ভালোবেসে ফেলেছি পর্ব-৩৭ এবং শেষ পর্ব

0
3656

#ভালোবেসে_ফেলেছি
part : 37 ( last )
writer : Mohona

.

বহ্নি : ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট মিস্টার অর্নব। উফফস…. দ্যা মাফিয়া কিং .. ডেভিল।।।
অর্নব : …
বহ্নি : খুব বেশি কষ্ট হয়নি আমার মা-বাবার খুনিকে খুজে পেতে… থ্যাংকস টু মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড। তবে আফসোস … সে বন্ধু ছিলোনা… সে ছিলো আস্তিনের আরালের সাপ…. তুমি বলেছিলেনা যে ৬৫% প্রশাসন তোমার হাতে… তাই তোমাকে কেউ অ্যারেস্ট করতে পারবেনা। ইভেন করবেও না। যার মানে এটা যে তুমি তাদের কিনে নিয়েছো। তাদের কে টাকা দিয়ে লালনপালন করছো। তাই তোমার সামনে নতুন অফিসার দারিয়ে আছে।
অর্নব : তুই পুলিশ কিভাবে হতে পারিস?
বহ্নি : তোমার হাতের মুঠোয় ৬৫%প্রশাসন থাকতেই পারে। নট সো বিড ডিল। তবে কি যেন ১টা প্রবাদ বলে অনেকে … হ্যা মনে পরেছে… বাপের ওপরেও বাপ থাকে… যাই হোক তোমার মতো কারো সাথে কথা কেন বলছি… তোমার সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাজে.. আর পালানোর চেষ্টা কোরোনা… তোমার বাসাটা পুলিশ চারদিক দিয়ে ঘেরাও করে ফেলেছে…
অর্নব হাত তালি দিলো।
অর্নব : চমৎকার … মানতেই হবে দহন তোকে পাল্টে দিয়েছে… এতো সাহস… এমন বুদ্ধি…. তাও তোর ভাবতেই অবাক লাগছে। কিন্তু কি জানিস? যদি আমাকে অ্যারেস্ট করতেও পারিস তবুও বেশিদিন রাখতে পারবিনা… আমার গ্যাং এর যে মেম্বার রা আছে তারা তুলকালাম করবে…

তখন আরো কয়েকজন পুলিশ অফিসার উপস্থিত হলো।
বহ্নি : তুলকালাম তো তখন করবে যখন তারা মুক্ত অবস্থায় থাকবে…
অর্নব : মানে?

☆: মানে খুব সহজ। দে আর আন্ডার অ্যারেস্ট। অনেক খুজেছি তোমায় মিস্টার ডেভিল… অবশেষে তোমায় পেলাম। তোমার মতো জঘন্য অপরাধীর মুখটা আজকে সবার সামনে উন্মোচিত হয়েছে। তোমাকে চারদেয়ালের ভেতরে বন্দী করতে পারার মতো আনন্দের কিছুই নেই। তোমার সন্ধান পেয়ে সারা পুলিশ ডিপার্টমেন্ট সার্থক …
অর্নব : তবে এতে আপনাদের কোনো কৃতিত্বই নেই…সব দোষ আমার ভালোবাসার… আসলেই মেয়েদের মন থেকে ভালোবাসতে নেই।।।
বহ্নি : মেয়েদের ভালোবাসতে আছে কি নেই সেটা আমি জানিনা। তবে তোমার মতো বিষধর সাপকে যে ভালোবাসতে নেই সেটা সবাই জানেও বোঝেও.. তোমার ধারনা ছিলো যে তুমি পাসওয়ার্ড না জানালে ওটা আমরা ওপেন করতে পারবোনা। বাট…. তুমি ভুল ছিলে… দহন তোমার থেকে বেশি বুদ্ধিমান… যাই হোক…

বলেই বহ্নি অর্নবের হাতে হাতকরা পরাতে গেলো।

.

অর্নব বহ্নির হাত ধরে ঘুরিয়ে নিয়ে নিজের পেছনে রাখা পিস্তলটা বহ্নির মাথায় ঠেকালো।
অর্নব : আমাকে এখান থেকে যেতে দেওয়া হোক… তা না হলে আপনাদের এই নবীন অফিসারে খুলি টা উরে যাবে।
☆ : এই… নামাও পিস্তল… নামাও…
অর্নব : তাহলে যেতে দিন আমায়….
বহ্নি : স্যার ওর কথা শুনবেন না… ও মিথ্যা কথা বলছে… ও আমার কোনো ক্ষতিই করবেনা… ওর কথায় আসবেননা…
অর্নব : অফিসার আপনার নবীন অফিসার জানেনা যে মাফিয়ারা সব পারে। তাই ওরও ক্ষতি করতে পারবে… সো লেট মি গো…
বহ্নি : নো স্যার। আমি সত্যি বলছি ও আমার কোনো ক্ষতিই করবে না…
অর্নব : এতোটা বিশ্বাস কোরো না গো প্রিয়… তুমি জানোনা আমি কতোটা হিংস্র…
মনে মনে : সরি রে জান… তোকে কষ্ট দিচ্ছি… কিন্ত এখান থেকে বেরিয়ে তোকে নিয়ে অনেক দূরে কোথাও উরে যাবো। যেখানে তুই কেবল আমারই থাকবি… তোর ক্ষতি যে করবোনা সেটা তো আর এরা জানেনা…

☆ : ছারো ওকে…
অর্নব : না আমি ওকে জানে মে…
অর্নব আর বলতে পারলোনা। কারন দহন পেছন থেকে এসে ওর ঘাড়ে ইনজেকশন পুশ করে দিলো। যখন অর্নব এখানে বহ্নির সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত ছিলো তখন দহন পাইপ দিয়ে বেয়ে ওপরে উঠেছে।

অর্নবের হাত থেকে গান পরে গেলো। ওর হাতে বাধন হালকা হয়ে গেলো। বহ্নি সরে গেলো ওর থেকে…
দহন টেনে বহ্নিকে নিজের পাশে নিলো। অর্নব টলতে টলতে পিছে ঘুরলো। নিভু নিভু চোখে দহনকে দেখতে পেলো।

দহন : দহনের কলিজা বহ্নি… আগুনের শিখায় হাত দিলে যেমন পুরে ছারখার হতে হয় তেমনি… দহনের বহ্নির দিকে হাত বারালেও জ্বলে পুরে শেষ হতে হয়… আমার বউকে এতো বড় রিস্কি কাজে আসতে দিবো কোনো সেফটি ছারা… আমার বউ তোর মতো অমানুষকে অ্যারেস্ট করতে পাঠাবো আর আমি পাশে থাকবোনা… দহন বহ্নির ঢাল হয় সারাজীবন থাকবে…

অর্নব দহনের দিকে তেরে যেতে নিলে মাটিতে লুটিয়ে পরলো।

দহন বহ্নির কপালো চুমু দিলো।
বহ্নি : ও…
দহন : জাস্ট অজ্ঞান হয়েছে। দ্যাটস ইট…. অফিসার হি ইজ অল ইউরস নাউ…

☆ : থ্যাংক ইউ মিস্টার আহমেদ…
দহন : ডোন্ট বি…. আমি আপনাদের সাহায্য করিনি। যা করেছি আমার স্ত্রীর জন্য করেছি। ওর পরিবারের হত্যাকারী এই লোকটা। ও আমার শশুড়বাবার মতো একজন অনেস্ট অফিসার কে হত্যা করেছে। শাস্তি তো ওকে পেতেই হবে। বাট ১টা কথা মনে রাখবেন… বড্ড ভয়ংকর এই অর্নব… আদালত , ফাঁসি … এসবের আশায় না থেকে এর এনকাউন্টার করে দিবেন… আমার বহ্নিকে দিয়েই এনকাউন্টার করাতাম। কিন্তু আফসোস… আমার বউ ওকে গুলি করলে সারাজীবন নিজে এক হতাশায় ভুগবে। কারন বউটার মনটা খুব নরম…

.

দহন বহ্নিকে নিয়ে বাসায় ফিরলো। নিশা বরন করলো। দহন মাঝেমাঝে বোঝেনা যে ওর মা এমন সব উদ্ভট কাজকর্ম কেন করে? আবার খেয়াল করে দেখলো সারা বাড়িঘর সাজানোও…
দহন : মামনি… এই বাড়িঘর সাজানোর মানে কি? আর এভাবে আমাদের বরন করার মানেই বা কি?
নিশা : আগে বরন করে নেই তারপর বলছি…
দহন : 😒।
নিশা বরন করলো। ওরা ভেতরে ঢুকলো।
নিশা : শোন… আজকে তুই আমার পুলিশ বউমাকে নিয়ে প্রথম একসাথে প্রবেশ করলি। তারওপর আমার বউমাটা সফল হয়ে ফিরলো।। নতুন রূপে। তো বরন করবো না?
দহন : আল্লাহ…
নিশা : আর বাসাটা সাজানো হয়েছে সেটা কিন্তু আমার একার আবদারে না। এটা আমাদের সবার ইচ্ছা।
দহন : ইচ্ছাটার কারন?
মনি : ভাইয়া পরশুদিন কি… ভুলে গিয়েছো?
দহন : ভুলবো কেন? আমাদের বিবাহ বার্ষিকী।
দীপন : আর এই কারনেই কালকে থেকে ৭দিন জুরে আহমেদ বাড়িতে উৎসব উদযাপন হবে…. সবাই জোরসে বলো হিপ হিপ হুররে…
বহ্নি হেসে দিলো।
দহন : বাপী…. তোমাকে মামনির রোগে কবে আর কিভাবে ধরলো…
দীপন : সেটা তুমি বুঝবেনা।

বহ্নি দিনার দিকে এগিয়ে গেলো। দিনার হাত ধরলো।
বহ্নি : আজকে বাবার ভাইয়ার সততার আদর্শের জন্য তুমি তোমার জীবনের সব সুখ হারিয়ে ফেলেছো…
দিনা : না রে পাগলি… আমার কপালে এমনটা ছিলো। তাই হয়েছে। আমার তো গর্ব হয় যে আমার শশুড়বাবা আর স্বামী… সৎ পুলিশ অফিসার ছিলো। আর তাছারাও আমার কাছে তো তোমরা সবাই আছো…
বহ্নি : যদি আজকে বলি যে নতুন করে জীবন সাজাও… নতুন কাউকে নিয়ে…
দিনা : নারে বহ্নি… তোর ভাইয়ার দেয়া ২টা চিহ্ন আমার সাথে আছে… আমাদের রিদি আর ভোর… তাই অন্যকোনো নতুন সুখের সন্ধান চাইনা। আমার পৃথিবী ওরাই….

.

দহন-বহ্নির বিবাহ বার্ষিকীর দিন…
দহন-বহ্নি কবরস্থান গেলো বহ্নি মা-বাবা-ভাইয়ার কবর যিয়ারত করতে। ওরা ফুল দিলো ৩টা কবরে।
বহ্নি : আমি পেরেছি বাবা… তোমাদের হত্যাকারীকে শাস্তি দিতে… আমি পেরেছি…

অর্নবকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। তবের মৃত্যুর আগে অর্নবের শেষ ইচ্ছা যে ও বহ্নির সাথে দেখা করবে। শেষ দেখা।

.

বহ্নি অর্নবের সাথে দেখা করতে গেলো। সাথে দহনও।
অর্নব : হয়তো অপরাধ করেছি অনেক বেশি। আর তাই শাস্তির পরিমানটাও বেশি। না না … আমি ফাসির শাস্তির কথা বলছিনা… আমি তোর ঘৃণার শাস্তির কথা বলছি। এরথেকে বড় শাস্তি আমার কাছে আর কিছুই নেই। বড্ড ভালোবাসিরে তোকে। হ্যা দহন তোকে ভালোবাসে। তবে দহনের থেকে একটু হলেও বেশি আমি তোকে ভালোবাসি… আফসোস সেদিন যদি আমাদের বিয়ে পরানো হয়ে যাওয়ার পর হামলা করার প্ল্যান টা করতাম তবে তুই আমার হতি… কিন্তু কবুল বলে বিয়েটা দহনের সাথে হয়েছে তোর… তাই দহন ভাগ্যবান। জিতে গেলো আমার থেকে। আর আমি হেরে গেলাম। না তোর কাছে ক্ষমা চাইবোনা। কারন আমার মনে হয়না আমি ভুল করেছি। আমি তো কেবল আমার বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছি। তোকে অনেক ধন্যবাদ যে তুই আমার শেষ আবদার টা রেখেছিস। ভালো থাকিসরে। আমি চাইনা তোর জীবনে কখনো কোনো দুঃখের ছায়া পরুক। আর মিস্টার দহন আহমেদ মনে রেখো বহ্নি তোমার কাছে আমার আমানত… ওকে কখনো কষ্ট দিওনা। ভালো থাকিস বহ্নি। খুব খুব সুখে থাকিস। আমি তোকে খুব ভালোবাসি। আই লাভ ইউ…

দেখা করার সময় শেষ হলো। অর্নবক নিয়ে যাচ্ছে।
বহ্নি : তোকে সবসময় আমি আমার বেস্টফ্রেন্ড হিসেবেই মনে রাখবো রে…
অর্নব পিছে ঘুরলো। চোখে পানি ছলছল করছে।
অর্নব : ধন্যবাদ….

পরদিন অর্নবের ফাঁসি কার্যকর হলো। দহনরাই দাফন-কাফনের ব্যাবস্থা করলো। আর দহন এমনটা করলো বহ্নির খুশির জন্য।

বহ্নি মনে মনে : ভুল করেছিলি অর্নব। ভুল নয় পাপ করেছিলি। তাই শাস্তিটাও পেলি চরম। দরকার ছিলো। কারন তোর মস্তিষ্কটা বিকৃত হয়ে গিয়েছিলো। শাস্তিটা না পেলে তোর জন্য তোর আশেপাশের অনেক কিছু নষ্ট করে দিতি… কখনো কখনো শাস্তি জিনিসটা খুবই প্রয়োজন হয়…. তবে তোকে আজীবন আমি মনে রাখবো। না আমার পরিবারের খুনী হিসেবে নয়… ১জন মাফিয়ে হিসেবেও নয়। তোকে মনে রাখবো আমার বেস্টফ্রেন্ড হিসেবে। ভালো থাকিস ওপারে। আল্লাহ তোকে জান্নাতবাসী করুক….

.

৪-৫দিন…
বহ্নি মন খারাপ করে বসে আছে। দহন জানে অর্নবের জন্যই মনটা খারাপ।
দহন : হেই মাই কলিজাপাখি… মন খারাপ কেন হামমম? কি হয়েছে…
বহ্নি : কিছুনা…
দহন : বন্ধু হবে আমার?
বহ্নি : তুমিই তো আমার চিরদিনের বন্ধু… কিন্তু বেস্টফ্রেন্ড হতে পারবেনা…
দহন : আমিও তো তোমাকে বেস্টফ্রেন্ড বানাতে পারবোনা… আমার বেস্টফ্রেন্ড আছে।
বহ্নি : আর লাগে আমার নেই? ওই আকাশের সবথেকে উজ্জ্বল তারাটাই আমার বেস্টফ্রেন্ড … অর্নব.. বুঝিয়াছো?
দহন : আজকে তারার মতো সুন্দর নই বলে… 😞…
বহ্নি হেসে দিলো…
দহন : হাসির কিছুই ছিলোনা…
বহ্নি : হ্যা তো?
দহন : কিছুনা। ভালোবাসি…
বহ্নি : আমিও ভালোবাসি…

.

কয়েকমাস পর…
দহন-বহ্নি যমজ বাচ্চা সন্তান হলো। ১টা ছেলে আর ১টা মেয়ে । সারা পরিবারে হুল্লোর পরে গেলো। সবার মনে এক অন্যরকম আনন্দ। এক অন্যরকম উৎসব । দহনের তো খুশির কোনো সীমাই নেই.. খুশিতে পাগল হয়ে গিয়েছেটা পুরো।

দহন : বাপী দেখো দেখো… আমার মেয়েটা পুরো আমার মতো হয়েছে। আর ছেলেটা ওর মায়ের মতো। এইযে সোনামনিরা আমি তোমাদের বাবা…
নিশা : কোলে নিয়ে কথা বলনা…
দহন : ওরা কতোছোট… যদি পরে যায়… তাই তো আমি ভয়ে নিচ্ছিনা…
নিশা : কিচ্ছু হবেনা। সাবধানে নে…
দহন : আচ্ছা… আমি আগে মেয়েকে নিবো…
নিশা : আচ্ছা নে…

দহন মেয়েকে কোলে নিলো।
দহন : ওরে আমার সোনামা টা… তুমি আমার ভূবন …।। আমার মন আমার জীবন… তোমার নাম হবে হিয়া আহমেদ যমযম …
দহন হিয়ার কপালে চুমু দিলো।

এরপর দহন ছেলেকে কোলে নিলো।

দহন : ওরে বাবারে… তুমি তো আমার সোনা বাবাটা… বাবার মতো অনেক বেশি রাগি হতে হবে কিন্তু… রাগি হওয়া আমাদের বংশের ধারা বুঝেছো…
দহন ছেলের কপালেও চুমু দিলো।
দীপন : ছেলের নাম বললে না…
দহন : বারে … নাম রাখার অধিকার কি আমার একার…
মনি : ও ভাবি বলোনা ওর নাম কি…

বহ্নি : ওর নাম তেজ আহমেদ সায়র। ওর বাবার মতো ওর তেজ হবে … মনটা হবে সাগরের মতো বিশাল… যেমনটা ওর বাবার….

দহন-বহ্নির ঘরে এলো তেজ-হিয়া…

তেজ-হিয়ার আগমনে দীপন জমকালো অনুষ্ঠান করলো। এর ২০-২৫দিনপর রকি-কাকনের ঘরেও ১টা ছোট্ট পরী এলো। রকি সাধ করে মেয়ের নাম রাখলো দিপ্তী …

সবাই বেশ সুখেই দিন কাটাতে লাগলো।

.

দহন-বহ্নির মতো হয়তো অনেক জুটি আছে যারা বিপরীতধর্মী হয়েও জীবনসাথী হয়ে যায়… তারা প্রেমটা বিয়ের আগে নয় পরে করে।
💖💖💖

.

❤❤❤সমাপ্ত ❤❤❤