মায়াবিনী পর্ব :৩+৪

0
830

#মায়াবিনী
সুরমা
পর্ব :৩+৪

বিকালে অপূর্ব অফিস থেকে বের হয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে কিছু খেয়ে নেয়।সারাদিন না খেয়ে তো বেচারা খুব দুর্বল হয়ে গিয়েছে।অপূর্ব একটা খাদক।একটু পর পর তার খিদে লাগে।আর যখন খাওয়া শুরু করে ইচ্ছে মতো খায়।খাওয়াদাওয়া শেষ করে সে নিজের কিছু জিনিস কিনার জন্য মার্কেটে আসে।মার্কেটে ডুকেই অপূর্বের নজর যায় একটা শপের দিকে।যেখানে সুপ্তি কিছু জামা সিলেক্ট করছে।এই মুহূর্তে অপূর্ব নিজের কাজের কথা ভুলে গিয়ে সুপ্তির কাছে চলে আসে।সুপ্তির পেছনে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলে,,,,,
-মিস পেত্নী,ভালো আছো?সুপ্তি পেছনে তাকিয়ে অপূর্বকে দেখে সারা শরীর জ্বলতে শুরু করে।এই ছেলেটা কিছুতেই তাঁর পিছু ছাড়ছে না।যেখানে যাচ্ছে সেখানেই হাজির হয়।এই মুহূর্তে সুপ্তির ইচ্ছে করছে অপূর্বের গলা টিপে মেরে ফেলতে।অসহ্যকর লোক একটা।সুপ্তি রাগি গলায় আস্তে করে বলে,,,,,
-আপনি এখানেও আমার পিছনে এসেছেন??
-আমি পিছনে কোথায়?তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি দেখছো না?
-দেখুন…
-এই না,এটা শপিং মল।এখানে কিছু দেখানোর দরকার নেই।সুপ্তি রেগে গিয়ে অপূর্বের গলা চেপে ধরে একটু জোরে বলে,,,,আমি তোকে শেষ করে ফেলবো শয়তান।সুপ্তির কথা শোনে তখন পাশে থাকা একটা লোক বলে,,,,
-আপু কি সমস্যা?এই ছেলেটা কি আপনাকে ডিস্টার্ব করছে?করলে বলুন,আমি দেখছি।ছেলেদের জন্য মেয়েরা বাইরে বের হতে পারছে না। লোকটার কথা শোনে সাথে সাথে সুপ্তি অপূর্বের গলা ছেড়ে দেয়।অপূর্ব নিজের শার্টটা ঠিক করে নিয়ে বলে,,,
-আরে ভাই কিছু না।এটা আমাদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার।আপনি যান।নিজের কাজ করুন।অপূর্বের কথা শোনে সুপ্তি হা করে অপূর্বের দিকে তাকিয়ে থাকে।লোকটা অপূর্ব আর সুপ্তিকে ভালো করে দেখে বলে,,,
-স্বামী -স্ত্রীর ব্যাপার হলে শপিং এ এসে এতো নাটক করছেন কেন?আজকাল কার ছেলেমেয়েদের বুঝি না।এরা যখন তখন যেখানেসেখানে রোমাঞ্চও করতে পারে আবার ঝগড়াও লাগতে পারে।আজব!!
বলে লোকটা চলে গেলে অপূর্ব বিশ্বজয় করার মতো একটা হাসি দিয়ে বলে,,,,
-মুখটা বন্ধ করো।নয়তো শপিং এর সব পোকা তোমার মুখের মধ্যে ডুকে যাবে।
-আপনি লোকটাকে মিথ্যা কথা বললেন কেন?
-কোনটা মিথ্যা বললাম???
-আপনি লোকটাকে বললেন কেন আমরা স্বামী স্ত্রী??
-এটা না বললে লোকটা তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে একটা ডিল মারতো।আর তাছাড়া তুমি নিজেই বলেছিলে আমি পেত্নীর জামাই।আর আমি জানি,তুমি হলে এক নাম্বার পেত্নী। তাই তো আমাকে তোমার জামাই মনে করেছি।
-লোকটা আমাকে ডিল মারতো না।বরং আপনাকে নিয়ে ফুটবল খেলতো।
-হিহিহি,সেই জন্যতো বলছি।আমাকে মারলে তুমি তো সহ্য করতে পারতে না।হয়তো জ্ঞান হারিয়ে আমার উপর এসে পড়তে।আর আমি চাইনা তোমার মতো একটা হাতি এসে আমার গায়ের উপর পড়ুক।তাই তো এটা বললাম।
-আমি হাতি???
-ঠিক হাতি নও।তবে তোমাকে হাতির একটা ছোটখাটো বাচ্চা বলা চলে।
-অহহহহহহ!আমি আপনাকে,,,, আপনাকে…
-ভালোবাসো?আমি জানি।তোমাকে মুখে কিছু বলতে হবে না।সুপ্তি বুঝতে পারছে,ঐ অসভ্য লোকটাকে এভাবে শায়েস্তা করা যাবে না।এর জন্য নিখুঁত ভাবে কিছু করতে হবে।সুপ্তি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,,,
-দেখুন,সব সময় ঝগড়া করতে ভালো লাগে না।আগে যা হয়েছে বাদ দিন।আপনি এসে যখন পড়েছেন তখন আমার একটা হেল্প করবেন?প্লীজ?সুপ্তির কথা শোনে অপূর্বর খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে।অপূর্ব বলে,,,
-এভাবে বলার কি আছে?আমিতো দুপায়ে দাঁড়িয়ে আছি।বলো কি করতে হবে?
-আসলে দুদিন পর আমার এক ফ্রেন্ডের বিয়ে।সেই জন্য মার্কেট করতে এসেছিলাম।কিন্তু কিছুই সিলেক্ট করতে পারছি না।আপনি আমার সাথে থেকে একটু হেল্প করবেন??
-আরে এতে এতো রিকোয়েস্ট করার কি আছে?আমি রাজি চলো।অপূর্ব সুপ্তির সাথে যায়।সুপ্তি মার্কেটের প্রায় অর্ধেক কাপড় সিলেক্ট করে।অপূর্ব সুপ্তির সাথে ঘুরতে ঘুরতে হাঁপিয়ে উঠে।সে একপাশে গিয়ে বসে যায়।সুপ্তি হঠাৎ তাকিয়ে দেখে অপূর্ব নেই।একটু পিছিয়ে এসে দেখে অপূর্ব বসে আছে।সুপ্তি অপূর্বের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
-কি হলো?এখানে বসে পড়লেন কেন??
-আমি আর পারছি না।আমি এখানে বসি তুমি মার্কেট করো।
-তা বললে কি করে হবে?আমিতো সিলেক্ট করতে পারি না।
-আমিতো শুধু পিছন পিছন ঘুরছি।নিজের জিনিসতো নিজেই পছন্দ করছো সব।আমাকে কি একবারো জিজ্ঞাসা করছো কোনটা নিবে?তাহলে আমি সাথে সাথে অযথা ঘুরবো কেন?আমি যাবো না।
-আপনি কেন বুঝতে চাইছেন না?আপনি সাথে থাকলে আমার চোখে সব সুন্দর লাগে।কই এর আগে তো একটাও কিছু কিনতে পারি নি।
-আমি আর পারবো না।আমার পা ব্যথা করছে।
-আপনি এতো লুতুপুতু কেন?আমি একটা মেয়ে হয়ে এখনো স্টং আর আপনি ছেলে হয়ে কেমন মেয়েদের মতো করছেন।
-এই একদম আমাকে বাজে কথা বলবে না।আমি যথেষ্ট স্টং।আর আল্লাহ জানে মেয়েরা কি করে এতো মার্কেট করে।আর কতো কি কিনবে?তারচেয়ে মার্কেট টা সাথে করে নিয়ে চলো।
-এতো কথা না বলে চলুন।সুপ্তি অপূর্বকে জোর করে নিয়ে যায়।সুপ্তির খুব মজা লাগছে অপূর্বের এমন নাজেহাল অবস্থা দেখে।সুপ্তি মনে মনে বলে,,
-চান্দু, আজ তুমি হারেহারে বুঝবে এই সুপ্তি কি জিনিস।তোমাকে যদি নাকানিচুবানি না খাইয়েছি তাহলে আমার নামও সুপ্তি না।সুপ্তি ইচ্ছা মতো মার্কেট করে।বেচারা অপূর্বের অবস্থা কে দেখে।সারা শরীর ঘেমে গেছে।চুল গুলো এলোমেলো হয়ে গেছে।শার্টের অবস্থাও কাহিল।এর আগে কখনও এমন অবস্থায় পড়ে নি সে।আজ যা হলো,বেঁচে থাকলে আর কোনোদিন মেয়েদের নিয়ে মার্কেটে যাবে না সে।অবশেষে মার্কেট শেষ করে তারা বিল পেমেন্ট করতে যায় রিসিপশনে।অপূর্ব ব্যাগ টানতে টানতে আরো শেষ।সুপ্তি রিসিপশনে বলে,,,,
-আমার বিল স্লিপটা দেন প্লীজ।
-ওয়েট ম্যাডাম।দুমিনিট পর লোকটা বলে,,,,
-ম্যাম,আপনার ৬২৩০০ টাকা বিল।
-ওহ,আচ্ছা।সুপ্তি অপূর্বর দিকে তাকিয়ে বলে,,,
-বিলটা পেমেন্ট করো।সুপ্তির কথা শোনে অপূর্ব নিজের আশে পাশে তাকিয়ে দেখে তার সাথে কেউ নেই।তারপর সুপ্তিকে জিজ্ঞাসা করে,,
-কাকে বলছো বিল দেওয়ার জন্য?
-কেন?এখানে কি তুমি ছাড়া আর কেউ আছে??
-না,এই জন্যতো বলছি কাকে বলছো।
-তোমাকে বলছি।তাড়াতাড়ি বিল পেমেন্ট করো।বাসায় যাবো।লেট হয়ে যাচ্ছে।সুপ্তির কথা শোনে অপূর্ব সপ্তম আকাশ থেকে ধুপ করে মাটিতে পড়লো।অপূর্ব হাত থেকে সব গুলো ব্যাগ ফেলে দিয়ে বললো,,
-আমি ঢাকা দিবো কেন?মার্কেট করেছো তুমি।টাকা দিলে তুমি দিবে।
-তুমি আমার স্বামী তাই তুমি টাকা দিবে।দাও বলছি নয়তো আমি কান্না করে দিবো।
-বা বা,ভালোই তো।করো কান্না করো।আমারতো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নাই তোমার মার্কেটের টাকা দিবো।আর কিসের স্বামী?আমি তোমার স্বামী না।এএএ,মামার বাড়ির আবদার।একটু ফান করে বলেছিলাম বলে নিজেকে আমার স্ত্রী ভেবে বসে আছে।নিজের চেহারাটা আয়নায় দেখেছো?তোমার মতো পেত্নীকে জঙ্গলের বানরও বিয়ে করবে না।আমিতো অনেক দূর।অপূর্বের কথা শোনে সুপ্তি সত্যি সত্যি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করে দেয়।সুপ্তির কান্না দেখে অপূর্ব আবুল হয়ে যায়।সে হা করে সুপ্তির দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।১মিনিটে লোকজন তাদের ঘিরে ফেলে।একটা লোক সুপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,,
-ম্যাডাম কি হয়েছে?এই লোকটা কি আপনার সাথে অসভ্যতামি করেছে?আমাদের বলুন,দেখুন কি অবস্থা করি এর।উচিত শিক্ষা দিবো।এসব বখাটে ছেলেরা মেয়েদের পিছন সব সময় লেগে থাকে।আপনি শুধু বলুন আপনার সাথে কি করেছে।তারপর দেখুন কি করি আমরা।লোকজনের কথা শোনে অপূর্ব ঘাবড়ে যায়।সে তাড়াতাড়ি বলে,,,,
-না না ভাই।বিশ্বাস করুন আমি কোনো অসভ্যতামী করি নি।উনিতো এমনি কান্না করছেন।আর একজন লোক বলে,,,,
-আপনি চুপ করুন।ম্যাডাম কে বলতে দিন।কি হলো ম্যাডাম বলুন কি হয়েছে।সুপ্তি চোখ কচলিয়ে নাক টানতে টানতে বলে,,,
-দেখুন না,বিয়ের পর আজ প্রথম মার্কেটে এসে কিছু কিনলাম।এখন বলছে সে বিল পেমেন্ট করতে পারবে না।
-উনি আপনার স্বামী??
-হু,
-এই মিয়া,বউয়ের মার্কেটের টাকা দিতে পারবেন না তাহলে বিয়ে করলেন কেন?তাড়াতাড়ি বিলটা পেমেন্ট করুন।
-আজব তো?আমি কেন বিল পেমেন্ট করবো?আমি উনার স্বামী না।উনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।অপূর্বের কথা শোনে সুপ্তি ন্যাকা কান্না আরো বেড়ে যায়।সুপ্তি বলে,,,
-এই কয়টা টাকার জন্য আমাদের এতোদিনের পবিত্র সম্পর্ক টা তুমি অস্বীকার করতে পারলে??আব্বু গো,আম্মু গো দেখে যাও তুমি কার হাতে তোমাদের আদরের মেয়েকে তুলে দিয়েছিলে। সামান্য কয়টা টাকার জন্য সে আমাকে অস্বীকার করলো।সুপ্তির কথা শোনে আর একজন লোক বললো,,,
-আপনিতো খুব খারাপ লোক মশাই।একটু আগেও তো আমাকে বললেন এ আপনার স্ত্রী। এখন অস্বীকার করছেন??আপনি বিল পেমেন্ট করবেন নাকি আমরা সবাই আপনাকে কেলাবো??সবাই মিলে অপূর্বকে এমন ভাবে চেপে ধরে যে বেচারা সবার যাঁতাকলে পড়ে কেঁদে দেওয়ার মতো অবস্থা।সুপ্তি একটু ভাব নিয়ে বলে,,,,,
-না না।আপনারা কেউ আমার স্বামীকে মারবেন না।ওর কিছু হলে আমি বাঁচবো না।থাক আমার লাগবে না শপিং। আমি সব ফিরিয়ে দিচ্ছি।
-না ম্যাডাম।আপনি কিছু ফেরত দিবেন না।এই যে মশাই,দেখে তো দুধের শিশু মনে হচ্ছে।কিন্তু ভেতরে শয়তানের নানা।এতো ভালো একটা স্ত্রীকে এভাবে কাঁদাচ্ছেন?লজ্জা করে না আপনার?তাড়াতাড়ি বিল দিন।নয়তো আপনাকে পুলিশের হাতে তুলে দিবো।কয়েক মিনিটে শপিং মল গরম হয়ে যায়।অপূর্ব বাধ্য হয়েই বিল পেমেন্ট করে।সুপ্তি ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে বাইরে চলে আসে।অপূর্ব বের হয়ে প্রায় কান্না করার মতো অবস্থা। অপূর্ব রাগে দুঃখে নিজের চুল টানতে থাকে।আর বলতে থাকে,,,,,,
-আল্লাহ গো,কেমন মেয়ের পাল্লায় পড়েছি।আমার এক মাসের সেলারি শেষ।এখন বাসায় আব্বু তো আমার হাতে বিন্দাবনের টিকিট ধরিয়ে দিবে।অপূর্বের এমন অবস্থা দেখে সুপ্তি ডানা মেলে উড়তে থাকে।একটা টেক্সি ডেকে নিয়ে সেটায় সব গুলো ব্যাগ রেখে একটু অপার্বের কাছে এসে বলে,,,,
-কি? কেমন লাগলো?আরো আসবে আমার পিছনে লাগতে?অপূর্ব সুপ্তির দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে বলে,,,,
-শয়তানী, ডায়নী,পেত্নী,তিত করলা,আমি তোকে ছাড়বো না।এর প্রতিশোধ আমি নিয়েই ছাড়বো।অপূর্বের কথা শোনে সুপ্তি জিভ বের করে দেখিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যায়।অপূর্বও নিজের বাসায় চলে আসে।

চলবে——

#মায়াবিনী

সুরমা
পর্ব : ৪

অপূর্ব সুপ্তিদের বাসার সামনে নেমে যায়।মন খারাপ করে আনমনে হাঁটতে থাকে।সুপ্তিতো আজ সেই রকম খুশি।তার আনন্দ ধরে রাখতে পারছে না।সে বাসায় এসে লুঙ্গি ড্যান্স গান ছেড়ে দিয়ে নাচতে শুরু করে।অপূর্বকে এবার উচিত শিক্ষা দিয়েছে।হঠাৎ সুপ্তির নজর বাইরে যেতেই দেখে অপূর্ব রাস্তা দিয়ে আনমনে হেঁটে যাচ্ছে।অপূর্বের অবস্থা এখন একটা ফকিরের মতো মনে হচ্ছে।শার্টের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে কতোদিন যাবত ইহা ব্যবহার করছে।তার উপর চুল গুলো আর চুলের জায়গায় নেই।মুখের ফেইসটা বাঁধিয়ে রাখার মতো।সুপ্তি সাউন্ড বক্সটা বন্ধ করে ব্যালকুনিতে এসে বলে,,,
-হ্যালো মিস্টার চামছিকা,আপনার অবস্থা এমন হলো কি করে?সুপ্তির কথা শোনে অপূর্ব উপরে তাকিয়ে দেখে সুপ্তি হাসছে।সুপ্তিকে এভাবে হাসতে দেখে অপূর্বের রাগ উঠে যায়।অপূর্ব রাগি গলায় বলে,,,,
-শেওড়াগাছের পেত্নী,আমি তোমাকে হাতে পাই।দেখবে অপূর্ব কি জিনিস।
-হিহিহি,তাই নাকি?আরো আমার পিছনে লাগার ইচ্ছা আছে?একদিনেই তো ফকিরের অবস্থা হয়েছে।
-আমি যদি এই টাকা সুদে আসলে না তুলতে পেরেছি তাহলে আমার নাম অপূর্ব না।
-তাই নাকি?তাহলে চেষ্টা করে দেখুন?তবে মনে রেখো, এখন তো শুধু টাকা নিয়েছি।এরপর যদি আবার ভুল করেও আমার পিছনে লাগতে এসেছো তো দেখো।তখন তোমার প্যান্টশার্ট খুলে রেখে দিবো।হুম।
-ছি ছি,তোমার নিজের লজ্জাশরম নেই বলে কি আমারও লজ্জাশরম নেই নাকি।তুমি আবার কিছু দেখাতে চাইলে আমি দেখতে রাজি আছি।তবে আমি এভাবে কিছু দেখাতে পারবো না।তবে তোমার যূি একান্তই মন চায় দেখতে তাহলে….. ।অপূর্বের কথা শোনে সুপ্তি একদম সোজা হয়ে যায়।মুখটা ককাঁচুমাচু করে আস্তে বলে,,,
-স্টুপিড। কি বেশরম ছেলে।সুপ্তি তাড়াতাড়ি নিজের রুমে ডুকে যায়।অপূর্ব সুপ্তির এমন মুখ দেখে হাসতে হাসতে শেষ।তারপর সেও নিজের বাসায় চলে আসে।দরজায় কলিং বেল বাজালে অপূর্বের মা এসে দরজা খুলে অপূর্বকে এমন এলোমেলো দেখে বলে,,,,
-ওমা?একি অবস্থা তোর?বাসা থেকে তো বের হলি একদম ফর্মাল। তাহলে এখন এমন পাগলের মতো লাগছে কেন?কিছু হয়েছে??অপূর্বের বাবা মুখ তুলে অপূর্বকে দেখে বলে,,,,
-দেখো হয়তো কোনো মেয়ের পিছনে লেগেছিল।আর তার কাছ থেকে বাঁশ খেয়ে এভাবে ফিরে এসেছে।
-তুমি চুপ করোতো।সব সময় আমার ছেলেটার পিছনে পড়ে থাকো কেন?আমার ছেলেটাকি এতোই খারাপ?কখনোতো আমার ছেলের একটু প্রশংসা করতে পারো।
-তোমার ছেলে এতো গুনের অধিকারী যে,আমি নিজের মুখে তার আর কি প্রশংসা করবো বলো।বাবার কথা শোনে এবার অপূর্বের সত্যি মন খারাপ হয়ে গেলো।অপূর্বের মা অপূর্বের হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যায়।তারপর বলে,,,,,,
-কি হয়েছে বল আমাকে
-অহ,আম্মু।তুমিও না।কিছু হয় নি আমার।
-কিছু হয়নি তাহলে চোখ মুখ এমন মলিন হয়ে আছে কেন?
-আরে বাবা,আজ এমনিতেই অনেক গরম।কাজের চাপ ছিল প্রচুর।আর আমি সারাদিন কিছু খাইও নি।এই জন্য এমন দেখাচ্ছে।
-সারাদিন না খেয়ে থাকলি কেন?অফিসের ক্যান্টিনে কিছু খেয়ে নিলিনা কেন?এখন যা।ফ্রেশ হয়ে আয়।আমি খাবার দিচ্ছি।
-ঠিক আছে।অপূর্ব নিজের রুমে চলে আসে।ফ্রেশ হয়ে হাল্কা কিছু খেয়ে শুয়ে পড়ে।সারাদিন এতো কাটাকাটনি। তার উপর মার্কেটে এতো সময় ঘুরার কারনে অপূর্ব ভীষণ ক্লান্ত হয়ে গেছে।টাকার চেয়েও বেচারার হাঁটাহাঁটি টা ইচ্ছামতো লেগেছে।বিছানায় শুয়েই সে ঘুমিয়ে যায়।অপর দিকে সুপ্তির আজ খুব ভালো লাগছে অপূর্বকে শায়েস্তা করতে পেরে।নিজের রুমে এক একটা গান ছেড়ে দিয়ে উল্টাপাল্টা ডান্স শুরু করে দিয়েছে।গানের শব্দ পেয়ে সুপ্তির বাবা সুপ্তির রুমে আসে।বাবাকে দেখে সুপ্তি নাচা বন্ধ করে দেয়।সুপ্তির বাবা সুপ্তির কাছে গিয়ে বলে,,,
-কি ব্যাপার?আজ আমার মামনি এতো খুশি কেন???সুপ্তি তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,
-আজকে আমি অনেক মার্কেট করেছি।এই জন্য আমার খুব ভালো লাগছে।
-তাই নাকি?
-হু,তুমিও চলো আমার সাথে নাচবে।সুপ্তি আবার সাউন্ড বক্সে গান ছাড়ে।তারপর তার বাবাকে টেনে নেয়।তার বাবা বলে,,,,
-আরে আমার কি এখন নাচার বয়স আছে?তুই নাচ।আমি নাচতে পারবো না।আমার তো অনেক বয়স হয়েছে নাকি?
-আব্বু???তুমি এমন কেন?তুমি এখনো যথেষ্ট স্টং আর ইয়াং।তোমাকে এখনো আরো দুইটা বিয়া করানো যাবে।আসো তো।
-হা হা হা।পাগলী মেয়ে।কি বলে।সুপ্তি তার বাবাকে জোর করে নিয়ে কিছুক্ষণ নাচে।অল্প একটু নাড়াছড়া করতেই সুপ্তির বাবা হাঁপিয়ে উঠেন।তিনি আর না পেরে সুপ্তির রুমে রাখা সোফায় বসে পড়েন।সুপ্তি বলে,,,,,,
-দেখেছো তুমি কতো সুন্দর ডান্স করেছো?তোমার দূর্ভাগ্য যে,তোমার ডান্স কোনো ডিরেক্টর দেখে নি।তাহলে ফিল্মে তোমাকে সুযোগ দিতো।
-হাহাহা।
-তুমি হাসছো?আমি সত্যি বলছি।বিশ্বাস না হলে তুমি দাঁড়াও আমি ভাবীকে নিয়ে আসি। তুমি আবার একটু নেচে দেখিও।সুপ্তি নিজের রুম থেকে বের হয়ে তার ভাবীকে টেনে নিয়ে আসে।
-ভাবী তুমি একটু বলোতো-আব্বুকে এখনো অনেক হেন্ডসাম লাগে না???আজ আব্বু যা ডান্স করেছে তুমি যদি একবার দেখতে।সুপ্তির কথা শোনে তার ভাবী বলে,,,
-হু বাবা।সুপ্তি ঠিক বলেছে।আপনি এখনো যথেষ্ট স্মার্ট।
-তুমিও আমাকে নিয়ে মজা করছো বউমা?
-আমি মজা করবো কেন?সত্যি বলছি বাবা।আপনাকে দেখলে বোঝা যায় না আপনার ছেলে মেয়েরা এতো বড় হয়ে গেছে।
-আচ্ছা যাও।আর বলতে হবে না।,তোমরা কথা বলো আমি নিজের রুমে গেলাম।বলেই সুপ্তির বাবা নিজের রুমে চলে যায়।সুপ্তি তার ভাবীকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
-ভাবী,চলো আমরা দুজনে ডান্স করি।
-তোমার কি হয়েছে আমাকে বলোতো?এতো খুশির কারন কি?
-ভাবী,আজ আমি একটা ধামাকা অফার পেয়েছি।
-কি হয়েছে সবটা বলো আগে।
-……..সুপ্তি ভাবীকে সবটা খুলে বললে দুজনে হাসতে হাসতে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে।কোনো মতে ভাবী হাসিটা থামিয়ে বলে,,,,
-ননদিনী, সাবধান।তোমার ভাই আর বাবা যদি জানতে পারে কোনো ছেলের সাথে কথা বলছো তাহলে কিন্তু তোমার খবর আছে।
-ভাবী,কথা বললেই কি হলো?তাছাড়া আমিতো আর গায়ে পড়ে তার সাথে কথা বলতে যাই নি।ঐ হারামিটাই সব সময় আমার পিছনে লেগে থাকে।ওর যন্ত্রণায় তো আমি অতিষ্ঠ।
-সে যাই হোক।তোমার ভাই আর বাবা চায় না তুমি কোনো ছেলের সাাথে কথা বলো।বা কোনো ছেলে তোমার সাথে এসে কথা বলুক।তারা জানতে পারলে এই বিষয়টা নিয়ে অনেক ঝামেলা হবে।তুমিতো সবটাই জানো।শুধু শুধু সংসারটায় আর ঝামেলা বাঁধিয়ো না।অনেক কিছুর পর সবাই সব কিছু ভুলে আবার হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করছে।তুমি যত পারো ছেলেদের ফাংশন থেকে দূরে থাকো।ভাবীর কথা শোনে সুপ্তির মুড অফ হয়ে যায়।সুপ্তি মন খারাপ করে বলে,,,,,,,
-ভাবী,আমিতো আর কারো সাথে কথা বলতে যাই নি।আচ্ছা যাই হোক।আর এসবে যাবো না।ঠিক আছে?
-হু,ঠিক আছে।আর শোন,এসব কথা যেন আর কেউ জানতে না পারে।
-হু,জানতে পারবে না।
-হয়েছে,এতো মন খারাপ করার কি আছে?চলো,এবার কিছু খাবে।সুপ্তি তার ভাবীর সাথে খেতে চলে যায়।

অপূর্বের ঘুম ভাঙ্গে রাত ১০টায়।তার বোন তিশা পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।সে মাথা তুলে তাকিয়ে আবার মাথা বালিশে রেখে বলে,,,,
-তুই এখানে কি করছিস?
-ভাইয়া,তাড়াতাড়ি উঠ।সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে।আব্বু আবার তোকে নিয়ে চিল্লাবে। তিশার কথা শোনে অপূর্ব এক লাফে বিছানা থেকে উঠে বসে বলে,,,
-কয়টা বাজে??
-১০টা
-ইশরে।এতো সময় ঘুমিয়েছি।আব্বু আবার আমাকে কথা শোনাবে।অপূর্ব বিছানা থেকে উঠে কোনো রকম চোখে মুখে পানি দিয়ে ডাইনিং এ এসে বসে।কিন্তু তখন অপূর্বকে তার বাবা আর কিছু বলে নি।সবাই চুপচাপ খাওয়া শেষ করে।অপূর্ব খাওয়া শেষ করে আবার নিজের রুমে চলে আসে।এতক্ষণ ঘুমানোর কারনে এখন তার আর ঘুম আসবে না।তারপরও বিছানায় শোয়ে অপূর্ব এপাশ ওপাশ করতে থাকে।হঠাৎ সুপ্তির কথা মনে পড়তেই মোবাইলটা নিয়ে ফেইসবুকে ডুকে যায়।ফেইসবুকে ডুকে দেখে সুপ্তি অনলাইনে আছে।অপূর্ব সুপ্তিকে কয়কটা টেক্সট করলেও সুপ্তি সিন করে না।অপূর্ব অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পরও কোনো রেসপন্স পায় নি।অপূর্ব নিজের রুম থেকে বের হয়ে দেখে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।অপূর্ব নিঃশব্দে বাসা থেকে বের হয়ে সুপ্তিদের বাসার সামনে চলে আসে।দূর থেকেই অপূর্ব দেখতে পায় সুপ্তির রুমের লাইট জ্বলছে।অপূর্ব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বাউন্ডারি ফেরিয়ে ব্যালকনি দিয়ে সুপ্তির রুমে ঢুকে যায়।কিন্তু রুমে গিয়ে দেখে রুম একদম ফাঁকা।আবার দরজাও ভেতর থেকে লাগানো।অপূর্ব ওয়াশরুমের দরজার কাছে গিয়ে কান পেতে শোনে ভেতর থেকে গুন গুন শব্দ ভেসে আসছে।আবার পানিরও শব্দ শোনা যাচ্ছে।অপূর্ব বুঝতে পারছে সুপ্তি ভেতরে আছে।অপূর্বও মনের আনন্দে রুমটা সবটা দেখে।মেয়েটা বজ্জাত হলেও রুমটা খুব গুছানো,সুন্দর।রুমে একটা ছোটখাটো বুক সেলফও আছে।অপূর্ব একটা বই নিয়ে সুপ্তির বিছানায় শোয়ে পড়তে থাকে।সুপ্তি গোসল করে একটা টাওয়াল গায়ে জড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।আর গুণগুণ করে গান গাইতে থাকে।সুপ্তির গান শোনে অপূর্ব সুপ্তির দিকে তাকায়।সুপ্তিকে এমন ভাবে দেখে অপূর্বের চোখ দুটি কপালে উঠে যায়।অপূর্ব বইটা রেখে হাতের উপর ভর দিয়ে হা করে সুপ্তির দিকে চেয়ে থাকে।মাত্রই শাওয়ার নিয়ে এসেছে।চুল থেকে টপটপ পানি পড়ছে।তার উপর জাস্ট একটা টাওয়াল পেছানো।সুপ্তি ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে বসতেই আয়নায় অপূর্বকে দেখে অনেক জোরে একটা চিৎকার দিয়ে উঠে।সুপ্তির চিৎকার শোনে অপূর্ব এক লাফে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে সুপ্তির মুখ চেপে ধরে।সুপ্তি অপূর্বকে ধাক্কা দিতে গেলে অপূর্বের হাত লেগে সুপ্তির টাওয়ালটা খুলে যায়।ড্রেসিংটেবিলের সামনের টোলে ধাক্কা খেয়ে অপূর্ব সুপ্তিকে সহ বিছানায় পড়ে যায়।সুপ্তিকে এভাবে দেখে অপূর্বের মাথা ঘুরতে থাকে।সব কিছু কেমন অন্যরকম হয়ে যায়।চোখের সামনে কেমন অদ্ভুদ অদ্ভুদ জিনিস ভেসে উঠছে।অপূর্ব ঘোরের মধ্যে চলে যায়।এক আকর্ষণ শক্তি যেন ক্রমশ তাকে কাছে টানছে। অপূর্ব উল্টাপাল্টা সুপ্তির বুকে কয়েকটা চুমু দেয়।সুপ্তি অপূর্বকে জোরে একটা ধাক্কা দিলে সে তাল সামলাতে না পেরে ধুম করে ফ্লোরে পড়ে যায়।আর সুপ্তি টাওয়ালটা টেনে নিয়ে দৌঁড়ে ওয়াশরুমে ডুকে যায়।অপূর্ব এতক্ষণে হুশ আসলো সে কি করছিল।অপূর্ব কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,,,,,,
-আল্লাহ গো,বজ্জাত মেয়ে আমার কোমড়টা ভেঙ্গে দিয়েছে মনে হয়।

চলবে——–