মুখোশের_আড়ালে পর্ব-০৯

0
2898

#মুখোশের_আড়ালে
#Writerঃতাসনিম_রাইসা(আরিয়ানা)
#Partঃ9

রাই সেখানেই মিমি বলে চিৎকার দিয়ে বসে পরলো,মিমির দেহ ফ্যানের সাথে ঝুলছে,গায়ে কোন কাপড় নেই,পুরো ঘরে রক্তে ভরা নীরব আর রাজ রক্তাত্ত অবস্থায় নিচে পরে আছে,এরকম দৃশ্য দেখে রাই আর নিজেকে সামলাতে পারলো না,মাথা ঘুরে সেখানেই পরে যায়,রাইকে ওর আব্বু আম্মু অন্য রুমে নিয়ে যায়,ওরা কান্না করছে বুঝতে পারছে না এতো কিছু কি করে হলো

এদিকে পুলিশ রাজ আর নীরবকে হসপিটালে পাঠিয়ে দেয়,মিমির লাশ নামিয়ে তদন্তের জন্য থানায় পাঠিয়ে দেয়,পুলিশ মিমির মা বাবাকে খবর দিয়ে দেয়।।সবার চোখে পানি রাই মিমি বলে চিৎকার করছে আর কান্না করছে,ও ভাবতেও পারে নি মিমির সাথে এমন কিছু হয়ে যাবে,মিমিকে একা রাখাটা তার উচিত হয় নি সে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না,মিমির মা বাবা নিজের মেয়ের লাশ দেখে ভেঙ্গে পরে,রাই তাদের কাছে গিয়ে হাঁটু গেরে বসে মিমির আম্মুর হাত ধরে কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলে

¬রাইঃঅান্টি আমাকে মাফ করে দাও আমার জন্য আজ মিমির এই অবস্থা হলো,লাশ হয়ে ওকে আজ ঝুলতে হলো??(কান্না করতে করতে)
.
মিমির আম্মুঃতুই নিজেকে দোষ দিচ্ছিস কেনো মা??আল্লাহ্‌ তায়ালা যা লিখে রেখেছেন তাই তো হবে,তবে বিশ্বাস কর আমার মেয়েটাকে এমন অবস্থায় দেখবো কখনো ভাবতেও পারি নি,বুকটা ফেটে যাচ্ছেরে মা(রাইকে জরিয়ে ধরে)
.
মিমির আব্বুঃমিমির মা নিজেকে শক্ত করো আমাদের জানতে হবে কে করলো এই কাজ,এখন ভেঙ্গে পরলে চলবে না।।
.
রাইঃহ্যাঁ অ্যান্টি তোমাকে এখন ঠিক থাকতে হবে আর যে আমার কলিজাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে তাকে তো আমি ছাড়বো না(দাতে দাঁত চেপে)

রাই ওদের সাথে কথা বলেই বেড়িয়ে ওর রুমে গেলো,পুলিশ বাধা দিলেও ও রিকুয়েস্ট করে ভেতরে ধুকে,ভেতরে ধুকতেই ওর বুকটা কেপে উঠে,মিমির কথা মনে পরতেই ও কান্না ভেঙ্গে পরে।।কিন্তু ওকে এখন ভেঙ্গে পরলে চলবে না,

সকালে রাই ওর মা বাবাকে হসপিটালে পাঠিয়ে দিয়ে ওর ফোনটা হাতে নিয়ে কল করলো ওর ফুফাতো ভাইকে,ওর ফুঁপির ছেলে আরিয়ান একজন পুলিশ,রাই বেশ ভাল করে জানে এই রহস্যের সমাধান একমাত্র আরিয়ানই করতে পারবে।।

কারণ আরিয়ান এর আগে অনেকগুলো কেশ একা নিজের হাতে সব সল্ভ করেছে,রাইয়ের পুরো বিশ্বাস আরিয়ান সবটা পারবে।।তাই ও দেরি না করেই আরিয়ানের নাম্বারে কল করলো,কিন্তু আরিয়ান ফোনটা রিসিভ করছে না।।অনেক বার ট্রাই করার পরও আরিয়ান ফোনটা তুলছে না,রাই মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পরে,না চাইতেও ওর চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরছে,কষ্টে ওর বুকটা ফেটে যাচ্ছে,চিৎকার দিয়ে শুধু বলছে,

রাইঃকেনো এমনটা করলে খোদা??মিমির তো কোনো অপরাধ ছিল না,ঐ নিষ্পাপ মেয়েটার সাথে কেনো এমন হলো,তুমি আমায় নিয়ে যেতে কেনো ওকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিলে

হঠাৎ রাইয়ের ফোন বেজে উঠে,রাই ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো আরিয়ানের নাম্বারটা ভেসে উঠেছে,ও এক মুহূর্ত দেরি না করেই ফোনটা হাতে তুলে রিসিভ করলো,রাই কান্নার জন্য কথা বলতে পারছিলো না।।ওর হাত পা সমানে কাপতে থাকে,বুঝতেই পারছে না কি করে আরিয়ানকে সবটা বলবে,ফোনের ওপাশ থেকে আরিয়ান রাইয়ের উদ্দেশ্যে বলে,

আরিয়ানঃরাই কি হয়েছে তোমার??কথা বলছো না কেনো??সেই কখন থেকে হ্যালো হ্যালো করছি কথার জবাব দিচ্ছো না।।Any problem dear??
.
আরিয়ানের কথা শুনে রাই আর কান্না চেপে রাখতে পারলো না,খুব জোরেই কান্না করে উঠলো,রাইয়ের কান্নায় আরিয়ান পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়,ও কিছুক্ষণ নীরব থেকে আবার বলে উঠলো,

আরিয়ানঃরাই প্লিজ আমায় বলবে কি হয়েছে??এবার কিন্তু আমার খুব টেনশন হচ্ছে

রাই ওর কান্না থামিয়ে নিজেকে ঠিক করে আরিয়ানের প্রশ্নের জবাব দিলো,

রাইঃভাইয়া………
.
আরিয়ানঃহ্যাঁ বলো কি হয়েছে??
.
রাইঃভাইয়া মিমি….
.
আরিয়ানঃহ্যাঁ মিমি তোমার কলিজার বেষ্টু,কি হয়েছে প্লিজ কান্না থামিয়ে বলো??
.
রাইঃভাইয়া কাল রাতে মিমি খুন হয়েছে আমাদের বাসায়(কান্না করে)
.
আরিয়ানঃহোয়াট??কি বলছো এসব??
.
রাইঃহ্যাঁ ভাইয়া আমি সত্যি বলছি,মিমিকে যেন কে মেরে ফেলেছে??
.
আরিয়ানঃকি করে এসব হলো??

রাই আরিয়ানকে শুরু থেকে সবটা খুলে বলে,ওর সাথে কি হয়েছে না হয়েছে??মিমির সাথে একচুয়েলি কি হয়েছে সবটাই আরিয়ানকে খুলে বলে,আরিয়ান রাইয়ের সব কথা শুনে স্তব্দ হয়ে যায়।ও ভাবতেও পারছে না মিমির মত এতো ভাল একটা মেয়ের সাথে এমন কিছু হলো??রাইয়ের সাথে ঘটা ঘটনাগুলো শুনেও ওর বুকে মোচড় দিয়ে উঠে,ও রাইয়ের থেকে সবটা শুনে রাইকে বললো,

আরিয়ানঃরাই তুমি ভেঙ্গে পরো না নিজেকে শক্ত করো,আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আসল খুনি আর এই রহস্য আমি বের করবো,তুমি আমায় আজকের দিনটা সময় দেও,আমার এদিকে কিছু কাজ আছে শেষ করেই আমি আসছি আর আমি এই কেশটা হ্যান্ডেল করবো।।

রাই ফোনটা রেখে ওর রুমের দিকে পা বাড়ায়,অবশ্য যে রুমটায় মিমির খুন হয়েছে সে রুমটায় পুলিশ রাইকে থাকতে মানা করে দিয়েছে,ঐ রুমটার কোন আসবাবপত্র যেন নড়চর না হয় কারণ তাদের এই কেশটার জন্য অনেক প্রমাণ দরকার।।তাই রাই অন্য রুমে গিয়ে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়,লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বের হয়

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পুরনো সব কিছু মনে করতে থাকে,আর চোখ বেয়ে নোনাজল পরতে থাকে।।হঠাৎ রাইয়ের হাত ওর পেটের উপর পরতেই ডাক্তারের বলা কথা গুলো ওর মনে পরে যায়,ও প্রেগন্যান্ট।।এই বাচ্চাটার জন্য ওকে সুস্থ থাকতে হবে,এই বাচ্চাটাকে তো ও মারতে পারবে না আর ওকে যে এখন ঠিক থাকতেই হবে না হয় লড়াই করবে কি করে??

রান্নাঘরে গিয়ে রান্না করে নিজে কিছুটা জোর করে খেলো,খাইয়ার ইচ্ছে না থাকা শর্তেও বাচ্চাটার কথা ভেবে জোর করে হলেও খেলো।।মিমির মা বাবা আর ওর মা বাবার জন্য খাবার নিয়ে বের হল।।মিমির বাসায় পৌঁছে তাদের খাবার খাইয়ে দিয়ে তাদের থেকে বিদায় নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশে রওনা হলো…

চলবে…………