ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-২৭

0
364

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#পর্ব২৭
#Raiha_Zubair_Ripte

রেজাল্ট বের হইছে জানাও নি কেনো? আর এমন মনমরা হয়ে বসে আছো কেনো? ৪.৯০ এসেছে খুশি হও নি?

সুহাসিনী জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। রুদ্রর কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,,

” খুশি হবো না কেনো? হয়েছি।

” তাহলে জানাও নি কেনো?

” জেনেছেনই তো। + আসলে না হয় মাইক লাগিয়ে জানাতাম।

” মুড অফ?

” উহু।

” তাহলে?

” পড়ালেখা করবো না আর আমি।

রুদ্র অবাক হয়।

” ওমা কেনো? সামনে তো এডমিশন টেস্ট দিবা তাহলে পড়বা না কেনো?

” মন উঠে গেছে পড়া লেখা থেকে। সংসার করবো বাচ্চা পালবো। এতো পড়ালেখা দিয়ে কি হবে? জব তো আর করবো না।

” তুমি জব করতে চাইলে করবে না নেই আমার থেকে।

” উহু জব করবো না পড়ালেখা ও করবো না। সংসার করবো।

” সংসার তো করছোই।

” এমন ছন্নছাড়া সংসার করবো না। আপু বাচ্চা নিতে বলছে আপনি না-কি বলছেন আমি বাচ্চা নিতে ভয় পাই।

” আমার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই এসব বলবো।

” বাচ্চা চাই।

” বয়স হয় নি তোমার বাচ্চা নেওয়ার।

” সেদিন যে বললেন বাচ্চা চাই।

” এমনি বলছিলাম।

” এখনো রাগ করে আছেন?

” না রাগ করবো কেনো?

” তাহলে কাছে আসেন না কেনো আজ আর। ভালোও তো বাসেন না। পুরোনো হয়ে গেছি তাই?

” অফিসে কাজের প্রেসার তাই সময় দিতে পারছি না।

” আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আসুন খাবার বাড়ছি।

রুদ্র হুম বলে ওয়াশরুমে চলে যায়। সুহাসিনী গায়ের ওড়না টা ভালো করে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখে সুহার শাশুড়ী বসে আছে। সুহা এগিয়ে যায়।

” মা আপনি এখনো এখানে বসে আছেন! ঘুমাবেন না?

” হ্যাঁ কেবলই যেতে নিচ্ছিলাম দুজনে খেয়ে দেয় খাবার ফ্রিজে রেখে দিয়ো।

” আচ্ছা মা।

রোমিলা রহমান চলে গেলে সুহা রুদ্রর জন্য খাবার বেড়ে চেয়ারে বসে অপেক্ষা করে।

রুদ্র গোসল করে টাউজার আর একটা টিশার্ট পড়ে নিচে নামে। চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। রুদ্র এসে চেয়ার টেনে বসলে সুহা বসা থেকে উঠে ওড়নার এক প্রান্ত নিয়ে চুল মুছতে মুছতে বলে,,

” গোসল সেরে যে চুল মুছতে হয় এটা জানেন না। সর্দি লেগে যাবে তো।

” লাগবে না।

কথাটা বলে রুদ্র ভাত খেতে আরম্ভ করে। সুহা রুদ্রর দিকে তাকিয়ে থাকে। লোকটা খাচ্ছে অথচ লোকটার জন্য সে না খেয়ে বসে আছে। রাগ হলো সুহাসিনীর, সুহাসিনী না খেয়ে খাবার ফ্রিজে রাখতে গেলে রুদ্র পানির গ্লাস থেকে পানি খেয়ে বলে,,

” চুপচাপ খাবার খেয়ে দ্যান খাবার ফ্রিজে রাখবা।

সুহাসিনী রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,,

” ক্ষিদে নেই।

” সেটা শুনতে চাই নি বলেছি খেতে মানে খাবে।

” আপনি খান আপনার মতো আমার খাওয়ার চিন্তা করতে হবে না।

” চিন্তা অবশ্যই করতে হবে। এদিকে আসো।

সুহাসিনী আসে না রুদ্র ফের বলে,,

” এদিকে আসতে বলেছি তো আসছো না কেনো?

” কেনো কি করবেন?

” মাইর দিবো। আসতে বলছি আসো।

সুহাসিনী রুদ্রর পাশে যেতেই রুদ্র বলে উঠে,,

” বসো।

সুহাসিনী চেয়ার টেনে বসে। রুদ্র ভাতের নলা নিয়ে সুহাসিনীর মুখের সামনে তুলে ধরে। সুহাসিনী তাকায়,রুদ্র ইশারায় খেতে বলে। সুহাসিনী চুপচাপ খায়।

” আমার জন্য কখনো ওয়েট করবা না খেয়ে নিবা। ক্ষিদে চেপে রেখে নিজের শরীর কে কষ্ট দেওয়া এসব কিন্তু আমার ভালো লাগে না। নেক্সট টাইম অপেক্ষা করবা না,খেয়ে নিবা।

সুহাসিনী ভাত চিবাতে চিবাতে বলে,,

” আপনি জানেন না স্বামী স্ত্রী এক সাথে ভাত খেতে বসলে মিল মহব্বত বাড়ে।

” আমাদের কি মিল মহব্বত কম নাকি?

” কমই তো এই যে কেমন জানি হয়ে যাচ্ছেন দিন কে দিন।

” কেমন হয়ে যাচ্ছি?

” আগের মতো ভালোবাসেন না।

” কে বলছে ভালোবাসি না?

” কাউকে বলতে হয় না। আপনার আচারণ দ্বারা বুঝে নিয়েছি। সেদিন বাগান বাড়ি থেকে ফেরার পর আপনি কেমন যেনো পাল্টে গেছেন ঠিক মতো কথা বলেন না সময় দেন না।

” কাজের ব্যাস্ততা প্রচুর সুহা তাই ঠিকমতো সময় দিতে পারছি না। আর তোমার তো বোর হওয়ার কথা না। ভাবি, মা তো আছে।

” আপনি যা দিতে পারবেন তারা কি তা দিতে পারবে বলেন?

” কি দিতে পারি?

” বাচ্চা।

রুদ্র প্লেটে হাত ধুতে ধুতে বলে,,

” আবার বাচ্চা, বাচ্চার ভুত উঠালো কে তোমায়?

” কেউ না। ভীষণ মা হতে ইচ্ছে করছে। মা ডাক শুনতে ইচ্ছে করছে। কারো নরম তুলতুলে হাত স্পর্শ করতে ইচ্ছে করছে।

” আগে পড়াশোনা শেষ করো।

” আমার পড়াশোনা শেষ তো।

” ভার্সিটি পড়বে কে আমি?

” ধূর আর পড়বো না। যা জ্ঞান আছে তাতে ছেলে মেয়ে কে সুন্দর ভাবে ওয়ান টু অ আ ক খ পড়াতে পারবো।

” আচ্ছা খাবার ফ্রিজে রেখে আসো। তারপর ভেবে দেখছি।

” ভাবাভাবির কি আছে বাচ্চা নিবো মানে নিবো।

” আচ্ছা দিবো বাচ্চা।

” কিভাবে?

” তুমি যেভাবে চাও সেভাবে।

সুহাসিনী আর জবাব না দিয়ে খাবার ফ্রিজে রেখে দিয়ে রুদ্রর পেছন পেছন রুমে চলে আসে। রুমের লাইট বন্ধ করে রুদ্রর বুকের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে। রুদ্র সুহাসিনীর চুলের ভাজে হাত ডুবায়। সুহাসিনী রুদ্রর বুকের উপর হাতের আঙুল দিয়ে আঁকিবুঁকি দাগ কাটে। রুদ্র সুহার হাত ধরে বলে।

” আজ এতো নিজ থেকে কাছে আসতে চাইছো যে।

” নিজ থেকে ভালবাসতে চাইলেও কি বারন নাকি?

” তা নয় তবে…

” তবে কি?

” বউ নিজ থেকে কাছে আসতে চাইলে কি কোনো পুরুষ আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে?

সুহাসিনী হাসে। রুদ্র সুহাসিনীর হাতের ভাজে নিজের হাত মুঠোবন্দি করে নিজের ভর সুহাসিনীর উপর ছেড়ে দেয়। সুহাসিনী চোখ বন্ধ করে ফেলে।

———————-

” কি ব্যাপার বউমা তুমি না-কি আর পড়ালেখা করবে না।

সুহাসিনী খাবার বেড়ে দেওয়ার সময় লুৎফর রহমান কথাটা বলে উঠে। সুহাসিনী রুদ্রর দিকে একবার তাকিয়ে বলে,,

” না বাবা আর পড়তে চাই না।

” কিন্তু কেনো মা?

” এমনি বাবা।

” রুদ্র কিছু বলছে?

” না না উনি কি বলবেন? উনি কিছু বলেনি। আমি নিজে থেকেই আর পড়তে চাই না।

” আচ্ছা তুমি যেটা ভালো মনে করো।

সুভাষিণী সুহার দিকে আড় চোখে তাকায়। সবাই খাওয়া দাওয়া করে চলে গেলে সুভাষিণী সুহা কে বলে,,

” কি ব্যাপার পড়াশোনা আর করবি না কেনো?

” উফ আপু বেবি নিলে কি আর পড়াশোনা হয় নাকি।

সুভা অবাক হয়ে বলে,,

” তোরা কি বেবি নেওয়ার প্ল্যান করছিস?

সুহাসিনী হেসে উপর নিচ মাথা ঝাকায়। সুভা সুহার হাত টেনে বলে,,

” সত্যি বেবি নিতে চাইছিস?

” হুমম।

” তোর তো তেমন বয়স হয় নি।

” তাতে কি আপু।

” অনেক প্রবলেম ফেইস করতে হয়। আমাকে দেখেছিস তো। তুই তো পেইন সহ্য করতে পারিস না।

” তুমিই তো বলছো না হলে সব সহ্য হয়ে যায়। আমিও পারবো সহ্য করতে। আর তুমি মা,রুদ্র আছো না।

” সে না হয় আমরা আছি। তাই বলে এতো তাড়াতাড়ি কেনো?

” আপু রুদ্রর খুব বেবি পছন্দ। আমার কাছে চেয়েছিল বেবি আমি না করেছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বেবি হলে মন্দ হবে না।

” ভেবে চিন্তে নে সুহা।

” আমার ভাবা শেষ। আমাদের বেবি নেওয়া উচিত।

কথাটা বলে সুহা উপরে চলে যায়। সুভা সুহার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। তার বেবি টা বেঁচে থাকলে এতোদিনে হয়তো তার কোলে থাকতো।

#চলবে?