ভুলিনি তোমায় পর্ব-৭+৮

0
4056

#ভুলিনি_তোমায়?
#Nishat_Tasnim
#পর্ব :৭+৮

চোখের সামনে কাউকে ঠাসস করে পড়ে যেতে দেখলে কেউ কীভাবে হাসি কন্ট্রোল করতে পারে আমি জানি না।আমি মোটেও কন্ট্রোল করতে পারি নি, হু হা করে হেসে দিয়েছি।

আমাকে হাসতে দেখে নিচে পড়া বাচ্চাটি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো।বাচ্চাটির কান্না দেখে আমার হাসি আরো বেড়ে গেলো।আমার হাসির বেগের সাথে বাচ্চাটির কান্নার বেগও বেড়ে গেলো।

কান্নাকাটির শব্দে ইতোমধ্যে অনেক মানুষ জমা হয়ে গিয়েছে।বাচ্চাটির মা এসে ওকে থামানোর চেষ্টা করছে,উনাদের মধ্যে এহসান ছেলেটাও ছিলো।

উনি হুট করে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে উঠলেন,,”বাহ্, তোমার হাসি তো চমৎকার। অপূর্ব লাগে দেখতে,কিন্তু তুমি হাসো না কেনো?আমি তো তোমাকে কখনও হাসতে দেখি নি।”

এহসানের কথা শুনে আমি সাথে সাথে চুপ হয়ে গেলাম। আমি নিজেই চমকে গেলাম,কারন সৌরভের সাথে সেদিনের ঘটনার পর আজ একমাস অবদি কোনোদিন হাসি নি।হাসি নি বললে ভুল হবে আমার হাসিই আসে নি।

কিন্তুু আজ হঠাৎ বাচ্চাটাকে পড়ে যেতে দেখে আপনাআপনি হাসি চলে এলো।এদিকে বাচ্চাটির কান্না থামছে না দেখে আমি বাচ্চাটির সামনে গিয়ে কান ধরে কিউট ফেস করে বললাম,,,”সরি এন্ড থ্যাংকইউ! ”

আমার কথা শুনে বাচ্চাটি কান্না বন্ধ করে আমার দিকে চোখ ছোট ছোট করে বললো,,,”থ্যাংকইউ কেনো?”

আমি হালকা হেসে বললাম,,”কারন তোমার কারনে আমি হেসেছি। ”

এবার ছেলেটি চোখ পিটপিট করে তাকালো।ওর এমন তাকানো দেখে আমি মুচকি হেসে ওর গাল টেনে দিয়ে চলে আসলাম।পিছন ফিরে তাকালে হয়তো দেখতাম সবাই বোকা হয়ে চেয়ে রয়েছে।

বাসায় ঢুকতেই বাবা আমার মুখে লাজুক হাসি দেখে বাবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।বাবাকে খুশি হতে দেখে আমি আবারো আগের মতো গোমড়া মুখ করে ফেললাম।সাথে সাথে বাবার মুখের হাসিও চলে গেলো।

বাবা হাত থেকে মগটা রেখে আমার কাছে এসে বলে উঠলেন,,”তুই যখন মুখটা এমন গোমড়া করে ফেলিস তখন আমার দুনিয়াটা অন্ধকার হয়ে যায়,কিন্তুু যখন তোর মুখে হাসি দেখি তখন মনে হয় আমার দুনিয়াতে সমস্ত সুখ এসেছে।তোর মুখে হাসি দেখলে কলিজাতে প্রশান্তি লাগে,সবসময় হাসি খুশি থাকবি।কী থাকবি তো?”

বাবার কথা শুনে আমি জোর পূর্বক মুখে হাসি ফুটিয়ে মাথা নাড়ালাম।বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,, “এইতো ঠিক আছে।আমার মা বলে কথা,আমার মায়ের মুখে হাসি না থাকলে মানায়?আচ্ছা যাও, কেয়া এসেছে তোমাকে ডাকতে।মনে হয় পড়তে যাওয়ার জন্য।”

আমিও মাথা নাড়িয়ে রুমের দিকে যেতে লাগলাম।মনে মনে কেয়া আপুকে হাজারটা গালি দিতে লাগলাম।সবসময় আধঘন্টা আগে আসে,পড়ার তো কোনো খবর নেই।শুধু শুধু এহসান ভাইয়াকে লাইন মারতে আসে।

মানুষ খুব আজব তাই না? সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলে। আমিও নিজেকে অনেক পরিবর্তন করে ফেলেছি।ঢাকায় আসার পর আজ একমাস হয়ে গেলো।সময় কখন কোনদিকে চলে গেলো টেরই পেলাম না। এখানের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিলাম।

তবুও কোথাও মনের কোনে শান্তি পাচ্ছি না, নিজের জন্মস্থান বলে কথা।জন্মস্থান তো জন্মস্থানই, জন্মস্থানের কাছে শহরের দামী জিনিসের আয়েশ কিছুই না।গ্রামের মাটিতে হেটে যে মজা পেতাম তা শহরের দামী টাইলসের উপর হেটে পাই না।গ্রামের বাতাসে যত শান্তি লাগতো তার এক পার্সেন্ট ও শহরে নেই। গ্রামে নিজেকে খোলা আকাশের পাখির মত মনে হতো আর এখানে নিজেকে খাঁচার বন্দি পাখির মত মনে হয়।একদম দম বন্ধকর পরিবেশ। জানি না শহরের মানুষগুলো কীভাবে থাকে?হয়তো তারা অভ্যস্ত হয়ে গেছে।কিছুদিন পর আমিও ওদের মতো অভ্যস্ত হয়ে যাবো,ভুলে যাবো দেশের বাড়ীর কথা। একসময় এমন আধুনিকতার মাঝে হারিয়ে যাবে আমাদের এই সুন্দর পল্লীজীবন।

এ একমাসে তেমন কিছু পরিবর্তন হয় নি আবার হয়েছে। আগের ‘আমি’ আর এখনকার ‘আমি’ এর মধ্যে চলে এসেছে বিশাল তফাৎ।এখন আর আগের মতো মন খুলে কথা বলি না, নিজের মত চলি না।সবসময় অন্যের জন্য মুখে মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে রাখি।আমি চাই না আমার এ মনমরা মুখ দেখে অন্যের মুখও মনমরা হয়ে যাক।এখানে আসার পর বাবা এখানকার একটা ভালো কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে।

সারাদিন ব্যস্ততার মধ্যেই কাটে।সকাল ঘুম থেকে উঠে বাবার জন্য আর আমার জন্য নাস্তা রেডী করা, বাবাকে বিদায় দিয়ে কোচিং এ যাওয়া এরপর কলেজ।কলেজ থেকে এসে কেয়া আপুর সাথে এহসানেরর কাছে পড়তে যাওয়া।পড়তে যাওয়া বললে ভুল হবে কেয়া আপুর প্রেম দেখতে যাওয়া।প্রাইভেটে গেলে কেয়া আপু পড়া কম এহসানকে বিরক্ত করে বেশী।আপু যে এহসানকে পছন্দ করে সেটা বিভিন্ন আকার-ইঙ্গিতে এহসানকে বোঝায়।এহসান বুঝেও না বুঝার ভান করে।আমি চুপচাপ থাকি, কোনো কথা বলি না।

কেয়া আপুর ভাষ্যমতে,এহসান ভাইয়া হচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে ইনোসেন্ট ছেলে।উনার মতো পারফেক্ট দ্বিতীয় কেউ নেই।কিন্তুু আমি মোটেও সাপোর্ট করি না,একজন মানুষ কোনোভাবেই পারফেক্ট হতে পারে না।যাদের দেখতে এমন ইনোসেন্ট মনে হয় তাদের ভেতরই শয়তানি বেশি থাকে।কিন্তু আজ অবধি উনার কোনো দোষ খুজে পাই নাই,সারাদিন উনার দোষ খুজে বেড়ায় তাও পাই না।একজন মানুষ এত নিখুত কীভাবে হতে পারে?

সেদিন ছাদে উনি আমাকে বলেছিলেন যে আমি নায়লা কী না?আমিও তখন মাথা নাড়িয়ে বলেছিলাম যে হ্যা।তখন উনি বলেছিলেন যে,, “সরি,আসলে নিচে আমি খেয়াল করি নি, ভুল করে আপনার হাতে লেগে গিয়েছিলো আর তখন আপনার দিকে ওমন করে তাকিয়ে ছিলাম কারন আপনি কেমন অদ্ভুত পোশাক পরেছিলেন,তাই।একচুয়েলী আই এম সরি আমার কাজের জন্য,আসলে আমি ইচ্ছা করে করতে চাই নি।” পুরোটা সময় উনি নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলেছিলেন, একটা বারও আমার দিকে তাকায় নি।আমি উনার কথা শুনে অবাক হয়েছিলাম তাও বলেছিলাম, “ঠিক আছে,আমি কিছু মনে করি নি।”এরপর উনি মাথা নিচু করে চলে গিয়েছিলেন। আমি কী না কী ভেবে নিয়েছিলাম আর উনি।

তাও কেনো জানি উনাকে আমার পছন্দ নয়,,,”আসলে আমাদের জীবনে এমন কিছু মানুষ রয়েছে, যারা কারন ছাড়াই পছন্দ নয়।” উনার সাথে দেখা হওয়ার পর সে প্রথম দিনই একবার তাকিয়েছিলেন যে আর তাকায় নি,কিন্তুু আজ হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। উনার সম্পর্কে কেয়া আপু বলেছিলেন যে,উনার বাড়ীও নাকি আমাদের এলাকায়,কিন্তুু উনি নাকি এস এস সি পরীক্ষার পরই ঢাকায় চলে এসেছিলেন আর ছয়বছর থেকে এখানেই পড়ালেখা করছে।

রেদোয়ান ভাইয়ার ক্লাসমেট প্লাস বেস্ট ফ্রেন্ড তাই উনাদের ফ্ল্যাটে থাকে।আরো কত কিছু বলেছেন কিন্তুু আমি শুনিনি।কারন উনাকে আমার পছন্দ নয়।উনার এমন ভালো রুপ আর প্রশংসা শুনলে আমার শুধু একটা কথাই মাথায় আসে,”অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ! ”

আমি কখনও উনার দিকে তাকাই না,কারন উনার চেহারা হুবহু সৌরভের চেহারার সাথে মিল।উনাকে দেখলেই সৌরভের কথা মনে পড়ে।কেনো জানি মনে হয়েছিলো উনি হয়তো সৌরভের ভাই হবে,কারন কারো চেহারার সাথে এত মিল কীভাবে হতে পারে?তাই কেয়া আপুকে দিয়ে খবর নিয়ে জানতে পারলাম উনারও একটা ভাই আছে তবে তার নাম নাকী মেহেদী।

হয়তো সবকিছুতেই সৌরভকে খুজি তাই মিল পাই।এমন কোনো রাত নেই যে রাতে সৌরভের জন্য কেঁদে বালিশ ভিজাই নাই।তবে এখন আর মনে করতে চাই না,অতীতের স্মৃতি বেদনাদয়ক,অতীত ভুলে যাওয়াই শ্রেয়।বারবার অতীত মনে করে কষ্ট পাওয়ার কোনো মানে হয় না।কোনো এক জায়গাতে শুনেছি অতীত ভুলে যাওয়ার শ্রেষ্ট মাধ্যম হচ্ছে নিজের স্থান পরিবর্তন করা।

এখন অনেকটা স্ট্রং হয়ে গিয়েছি। আপন মনে এসব ভাবতে ভাবতে রুমে যেতেই দেখলাম কেয়া আপু মেকআপ টেকআপ করে রেডী হয়ে বসে আছে। আমাকে দেখে স্মিত হাসলেন,বিনিময়ে আমিও হাসলাম। আপু আমাকে তাড়া দিতে লাগলেন তাড়াতাড়ী রেডী হওয়ার জন্য।

আমি ধীর কন্ঠে বললাম,,,”আপু এখনও অনেক সময় এত আগে যাওয়া ঠিক হবে?আর তাছাড়া রেডী হবো কী?আমি তো রেডি বই নিয়েই যাবো।”

আপু উদগ্রীব হয়ে বলে উঠলেন,,” কী বলিস?সময় হয় নি মানে?আমরা যত আগে যাবো তত বেশী পড়বো তাই না?”

আপুর কথা শুনে আমি বিষম খেলাম।বিড়বিড় করে বলে উঠলাম,,”হুম, পড়তে যাও নাকী স্যার কে গিলতে যাও, ভালোই বুঝি।”

আপু ভ্রু কুচকে বলে উঠলেন,,”কিছু বললি?”

আমি জোরপূর্বক হে হে করে বলে উঠলাম,,”হ্যা, হ্যা।বলেছি তুমি ঠিকই বলেছো,চলো।”

অতঃপর আপুর জোরাজুরিতে আধ ঘন্টা আগেই পড়তে চলে এলাম। আমাদের দেখেই এহসান বলে উঠলো,,”ওম,টাইম হয়ে গিয়েছে?”

কেয়া আপু লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলে উঠলো,,”না না, এখনো হয় নি।আসলে আমরা একটু আগেই চলে এসেছি।”

আপুর কথা শুনে এহসান ছোট্ট করে বলে উঠলো,ওহ্। আমি কিছু না বলে চুপচাপ গিয়ে বসে পড়লাম।এহসানও একটুপর এসে পড়াতে বসলেন,এহসান ভাইয়া পড়া বের করতে বলতেই,কেয়া আপু বলে উঠলো,,”ভাইয়া,প্রতিদিন পড়া ভালো লাগে না।আজকে একটু অন্য কিছু করি।”

এহসান ভ্রু কুচকে বলে উঠলো,”অন্য কিছু কী?”

কেয়া আপু হাস্যজ্জ্বল মুখ নিয়ে বলে উঠলো,”চুলন না আজকে গানের কলি খেলি।”

এহসান ভাইয়া আরাম করে বসে বলে উঠলো,,”আচ্ছা, তোমরা বলো আমি শুনি।”

কিন্তুু কেয়া আপু নাকচ করে দেন,ভাইয়াকেও জোর করে গাওয়ার জন্য।অবশেষে কেয়া আপুর জোরাজুরিতে ভাইয়াও রাজী হয়ে যায়।আর এদিকে আমি নিরবে সিনেমা দেখলাম।কেয়া আপুর পালা প্রথমে থাকায় উনি রোমান্টিক হিন্দি গান গাইলেন।আপুর কন্ঠ সুন্দর ছিলো।এরপর কেয়া আপু এহসানকে জোর করলো গাইতে।

এহসানের গান শুনে আমি মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম,শুধু আমি না কেয়া আপুও হা হয়ে তাকিয়ে রইলো।

উনি তো বিরবির করে বলতে লাগলেন,,”একটা ছেলের কন্ঠ এতটা সুন্দর হয় জানতাম না।কারো কন্ঠ কীভাবে এতো নেশা ধরানো হতে পারে? হাউ??” উনার কথা শুনে আমার কপাল কুচকে এলো,এত আদিক্ষ্যেতা করার কী আছে?হুদাই, যত্তসব..!!

এহসানের গান শেষ হতেই কেয়া আপু সুনামের বন্যা বইয়ে দিলেন।আমি শুনেও না শুনার ভান করে রইলাম। এবার এহসান বলে উঠলো,,”কী হলো তুমি গাইবে না?”

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,,না।

আমার কথা শুনে উনি এমন একটা রিয়েক্ট করলেন যেনো আমি অন্যায় কিছু বলে ফেলেছি।এবার উনি কেয়া আপুকে বলে উঠলো যদি আমি না গাই তাহলে আর কোনোদিন এমন কিছু করতে দিবে না।

এবার শুরু হয়ে গিয়েছে কেয়া আপুর ঘ্যানঘ্যান, কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করে কানটা জ্বালাফালা করে ফেললো।আমি বারবার না করেও পারলাম না, এতো জোরাজোরি করতে লাগলো যা শেষে আমি বাধ্য হয়ে বলি হ্যা গাইবো।ব্যাস দুজনই ঠান্ডা হয়ে গেলো।আমি অনেক সময় নিলাম, তাও গলায় আসছিলো না।অবশেষে চোখ বন্ধ করে গাইতে লাগলাম,,,

তোমার নেশায় পইড়া আমি হইলাম দেওয়ানা,
তোমার জন্য হারায় গেলো আমার ঠিকানা..!!
তোমার মতো থাকলা তুমি খবর নিলানা,
তোমার কাজল রঙ্গের আমি তুমি কার আমি নাই।
তোমার নেশায় পইড়া আমি হইলাম দিওয়ানা
তোমার জন্য হারায় গেলো আমার ঠিকানা
তোমার মতো থাকলা তুমি খবর নিলানা
তোমার কাজল রঙ্গের আমি তুমি কার আমি নাই।
আজ আমার ভেতর জুড়েই শুধু নেশার বসবাস
নেশা হাসায়,নেশা কাদায়, নেই আমি আমার।
রোজ বিকালের মত তোমায় আর তো দেখি না
আমি আমার মতো থাকবো তুমি খবর নিও না।
হেই,থাকতে হবে তোমায় ছাড়া কথা ছিলো না
আজ ভেতর ঘরে ধোয়া থাকে তুমি থাকো না।
আমার লাল রঙ্গা হৃদপিন্ড হইতেছে কালো
কলিজাটা যাক পুড়ে যাক তবু তুমি থাকো ভালো।
থাকতে হবে তোমায় ছাড়া কথা ছিলো না,আজ ভেতর ঘরে ধোয়া থাকে তুমি থাকো না।
আমার লাল রঙ্গা হৃদপিন্ড হইতেছে কালো কলিজাটা যাক পুড়ে যাক তবু তুমি থাকো ভালো।আজ আমার ভেতর জুড়েই শুধু নেশার বসবাস,নেশা হাসায় নেশা কাদায় নেই আমি আমার।ওওও…..

পুরোটা গান গাইলাম চোখ বন্ধ করে। প্রত্যেক টা সেকেন্ড সৌরভের করা ব্যবহারগুলো মনে করলাম,খুব কষ্ট হলো তবুও এক ফোটা চোখের পানি ফেলি নি।একটা কথা আছে,অধিক শোকে মানুষ পাথর হয়ে যায়, ঠিক তেমন আমিও হয়ে গিয়েছি।এখন আর কান্না আসে না।চোখ খুলে উনাদরে দিকে তাকাতেই দেখলাম দুজনই আন্ডা-আন্ডা চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,,”কী??”

সাথে সাথে কেয়া আপু বলে উঠলো,,”তোর গান শুনে মনে হইছে,তুই ছ্যাকা খাইছিস।এমন একটা রোমান্টিক মোমেন্ট এ কেমন গান গাইছিস?”

আমি মুখ ছোট করে বললাম,,”আমি তো বলেছি,আমি পারি না।তোমরাই না বলেছো।”

আপু হতাশ স্বরে বলে উঠলো,,”তাই বলে,স্যাড সং?”

আমি কাঁচুমাচু হয়ে বসে রইলাম।এহসান কিছুসময় পর বলে উঠলো,”এখন তো আড্ডাসময় শেষ এবার পড়া বের করো।”

এহসানের কথা শুনে কেয়া আপু বলে উঠলো,,”ভাইয়া,পড়ার সময় শেষ। পাঁচ মিনিট ওভার হয়ে গেছে।এখন আমাদের ছুটি টাইম। ছুটিইই,আসসালামু আলাইকুম,টাটা।”বলেই আপু আমাকে টেনে হাটা ধরলেন।পিছনে এহসান বোকা হয়ে হা করে তাকিয়ে রইলো।

এদিকে আপু টানাটানি করায় কলম রেখে চলে এসেছি,আপুকে কলম নেওয়া কথা বলে আবারো উনার ঘরের দিকে হাটা ধরলাম।
কলম নেওয়ার জন্য ফিরে আসতেই দেখলাম এহসান সিগারেটের প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে দিয়াশলাই দিয়ে জ্বালাচ্ছে।

উনার হাতে সিগারেট দেখে আমার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গিয়েছে। আমি কলম টা হাতে নিয়ে কেয়া আপুকে ডাক দিয়ে বললাম,,”আপু দেখে যাও,,, ” পুরো কথা শেষ করার আগে এহসান হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে ওয়ালের সাথে মিশিয়ে নিলেন।
আচমকা এমন কিছুর জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না,,,আমি একদম অবাক হয়ে যায়।ছাড়াছাড়ির জন্য জোরাজুরি করতেই উনি আরো চেপে ধরলেন,একদম আমার মুখের উপর চলে আসলেন।আমি উমম উমম করতে লাগলাম ছাড়ার জন্য,কিন্তু উনি ছাড়লেন না বরং এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।ঠিক সে সময়,,,,,,

চলবে,,,,