মন গহীনে পর্ব-৩০

0
451

#মন_গহীনে

#পর্বঃ৩০

#দোলন_আফরোজ

আজ থেকে তিথীর এইচ এস সি এক্সাম শুরু। এই কদিন যাবৎ পড়ার অনেক চাপ যাচ্ছে তার। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া ও করতে পারেনি। তাই শরীর ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কাব্য সেদিন রাতে জোর করেই নিজ হাতে খাওয়াতে বসে, অল্প একটু খেয়েই বমি করে একাকার। বুঝতে আর বাকি নেই না খেয়েদেয়ে পড়াশোনা করে গ্যাস্টিক বাধিয়েছে। এ নিয়ে অনেক রাগ ও করে কাব্য।
এক্সাম কি আর মানুষ দেয় না। দুনিয়াতে কি তুমি একাই এক্সাম দিবে যে খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে নিজের শরীর এর খেয়াল না রেখে শুধু পড়বে।

যদি A+ না পাই তবে আমার কতো অপমান হবে জানো? ভালো কোনো ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারবো না। আমার Lawyer হওয়ার স্বপ্ন ও কখনো পূরণ হবে না।

আমার বউটা A+ পাবে ইনশাআল্লাহ। এই পরিশ্রম কি বৃথা যেতে পারে? জড়িয়ে ধরে।
তবে হ্যাঁ শরীরের প্রতি খেয়াল না রেখে শুধু পড়াশোনা করলে হবে না। এটা কিন্তু মানবো না আমি বলে দিচ্ছি।

আচ্ছা বাবা আচ্ছা, ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবো, নিজের যত্ন নিবো তারপর পড়বো, ঠিক আছে এখন?

কপালে চুমু দিয়ে, হুম একদম ঠিক আছে।

এদিকে তমার একটা ফুটফুটে ছেলে বাবু হয়েছে ৬ মাস আগে। বাবুটা আবিরের কার্বন কপি। কি যে কিউট হয়েছে।
তিথীর এক্সাম এর আগের দিন তমা আবির এসেছিলো বাবুকে নিয়ে, তিথীর সাথে দেখা করতে আর দোয়া করে দিতে। আর এক্সাম এর দুদিন আগেই তিথী বাবা মার সাথে দেখা করে এসেছে।

আজ প্রথম পরিক্ষার দিন কাব্য নিয়ে যাচ্ছে তিথীকে। তিথীর মনে পড়ে যায় এসএসসি প্রথম এক্সাম এর কথা। সেদিন ও কাব্য ই নিয়ে গেছিলো। কিন্তু তখন মানুষ টাকে কতো অপছন্দ করতো সে। আর সম্পর্ক টাও ভিন্ন ছিলো। আর আজ সেই মানুষ টাই তার বর, যাকে এক মুহূর্ত না দেখলে চোখে হারায় সে।

প্রায় ১০ মিনিট যাবৎ বাইক নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছে কাব্য, আর বার বার হর্ন দিচ্ছে। তিথীর সবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে বেরুতে টাইম লাগে একটু। সেলিম সাহেব বাসায় ছিলো না, ফোন করে দোয়া নেয়। বেরুনোর আগে আব্বু আম্মুর সাথেও ফোনে একবার কথা বলে নেয়। তাই দেড়ি হয়ে যায়।

এক্সাম শেষ হলে এক্সাম দিতে যাবেন নাকি ম্যাডাম?

এতো কথা রেখে তারাতাড়ি চলো।

বাব্বাহ, নিজে দেড়ি করে আবার আমাকেই রাগ দেখাছে। বলে বাইক স্টার্ট দেয়।

তিথীর আর ৩ টা এক্সাম বাকি। এর মাঝে বাকি কদিন বাসার গাড়ি নিয়েই এক্সাম হলে গেছে। কাব্য বিজনেস এর জন্য সময় বের করতে পারেনি। তবে খুব চেষ্টা করেছে এক্সাম শেষে নিজে গিয়ে তিথীকে পিক করার। কোনো কোনো দিন হয়ে উঠেছে, কোন দিন হয়নি।

তিথীর এর মাঝে, মাঝে মাঝেই গা গুলিয়ে বমি আসে, আর শরীর টার বেশ দুর্বল হচ্ছে দিন কে দিন। খুব করে খাওয়ার চেষ্টা করেও পেরে উঠছে না। খাবার দেখলেই বমি আসে। কাব্য কে বলেনি কিছু, বললে আবারো বকাবকি শুরু করবে। বাসার কাউকেই বলেনি। খামোখা টেনশন করবে। এইতো আর ৩ টা এক্সাম আছে, এক্সাম শেষ হলেই কয়েকদিন জিরিয়ে নিবে, এখন এই কদিনের পরিশ্রম ই ভালো ফল এনে নিতে পারে।শরীর এর কাছে হার মেনে নিলে রেজাল্ট ভালো হবে না যে তা ভালোই জানে সে।

টোটাল ১৩ টা এক্সাম। ১০ নাম্বার পরিক্ষার দিন পরিক্ষার শুরু থেকেই শরীর টা খুব খারাপ লাগছিলো। বার বার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। কোনো মতে ৩ ঘন্টার পরিক্ষা ২ ঘন্টায় শেষ করে খাতা জমা দেয়ার কথা বলে। কিন্তু এক্সাম শেষ হওয়ার ১ ঘন্টা আগে খাতা জমা নেয়ার নিয়ম নেই তাই তিথীকে নিজ যায়গায় অপেক্ষা করতে বলা হয়। তিথীও উপায় না পেয়ে নিজ যায়গায় বসে অপেক্ষা করতে থাকে এক্সাম শেষ হওয়ার। আর পারছে না সে বসে থাকতে, কষ্ট হচ্ছে খুব, তাই নিজ যায়গায় ই হেড ডাউন দিয়ে বসে আছে। হঠাৎ ই মুখ ভর্তি করে বমি পায় তার আর গড়গড় করে বমি করে সব ভাসিয়ে দেয়। আর বমি করে শরীর নিস্তেজ হয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়।

টেনশনে পরে যায় পরিক্ষার হলে থাকা পরিদর্শক রা। কয়েকজন স্টুডেন্ট বলে শুরু থেকেই দেখছিলো আজ মেয়েটার শরীর খারাপ, তাই হয়তো খাতা জমা দিতে চেয়েছিলো। একজন পরিদর্শক বলেন, একবার বললেই হতো শরীর খারাপ লাগছে।
উনারা গার্ডিয়ান এর নাম্বার খুঁজে যখন তখন তিথীর বান্ধবী কাব্যর নাম্বার দেয়। কাব্য কে ফোন করার ১৫ মিনিটের মাঝে এসে উপস্থিত হয় সে। এখনো জ্ঞান আসেনি তিথীর। অস্থির হয়ে ফোন দেয় ড্রাইভার কে। বাসায় ফোন করে জানানোর সাথে সাথেই কায়েস ওর অফিস থেকে সোজা চলে আসে তিথীর এক্সাম সেন্টারে। এতোক্ষণ যাবৎ কাব্য তিথীর হাত পা ডলে দিচ্ছিলো আর বার বার গালে মুখে হাত দিয়ে ডাকছে তিথীকে। তার নিজেরই মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে, কি থেকে কি হয়ে গেলো। তিথী এতোটা অসুস্থ কি করে হয়ে গেলো। তিথীর হাত ধরে সে নিজেই ছোট বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করে। এদিকে টিচার্সরুমে ভির জমে যায়। আর এক্সাম ও এতোক্ষণে শেষ হয়ে যাওয়ার স্টুডেন্ট রাও উঁকিঝুঁকি শুরু করে দিয়েছে।

কায়েস এসে দেখে কাব্য নিজেই কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।পাগল হয়ে গেছিস তুই? কি শুরু করেছিস বাচ্চাদের মতো, হ্যাঁ? তারপর কাব্যই কোলে করে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে।
সারা রাস্তা কাব্য শুধু একটা কথা ই বলছে, কি হয়ে গেলো ভাই আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, এতোটা অসুস্থ ও কবে থেকে হলো আর আমি জানলাম ও না।

কিচ্ছু হয়নি তিথীর, ডাক্তার এর কাছে নিলেই দেখবি একদম ভালো হয়ে গেছে, চিন্তা করিস না তুই।

কিছুক্ষণের মাঝেই ওরা হস্পিটালে পৌঁছে যায়। হস্পিটালে পৌঁছানোর পর কর্তব্যরত ডাক্তার কিছু টেস্ট করাতে দেয়। টেস্ট এর রিপোর্ট গুলো গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ড. শেহনাজ ম্যাম এর কাছে নেয়া হয়। কায়েস কাব্য বাইরেই অপেক্ষা করছে। তিথীকে একটা কেবিনে নেয়া হয়েছে।ওখানেই ওকে একটা ইঞ্জেকশন দেয়া হয়েছে আর সাথে স্যালাইন।

রোগীর হাসবেন্ড কে ম্যাম ভিতরে যেতে যেতে বলেছে।

তখন কাব্য অনেকটা ছুটেই ড. শেহনাজ এর চেম্বারে যায়।

বসুন মি. শাহরিয়ার কাব্য। আপনাকে এতো অস্থির দেখাচ্ছে কেনো? খানিকটা হেসে বলেন ড.।

ম্যাম তিথীর কি অবস্থা? এনিথিং সিরিয়াস?

নাথিং সিরিয়াস। আপনি বাবা হতে চলেছেন। হেসে।

থমকে যায় কাব্য। বড় বড় চোখ করে অবাক হয়ে তাকায় ডাক্তার এর দিকে।

ডাক্তার আবার বলে, হুম আপনি ঠিক ই শুনেছেন, শী ইজ নাইন উইক প্রেগন্যান্ট।

এ কি করে সম্ভব? বিরবির করে বলে কাব্য।
আমি তো প্রোটেকশন ইউজ করেছিলাম।

যাকে আল্লাহ দিবে তাকে আমি আপনি চেয়েও আটকাতে পারবো না মি. কাব্য। আল্লাহ চেয়েছে বলেই ও আপনাদের না চাওয়া সত্ত্বেও দুনিয়াতে আসতে চলেছে।

বাট শী ইজ ওনলি ১৭+ ম্যাম। ইজ’ন্ট ইট রিস্কি?

হুম, রিস্ক কিছুটা থাকে। বাচ্চা বাচ্চার মা দুজনেই পুষ্টি হীনতায় ভুগতে পারে এতে। এতে করে বাড়ির লোকের অনেক বেশি যত্নশীল হতে হয়। প্রোপার কেয়ার পেলে আল্লাহর রহমতে কিছু হবে না। আর আপনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে আপনি আপনার স্ত্রী কে অনেক ভালোবাসেন।আপনার স্ত্রীর যত্নের কমতি রাখবেন না তা বুঝায় যাচ্ছে।

এবার মনে খানিকটা সাহস পায় কাব্য। আসলে তার ভয় টা ছিলো তিথী কে নিয়ে। কারণ তিথী নিজেই এখনো বাচ্চা।
নো ম্যাম, আমি ২৪ ঘন্টা ওর নার্সিং করবো।

আর হ্যাঁ উইকনেস থেকে সেন্সলেস হয়ে গেছিলো। খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করেনি হয়তো। এই দিক টা দেখবেন। আর ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। কিছুক্ষণের মাঝেই জ্ঞান আসবে ওর। দেখা করে নিতে পারেন।

কাব্য আরো ২/১ টা কথা বলে ড. শেহনাজ এর চেম্বার থেকে বেড়িয়ে যায়। বেরিয়ে দেখে বাইরে সেলিম সাহেব, শাহানারা বেগম, তারেক রহমান, তানিয়া বেগম সবাই উপস্থিত। কাব্য বেরুতেই সবাই ওকে ঘিরে ধরে ডাক্তার কি বলেছে জানতে, আর তিথীর কি অবস্থা এখন।

কি বলবে কাব্য কিছুই বুঝতে পারছে না। আর কি করেই বা বলবে।
কাব্য চুপ করে আছে দেখে ভয় পেয়ে যায় সবাই। তানিয়া বেগম কাব্যর বাহুতে ঝাকিয়ে বলে, কিছু বলছিস না কেনো? টেনশন হচ্ছে খুব। খারাপ কিছু কি?
শাহানারা বেগম বলে, দেখ খোকা, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আমার, বলনা।( কাব্য কে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে)

কাব্য আমতা আমতা করে বলে, তুমি দাদী হচ্ছো মা।
সবাই যেনো একসাথে থমকে যায়। একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। শাহানারা বেগম সেলিম সাহেব এর কাছে গিয়ে বলে, খোকা কি বল্লো শুনেছো? বলেই কান্না করতে করতে সেলিম সাহেব এর বুকে লুটিয়ে পড়ে। আমি দাদী হবো, শুনেছো তুমি?

সেলিম সাহেব এর ও চোখে পানি এসে গেছে। উনি হাসতে হাসতে বলে আর আমি দাদা হবো।

কায়েস এসে কাব্য কে জড়িয়ে ধরে কংগ্রেস জানায়। তার নিজের ও চোখে পানি। এটা সুখের পানি নাকি দুঃখের তা বলা মুশকিল।
বাবা হতে পারিনি তো কি হয়েছে, জেঠু তো হবো, নাকি বলিস?

কাব্য কায়েস কে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে এভাবে বলিস না ভাই। আল্লাহ আমাকেও খুব শীগ্রই কাকু ডাক শুনাবে তুই দেখিস। মলিন হাসে কায়েস।

তানিয়া বেগম খুশিতে কেঁদেই চলেছেন। তার পিচ্চি তিথী ও নাকি মা হবে। ভাবা যায়।
তারেক রহমান এর দুচোখ ভিজে উঠে।

সবার খুশিতেও কাব্য খুশী হতে পারছে না। সে তিথীকে কি করে ফেস করবে। কারণ সামনে তিথীর ভার্সিটি এডমিশন টেস্ট আছে। আর তিথীর ভালো কোনো পাবলিক ভার্সিটি তে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা। তাদের এখন এমন কোনো প্ল্যান ছিলো না
আর সবচেয়ে বড় কথা তিথী নিজেই এখনো বাচ্চা।

সবাই মিলে ডিসিশন নেয় কাব্য নিজেই জানাবে তিথীকে।
কিছুক্ষণের মাঝেই জ্ঞান ফিরে আসে তিথীর। কেবিনে ঢুকে চুপচাপ তিথীর হাত ধরে বসে আছে কাব্য। তিথীর ফর্সা মুখটা কেমন মলিন হয়ে আছে। হাতের উল্টো পিঠে একটা চুমু দিয়ে বলে, আমাদের ভালোবাসায় যদি কেউ ভাগ বসাতে আসে তুমি কি করবে তখন?

ভ্রু কুঁচকায় তিথী। হঠাৎ ই শোয়া থেকে উঠে কাব্যর কলার চেপে ধরে বলে, আগে ঐ মেয়েকে মারবো, তারপর তোকে খুন করে নিজে মরে যাবো। চোখ দিয়েই যানো লাভা বের হচ্ছে।

উচ্চ স্বরে হাসে কাব্য। কাব্যর হাসিটা তিথীর কাছে আগুনে ঘি ঢালার মতো লাগে। কলার আরো চেপে ধরে বলে, মেরে দাঁত ভেঙে দিবো।
কি ভেবেছিস, বউ তো অসুস্থ, আরেকটা জুটিয়ে নেই, না? অসুস্থ হয়ে মরে গেলেও তোর পিছু ছাড়বো না, ভুত হয়ে তোর ঘাড়ে চেপে বসবো।

এতো টা হিংসে, আমাদের মাঝে কাউকে আসতে দিতে?

আমি মরে গেলেও তোর আর আমার মাঝে কাউকে আসতে দিবো না।

আর সে যদি তোমার আমার অংশ হয় তবে?

তাকেও না। বলে বড় বড় শ্বাস নেয় তিথী। কাব্যর বলা শেষের কথাটা আরেক বার ভাবে সে। হঠাৎ ই চিৎকার করে কাব্য গলা জড়িয়ে ধরে।
কি বললে তুমি? আরেকবার বলো?গলা জড়িয়ে রেখেই।

এবার কাব্য শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তিথী কে। হ্যাঁ সোনা, আমাদের পূর্নতা দিতে ছোট্ট একটা প্রাণ আসছে। বলে কাব্য নিজেই চোখের পানি ছেড়ে দেয়। নিজেকে আজ সব দিক থেকে পরিপূর্ণ লাগছে।

অনেকক্ষণ পর তিথী কাব্য কে ছাড়ে। নিজের পেটে হাত রেখে, কাব্যর দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকায়। কাব্য ও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। আবারো কাব্য কে জড়িয়ে ধরে সে। কেউ কোনো কথা বলতে পারছে না। দুজনই চুপ করে আছে। কিছুক্ষণ পর বাড়ির সবাই কেবিন ঢুকে। সবাই তিথীর মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দেয়। তানিয়া বেগম মেয়ের সারা মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বসে আছে।

স্যালাইন শেষ হলে তিথীকে নিয়ে সবাই বাড়ি চলে আসে।নতুন অতিথির আগমনের খবর শুনে পুরো বাড়ি আগেই কায়েস এসে সাজিয়ে রেখেছিলো। তিথীকে আজ নতুন করে নতুন রুপে বরণ করে ঘরে তোলা হয়।
তিথী বাড়ি এসেছে ২৪ ঘন্টার ও বেশি সময় হয়ে গেছে। এর মাঝে অর্না একবার ও বাইরে আসেনি। এমনকি খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত করেনি। কায়েস রুমে খাবার নিয়ে গেছে তবু খায়নি। শাহানারা বেগম পর্যন্ত খাবার নিয়ে গেছে, তবু খায়নি সে। আসলে কায়েস অর্নার বিয়ের ৭ বছর পার হয়ে গেছে,এখনো ওদের কোল ভরেনি।

তিথী যায় অর্নার রুমে। শেফালী কে বলে সে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর যেনো খাবার দেয় অর্নার ঘরে।

ভাবি বড় ভাবি রাগ করবো, শুধু শুধু যাইয়েন না ওইখানে।

তিথী রাগ করেই বলে, তোমাকে যা বলেছি তাই করো।

মন খারাপ করে শেফালী, আইচ্ছা।

আসবো ভাবি।

অর্না শুয়ে ছিলো। কাল থেকে কেঁদে কেঁদে মাথা ব্যথা হয়ে গেছে। কড়া গলায় বলে, না।

না করা সত্বেও তিথী ঘরে আসে। এসে অর্নার বিছানায় বসে। এ বাড়িতে আসার পর থেকে আজ ই প্রথম সে এই রুমে এসেছে। চারদিক টায় একবার চোখ বুলিয়ে দেয়। সুন্দর করে পুরো ঘরটা গোছানো। আর সব অত্যাধুনিক জিনিসে সাজানো ঘরটা। দেখেই বুঝা যায় উচ্চ রুচি সম্পন্ন মানুষ অর্না।

তিথী ওর বিছানায় বসাতে উঠে বসে রাগান্বিত হয়ে বলে, আসতে মানা করলাম না তোমায়।

তিথী হুট করেই অর্নার হাত চেপে ধরে, ভাবি তুমি এতোটাই অখুশি হয়েছো যে নাওয়া খাওয়া সব ছেড়ে দিয়েছো? আমাকে তোমার এতোটাই অপছন্দ?

চুপ করে আছে অর্না।

আমি যদি মা হই, তুমিও তো বড় মা হবে ভাবি।

এবার আর অর্না চুপ করে থাকতে পারলো না। হু হু করে কেঁদে ওঠে।

তিথী অর্নাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি ছোট বোন মনে করে ক্ষমা করে দাও না ভাবি, তবু নিজেকে এভাবে কষ্ট দিও না। আমি মানতে পারবো না এটা।

এবার অর্না তিথীকে জড়িয়ে ধরে। আমি শুধু শুধু তোমাকে ভুল বুঝেছি। ছোট হলেই তোমার মন টা অনেক বড়। আমাকে ক্ষমা করে দাও তিথী। শুধু শুধু ই আমি তোমাকে হিংসে করেছি। তুমি সত্যিই ভালোবাসা পাওয়ার মতোই একটা মেয়ে।

তখনই শেফালী খাবার নিয়ে আসে, এসে ওদের একজন আরেকজনকে জড়িয়ে রাখতে দেখে হা হয়ে আছে।
খাবার টা রেখে ও দৌড়ে গিয়ে শাহানারা বেগম আর হেনা বেগম কে বলে পুরো ঘটনা টা।

তিথী খাবার নিয়ে নিজ হাতে খাইয়ে দেয় অর্নাকে। আমার সাথে রাগ করে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিলে হবে বলো?

তোমার সাথে রাগ করিনি। নিজের দুর্ভাগ্যের উপর রাগ করেছি।

আমার সন্তান কি তোমার না? তুমি কি ওকে নিজের মনে করবে না?

আবারো অর্না তিথীকে জড়িয়ে ধরে। তোমার মনটা অনেক বড়, তুমি জীবনে অনেক বড় হবে দেখো।
আমার নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে, তোমার মতো জা রূপি বোন পেয়েছি।

তিথী অর্নার চোখ মুছে দিয়ে বলে, তোমার মনটা অনেক ভালো, তা কি তুমি জানো?

হাসে অর্না, তোমার মতো না।




চলবে….