#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#পর্ব২৪
#Raiha_Zubair_Ripte
সকাল সকাল টিভি অন করতেই এমন একটা নিউজ দেখতে পারবে সুহাসিনী কল্পনাও করতে পারে নি। টিভিতে জ্বলজ্বল করে দেখা যাচ্ছে ব্রেকটা নিউজ বিজনেস ম্যান শাহরিয়া মোবারকের মেয়ের জামাই মাহতাব শর্টসার্কিটের মাধ্যমে ভয়াবহ আগুনে পু’ড়ে দগ্ধ হয়েছে। সেই সাথে মিস্টার শাহরিয়া মোবারক কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি অসহায় মেয়েদের কাজ দেওয়ার নাম করে পা’চার করে দিত।
লেখাগুলো পড়েই থম মে’রে বসে থাকে সুহাসিনী। ঘুমন্ত রুদ্রর দিকে একবার তাকায়। রাতে বলার কথা মনে পড়ে। রুদ্র বলেছিল সকালে সারপ্রাইজ আছে। তাহলে এই সেই সারপ্রাইজ!
সুহা বেশ কিছুক্ষণ বসে থেকে রুদ্রর পাশে গিয়ে পিঠে হাত রেখে ডাকে,,
” উঠুন অনেক বেলা হলো তো।
রুদ্র সুহার ডাক শুনে খানিক নেড়েচড়ে সুহাকে নিজের কাছে টেনে চোখ বন্ধ রেখে বলে,,
” ঘুমের ডিস্টার্ব করো না জান। আরেকটু ঘুমাতে দাও।
” নিউজ দেখেছেন?
” তুমি দেখেছো তো তাতেই আমার দেখা হয়ে গেছে।
কথাটা বলে সুহার গলায় মুখ গুঁজে দেয়। সুহা রুদ্রর থেকে সরে আসতে নিয়েও পারে না। বিরক্তি নিয়ে বলে,,
” আপনি আমার কথা সিরিয়াসলি নেন না কেনো? মাহতাব কি সত্যি শর্টসার্কিটে দগ্ধ হয়েছে না-কি ইচ্ছাকৃতভাবে মা’রা হয়েছে।
রুদ্র শোয়া থেকে উঠে বসে চোখ ছোট ছোট করে বলে,
” আমি কিভাবে জানবো বলো তুমি যেখানে আমি ও তো সেখানে। আর নিউজে তো বলেই দিছে এক্সসিডেন্টলি শর্টসার্কিটে মা’রা গেছে।
” তাহলে মাহতাবের শশুর যে মেয়ে পা’চার করতো এটা মিডিয়ায় ছড়ালো কি করে?
” সত্য কি কখনো চাপা থাকে বলো? একদিন না একদিন বেরিয়েই আসে। হলো ও তেমন টাই।
” আপনি যে তাহলে বললেন আমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। তাহলে সেটা কি?
রুদ্র সুহার গাল ধরে বলে,,
” আরে বোকা মেয়ে আমরা বাংলাদেশে ব্যাক করছি। মাহতাব তো তার অপকর্মের শাস্তি পেলো। এবার তো আমাদের ফিরে যেতে হবে।
” হুমম। কবে যাবো আমরা?
” আজ রাতের ফ্লাইটে। সেজন্য চলো আজ বাহিরে ঘুরতে যাই।
” কখন?
” এখনই যাই চলো।
” গোসল করেন নাই তো। এই অবস্থায় কি করে যাবেন?
” এখন বলছি তার মানে এই না যে এই অবস্থায় যাবো। ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে যাওয়ার কথা বুঝিয়েছি। এক লাইন বেশি বুঝো কেনো তুমি ইস্টুপিট।
কথাটা বলে রুদ্র বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়।
———–
পুলিশ শাহরিয়া মোবারক কে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। শাহরিয়ার মাথায় আসছে না কে মিডিয়াতে তার অপকর্মের কথা জানিয়েছে। মাহতাব তো এক্সসিডেন্টলি মা-রা গেছে। তাহলে কে দিলো।
শান্তা পাগলের মতো ছুটে আসে তার বাবার কাছে। কাল সারাদিন খুঁজেও মাহতাব কে পায় নি। আজ হঠাৎ ফেসবুকে ঢুকতেই নিউজ টা তার চোখের সামনে আসে।
শাহরিয়া মেয়ে কে দেখে আতঙ্কিত হয়। শান্তা শাহরিয়ার কাছে আসতেই পুলিশ থামিয়ে দেয়। শান্তা বারবার শাহরিয়ার কাছে আসতে চাইছে চিৎকার করে বলছে,,
” বাবা তুমি সত্যি এসব করছো? তুমি মেয়ে পা’চার করো। আমি তোমায় ভরসা করে কত অসহায় মেয়েদের তোমার কাছে পাঠিয়েছি যাতে তার ইনকাম করতে পারে। আর তুমি তাদের টাকার লোভে পা’চার করে দিতে ছিঃ। আই হেট ইউ, তুমি বাবা নামের কলঙ্ক।
পুলিশ শাহরিয়া মোবারককে নিয়ে চলে যায়। শান্তা নিচে বসে পড়ে। স্বামী তো চলেই গেলো আর বাবা সে তো আজ থেকে বেঁচে থেকেও মৃ’ত। চিৎকার করে কাঁদছে শান্তা।
হঠাৎ ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে সুহাসিনী দাঁড়িয়ে আছে। তার থেকে কিছুটা দূরে রুদ্র।
শান্তা সুহাসিনী কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। রুদ্রই নিয়ে এসেছে সুহাকে এখানে। রুদ্র সুহাদের দিকে এগিয়ে এসে বলে,,
” মিসেস শান্তা আপনাকে বলেছিলাম আগেই বিলিভ করেন নি। দেখলেন তো নিজ চোখে।
শান্তা সুহা কে ছেড়ে দিয়ে বলে,,
” তাই বলে একটা মানুষ কে মে’রে ফেলবেন!
রুদ্র স্মিত হেসে বলে,,
” পিপীলিকার তো পাখা গজায় ম’রবার জন্যই। নিজেকে শক্ত রাখবেন। আর ভালো থাকবেন।
কথাটা বলে সুহা কে নিয়ে চলে আসে রুদ্র। গড়িতে উঠার আগে সামিউল কে একটা টাকার বান্ডিল ধরিয়ে দিয়ে বলে,,
” সামিউল টাকা টা দারোয়ান চাচা কে দিয়ো তিনি ছাড়া কিছুই পসিবল হতো না। তিনি অনেক হেল্প করেছে তিনি যদি ফাইল আর ভিডিও গুলো কালেক্ট করে না দিত তাহলে খুবই বেগ পেতে হতো।
সামিউল টাকা নিয়ে রুদ্রর সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথোপকথন করে চলে আসে।
————-
রাত আট টা বাজে,, এয়ারপোর্টে এসে ল্যাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুহা রুদ্র। বাংলাদেশের প্লেনের এনাউন্সমেন্ট কানে আসতেই তারা লাগেজ নিয়ে এয়ারপোর্টের ভেতরে ঢুকে যায়।
রাত টা নির্ঘুমে কাটিয়েছে রুদ্র। সুহাসিনী ঘুমে বিভোর প্লেনের মধ্যে। আজই শেষ রুদ্রর নির্ঘুমে কাটানোর দিন। কাল থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে সুহা আর তার পরিবার কে নিয়ে।
দীর্ঘ কয়েক ঘন্টার পর দুবাইয়ের প্লেন এসে বিডির শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামে। রুদ্র আর সুহা প্লেন থেকে নেমে এয়ারপোর্টের বাহিরে আসতেই দেখে সুভাষিণী, রফিক সাহেব, অভ্র, লুৎফর রহমান, রোমিলা রহমান দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
সুহা সবাইকে দেখা মাত্রই দৌড়ে গিয়ে বাবা কে জাপ্টে ধরে। রফিক সাহেব ও এতোদিন পর মেয়ে কে দেখতে পেয়ে যেনো চোখের তৃষ্ণা মিটলো। সুহা বাবা কে ছেড়ে দিয়ে সুভা কে জড়িয়ে ধরে।
রুদ্র সবার কাছে এগিয়ে এসে কুশল বিনিময় করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
সবাই রুদ্র দের বাসায় এসেছে। রুদ্র আর সুহাসিনী ফ্রেশ হয়ে নেয়। রোমিলা রহমান ছেলে আর ছেলের বউয়ের পছন্দের সব খাবার রান্না করে।
সুহা আর রুদ্র খাবার টেবিলে আসে। সুহা নিজের পছন্দের খাবার টেবিলে দেখে হঠাৎ করে মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো। কেউ যেনো তার অবস্থা বুঝতে না পারে তাই মাথা নিচু করে চুপচাপ খায়।
রুদ্র সুহার দিকে তাকাতেই বুঝতে পারে। সবার অগোচরে সুহার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চোখের ইশারায় আস্বস্ত করে।
খাওয়া দাওয়া শেষে রুদ্র সবাই মাহতাব ও হ
শাহরিয়া মোবারকের কথা বলে। তাদের অপকর্ম ও সুহার মা কে হ’ত্যা করার ঘটনা আর সুভার অনাগত বাচ্চা কে এক্সসিডেন্টলি মে’রে ফেলার।
সুভার ঘৃণা হচ্ছিল। মাহতাব কে সে নিজের হাতে খু’ন করতে পারলে তৃপ্তি পেতো। ওর জন্য বাচ্চা,মা সব হারালো।
রুদ্র তার চাচা কে ফোন করে ইন্সপেক্টর শরাফত উল্লাহ ও শামসুল আলমের বিরুদ্ধে স্টেপ নিতে বলে। রুদ্রর চাচা রুদ্র কে আস্বস্ত করে।
কালকের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে স্টেপ নিবে।
——————
সকাল হতেই জানা গেলো শরাফত উল্লাহ কে সাসপেন্স করেছে আর শামসুল হক কে ছেলের অপকর্মে জড়িত থেকে তা লুকানোর জন্য জেলে নেওয়া হয়েছে।
কথাটা কানে আসতেই তৃপ্তির শ্বাস নেয় সুহা, সুভা।
রোমিলা রহমান এবার আর্জি জানায় সুহা আর রুদ্রর ধুমধামে বিয়ে দেওয়ার জন্য।
কথাটা শুনে রুদ্র সরাসরি না করে দেয়। তার মতে তার একবার বিয়ে হয়ে গেছে হোক সেটা সিম্পল ভাবে আবার কেনো ধুমধাম করে বিয়ে করবে।
কথাটা শুনে অভ্র রুদ্র কে খোঁচা মেরে বলে,,
” এই রুদ্র আমাকে এমন অফার করলে আমি সুভা কে দ্বিতীয় বার কেনো যতবার বলতো ততবারই বিয়ে করতাম তাহলে তুই কেনো করবি না।
রুদ্র সুহার দিকে তাকিয়ে বলে,,
” দেখ ভাইয়া আবার বিয়ে করে কি করবো আমাদের মধ্যে সব হয়ে গেছে। আজ বাদে কাল বাপ হবো।
কথাটা শুনতেই সুহাসিনীর কাশি চলে আসে। ভাগ্যিস বড়রা নেই। এই লোকটার মুখে কি কিছুই আটকায় না। অভ্র অবাক হয়ে বলে,,
” সব হয়ে গেছে তোদের মধ্যে! বাপ ও হতে যাচ্ছিস। এত ফাস্ট তোরা বাহ! এই সুহা আমি সত্যি চাচা+খালু হতে যাচ্ছি?
সুহা পারছে না মাটি ফাঁক করে মাটির ভেতরে চলে যেতে। চোখের ইশারায় রুদ্র কে শাসায়,,আজ রুমে আসুন খালি বাপ হবার শখ মিটিয়ে দিবো।
রুদ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে উঠে সুহার পেছন পেছন চলে যায়।
#চলবে?