মন গহীনে পর্ব-১৫

0
386

#মন_গহীনে

#পর্বঃ১৫

#দোলন_আফরোজ

সন্ধ্যায় বিয়ের অনুষ্ঠান হবে কমিউনিটি সেন্টার এ। বাড়ি ভর্তি মেহমান, ঘুম টাও হয়নি কারো ঠিক মতো। সবচেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে তানিয়া বেগম আর তারেক রহমান। এদিকে মেহমান দের এটেন্ট করা তার উপর কমিউনিটি সেন্টার এ বার বার খোঁজ লাগানো। তারেক রহমান কে সাহায্য করছেন উনার ভাই এর ছেলেরা। কাব্য সকাল থেকে আবিরের ওখানে। আবির আগেই বলে দিয়েছে তার সাথে বরযাত্রী যেতে হবে। কাল সারাটা দিন ও বাড়িতেই কাটিয়েছে, কিন্তু আজ আর তা চলবে না। কলিজার বন্ধুর বিয়ে বলে কথা,কাব্য বরযাত্রী হয়ে না গেলে কি হয়?

শাহানারা বেগম, অর্না,কায়েস আর হিয়া ও যাবে। উনারা ঠিক করেছেন সরাসরি কমিউনিটি সেন্টার এই যাবেন। এতো আগে আগে গিয়ে শুধু শুধুই বিয়ে বাড়িতে ভির বাড়াতে চান না।
সেলিম সাহেব এর ও যাওয়ার কথা ছিলো,কিন্তু একটা কাজ পরে গেছে তাই যেতে পারেননি।

দুপুর এর পর পর ই পার্লার এর মেয়েরা এসে সাজানোর জন্য। তিনটা মেয়ে এসেছে পার্লার থেকে। বউ এর সাথে আরো মেয়েরাও সাজবে, সন্ধ্যের আগে সাজানো কমপ্লিট করতে হবে।

বিকেল প্রায় শেষের দিকে,তমাকে সাজানো কমপ্লিট। বাকি মেয়েরা হুলুস্থুল শুরু করেছে কে আগে সাজবে। তিথী সাজতে গেলে ওর কাজিন অন্য রা বলে পিচ্চি মানুষের এতো সাজগোজ এর দরকার নাই, আমাদের আগে সাজতে দে, দেড়ি হয়ে যাবে নইলে।

খুব রাগ হয় তিথীর, ওর নিজের বোনের বিয়ে আর ওকেই কেউ পাত্তা দিচ্ছে না।
আমি মোটেও পিচ্চি না, কলেজে পড়ি। যথেষ্ট বড় হয়েছি।
আমি সাজবো না, যাও তোমরা ই সাজো, বলেই কান্না করে চলে যেতে নেয়, তখন মিলা আটকায় তাকে।

কিরে, ময়না পাখিটা রাগ করেছে কেনো শুনি?

রাগ করিনি। আমি কি রাগ করতে পারি? পিচ্চি মানুষের কি অতো রাগ আছে? বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।

মিলা মুখ গম্ভীর করে, কে বলেছে আমার ময়না পাখিটা পিচ্চি? হুম? এক্ষুনি ওকে শাস্তি দিতে হবে যে।

কাউকে কোনো শাস্তি দেয়ার দরকার নাই। আমি বিয়েতেই যাবো না, বলে আবার চলে যেতে নিলে মিলা তাকে একটা চেয়ার এ বসিয়ে বলে, কি হয়েছে আমার সোনাটার? বলনা? তোকে আপু কতো ভালোবাসে না? আপুকেও বলবি না?

কেঁদে কেটে নাক মুখ লাল করে ফেলেছে। নাক টেনে বলে, সবাই সাজছে পার্লার এর মেয়েদের কাছে, আমি সাজতে গেছি বলে আমি পিচ্চি, পিচ্চি মানুষের অতো সাজতে নেই!

যাহ পার্লার এর মেয়েরা কি আমার থেকেও সুন্দর সাজাতে পারে? হুম? আমি আমার ময়না পাখিকে সাজিয়ে দিবো, আয়।
যা ফ্রেশ হয়ে আয়। চোখ মুখ এমন লাল হয়ে থাকলে কিন্তু সাজিয়ে দিবো না আমি।

তিথী দৌঁড় লাগায় ওয়াশরুমে। ১০ মিনিট পর একদম ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে।

মিলা ওকে সাজাতে শুরু করে। প্রায় আধা ঘণ্টা পর সাজানো কমপ্লিট হলে কাব্যর দেয়া পার্পল কালার লেহেঙ্গা টা পড়ে আসে।

ওয়াও সো প্রিটি লেহেঙ্গা। বিয়ের জন্যই কিনলি?

আবির জিজু গিফট করেছে।

হুম জিজুর পছন্দ তো সেই রে।

হুম এই জন্যই তো আপুটি কে পছন্দ করেছে। বলেই দুজন হাসতে থাকে।

পুরোপুরি সাজ কমপ্লিট হওয়ার পর মিলা বলে, তোকে আজ পুরাই পুতুল লাগছে রে। আজ যে কতো ছেলে হার্ট অ্যাটাক করে কে জানে। বলে একটা নজর টিকা লাগিয়ে দেয়।
এক কাজ করি চল, আজ তোকেও বিয়ে দিয়ে দেই? বউ বউ ই লাগছে তোকে। ছোট্ট একটা পুতুল বউ। বলে জড়িয়ে ধরে মিলা।

আমার কিন্তু এখন লজ্জা লাগছে মিলাপু। তুমি বেশি বেশি বলছো।

উহুম, মোটেও না। পুরাই বার্বি লাগছে তোকে।

আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে। তুমি ফাইনাল টাচ আপ করে নাও। সবাই বেরুবে কিছুক্ষণের মাঝে।

মিলা আর তিথী যায় বাকিদের সাজার খবর নিতে। সবার সাজ ই মোটামুটি কমপ্লিট। তমাকে সাজিয়ে একটা চেয়ার এ বসিয়ে রেখেছিলো। মেরুন কালার বেনারসিতে তমাকে যা সুন্দর লাগছে। লম্বা চুল গুলো খোপা করে কানের এক পাশে তিনটা গোলাপ গুজে দিয়ে মাথায় বিয়ের ওড়না দিয়ে দিয়েছে। দুই পাশের ছোট চুল গুলো সামান্য কার্ল করে সামনে ঝুলিয়ে দিয়েছে। গোলগাল মুখ টাতে ভাড়ি বিয়ের মেকাপে পুরাই অন্যরকম সুন্দর লাগছে।

তিথী গিয়ে তমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, তোমায় অনেএএএক সুন্দর লাগছে আপুটি। আবির জিজু তোমায় দেখলে আজ মাথা ঘুরে পরেই যাবে। তবে বিয়ে করবে কি করে বলোতো? বলে চিন্তা করার ভংগী করে।

তমা ও জড়িয়ে রেখেই আরেক হাতে তিথীর মাথায় ছোট্ট করে গাট্টা মেরে বলে তাই না?
বলে সামনে নিয়ে এসে দাঁড় করায়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কিছুক্ষণ দেখে বলে, এতো না সাজলেও পারতি। কেউ একজন তোকে না দেখেই পাগল হয়ে বসে ছিলো এতো বছর যাবৎ। আজ তার কি হয় কে জানে।

তিথী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, কি বলছো? কে আমায় না দেখে পাগল হয়ে বসে আছে?

আরেহ নাহ, এমনি বললাম। অনেক সুন্দর লাগছে তোকে। একদম পাগল করা সুন্দর। বলে জড়িয়ে ধরে বলে, মিস করবো তোকে, তোর বাচ্চামো গুলো আরো মিস করবো। পড়া ফাকি দেয়ার হাজার টা বাহানা খুঁজাটাও মিস করবো। আমার নাস্তা খেয়ে ফেলাটা মিস করবো। আম্মুর বকা খেয়ে আমার কাছে এসে লুকানো টাও মিস করবো রে। হুটহাট ফুচকা, আইসক্রিম খাওয়ার আবদার করাটাও মিস করবো। মিস করবো তোর করা ছোট ছোট পাগলামো গুলো।

তিথীও শক্ত করে ধরে বলে, তোমাকেও অনেক মিস করবো আপুটি। কাকে এতো এতো জ্বালাবো এখন? কার সাথে মাঝরাতে তারা গুনতে যাবো। যেদিন হরর মুভি দেখে ভয় পাবো সেদিন কার সাথে ঘুমাতে যাবো আমি। আমার প্র‍্যাক্টিক্যাল খাতা গুলো কাকে দিয়ে করাবো এখন? একটা জিনিস নষ্ট করে কার ঘাড়ে দোষ চাপাবো এখন?
দুই বোন ই কাঁদছে।

মিলা আর অন্য কাজিন রা এসে শান্তনা দিচ্ছে। কাঁদলে সাজ খারাপ হয়ে ভুতের মতো লাগবে। পরে আবির জিজু বিয়ে না করেই পেতনী দেখে পালাবে। বলেই সবাই হুহু করে হেসে উঠে। সাথে তমা তিথী ও।

*************

সন্ধ্যা ৭ টার দিকে তমা তিথী ওদের নানু বাকি কাজিন রা আর অন্যান্য আত্নিয় স্বজন রা কমিউনিটি সেন্টার এ আসে। তমাকে স্টেজে নিয়ে বসিয়ে দেয়া হয়। সবাই ফটোশুটে ব্যস্ত।
এর মাঝে বার দুয়েক তিথীর মামাতো ভাই রনি ওকে ডেকেছিলো। যায়নি তিথী। রনির আচরণ ইদানীং তিথীর মোটেও সুবিধার লাগছে না, তাই যতোটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে চলার চেষ্টা করে।

কিছুক্ষণের মাঝেই শাহানারা বেগম রা এসে উপস্থিত হন। স্টেজে তমার কাছে গিয়ে ওর হাতে একটা ডায়মন্ড এর নেকলেস দিয়ে দোয়া করে দেয় তাকে।
তিথীকে দেখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন তিনি। মনে মনে বলেন তুই সত্যিই আমার ছেলের পুতুল বউ। পুতুল এর মতোই দেখতে তুই, সেই ছোট বেলা থেকেই।

তিথীকে হাতের ইশারায় ডাকেন উনি।
তিথী সালাম দিয়ে উনার পাশে বসে জিজ্ঞেস করে কখন এসেছেন?

উহুম, আপনি না, তুমি বলবি তুই আমায়।

তিথী ও হাসি মুখে বলে আচ্ছা। কখন এসেছো তোমরা।

এইতো কিছুক্ষণ আগে। সুন্দর লাগছে তোকে খুব।

তিথী একটা লাজুক হাসি দেয়। তারপর হিয়াকে বলে, চলো হিয়া আপু, আপুটির সাথে দেখা করবে।

হিয়াঃ দেখা করেছি।

তবুও চলো। ওখানে সবাই আছে, সবার সাথে মজা করবে চলো। বলেই হিয়াকে টেনে নিয়ে যায়।

কিছুক্ষণ এর মাঝেই বর এসে যায়। সবাই গিয়ে বর কে আটকানোর জন্য গেট ধরে। বরযাত্রীতে গেট এর সামনে কাব্য, মোহনা, পিয়াস আরো বন্ধুরা আর মাহি আরো কাজিন রা।

হৃদি, মিলা, মৌ আরো সব কাজিন রা গেট আটকে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে তিথীকে ছোট পেয়ে যতো কাজ আছে সব তিথীকে দিয়েই করাচ্ছে। তাই তিথীর আসতে দেড়ি হয়। মিষ্টি নিয়ে এসে তিথী গেট এর সামনের টেবিলে রেখে মুখ ফুলিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে থাকে।

তিথীকে দেখেই সবাই এক সাথে অই হই করে চেচিয়ে উঠে। এই যে আমাদের বিয়াইন সাহেবা এসেছেন। উনি তো কিছুটা হলেও দয়া মায়া করবেন, তাই না।

এদিকে তিথীকে দেখে কাব্য ওখানেই ফ্রিজ হয়ে গেছে। মনে মনে বলে, কে বলেছিলো তোমায় এতো সাজতে? আমায় না মারা পর্যন্ত শান্তি পাবে না তুমি।

তিথী মুখ খুলে বলে আপুরা দয়া করেছে বলেই ৫০ হাজার এ ঢুকতে দিবে বলেছে। আমি থাকলে ১ লাখ ই চাইতাম।

এই এই বিয়াইন বলে কি এইসব? এবার তুই ই কিছু বল কাব্য।

কাব্য বলাতে তিথী ওদিকে একবার তাকায়, পার্পল কালার পাঞ্জাবীতে কি অমায়িক লাগছে কাব্যকে।
মনে মনে বলে আজ তো দেখছি কাবির সিং কেউ সুন্দর লাগছে।

আমি কি বলবো, তারাতাড়ি এসব ঝামেলা শেষ কর।

অনেকক্ষণ ঝামেলার পর ৩৫০০০ টাকা নিয়ে কনে পক্ষ গেট ছাড়ে।

আবিরকে নিয়ে স্টেজে তমার পাশে বসিয়ে দেয়া হয়। আবির তো তমাকে দেখে পুরাই স্পিচলেস, বউ সাজে তমাকে অন্যরকম লাগছে।

শুরু হয় আবির তমার ফটোশুট। আবির তমার কানে কানে বলে, আমার বউ টাকে কি এতো সুন্দর ও হতে হতো? মুচকি হাসে তমা আর সেই মুহূর্তটাই ক্যাপচার করে নেয় ক্যামেরাম্যান।

এদিকে কাব্য শুধু সুযোগ খুঁজছে কখন তিথীকে সে একা পায়।

খাওয়া দাওয়া প্রায় শেষের দিকে। কিছুক্ষণ পরেই বিয়ে পরানো হবে। রনি এসে তিথীকে বলে, তিথী তোকে মিলা ডাকছে, ওই পাশের কর্নারে রুমটাতে, ওর শাড়ীটা নাকি ঠিক করতে হবে।
মিলার কথা শুনে তিথীর হিয়াকে বলে উত্তর পাশের কর্নারের রুমটাতে যায়। রুমে ঢুকে মিলাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে কয়েকবার ডাকে মিলাকে। কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। ওয়াশরুমেও উঁকি দিয়ে দেখে, সেখানেও নেই।
তাই নিজে নিজেই বিরবির কিরে বলে, শাড়ী ঠিক করে চলে গেছে হয়তো। বলে রুম থেকে বেরুতে গেলে হাতে টান পড়াতেই আচমকায় আবার নিজেকে রুমে আবিষ্কার করে সে।

ত ত তু তুমি? তুমি এখানে?

বলতে বলতেই রনি ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয়।
এই পাশটা মোটামুটি নিরব, এই পাশটাতে কেউ তেমন একটা আসে না।

কি ব্যাপার রনি ভাই, তুমি দরজা লাগাচ্ছো কেনো? বলে দরজা খুলতে গেলে রনি তিথীর হাত ধরে বলে,এতো ইশারা করছি পাত্তাই দিচ্ছিস না কেনো? সেই কবে থেকে তোকে একটু কাছে পেতে চাইছি, বুঝেও কেনো না বুঝে আছিস।

কি বলছো কি তুমি এসব? মাথা ঠিক আছে তোমার?

নাহ একদম ঠিক নেই। তোর এই হট ফিগার দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। প্লিজ একটু আদর করতে দে আমায়। বলেই কাছে আসতে নেয়।

একদম কাছে আসবে না। চেচাবো কিন্তু আমি।

চেঁচা, যতো খুশী চেঁচা। কেউ শুনবে না কিছু। একটু আদর করতে দে, বলেই এগিয়ে যেতে নেয়।

ছিহঃ এতো নোংরা তুমি? তুমি আমার ভাই হও ভাবতেও ঘেন্না লাগছে।

যাহ যাহ এতো স্বতি গিরি দেখাচ্ছিস কাকে হেহ? তোকে যে কি*ড*ন্যা*প করেছিলো, ৫ দিন আটকে রেখেছিলো কিছু না করেই ছেড়ে দিয়েছে? আমি করলেই দোষ না? মেজাজ খারাপ করাবি না। আপোষে আয়, তবে কষ্ট হবে না, আর আমায় রাগালে খুব খারাপ হবে বলে দিচ্ছি।
তিথী উপায় না পেয়ে চেঁচানো শুরু করেছে।

তিথীর চেঁচানো শুনে রনি গিয়ে তিথীর মুখ চেপে ধরে।

এদিকে তিথীকে না দেখে কাব্য অস্থির হয়ে গেছে। হিয়াকে এসে জিজ্ঞেস করে তিথী তো তোর সাথে ছিলো, কোথায় গেছে এখন?

হিয়া বলে ওর একটা কাজিন বলে মিলা ওকে ডাকছে, তাই উত্তর পাশের কর্নারের রুম টাতে গেছে।

কোন কাজিন?

ওর মামাতো ভাই মনে হয়।

এক সেকেন্ড ও আর দেড়ি করে না কাব্য। দৌঁড়ে যায় উত্তর পাশটাতে। রুম টা ভিতর থেকে লক করা। কাব্যর বুকের ভিতর টা মুচড় দিয়ে উঠে। ওদিটায় বিয়ে পড়ানো শুরু হয়ে গেছে। তিথী কি ভিততেই আছে? মিলাকেও তো সে দেখেনি। তাহলে কি সত্যিই মিলা আর তিথী ভিতরে আছে?

সে ফিরে যেতে নেয়। কিন্তু বুকের ভিতর কেমন যেনো অশান্তি লাগছে। তবুও মিলা আছে এখানে, তাই সে আর এখানে থাকতে চাইছে না। আবার যখন পা বাড়ায় ফিরে যাওয়ার জন্য তখন তিথীর চেঁচানোর আওয়াজ শুনতে পায়।

রনির চেঁচানোর আওয়াজ ও শুনতে পায়। তুই আমার হাতে কামড় দিলি? এবার দেখ কি করি তোর। বলেছিলাম আপোষে আয়, এবার এমন অবস্থা করবো তোর নিজেই কল্পনা করতে পারবি না। লজ্জায় কাউকে বলতেও পারবি না।

দ্রুত পায়ে দরজার কাছে যায় কাব্য। দরজার হ্যান্ডেল ঘুড়িয়ে দরজা খুলার চেষ্টা করে আবার। না পেরে তিথীকে ডাকে। তিথী যেই উত্তর দিতে যাবে তখন ই রনি ওর মুখ চেপে ধরে।

কারো কোনো আওয়াজ না পেয়ে কাব্য দরজায় বার বার কড়া নাড়তে থাকে। কোনো আওয়াজ নেই ভিতর থেকে। কিন্তু সে স্পষ্ট তিথীর গলা শুনেছে,সাথে রনির ও।

দরজা ভাংগার জন্য জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছে আর লাথি দিচ্ছে।ভিতর থেকে ধস্তাধস্তির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। কাব্যর ভিতর টায় তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। সে তার সর্বশক্তি দিয়ে দরজাতে লাথি দিচ্ছে আর তিথীকে ডাকছে। কাব্যর কাছে হিয়া ও এসে দাঁড়ায়। প্রায় অনেকক্ষণ পর হুট করেই ভিতর থেকে দরজা খুলে যায়, আর সাথে সাথে তিথী কাব্যর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে।

এদিকে রনি প্রচন্ড রকম ঘামছে। সব জানাজানি হয়ে গেলে কি হবে সেই চিন্তায় তার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

তিথী কোনো কথা বলতে পারছে না, খুব কাঁপছে আর কান্না করছে। কার বুকে আছে তার ও হুস নেই তার।

কাব্যর চোখ দুটো দিয়ে যেনো আগুন বেরুচ্ছে। তার মাথায় খুন চেপে গেছে। সামনে থাকা মানুষ টাকে এই মুহূর্তে খুন না করলে সে কিছুতেই শান্তি পাবে না।
হিয়াকে ইশারাতে তিথীকে ধরতে বলে তিথীকে তার বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে আক্রমণ করে রনির উপর।
এলোপাতাড়ি ভাবে মারতে থাকে রনিকে। রনির ঠোঁট কেটে অনেক আগেই রক্ত পড়া শুরু হয়। এখন তো সারা মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে।
রনির হাত টা উল্টো দিকে এমন ভাবে ধরে যেনো এক্ষুনি ভেঙে যাবে।
রনি কিছু বলতে চাইছে কিন্তু সেই সুযোগ আর দিচ্ছে না কাব্য। পুরো পাগল হয়ে গেছে সে।

কু* ত্তা*র বাচ্চা। খুন করে ফেলবো তোকে। যাকে প্রজাতির মতো আগলে রেখেছি আমি, কোন সাহসে ওর দিকে হাত বাড়াস তুই। বলেই হাত টা আরো চেপে ধরে। কিছু বলবে রনি, ব্যথার চোটে আর বলতে পারে না।
এই নোংরা চোখ দিয়ে তাকিয়েছিস তুই তিথীর দিকে? এই চোখ ই আমি তোলে ফেলবো।

অবস্থা বেগতিক দেখে হিয়া তিথীকে দাঁড় করিয়ে রেখে শাহানারা বেগম আর তানিয়া বেগম কে ডাকতে যায়। ওদের এদিকে এভাবে দৌঁড়ে আসতে দেখে কয়েকজন পিছু পিছু আসে তাদের।

শাহানারা বেগম কাব্য কে এভাবে দেখে সরাতে নেয় ওকে।
ছাড় কাব্য, মরে যাবে ও।

মেরেই ফেলবো ওকে।

এদিকে তানিয়া বেগম কে দেখে তিথী মায়ের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে। তানিয়া বেগম মেয়েকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে।

কায়েস, অর্না এসে দুজন দুদিক থেকে ধরে কাব্য কে। কায়েস বলে পাগল হয়ে গেছিস তুই? ছাড় ওকে। মরে যাবে।

ছেড়ে দিয়ে বলে, হ্যাঁ হ্যাঁ পাগল হয়ে গেছি আমি। ওর সাহস কি করে হয় তিথীর দিকে নোংরা চোখে তাকানোর।

এদিকে বিয়ে বাড়ির প্রায় সব মানুষ ই জড়ো হয় এখানে। তমা এসে জড়িয়ে ধরে তিথীকে। আবির এসে কাব্য কে ঠান্ডা করার চেষ্টা করে।

রনির মা বাবা ও এসে হাজির হয়। ছেলে কে এই অবস্থায় দেখে রনির মা কাব্য কে কড়া কথা শুনাতে থাকে।
কাব্য উলটে ক্ষেপে গিয়ে বলে তার ছেলে কি কুকির্তি করতে চেয়েছিলো।

রনির মা রেহানা বেগম বলে, আমার ছেলে ভুল কি করেছে? কি*ড*ন্যা*পা*র রা ৫ দিন আটকে রেখেছিলো কি এমনি এমনি? আর আমার ছেলে কিছু কিরলেই দোষ? এ মেয়ের কেচ্ছা সবাই জানে, সবাই বলাবলি করে এসব। এ মেয়ের জন্য আমরা মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারি না।

রেহানা বেগম এর কথা শুনে সবাই চরম লেভেলের অবাক হয়। রনির বাবা বলে, কি বলছো তুমি এসব? মাথা ঠিক আছে তোমার? তুমি আমাদের মেয়ে সম্পর্কে এরকম বাজে কথা কি করে বলছো?

তিথীর নানু রেহানা বেগম কে কড়া কথা শুনায়। এতে উনি দমে যায়নি।

ভুল কি বলেছি? এই মেয়েকে তো জীবনে বিয়ে দিতে পারবে না।লোকে সারাক্ষণ ই আড়ালে বলে, ওকে তো আর এমনি এমনি ছেড়ে দেয়নি।

রনির বাবা বলে, যেমন মা তেমন ই তার ছেলে।

কাব্য চেঁচিয়ে বলে, আমি তিথীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম। আর কেউ যদি একটা নোংরা কথা বলে তিথীর নামে আমি এখানে রক্তের বন্যা বইয়ে দিবো।

দুই একজন ছাড়া কাব্যর কথায় সবাই অবাক হয়। সবাই কানাঘুষা করতে থাকে। কাব্য রেহানা বেগম কে বলে আপনার আর আপনার ছেলের কপাল ভালো ও এখনো বেঁচে আছে।

তারেক রহমান আর তানিয়া বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলে, এই মুহূর্তে তিথীকে বিয়ে করবো আমি।

অবাক হয় তানিয়া বেগম। কি বলছিস এসব? এখন কি করে সম্ভব? তাছাড়া তিথীর বয়স ও হয়নি বিয়ের।

এতো কিছু শুনতে চাই না আমি। আমার তিথীকে চাই, আর এখন, এই মুহুর্তে। আমি ওকে নিয়ে আর কোনো রিস্ক নিতে চাই না। যা কিছুদিন পর হতো তা এখন হবে।
শাহানারা বেগম কায়েস কাব্য কে বুঝাতে চাইছে, কিন্তু সে বুঝতে নারাজ।
আর কিছু শুনতে চাই না, তোমার বিয়ের আয়োজন করো, আমি বাইরে আছি। বলেই সে বাইরে বেরিয়ে যায়।

তিথী কে কি*ড*ন্যা*প করার কাহিনি কারণ সহ সবটা সবাইকে বলে আবির।

কিন্তু আবির নিজেও অবাক কাব্য তিথীকে বিয়ের কথা বলাতে।

কাব্য বাইরে বসে আছে,তাকে ঘিরে আছে তার সব বন্ধুরা। একপাশে দাঁড়িয়ে আছে মোহনা। সবটা সবার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আবির আসে সেখানে। আবিরের মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে, যা কদিন পর হবে তা আজ হচ্ছে, সমস্যা কি তাতে। তার মানে…..

কাব্যর পাশে বসে কাব্যর পিঠে হাত রেখে বলে, তিথী ই কি তোর পুতুল বউ?
কাব্য শুধু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে।

মোহনার আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা নেই। তার পক্ষে সম্ভব না এখানে দাঁড়িয়ে কাব্যর বিয়ে দেখার।

বিয়ের আয়োজন বলতে তেমন কিছু ই না। তমা আবিরের বিয়ে হয়ে গেছে। তিথী কিছুতেই রাজি হচ্ছে না বিয়ে করতে। যেই কাব্য তাকে তুলে নিয়ে গেছিলো সেই কাব্য কে কিভাবে সে ক্ষমা করবে? যার জন্য পদে পদে তার হেনস্তা হতে হচ্ছে সে কিছুতেই তাকে বিয়ে করবে না।




চলবে