মুখোশের_আড়ালে পর্ব-১৪

0
2846

#মুখোশের_আড়ালে
#Writerঃতাসনিম_রাইসা(আরিয়ানা)
#Partঃ14

রাইয়ের ফোন থেকে ছোট্ট একটা মেসেজ আসে আরিয়ানের ফোনে…আরিয়ান মেসেজটা দেখে বেশ অবাক হয়,মেসেজটা পড়তে থাকে সে…মেসেজটাতে ছোট্ট করে লিখা ছিলো
_”আমি আর রিমি কিছুদিনের জন্য রিমির এক বান্ধবীর বাসায় এসেছি,আমাদের জন্য চিন্তা করো না,ভাইয়ার দিকে খেয়াল রেখো”
মেসেজটা পড়া শেষে আরিয়ান নিজ মনেই ভেবে যাচ্ছে এত সকাল সকাল কাও কে না বলেই ওরা চলে গেলো,এমন একটা পরিস্থিতিতে রাই কি করে যেতে পারলো কিছুতেই বুঝতেছে না আরিয়ান…মাথা ব্যথাটা আবার জানান দিচ্ছে,কোনো রকম তৈরি হয়ে মামানিকে রাই আর রিমির কথা বলেই বেরিয়ে গেল অফিসের উদ্দেশ্যে,থানায় পৌঁছে অফিসার ইকবাল হোসেনকে ডাকলো সে…আরিয়ানকে দেখলেই ইকবাল হোসেনের হাতপা কাপাকাপি শুরু করে দেয়,আরিয়ান বিষয়টা সেই প্রথম দিন থেকেই লক্ষ করছে,রাই অফিসারকে কড়াভাবে কথাগুলো জিজ্ঞাসা করার পর থেকেই উনার এই অবস্থা…অফিসার ইকবাল তার কাছে আসতেই কাঁপা গলায় আরিয়ানকে বলে উঠলো,

ইকবালঃআমায় কি ডেকেছিলেন স্যার!!
.
আরিয়ানঃহুম দেখেছি,বসুন আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে
.
ইকবালঃজি স্যার বলুন(চেয়ার টেনে বসে)
.
আরিয়ানঃমিমির কেশের সবগুলো ফাইল আমায় দেবেন আর হ্যাঁ যত দ্রুত সম্ভব আমি খুনিকে ধরতে চাই,আশা করি আপনি আমায় সাহায্য করবেন…
.
ইকবালঃজি স্যার(কাঁপা গলায়)
.
আরিয়ানঃওকে আর শুনুন আপনায় দুটো নাম্বার দিচ্ছি,নাম্বার দুটো এখন,এখন নয় সকাল থেকে ঠিক কোথায় ছিলো বা আছে সব তথ্য জেনে আমায় জানান
.
ইকবালঃওকে স্যার…

আরিয়ানের সাথে কথা বলেই দরজার দিকে হাঁটা দিলো অফিসার ইকবাল হোসেন,দরজার কাছে যেতেই পেছন থেকে আরিয়ানের ডাকে কাপাকাপা হাতপা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো সে,আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে উঠলো সে,

ইকবালঃস্যার আর কিছু বলবেন??
.
আরিয়ানঃAre you okkk??
.
ইকবালঃyes sir I am okkk
.
আরিয়ানঃআচ্ছা ইকবাল সাহেব আপনার কি ছোট থেকে হাতপা কাপাকাপির রোগ আছে নাকি??
.
ইকবালঃমা…মা…মানে স্যার ঠিক বুঝি নি
.
আরিয়ানঃআপনি আমায় দেখে এত কাপাকাপি কেনো করেন বলুন তো আমায়??
.
ইকবালঃকই স্যার??এমনিতেই কিছু না
.
আরিয়ানঃকিছু না হলেই ভালো…আপনাকে যে কাজটা করতে বলেছি সে কাজটা জলদি সারুন
.
ইকবালঃওকে স্যার…

ইকবালকে বিদায় দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো আরিয়ান,সেই সকাল থেকে তার মাথা ব্যথা করছে,কমার কোনো চিহ্ন সে পাচ্ছে না বরং ব্যথাটা তীব্র হয়ে অসহ্য যন্ত্রণা দিচ্ছে তাকে,কাল রাতে ঠিক কি করে সে রাইয়ের রুমে গেল তাই ভাবছে আরিয়ান…শত মনে করার চেষ্টা করেও রহস্য উদঘাটন করতে পারলো না সে,বৃথা চেষ্টা না করে সে রাই আর রিমির কথা ভাবছে।।এরকম একটা মুহূর্তে রাই এত কেয়ারলেস হলো কি করে??মিমির কেশটার রহস্য বের না করেই সে রিমির সাথে বেড়াতে বেরিয়ে গেলো??কি করে পারলো ও এটা??এই মুহূর্তে রাইয়ের উপর খুব রেগে আছে আরিয়ান…তার ভাবনার ছেদ ঘটলো অফিসার ইকবালের ডাকে,হাতে কিছু ফাইল নিয়ে প্রবেশ করলো সে…পেছন ফিরে তাকিয়ে ইকবালকে চেয়ারে বসতে বলেই ফোনটা হাতে নিয়ে কল লাগালো রাইয়ের ফোনে,রাইয়ের ফোন সুইচ অফ বলছে বেশ ঘাবড়ে যায় আরিয়ান…তার কাছে ব্যপারটা বেশ সন্দেহ জনক লাগছে,রিমির ফোনে ডায়াল করলো সে রিমির ফোনটাও অফ…চেয়ারে বসতে বসতেই ইকবালকে বলে উঠলো সে,

আরিয়ানঃযে কাজটা দিয়েছিলাম সেটা কি হয়েছে??
.
ইকবালঃজি স্যার হয়েছে…প্রথম যে নাম্বারটি দিয়েছিলেন সেটা রাইয়ের তো…
.
আরিয়ানঃহুম আপনার কাছে ওর নাম্বার ছিল নাকি
.
ইকবালঃজি স্যার উনাদের পরিবারের সবার নাম্বার আমি নোট করে রেখেছিলাম…যাই হোক পরের নাম্বারটা আমি বলতে পারবো না কার তবে দুটো নাম্বার তো রাইয়ের বাড়ির ঠিকানাই বলছে,সকাল থেকে এই পর্যন্ত দুটো ফোন মানে সিম সেখানেই আছে,ওখান থেকে একটুও নড়চড় হয় নি…

ইকবালের কথা শুনে আরিয়ান বেশ অবাক হলো সাথে তার মাথায় একরাশ প্রশ্ন আর চিন্তা এসে বাসা বাধলো,তার মাথায় রাজের নামটাই ঘোরপাক খাচ্ছে,রাই আর রিমির কোনো ক্ষতি হলো না তো।।ইকবাল প্রশ্নসূচক দৃষ্টি নিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

ইকবালঃআচ্ছা স্যার আপনি তো সেই বাড়িতেই থাকেন তাহলে হঠাৎ রাইয়ের নাম্বার…

মিমির কেশের ফাইলগুলো হাতে নিয়ে চোখ বুলাতে বুলাতে ইকবালকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো আরিয়ান,

আরিয়ানঃতা আপনার না জানলেও চলবে…এখন এক কাজ করুন রাইয়ের বাসার পাশের প্রতিবেশী সিয়াম যে রিতুর সুইসাইড করার ৭ ৮ মাস আগে দেশ ছেড়ে লন্ডনে গিয়েছিলেন তার সাথে আমার যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করুন
.
ইকবালঃওকে স্যার আমি এখন আসছি…

আরিয়ান মিমির কেশের ফাইলগুলো খুব মন দিয়ে দেখছে…ময়রাতদন্ত রিপোর্টে স্পষ্ট লিখা সেদিন রাতে মিমিকে ধর্ষণ করেছে নীরব,ব্যপারটা বিশ্বাস করতে পারছে না আরিয়ান…নীরব কি করে এই কাজ করবে??কোথাও একটা ঘোরমিলের গন্ধ পাচ্ছে সে…

রাত ১ টা কারো পায়ের শব্দে নড়েচড়ে বসলো রাই,সকাল থেকে তার পেটে কিছুই পরে নি…সে রিমির সাথে সাথে তার গর্ভে থাকা বাচ্চাটাকেও বাচাতে চায়,শরীর প্রচুর মাত্রায় দুর্বল হয়ে গেছে যার জন্য ঠিক মত নড়াচড়াও করতে পারছে না রাই…দুর্বল গলায় বলে উঠলো সে,

রাইঃপ্লিজ আমার চোখের বাধনটা খুলে দিন,আমার চোখে ভীষণ জ্বালা করছে,সাথে প্রচুর ব্যথাও করছে

কারো কোনো প্রকার শব্দ না পেলো না রাই,জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আবার বলে উঠলো সে,

রাইঃপ্লিজ ছেড়ে দিন না…আমার পেটে বাচ্চা আছে,সকাল থেকে কিছুই পেটে পরে নি খুব কষ্ট হচ্ছে আমার,আমার বাচ্চাটার জন্য হলেও আমায় কিছু যেতে দিন প্লিজ
.
ছেলেটিঃএত সহজে তো তোমায় ছাড়বো না জানেমান,আমাকে দেয়া প্রতিটা কষ্টের শোধ আমি তুলবো…বেশি ভালবেসেছিলাম বলে তুমি আমায় অনেক আঘাত করেছো,আমি যত আঘাত পেয়েছি তার থেকে বহুগুণ আঘাত তোমায় পেতে হবে গো সুইটহার্ট…
.
রাইঃপ্লিজ যেতে দিন আমায়,রিমি কোথায় প্লিজ বলুন রিমি কোথায়??(কান্না করতে করতে)
.
ছেলেটিঃকথা কম…খাবার এনেছি,আমি খাইয়ে দিচ্ছি চুপচাপ খেয়ে নাও না হয় তোমার ফ্রেন্ড রিমি শেষ হয়ে যাবে আর তার জন্য দায়ী থাকবে তুমি

রাই আর কিছু বললো না চুপচাপ খেয়ে নিলো…রাইকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে চলে গেলো ছেলেটি…রাই একমনে আল্লাহকে ডাকছে আর কান্না করেই যাচ্ছে,কোন
পাপের শাস্তি তাকে আল্লাহ দিচ্ছে সে বুঝতে পারছে না।।

রাত ১ঃ৪৫ মিনিট ফোনের রিংটোন ঘুম ভাঙলো আরিয়ানের,চোখ কচলাতে কচলাতে শোয়া থেকে উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে মেজাজটা গরম হয়ে গেল তার…ফোনে ভেসে উঠা নাম্বারে ডায়াল করলো সে,ফোনটা রিসিভ হতেই একপ্রকার রাগ নিয়েই বলে উঠলো সে,

আরিয়ানঃমিস্টার ইকবাল তোমার সমস্যাটা কি??এত রাতে কেউ কল দেয়…

ফোনের ওপাশ থেকে একজন মেয়ের ভয় আর কান্নামাখা কণ্ঠ শুনতে পেলো আরিয়ান…কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলে উঠলো সে,

আরিয়ানঃকে??
.
মেয়েটিঃআ…আ…আমি ইরা,আংকেল আমাদের বাসায় একটু তাড়াতাড়ি আসুন না প্লিজ আমার আব্বুর অবস্থা খুব খারাপ
.
আরিয়ানঃকি হয়েছে ইকবালের??
.
ইরাঃআপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি আসুন

কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিল ইরা,আরিয়ান আর কিছু না ভেবেই বসা থেকে উঠেই বেরিয়ে পরলো ইকবালের বাড়ির উদ্দেশ্যে…গাড়ি ড্রাইভ করছে সে,হঠাৎ তার মাথায় আসলো বাসার মেইন দরজা খোলা কেনো ছিল আমি তো রাতে শোবার আগে দরজা লক করেই রেখেছিলাম,তাহলে খুললোটা কে??এসব ভাবতে ভাবতেই ইকবালের বাসার সামনে চলে আসলো,গাড়ি থেকে বেরিয়েই দৌড়ে ইকবালের বাসার ভেতর ঢুকে যা দেখলো তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না আরিয়ান…

চলবে……