ভালোবাসার গুন্ঞ্জন পর্ব-০১

0
3272

#ভালোবাসার_গুন্ঞ্জন💜
#আইদা_ইসলাম_কনিকা
#পর্বঃ০১

রাত ১ টা বাজতে ৫ মিনিট বাকি তখনই হিল হাতে টুলতে টুলতে বাসায় ঢুকলো আদারা সম্পূর্ণ নাম আদারা আফাফ দেখতে যেমন ভয়ংকর সুন্দরী তেমনই তার তেজ রাগ জেদ অভিমান সবে মাত্র ভার্সিটি লাইফে পা দিয়েছে পরিবার বলতে আদারার নামের পরিবার এই পরিবার থেকে না পেয়েছে ভালোবাসা না পেয়েছি ছোট বেলার আবদারের অনুমতি বড়ির সবচেয়ে ছোট হলেও তাকে বাসার ২জন ছাড়া কেউ দেখতে পারে না। এক এক নিঝুম বাড়ির বড় মেয়ে চাচা-চাচি,দাদি,মা-বাবা সবার প্রিয় আদারার ওল্ট সম্পূর্ণ নাম ({নিঝুম শাহামাত বন্যা} বাবার নামের সাথে তার নামটা মিলিয়ে রাখা। শাহামাত,আর শাহাদাত দু’জন দুই ভাই শাহাদত হলো আদারার বাবা শুধু নাম মাত্র) আর দ্বিতীয় নিঝুম এর বড় ভাই আলফাজ এর দুজন অনেক আদর করে আদার কে শাহমাত আর শাহাদাতের বিজনেস থাকা সত্ত্বেও আলফাজ আর নিঝুম কাজ করে খান গ্রুপ ওফ ইন্ডাস্ট্রির হয়ে।।
আদারা গুন গুন করে গান গাইছে আর অন্ধকারে টুলছে ডিংক বেশি করায় এমন অবস্থা আদার কিছু একটার সাথে বেজে হেচট খেয়ে নিচে পড়ে যেতে নিলে সামনে থাকা একটা ব্যক্তি তাকে ধরে ফেলে আর তখনই লাইট ওন হয়ে যায় সোফায় বসে আছে শাহাদাত সাথে তার গিন্নি আয়শা শাহাদাত এসে দাড়ালো আদারার সামনে আদারা শাহাদাতকে দেখে টুলতে টুলতে বলে
–হাই মি.শাহাদাত এন্ড মিসেস শাহাদত তো আপনারা এখন জেগে আছেন আজব ব্যাপার! যাই হোক আমার বাপের কি ওহহ সরি আমার তো শুধু নাম মাত্র বাবা, বাবার আদর কি তা তো পায়নি আফটার-ওল গুড নাইট আমি অনেক ক্লান্ত। বলেই চলে যেতে নিলে শাহাদত হুংকার দিয়ে ওঠে আর বলে
–কয়টা বাজে সেই খবর কি তোমার আছে? এতো রাত পর্যন্ত ভদ্র ঘরের মেয়ে বাইরে থাকে আর কি খেয়ে এসেছো তুমি বাসায়? শাহাদাতের চিল্লাচিল্লিতে আদারার চাচা-চাচি, নিঝুম সহ আলফাজ ও হাজির আদারার চাচি বলে
–এই মেয়ে আর মান ইজ্জত রাখলো না…. এর আগেও আমার মেয়েটার…. তখনই নিঝুম বলে
–আহহহহহহ্ মা সমস্যাকি তোমার? ঐখানে আদারার কোনো ভুল ছিলো না বুজছো? আর আদারার এতো সময় পর্যন্ত বাইরে কেনো ছিলি রে? রাতে কিছু খেয়েছিস? আদারার তাছিল্যের হাসি দিয়ে বলে
–কারো কি সে খবর আছে কি দি? আচ্ছা দি আমি ডিংক করে এসেছি তাই আর খাবোনা!! আমি ঘুমাবো আর এনাদের বলো দিন দিন এরা জি-বাংলা টিভি সোতে পরণিত হচ্ছে যতোসব মেয়ে বলে দাবি করতে লজ্জা করে আদর করতে লজ্জা করে আবার শাসন কোন অধিকারে করতে আসে…!! ফালতু পরিবার যুটায় দিছে কপালে আল্লাহ।। শাহামাত কিছু বলতে যাবে তখনই আদারা এমন করে তাকায় যে শাহামাত আর কিছু বলতে পারে না আর আলাফজ শুধু তাকিয়ে আছে আদারার দিকে আর পাঁচটা মেয়ের মতো আদারার না অনেক অভিমান যমে আছে আদারা আবার পরে যেতে গেলে আলফাজ আদারা কে কুলে তুলে নেয়। আদারা ধন্যবাদ বলে আলফাজের কোলেই ঘুমিয়ে যায়, আর নিঝুমও কাউকে কিছু না বলে আদারার সাথে রুমে যায়। আদারার আর চাচি বকবক করতে করতে নিজের ঘরে চলে যায় শাহাদাত আর আয়শাও চলে যায়। আলফাজ আদারা কে বিছানায় শুয়ে দিয়ে গায়ে চাদর টেনে দেয়… (আদারা আর নিঝুম একই রুমে ঘুমায়)। আলফাজ আদারার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিয়ে নিঝুমকে বলে..
–নিঝুম চল নিচে গিয়ে তুই খাবার গরম দিবি আর আমি লেবু পানি করে আনবো। নিঝুম বলে
–ভাইয়া খাবার নেয় যা ছিল সব সার্ভেন্টকে দিয়ে দিয়েছে..। আলফাজের অনেক রাগ হয় এটা আদেও পসিবল বাসায় একটা মেয়ে খেলো নাকি না খেলো কারো কিছু যায় আসে না? আলফাজ বললো
— বাসার সবাই কেমন আর দাদি তো আমাকে কতো ভালোবাসে কিন্তু আদারা কে কেন দেখতে পারেনা, এখন আসলো না কেন?নিঝুম বললো
–ঔষধের ডোসে ঘুম আসছে বুড়ি, বুড়ি আমাকেও দেখতে পারে না… আচ্ছা চলো নিচে গিয়ে লেবু পানি আর নুডলস করে নিয়ে আসি।… আলফাজ বললো না থাক শুধু
–লেবুর পানি হলেই চলবে।
তারপর নিঝুম যায় লিবু পানি করতে আর আলফাজ হাত বুলাতে থাকে আদারার মাথায় আদারাকে আলফাজ বেশিই আদর করে নিঝুমের চাইতে বেশি,কারণ ছোট থেকেই দেখে এসেছে নিঝুম আর তাকে সবাই যতুটুক ভালোবাসে তার চেয়ে শতগুন বেশি অবহেলা করেছে। আদারা জন্য নিচে কাউকে সে কিছু বলেনি কারণ সে বারণ করেছিল আদারা কে ডিংকস করতে কিন্তু কে শুনে কার কথা । মেয়েটা যে বড্ড অভিমানি
ওপর দিকে এক গিটার নিয়ে বারান্দায় বসে আছে মাহির, মাহির আহনাফ আবিদ খান। নেশা বলতে তার একটাই নেশা কি করে বিজনেসটা এগিয়ে নেয়া যায় কিকরে ভাইয়াকে গর্বিত করা যায় সাধারণ এই চিন্তা টাই মগ্ন থাকে মাহির কিন্তু আজ সে ভাবছে অন্য কথা সেই ডাগার ডাগর রাগী আঁখি চুলগুলো এলোমেলো হাতে ডিংকস এর গ্লাস কেনে জানি বার বার সেই মায়াবিনীর কথাটা মনে পরছে তার কিন্তু সে চোখের আড়ালে সে দেখছে এক মায়াবী উদাসীন পরি তখনই রাদ, (রাদিয়ান খান রাদ) দা বিগেস্ট খান গ্রুপ কোম্পানির ওনার ২ভাই, বাবা-মা, আরেক বোন নিয়ে তাদের পরিবার কিন্তু বোন আর মা-বাবা থাকে কানাডা এখানে থাকে মাহির আর রাদ। রাদ যেৃন শান্ত-সিষ্ট মাহির তােমনি রাগী দেখতে দু’জনই সিনেমার হিরোদের মতো কেউ কারো চেয়ে কমনা..।
মাহিরের রুমে আসে আর বলে
–কিরে এখনো ঘুমাসনি? পার্টি থেকে আসার পর থেকেই দেখছি তোর মন মরা, কারণটা কি? (মাহির আর রাদ বরাবরই ফ্রি একে-অপরের সাথে তাই মাহির আর কিছু না ভেবেই বলতে শুরু করে…
–ভাইয়া আজকে আমার ফ্রেন্ডের বার্থডে ছিলনা? আমরা সবাইতো ক্লাবে গিয়েছিলাম পার্টি করতে তাই না? রাদ বললো
–হুমম.. পরে?
–তখনই একটা মেয়ের সাথে আমার ধাক্কা লাগে,বিশ্বাস করে এই মাহিরের কথার ওপর যে একটা কথা বলতে পারেনা.. সেখানে ঐমেয়েটা আমাকে কত কিছু বললে গেলো…আর আমি শুধু ওর চোখপর আড়ালে চিক চিক করা জলটার কারণ খুঁজতে চাচ্ছিলাম… এইটুকো একটা মেয়ে তার কি তেজ, রাগ বাবা আমিতো শেষ। মাহিরের কথায় রাদ হুহুহু করে হেসে দিয়ে বলে
–এই মেয়েই তোকে Mr. Arrogant থেকে Mr.Dewana বানিয়ে ছাড়বে…মাহির বললো
–No way আমি মাহির আহনাফ আবিদ খানকে দিওয়ানা বানানোর মতো মেয়ে এই দুনিয়াতে নেই.. গিটারে টুংটাং সুর তুলতে তুলতে বললো মাহির… রাদ একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে
–বলে ঘুমিয়ে পর কালকে সকালে আমাদের একটা বিগ ডিল আছে… মাহির বললো
–হুমম তুমি যাও আমি একটু পর ঘুমিয়ে যাবো…. রাদ চলে যায় আর মাহির ভাবতে থাকে আজকের রাতের কথা…
(বন্ধুর বার্থডে উপলক্ষে সবাই গিয়েছিল ক্লাবে তখনই সবাই মাহিরকে চেলেন্জ করে একটা মেয়েকে পটাতে মাহির প্রথম দিকে রাজি না হলেও পরে ইগোর জন্য রাজি হয়ে যায় মাহিরের কাছে তার ইগো আর এটিটিউড অনেক দামি তখনই একটা মেয়েকে দেখে বারে বসে বসে একের পর এক ডিকংস করে যাচ্ছে আর তার পাশেই বসা আরেকটা পরনে তার কালো লং বেকলেস হাতা কাটা ড্রেস আর যে মেয়েটা ডিংকস করছে তার পরনে হুয়াইট লং ড্রেস না বেকলেস না হাতাকাটা দেখেতো বেশ ভদ্র মেয়ে মনে হয় মাহির এইসব ভেবে ঐ কালো ড্রেস মেয়েটার দিকে এগিয়ে যায় তখনই আদারার সাথে ধাক্কা লেগে আদারার হাতের গ্লাসের ডিংকস পরে যায় আর আদারা রেগে গিয়ে মাহিরকে ইচ্ছেমতো কথা শুনায় হ্যা সেই সাদা ড্রেস পরা মেয়েটা আদারাই মাহিরের সব ফ্রেন্ডরাতো ভাবে এই মেয়ে আজ শেষ কিন্তু আদারা মাহিরকে কথা শুনিয়ে টুলতে টুলতে বার থেকে বেরিয়ে যায় আর সাথে সাদা ড্রেস পরা মেয়েটা আদারা বলে তার পিছু নয়ে..)মাহির আনমেনই বলে
–আদারা….
রাতের আধার কাটিয়ে সূর্য মামা পূর্ব দিগন্তে উুকিঁ দিয়েছে সবে রিক্তম লাল আাভা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে চারদিকে উপচে পরছে ঝড়ো হওয়া আদারার ঘুমন্ত মুখে আর নিঝুম নামাজের পাটিতে বসে কান্না করছে আর আল্লাহর কাছে আদারার জন্য দোয়া করছে.. সকাল ১০টার দিকে আদারা ঘুম থেকে ওঠে মাথাটা ভারি হয়ে আছে তারপর একটা বেগুনি কালারের শার্ট আর ব্লাক কালারের জিন্স নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে… তারপর ফোনটা খওপেন করে দেখে ১০ টা ৩৮ বাজে ভার্সিটি যাওয়ার সময় হয়েগেছে তাই… আলিয়া,অর্নব,দিহান,আর আস্তা কে ফোন করে বলে সে বেড়িয়ে গেছে…. ড্রয়িংরুমে বসে বসে টিভি দেখছে আদারার দিদুন আর চাচি মা রান্না ঘরে আলাফাজ ফোন টিপছে সোফায় বসে বসে কোনো এক কারণে বাসায় আজ অফিসে যায় নি… আলফাজ আদারা কে দেখে বলে
–কিরে ঘুম হলো? ভার্সিটি যাচ্ছিস নিশ্চয়ই? এই নে পকেট থেকে ৫ হাজার টাকা বের করে আদারার হাতে গুজে দিলো আর বললো…এটা তোর ভাইয়ার টাকা অন্য কারো না কিছু খেয়েনিস বাসায় তো আর তুই খাসনা… আর হ্যা পরীক্ষার ফি নাকি তুই দিয়ে দিয়েছিস আমাকে বললেই তো পারতি…আদু
–ধন্যবাদ ভাইয়া তুই অনেক ভালো আচ্ছা আমি যাই… তখনই আলফাজ পওছন থেকে ডেকে বলে
–এইনে তোর বাইকের চাবি,কালকে তো বাইক গেরেজে রেখে ঐখানেই চাবি ফেলে এসেছিলি..! তখন আদারার চাচি বলে
–ডেংরি মেয়ে দুইদিন পর যাবে শুশুড় বাড়ি আর এটাকি নিজের বাড়ি পেয়েছিস, আফাফ? আদারা বলে
–সেম টু ইউ.. মিসেস শাহমাত এটা তোমারও বাড়িনা কিংবা তোমার বাপের কিনারও না আর এটা আমার বাড়ি এটা আমি কখনো দাবি করেনি অনেক আগেই তো চলে যেতে চেয়েছিলাম… তখনই আলাফাজ বলে
—আহ আদারা তুই যাতো কলেজে যা আর নিঝুম অফিস শেষে আশার সময় তোকে আস্তার বাসায় থেকে নিয়ে আসবে কেমন? আদারা মাথা নেড়ে চলে যায়.. তখনই আদারার দিদুন বলে
–আয়শা এক কাপ চা করে দে,আর নিজের মেয়েকে সামাল দে বুঝতে পারছিস কি বলছি হতোছাড়ি তো দিন দিন সব কয়করে দিচ্ছে…. আয়শাও চায় নিজের মেয়েকে ভালোবাসতে কিন্তু পারে কই বাসার সবাই যে তাকে অন্য নজরে দেখে…।।আয়শা চুপচাপ কিচেন থেকে চা করে এনে দিয়ে যায়…. আর কিছু বলে না অপর দিকে আদারা ফুলস্পির্ডে বাইক রাইড করছে জেমের জন্য আটকে যায় মাঝ পথে প্রচুর গরম থাকায় হেলমেট টা খুলে দেয় আর এইসব দেখছে মুগ্ধ হয়ে একজন হাঠাৎই কেটিএম বাইকের আওয়াজে বাইরে তাকায় মাহির দেখে একটা লেডি বাইকার বাইক চালাচ্ছে আর যখন দেখেএটা আদারা তখন সে বলে
–সত্যি এই মেয়ের যে আর কত রুপ আছে কে জানে মাহির আদারাকে দেখলেও আদারা মাহিরকে দেখনাই আর কালকের রাতের কথাও তার মাথায় নেই…. মাহির কাল রাতে লেট করে ঘুমানোর কারণে অফিসে যেতে লেট হয়ে যায়.. অপর দিকে

চলবে