ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-১৭

0
465

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#পর্ব১৭
#Raiha_Zubair_Ripte

” আঙ্কেল সুহাসিনী, ভাবি কি বাসায় আছে?

হঠাৎ রুদ্রর এমন কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে আসে রফিক সাহেবের।

” হ্যাঁ রুদ্র সুহাসিনী সুভাষিণী রুমেই আছে । কিন্তু কি হয়েছে রুদ্র?

রুদ্র যেনো দেহে প্রাণ ফিরে পেলো।

” কিছু হয় নি আঙ্কেল। পরে কথা বলছি।

কথাটা বলে ফোন কে’টে নিজের বাসায় ফোন করে। তার বাবা লুৎফর রহমান ফোন রিসিভ করতেই রুদ্র বলে উঠে,,

” বাবা মা তোমরা কোথায়?

” বাসায়।

” মা ও কি বাসায়?

” হ্যাঁ কি হয়েছে?

” কিছু না পরে কথা বলছি।

কথাটা বলে ফোন কেটে পাবেলের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” পাবেল সবাই তো বাসায় তাহলে গাড়িতে কে?

” বুঝতে পারছি না। আদৌও গাড়িতে কি কেউ আছে?

পাবেল কথাটা বলতেই রুদ্রর ফোনে ফোনে আসে। রুদ্র ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে মাহতাবের ফোন। ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অট্টহাসি তে হেঁসে উঠে মাহতাব।

” ভয় পেয়েছিলি রুদ্র। ইশ তোর ভয় টা দেখার মতো ছিলো। আমি অন্নেক মজা পেয়েছি তোর ভয় দেখে। আমি চাই এভাবেই প্রতি মূহুর্তে তোকে ভয় পেতে দেখতে। এবারের বোম ব্লাস্টে কেউ ছিলো না ঠিকই কিন্তু পরবর্তী তে কেউ থাকবে তোর খুব কাছের। যেভাবে তোর কাছের মানুষ টার সব চেয়ে কাছের মানুষ টা কে ওপারে পাঠিয়েছি ঠিক সেভাবেই।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই সারা শরীর রাগে কাঁপতে থাকে রুদ্রর বিশ্রী ভাষায় গা’লি দিয়ে উঠে মাহতাব কে।

” কু’ত্তার বাচ্চা তোকে আজ আমি সামনে পেয়ে নেই তোর অবস্থা যে কি করবো তুই কল্পনাও করতে পারবি না। ওয়ান সেকেন্ড ওয়ান সেকেন্ড তুই কাকে উপরে পাঠিয়েছিস?

মাহতাব আবার অট্টহাসি দেয়

” রুদ্র যে এতো বোকা আগে জানা তো ছিলো না। ভেবে দেখ দশ দিন আগের কথা। যার জন্য তিন বছর আগে আমায় কু”ত্তার মতো পি”টিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছিলি। কি ভেবেছিস তাকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিব।

” তার মানেই তুই,,,,

” ইয়েস রুদ্র আমি।

” তোকে তো আমি,,,

” কিচ্ছু করতে পারবি না আমার। এ দেশে থাকলে তো কিছু করতে পারবি। আমি জানি আমার বাপ ভোটে জিতবে না। কিন্তু আমি তো দেশে আমার বাপ কে ভোটে জেতাতে আসি নি। এসেছি ঐ মহিলা কে শেষ করতে। আমার কাজ শেষ এখন আমার ফেরার পালা। তুই আমার নাগাল পেতে পেতে আমি ফুস করে উড়ে যাবো। বাই বাই রুদ্র উনার চল্লিশার খাবার টা প্যাক করে পাঠিয়ে দিস আমার বাড়ি।

কথাটা বলে মাহতাব ফোন কেটে দেয়। পাবেল রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,,

” কি বললো মাহতাব?

” আন্টি কে মাহতাব মে’রেছে পাবেল।

” কি বলছিস! চল তাহলে পুলিশ কে জানাই।

” জানিয়ে লাভ নেই ও দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে।

” পালাচ্ছে এখনো পালিয়ে যায় নি। আমরা নিশ্চয়ই ধরতে পারবো মাহতাব কে।

” পুলিশে ধরিয়ে দিলে সর্ব নিম্ন পাঁচ কি দশ বছরের শাস্তি হবে এতে লাভ কি?

” মানে? কি বোঝাতে চাইছিস?

” কিছু না তুই এদিক টা সামলা আমি আসছি।

কথাটা বলে রুদ্র চলে যায়।

মাহতাব এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ দুবাইয়ের প্লেনের এনাউন্সমেন্ট কানে আসতেই ভেতরে ঢুকে যায়। তিন বছর আগে যতোটা রাগ যন্ত্রণা নিয়ে দেশ ছেড়েছিল আজ তার চাইতে দ্বিগুণ প্রশান্তি নিয়ে দেশ ছাড়ছে।

চেকিং টেকিং করে ভেতরে গিয়ে প্লেনে বসে। প্লেন ছাড়তেই জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” মনে পড়ে আজও সেদিনের ঘটনা। ভার্সিটির ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সভায় দু পক্ষের ধস্তাধস্তি হচ্ছিল। যেহেতুল দল টা আমার আমি নেতা সেক্ষেত্রে আমি ও গিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে ঝামেলা বেঁধে যাওয়ায় দু পক্ষে মারামারি শুরু হয়। আমি নিহাল কে ইট দিয়ে বাড়ি মা’রতে গিয়ে ঐ বুড়ি কে মে’রেছিলাম। মাথা ফে’টে গিয়েছিল। কিন্তু কথাটা তোর কানে যেতেই তুই কি করলি আমাকে নিয়ে যেতে চাইলি ঐ বুড়ির কাছে ক্ষমা চাওয়াতে। আর ক্ষমা না চাওয়াতেই তুই ওভাবে কু’ত্তার মতো পিটালি।

তোর জন্য আমার বাবার রেপুটেশন নষ্ট হয়েছিল। সবাই আঙুল তুলে ছিল। আর আজ আমহ সেই আঙুল বেঁকিয়ে দিয়ে গেলাম।

কথাটা বলে হেঁসে উঠল।

————

ইন্সপেক্টর শরাফত উল্লাহ বসে আছে শামসুল আলমের সামনে বাজে ভেবে হেরেছে আজ সে। শরাফত শামসুল আমলমের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” আপনি তো বলেছিলেন জিতলে আমায় থানার ওসি বানায় দিবেন। সেই জন্য তো আপমার ছেলের অপকর্ম লুকিয়ে রেখেছিলাম। এখন কি হলো জীতলেন না তো ভোটে। এবার তো আপনার ছেলের অপকর্ম না চাইতেও সবার সামনে চলে আসবে।

কে বলেছিল ঐ মহিলা কে মা’রতে। নিজে তো দেশ ছেড়ে পালালো সাথে আমাকে আপনাকে ডুবিয়ে ছাড়লো।

শামান আলমের রাগ আকাশ সমান। একে তো ভোটে হেরেছে তার উপর ছেলে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে এখন আবার এই ইন্সপেক্টরের বকবক। ঝাড়ি দিয়ে বলে উঠল,,

” আহ থামবে তুমি। বকবক করেই চলছো।

” সাধে কি আর বকবক করছি। আমার পক্ষে আর আপনার ছেলের কুকীর্তি লুকিয়ে রাখা সম্ভব না। দেখা যাবে আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়বে।

” তাহলে যাও জানিয়ে দাও বকবক করে আমার মাথা খারাপ করিয়ো না।

কথাটা বলে শামসুল আলম উঠে চলে যায়। শরাফত উল্লাহ শামসুলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজেও চলে যায়।

—————–

” আঙ্কেল আমি যদি সুহাসিনী কে এখন বিয়ে করতে চাই তাহলে কি আপত্তি জানাবেন? জানি আপনার ক্রাইসিস টা।

হঠাৎ রুদ্রর মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠে রফিক সাহেব। মেয়ের বিয়ের কথা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল তার।

” তোমার বাবা মা কে জানাও তাহলে রুদ্র। আমিই বা বাঁচবো কতদিন। মেয়েকে তো পরের ঘরে দিতেই হবে।

রুদ্র ফোন করে তার বাবা মা কে ডাকে। লুৎফর রহমান আর রোমিলা রহমান চলে আসেন। সাথে কাজি ও। ঘরোয়া ভাবেই বিয়ে টা করবে রুদ্র। সুহাসিনী কে বিয়ে করেই সে যাবে দুবাই।

সুহাসিনী রুমে শুয়ে ছিলো। হঠাৎ বোন কে মায়ের৷ একটা শাড়ি আনতে দেখে বলে,,

” কি করবে শাড়ি দিয়ে?

” শাড়ি টা পড়ে নে সুহা। তোর আর রুদ্রর বিয়ে।

কথাটা শুনে অবাক হলো না সুহা রুদ্র ফোন করে তার থেকে অনুমতি নিয়েছিল। এই তো সকালে ফোন করেছিল বলেছিল,,

” বিয়ে করবে আমায় এখন সুহা?

ফোন দিয়েই এমন কথা মোটেও আশা করে নি সুহা।

” এমন পরিস্থিতিতে এমন কথা কি ভাবে বলছেন রুদ্র?

” জানি কথাটা বড্ড বেমানান। তবুও সুহা করবে কি আমায় বিয়ে?

সুহা নিশ্চুপ। সুহার নিশ্চুপতা দেখে রুদ্র বলে,,

” তোমার নিশ্চুপতা কি তাহলে আমি হ্যাঁ ধরে নিবো সুহা।

কিছু না বলে সুহা ফোন রেখে দেয়।

বোনের থেকে শাড়ি টা নিয়ে সুহা পড়ে নেয়। আয়নায় একবার নিজেকে দেখে। মা থাকলে আজ তার বিয়ে টা অন্য ভাবে হতো।

সুভাষিণী সুহা কে নিয়ে নিচে আসে। নীলীমা বেগম আর নীলা ও আসে। খুব সাধারণ ভাবেই তাদের বিয়ে টা হয়ে যায়।

রুদ্র বিয়ে করে সেদিন রাতে সুহাসিনী দের বাসায় থেকে তার পরের দিন বাসায় চলে আসে সুহা কে না নিয়ে। আলমারি থেকে কাপড় বের করে ব্যাগে ভরে নেয়।

” কি হয়েছে রুদ্র কাপড় গোছাচ্ছিস কেনো কোথাও যাবি?

” হুমম দুবাই যাচ্ছি।

” কিন্তু কেনো?

” কাজ আছে ফিরতে সাপ্তাহ খানেক লাগতে পারে।

” কিন্তু এই রকম পরিস্থিতিতে তুই সুহা কে একা রেখে চলে যাচ্ছিস। কালই তো বিয়ে করলি।

” আমি একা যাচ্ছি না মা। সুহা ও যাচ্ছে।

কথাটা বলে পকেট থেকে ফোন বের করে পাবেল কে ফোন দেয়।

” কিরে ভিসা পাসপোর্ট হলো?

” হুম হয়ে গেছে।

” আচ্ছা আমার বাড়ির সামনে আয় আমি বের হচ্ছি।

কথাটা বলে মা কে জড়িয়ে ধরে বেরিয়ে আসে বাড়ি থেকে। পাবেল গাড়ি নিয়ে আসে রুদ্রর বাসার সমানে। রুদ্র গাড়িতে উঠে বসতেই পাবেল পাসপোর্ট টা রুদ্রর হাতে ধরিয়ে দিতেই রুদ্র বলে উঠে,,

” গাড়ি টা সুহার বাসার দিকে নিয়ে যা।

পাবেল রুদ্রর কথা মতো গাড়ি টা নিয়ে সুহার বাসার সামনে থামায়। রুদ্র গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভেতর গিয়ে দেখে সুহা সোফায় শুয়ে আছে কাপলে হাত ঠেকিয়ে। রুদ্র গিয়ে সুহার সামনে দাঁড়াতেই সুহা কপাল থেকে হাত সরিয়ে রুদ্র কে দেখে শুয়া থেকে উঠে বসে বলে,,

” মায়ের খু’নির কোনো খবর পেলেন রুদ্র?

রুদ্র মাথা নাড়িয়ে বলে,,

” না।

” তাহলে এসেছেন কেনো?

” দুবাই যাচ্ছি আমি।

” তো আমি কি করবো?

” রেডি হও তুমি ও যাচ্ছো।

” আপনি যান আমার মনে রং লাগে নি।

” আমরা হানিমুনে যাচ্ছি না সুহা খুব দরকার তাই যাচ্ছি। আন্টির খু’নি দেখবে না?

সহসা সুহা মাথা উঁচু করে তাকায়।

” মায়ের খু’নি মানে?

” রেডি হয়ে আসো যেতে যেতে বলছি।

সুহাসিনী রেডি হয়ে নেয়। রুদ্র নিজের ব্যাগে সুহার ও কাপড় নিয়ে নেয়। রুম থেকে সুহা কে নিয়ে রফিক সাহেব আর সুভা কে জানায় তারা দুবাই যাচ্ছে লুৎফর রহমানের একটা ডিলের জন্য। অভ্র কথাটা শুনে কিছু বলতে নিলে রুদ্র তাড়া দিয়ে বলে দেরি হয়ে যাচ্ছে আসি। কথাটা বলে বেরিয়ে যায়।

#চলবে?