ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-২৮ এবং শেষ পর্ব

0
561

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#পর্ব২৮(অন্তিম)
#Raiha_Zubair_Ripte

” এই শুনুন আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবেন।

রুদ্র অফিসে যাবার জন্য রেডি হচ্ছিল সুহাসিনীর কথা শুনে পেছন ফিরে বিছানায় বসে থাকা সুহাসিনীর দিকে তাকায়। ভ্রু কুঁচকে বলে,,

” আজ কোনো স্পেশাল ডে নাকি যে তাড়াতাড়ি ফিরবো?

” না।

” তাহলে?

” এমনি তাড়াতাড়ি ফিরবেন।

” আচ্ছা চেষ্টা করবো।

” হুমম।

” আসি তাহলে।

রুদ্র রুম থেকে বের হতে নিলে সুহাসিনী বিছানা থেকে উঠে বলে,,

” এই দাঁড়ান দাঁড়ান।

রুদ্র পেছন ঘুরে বলে,,

” কি?

” আপনি জানেন না অফিসে যাবার আগে বউয়ের কপালে চুমু খেয়ে যতে হয়।

রুদ্র স্মিত হাসে। সুহাসিনী কে টেনে নিজের কাছে আনে। কপালে চুমু না দিয়ে সুহার ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। সুহা কেঁপে উঠে, রুদ্র সুহা কে ছেড়ে দিয়ে বলে,,

” এবার আসি বউ।

সুহাসিনী রাগী দৃষ্টি নিয়ে রুদ্রর দিকে তাকায়। রুদ্র হেসে চলে যায়।

সুহাসিনী আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে। বিয়ের পাঁচ মাস পরিয়ে গেলো অথচ লোকটার উপর তার ভালোবাসা এক বিন্দু ও কমে নি বরং দিনকে দিন বেড়েই চলে। কয়েক দিন আগে নীলার বিয়ে হলো রাতুল ভাইয়ের সাথে। মানুষ ভালোবাসার মানুষ কে নিজের করে পেলে তার চাইতে সৌভাগ্যবতী আর কেউ থাকে না।

” এই সুহা রুদ্র যে চলে গেলো বলিস নি তুই?

আয়নার সামনে থেকে সরে দরজার কাছে গিয়ে সুভাকে বলে,

” না আপু বলি নি।

” আচ্ছা আমি নিচে যাচ্ছি।

” হুম।

সুভা চলে গেলে সুহা বেলকনিতে গিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে। কয়েকদিন হলো সে জানতে পেরেছে সে প্রেগন্যান্ট। রুদ্রর ব্যাস্ততার জন্য রুদ্র কে বলা হয়ে উঠেনি। আজ খানিক টা সারপ্রাইজ দিয়ে বিষয় টা সে জানাবে রুদ্রর কে। রুদ্র নিশ্চয়ই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাবে।

—————-

দুপুর গড়িয়ে বিকেল,,সুহা আর সুভা মিলে হালকা পাতলা রান্না বান্না করে। রোমিলা রহমান তার ভাইয়ের বাসায় গিয়েছে। সুভা সুহার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” সুহা তুই এবার গিয়ে তৈরি হয়ে নে বাকিটা আমি সামলে নিবো। রুদ্র চলে আসলো বলে।

সুহা মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। রুমে এসে বাসন্তী কালারের একটা শাড়ি বের করে সেটা পড়ে নেয়। মুখে হালকা মেক-আপ করে চুল গুলো হাত খোঁপা করে নেয়। এরমধ্যে রুদ্র ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমের দরজায় কড়া নাড়ে। সুহা দরজা খুলে দেয়। সুহাকে শাড়ি +সাজতে দেখে ভ্রুকুটি করে রুদ্র। সুহা হেসে বলে,,

” তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসুন।

রুদ্রর কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সুহা নিচে চলে যায়। রুদ্র মাথা না ঘামিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এসে দেখে সুহা ট্রে তে কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

রুদ্র ভেজা কাপড় বেলকনিতে মেলে দিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনের দিকে চেয়েই কফির মগ টা তুলে নেয়। সাথে সাথে সুহার মুখটা চুপসে যায়। রুদ্র কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে,

” এতো সাজছো কেনো? আজ কি আমার তো কোনো ডে মনে পড়ছে না।

সুহা প্রেগ্ন্যাসির কিট টা কফির মগের পাশে না রেখে পেছনে রেখেছিল রুদ্রর চোখ ফোনের দিকে থাকায় সেটা নজরে আসে নি। এখন নিজেকে নিজের চড় মারতে ইচ্ছে করছে সুহার।

” এমনি সেজেছি আমি।

” ওহ্। তা কি’জন্য এতো তাড়াতাড়ি আসতে বললা?

” এমনি আমি কি আপনাকে বলতে পারি না একটু তাড়াতাড়ি আসার জন্য।

” হুমম বলতেই পারো কিন্তু এতো চটে আছো কেনো? কি হইছে।

” আচ্ছা দেখেন তো আমার মধ্যে কোনো পরিবর্তন এসেছে নাকি?

রুদ্র ফোন থেকে চোখ সরিয়ে সুহার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” হুমম এসেছে।

সুহা উৎফুল্ল নিয়ে বলে,,

” কি পরিবর্তন?

” এই যে শাড়ি পড়ছো সেজেছো আগে কামিজ পড়ে ছিলা।

সুহাসিনী শব্দ করে ট্রি তা টি-টেবিলে রাখে।রুদ্রর হাত থেকে ফোন টা নিয়ে বলে,,

” ধুর ছাতার মাথা। তখন থেকে কি দেখছেন ফোনের মধ্যে। সামনে সুন্দরী বউ দাঁড়িয়ে আছে তাকে দেখেন।

রুদ্র সুহার দিকে নজর দেয়।

” হুমম এই যে দেখছি তোমায়।

” আশেপাশে ও দেখেন।

” আশ্চর্য তুমি বললা বউ দেখতে এখন বউ দেখছি এখন আবার বলছো আশেপাশে দেখতে।

” আশেপাশেই দেখেন।

” আচ্ছা দেখতেছি।

কথাটা বলে রুদ্র আশেপাশে তাকায়। হঠাৎ ট্রে এর মধ্যে থাকা কিছুর দিকে চোখ আটকে যায়। ট্রে থেকে চোখ সরিয়ে সুহার দিকে তাকায় সুহা চোখের ইশারায় সেটা তুলতে বলে। রুদ্র প্রেগন্যান্সির কিট টা তুলে দেখা দুটো দাগ। রুদ্র কিট টা সুহার পানে ধরে বলে,,

” সত্যি!

সুহা মাথা উপর নিচ করে জানায় হুমম।

রুদ্র কি বলবে বুঝতে পারছে না। কিট টা টেবিলের উপর রেখে বলে,,

” ক মাস?

” দেড় মাস।

” আগে জানাও নি কেনো?

সুহা অভিমান নিয়ে বলে,,

” জানাবো কিভাবে? আপনার ব্যাস্ততা কি কমেছিল বলার মতো সুযোগ কি ছিলো?

” পেটে একটু হাত দেই?

সুহাসিনী ভ্রুকুটি করে বলে,,

” পেটে হাত দিয়ে কি করবেন?

রুদ্র সুহার কথাকে গুরত্ব না দিয়ে সুহার হাত টেনে সোফায় বসায়। পেটের উপর থেকে শাড়ি খানিকটা সরিয়ে কান পেতে দেয়।

সুহা রুদ্রর মাথায় হাত দিয়ে বলে,,

” আরে এখন কান পেতে কি হবে। ওর কি হাত পা হইছে নাকি।

” তুমি বুঝবা না চুপ থাকো। ফিল করছি বাবা হবার অনুভূতি টা। যেদিন ভাবির প্রেগন্যান্সির কথা শুনেছিলাম সেদিন খুব ভাবির আর ভাইয়ের জায়গায় তোমায় আর আমায় কল্পনা করেছিলাম। বাবার হবার খবর টা এতো সুন্দর কেনো সুহা।

” জানি না তো। আচ্ছা আপনি খুশি তো?

” অনেক।

” তাহলে বাবা হচ্ছেন মিষ্টি খাওয়াবেন না?

” মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে? আমি এখনই নিয়ে আসছি।

” থাক এখন যেতে হবে না। আগে আমার পাশে একটু বসুন তো।

রুদ্র সুহার পাশে বসে। সুহা রুদ্রর কাঁধে মাথা এলিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে বলে,,

” আমার খুব গান শুনতে ইচ্ছে করছে শুনাবেন?

” আমার গলায়?

” হুমম।

” আমার গলার সুর তো ভালো না সুহা।

” যেমনই হোক শুনান না।

” আচ্ছা গিটার টা নিয়ে আসছি ভাইয়ার রুম থেকে তুমি বেলকনিতে গিয়ে বসো।

রুদ্র তার ভাইয়ের রুম থেকে গিটার টা নিয়ে নিজের রুমের বেলকনিতে আসে। সুহাসিনী বসে আছে চেয়ারে। রুদ্র গিয়ে সুহার পাশে বসে সুহা মাথা এলিয়ে দেয় রুদ্রর কাঁধে। রুদ্র সুহার মাথায় চুমু খেয়ে গিটারে সুর তুলে। কিছুক্ষণ বাদে গেয়ে উঠে,,

রোজ সকালে তোর মায়াবি ছবি
চোখে ভাসে তোর মিষ্টি হাসি
বেলী গাঁথা তোর চুলের বেণী
মায়াপূর্ন তোর চোখের চাহনি

রোজ সকালে তোর মায়াবি ছবি
চোখে ভাসে তোর মিষ্টি হাসি
বেলী গাঁথা তোর চুলের বেণী
মায়াপূর্ন তোর চোখের চাহনি
ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী

ভালোবাসি শুধু তোকেই
ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী

ভালোবাসি শুধু তোকেই
ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী

তোর জন্য এই ভালোবাসা অসীম
অসীম আমার এই লেখা গান
প্রতিটি ছন্দে তোর রূপের আলোড়ন

তোর জন্য এই ভালোবাসা অসীম
অসীম আমার এই লেখা গান
প্রতিটি ছন্দে তোর রূপের আলোড়ন

তাতেই হারিয়েছি

আমার এই প্রান

তাতেই হারিয়েছি

আমার এই প্রান

সাদা কালো রঙের সাদামাটা ক্যানভাসে
এঁকেছি তোর রঙিন ছবি সেই ছবি খানা
আজো ঝুলে আছে

সাদা কালো রঙের সাদামাটা ক্যানভাসে
এঁকেছি তোর রঙিন ছবি সেই ছবি খানা
আজো ঝুলে আছে
আমার এই হৃদয়ের ক্যানভাসে

আমার এই হৃদয়ের ক্যানভাসে

রোজ সকালে তোর মায়াবি ছবি
চোখে ভাসে তোর মিষ্টি হাসি
বেলী গাঁথা তোর চুলের বেণী
মায়াপূর্ন তোর চোখের চাহনি
ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী
ভালোবাসি শুধু তোকেই

গানটার প্রতিটা লাইন সুহাসিনীর শরীর কে কাঁপিয়ে তুলছিল। গানটা কি তার জন্যই লিখা হয়েছিল? রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,,

” আর গান পেলেন না গাওয়ার জন্য?

রুদ্র সুহাসিনীর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,,

” উহু আর গান পেলাম না। শ্রেষ্ঠ মূহুর্তে প্রিয়তমার জন্য এই গানই মনে পড়লো।

” আপনার কন্ঠ তো খুব একটা বাজে না।

” তাহলে বলছো গান শোনানোর মতো এবেলিটি আছে আমার?

” হুমম। রোজ গান শুনাবেন আমায়।

” আচ্ছা।

” বাবু কে গানের স্কুলে ভর্তি করায় দিবো।

” কেনো?

” আমরা বৃদ্ধ হলে আমাদের বাবু গান গাইবে আর আমরা এভাবে বসে কাঁধে মাথা, হাতে হাত রেখে সেই গান শুনবো।

” যদি বৃদ্ধ হবার আগেই ম’রে যাই তখন?

সহসা সুহা রুদ্রর কাঁধ থেকে নিজের মাথা সরালো। রুদ্রর পানে চেয়ে রাগী দৃষ্টি নিয়ে বলে,,

” এরকম একটা সুন্দর মূহুর্তে এসব অলক্ষুণে কথা না বললেই কি হচ্ছিলো না? এসব নেগেটিভ কথা বলেন কিসের জন্য? পজিটিভ চিন্তা রাখুন মাথায়।

” আরে আমি তো এমনি কথার কথা বললাম। ছেলে মেয়েট বিয়ে দিবো। তুমি আমি এক সাথে বৃদ্ধ হবো তুমি পান চিবায় দিবা আমি খাবো। নাতি নাতনির সাথে খেলাধুলা করবো। আর সময় পেলে তোমায় নিয়ে কোনো বট গাছের ছায়াতলে বসে এই দিনগুলোর কথা স্মরণ করবো।

” হুমম তখন আমাদের দেখতে কেমন দেখাবে ইমাজিন করুন জাস্ট। নুইয়ে যাওয়া শরীর, জবুথবু চামড়া,কুঁচকে যাওয়া চোখ।

” আর সেই কুঁচকে যাওয়া চোখের দিকে তাকিয়ে, জুবথুবে চামড়া যুগল হাতে হাত রেখে সেদিন ও ঠিক এভাবেই বলবো #ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী। ভালোবাসি শুধু তোকেই।

সুহাসিনী খিলখিল করে হেসে উঠল। রুদ্র সেই হাসির পানে চেয়ে রইল। রোজ সকালে এই মায়াবী মেয়ের মায়াবী হাসি দেখেই তার দিন শুরু হয় আর দিন শেষ হয়। মৃ’ত্যু টাও যেনো প্রেয়সীর হাস্যজ্বল মুখটা দেখেই হয়। অনেকটা পথ চলা এখনো বাকি। সেই পথ গুলো যেনো তাদের এভাবে হাসিখুশিতেই কে’টে যায়।

সমাপ্ত

( গল্পটা অহেতুক বড় মনে হচ্ছিল তাই আর বাড়ালাম না। শেষ করে দিলাম। যেহেতু এটার সিজন টু ভেবে রেখেছি তাই এখানেই সমাপ্ত করলাম। গল্পটা হয়তো আমি সেভাবে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে পারি নি সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। ভুলগুলো সুন্দরভাবে ধরিয়ে দিবেন আমি নিজের ভুল গুলো সুধরে নিবো। আর গল্পটা কেমন লেগেছে আর কোন দিক গুলো ভালো লাগে নি সেটা দয়া করে বলে দিবেন। যাতে নেক্সট টাইম সেই ভুল গুলো থেকে বিরত থাকি। ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ। রিভিউ পাবো তো?)