মায়াবিনী পর্ব : ১+২

0
1019

#মায়াবিনী
পর্ব : ১+২
সুরমা

সুপ্তি হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে আছে।ঘুমের সময় মেয়েটা একদম বাচ্চা হয়ে যায়।কোনো খবর থাকে না ঘুমের সময়।সকাল ৯টা বাজে।এখনো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। উঠার কোনো নাম গন্ধ নেই।দরজায় সমানে কলিং বেল বেজেই চলেছে।কিন্তু কেউ খুলছে না।এবার মনে হচ্ছে বেলটা ভেঙ্গেই যাবে।

সুপ্তির কানে শব্দটা আসতেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।সকাল সকাল গেলো মেজাজের ১২টা বেজে।কুশনটা হাতে নিয়ে কানে চেপে ধরে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু না,কিছুতেই শব্দটা থামছে না।

এবার বেচারীর মাথায় এমন আগুন ধরলো যে মনে হচ্ছে আজ ফায়ারসার্ভিস আসলেও নিভানো যাবে না।বিছানা থেকে উঠতে উঠতে হাজারটা বকুনি দিয়ে ফেলেছে।রুম থেকে বের হচ্ছে আর বকবক করছে,

-কোন হারামজাদা আসলো এই সময়।এসেই দিলোতো সকাল সকাল আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে।এতো বড় সাহস,আমার ঘুমের মধ্যে ডিসট্রাব করে।ইচ্ছে তো করছে গিয়ে মাথায় তুলে আছাড় মেরে বান্দরবন পাঠিয়ে দেই।
একা একা বকবক করতে করতে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।দরজার সামনে একটা ইয়াং ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

-কাকে চাই?
———-
-কথা বলছেন না কেন?কাকে চাই?
———-
সুপ্তি খেয়াল করলো ছেলেটা হা’ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।সুপ্তি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সে নাইট ড্রেস পরেই চলে এসেছে।নাইটিটা অনেকটা ছোট।হাটু বরাবর পর্যন্ত।বাকি সবটা পা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।আর সেই বেটা ওকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে।সুপ্তি বাতাসের বেগে নিজের রুমে চলে আসে।

রুমে ঢুকে আলমারি খুলে একটা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।আর একা একা ছেলেটাকে বকা দিতে থাকে।

-লুচু বেটা,জীবনে মেয়ে মানুষ দেখিস নি?এমন ভাবে তাকিয়ে ছিল যে মনে হচ্ছে এর আগে কখনও মেয়ে মানুষ চোখে দেখে নি।চোখ দুটি গোলগোল করে আমাকে দেখছিল।ইচ্ছে তো করছে এই বেটার চোখ গুলো তুলে মার্বেল খেলি। ছিঃ ছিঃ একটুকুও লজ্জা করলো না অন্যের বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে।ওগো আমার প্রাণনাত,তুমি কোথায়?তাড়াতাড়ি চলে আসো।তোমার বউকে সবাই খুব জ্বালাচ্ছে।

একা একা কথা বলতে বলতে ড্রেস চেইঞ্জ করে আবার মেইন দরজার কাছে এসে দেখে ছেলেটা এখনো দাঁড়িয়ে আছে।

-আপনি এখনো দাঁড়িয়ে আছেন?সুপ্তির কথা শুনে ছেলেটা সুপ্তিকে আবার ভালো করে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতে লাগলো।একদম ফর্সা গায়ের রং,এলোমেলো চুল,কালো চিকচিকে মায়া ভরা দুটি চোখ,চিকন লম্বা নাক,পিংক কালার দুটি ঠোঁট,স্লীম ফিগার।যেন স্বর্গ থেকে ভুল করে চলে আসা কোনো মায়াবতী।

-কি চাই আপনার?
-অপূর্ব
-কিহ?
-ই,য়ে না মা,নে আমি অপূর্ব।
-আপনার মনে হয় চোখে সমস্যা আছে।ডাক্তার দেখান।
-কেন?
-এই যে আপনি বললেন আপনি অপূর্ব।আপনি কোন দিক দিয়ে অপূর্ব আমাকে বলুনতো?দেখে তো মনে হচ্ছে একটা চামছিকা।আর আপনি বলেছেন কিনা আপনি অপূর্ব।নিজের চেহারাটা কখনো আয়নায় দেখেছেন?দেখলে আর নিজেকে অপূর্ব বলতেন না।
-ও হ্যালো,আমার নাম অপূর্ব। আর আমি দেখতেও অপূর্ব হুম।কলেজ ভার্সিটির সব মেয়েদের ক্রাস ছিলাম আমি।এখনো আমার জন্য মেয়েরা লাইন ধরে।
-হয়তো মেয়ে গুলোর চোখে রানিক্ষেত রোগ ছিল।নয়তো আপনার মতো হুলু বেড়ালের উপর কেউ ক্রাস খায়।
-তুমি আমাকে হুলু বেড়াল বললে?নিজে কি হু।শেওড়া গাছের পেত্নী।তিত করলা,
-কিহ?আমি শেওড়া গাছের পেত্নী।আমার জন্য ছেলেরা রাস্তায় লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকে একটিবার কথা বলার জন্য।
-যারা লাইন করে তাদের ন্যারাপুরা রোগ আছে।
-আপনি এখান থেকে যানতো।আপনার সাথে মোটেও কথা বলতে ভালো লাগছে না।সকাল সকাল এসে আমার মুডটাই নষ্ট করে দিলেন।
-আমিও এখানে আপনার সাথে কথা বলতে আসি নি।আমি আমার বন্ধু নিলয়ের কাছে এসেছি।নিলয়কে ডেকে দিন আমি চলে যাই।
-এখানে কোনো নিলয় ফিলয় থাকে না।বাগেন তো এখান থেকে।
-থাকে না মানে? আমাকে ফোনে এই বাসার কথায় বলেছে।
-জ্বী না।আপনি বরং ৩ তালায় গিয়ে দেখেন।
-কি ঝগড়াটে মাইয়া।
-মোটেও আমি ঝগড়াটে না।বরং আপনি একটা ঝগড়াটে পোলা।আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।যান এখান থেকে।
-এই যে তিত করলা,আমারও তোমার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছা নাই।হুম।আর শুনো,এর পরে আর কোনো ছেলেকে নিজের শরীর দেখাবে না।আমি না হয় ভদ্র পোলা তাই সব কিছু দেখেও কিছু মনে করি নি।কিন্তু সবাই কিন্তু আমার মতো ভদ্র না।কথাটা বলেই অপূর্ব উপরের রাস্তা ধরে হাটতে শুরু করে। আর সুপ্তি হা করে থাকে অপূর্বের কথা শুনে।
-হুম,বেটা লুচু।আমার সব কিছু দেখে এখন আবার বলা হচ্ছে তিনি নাকি ভদ্র।আমি না হয় ভুল করে এই ড্রেস পড়ে চলে এসেছিলাম।তাই বলে তােকে আমার সব দেখে নিতে হবে?ভ্যা,আমার সব শেষ।হারামি কুত্তা,নিজের চোখ গুলোকে সামলে রাখতে পারিস না।দেখার এতো শখ হলে নিজের বউকে গিয়ে দেখ।অন্যের বউয়ের দিকে নজর দিস কেন?তোকে আর একবার হাতের কাছে পাই।দেখে নিবো।মরিচের জুস খাওয়াবো।ঘাড় থেকে মাথাটা আলাদা করে ফুটবল খেলবো।সুপ্তি রাগে দুঃখে ঠাস্ করে দরজা লাগিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে অপূর্বকে ইচ্ছে মতো বকা দিতে থাকে।

সুপ্তির সেই ছোট বেলায় তার মা যায়।বাবা আর ভাইয়ের কাছেই বড় হয়েছে।তার পরিবার বলতে বাবা,ভাই আর ভাবী।এই সময় সুপ্তিকে জেগে থাকতে দেখে তার ভাবী তার রুমে আসে।

-কি বেপার ননদিনী,এই সময় তুমি জেগে আছো যে।
ভাবীর কথায় সে মুখ তুলে তাকায়,,

-ভাবী দেখো না।একটা হারামি এসে আমার ঘুমের ১২টা বাজিয়ে দিয়ে গেলো।
-ওমা সেকি,তা সেই হারামিটা কি আস্ত বাসায় ফিরে যেতে পেরেছে?
-ভাবী,তুমি কি বলতে চাও,আমি খারাপ মেয়ে?আমি সবাইকে জ্বালাই?
-না না,তুমি তো আমার ভালো ননদিনী।তুমি কাউকে জ্বালাতেই পারো না।যাই হোক যেহেতু উঠেই গেছো তাহলে আসো সকালের নাস্তাটা করে নাও।
-হু,চলো।

অপূর্ব তিন তলায় তার বন্ধু নিলয়ের সাথে দেখা করে এখান থেকেই নিজের অফিসে চলে যায়।বিকাল বেলা ৪টার পর যখন বাসায় ফিরে আসতে থাকে তখন রিকশা থেকে দেখে সুপ্তি জ্বালানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।অপূর্ব রিকশার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে রিকশা থেকে নেমে যায়।অপূর্বর বাসা মূলত সুপ্তির বাসার পরের প্ল্যাটে।হেটে গেলে ৫মিনিট সময় লাগবে।

অপূর্ব রাস্তায় দাঁড়িয়ে সুপ্তিকে দেখতে থাকে।তার পলক যেন সুপ্তির উপর থেকে যাচ্ছেই না।

অপরূপা তুমি কতো যে সুন্দর,
যত চেয়ে থাকি ভরে না অন্তর!!

হঠাৎ সুপ্তির নজর পড়ে অপূর্বের উপর।সে লক্ষ করে দেখে অপূর্ব তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছে।দুজনের চোখাচোখি হয়ে যেতেই অপূর্ব হাত নেড়ে সুপ্তিকে ডাক দেয়,,

-হাই তিত করলা।আমি জানি আমি অসম্ভব সুন্দর।তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকবে।একটু কম দেখো।পরে তো আমার আবার নজর লেগে যাবে।
-আমি মোটেও আপনাকে দেখছি না।আমারতো খেয়ে আর কোনো কাজ নেই আপনার মতো চামছিকার দিকে তাকিয়ে থাকবো।আমি জানালা লাগাচ্ছি।আমি প্রতিদিনেই এই সময় জানালা গুলো লাগাই।
-তাই নাকি?ভালোই হলো।আমিও প্রতিদিন এই সময় এই রাস্তা দিয়ে অফিস থেকে বাসায় আসি।তাহলে প্রতিদিন জানালা লাগানোর নাম করে আমাকে তুমি একবার দেখতে পাবে।
-হুম,আপনাকে দেখার আমার কোনো ইচ্ছা নাই।বলে মুখ ভ্যাংচি দিয়ে জানালাটা অফ করে সুপ্তি চলে যায়।অপূ্র্বও আর অপেক্ষা না করে নিজের বাসায় চলে আসে।

চলবে–

#মায়াবিনী

সুরমা
পর্ব : ২

রাতে অপূর্ব নিজের রুমে শুয়ে থেকে ফেইসবুকিং করতে থাকে।এমন সময় হঠাৎ সুপ্তির আইডিটা চোখের সামনে ভেসে উঠে।অপূর্ব সুপ্তির আইডিতে ডুকে আইডিটা দেখতে থাকে।অনেক গুলো ছবি দেওয়া আছে।তবে বাস্তবে সুপ্তি অপরূপ সুন্দর্যের অধিকারী।ছবি গুলোতে ফেইসটা ততটাও মায়াবী লাগছে না বাস্তবে যতটা লাগে।ছবি গুলো দেখতে দেখতে অপূর্বের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসলো।তাই অপূর্ব সুপ্তিকে এড করে।আর ছোট্ট করে একটা এসএমএস দেয়।দুমিনিট পর সুপ্তির রিকোয়েস্ট টা একসেপ্ট করে।সাথে সাথে অপূর্ব এসএমএস করে,
-হাই
-হ্যালো,কে আপনি?
-আমি সেই হেন্ডসাম অপূর্ব।যাকে দেখে তুমি চোখ সরাতে পারো নি।সুপ্তি আইডিটার ভেতরে ডুকে দেখে এ সত্যি অপূর্ব।তখন সে বলে,,,
-হেন্ডসাম না ছাই।শেওড়াগাছের পেত্নীর জামাই।
-তাই নাকি?তুমি আমাকে এতো তাড়াতাড়ি নিজের জামাইয়ের জায়গা দিয়ে দিলে?
-মানে??
-এই যে,তুমিতো পেত্নী। আর আমি যদি পেত্নীর জামাই হই তাহলে কি দাঁড়ায়?আমি তোমার জামাই।
-আপনাকে সামনে পেলে কি যে করবো,
-কাল সকালেই পাবে।চিন্তা করো না।নাকি এখন লাগবে?লাগলে বলো আমি চলে আসবো।
-আপনাকে আমি দেখে নিবো।
-ছি! কি বলো।এভাবে আমি কিছু দেখাতে পারবো না।তোমার লজ্জা নেই তো কি হয়েছে।আমার লজ্জা আছে।তবে তুমি কিছু দেখাতে চাইলে আমার আপত্তি নেই।আমি দেখতে পারবো বাট আমার কিছু অন্য কাউকে দেখাতে পারবো না।
-আপনাকে এখন সামনে পেলে আস্ত খেয়ে ফেলতাম।
-হি হি হি।তোমাকে দেখেতো রাক্ষসী মনে হয়নি।
-অহহ,আপনি একটা অসহ্য।রাগে গজ গজ করতে করতে সুপ্তি অফ লাইনে চলে যায়।আর এদিকে অপূর্ব হাসতে হাসতে শেষ।রাতে বিছানায় শোয়েও অপূর্ব সুপ্তির কথা চিন্তা করতে থাকে।মেয়েটা খুব মায়াবী। প্রথম দেখাতেই ভালো লেগেছে তার।হরিণটানা চোখ দুটি অসম্ভব সুন্দর।যেখানে তাকালেই সব কিছু ভুলে যাওয়া যায়।অপূর্ব সুপ্তিকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।সকালে মায়ের ডাকে অপূর্ব ঘুম থেকে উঠে।ফ্রেশ হয়ে অফিসের জন্য রেডি হয়।অপূর্ব একজন ব্যাংকার। পরিবারের লোকজন বলতে,মা-বাবা আর ছোট একটা বোন।অপূর্বের বাবাও একজন ব্যাংকার ছিল।এবছর তিনি রিটায়ার্ড নিয়েছেন।পড়াশোনা শেষ করার সাথে সাথেই অপূর্ব চাকরী পেয়ে যায়।এই এলাকায় তাদের একটা ভালো রেপুটেশন আছে।অপূর্ব রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলে গিয়ে দেখে মা-বাবা,বোন টেবিলে বসে আছে।অপূর্ব তার বাবাকে খুব ভয় পায়।অপূর্বের বাবা অনেক রাগি।আর অপূর্ব মূলত একটু ইরেসপন্সসিবল ছিল।জব নেওয়ার আগে টো টো করে ঘুরে বেড়াতো।কোনো প্রকার কাজ ভালো ভাবে করতে পারতো না।যার কারনে তার বাবা সব সময় তাকে শাসনে রাখতো।যদিও এখন অপূর্ব অনেক চেইঞ্জ হয়ে গেছে।তবুও তার বাবা তাকে যথেষ্ট চাপে রাখে।টেবিলের কাছে গিয়ে অপূর্ব একটা চেয়ার টেনে বসে চুপচাপ খাওয়া শুরু করে।তার বাবা নাসির হোসেন বলেন,,,,,
-অফিস কয়টায়???অপূর্ব আস্তে করে বলে,,,
-১০টায়।
-এখন বাজে কয়টা?
-৯.১১
-আরো আগে ঘুম থেকে উঠা যায় না?খাবার টেবিলে কি ৯টার আগে আসা যায় না???প্রতিদিন কেন টেবিলে বসে তোমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে??
-আসলে ঘুম থেকে উঠতে লেইট হয়ে গেছে।
-শুধু কি আজ লেইট হয়েছে?সারা বছরেই তো এরকম হয়।আর সারা রাত ফেইসবুক চালালে কেউ সকালে উঠতে পারে না।এর থেকে ভালো কিছুতো জীবনেও করতে পারবে না।ভাগ্য গুণে চাকরীটা পেয়ে গেলে।নয়তো তোর মতো অপকর্মের ঢেকিকে কেউ চাকরীতে নিতো না।
-আব্বু,চাকরীটা আমার নিজের যোগ্যতায় পেয়েছি।
-হু,সেটাই তো বলছি।এখানে যোগ্যতার থেকেও ভাগ্যটা বেশি ছিল।যা হোক,তাড়াতাড়ি খেয়ে বের হো।তুই ঠিক মতো অফিসে যেতে পারিস কিনা এতেও আমার সন্দেহ আছে।একদিন হয়তো শোনবো চাকরী আকাশে উড়ে গেছে।অপূর্ব চুপ করে মাথা নিচে দিয়ে বসে ছিল।এমন সময় তার মা বললো,,,
-তুমি সব সময় আমার ছেলেটাকে বকাবকি করো কেন বলোতো?আমার ছেলেটা কোন দিক দিয়ে খারাপ?এখনকার ছেলেরা আমার ছেলের থেকেও বেশি করে।
-এই হলো এক ঝামেলা।নিজের ছেলের দোষ গুলো কোনোদিনেই তোমার চোখেই পড়বে না।সব কাজে সাপোর্ট করে যাবে।আর তোমার এই আদরে আদরে ছেলেকে বাদর করে ফেলেছো।কখনও তো ছেলেকে শাসন করো।এই ছেলের জন্য একদিন আফসোস করবে।মিলিয়ে নিও আমার কথা।অপূর্ব আর নিতে পারলো না।খাবার রেখে টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ালো।অপূর্বকে দাঁড়াতে দেখে তার মা বললো,,,
-কিরে উঠে পড়লি কেন?এখনো তো কিছুই খেলিই না।
-আমার খাওয়া শেষ।বলে ব্যাগ হাতে নিয়ে অপূর্ব বাসা থেকে বের হয়ে আসলো।অপূর্বের মা বললো,,
-দিলেতো আমার ছেলেটার মনটা খারাপ করে?শান্তিতে খেতেও দিলে না।সারাটা দিন ছেলেটা কিভাবে থাকবে?
-কেন?তোমার ছেলের কাছে টাকা কম আছে?এক্ষণি বড় বড় রেস্টুরেন্টে ডুকে ইচ্ছা মতো খাবে।তোমার কি মনে হয় সে সারাদিন না খেয়ে থাকবে?বাহিরে তো গিয়ে দেখো না ছেলে কি করে।তাই এসব কথা বলছো।আর ছেলেকে এখন একটু শাসন করো।নাসির হোসেন খাওয়ায় আবার মনোযোগ দিলেন।অপূর্বর মনটা খারাপ হলো।সব সময় এসব কথা শোনতে ভালো লাগে না।আগে একটু বেশি দুষ্টামি করতো ঠিক আছে।কিন্তু এখন তো সে অনেক শান্ত হয়ে গেছে।তবুও বাবা তাকে কথা শোনিয়েই যায়।ছোট কাটো কিছু হলেও এক গাধা কথা শুনিয়ে দিবে।অপূর্ব রাস্তায় এসে দেখে একটাও রিকশা নেই রাস্তায়।সারা রাস্তা ফাঁকা।যাহ,আজেই সব হতে হলো?বাসা থেকেও কথা শুনতে হলো এখন আবার গাড়িও নেই।অপূর্ব একটু হেঁটে সামনে আসতেই দেখে সুপ্তি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।অপূর্ব গিয়ে বলে,,,,,
-হ্যালো মিস পেত্মী,গুড মর্নিং।সুপ্তি অপূর্বকে দেখেতো রেগে আগুন।
-আবার আমাকে পেত্মী বলছেন?
-পেত্নী কে পেত্নী বলবো নাতো কি বলবো?নাকি অন্যকোনো নাম আছে?যেমন ধরো,তিত করলা।
-আপনি আমার পেছনে লেগে আছেন কেন বলুন তো??
-আমি তোমার পেছনে লাগতে যাবো কেন বলোতো?আমিতো তোমার সামনে লেগে আছি।ঐ দিন সকালে যা খেল দেখিয়েছো,মাইরি,বিশ্বাস করো।আমার চোখের ঘুম চলে গেছে।চোখ বন্ধ করলেই সেই দৃশ্যটা চোখে পড়ে।এতো কিছুর পর দূরে যেতে পারছি না।
-আপনি একটা পেইন।অহ!আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে তেঁজ পাতা করে দিচ্ছেন।কথা গুলো বলে সুপ্তি একটু এগিয়ে যায়।হঠাৎ দেখে সামনে একটা একটা খালি রিকশা।সুপ্তি আর অপূর্ব দুজনে একসাথে রিকশা ডাক দেয়।দুজনেই রিকশার দিকে এগিয়ে যায়।সুপ্তি বলে,,,
-মামা,সিটি কলেজ চলো।অপূর্ব বলে,
-মামা সাইন্স ল্যাব যাবো।অপূর্ব রিকশায় উঠে বসলে সুপ্তি বলে,,
-আপনি রিকসায় উঠলেন কেন?রিকশা আমি আগে ডেকেছি।আমি যাবো এই রিকশা দিয়ে।
-না,আমি ডেকেছি আগে।সো আমি যাবো।তুমি অন্য রাস্তা দেখো।
-দেখুন খারাপ হবে কিন্তু।আমি কলেজ যাবো।
-আমিও অফিস যাবো।সুপ্তি করুন দৃষ্টিতে অপূর্বের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
-আজ আমার ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে।মিস করলে পরে অনেক প্রবলেমে পড়তে হবে।সুপ্তির মুখটা দেখে অপূর্বের মায়া লাগলো।কিন্তু তারও অফিস যেতে লেইট হলে সমস্যা হবে।তাই সে বললো,,,,
-দেখুন আমার অফিসে ঠিক টাইমে পৌঁছাতে হবে।লেইট হলে অনেক সমস্যা হবে।এদের কথা শোনে রিকসা ওয়ালা বললো,,,
-দুজন যেহেতু এক রাস্তায় যাবেন তাহলে দুজনে শেয়ার করতে পারেন।তাহলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।তাছাড়া আজ রাস্তায় রিকশাও পাবেন না।সবাই সম্মেলনে চলে গেছে।এখন আপনারা কি করবেন বলুন না হলে আমি চলে যাচ্ছি।
-মামা,ঐ ম্যাডাম চাইলে আমার সাথে যেতে পারে।আমার কোনো আপত্তি নেই।তবে আমি তাকে সবটা রিকশা দিতে পারবো না। অপূর্বের কথা শোনে সুপ্তি বলে,,,,,
-আমি যাবো না আপনার সাথে।
-তাহলে আর কি করা,মামা চলুন।সুপ্তি দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক তাকায়।কিন্তু কোথাও একটা রিকশা দেখা যাচ্ছে না।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৯.৪০ বাজে।১০টায় ক্লাস।এখন না গেলে ক্লাস মিস করবে।
রিকশাওয়ালা যেই রিকশায় উঠতে যাবে সেই মুহুর্তে সুপ্তি বলে,,,
-না না দাঁড়ান আমিও যাবো।সুপ্তি গিয়ে অপূর্বের পাশে বসে যায়।কিন্তু মনে মনে অপূর্বকে ইচ্ছা মতো গালাগাল করতে থাকে।অপূর্ব সুপ্তির মুখ দেখেই বুঝতে পারে সুপ্তি তাকে ইচ্ছা মতো বকা দিচ্ছে।সেই সময় সুপ্তিকে আরেকটু রাগানোর জন্য অপূর্ব গিয়ে সুপ্তির সাথে মিশে বসে।এতে করে সুপ্তি ফায়ার হয়ে যায়।তার ইচ্ছে করছে এই মুহুর্তে অপূর্বকে ধাক্কামেরে রিকশা থেকে ফেলে দিতে।অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত রাখছে।কিন্তু সময় পেলে এর প্রতিশোধ সে নিয়েই ছাড়বে।সুপ্তি দূরে সরতে সরতে দেখে আর একটু সরলে রিকশা থেকে সে নিচে পড়বে।বাধ্য হয়েই বললো,,,,
-এই টুকু জায়গায় বসে কি যাওয়া যায়?আপনি একটু সরে বসুন।
-আমি আর সরতে পারবো না।তোমার বেশি অসুবিধা হলে আমার কোলে বসতে পারো নয়তো রিকশা থেকে নেমে যেতো পারো।অপূর্বের কথা শোনে এবার সুপ্তির ইচ্ছে করছে অপূর্বকে কাঁচা ভর্তা করে ফেলতে।নেহাত আজ রাস্তা ফাঁকা।নয়তো এই অসহ্য লোকটার সাথে কেউ যেতো না।সামনে স্পিডলাইন অতিক্রম করতেই সুপ্তি সামনের দিকে হেলে যায়।সাথে সাথে অপূর্ব হাত দিয়ে সুপ্তিকে ধরে ফেলে।আর একটুর জন্য সে রিকশা থেকে পড়ে নি।তারপর অপূর্ব একটু চেপে সুপ্তিকে জায়গা করে দেয়।বাকি রাস্তাটা সুপ্তি ভালোভাবে বসে যেতে পারলেও অপূর্বের উপর ক্ষেপে রয়েছে সে।সিটি কলেজের সামনে অপূর্ব সুপ্তিকে নামিয়ে দিলে সে এক দৌঁড়ে কলেজের ভেতরে ডুকে যায়।রিকশার ভাড়াও দেয়নি।অপূর্ব কিছু না বলে রিকশা নিয়ে নিজের অফিসে চলে আসে।
বিকালে,,,,,

চলবে—–