তোমার জন‍্য আমি ব‍্যথা পেলাম।

আর এদিকে নিহাদ হা করে তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।তাহিয়া সেটা দেখে ধমক দিয়ে বলল…

—হা করে তাকিয়ে আছ কেন???জীবনেকি আমাকে দেখনি???

নিহাদ আবাক হয়ে বলল…
—তুমি শাড়ি পরেছো???

—তোমার চোখ আজকে কই রেখে এসেছো???দেখতেইতো পারছো আমি শাড়ি পরছি।।

নিহাদ আবার বলল….
—সত‍্যিই তুমি শাড়ি পরেছো???

—আরে আশ্চর্য!!!দেখছো যখন বার বার কেন জিগ্গেস করছো।আর আমার দিকে তুমি এভাবে তাকিয়ে রয়েছ কেন??আজ কি আমাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।(ভাব নিয়ে)

তাহিয়ার কথা শুনে নিহাদ জোরে হাসতে লাগলো।
তাহিয়া ওকে হাসতে দেখে বোকা হয়ে গেল।তাহিয়া চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল…

—কি ব‍্যপার তুমি হাসছো কেন???

আহাদ হাসতে হাসতে বলল…

—যেই জোকার সেজেছো হাসবো না তো কি করবো।আসাব আগে একবার আয়নায় ভালো করে তাকিয়ে দেখেছো তোমাকে কেমন দেখাচ্ছে।পুরো জোকার লাগছে।

তাহিয়া এবার কাদো কাদো হয়ে বলল…
—আমি জানি আমার শাড়ি পরা ভালো হয়নি।তাই বলে আপনি এভাবে আমাকে বলতে পারলেন???হাসেন বেশি করে হাসেন যখন এই জোকার থাকবে না তখন তো আর হাসতে পারবেন না।

এই বলে তাহিয়া উপরে চলে গেল।আর নিহাদ থ’হয়ে দাড়িয়ে রইল।নিহাদ সব সময়ই তাহিয়ার সাথে মজা করে কিন্তু কখনো তাহিয়া কোন মাইন্ড করে না।তাহলে আজ কি হল???

______________________

কলিং বেল বাজাতেই আহাদ দরজা খুলে দিল।আমাদের দেখে বলল…
—কিরে আসতে এতো দেরি করলি কেন???

আমি আহাদকে ধমক দিয়ে বললাম…
—বেয়াদপ পোলা বাড়িতে মেহমান আসলে কিভাবে কথা বলতে হয় তা শিখস নাই।সর সামনের থেকে।

ও একটা ভেংচি কেটে বলল…
—হুহ…আসছেরে আমার মেহমান।দু’দিন পর এ….

আহাদকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মামুনি(মিসেস শিকদার) বলল…
—আহাদ তুই পারিস ও বটে।আসতে না আসতেই মেয়েটার সাথে লাগছিস কেন।

আমি মামুনিকে দেখে দৌড়ে গিয়ে তাকে জরিয়ে ধরলাম।আর বললাম…
—মামুনি…কেমন আছ তুমি???জান তোমাকে কত…. মিস করেছি???

মামুনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল…
—আমিও তোমাকে অনেক মিস করেছি মা।তা তুমি কেমন আছ???

—হুম…ভালো….তুমি???

—আমিও ভালো আছি।তা তোমরা দুজন কেন বাকিরা কোথায়???

—উফ…আর বলোনা তাদের জন‍্যইতো এতো দেরি হল।তাদের নাকি আরো দেরি হবে তাই আমরা চলে এসেছি।

আমাদের কথার মাঝেই তাহিয়া গাল ফুলিয়ে বলল….
—আমাকেতো মামুনি চোখেই দেখে না।বউকে পেয়ে মেয়েকে ভুলে গেছে।

মামুনি একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওকে জরিয়ে ধরে বলল…
—ওমা…আমার মেয়ে দেখি রাগ করেছে।আমি আমার মেয়ে,বউ কাউকে ভুলি নি।রাগ তো আমার করার কথা তোমরা আমার সাথে একবার ও দেখা করতে আসো নি।

তাহিয়া মামুনিকে জরিয়ে ধরে বলল…
—আমি আসতে চেয়েছি।সব দোষ তোমার পোলার বউয়ের।ওই আসে নাই।

মামুনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল…
—ও যা বলছে তাকি সত্যি???

আমি একটু ভেবে বললাম…
—হুম…একটু সত্যি একটু মিথ্যা।

মামুনি মুচকি হেসে বলল…
—পাগলি একটা।

মামনি আমাদের দুজনকে একসাথে দাড় করিয়ে বলল…
— মাশাল্লাহ্…আমার মেয়ে দুটোকেতো আজ পরির মত লাগছে শাড়িতে।আমিতো আগে খেয়ালি করি নি।আমার ছেলে দেখলে তো পাগল হয়ে যাবে।

আমি মামুনিকে জরিয়ে ধরে কান্নার শুরে বললাম….

—আর কইয়োনা গো শাশরী আম্মা….
আমি তো আমার না হওয়া জামাইরে দেখলামওনা।আর
তোমার পোলার বউরে এক রাক্ষস আইসা আংটি পরাইয়া দিয়া গেছে।এখন আমার না হওয়া জামাই এর কি হইবো গো….
আমার জামাইতো বউ ছাড়া বিধবা হইয়া যাইবো গো…..

#চলবে

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন‍্যবাদ)