ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-২৫

0
440

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#পর্ব২৫
#Raiha_Zubair_Ripte

কি ব্যাপার এতো রেগে আছো কেনো? একটু খানি স্পর্শ করলেই রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করছো আবার থেকে থেকে ছ্যাত করে উঠতেছো।

রুদ্রর কথাটা কর্ণকুহর হতেই সুহাসিনী পেটের উপর থেকে রুদ্রর হাত সরিয়ে শুয়া থেকে বসে হাতের আঙুল রুদ্রর দিকে তাক করে বলে,

” একদম কাছে ঘেঁষবেন না বলে রাখলাম। লজ্জা নেই আপনার? আগে তো জানতাম আপনি রাগী টাইপের এখন তো দেখছি সাথে লজ্জাহীন ছেলে আপনি।

রুদ্র বালিশে এক হাত মাথায় ঠেকিয়ে উঁচু হয়ে বলে,,

” আশ্চর্য আমি কি মেয়ে যে আমার লজ্জা থাকবে। লজ্জা তো নারীদের ভূষণ। সেটা থাকবে তোমার নট আমার।

” আপনি জানেন আপনার ঐ কথার জন্য কত কিছু ফেইস করতে হয়েছে আমায়। আপু তো ছাড় ছিলোই না। বারবার বলছিল এই তুই কি প্রেগন্যান্ট। তোদের বিয়ের তো একমাস ও হলো না তাহলে সম্ভব কি করে। আরো কত কিছু।

” আমি তো কথার কথা বলেছিলাম ওটা। তারা সেটাকে সিরিয়াসলি নিলে আমার কি দোষ বলো?

” আপনারই তো দোষ আপনি কেন বলবেন আপনি বাবা হতে যাচ্ছেন।

” আচ্ছা মানলাম আমার দোষ। এবার তো কাছে ঘেঁষতে দাও।

” না একবার যখন বলেছি তখন না মানে না।

” পাষাণ কেনো তুমি হ্যাঁ। দেখছো একটা হ্যান্ডসাম ছেলে যে তোমার হাজবেন্ড সে তোমায় ভালোবাসতে চাইছে আর তুমি প্রত্যেক বারের মতো শুধু রিজেক্ট করো। যাও ঘেঁষবো না তোমার পাশে বাসবো না ভালো।

কথাটা বলে রাগ নিয়ে অন্য পাশ ঘুরে শুয়ে পড়ে রুদ্র। সুহাসিনী তপ্ত শ্বাস ফেলে রুদ্র কে আরো জ্বালানোর জন্য বলে উঠে,,

” আলহামদুলিল্লাহ।

রুদ্র মাথা উঁচু করে একবার রাগী দৃষ্টি নিয়ে সুহার দিকে তাকিয়ে ফের চোখ বন্ধ করে ফেলে।সুহা মৃদু হেসে নিজেও রুদ্রর থেকে দুরত্ব নিয়ে শুয়ে পড়ে।

সুহাসিনী শুতেই রুদ্র জাপ্টে ধরে সুহা কে। সুহা জানতো রুদ্র এমন টাই করবে। সুহা কিছু বলার জন্য উদ্যত হলে রুদ্র বলে উঠে,,

” হুঁশশ একদম কথা বলবা না। ভালোবাসতে নিষেধ করেছো জড়িয়ে ধরতে নয়। সো কোনো কথা বলবা না। ঘুমাবো আর তুমিও ঘুমাও

সুহাসিনী ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে।

————————–

সকালে চোখের উপর রোদের আলো পড়তেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে রুদ্র। কোনো রকমে চোখ খুলে বিছানা ছেড়ে উঠে জানালার পর্দা টা টেনে দিয়ে আবার শুয়ে পড়ে।

এদিকে সুহাসিনী রান্না ঘরে গিয়ে বোন আর শাশুড়ীর হাতে হাতে কাজ করে উপরে রুমে এসে রুদ্র কে এখনো ঘুমাতে দেখে মজাজ তুঙ্গে উঠে যায়।

বড় বড় পা ফেলে রুদ্রর কাছে এসে পিঠে ধাক্কা দিয়ে বলে,,

” আপনি এখনো উঠেন নাই কেনো? আপনার জন্য সবাই ডাইনিং টেবিলে অপেক্ষা করছে। নামাজ কালাম তো ছেড়েই দিছেন পড়ার সময় পান না।

রুদ্র পাশ থেকে বালিশ টা নিয়ে কান ঢেকে বলে,,

” উফ সকাল সকাল কি শুরু করলা বলো তো। এই ভাঙা রেকর্ড বন্ধ করো। ঘুমের ডিস্টার্ব হচ্ছে।

সুহাসিনী তেতে উঠে। কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,,

” কি বললেন আমার কথা এখন ভাঙা রেকর্ডের মতো লাগে। আমি আপনার ঘুমে ডিস্টার্ব করছি। তাহলে বেশ করছি আপনি উঠা না অব্দি আমার ননস্টপ ভাঙা রেকর্ড চলতেই থাকবে। উঠুন বলছি উঠুন।

” আমি যে ঘুম থেকে উঠবো এর বিনিময়ে কি পাবো।

” ঘুম থেকে উঠলে পাবেন না কিন্তু ঘুম থেকে না উঠলে এর বিনিময়ে কিছু একটা পাবেন।

” কি পাবো বলো বলো শুনি।

” আমার হাতের মাইর।

” এই সরো তো আমার সামনে থেকে। হু আর ইউ? আমার রুমে তোমার কি? একটা বিবাহিত ছেলের ঘরে আসতে লজ্জা করে না ছি।

” আমি কে মানে? আমি কে আপনি জানেন না ন্যাকামি করা বন্ধ করুন আর সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসুন। আবার যদি ডাকার জন্য আমার উপরে আসতে হয় তাহলে আপনার খবর আছে।

” যাচ্ছি তো এতো কথা শুনাও কেনো? তোমার বোন কে দেখছো আমার ভাইয়ের বাধ্য বউ ভাই যা বলে তাই শুনে। তোমার মতো না ভাবির থেকে কিছু শিখো পারলে।

কথাটা বলে রুদ্র ওয়াশরুমে চলে যায়। সুহা রুদ্রর যাওয়ার পানে তাকিয়ে নিচে নেমে আসে।

” কিরে রুদ্র আসলো না যে।

বোনের কথায় সুহা স্মিত হেসে বলে,,

” আসতেছে উনি। আচ্ছা আপু বাবা কি অফিসে চলে গেছে?

” হুমম এই তো কেবল বেরিয়ে গেলো বাবা আজ আসবেন না অফিস থেকে সোজা বাসায় চলে যাবে।

” ওহ্ আপু।

” হুমম বল।

” বলছি কি আমি একটু বাসায় যেতে চাইছি। আসার পর তে ও বাসায় যাওয়া হয় নি।

” আচ্ছা রুদ্র কে বলে যা।

” উনি তো যেতে দিবে না মনে হয়।

” কেনো?

” রেগে আছে আমার উপর।

” কি করছিস যে রেগে আছে।

” ঘুম থেকে তুলেছি ডেকে তাই।

” আমি কথা বলবো নি। আর এই চা টা নিয়ে গিয়ে বাবা আর মা কে দিয়ে আয়।

সুহা চা টা নিয়ে রোমিলা রহমানের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় কড়া নেড়ে বলে,,

” আসবো মা?

রোমিলা রহমান খেয়ে শুয়ে ছিল। অস্থির লাগছিল সুহার কন্ঠস্বর শুনে বলে,,

” আরে আসো ভেতরে অনুমতি নেওয়ার কি আছে।

সুহা হেসে রোমিলা রহমান কে চা টা দিয়ে। সোফায় বসা লুৎফর রহমান কে চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়।

লুৎফর রহমান স্মিত হেসে চায়ের কাপ টা নিয়ে বলে,,

” সুহা মা তোমার রেজাল্ট দিবে কবে?

” এই তো বাবা এ মাসের শেষের দিকে।

” এরপর তো ভার্সিটির জন্য এডমিশন। তা তুমি এখনই প্রিপারেশন নিচ্ছো না কেনো? রুদ্র কে বলে দিচ্ছি কোচিং সেন্টারে ভর্তি করার জন্য। তোমার ইচ্ছে আছে কোন ভার্সিটিতে পড়ার?

” জাবি তে বাসা থেকে তো এটাই কাছে।

” হুমম গুড। আচ্ছা আমি আসি।

কথাটা বলে লুৎফর রহমান চলে যায়। সুহা শাশুড়ির সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে চলে আসে।

ডাইনিং টেবিলে রুদ্র কে খেতে দেখে এগিয়ে যায়। রুদ্র সুহার উপস্থিতি টের পেয়েও তাকায় না। এক মনে খাবার খেতে থাকে। সুহা ইশারায় বোনকে কিছু একটা বোঝায়। সুভা গলা ঝেড়ে নিয়ে বলে,,

” বলছিলাম কি রুদ্র বিকেলে আমি আর সুহা একটু ও বাসায় যেতে চাইছি। সুহা তোমাকে ছাড়া যেতে চাইছে না তুমি কি যেতে পারবা?

সহসা মাথা উঁচু করে তাকায় রুদ্র সুহার পানে একপলক তাকিয়ে আবার খাবার খাওয়ায় মনযোগ দেয়।

কন্ঠ স্বরে গম্ভীরতা এনে বলে,,

” ড্রাইভার নিয়ে চলে যান ভাবি আপনি আর আপনার বোন। আমার সময় হবে না কাজ আছে।

কথাটা বলে খেয়ে চলে যায় রুদ্র।

#চলবে?