ভালোবাসার কাব্য গাঁথবো পর্ব-১৬+১৭+১৮

0
1348

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(১৬)
তানভীরের কোন খোঁজ খবর নেই। কলেজে নেই,রাস্তায় নেই,বাড়িতে নেই, আশে পাশে কোথাও নেই। তবে তার ফ্যামিলি ঠিকই আছে। লাবিবাকে শ্বশুর বাড়ি থেকে স্বয়ং শ্বশুড় শ্বাশুড়ি দেখতে এসেছে। আপাতত তারা নিজেদের মাঝে লাবিবাকে বসিয়ে আদরের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। লাবিবাও চুপচাপ আদর নিচ্ছে। এই আদর টুকু তার জন্য ই বরাদ্দ। একবার শ্বশুড়ের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে আরেকবার শ্বশুড়ির প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। সব থেকে কঠিন উত্তর টি ছিলো শ্বশুড়ের করা এই প্রশ্নের, ‘ তানভীর আর তোমার পরিচয় আছে এই খবর আমি কেনো জানতে পারলাম না? তোমাদের গোপনীয়তা তবে আমার চোখ ফাঁকি দিয়ে দিলো! ‘ এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে লাবিবা কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারলো না। তবে সিউর এরা নিশ্চয় ভেবে নিয়েছে তানভীর লাবিবার আগে থেকেই পরিচয় ছিলো। ফিরোজ খানের বিশ্বাস এরা গোপনে প্রেম ও করেছে। এবং নিজের আত্মবিশ্বাস ও হারাতে বসেছে যে তার জহুরির চোখ কেও ফাঁকি দেবার মতো একজন আছে যে সব সময় বাপের উপর দিয়ে যাবে। কিন্তু আসলেই তাই নয়। বাপের উপর দিয়ে এখনো যেতে পারেনি। তার থেকে ফিরোজ খান আরো এগিয়ে আছে। লাবিবাকে ছেড়ে দিলো আপাতত সোহানার কাছে। ফোন বের করে মেসেজ অপশনে গেলো। টাইপ করলো,
‘ তুমি আমার যোগ্য সন্তান হয়ে উঠতে পারো নি। বাইশ বছরে প্রেম করে বিয়ে করে আজ পর্যন্ত তোমাদের দুই ভাইয়ের জন্য সব মিলিয়ে দুটো মাস সেক্রিফাইস করেছি।‌ আর তুমি এতো বয়সে বিয়ে করেও বউকে বাপের বাড়ি ফেলে রেখেছো। প্রাপ্তি আর অভিজ্ঞতায় তুমি আমার দু আঙুল নিচেই পড়ে থাকবে। ‘

মেসেজ টা লিখে সেন্ড করে তৃপ্তির হাসি হাসলো ফিরোজ। কিন্তু এই হাসি একটু পরেই চুপসে গেলো যখন দেখলো ছেলের বউ তার দিকে বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। সে ই দৃষ্টিকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে সামনে রাখা ফ্রুটসের প্লেট থেকে একটা আপেল স্লাইজ তুলে চিবুতে লাগলো। কিন্তু তার এই আরামের খাবার গিলতে দিলো না লাবিবা। অবাকতা কাটিয়ে ডাকলো,
‘ পাপা! ‘
ব্যাস। যা হবার তাই হলো। ছেলের বউকে পাশে বসিয়ে ছেলেকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা ! এবার বুঝো। মিষ্টি হেসে বললো,
‘ তুমি কিছু দেখো নি মা। ‘
‘ আমি দেখেছি পাপা। ‘
লাবিবা সত্য প্রতিবাদ। কোনো বাবা কোন ছেলেকে এমন ম্যাসেজ পাঠাতে পারে লাবিবা জানতো না। তাও আবার প্রতিযোগিতা! হাতে থাকা ফোনের লাইট জ্বলার সাথে সাথে ই লাবিবা চোখ রাখলো। একটু ও লজ্জা পেলো না। তানভীর রিপ্লাই দিয়েছে খুব সুন্দর ভাবে।
‘ নিজের বয়সী বউকে নিয়ে আমার ছোট্ট বউয়ের সাথে মেলাতে আসবেন না পাপা জান! আমার বউ ছোট্ট হলেও অধৈর্য্য নয় বরং ধৈর্য্যশীল ,বোঝদার। ‘

কি গোপন প্রতিযোগিতা বাবা ছেলের! লাবিবার হা করা মুখটা বন্ধ করে দিতেই লাবিবা ফোনটা হাতে নিতে চায়। ফিরোজ খান লাবিবাকে ফোনটা না দিয়ে আবার বলে,
‘ তুমি কিছুই দেখো নি মা। ‘
লাবিবা উঠে যায়। তানভীরের মেসেজের শব্দ গুলো একদমি মিথ্যা। মিথ্যা অহংকার মেনে নিতে পারেনা লাবিবা। বর্তমানে সে প্রচন্ড অধৈর্যশীল ব্যক্তির ভূমিকায় আছে। বোঝতে চেয়েও বোঝদার হতে পারছেনা। মনে মনে আওডায় ‘ মিথ্যা। সব কিছু মিথ্যা। তানভীরের সাথে আবার মুখোমুখি হবে সে। খুলাখুলি কথা বলা উচিত এবার।
ফোনটা নিয়ে ছাদে চলে গেলো। দরজাটাও বন্ধ করলো। দোলনায় বসে পরলো। কন্ট্রাক্টে গিয়ে তানভীরের পার্সোনাল নাম্বারটা বের করলো। ডট দিয়ে সেভ করেছে। কোন নাম নেই। কি নামে সেভ করবে ভাবা নেই। তবুও একটু ভাবলো। চিন্তাগুলো কুন্ডলী পাকালো। তেমন কোন নাম পাওয়া গেলো না। স্যার/তানভীর স্যার দিয়ে সেভ করবে তাতেও মন সায় দিলোনা। সেই নামে একটা নাম্বার অলরেডি সেভ। সবাই জানে সেই নাম্বার। কিন্তু এই নাম্বারটা তানভীরের আপন মানুষের জন্য ব্যবহার হয়। লাবিবা এখন আপন মানুষ। তাও আবার একান্তই আপনজন যেখানে কোন ফাঁক থাকতে নেই দূরত্ব থাকতে নেই। লাবিবার হুট করে বেগম বেগম ফিল হলো। তানভীর খানের বেগম! লাবিবা ডট কেটে লিখলো ‘ খান সাহেব ‘ । বাহ এইবার যেনো পরিপূর্ণ। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে সাহস সঞ্চার করলো। তারপর কল দিলো। ভাগ্য ফেরে কলটা রিসিভ হলো না। দ্বিতীয় বার দু মনা করে আর কল দিলোনা। ফোনটা রেখে দিয়ে গাঁদা ফুল গাছ থেকে একটা ফুল তুললো। কানের পাশে গুজলো। তখনি দরজায় টোকা পড়লো। ভেতর থেকে কাজিন ডাকলো।
‘ আপু তাড়াতাড়ি আসো। মাঐ মা ডাকে। ‘
লাবিবা তৎক্ষনাৎ মাথায় ওড়না দিলো। ফোন নিয়ে নিজে ছুটলো। ইসমাইল সাবিনার বেডরুমে বড় আড্ডা বসেছে। লাবিবা আসলে সোহানা টেনে পাশে বসালো। তারপর তার ব্যাগ থেকে সংখ্যা তিনেক বক্স বের করলো। গহনার বক্স। লাবিবার হাতের উপর রাখলো। হালকা হেসে মাথায় হাত বুলালো।
‘ হুট করে বিয়েটা হয়ে গেলো। নতুন বউয়ের মুখ দেখলাম অথচ গহনা পড়ালাম না। এটা কি হলো? তাই তোমার পাপা নিজে গিয়ে ছেলের বউয়ের জন্য পছন্দ করে গহনা এনেছেন। ‘
সাবিনা হাসিমুখে বললো,
‘ তার কি দরকার ছিলো বেইনী? আপনি তো সোনা দিয়েই মুখ দেখেছেন। আপনার দেওয়া চুর আমি খুলতে দেই না। দেখুন কি সুন্দর লাগছে। ‘
হাত বাড়িয়ে দেখায় লাবিবা। সত্যিই হাত দুটো সুন্দর লাগছে।
‘ বিবাহিত মেয়ের হাত খালি রাখতে হয়না তাই চুর পরিয়েছি। তাই বলে গহনা দেবো না? আমার তানভীরের বউ বলে কথা।’
মেজো কাকী গহনার বাক্স গুলো একে একে খুলে। তিনসেট গহনা। একটা সীতা আরেকটা জড়োয়া আরেকটা পাতা স্টাইলের সিম্পলের মাঝে হার। রাফ ইউজ করা যাবে । সোহানা নিজে হাতে তা লাবিবাকে পরিয়ে দেয়। আর বলে,
‘ এটা সব সময় পরে থাকবে বুঝলে? নাক ফোড়াও নি এখনো! আচ্ছা আমি সময় করে এসে পার্লারে নিয়ে ফুড়ো করে আনবো। চুর কিন্তু খুলবে না। এতে স্বামীর হায়াত বাড়ে। ‘ এতো গহনা পেয়ে লাবিবার মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো। দুশ্চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছিলো। কিন্তু তা কি তার পিছু ছাড়বে? ছাড়ছে নাতো। এতো সব পাওয়ার জন্য ই কি বিয়েটা হয়েছিলো! হাতে চুর পরে থাকতে তার বেশ সমস্যা হচ্ছে। হাত চুলকাচ্ছে। এখন এতোটাও চুলকায় না। কিন্তু গলার নিচটা যেখানে হার রাখা সেখানে এখন চুলকাচ্ছে। এতো এতো সমস্যা গুলো কেনো জেঁকে ধরছে? এর চেয়ে রান্নাবান্না করা উত্তম না? ইনডাকশন কুকারেই নাহয় করলো! অতটাও গরম লাগবেনা। যে বিলাসিতায় শান্তি নেই সেই বিলাসিতায় কি লাভ? সাবিনা বাকি দুটো সেট আলমারিতে তুলে রাখে। মেয়ে তার যে সুখের সাগরে ভাসবে এটা বোঝা হয়ে গেছে। কিন্তু জামাইয়ের পাত্তা নেই। ছেলেটা যে গেলো আর এলো না। লজ্জায় কি আসতে চায়না কে জানে? তার মেয়ের মতো বউ পেয়ে কোন পুরুষ দূরে থাকা পসিবল ই না।

লাবিবার বড্ড কথা বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। আগে তো কল রিসিভ করুক। কিন্তু সেটাই তো করলো না। মাঝরাতে তার ঘুম ভেঙে গেছে। ভয়ঙ্কর একটা সপ্ন দেখে। সপ্নে সেই সুপুরুষ কাছে এসেছে। একেবারে কাছে। যতটা কাছে এলে মানুষ টার গলা জড়িয়ে ধরা যায়। লাবিবা গলা জড়িয়ে ধরেনি। সোজা দাড়িয়ে আছে। কিন্তু তার সুপুরুষ সোজা দাঁড়ানো অবস্থায় নেই। লাবিবার উপর ঝুঁকে আসছে। আসতে আসতে গালে টুপ করে চুমুও খেয়ে নিয়েছে। সেই চুমুতে লাবিবার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। এখন বড্ড তানভীরের কথা মনে পড়ছে। এমনিতেও তার মুখোমুখি হতে ছটফট করছে। তার উপর লোকটা সুপুরুষ হয়ে ঘুমেও হানা দিচ্ছে। মিনিট ছয়েক পর লাবিবার ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্কিনে জ্বলজ্বল করছে, ‘ খান সাহেব ‘ । কল ব্যাক করেছে। লাবিবার মুখে অদ্ভুদভাবে সাথে সাথেই হাসি ফুটে উঠে। খুব খুশি লাগছে। এতোটা খুশি হওয়া উচিত কিনা জানেনা। তবুও ভাগ দেবেনা। গলা খাঁকারি দিয়ে কন্ঠ ঠিক করলো। আজ চারদিন বাদে কথা হবে।
‘ হ্যালো। আসসালামুয়ালাইকুম। ‘
‘ ওয়ালাইকুমুস সালাম। কল দিয়েছিলে?’
‘ হুম। ‘
‘ কি প্রয়োজন ?’
‘ প্রয়োজন নেই। আপনার মম আমাকে গহনা দিয়ে গেছে। এগুলো এখন আমার গা চুলকাচ্ছে। আপনি খুলে নিয়ে যান। ‘
‘ আমি ঢাকায় আছি। ‘
‘ জামালপুর থাকলে নিশ্চয় খুলে নিয়ে যেতেন? ‘
‘ লাবিবা! ইমপর্টেন্স কিছু থাকলে বলো। অনেক রাত হয়েছে ঘুমাও। ‘
‘ আপনার সাথে আমার কথা আছে। ‘
‘ ফিরে বলছি। ‘
‘ আপনার কাজে কি আরো থাকতে হবে?’
‘ কেনো? ‘
‘ যত তাড়াতাড়ি আসবেন ততো তাড়াতাড়ি আমি ক্লিয়ার হবো। আমার বিবাহিত জীবনের ভবিষ্যৎ কি আমি জেনেই ছাড়বো। ‘
‘ উড়তে দিয়েছি যত পারো উড়ো। ডানাবিহীন পাখি হবার সখ হলো কেনো এতো? ‘
‘ উড়ে উড়ে কোথায় যাবো? সেই তো এই নিড়েই ফিরতে হবে। ‘
‘ মন চাইলে ফিরো না। ‘
‘ আপনি কি চান স্যার?’
‘ তুমি কি চাও সেটা আগে ঠিক করো। ‘
‘ আমিতো বলেছি আমি কি চাই। ঝামেলা বিহীন একটা জীবন চাই। ক্যারিয়ার গড়তে চাই। আব্বু আম্মুর কাছেই থাকতে চাই। ‘
‘ আর তোমার চাওয়াটা আমি পূরণে হেল্প করছি। ‘
‘ তারপর? ‘
চুপ থাকে তানভীর। তারপর কি হবে কে জানে! কাল কী হবে মানুষ সেটাই বলতে পারেনা। আর সেখানে চার পাঁচ বছর পর কি হবে সেটা কিভাবে বলবে? লাবিবা বুঝতে পেরেছে তানভীর আর কথা বলবে না। তাই সেই বলে ফোন কাটে,
‘ আপনি আসুন। তারপর আপনার সাথে কথা আছে । ‘
তানভীর ও বুঝে গেছে এই মেয়ে সব কথা ভাঙিয়েই ছাড়বে।

ঢাকা থেকে ফিরেই লাবিবার সাথে দেখা করে তানভীর। মেয়ে জামাইয়ের সাথে যাচ্ছে দেখে সাবিনাও খুশি মনে যেতে দেয়। রেস্টুরেন্টে বসে আগে খাবার অর্ডার করে। এখানে খাবার পেতে পেতেই সময় যাবে ঘন্টা খানেক। ওয়েটারকে মেনু সিলেক্ট বুঝিয়ে দিয়ে সরাসরি লাবিবার পানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। জানতে চায়।

‘ তো এবার শুনি তোমার সব কথা। ‘
‘ রাগবেন নাতো স্যার? আপনি কথায় কথায় হাইপার হয়ে গেলে আমার ভীষণ ভয় লাগে। ‘
‘ অভয় দিলাম। বলো। ‘

লাবিবা এটার ই অপেক্ষায় ছিলো। একদম রেডি হয়ে এসেছে। তাই শুরু করে,

‘ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা হলেও আমি আপনার স্ত্রী। আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন। আমাকে সাহায্য করছেন। একটা আনমেরিড মেয়ের মতো করে চলতে বলছেন। আমিও তো এটাই চেয়েছি। কিন্তু স্যার এর পর কি হবে? আমি নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বাবা মা নিয়ে দিব্যি থাকবো। কিন্তু তাঁদের পর আমি কার কাছে যাবো? আমার ছাদ কে হবে? বাকিটা জীবন একা কিভাবে কাটাবো? জীবনে যাই থাকুক সঙ্গী বিহীন কাটানো দুঃসহ ব্যপার। আমিও একজন সঙ্গী চাইবো। এইযে আপনার আর আমার বন্ধন! আমার ঘরে বাইরে এতো সমাদর ! আমি খেই হারিয়ে ফেলছি স্যার। আমরা সব দিক থেকেই আনমেচড। আমাদের তো সংসার সম্ভব নয়। আপনি জেনে বুঝে এই উপকার টা কেনো করতে গেলেন স্যার? এতে তো আপনার ই ক্ষতি। আপনার তো এখন বউ বাচ্চা নিয়ে সংসারের সময়। সেখানে আমার জন্য কি আপনি আটকে থাকবেন না? আপনার ফ্যামিলি কতটা এক্সপেক্টেশন নিয়ে আছে সেটা আমি দেখেছি। আমার কথা ভাবলেন কিন্তু আপনার কথাটা তো ভাবলেন না স্যার। তাহলে এই বিয়েটা কেনো করতে গেলেন? আমি জলে ভেসে যাই তাতে আপনার কি? আপনি কেনো আমাকে বিয়ে করলেন? ‘

একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে চুপ হয়ে যায় লাবিবা। তানভীরের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। উত্তরের অপেক্ষায় সময় গুনে। তানভীর নিচের দিকে মাথা নুইয়ে বসেছে। লাবিবার যে তার জন্য এতোদূর চিন্তা করে অস্থিরতায় সময় কাটে এটা তো ধারণার ও বাইরে। সত্যিই তো। তানভীরের এখন বউ বাচ্চা নিয়ে সংসার করার সময় তাহলে সে কেনো লাবিবার মতো একটা ছাড়া পাখিকে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করে ছেড়ে রেখেছে? নিজের কথা তো ভাবা উচিত ছিল তাঁর। পরের উপকার করতে গিয়ে নিজেকেই ভুলে গেলো? এতো সব চিন্তা নিয়ে কি মেয়েটা ঘুমিয়েছে এতো দিন আদৌ?

‘ তো তুমি কি আমার সাথে সংসার করতে চাইছো? ‘

প্রশ্নের জবাবে প্রশ্ন! তাও এমন প্রশ্ন লাবিবার চিন্তা ধারাকে গতি প্রদান করে এবং অবাকের শীর্ষে পৌঁছে দেয়। তানভীরের চেহারা দেখে বাকিটা ভড়কে যায়।

‘ লাবিবা! তুমি কি আমাকে পছন্দ করো? ‘

আবার প্রশ্ন! উত্তর না জানা প্রশ্ন। টিক মার্ক দেওয়া হবে একঘটি কনফিউশন নিয়ে। বেশ কয়েকটি অপশন।

‘ একবার খাঁচায় বন্দী হলে তোমার পার নেই। আমি আছি। ভেবে চিন্তে বলো তোমার আসলে কোনটা চাই?’

এবার আরো জটিল অপশন। লাবিবার ফেসটা কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়। ঠোঁট ভেঙে বলে,

‘ আমি জানিনা স্যার। ‘
‘ কে জানে? আমি?’

দ্বিধা কাটাতে এসে আরো দ্বিধায় ঢুবে যায় লাবিবা। অবস্থা বেগতিক। এখনি কেঁদে দিবে। তানভীর বুঝতে পেরে রসিকতার সুর টানে।

‘ মেয়ে! তোমাকে ভালো ভেবেছিলাম। তুমি তো দেখছি খুব একটা সুবিধার না !’

চলবে ___

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(১৭)
চিন্তায় চিন্তায় জ্বর চলে এলো লাবিবার । এখন সে শয্যাশায়ী। যে পড়া লেখার জন্য এতোকিছু সেই পড়ালেখা কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? গ্ৰামার বইয়ে তুলে দিলে সেটা মুখস্থ করার আগে মনে পড়বেনা লাবিবা যে একজন ছাত্রী। জীবন এখন তানভীর ময়। এই আছে! এই নেই! ধরতে গিয়ে উড়িয়ে দেই অবস্থা। সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছে সে প্রচুর। ভাঙা গলায় সাবিনাকে ডাকলো,
‘ আম্মু?’
সাবিনা ডাক শুনে রুমে এলো । মেয়েকে চিত হয়ে পড়ে থাকতে দেখে অস্থির হলো।
‘ কি হয়েছে? লাবিবা?’
‘ ফোনটা চার্জে। একটু দাও না। ‘
সাবিনা ফোন এনে হাতে দিলো। সন্দেহ বশত হাত চেপে ধরলো। ছেড়ে দিয়েই কপালে হাত রাখলো। ঘাড়েও রাখলো। চিন্তিত হলো।
‘ গা দেখছি একটু গরম! মাথা ব্যথা করছে? শরীর কেমন লাগছে? ‘
‘ এনার্জি পাচ্ছিনা আম্মু। ‘
‘ সারাদিন খেয়েছিস কিছু? কোথায় কোথায় ঘুরলি? ‘
লাবিবা উত্তর দিলো না। সারাদিন খেলো আর কই ! খাওয়া দাওয়া সব চান্দে উঠিয়ে দিয়েছে তানভীর। পেটুক লাবিবা এখন অনীহায় ভুগছে। রেস্টুরেন্ট তো তখনি ছেড়েছে। দূরত্ব বাড়িয়েছে তানভীরের থেকেও। কিন্তু বাসায় ফেরেনি। শীতের আগের ঠান্ডা বাতাসে গা ভাসিয়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়েছে নদীর পাড়ে বসে। একাকী। কেউ দেখেনি কেউ জানেনি। সেজন্যই বোধহয় গা টা এমন লাগছে। লাবিবা তানভীরের নাম্বারে একটা মেসেজ পাঠায়।
‘ আমার ধারণা আপনি আজীবন ব্যাচেলর লাইফ লিড করতে চাইছেন। ঠিক আপনার ভাইয়ের মতো। সেজন্যই আপনার পাপা আপনাদের উপর বিরক্ত। কথাটা কতটুকু সত্যি? উত্তর জানাবেন। কারণ এই উত্তরটুকুই আমাকে পথ দেখাবে। ‘
সেন্ড করে দিয়েই ফোনটা বালিশের পাশে রাখে। বুক অব্দি কম্বল টেনে চোখ বন্ধ করে। এভাবে কতক্ষণ সময় পার হয় জানা নেই। হটাৎ ই কপালে ঠান্ডা অনুভুত হওয়ার চোখ মেলে। কপালে জলপট্টি। সাবিনা মেয়ের পাশে বসে কপালে জলপট্টি দিচ্ছে। লাবিবা বিরক্ত হয়। সরিয়ে দিয়ে উল্টো ঘুরে শোয়। সাবিনা চেতে উঠতেই বলে,
‘ আম্মু প্লিজ! কিচ্ছু হয়নি আমার। দিতে হবেনা জলপট্টি। ‘
‘ আরে শরীরটা গরম লাগছে। একটু পরেই দেখবি ধুমিয়ে জর চলে আসছে। আয় জলপট্টি দিয়ে দেই। ‘
‘ লাগবেনা। ‘
‘ লাগবেনা আবার কি? জর কমবে কিভাবে তাহলে?’
‘ একটা কাজ করো তাহলেই জর কমে যাবে। ‘
‘ কি কাজ?’
‘ তোমার বেয়াইয়ের নাম্বারটা আমার ফোনে তুলে কল দাও। আর বলো, আমার জ্বর আসছে। বাকিটা উনিই করবে।’
‘ আরে উনারা অস্থির হয়ে পড়বে এটা শুনলে। কত ভালোবাসে তোকে। দেখলাম তো। একদম কাছ ছাড়া করছিলো না। ‘
‘হোক একটু অস্থির। আমিতো চাই অস্থির হোক। তোমরা একাই কেনো হবে?মেয়ে বিয়ে দিয়েছো এখন শ্বশুড়বাড়ির লোকজন ও অস্থির হোক। ‘
সাবিনা আর মেয়ের সাথে পেরে উঠেনা। কিছুতো একটা হয়েছেই। জামাইয়ের সাথে দেখা করতে গেলো ফিরে এসেই মেজাজ খারাপ করছে। ঝগড়া হলো নাকি? সাবিনা বেয়াইকে ফোন দেবার আগে লাবিবাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলো। একটু চিন্তিতও হলো। জানতে চাইলো,
‘ জামাইকেও কি ফোন দিয়ে _
‘ খবরদার। ‘
কথা শেষ করার আগেই নিষেধ বার্তা। রাগে ফুঁসছে লাবিবা। সাবিনা আলগোছে উঠে যায়। বেয়াইকে তৎক্ষণাৎ কল দিয়ে লাবিবার ব্যপারটা জানায়।

তানভীর বেশ ক্লান্ত। বাসায় ফিরেই ফ্রেস হয়ে রেস্ট নিলো। ডিনার সেরে এসে ঘুমানো যাবে এবার। ডাইনিং এ গিয়ে ফুল ফ্যামিলিকে একসাথে পেলো ‌। মামাতো বোন প্রমিও আছে। ফিরোজ খান ছেলেকে একবার দেখে খাওয়া শুরু করলো। খাবারের পর কথাটা বলবে মনঃস্থির করলো। অযথা খাবারটা নষ্ট করতে চাইলো না। যথা সময়ে খাবার শেষ হতেই মুখ খুললো। হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলো,
‘ দিনকাল কেমন যাচ্ছে তানভীর?’
‘ ভালো পাপা। ‘
‘ আমি তোমার উপর গর্বিত। ‘
‘ কি নিয়ে পাপা?’
‘ এইযে তুমি আমাকে এতোবড় একটা গিফট দিলে।আমি স্বীকার করছি। শত খোঁজেও নিজের জন্য এরকম একটা পুত্রবধূ আনতে পারতাম না।’
তানভীর মৃদু হাসে। লাস্ট খাবারটা মুখে তুলে বলে,
‘ তুমি আবার এই টপিক নিয়ে পড়লে পাপা!’
‘ পড়তে বাধ্য হলাম। তোমার কথাই ঠিক। অবশ্যই আমার পুত্রবধূ ধৈর্য্যশীল এবং বোঝদার। নয়তো তোমার সাথে মনোমালিন্য হবার পর জ্বর বাঁধিয়ে ফেলেও একটা টু শব্দ করলো না! ‘
‘ জ্বর কিভাবে বাধালো?’
‘ সারাদিন তো তোমার সাথেই ছিলো আমি কিভাবে বলবো! ছিহ বাবা! আমি তোমার মমকে কখনোই উনিশ ছেড়ে বিশ করতে দিই না অসুস্থ হয়ে কষ্ট পাবে বলে! আর তোমার বিয়ের কদিন যেতে না যেতেই এই অবস্থা! সোহানা! তোমার ছেলে আমার পুত্রবধূ কে কতটুকু ভালো রেখেছে সে আমার দেখার বিষয়! ‘
তানভীর ততোক্ষনে উঠে গেছে। টিস্যুতে হাত মুছে ঝড়ের বেগে বেডরুম থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে ফিরে এসে সদর দরজার দিকে লম্বা পা ফেলে। তামিম ডেকে উঠে,
‘ তানভীর! কোথায় যাচ্ছিস এভাবে?’
ব্যস্ত পায়েই ছোট্ট করে উত্তর দেয়,
‘ আসছি। ‘
ছেলের গতি দেখে ফিরোজ মৃদু হাসে। একটা ছেলে অন্তত সংসারী হোক। এতেই শান্তি পাবে।

ঘুম থেকে উঠেই লাবিবা চমকালো। সাবিনাকে বের করে দিয়ে একটু ঘুমিয়েছিল। সেই ঘুম আবার সাবিনার ডাকেই ভাঙলো। জামাই এসেছে অথচ মেয়ে পড়ে পড়ে ঘুমোবে এটা কেমন কথা! বেডের পাশেই মোড়াতে বসে স্বয়ং তানভীর। লাবিবার দিকে কঠিন মুখ করে বসে আছে। লাবিবাও তানভীরের দৃষ্টিতে দৃষ্টি ফেলে। বিরবিরিয়ে উচ্চারণ করে, ‘ স্যার!’
‘ বাহ! এই টুকুতেই এই অবস্থা!’
তানভীর তাচ্ছিল্য সুরে হাসলো। লাবিবার রাগ হলো। গাল ফুলালো। কম্বল সরিয়ে উঠে বসলো। অভিমানে অন্যপাশে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
‘ আপনিই কেনো?’
‘ দেখতে এলাম কত ডিগ্ৰি জ্বর হয়েছে। দেখি এদিকে আসো। ‘
‘ আমি ঠিক আছি। ‘
‘ সেটাতো দেখেই বুঝতে পারছি। তুমি ঠিক আছো। কিন্তু তোমাকে দেখতে এসে আমি অসুস্থ বোধ করছি। যাওতো আম্মুকে বলো আমার জন্য স্ট্রং কফি করে দিতে। মাথাটা খুব ধরেছে।’
‘ ক্লান্ত মুখ দেখে লাবিবাও বুঝলো মাথা ধরেছে। কম্বলের নিচ থেকে না উঠে রুম থেকেই গলা বাড়িয়ে ডাকলো,
‘ আম্মু একটা স্ট্রং কফি করে দাওতো।‌’
কিচেন থেকে সাবিনাও চেঁচিয়ে বললো,
‘ কফি না ভাত খেয়ে যা। রাত অনেক হলো। ‘
‘ তোমার জামাইয়ের জন্য। ‘
বলেই লাবিবা তানভীরের দিকে তাকালো। চোখে চোখ পড়তেই মাথা নুইয়ে ফেললো। একটুখানি যেনো লজ্জাই পেলো। তখনি হন্তদন্ত হয়ে সাবিনা ঘরে এলো। জামাই ঘরে তাই এতোক্ষণ এ ঘরে পা রাখেনি। এবার আর না এসে পারলো না। তানভীর কে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কফি কেনো বাবা? ভাত খেয়ে যাও। আমি খাবার গরম করছি তোমার জন্য। ‘
‘ আমি খেয়ে এসেছি আম্মু। আপনি কষ্ট করবেনা না খামখা। একটা কফি হলেই চলবে। ‘
‘ আচ্ছা দিচ্ছি। লাবি মা উঠে আয়। খেয়ে যা। ‘
‘ আমার ক্ষিধে নেই আম্মু। ‘
‘ রাতে না খেয়ে ঘুমায় না মা। খেয়ে যা। ‘
‘ উহু খাবো না। ‘
তানভীর বলে , ‘ আম্মু। রুমেই দিয়ে যান। আমি খাওয়াচ্ছি ওকে। ‘
সাবিনা বেরিয়ে যেতেই লাবিবা জেদ ধরলো।
‘ আমি খাবো না। ‘
‘ সারাদিন খাওনি। এখন একটা টু শব্দও করবেনা। চুপ চাপ খেয়ে নিবে। ‘
‘ আপনার কথা শুনবো না। ‘
‘ স্যার আমি তোমার ভুলে গেছো?’
‘ সেটা কলেজে এখানে না। ‘
‘ হাজব্যান্ড তোমার। ‘
‘ আপনি তো মানেন ই না। ‘
‘ কখন বললাম মানি না? এইযে তোমার দেনমোহর শোধ করলাম, তোমার সব কিছুর দায়িত্ব নিলাম, তুমি অসুস্থ শুনে দেখতেও চলে এলাম। না মানলে কি এসব করতাম? হাজব্যান্ড হিসেবে একটা দায়িত্ব আছেনা?’
‘ আমার দায়িত্ব নেওয়া লাগবে না। আমি একাই ভালো। আমার আব্বু আছে। আপনি কষ্ট করে এসেছেন। দেখা শেষ। ধন্যবাদ। বেশী রাত হয়ে যাবে। বাড়ি চলে যান। ‘
‘ খেয়ে নাও চলে যাচ্ছি। ‘
‘ আমার ক্ষিধে মরে গেছে। ‘
‘ খাবার খেয়ে জিন্দা করো।’
‘ উফফ!’
‘ উফফ টু। ‘

সাবিনা প্লেটে করে লাবিবার খাবারটা দিয়ে গেলো। তানভীরের কফিও দিয়ে গেলো। তানভীর মগে এক চুমুক দিয়ে লাবিবাকে ইশারা করলো।
‘ তাড়াতাড়ি খাও। পরে আবার আমার যেতে লেট হয়ে যাবে। ‘
লাবিবা প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে তানভীর তাড়া দিলো। লাবিবা অসহায়ত্ব প্রকাশ করলো।
‘ সত্যিই আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। সারাদিন না খেয়ে ক্ষিধেটা মরে গেছে। ‘
‘ আমার কফি শেষ হওয়ার আগে যেনো প্লেটটা ফাঁকা হয়। তুমি তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ না করলে আমার আবার লেইট হবে।‌ রাতের বেলা! তুমি তো আবার আমাকে নিয়ে ভাবো। আমার ভালো চাও কিনা!’
কথাটা যে ঠেস দিয়ে বললো লাবিবা বেশ বুঝতে পেরেছে। তাই সে এমন তাড়াহুড়ো করে খেলো যে গলায় কয়েকবার আটকে গেলো। ততবার পানি খেয়ে থামতেও হলো। প্রত্যেক লুকমা মুখে তুলার আগে তানভীরকে আড় চোখে দেখলো। তানভীর ইশারা করতেই গপাগপ গিললো। লেট না করতে চেয়ে আরো লেট হলো। তানভীর ঠিক ততক্ষনই ধীরে সয়ে কফিটা চালিয়ে গেলো। ঠান্ডা কফি লাস্টে কিছুটা মগে পড়ে রইলো। হাত ধুয়ে লাবিবা মগ সহ প্লেট কিচেনে রেখে এলো। সাবিনাকে নিয়ে যেতে বললেও এলো না। লাবিবাকেই রেখে আসতে হলো। রুমে এসে দেখলো তানভীর গলার পাশে শার্টের বোতাম খুলছে। লাবিবা দেখতে দেখতেই এসে বিছানায় ঠিক আগের জায়গায় বসলো। পায়ের উপর কম্বল টেনে তানভীরকে বললো,
‘ এখন আপনি যেতে পারেন। ‘
তানভীর বড় সড় একটা হামি তুললো। লাবিবা ভ্রু কুচকালো। তানভীর পকেট থেকে ফোন ওয়ালেট বের করে ওয়ার্ডড্রোবের উপরে রাখলো। তারপর লাবিবার দিকে এগিয়ে এলো।
‘ আজ সারাদিন কি কি করেছি যানো? তোমাকে টাইম দিয়েছি। কলেজে গিয়েছি। বিকালে একটা মিটিং এ এটেন্ড করেছি। তারপর কিছু ফ্রেন্ডসদের সাথে মিট করেছি। বাসায় ফিরে ফ্রেস হয়ে ডিনার সেরে তোমার খবর পেয়ে দৌড়ে এসেছি। এতো এতো কাজের পর আমি এখন বেশ টায়ার্ড ফিল করছি।মনে হয়না এখন ড্রাইভ করে এতোটা রাস্তা যেতে পারবো। আমার রেস্ট প্রয়োজন। আমি দু ঘন্টা ঘুমোবো। দু ঘন্টা পর আমাকে ঢেকে দিবে। ‘
বলেই লাবিবার পাশে শুয়ে পড়লো। লাবিবা চেঁচিয়ে উঠলো।
‘ মানে কি? তাহলে তো আরো রাত হয়ে যাবে। ‘
‘ তোমার কি মনে হয় আমি মেয়ে? চুপ থাকো। তুমি এতোক্ষণ ঘুমিয়েছো এখন আমাকে ঘুমোতে দাও। এখানেই বসে পাহারা দাও। ঠিক দু ঘন্টা পর আমাকে ডেকে দিবে। গুড নাইট। ‘
‘ আমি আপনাকে কিছুতেই ঘুমোতে দিবো না। ‘
‘ লাবিবা। আমি সত্যিই টায়ার্ড। প্লিজ লুক এট মি। ‘
‘ আমি যতক্ষন আমার প্রশ্নের উত্তর না পাচ্ছি ততোক্ষন আপনার দিকটা কিছুতেই দেখবো না। ‘
‘ ওকে। জাস্ট ওয়ান কোয়াশ্চন। ‘
‘ আপনি বিয়েটা কেনো করেছেন আমায়? ‘
প্রশ্নটা শুনে তানভীর তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলো না। সরল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো লাবিবার দিকে। চোখ বন্ধ করে আবার খুললো। ধীরে ধীরে বললো,
‘ আপেলের মত থুতনিটা কামড়ে খেয়ে নিতে মন চেয়েছিল। তাই বিয়ে করেছি। ক্যান আই ট্রাই ওয়ানস?’
তানভীর এক লাফে লাবিবার কাছে চলে এলো। লাবিবার থুতনি পুরোটাই মুখে ভরিয়ে নিয়ে কামড়ে ধরলো। ঘটনা এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো যে লাবিবা আত্মরক্ষার সময় পেলো না। তীব্র ব্যথায় গোঙাল!
‘ স্যারররর..! ‘
তানভীর ছেড়ে দিয়েই মুখোমুখি হলো। ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে শাষালো।
‘ হিসসসস_____! নো মোর ওয়ার্ডস। ‘

তানভীর ঘুমিয়ে‌ লাবিবার দিকে মুখ করেই নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে। লাবিবা পড়েছে বেকায়দায়। মানুষটা তাকে কতভাবে যে শেষ করবে আল্লাহ ই জানে! বিয়ের পর থেকে একটুও শান্তি পাচ্ছেনা। লাবিবার ভোলা ভালা শান্তিপ্রিয় জীবন এখন তানভীর নামক মানুষটা ঘ্রাস করছে। তারপর এই হুট হাট অস্বাভাবিক কর্মকান্ড। লাবিবাকে শেষ করে দিচ্ছে। ভবিষ্যত নেই জেনেও কেনো এভাবে হুট হাট কাছে আসে ? লাবিবা থুতনিতে হাত রাখলো। ইসস! ছুয়া যাচ্ছেনা। জ্বলে উঠছে। লাবিবা ফোনের ক্যামেরায় নিজেকে দেখলো। পাজি লোকটা দাগ বসিয়ে দিয়েছে। এ মুখ এখন লাবিবা কাকে দেখাবে? হায় হায়! কি লজ্জা! এরকম পাগলামি কেউ করে? দু ঘন্টা হতে চললো। লাবিবার ইচ্ছে করছে না ডেকে দিতে। ইসস! কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছে! জলজান্ত এতো বড় একটা মানুষ! কেউ মানুক আর না মানুক মানুষটা তার স্বামী! যাকে দেখে মুহূর্তে ই মেয়েরা আকর্ষিত হয়ে পড়বে সেই মানুষ টা লাবিবার স্বামী! নিজের পুরুষ। লাবিবা ভেতরে ভেতরে পুলকিত হয়।
অবাধ্য নজরে চুলের আগা থেকে পায়ের নগ পর্যন্ত আগাগোড়া ভালো করে পর্যবেক্ষন করে। সুপুরুষ! তার সুপুরুষ! হৃদয়ে শিহরণ জুড়ে। সব চেয়ে বেশি টানে সেই পুরুষালী বুক। ডানপাশটায় শার্ট নেমে যেতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। একটা ঘোরের মাঝে চলে যায় লাবিবা। হাত না বাড়িয়ে দেয় পা বাড়িয়ে। স্পর্শ করে তানভীরের খোলা বুক। পুরো পা টাই গলিয়ে দেয় বুকের উপরে। অনুভব করে নিঃশ্বাসের উঠা নামা। লাবিবার পুরো শরীরে শিহরণ জাগিয়ে তুলে। চোখ বন্ধ করে নিজেকে দমাতে লেগে পড়ে। ডেকে দেবে না আর তানভীর কে। যদি উঠে পড়ে তাহলে আটকাবে। অনুরোধ করে বলবে,
‘ থাকুন। গভীর রাত। ফিরে নাই গেলেন আজ!’

চলবে ___

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(১৮)
শীতল বুকে উষ্ণ ছোঁয়া পেয়েই ঘুম ছুটে গেছে তানভীরের। চোখ বুজেই অস্তিত্ব যাচাই করলো। ভীষণ মসৃন একটা পা। আলতো হাতে কয়েকবার ছুঁয়ে দিলো। তার বুকে কার পা? ভেবেই চোখ মেললো। সম্মুখে লাবিবাকে দেখে হকচকিয়ে গেলো। বত্রিশটি বছর একা ঘুমানো মানুষটা যখন ঘুমের মাঝে কোন নারী অস্বিত্বের ছোঁয়া পায় তখন ঘাবড়ানো খুব একটা আশ্চর্যের ব্যপার নয়। তানভীরের ক্ষেত্রেও ঘটলো ঠিক একই ব্যপার। একপা বুকে সেটিয়ে আরেকপা গুটিয়ে পেছনে মাথা হেলে বুক উঁচু করে কোমড় বাঁকিয়ে অদ্ভুদ ভঙ্গিতে শুয়ে আছে লাবিবা। উড়নাটাও পড়ে‌ আছে হাতের নিচে। এইভাবে লাবিবাকে দেখে তানভীরের যায় যায় অবস্থা! তানভীর ডাকলো,
‘ লাবিবা! এভাবে শুয়েছো কেনো? সোজা হও। পরে আর কোমড় সোজা করতে পারবেনা। ব্যথা করবে। ‘
সাড়া নেই। আবার ডাকলো,
‘ লাবিবা!’
গভীর রাতের শুনশান নীরবতার মাঝে ঘন নিশ্বাস আবিষ্কার করলো। গভীর ঘুমে লাবিবা। তানভীর আর ডাকলো না। ঘড়িতে সময় দেখলো। তার বাঁধা দুই ঘণ্টা অনেক আগেই ইতি টেনেছে। পাহারাদার ই যদি ঘুমায় তাহলে তো হলোই। উঠে আর কাজ নেই। বালিশে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো। ঘুমানো যাক আবার। ঘুম কি আদৌ আসবে। বুকের ডানপাশটায় এখনো ছুঁয়ে আছে লাবিবার পা। তানভীর পা টা হাতের মুঠোয় পুরলো। শক্ত করে চেপে ধরলো বুকের মাঝে। তারপর ঘুমানোর চেষ্টা করলো। এভাবে অনেক সময় অতিবাহিত হলো ঘুমানোর নাম নেই। তানভীর নিজেকে দমিয়ে না রেখে এবার ছটফট করলো। আলতো ভাবে পা টা চেপে ধরে টেনে নিজের কাছে আনলো। ঠিক ভাবে শুইয়ে মাথার নিচে বালিশ দিয়ে দিলো। চুল গুলো একপাশে করে নিলো। বিছানা ছাড়লো। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে কিছু একটা খুঁজলো। বক্সের মাঝে পেয়েও গেলো। রাবার ব্যান্ড। একপাশে লাবিবার চুলগুলো মুচরে ব্যান্ড লাগিয়ে ঝুটি করে দিলো। গায়ের উপর কম্বলটা টেনে দিলো। অপেক্ষা না করে সেই কম্বলে নিজেকেও মুড়িয়ে নিলো। আঙুলের ভাজে হাত নিয়ে ছোট্ট করে চুমু দিয়ে সেও ঘুমিয়ে পড়লো।

সকালে সাবিনার চেঁচামেচি তে লাবিবার ঘুম ভাঙলো। আটটা বাজতে চললো অথচ ঘুম ভাঙার নাম নেই। ঘুম ভেঙে বালিশে নিজেকে দেখে অবাক হলো । তানভীরের কথা মনে পড়তেই লাফ দিয়ে উঠলো। রুমে তানভীর নেই। লাবিবার বালিশের পাশে আরেকটা বালিশ। গায়ে কম্বল! রাতে তো তার গায়ে পা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। হায় আল্লাহ! ছি ছি! দেখে ফেললো। পাশে শুয়ে ফেললো। উড়না কই? খাটের এক কোনায় খুঁজে পেলো। অর্ধেক ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। এই মুখ এখন তানভীরকে কিভাবে দেখাবে? ইসস লজ্জা! কয়েক সেকেন্ডের লজ্জার সাথে মেজাজ টাও বিগড়ে গেলো। দুটোর কম্বিনেশনে এখন কান্না চলে আসলো। বেটা আমাকে ফ্রিডমই দিয়েছিস আবার বউ নিয়ে ঘুমানোর শখ জাগে কেনো? রাগে গজ গজ করতে করতে উঠে ওয়াশরুমে ছুটলো।

লাবিবা ডাইনিং এ যেতেই তানভীরকে বসা দেখলো। কুটুস কুটুস করে আপেলে কামড় দিচ্ছে। রাতে থুতনিটা আপেল ভেবে কামড়ে দিয়েছে। আর এখন সত্যকারের আপেলে কামড় দিচ্ছে। তানভীর তাকাতেই লাবিবা চোখ সরিয়ে নিলো। কিছুতেই চোখে চোখ পড়া যাবেনা। লাবিবা লজ্জা পাবে না? লাবিবা বসতেই সাবিনা এসে উড়নায় টান দিলো।
‘ কি ব্যাপার? উড়না দিয়ে মুখ ঢেকে আছিস কেনো? ‘
‘ ব্রণ উঠেছে।’
উত্তর দিয়েই লাবিবা আড়চোখে তানভীরের দিকে তাকালো। তানভীর তার দিকেই তাকিয়ে আছে। কি ভুলটা করেছে এবার টের পাচ্ছে। সাবিনা বকা দিলো,
‘ ব্রণ উঠেছে তাই বলে ঐভাবে মুখে কাপড় দিয়ে রাখবি? ‘
‘ উহু সরাবোনা। ‘
‘ এসব কি? জামাই কি ভাববে? উড়না সরিয়ে তাড়াতাড়ি খা। জামাই চলে যাবে। এগিয়ে দিয়ে আয়। ‘
‘ এমনি ঠিক আছি। ‘
‘ এইভাবে কেউ খায় নাকি? সরা উড়না সরা। ‘
সাবিনা উড়নায় হাত দিয়ে টানতে গেলে তানভীর বাগড়া দেয় ।
‘ আম্মু ওর যখন এভাবে খেতে ইচ্ছে করছে। খাক না!’
‘ তুমি বাবা ওকে এভাবে আস্কারা দিও না। এমনিতেই আমার মেয়ে ভালো। কিন্তু পরে দেখবে মাথায় চড়ে নাচবে। আরেকটা ব্রেড নাও না বাবা। ‘
‘ না। ওকে! আমার খাওয়া প্রায় হয়ে গেছে। ‘
এ যাত্রায় লাবিবা বেঁচে গেছে। ঐভাবেই মুখ ঢেকে ঢেকে খেয়ে নেয়। রুমে এসে দেখে আটটা পনেরো মিনিট। উনি কি এখনি বেরিয়ে যাবে? ভেবেই বারান্দায় উকি দিলো। তানভীর কার সাথে যেনো কথা বলছে। কথায় কথায় মাথা দুলাচ্ছে আর বলছে,
‘ হ্যা হ্যা একটু লেট হবে। ‘
লাবিবাও নিজের ফোনটা নিয়ে আয়েশ করে বসলো। তানভীরের দেড়ি হতে থাক ততোক্ষনে একটু মামা বাড়ি থেকে ঘুরে আসা যাক ।

‘ সারাদিন কি দেখো ফোনে? ‘
মাথা তুলতেই দেখে তানভীর দাঁড়িয়ে। বারান্দা থেকে চলে আসছে। বিনা বাক্যে লাবিবার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়। লাবিবা চেঁচিয়ে উঠে,
‘ আআ আমার ইউটিউব মামা!’
‘ কি দেখো ইউটিউবে ? বলিউড মুভি? রোমান্স! বুকে পা দিয়ে কিভাবে পার্টনার কে আকর্ষন করে সেসব? বেয়াদব!’
এই ভয়টাই পাচ্ছিলো। লাবিবা প্রতিবাদ করে,
‘ এই না! আমি ভালো মেয়ে।‌
‘ আমি কখন বললাম তুমি খারাপ মেয়ে?
‘ আমি ঐসব খারাপ ভিডিও দেখিনা। খুবই ভালো মেয়ে আমি।’
‘ আমি জানি তুমি ভালো মেয়ে। খারাপ হবার চান্স নেই। আমরা যে কাজগুলো কে খারাপ বলি সেই কাজগুলো করলেও এখন তুমি খারাপ হবেনা। একটা নির্দিষ্ট সময়ে খারাপ কাজগুলোও ভালো কাজের শীর্ষে থাকে। কখন জানো? ‘
‘ কখন?’
‘ যখন তুমি মেরিড পার্সন। ‘
‘ আমি মেরিড হলেও ঐসব দেখবো না। ‘
‘ সে তুমি দেখতেই পারো। আমি মানা করছি না। এই তুমি ভুজপুরীর ফ্যান নাকি? ‘
‘ একদম না। ‘
তানভীরের কপালে চিন্তার বলি রেখা দেখা গেলো।
‘ তাহলে ভুজপুরী নায়কাদের মতো ফিগার বানিয়েছো কেনো? ‘
‘ আপনি না একটা কলেজের প্রিন্সিপাল? কি দেখেন এসব? আসতাগফিরুল্লাহ! ‘
‘ কোথায় লেখা আছে প্রিন্সিপালরা ভুজপুরী দেখতে পারবেনা? এই সত্যি নাকি? দেখি সার্চ করে। ‘
‘ কি ?’
‘ তোমার ফোন। ‘
‘ এই না! দিন আমার ফোন। আমি ভালো মেয়ে । আমি এসব দেখিনা। ‘
‘ তোমাকে বিশ্বাস হচ্ছে না। রাতে যা দেখালে। তারপর থেকে তো আরো না। ‘
‘ কি দেখিয়েছি আমি? ‘
‘ ভিডিও দেখে যা শিখেছো তাই। ‘
‘ আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। আমি কিছুই করিনি। ‘
‘ ঘুমের মাঝেই __’
লাবিবা এবার ভ্যা করে কেঁদে দিলো। সত্তর পার্সেন্ট রিয়েল হলে ত্রিশ পার্সেন্ট ই অভিনয়। তানভীরের হাত থেকে ফোনটা নেবার জন্য উঠে পড়ে লাগলো। পারলো না। তানভীর লাবিবার হাত দুটো মুঠোয় পুরে নিলো। তানভীর গ্যালারিতে ঢুকে লাবিবাকে সাবধান করলো,
‘ একদম পাসরা-পাসরি করবেনা। পরে আবার ব্যথা দিয়ে দিবো। থুতনির মতো দাগ হবে। ‘
লাবিবা শুনলো না। হাত ছাড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা করলো। হাত লাল টকটকে হয়ে গেছে দেখে আরো ছটফট করলো। তানভীরের সেদিকে খেয়াল নেই। গ্যালারিতে যা দেখলো তাতে একটু সিরিয়াস ই হয়ে গেলো। একশ আটত্রিশটি মুভি। টাইটানিক, এলিজাবেথটাউন, হিচ,দ্যা মাউন্টেইন বিটুইন আস ! পড়ার পর তানভীর আর এগোনোর সাহস পেলো না। এই মেয়ে আগেই গোল্লায় গেছে বেশ বুঝতে পারছে। থমথমে গলায় বললো,
‘ তো এসব দেখা হয়! এর বাইরে আর কি দেখো শুনি?’
‘ স্যার আমার ফোন দিন। এখন না দিলে আমি চেঁচাবো। আম্মু! আম্মু! আম্মু! ফোন দেয়না আমার। বাঁচাও আমাকে আম্মু। ‘
সাবিনা ইসমাইল অনেকক্ষন থেকেই লাবিবার চিৎকার শুনছে। ইসমাইল বললো,
‘ যাও একটু দেখে আসো। ‘
‘ কি বলো? জামাই ঘরে। তোমার মেয়ে চিল্লালেই যেতে হবে?’
‘ তোমাকেই তো ডাকছে। আমার সাথে তো কথাও বলেনা। ‘
সাবিনা নিজের রুম থেকেই জবাব দিলো,
‘ কি হয়েছে? লাবিবা?’
আর জবাব নেই। তানভীর লাবিবার হাত ছেড়ে মুখ চেপে ধরেছে। দাঁতে দাত চেপে বলে,
‘ চুপ থাকো। মারবোনাতো। ‘
‘ আপনি মারার থেকেও বেশি টা করেন। হাতে না মেরে মুখে মারেন। ‘
‘ আবার ইচ্ছে করছে নাকি খেতে কামড়? ‘
লাবিবা চুপসে যায়। তানভীর আয়েশ করেই প্রত্যেকটা ব্রাউজিং চেক করতে থাকে। লাবিবা জোর করে হেসে বলে,
‘ কিছুই পাবেন না। আর ঐসব মুভি ছোট ছোট মানুষরা দেখা শেষ। আমিতো অনেক বড় হয়ে দেখছি। তানভীর স্কল করতে করতেই লাবিবার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। সাথে সাথে লাবিবা ফোনের স্কিনে তাকালো। সর্বনাশ! এগুলো কোথায় পেলো? এ যাবৎ যত রোমান্স ক্লিপ গুলো দেখেছে সব শো করেছে। কিন্তু লাবিবাতো সব ডিলিট করে দিয়েছিলো।‌ ক্রমের হিস্ট্রি তে যে এসব পড়ে থাকবে সেসব কে জানতো? লাবিবার অবস্থা দেখে তানভীর লাবিবার কাধে হাত রাখে।
‘ চাপ নিও না। তুমি তো ভালো মেয়ে। খারাপ হতেই পারো না। ‘
শেষ। মান ইজ্জত এখানেই সব শেষ। লজ্জায় আর মুখ তুলতে হয়না। এবার তানভীর লাবিবার মাথায় হাত রাখে। আদুরে স্বরে বলে,
‘ লুকাতে হবেনা। তুমি যদি এর থেকেও আরো ডিপ কিছু দেখতে চাও আমাকে বলো। তোমার ইচ্ছা পূরণ করা আমার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে তাইনা?
লাবিবার কথাই ফলে। এই লোক হাতে নয় মুখেই মানুষের ইজ্জত মেরে দেয়। অপমানে, লজ্জায় লাবিবা সেখানেই শরীর ছেড়ে দেয়।

চলবে।