মুখোশের_আড়ালে পর্ব-১৫

0
3180

#মুখোশের_আড়ালে
#Writerঃতাসনিম_রাইসা(আরিয়ানা)
#Partঃ15

আরিয়ান ভেতরে ঢুকেই দেখলো ইকবাল রক্তাত্ত অবস্থায় নিচে মাথা ধরে শুয়ে আছে,তার পাশেই ১৯ ২০ বছরের একটা মেয়ে কান্না করছে।।তার গায়ের জামাটা জায়গা জায়গা দিয়ে ছেড়া…আরিয়ানকে দেখেই ইরা গুটিসুটি মেরে বসলো,ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো সে,

ইরাঃকে আপনি??
.
আরিয়ানঃআমি আরিয়ান,ভয় পেও না…তোমার বাবার এরকম অবস্থা হয়েছে কি করে??
.
ইরাঃকিছু লোক এসে আব্বুকে খুব মেরেছে,আমার গায়ে হাত দিয়েছে

এতটুকু বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলো ইরা,বাবার এই অবস্থায় যে ইরা ভয় পেয়েছে বেশ বুঝতে পারছে আরিয়ান…যত দ্রুত সম্ভব ইরাকে সাথে নিয়ে ইকবালকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হলো,হাতে ফোন নিয়ে নীরবকে কল দিলো,কিন্তু নীরবের ফোন অফ বলছে,বেশ চিন্তায় পরে যায় আরিয়ান…নিজেকে সামলে ইকবালকে হসপিটালে চিকিৎসারত অবস্থায় রেখে বাসার দিকে রওনা দেয় সে,বাসায় পৌঁছে নীরবকে রুমে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো আরিয়ান,কিচেন থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে সোফায় এসে বসলো আরিয়ান,পানি পান করে মিমির সাথে হওয়া সব কিছু নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে সে নিজেও জানে না…সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা না করেই অফিসে চলে আসে আরিয়ান…হসপিটালে কল করে জানতে পারলো ইকবাল এখন কিছুটা ভালো আছে,সুস্থ হতে টাইম লাগবে…

আজ পুরো ৭ মাস কিন্তু মিমির কেইশ নিয়ে এখনো কিছু করতে পারছে না আরিয়ান,রাইকে নিয়েও তার বেশ চিন্তা হচ্ছে,কোনো খবর সে পাচ্ছে না…রাইয়ের মা বাবাকে অনেক কষ্টে সামলেছে সে…রাইকে নিয়েই ভাবছিলো আরিয়ান,দরজায় টোকা পরতেই ধ্যান ভাঙলো তার,দরজায় তাকিয়ে ইকবালকে দেখে হেসে ভেতরে ঢুকতে বলে মিমির কেইশের ফাইলটা হাতে নিয়ে ইকবালের উদ্দেশ্যে বললো,

আরিয়ানঃএখন কেমন আছেন ইকবাল সাহেব??
.
ইকবালঃজি স্যার আলহামদুলিল্লাহ ভালো
.
আরিয়ানঃসেদিন কি হয়েছিলো আমায় সবটা বলুন তো

আরিয়ানের কথামতো অফিসার ইকবাল সব কিছু খুলে বললো…আরিয়ান খুব মনযোগ সহকারে সব কথাগুলো শুনলো,এবার ওর কাছে সব ব্যপার ক্লিয়ার…ইকবালের কাছ থেকে সবটা শুনে ফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে যায় আরিয়ান…মিমির মা বাবার সাথে দেখা করে হসপিটালে যায় রিমির বাবা আরাফ চৌধুরীর সাথে দেখা করতে…সেখান থেকে জানতে পারে অনেক দিন যাবত রিমির সাথে তার যোগাযোগ হয় না শুধু একটা ম্যাসেজ এসেছিলো রাইয়ের ফুফুর বাসায় সে বেড়াতে যাচ্ছে,নীরবকে একটু এসব থেকে আলাদা রাখতে চায়…তার মেয়ের উপর তার বিশ্বাস আছে বলে আর রাইয়ের সাথে আছে বলেই উনি আর তেমন মাথা ঘামায় নি..আরিয়ান সত্যিটা লুকিয়ে আরাফ চৌধুরীর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে…গাড়ি ড্রাইভ করে একটা পার্কের কাছে এসে নীরবকে কল দিয়ে আসতে বলে আরিয়ান,নীরব পার্কে এসে আরিয়ানের পাশে এসে দাঁড়িয়ে আরিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললো,

নীরবঃকি রে এখানে কেনো ডাকলি?বাসায় গিয়েও তো সব বলতে পারতি
.
আরিয়ানঃবাসায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে তাই সেখানে কিছু বলা যাবে না
.
নীরবঃমানে কি বলছিস এসব??এই ক্যামেরা আসলো কোথা থেকে??
.
আরিয়ানঃসব বলবো তবে তোর কিছু হেল্প চাই আমার,আজ রাতেই যা হওয়ার হবে…রাইকে আর রিমিকে নিয়ে আমার বেশ চিন্তা হচ্ছে,বিশেষ করে রাই,ওর গর্ভে একটা বাচ্চা শিশু বেড়ে উঠছে এই সময় ও আছে কোথায় সেটা তো জানতেই হবে
.
নীরবঃআমি আগেই বুঝেছিলাম ওদের কিছু হয়েছে,মা বাবা টেনশন করবে বলে কিছু বলি না আর তুই বিজি থাকিস তাই তোকেও বলতে পারি না
.
আরিয়ানঃআমি মিমির কেইশটা নিয়ে বিজি ছিলাম,সব কিছুর রহস্য আমি বের করেছি…আজ রাতেই এর সমাপ্তি ঘটবে,তোকে আমি যা বলবো তুই ঠিক তাই তাই করবি
.
নীরবঃহুম বল কি করতে হবে আমায়??

নীরবকে সবটা বুঝিয়ে দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো আরিয়ান,ইকবালকে আসতে বলে নিজে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো…ইকবাল ভেতরে ঢুকতেই তার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো আরিয়ান,

আরিয়ানঃমিস্টার ইকবাল আপনার কিছু কাজ করতে হবে,সঠিক ভাবে না করতে পারলে বুঝেনই তো কি করতে পারি আমি(শয়তানি হাসি দিয়ে)
.
ইকবালঃজি স্যার জানি,আমায় কি করতে হবে তাই বলুন
.
আরিয়ানঃশুনুন আজ রাতে আপনি আপনার টিম নিয়ে রাইয়ের বাসার একটু দূরে যে বাড়িটা আছে সেখানটায় থাকবেন,আমি সবাইকে বলে রেখেছি তারা আপনার সাথেই থাকবে…সেখান থেকে রাইয়ের বাড়ির দিকে খেয়াল রাখবেন,বাড়িটা থেকে কেউ গভীর রাতে বের হয় কিনা,যদি আমি বের হই তাহলে আমার পিছু পিছু যাবেন,খবরদার কেউ যেন দেখতে না পায়,আমি ঠিক যেখানটায় যাবো সেখানে পৌঁছে খুব সাবধানভাবে কাজ করবেন…সময় হলে আমি আপনাদের ইশারা করবো ঠিক সেই মুহূর্তে অ্যাটাক করবেন…আপাতত এতটুকুই আপনার কাজ বাকিগুলো আমি ম্যানেজ করবো ওকে
.
ইকবালঃওকে স্যার
.
আরিয়ানঃবার বার বলছি খুব সাবধানভাবে কাজ করবেন আর হ্যাঁ ইরাকে বাসায় একা রাখবেন না,ওকে আমার খুব দরকার…আপনি একটা কাজ করুন রাইয়ের বাসার পাশে ওর এক আন্টি থাকে মিনারা বেগম,আপনি উনার কাছে ইরাকে রেখে আসবেন আমি মিনারা আন্টিকে বলে রাখবো
.
ইকবালঃওকে স্যার…

ইকবালের সাথে কথা শেষ করে বাড়ির দিকে রওনা হয় আরিয়ান,আজ রাই আর রাইয়ের পরিবারকে বড় কিছুর মুখোমুখি হতে হবে…বাসায় পৌঁছে শাওয়ার নিয়ে মসজিদে গেলো আরিয়ান…মাগরিবের নামাজ আদায় করে বাসায় পৌঁছে রাজের রুমে রাজকে দেখতে গেলো সে,কাজের ভীরে ওর সাথে এত দিন কথা হয় নি তার…রাজের রুমে গিয়ে দেখলো রাজ শুয়ে শুয়ে রাইয়ের ছবি দেখছে…আরিয়ানকে দেখে রাজ শোয়া থেকে উঠে বসলো,

আরিয়ানঃকি রে তুই কেমন আছিস??
.
রাজঃএই তো ভালো,তুই??
.
আরিয়ানঃহুম ভালো…কাজের চাপে তোর খবর নেয়া হয় নি।।রুম থেকে বের হস না কেনো??
.
রাজঃএমনি……
.
আরিয়ানঃআচ্ছা আমার অনেক কাজ আছে,পরে কথা হবে রে
.
রাজঃওকে

রাজের সাথে কথা বলেই নিরবের রুমে গিয়ে ওকে রেডি থাকতে বলেই নিজের রুমে গেলো আরিয়ান…বিছানায় শুয়ে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে গ্যালারিতে ঢুকে রাইয়ের কতগুলো পিক বের করলো,রাইয়ের কথা তার বড্ড বেশি মনে পরছে…রাইকে যে সে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসতো,কখনো মুখ ফুটে বলতে পারে নি,সেদিন ছোট্ট একটা ম্যাসেজ দিয়েছিল সে কিন্তু রাই কি বুঝতে পেরেছিল…রাইয়ের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরে খেয়ালি করে নি…মাঝ রাতে ঘুম ভাঙ্গে আরিয়ানের,নিজের চোখের সামনে সে রাজকে দেখতে পায়…রাজ তাকে বলছে,

রাজঃঅনেক তো রাইয়ের জন্য তোর দরদ,আজ তোর সামনে রাইকে মারবো সাথে ওর বাচ্চাকে…তুই তো হেল্প করেছিলি রাইকে এই বাড়ি থেকে বের করতে…শালা তোর পানির গ্লাসে যে আমি ওষুধ মেশাই তা তুই জানিস না…এখন তো তুই আমার আয়েত্তে আছিস,আমি যা বলবো তাই করবি…

কথাগুলো বলে পৈচাশিক হাসিতে মেতে উঠে রাজ…আরিয়ান এক দৃষ্টিতে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে,রাজ আরিয়ানকে নিয়ে রাইয়ের বাড়ি থেকে বের হয়…দূর থেকে ইকবাল সবটা খেয়াল করলো,ইকবালের বেশ রাগ লাগছে এই রাজের উপর…কি চায় সে??কেনোই বা সে এসব করছে??নিজের মনে কথাগুলো ভেবে আরিয়ানের বলা কথা মতো সে কাজ শুরু করে…ইকবাল তার সহকর্মীদের নিয়ে আরিয়ান আর রাজের পিছু পিছু যায়…রাজ আর আরিয়ান পুরানো একটা বাড়ির ভেতরে ঢুকে,তাদের পিছু পিছু ইকবালও ঢুকে…ইকবালের সাথে কিছু পুলিশ ঢুকে আর বাকিগুলো সেই বাড়ির বাহিরে আড়ালে লুকিয়ে থাকে…ভেতরে ঢুকতেই ইকবালের বুকটা কেপে উঠে,রাই একটা বিছানায় শুয়ে শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে তার পাশে রিমি শুয়ে আছে,সেন্স নেই…

কারো পায়ের শব্দে আড়ালে লুকিয়ে পড়লো ইকবাল সহ বাকি পুলিশ অফিসারগুলো…ভেতরে ঢোকা লোকটিকে দেখে অবাক হয় ইকবাল,সে ভাবতেও পারি ঠিক এই মুহূর্তে এমন একজন মানুষকে সে দেখতে পাবে…

চলবে………