মন গহীনে পর্ব-৩১ এবং শেষ পর্ব

0
581

#মন_গহীনে

#অন্তিম_পর্ব

#দোলন_আফরোজ

তিথীর প্রেগন্যান্সির ৬ মাস চলে। এই ৬ মাসে মুড সুইং কি জিনিস তা হারে হারে টের পেয়েছে কাব্য। হুটহাট রাত বিরেতে আইসক্রিম ফুচকা খাওয়ার বায়না ধরে সে। একদিন রাত দুটোয় হঠাৎ ই ঘুম থেকে উঠে বলে আইসক্রিম খাবে। দুর্ভাগ্যক্রমে সেদিন ফ্রিজে আইসক্রিম ছিলো না, আর এই রাত দুটোয় কাব্যর ছুটতে হয় আইসক্রিম এর খুঁজে।

আরেকদিন হঠাৎ ই রাত সারে ১০ টায় বলে ফুচকা খাবে। এতো রাতে তো আর ফুচকা পাওয়া যায় না। তাই তিথী সহ চলে যায় ফুচকা ওয়ালার বাড়ি আর সেখানে গিয়ে কাব্য নিজে ফুচকা বানিয়ে খাওয়ায় তাকে। এতো কিছুর পর ও তখন তিথী তৃপ্তি করে সেই ফুচকা খেয়েছে তা মুগ্ধতার সাথে উপভোগ করে কাব্য। সে তো তিথীর এই তৃপ্তি টুকুই দেখতে চায়।

আরেকদিন তিথীর আবদার সে পোড়া মাটির গন্ধ নিবে। আর এই পোড়া মাটির গন্ধের জন্য তিথীকে নিয়ে যায় অদূরে ইটের ভাটায়।প্রেগন্যান্সিতে তিথীর এই পাগলামি আবদার গুলো পূরণ করেও যেনো কাব্য খুশী। পরম তৃপ্ত। কারণ তিথী যে তাকে সবচেয়ে বড় সুখের সাথে দেখা করানোর জন্য প্রতিনিয়ত নিদারুণ কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছে।

হুট হাট অকারণেই রাগে যায় তিথী, আর এই ভালো। ভালো হলে ভালোর সীমা থাকে না।সব মুখ বুজেই সহ্য করে যাচ্ছে কাব্য। কিন্তু বিপত্তি তখন ই বাধে, তিথী হঠাৎ ই কাব্য কে সহ্য করতে পারে না, কাছে এলেই বলে তোমার গায়ে কেমন ছেলেদের মতো গন্ধ,আমার বমি পাচ্ছে খুব। প্রথমে কাব্য হাসে।

আরেহ আমি ছেলে মানুষ তো কি আমার গা থেকে মেয়েলী স্মেল বেরুবে নাকি?
বলেই কাছে এসে জড়িয়ে ধরতে নেয়, তখন ই তিথী চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে বলে গোসল করে আসো না। সত্যি সত্যিই বমি হয়ে যাবে আমার।

আমি কিছুক্ষণ আগেই গোসল করেছি সোনা।

গন্ধ লাগে তো। বাবুদের মতো ফেস করে।

অসহায় চোখে তাকিয়ে কাব্য বলে, সত্যিই আবার গোসল করতে হবে?

প্লিজ।

না পেরে কাব্য গোসল করে আসে। দুই এক মিনিট থেকে আবারো তিথীর গা গুলিয়ে উঠে৷ বমি বমি পাচ্ছে। কাব্যর গায়ের স্মেলটা যেনো সে সহ্য ই করতে পারছে না। এভাবে একদিনেই ৫/৬ বার গোসল করতে হয় কাব্য কে। এমনটা কিছুদিন চলে।

দিনে ৫/৬ বার গোসল করেও তিথীর দেখা পায় না কাব্য। কাছেই ঘেঁষতে দেয় না। সব সহ্য করতে পারে কাব্য, তবে তিথীর থেকে দূরে থাকাটা মোটেও না। তাই সে তিথীর গাইনোকোলোজিস্ট ড.শেহনাজ এর সাথে যোগাযোগ করে।

ম্যাম তিথী তো আমায় কাছে ঘেঁষতেই দেয় না। আমায় দেখলেই বমি করে ভাসিয়ে দেয়। আমার গায়ের স্মেট টা নিতে পারে না।

এসব মুড সুইং এর জন্য ই হচ্ছে। এমনি ঠিক হয়ে যাবে।

অতো কিছু বুঝি না, কবে ঠিক হবে আমি সেই আশায় বসে থাকতে পারবো না।আপনি তারাতাড়ি কোনো ঔষধ দেন,যাতে আমার কাছে আসতে আর কোনো সমস্যা না হয় তার। মুড সুইং টুড সুইং যাই হোক, সব মানতে পারবো, কিন্তু তিথীর থেকে দূরে থাকতে পারবো না আমি।

এবার হাসেন ড. শেহনাজ। বুঝতে পারেন কাব্যর অস্থিরতা। কিন্তু এ রোগের কি ঔষধ দিবেন উনি।

এরকম আরো কিছুদিন যাওয়ার পর এমনি ঠিক হয়ে যায় তিথী। তখন আবার এমন হয় কাব্য কে ছাড়া কিছুই বুঝে না সে। সারাক্ষণ কাব্যর বুকে মুখ গুজে বসে থাকে। নিজের কাজের জন্য অফিসে পর্যন্ত যেতে পারেনি সে। বাসায় বসেই ল্যাপটপ এ কাজ করেছে আর তিথী বিড়াল ছানার মতো তার গাঁ ঘেঁষে বসে রয়েছে। এতেও যেনো পরম শান্তি, দূরে তো আর নেই।

মাতৃত্বকালীন শারিরীক পরিবর্তন নিয়ে তিথী খুব চিন্তায় পড়ে যায়। একরাতে কাব্যর বুকে পরে সে কি কান্না।
আমি তো আর আগের মতো নেই, কতোটা মোটা হয়ে গেছি। দেখো না কেমন কালো ও হয়ে গেছি, আর পেটেও ফাটা দাগ হয়েছে।আর ভালোবাসবে না তুমি আমায়। দেখতে বিশ্রী হয়ে গেছি আমি।

এবার কাব্যর ভারী রাগ হয়। আমি কি তোমার সৌন্দর্য দেখে তোমায় ভালোবেসেছি? আমার ছোট্ট পুতুল বউ কে তো আমি আমার কল্পনার রঙে রাঙিয়েছি তাই না? তবে কেনো এখন এ কথা বলছো, হুম?

আমাকে বাবা হওয়ার সুখ দিবে বলে তুমি এতো সেক্রিফাইজ করছো, প্রতিনিয়ত এতো কষ্ট করছো, আর তুমি অসুন্দর হয়ে গেলেই আমি আর তোমায় ভালোই বাসবো না? এটা তোমার ভাবনাতে এলো কি করে।

তিথী কাব্যর বুকে মুখ গুজে কাঁদছে। সারাজীবন এভাবেই ভালোবেসো প্লিজ। তোমার থেকে এক মুহুর্তের জন্য ও দূরে থাকতে পারবো না আমি।

শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এই বুকের মাঝে আগলে রাখবো তোমায়।

দিন যতো কাছে আসছে তিথীর শরীরের অবস্থা ততো খারাপ হচ্ছে। পায়ে পানি এসে গেছে। হাটা চলা করতেও এখন কষ্ট। আর শুয়ে তো থাকতেই পারে না।সারারাত ছটফট করে কাটে তার। আর তার সাথেই নির্ঘুম রাত কাটে কাব্য র। কাব্য শুধু পারছে না তিথীর কষ্ট গুলো ভাগ করে নিতে। যদি পারতো তবে তার পুতুল বউ কে আর এভাবে কষ্ট পেতে দিতো না।

ডেলিভারি টাইম একদম কাছেই চলে এসেছে। কাব্য তিথীর কষ্ট দেখে দেয়েছিলো সিজারিয়ান করিয়ে ফেলতে। ড. শেহনাজ ই বলেন বেবির পজিশন ঠিক আছে, নরমাল ডেলিভারি পসিবল। আর সিজারিয়ান খুব ভালো জিনিস না। এটা একটা মানুষ কে সারাজীবন এর জন্য পঙু করে দেয়। এজ এ ডক্টর আমি কখনোই অযথা কাউকে সিজারিয়ান করানোর পরামর্শ দিবো না।

প্রায় ভোর রাতের দিকে, সারারাত তিথী কাব্য দুজনেই জেগেছে। তিথীর পা ব্যথা করছিলো বলে কাব্য সারারাত ই তিথীর পা টিপে দিয়েছে। তিথীর চোখ লেগে এলে কাব্য ও তার পাশে ঘুমিয়ে পড়ে। ভোর রাতে তিথীর ঘুম ভাংগে তলপেটে চিনচিনে ব্যথায়। কাব্য তখন গভীর ঘুমে। তিথী তাই আর তাকে ডাকেনি, নিজেই কষ্ট করে ওয়াশরুমে যায়। ওয়াশরুম থেকে খুব কষ্ট করে ফিরে এসে কাব্যকে ডাকে। ঘুম ঘুম চোখে তাকায় কাব্য। কি হয়েছে? খুব কষ্ট হচ্ছে সোনা?

ওয়াটার ব্রেক করেছে।

মুহূর্তেই কাব্যর ঘুম উবে যায়। অস্থির হয়ে গেছে সে। কি করবে যেনো মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তিথীকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ছুটে যায় মায়ের ঘরে।
কাব্য ডাকে শাহানারা বেগম দরজা খুলতেই তিথীর কথা শুনার পর সেলিম সাহেব ড্রাইভার কে ফোন করে বলে তারাতাড়ি গাড়ি বের করতে। সারাটা রাস্তা কাব্য তিথীর হাত ধরে বসে আছে। ব্যাথার পরিমাণ টা ধীরে ধীরে বাড়ছে। তিথীর চিৎকার কাব্যর ভিতর টা যেনো পুড়িয়ে দিচ্ছে। অস্থির হয়ে যাচ্ছে সে। কি করে তিথীর কষ্ট কমানো যায়। কিছুক্ষণের মাঝেই হস্পিটালে পৌঁছে যায় তারা। তিথীকে একটা কেবিনে রাখা হয়েছে। তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করছে সে। এদিকে কাব্য বার বার ড.শাহনাজ কে ফোন করেই যাচ্ছে।
হস্পিটালে তখন সাথে সাথেই সেলিম সাহেব শাহানারা বেগম, কায়েস আর অর্না এসেছিলো। এতোক্ষণে তারেক রহমান ও তানিয়া বেগম ও এসে উপস্থিত হন। প্রাণ প্রিয় মেয়ের চিৎকার তারেক রহমান সহ্য করতে পারেননি বলেই উনি কিছুটা দূরে সরে যায়। এদিকে কাব্য একজন নার্স এর সাথে কথা বলছে ড. শেহনাজ কখন আসবেন আর সিজার করিয়ে ফেলবে নাকি।

তখনই তিথী চিৎকার করে উঠে। কি ভেবেছিস কি? বউটা তো মরে যাবে তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আগে ভাগেই এই নার্স কে পটাচ্ছিস না? কোনো দিন হতে দিবো না তা, মরে গিয়েও ভুত হয়ে তোর ঘাড়ে চেপে বসবো তবু অন্য কারো হতে দিবো না তোকে।

কাব্য ছুটে এসে তিথীর মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে। কি বলছো কি এসব সোনা? এখন এসব কথা বলে না। আর তোমার বিকল্প শুধু তুমি ই। ভুলেও এসব ভেবো না।

তবে কেনো ঐ মেয়েটার সাথে কথা বলতে গেছিলে?

অসহায় চোখে তাকায় নার্সটার দিকে। আমি তো তোমার ব্যাপারেই কথা বলতে গেছিলাম সোনা।

দরকার নেই কথা বলার। তুমি শুধু আমার কাছে থাকো।

এইতো আমি তোমার কাছে। খুব কাছে তোমার। বলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তিথীকে।

নার্স টা সহ রুমের অন্যরাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এতোটা লেবার পেইন নিয়েও কিভাবে এটা মাথায় আসতে পারে নিজের বর অন্য মেয়ের সাথে কথা বলছে। ভালোবাসা সত্যিই অদ্ভুত। কতোটা ভালোবাসা থাকলে তাকে হারানোর ভয় ও এতোটা জেকে ধরে।

সাড়ে ৮ টার দিকে ড. শেহনাজ আসে। ৯ টার দিকে তিথীকে নরমাল ডেলিভারি করানোর রুমটাতে নিয়ে যাওয়া হয়। তখনো তিথী কাব্যর হাত টা শক্ত করে ধরা ছিলো। হাত টা ছেড়ে যাওয়ার সময় বার বার মনে হচ্ছিলো, যদি আর ফিরে না আসি। আর যদি দেখতে না পাই প্রিয় মানুষ টার মুখটা।
কাব্যর হাত টা আরো জোরে চেপে ধরে বলে, তুমি প্লিজ চলো।

কাব্য ও ড. শেহনাজ কে রিকোয়েস্ট করে তিথীর সাথে থাকার। ড. শেহনাজ ই থাকতে দেয়নি। রুমের সামনে পায়চারি করছে কাব্য। তানিয়া বেগম শাহানারা বেগম দোয়া ইউনুস পড়ছে। কিছুটা দূরে সেলিম সাহেব আর তারেক রহমান। কায়েস অর্না পাশাপাশি বসে আছে।

এক একটা সেকেন্ড কাব্যর ভয়ানক যন্ত্রণায় কাটছে। কখন লাঘব হবে তিথীর কষ্ট সে শুধু তার ই প্রহর গুনছে। এতোটা কষ্ট তিথীর হবে জানলে সে কক্ষনো বাচ্চা ই চাইতো না। যেই কষের ভাগ সে বিন্দুমাত্র নিতে পারেনি সেই কষ্ট টা তার ছোট্ট পুতুল বউ একা সহ্য করছে।
প্রায় পৌনে ১০ টার দিকে নার্স একটা ফুটফুটে বাবু নিয়ে বেরুয় রুম থেকে। সবাই ছুটে যায় সেখানে। শাহানারা বেগম আগে কোলে নেয় বাবুকে। কোলে নিয়েই কেঁদে দেয় উনি। সেলিম সাহেব এর কোলে দিয়েই সেলিম সাহেব বাবুর কপালে চুমু খায়। পরপর সবাই কোলে নিয়ে যখন কাব্যর কাছে আসে কাব্যর সামনে ধরে বাবুকে সে তখনও কেমন ফ্রিজ হয়ে আছে। কাব্যর কোলে দিতে নিলেই নার্স কে জিজ্ঞেস করে, তিথী?

ভালো আছে, ম্যাম বের হওয়ার কিছুক্ষণ পর যেতে পারবেন ওখানে।

কাঁপা হাতে বাবুকে কোলে নেয় কাব্য। কাব্য বাবুকে কোলে নিতেই নার্স বলে, ইট’স এ বেবি বয়। একদম আপনার কার্বন কপি।

কাব্য খুটিয়ে খুঁটিতে দেখতে বাবুকে।কি সুন্দর ছোট ছোট হাত। ছোট্ট একটা নাক। মে মে করে কাঁদছে। তা দেখতেও যেনো ভালো লাগছে।

নার্সটা বলে বাবুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। তাই নিতে গেলে কাব্য নিজেই নিয়ে যায় তিথীর কাছে।
বেডে শুয়ে আছে তিথী। ফর্সা মুখ টা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। বেডের পাশে একটা টুল টেনে বাবুকে নিয়ে বসে কাব্য। বাবুকে তিথীর পাশে শুইয়ে দিয়ে তিথীর কপালে একটা গভীর চুমু খায়।ধন্যবাদ আমাকে পরিপূর্ণ করার জন্য।

খুশী হয়েছো তুমি?

এবার চোখের পানি ছেড়ে দেয় কাব্য।

তিথী হাত বাড়িয়ে অনেক কষ্টে বাবুকে আদর করে দেয়।

****************

দুদিন পর হস্পিটাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় তিথীকে। কিন্তু একি মহা বিপদ। নিজের ঘরে কাব্য নিজেই থাকতে পারছে না। বাবুকে নিয়ে তার দাদী আর নানী থাকবে।

এ কেমন কথা মা? আমার বউ, আমার বাচ্চা, আর ওদের নিয়ে থাকবা তোমরা? ইট’স নট ফেয়ার।গাল ফুলিয়ে বলে কাব্য।

দেখেছো তানিয়া, ছেলে আমার৷ কেমন নির্লজ্জ হয়েছে। মা শ্বাশুড়ির সামনে কি সব কথা বলছে।

ভুল বলিনি কিছু। আমি আমার বউ বাচ্চা নিয়ে থাকবো ব্যস।

তানিয়াঃ জেদ করিস না বাবাই। ২ দিনের বাচ্চা, না তুই পারবি সামলাতে না তিথী পারবে। একটু বড় হোক না রব বাবা

পারবো চাচী, প্লিজজজ।

অনেক বুঝানোর পর তারপর কাব্য রাজি হয় আলাদা থাকতে। কিন্তু তার মন তো পড়ে আছে ও ঘরেই।

এভাবে প্রায় ২৫ দিন পার হয়ে যায়। কাব্য দিনের বেলা খেলে বাবুর সাথে। তিথীর সাথে সময় কাটায়, তবে ভিতর টা যেনো ফাঁকা ই রয়ে গেছে।নাহ এভাবে আর না। আমার ঘরে আমায় ফিরতেই হবে।

এদিকে হিয়া এসেছে পিয়াসকে নিয়ে, বাবু দেখতে। আর থাকবেও কদিন। এখনই সুযোগ কাব্যর নিজের ঘরে ফিরে যাওয়ার।

এর মাঝে তমা আবির ও কয়েকবার এসেই বাবু দেখে গেছে।তানিয়া বেগম নিজ বাসায় ফিরে গেছেন, তারেক রহমান একা থাকেন তাই।

তাই তিথীর সাথে এখন শাহানারা বেগম আর হেনা বেগম থাকে।শাহানারা বেগম রান্না করছে, কাব্য আজ সারাদিন ই শাহানারা বেগম এর পিছু পিছু ঘুরঘুর করছে, আর একি কথা বলছে, মা আমার ঘরটা আমায় ফেরত দাও না।শুরুর দিকে পাত্তা দেয়নি শাহানারা বেগম, কিন্তু এখন বিরক্ত হয়েই উনি বলেন ঘর চাইছিস ঘর পাবি, ঘরের মানুষ পাবি না বলে রাখছি।

উহুম, মানুষ সমেত ঘর চাই মা। আজ ২৭ দিন বউ ছাড়া আমি, নিজের ছেলেটার সাথেও একরাত ঘুমাতে পারিনি। অসহায় মুখ করে।

ছেলের কান্ড দেখে হেসে দেন শাহানারা বেগম। আচ্ছা যা তোর ঘর মানুষ সমেত তোকে দিয়ে দিলাম।

মাকে জড়িয়ে ধরে কাব্য।যেনো আসমানের চাঁদ পেয়েছে হাতে।

রাতের বেলা তিথীকে বার বার করে বুঝিয়ে সব বলে দেয় শাহানারা বেগম, আর বলেন যদি কোনো অসুবিধা হয় আর বাবু বেশি কান্না করে তবে যেনো উনাকে ডাকে।
কাব্য কে বলেন ঘুমালেই কান খাড়া রাখবি। বাবু কখন কান্না করে না করে। তিথী এখনো পুরোপুরি সুস্থ না। ও ঘুমিয়ে গেলে অনেক সময় টের পায় না, তখন তোর ই কিন্তু বাবুকে দুধ বানিয়ে খাওয়াতে হবে।

আচ্ছা পারবো পারবো। চিন্তা করো না তুমি। কাব্য এক্সাইটেট হয়ে আছে নিজের বউ বাচ্চা নিয়ে ঘুমানোর।

শাহানারা বেগম নিজেই সব গুছিয়ে দিয়ে যান। তিথী বাবুকে ঘুম পাড়াচ্ছে। শুতে এসে তো কাব্যর চক্ষু চড়কগাছ। তিথী কাব্যর বিছানা দুইদিকে, মাঝখানটাতে বাবু। সে আসতে করে বাবুর বিছানাটা একপাশে নিজে বাবু আর তিথীর মাঝখানে নিজে শুয়ে পরে।

তিথী চোখ রাংিয়ে। কি হলো এটা?

কি হবে আবার? কিছুই তো হয়নি। কাব্য এমন ভাব করছে যেনো কিছুই হয়নি।

বাবুকে ওপাশে নিলে কেনো?

আমি আমার বউ ছাড়া কখনো ঘুমাইনি, তাও এতোদিন ঘুমালাম। তবে এখন আর না।

তাই বলে বাবুকে ঐ পাশে নিবে? আমার পাশটায় দাও না।

আমি আমার বাবু ছাড়াও ঘুমাতে পারবো না। দুজনকে দু বাহু তে নিয়ে ঘুমাবো আমি।

যায়, রাতে উঠে খাওয়ার জন্য কান্না করবে তো।

তখন আমিই নাহয় তোমার কাছে দিবো, খেয়ে আবার নিজের যায়গায় চলে আসবে।

তাই হয় নাকি।

হুম তাই হবে। বাচ্চাদের মতো আবদার করে।

কাব্যর মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয় তিথী। আচ্ছা আচ্ছা, যাও তাই হবে।

তিথীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, কপালে চুমু দিয়ে,ভালোবাসি পুতুল বউ, খুব ভালোবাসি। ধন্যবাদ আমাকে আরেকটা ছোট্ট পুতুল উপহার দেয়ার জন্য।

তিথী ও কাব্য কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আজ কতোদিন পর কাব্যর সান্যিধ্য পেলো।এই বুকটাতেই তো তার সব শান্তি নিহিত। কখনো ভাবেনি যাকে এতোটা ঘৃণা করতো তাকে এতোটা ভালোবেসে ফেলবে।আসলে তাও হয়েছে কাব্যর জন্য ই। কাব্যর #মন_গহীনে যে তিথীর জন্য এতোটা ভালোবাসা লুকিয়ে রেখেছিলো সেই ভালোবাসায় ধরা দিতে তো তিথী বাধ্য।

কিয়ানের বয়স প্রায় ১ বছর হতে চল্লো। হুম কাব্যর ছেলে কিয়ান। গুটিগুটি পায়ে হটে এখন। মাঝে মাঝে পরে যায় অবশ্য। এখনি বুঝা যায় এটিটিউড পুড়াই বাবার মতো। আর চেহারাটাও কাব্যর। শুধু মায়ের মতো বদরাগী হয়েছে।

সকলের আদরের মধ্যমণি কিয়ান।দাদা দাদী তো চোখে হারায় তাকে। আর কিয়ানের বাবার পড়ে সবচেয়ে পছন্দের মানুষ তার বড়বাবা,মানে কায়েস। অর্নাই কিয়ানের দেখাশোনা করে বেশি। কারণ তিথী প্রথম বার কোনো এডমিশন টেস্ট এ অংশগ্রহণ করতে পারেনি তাই দ্বিতীয় বার তাকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। আর পরিশ্রমের ফল ও পায় সে। জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটিতে Law and Justice বিভাগে চান্স হয় তার। সেই সুবাদেই কিয়ানের দিকে অর্নার বেশি খেয়াল রাখতে হয়।
আর সবচেয়ে খুশির খবর অর্না আড়াই মাসের প্রেগন্যান্ট।




সমাপ্ত।