#ভুলিনি_তোমায়?
#Nishat_Tasnim
#পর্ব :১০
পৃথিবীরর সবচেয়ে মধুর শব্দ মা,আফসোস আমি এ মধুর শব্দের মাধুর্য উপলব্ধিই করতে পারি নি।কারন মা তো চলে গিয়েছিলো।
খুব কষ্ট হতো যখন আমার বয়সের অন্য বাচ্চারা তাদের মায়ের কথা বলতো।
স্কুলে যখন সবাই সবার মায়ের গুনগান করতো চুপচাপ সেখান থেকে উঠে চলে যেতাম।ক্লাসমেট রা খুব হাসাহাসি করতো আমায় নিয়ে।
সবাই বাঁকা চোখে দেখতো,,অনেক বাজে বাজে ইঙ্গিত করতো।
আমার ক্লাসের ভালো ভালো স্টুডেন্টরা তো আমার সাথে মিশতোই না,
কারন তাদের পরিবার থেকে বলা হয়েছে আমার সাথে যেনো না মিশে।
আমার সাথে মিশলে নাকি খারাপ হয়ে যাবে।
সবাই অবহেলা করতো,,সবাই যখন খেলতো, আমি তখন ওদের পিছন পিছন কুকুরের মতো ঘুরতাম খেলায় নেওয়ার জন্য,কিন্তুু তারা তাড়িয়ে দিতো।
তখন একা একা ক্লাসের কোনে বসে টেবিলে মাথা রেখে কান্নাকাটি করতাম।
এমন আচরন স্কুলেই সীমাবদ্ধ ছিলো না,বাড়ীতেও চলতো।
কারো বাসায় গেলে তারা দরজা লাগিয়ে দিতো,,তাদের ধারনা আমি তাদের বাচ্চাদের নষ্ট করে দিবো।
আমি তখন কিছুই বুঝতাম না,এত ছোট বাচ্চা কী বা বুঝবে?
কখনও কারো কাছে মন খুলে কথা বলতে পারি নি,,সারাটি দিন পার করতাম কান্না করে।
বাবা সারাদিন বাহিরে থাকতো,,যখন বাড়ী ফিরতো তখন আমি নিজে নিজে ঘুমিয়ে যেতাম।
কেউ একটুও মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতো না,আর না কেউ পেট ভরে খাইয়ে দিতো।
একজন মা, সন্তানের জন্য যে কী তা আমি ছাড়া কেউ অনুভব করতে পারবে বলে মনে হয় না।
কথায় আছে না,,”যাহা চাই,তাহা পাই না।আর যাহা চাই না তাহা পাই।”
ঠিক তেমনই আমি মা চাইতাম, কিন্তুু পেতাম না।
আর অনেকে মা পেয়েও বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে দিতো।
আই উইশ,,তারাও আমার মতো পরিস্থিতিতে পরতো,, তাহলে বুঝতো মা কী জিনিস?
একজন মা তার সন্তানের জন্য কত কী করে,, সেটা তখনই অনুভব করতে পারবে যখন তার মা থাকবে না।
যদি সবাই বুঝতো মা কী?তাহলে মনে হয় না কেউ তাদের মা কে বৃদ্ধাশ্রমে দিতো।
!
!
তখন,বাবা যখন আমাকে বলেছিলেন,,”মা কী?”
আমি কান্নার জন্য কিছু বলতেও পারছিলাম না।
বারবার কথাগুলো গলায় আটকে যাচ্ছিলো।বাবাকে বলবো বলেও আর বলি নি।
কারন গত কয়েকদিন থেকে বাবার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।এখন যদি বলি তাহলে নিশ্চয় বাবার শরীর আরো খারাপ করবে।
এমনিতেই আমার জন্য প্রচুর টেনশনের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন।
তাই বাবাকে বললাম,,”বাবা,আমার না মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে।”
আমার কথা শুনে বাবা অবাক হয়ে গেলেন,,,হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি মিথ্যা বলেছি।
বাবা আমাকে বুকের সাথে মিশিয়ে ধীর কন্ঠে বলে উঠলো,,,”আমার সোনামা আমাকে মিথ্যা কেনো বলছে?আমি কী এখনও তার বন্ধুত্বের যোগ্যতা অর্জন করতে পারি নী?আমাকে কী সে বিশ্বাস করতে পারে নাই?”
আমি নাক টেনে বলে উঠলাম,,”উহুম।হয়েছে তো,,আমি কী মিথ্যা বলতেছি নাকী?”
বাবা আমার কথা শুনে হাসলেন।হাসিমুখেই বলে উঠলো,,”যে মেয়ে ৯ বছর বয়সে তার মায়ের চলে যাওয়ার কথা বুঝার পর একদিনও চোখের পানি ফেলে নি আর না খবর জানতে চেয়েছে,,,সে মেয়ে হঠাৎ করে ১৭ বছর বয়সে মায়ের জন্য অকারনেই কাঁদবে?মোটেও না,,,যদি বিষয়টা আমাকে বলতে না চাও তাহলে ডিরেক্ট বলবে যে আমি বলতে চাই না।কিন্তুু কখনও আমাকে মিথ্যা বলবে না,,ঠিক আছে???”
বাবার কথা শুনে আমি কী বলবো ভেবে পাচ্ছি না।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে হুট করে বলে উঠলাম,,,”বাবা আমি আজকে মা কে দেখেছি..!!”
আমার কথাটা বাবার মাথায় বজ্রপাতের ন্যায় বাজতে লাগলো।বাবা স্তব্দ হয়ে গিয়েছিলেন,,আমি জানতাম এমন কিছুই হবে।বাবা আমাকে বুক থেকে তুলে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে প্রশ্ন করলেন,,,”সত্যি..??”
আমিও মাথা নাড়িয়ে বললাম,,,”হুম..!!”
বাবা আবারো কয়েক সেকেন্ডের জন্য অনুভূতিহীন হয়ে গেলেন,,হঠাৎ করে উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলো,,,”তুই, তোর মা কে ঢাকায় দেখেছিস?”
আমি এবারও মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম।
বাবা এবার আরো উত্তেজিত হয়ে বললো,,,”কেমন দেখতে হয়েছে?না মানে আগের মতোই আছে নাকী আরো সুন্দর হয়ে গিয়েছে?ও কী একা ছিলো?””
মুহূর্তেই বাবার এত উত্তেজনা দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম,,,বাবা কতটা না ভালোবাসে মা কে?আর মা?
বাবার প্রশ্নের প্রতিউত্তুরে কী বলবো ভেবে পাচ্ছি না,,বাবাকে এতোটা খুশি হতে আমি আগে কখনও দেখি নি।আমাকে চুপ থাকতে দেখে বাবা একেরপর এক প্রশ্ন করতে লাগলেন।খুব আজব লাগলে,,বাবা নিজে প্রশ্ন করে নিজেই খুশি যাচ্ছেন আবার দুঃখীও হয়প যাচ্ছেন।
আমি বাবার এমন রিয়েকশন দেখে মুখ ভার করে বলে উঠলাম,,,”উনার সাথে দুইটা বাচ্চাও ছিলো।”
বাবা চুপ হয়ে গেলেন,,আবারো নিরবতা।বাবা আস্তে করে বলে উঠলেন,,”ওর সাথে কী ওর হ্যাজবেন্ড ছিলো?”
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,,,”না।”
বাবা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন।আমাকে প্রশ্ন করে উঠলেন,,”তুই দেখা করেছিস?তুই কী বলেছিস তুই ওর আর আমার মেয়ে?ও কী কিছু বলেছে??”
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,,”হুম,,দেখা করেছি,কথাও বলেছি।তবে আমার পরিচয় বলে নি।”
বাবা অবাক হয়ে বললেন,,”ও মা,কেনো?””
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,,,”কারন উনি আমাকে জিজ্ঞাস করেন নি।”
বাবা আমার দিকে কৌতুহলি দৃষ্টিতে বললেন,,”তাহলে কী কথা বলেছিস?”
আমি একবার ভাবলাম বলবো না আবার ভাবলাম বলবো।
নিজেই কনফিউসড হয়ে গিয়েছি।
এদিকে বাবা আমাকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন।
এবার আমি কোনো কিছু না ভেবে স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড,, এ টু জেড সব বলে দিলাম।
আমার কথা শুনার সাথে সাথে বাবার মুখের রং মুহূর্তেই বদলে গেলো।
বাবার হাসি মুখটা সেকেন্ডেই ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।
চোখমুখ শক্ত করে আমাকে বললেন,,”আমি যেনো আর কোনোদিন ওই মহিলার নাম মুখেও না নি..!!”
কিন্তু আমি বাবার কথা মানি নি,,,যদিও বাবাকে বলেছি যে হ্যা,নিবো না।তাও আমি টানা ২/৩ দিন
চলবে???