ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-১৩

0
465

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#পর্ব১৩
#Raiha_Zubair_Ripte

হেই হিরো তুমি এসেছো! আমি জানতাম তুমি আসবে।

রুদ্র সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই রিমির কথা শুনে স্মিত হেসে সোফায় গা এলিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে,,

” আমা বোন বলেছে আর আমি আসবো না সে কি হয়? এদিকে আসো।

রিমি সুহাসিনীর হাত ছেড়ে দিয়ে রুদ্রর কাছে চলে যায়। সুভাষিণী উঁচু পেট নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে রুদ্রর কন্ঠ শুনে সেই সাথে সুমনা বেগম আর তার ছোট বোন সুমি বেগম ও।

সুমনা বেগম রুদ্র কে দেখে তড়িঘড়ি করে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে শরবত বানিয়ে দেয়। যা গরম পরেছে।

রুদ্র শরবত টা ফিনিশ করে বলে,,

” ধন্যবাদ আন্টি এটারই দরকার ছিলো খুব।

” চলো কিছু খেয়ে নিবে।

” না আন্টি আজ না আমাকে আবার যেতে হবে।

” তাহলে আসলেন কেনো।

ফোঁস করে সুহাসিনী কথাটা বলে উচিত। সুমনা বেগম রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকায় মেয়ের দিকে।

” ও কেমন কথা সুহা। রুদ্র বাবা ওর কথায় কিছু মনে করো না তো।

রুদ্র স্মিত হাসে।

” না আন্টি পিচ্চি মেয়েদের কথায় কিছু মনে করি না। ভাবি এই যে আপনার মেডিসিন গুলো ভাইয়া বললো শেষ হয়ে গিয়েছিল আপনার মেডিসিন তাই নিয়ে আসলাম।

মেডিসিনের প্যাকেট টা সুভাষিণীর হাতে ধরিয়ে দেয়। আর চকলেটের প্যাক রিমির হাতে।

সুহাসিনী ভেবেছিল রুদ্র হয়তো কিছুটা সময় থেকে যাবে কিন্তু না। ঘন্টা খানেকের মধ্যে আবার চলে যায়।

যাওয়ার আগে অবশ্য আলাদা করে সুহাসিনীর সাথে দেখা করে গেছে। সুহাসিনী কথা বলে নি চুপচাপ ছিল। কেনো কথা বলবে? লোকটার কাছে কি তার জন্য আর সময় আছে নাকি? সুহাসিনী কে চুপ থাকতে দেখে রুদ্র বলে উঠে,

” দূরে গেলে চোখে হারাও আর কাছে আসলে অনুভূতি লুকাও। এই তো আর কয়েক টা দিন তারপর একদম মনের খাঁচায় আটকে রাখবো।

” আপনার মন আছে না-কি যে আটকে রাখবেন।

” কেনো নেই বুঝি?

” থাকলে অবশ্য এভাবে উধাও হয়ে যেতেন না মাঝে মাঝে।

রুদ্র সুহাসিনীর গালে হাত দিয়ে শীতল কন্ঠে বলে,,

” এই সামান্য দুরত্ব মেনে নিতে পারছো না যখন আমি টাই থাকবো না তখন কি করে সইবে?

সহসা সুহাসিনী রুদ্রকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিলো। রাগী গলায় বলল,,

” আমার চোখের সামনে থেকে দূর হন। আপনাকে আমার সহ্য হচ্ছে না। কি হলো যাচ্ছেন না কেনো?

রুদ্র হেঁসে সুহাসিনীর হাত টেনে হাতের উল্টো পাশে চুমু খেয়ে চলে যায়। এই সামান্য দূরত্বে যদি তার সুহা রাণীর মনে তার জন্য চিন্ত রাগ অভিমান জন্মায় তাহলে ক্ষতি কি।

সুহাসিনী রুদ্রর চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেয়। লোকটার যা ইচ্ছে তাই করুক গিয়ে।

————

দেখতে দেখতে প্রায় পরীক্ষা শেষের দিকে। কাল এক্সাম দিলেই শেষ।

রাতের দিকে অভ্র এসেছে। সুমনা বেগম, সুভাষিণী গল্প করছে। রফিক সাহেব এখনো আসে নি বাসায়। সুহাসিনী রুমে শুয়ে আছে। রিমি রা চলে গেছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ কেনো যেনো মন খারাপ তার। অস্থির অস্থির লাগছে। হাসফাস করতে লাগল।

রাত যেনো যেতেই চাচ্ছে না। কাল এক্সাম দিলেই তো প্যারা শেষ কোথায় খুশি হবে তা না কেমন ভয় লাগছে। এপাশ ওপাশ করতে লাগল সুহাসিনী তবুও ঘুমেরা তার চোখে ধরা দিচ্ছে না। উপায়ন্তর না পেয়ে বিছানা থেকে নেমে বসার ঘরে গেল।

অভ্র ও মা বোনের সাথে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে ১২ টার দিকে আর ঘুমে চোখ খোলা রাখতে পারে না। আস্তে ধীরে ঘরে এসে তখন ঘুমিয়ে পড়ে।

আজ আর মায়ের সাথে যাবে না সুহাসিনী। সেন্টারে আজ সে একাই ফ্রেন্ডদের সাথে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। মা কে হযবরল বুঝিয়ে ম্যানেজ করলো বিষয় টা। সুমনা বেগম মেয়েকে নিজের হাতে ভাত খাইয়ে দিলেন। কপালে চুম্বন এঁকে দিয়ে বললেন,,

” তাড়াতাড়ি ফিরে আসবি। বেশি দেরি করলে তোর আব্বু শুনলে কিন্তু রাগ করবে।

সুহাসিনী মাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বলে,,

” চিন্তা করো না মা আমি তাড়াতাড়ি ফিরবো।

” এই যে শুনো আমার জন্য কিন্তু আসার পথে মনে করে কাচ্চি আর সিরাজের চুই গুস্ত নিয়ে এসো।

সুহাসিনী মা কে ছেড়ে দিয়ে সুভাষিণী কে জড়িয়ে ধরে বলে,,

” নিয়ে আসবো। আচ্ছা আসি।

কথাটা বলে সুহাসিনী একাই চলে গেল।

এক্সাম মোটামুটি ভালো দিচ্ছে সুহাসিনী প্লাস না আসলেও খারাপ রেজাল্ট আসবে না এমন ধারনা তার।

এক্সাম দিয়ে আজ ফ্রেডদের সাথে রেস্টুরেন্টে গেল সুহাসিনী। আবার কবে না কবে দেখা হয় ফ্রেন্ডদের সাথে। রেস্টুরেন্টে এসে খাওয়া দাওয়া করে হালকা ঘুরাঘুরি করে পিক তুলে।
বোন বলে দিয়েছিল আসার পথে তার জন্য রেস্টুরেন্ট থেকে কাচ্চি আর সিরাজের চুই গুস্ত আনতে। সুভাষিণীর ভীষণ পছন্দের খাবার গুলো।

বাসায় আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। বাসায় অবশ্য বলেছিল লাস্ট এক্সাম যেহেতু ফ্রেডদের সাথে ঘুরাঘুরি করে খাওয়া দাওয়া করতে করতে দেরি হতে পারে।

খাবারের প্যাকেট টা নিয়ে হেলতে দুলতে বাসার ভেতরে ঢুকতেই দেখে পুরো বাড়ি অন্ধকারে আচ্ছন্ন। সুজাসিনী অবাক হয় সদর দরজা খোলা দেখে। তার চেয়ে বেশি অবাক হয় সন্ধ্যা হয়ে গেছে অথচ তার মা সন্ধ্যা বাতি দেয় নি ঘরে!

সুহাসিনী খাবারের প্যাকেট টা নিয়ে ডাইনিং টেবিলে রেখে বসার ঘরের বাতি জ্বালিয়ে দেয়।

হঠাৎ গোঙানির শব্দ কানে আসতেই থমকে যায় সুহা। এ শব্দ আবার কোথা থেকে আসছে? গলা ছেড়ে মা কে ডাক দেয়। মায়ের কোনো শব্দ নেই। তার মা কোথায় গেলো? বোন কেও ডাক দেয় অথচ বোন উত্তর নিচ্ছে না ডাকের। সুহাসিনীর মন ভয়ে কেঁপে উঠে। দৌড়ে মায়ের রুমে যায়। রুমের ভেতর ঢুকে দেখে তার মা বিচানায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। এই অসময়ে মাকে এভাবে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাতে দেখে অবাক হয়।

যেই গরম পরেছে সেখানে তার মা কাঁথা দিয়ে শরীর ঢেকে ঘুমাচ্ছে? সুহাসিনী এগিয়ে গিয়ে মায়ের শরীরে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,,

” মা এই অসময়ে ঘুমাচ্ছ কেনো? শরীর খারাপ না-কি?

সুহাসিনীর মা কোনো জবাব দেয় না। সুহাসিনী আবার মায়ের গায়ে হাত দিয়ে ধাক্কা দেয়। মায়ের কোনো রেসপন্স নেই। হাতের মাঝে তরল কিছু অনুভব করতেই সুহাসিনী কেঁপে উঠে। কাঁপা কাঁপা হাতে মায়ের শরীর থেকে কাঁথা টা সরাতেই দেখতে পায় গ’লা দিয়ে গড়গড়িয়ে র’ক্ত পড়ছে।

মায়ের শরীর জড়িয়ে ধরে সুহাসিনী মুখে হাত দিয়ে পাগলের মতো বলে,,

” এই মা, মা কি হইছে তোমার। উঠো না ক্যান মা উঠো। তোমার এমন অবস্থা ক্যামনে হইলো। ও মা উঠো মা মা উঠো না ক্যা। তোমার সুহা কাঁদতেছে চোখের পানি মুছে দিবা না? চুমু খাবা না আমার গালে। আমার তো এক্সাম শেষ মা তুমি না বলছিলা এক্সাম শেষ হলে আমারে নিয়া নানুর বাসায় যাবা। ও মা তাহলে উঠতেছো না ক্যান। ও মা উঠো আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হইতেছে। তুমি চোখ মেলে তাকাও না মা তোমার অবাধ্য আমি জীবনেও হবো না মা। তোমার সব কথা শুনবো। তোমার সুহা তোমায় এতোবার বলছে আর তুমি উঠছো না আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মা এই যে দেখো বুকটায় অসংখ্য ব্যাথা করছে। দম আটকে আসছে কথা বলো না মা।

কথাটা বলে জোরে মা বলে চিৎকার করে উঠে সুহা।
এর মধ্যে আবার গোঙানির আওয়াজ কানে আসতেই মা কে ছেড়ে দেয়। মাথায় চট করে বোনের কথা আসতেই বোনের রুমের দিকে ছুটে। বোনের রুমে আসতেই দেখে তার বোন ফ্লোরে পড়ে আছে। চারিদিকে র’ক্তের ছড়াছড়ি। দৌড়ে বোনের কাছে যায়। বোন কে জড়িয়ে ধরে বলে,,

” এই আপু এমন কি করে হলো। আপু এই আপু।

সুভাষিণী পেট চেপে ধরে বলে,,

” সু,,সুহা মা অ,অভ্র,,,,,,

আর কিছু বলতে পারলো না সুভাষিণী।

সুহাসিনী বোনের হাত ঝাঁকিয়ে বলে,,

” এই আপু উঠ তোর পছন্দের খাবার আনছি খাবি না? আমি একটু ও ভাগ বসাবো না উঠ। পুচকু কেও বকবো না আর। তোর আর মায়ের বাধ্য মেয়ে হয়ে থাকবো। উঠ না। উঠছিস না কেনো মা ও উঠছে না। আমার কথা শুনবি না তোরা? দাঁড়া অভ্র ভাইকে বিচার দিচ্ছি।

সুহা বোন কে ছেড়ে দিয়ে পাগলের মতো হন্নে হয়ে ফোন খুঁজে। ফোন টা পাওয়ার পর কোনো রকম অভ্রর নাম্বার বের করে ফোন লাগায়।

অভ্র অফিসের মিটিংয়ে থাকায় ফোন টা সাইলেন্ট থাকে। অভ্র কে ফোনে না পেয়ে সুহা বাবা কে ফোন করে।

রফিক সাহেব ফাইল দেখছিলেন হঠাৎ বড় মেয়ের ফোন পেয়ে ফাইল রেখে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সুহাসিনী পাগলের মতো কান্না করতে করতে বলতে থাকে,

” বাবা মায়ের গ’লা দিয়ে র’ক্ত পরতেছে। আপু ফ্লোরে পড়ে আছে র’ক্তে। মা কে ডাকলাম মা কথা বললো না আপু ও কথা বলতেছে না। তুমি আসো আমার শ্বাস নিতে কষ্টের হচ্ছে বাবা। মা কথা বলে না কেনো? আপু ও চোখ বন্ধ করে আছে। এতোবার করে উঠতে বলছি আর ওরা উঠছে না।

হঠাৎ ছোট মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে কান থেকে ফোন পড়ে যায় রফিক সাহেবের। কোনোরকম নিজেকে সামলিয়ে পাগলের মতো দৌড়ে ছুটে যায়।

#চলবে?
। হ্যাপি রিডিং)