#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_06
ইশফা ভার্সিটিতে এসে ক্লাশরুমে ঢুকতে না ঢুকতেই রিধি এসে ইশফাকে ঝেকে ধরেছে।
রিধিঃকি হয়েছিলো তোর?দুদিন ধরে তোর কোন খবর নেই কেন?কালকে ভার্সিটিতে আসিস নি কেন?জানিস কত টেনশনে ছিলাম?তোর ফোন নাম্বারটাও নেই যে তোর কোন খোজ নিব।
ইশফাঃএইটু দম ছেড়ে কথা বল।এক সাথে এতো প্রশ্নের উওর কিভাবে দিব।
রিধিঃআগে একে একে সব প্রশ্নের উওর দে পরে দম ছাড়া যাবে।
ইশফাঃআমি ঠিক আছি।কিছুই হয়নি আমার।ফুপির বাসায় গিয়েছিলাম শুক্রবার।ফুপি আসতে দেয়নি।তাই শনিবার ফুপির বাসায় থেকে ওখান থেকেই আজ ভার্সিটিতে আসা।
রিধি কোমরে হাত দিয়ে রাগি গলায় বলল…..
—তুই এদিকে বেড়িয়ে,খেলে ঘুড়ে বেড়াচ্ছিস আর তোর চিন্তায় আমাদের জান যায় যায় অবস্থা।
ইশফাঃআরে রাগ করছিস কেন?যা এর পরের বার তোকেও সাথে নিয়ে যাব।
রিধিঃতোর সাথে যাওয়া লাগবে না আমার।এখন আগে ফোন নাম্বার দে।
ইশফাঃদিচ্ছি দিচ্ছি এতো রাগ করতে হবে না।
💦💦💦💦💦💦
ইশফা,তুশি,রিধি কেন্টিনে বসে আছে।খাওয়া-দাওয়ার সাথে সাথে তাদের গল্পের ভান্ডার নিয়ে বসেছে।গল্পের মধ্যে তুশি ইশফাকে খোচাতে লাগল।কয়েকবার খোচা দেবার পর ইশফা বিরক্ত হয়ে বলল…..
—ঐ ছেড়ি কি হইছে তোর?এমন খোচাইতাছোস কেন?
তুশি সামনের দিকে ইশারা করে বলল…..
—দেখ ঐ ছেমরায় তোর দিকে কেমনে তাকাইয়া রইছে।
ইশফাঃতাকাইলে তাকাক।তাতে আমার কি?ওর চোখ দিয়া ও তাকাইছে।
তুশিঃআরে দেখনা একবার তাকিয়ে কেমন আগুন চোখে তোর দিকে তাকাইয়া রইছে।মনে হইতাছে তোরে তার চোখের আগুনে জ্বালাইয়া দিব।
ইশফাঃদিতে থাক।তাতে আমার কি।
রিধিঃআরে একবার তাকিয়ে দেখোই না চিনোস কিনা।
ইশফা ওদের কথায় বিরক্ত হয়ে উল্টোদিকে ঘুরে বলল…
—কোন ছেলেটা।
তুশিঃঐ যে দেখ হাতে বেন্ডেজ করা ছেলেটা।
ইশফা ছেলেটাকে ভালোমত দেখে ঠিক করে বসল।
তুশিঃতুই কি চিনোস তাকে?
ইশফাঃহুম।এইটারেই থাবরা মারছিলাম।
তুশিঃকিহহহ?তুই এই হ্যান্ডসাম পোলাডারে থাবরা মারছোস?
ইশফাঃএতোই যখন তোর কাছে হ্যান্ডসাম লাগতাছে এক কাজ কর তুই যাইয়া গলায় ঝুইলা পর।
তুশি ইশফার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই ইশফা বলল……
—এমনে তাকাইয়া না থাইকা তাড়াতাড়ি খাবার শেষ কর।তোর……
ইশফা আর কিছু বলার আগে সামনের দিকে চোখ পরতেই দেখলো সান,নিরব ওদের দিকে আসছে।ইশফা হিজাব ঠিক করে কেটে পরার জন্য বলল…..
—তোরা আয় আমি ক্লাশের দিকে যাচ্ছি।
ইশফা দাড়াতেই রিধি ইশফার হাত ধরে বলল….
—কই যাস তুই?এক সাথে আসছি এক সাথে যামু।
ক্লাশ শুরু হওয়ার আরো ১৩মিনিট বাকি আছে।(হাতের ঘড়ি দেখে)
ইশফাঃতাতে কি হয়েছে আমার না কিছু বই লাগবে।আমি একটু লাইব্রেরী থেকে ঘুড়ে আসি।
রিধিঃআমারও বই লাগবে ছুটির পরে এক সাথে যাওয়া যাবে।এখন চুপচাপ এখানে বসেন।
নিরব ওদের সামনে এসে বলল….
–এই যে পিচ্ছি কেমন আছো তুমি?
ইশফ রিধির দিকে একবার চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল…
— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন?
নিরব চেয়ার টেনে বসে মুচকি হেসে বলল……
—এতোক্ষন ভালো ছিলাম না।তোমাকে দেখার পর ভালো হয়ে গেছি।
ইশফা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল…..
—মানে???
নিরবঃআরে দাড়িয়ে আছো কেন?বস বস।তোমার শরীরের অবস্থা এখন কেমন?
ইশফা ভদ্রতার খাতিরে চেয়ারে বসে বলল……
— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো ।
সান এতোক্ষন পাশে দাড়িয়ে একজনের সাথে কথা বলছিলো।কথা শেষ করে ইশফার মুখামুখি হয়ে চেয়ার টেনে বসে পরল।
নিরব বসে বসে ইশফাকে এটা সেটা জিগ্যেস করতে লাগলো।ইশফা না চাওয়া শর্তেও হু হা করে তার উওর দিতে লাগলো।
মুহূর্তের মধ্যে কেন্টিন খালি হয়ে যেতে লাগলো।সবাইকে একে একে কেন্টিন থেকে চলে যেতে দেখে ইশফা বলল…….
—চল তোরা সবাই চলে যাচ্ছে।আসি ভাইয়া।
কথাটা বলে দাড়াতেই নিরব বলল……
—এতো তাড়া কিসের।বস তোমাদের সাথে কথা আছে।
ইশফা নিরবের কথা সুনে চুপচাপ বসে রইল।
একটু পর কেন্টিন পুরো খালি হতেই সান নড়েচড়ে বসে বলল….
—তো মিসঃ ইশফা খান ইফা কেমন আছেন আপনি?পেশার ঠিক আছে তো?আজ আবার ভয়ে সেন্সলেস হয়ে যেয়ো না।যে আমার গায়ে ইন ছুড়ার সাহস রাখে সে নাকি আবার আমার এক ধমকেই সেন্সলেস হয়ে যায়।
সান এর এমন পিন মারা কথা শুনে ইশফা নিজের রাগটাকে সাইডে রেখে দাতে দাত চেপে বলল…..
—তেমন কিছুই না।সাহস আমার বরাবরই একটু বেশি।
সানঃ হুম তা তো দেখতেই পারছি।সাহসের নমুনা তো আপনি দেখিয়ে দিয়েছেন।তা এবার কাজের কথায় আসি।আমার গাড়িতে শার্ট রেখেছে কে?
(সেদিন ইশফা যাওয়ার সময় সুন্দর করে একটা চিরকুট লিখে শপিং ব্যাগের সাথে লাগিয়ে সান এর গাড়িতে রেখে যায়।চিরকুট টা অবশ্য তুশি লিখে দিয়েছিল।চিরকুটে লিখা ছিল…….
“প্লিজ ভাইয়া ছোট বোন মনে করে আমার ভুল ক্ষমা করে দিবেন।শার্ট টা রেখে গেলাম।প্লিজ রাগ করবেন না।ইন ছুড়ে আপনার শার্ট নষ্ট করার জন্য নয়।ছোট বোনের পক্ষ থেকে বড় ভাইয়ের জন্য গিফট হিসেবে ।যদি ক্ষমা না করতে পারেন তাহলে রাস্তায় কোন ফকির মিসকিনকে শার্টটা দিয়ে দিয়েন।”)
ইশফা এক পলক তুশির দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বলল….
—আমি।
সানঃচিরকুটে কি লিখেছিলে?
রিধি সানের দিকে তাকিয়ে দাত কেলিয়ে হেসে বলল…..
—কেন ভাইয়া আপনি লিখা পড়তে পারেন নি?লিখাগুলো তো খুব স্পস্ট ছিল।এমনকি খুব বড় করেই লিখা ছিল।সমস্যা নেই আমার মনে আছে কি লিখা ছিল তাতে।আমি বলছি,প্লিজ ভাইয়া ছোট বোন মনে করে……
সান রিধিকে থাকিয়ে দিয়ে রিধির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল…..
—আমি উপরে যেই চিরকুট ছিল সেটার কথা বলছি না।শার্টের মধ্যে যে চিরকুট ছিল সেটার কথা বলছি স্টুপিট।
কথাটা শোনার সাথে সাথে ইশফার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।ইশফা হালকা চেচিয়ে বলল…..
—কিহহহ?শার্টের মধ্যে চিরকুট ছিল?কি লিখা ছিল তাতে?
সান ভ্রু কুচকে বলল…..
—এমন ভাব করছো মনে হয় নিজে জানোই না কি লিখা ছিল?
ইশফাঃনিজে জানলে আপনাকে আর কষ্ট করে জিগ্যেস করতাম না তাতে কি লিখা ছিল।টাইম নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি বলুন কি লিখা ছিল?
সান পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করে টেবিলের উপর রেখে রাগি গলায় বলল….
—তুমিই পড়ে দেখো কি লিখেছিলে।
ইশফা চিরকুটটা খুলে হাতের লিখা দেখতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।এই হাতের লিখা যে কার তা চিনতে তার একটুও ভুল হল না।ইশফা দ্রুত চিরকুটটা পড়তে লাগলো।চিরকুটে লিখা ছিল…….
“বাদরের গলায় মুক্তার মালা পরালে বাদরকে দেখতে যেমন লাগে আপনি এই শার্টটা পরলে ঠিক একি রকম লাগবে।অবশ্য আপনাকে আমি আপনার অগোচরে বাদর বলেই ডাকি।চাপ নিবেন না আমি না হয় বাদর ডাকি তাতে কি হয়েছে।আপনি তো জানেন আপনি বাদর না মানুষ🙃”
চিরকুট টা পড়ে ইশফা মাথা নিচু করে বসে রইল।রাগে তার চোখ,মুখ লাল হয়ে গেলো।হঠাৎ তার ফোনটা বেজে উঠার কারনে মাথা উচু করে ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করে দেখলো ফোনের স্কিনে “মি”লিখাটি জ্বলজ্বল করছে।ইশফা কলটা কেটে দিয়ে ফোনটা শব্দ করে টেবিলের উপর রাখলো।সবাই এতোক্ষন ধরে ইশফার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে।ইশফাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে সান কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই ইশফার ফোনটা আবার বেজে উঠল।সানের চোখ ইশফার ফোনের দিকে পরতেই দেখতে পেল স্কিনে উপর হার্ট সেপের একটা পিক দেয়া পিকচার ভেসে উঠেছে।যার মধ্যে সুন্দর করে ইংলিশ ফন্টে লিখা মাই লাভ।আর উপরে ইংলিশ ফন্টে “মি” লিখাটা জ্বলজ্বল করছে।ইশফা এবারো ফোনটা কেটে দিল।৩য় বার কল আসতেই ইশফা রেগে ফোন রিসিভ করে রাগি গলায় বলল….
—শয়তান,বান্দর,কুত্তা,বিলাই,টিকটিকি,গরিলা,হনুমান তোরে এখন সামনে পাইলে যে আমি কি করতাম তা আমি নিজেও জানি না।
অপর পাশ থেকে ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ পেতেই ইশফার রাগ পানি হয়ে গেল।ইশফা চিন্তিত সুরে বলল…..
—কি হয়েছে তোমার?কথা বলছো না কেন?
—……
—কি হল কথা বলছো না কেন?
—………..
—কোথায় আছো তুমি?
—বা-বাড়িতে।
— আমি এখনি আসছি।
কথা শেষ হতেই তুশি বলল……
—কিরে কি হয়েছে?কার ফোন ছিল?
ইশফাঃআসছি।পরে সব বলল।
ইশফা আর কোন কথা না বলেই তাড়াতাড়ি করে চলে গেল।সবাই ইশফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।সান চোখ মুখ কঠিন করে সামনের চেয়ারে এক লাথি দিয়ে ভেঙে গটগট করে হেটে চলে গেল।
(সান এর আবার কি হল?মিটার এমন গরম হল কেন🙄)
#চলবে,