মুগ্ধতার ভিরে পর্ব-২৬ এবং শেষ পর্ব

0
5480

#মুগ্ধতার__ভিরে🥀
#পর্ব______২৬(শেষাংশ প্রথম খন্ড)
#লেখিকাঃ ফাতেমা জোহরা নাভিলা

___কেমন আছ!

“আমি নিশ্চুপ কথা বলার মত ভাষা জেনো হারিয়ে ফেলছি। হাত, পা অবশ হয়ে আসছে।রিতিমত স্নায়ুকোষ জানিয়ে দিয়েছে তারা যে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছি।হতম্ভব হয়ে শুধু তার দিকে বিস্মিত চাহনিতে তাকিয়ে আছি। সে আমাকে তার দিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভারি অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। সাথে সাথেই হাল্কা আওয়াজ করে কেশে উঠল। আমি তার থেকে দৃষ্টিপাত সরাতেই তার পাশে থাকা একটি মিষ্টি মেয়ে দেখলাম। সস্মিত হাসি দিয়ে আমার দিকেই জেনো এতক্ষন অধিক আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে ছিলো।চোখে চোখ পরাতে সে হাসিমুখে এভার আমার সামনে এসে আমার দুইহাত আঁকড়ে ধরে বলল।

___আর ইউ নাভিলা!

“আচমকা তার এমন প্রশ্নে শুনে আমি কিছুটা অবাক হলাম। অবাকটা নিয়েই মাথা দুলালাম। যার অর্থ হ্যাঁ আমিই নাভিলা। বলার সাথে সাথেই মেয়েটি আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল ”

__ থাংক ইউউ থাংক ইউ সো মাচ্ ফর এভ্রিথিং। তুমি এই গাধাটাকে তখন অইসব না বললে। এই গাধা এই জিন্দেগিতে মাথাখাটিয়ে কিছুই বুঝার চেষ্টাই করতো না। আমি আর জায়ান তো রিতিমত এই বেত্তমিজকে বুঝাতে বুঝাতে তিক্তবিরক্ত হয়ে গিয়েছি।

__মানেহ্!

___ তুমি আমাদের জন্য যাহ্ করেছ তা আসলেই ভুলার মত নয়।

আমি বিস্মিত নিয়ে বিপরীতে আবার ও বলে উঠলাম।
__ মানে্ বুঝলাম না ঠিক!আমিই আবার কি করেছি আপাদের জন্য! আমাকে একটু বুঝিয়ে সুঝিয়ে বলবেন আপু?

মেয়েটা হেসে আমাকে সম্মিত জানিয়ে বলল,
__নিশ্চয়। তার আগে আমরা বরং সামনের অই ঝিলের দিকটাই যাই এইদিকে মানুষের অনেক কোলাহল কিছুই আমাদের আর বুঝা হয়ে উঠবে না।


“ঝিলের পাশাপাশি বসে আছে ত্রিনয়না, নাভিলা আর ণয়ন। এইদিকে ভির বাট্টা তেমন একটা নেই।নাভিলা অধৈর্য্য হয়ে সবটা জানার জন্য অধিক আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে ত্রিনয়না আর ণয়নের দিকে।ত্রিনয়না ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নড়েচড়ে বসে এবার বলা শুরু করলো,,,,

___ আমি ত্রিনয়না। ণয়ণ আর আমার প্রায় দুইবছরের সম্পর্ক । আমার বাবা মামুর(আসিফ) কোম্পানিতেই ম্যাঞ্জার হিসেবে কাজ করে। মূলত সেইখানে থেকেই সূত্রধরে কোন একদিন আমাদের স্টোরিটা শুরু হয়েছিলো । রিলেশনের এই দুই বছর আমাদের খুবই ভালো কাটছিলো। জায়ান শুরু থেকেই আমাদের ব্যাপারে সবই জানতো। ও শুরু থেকে দুইজনকেই বেশ সাপোর্ট করতো।রিলেশনের ডিফিকাল্ট সময়গুলো তে হেল্প ও অনেক করেছে আমাদের। যাহ্ এই জীবনে সবটা চাইলেও ভুলার মত নয়। সবই ঠিকঠাক ভাবে চলছিলো কিন্ত সামান্য কয়েকদিন এর ব্যবধানে সব কেমন জানি হঠাৎ করে উল্টপাল্ট হয়ে গিয়েছে।কয়েক দিন আগে আমি ভার্সিটি থেকে ফিরে জানতে পারি। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে, এটাও আমার কাজিনের সাথে। এখন অপেক্ষা শুধু আমার অনার্স ফাইনাল ইয়ারের, শেষ হলেই আমাদের বিয়ে হবে।আমি ণয়নকে সাথে সাথেই ফোন করে সবটা জানাই। আর বলি বাবার সাথে আমাদের ব্যাপারে কথা বলতে। ও যদি বাবার সাথে কথা বলে বাবা কখনো অমত করবে না এটা আমার ধীরো বিশ্বাস। কিন্তু সমস্যা বাদে সেইদিনই বাসা থেকে ওর জন্য তোমাকে দেখতে যায়। আর দেখতে গিয়ে মামুর সেই ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়ে যায়। যাকে সে নিজের থেকে ও বেশি ভালবাসে। ণয়ন মামুকে আমার কথা বলতে চেও সেইদিন তার মুখের দিকে তাকিয়ে আর বলতে সাহস পায় না। তার পরে ঘটনা তো তোমার সবটাই জানা।

আমি হতাশ ভরা ভারি নিশ্বাস ত্যাগ করে বললাম,,
__ সবই বুঝলাম আমরা সবাই পরিস্থিতির বেড়াজালে খুব বাজে ভাবে আটকে পরেছিলাম। যেখান থেকে বের হওয়াটা খুব মুশকিল ছিল।কিন্তু একটা কথা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না,,,

__কি কথা!
ণয়ন বলল,,,

__আমি মানে আপনাকে হেল্প করলাম কিভাবে! আমিত এইসবের কিছুই জানতাম না তাহলে আপু যে বলল।আর জায়ান যেহেতু আপনাদের ব্যাপারে শুরু থেকেই সবটা জানতো তাহলে ওনি হেল্প করেনি কেনো আপনাদের? ওনি চাইলে তো সাহায্য করতে পারতেন।তাহ,,,

__ আমি বলছি।তোমার ফাস্ট কোয়শনের অ্যান্সার,,,, কিহ্ বলত অনেক সময় আমরা কিছু না করেও অজান্তে একে উপরের জন্য অনেক কিছুই করে ফেলি ।যেমন তুমি,, সেইদিন আমাকে ইতস্তত বোধ করতে দেখে, আমার সমস্যা কথা না জেনেও আমাকে কি সুন্দর করেই না সবটা বুঝিয়ে সমাধান দিয়ে ছিলে। তুমি আসলে ঠিকই বলেছো সম্পর্কের প্রানভ্রমরা হল ভালোবাসা। আর ভালবাসা যে সম্পর্কে না থাকে সেই সম্পর্ক আর কিছুতেই সতেজ থাকেনা। আর সেকেন্ড অ্যান্সারটা হল,, জায়ান,,

_এটা নাহয় আমি বলিই
ত্রিনয়না হাসিমুখে বলল,,
সেই আর বলতে।জায়ান যদি আমাদের হেল্পই না করতো তাহলে তো আমাদের বিয়ে করা কখনই সম্ভব হত না। এই গাধা তো প্রথমে বিয়ে করতে রাজিই ছিলো না। কিন্তু জায়ান অনেক কষ্টে লাস্ট মোমেন্ট এসে একে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিজের ফ্রেন্ডদের সাথে মিলে সব কিছু ম্যানেজ করছে আমাদের জন্য।ওহ্ আর একটা কথা জায়ান কিন্ত প্রথম থেকেই জানতো বিয়েটা তোমার সাথেই হচ্ছে তাই তো তার এত মাথা ঘামানো😉

__মানে্হ জায়ান সবই জানতো!
চিল্লিয়ে বলে উঠলাম আমি,

__হ্যাঁ
কানে দুই হাত চেপে ণয়ন বলল,,

___তার মানেহ উনি আমার সাথে ইচ্ছে করেই প্রথম দিন থেকেই এমন অ্যাক্ট করে এসেছেন। যে সে এইসব কিছুই জানে নাহ্ অথচ,,,কত বড় ইত্তর লোক উনি ভাবা যায়!
________________________
চৌদ্দ গ্রাম কুমিলার জেলার ছোট একটি এলাকা। মাটি দিয়ে আঁকাবাঁকা উঁচু নিচু রাস্তা। শহরে ধুলাবালি ভির বাট্টা ঠেলে নিরিবিলি সবুজ শ্যাম গ্রামীণ পরিবেশ। শান্তি মনোমুগ্ধ করার জন্য যথেষ্ট।

রাত প্রায় আট টার দিকে,এক প্রকার গাদাগাদি করেই আমরা দুই বড় মাইক্রো গাড়িতে করে রওনা দিলাম। ঢাকা টু কুমিলা।মূলত আমাদের আজকে যাওয়ার কথা ছিল সন্ধায় ট্রেন করে । জায়ান,আমার,ভাবির,আবির ভাইয়া, এনি আর আবরার ভাইয়ার সেই অনুযায়ীই টিকেট ও ছয়টা কেটেছিলেন বাবাই।কিন্তু নানুজান বিকেলে দিকে বাবাইকে ফোন করে সাফসাফ জানিয়ে দিয়েছে। আসবে যেহেতু তাহলে দুই পরিবারকে একসাথে করে নিয়েই আসতে হবে। আপাতত সে কিছু জানে না বুঝতে আর শুনতে ও চায় না।তার এই আব্ধার রাখার জন্য কি করে কি করবে বাবাই এটা বাবাই জানুক।সবায়কে আসতে হবে মানে আসতেই হবে ব্যাস।আর সাথে দাদিকে ও নিয়ে আসতে হবে তার কাছে।কি আর করার নানুজানের যেহেতু উপর থেকে অর্ডার জাহির করেই দিয়েছেন।

সেহেতু অল্প সময়ে এতোগুলো টিকেট ও তো একসাথে লাস্ট মোমেন্ট এসে পাওয়া মহা মুশকিল। তাই হুট করেই বিনা পস্তুুতিতে খুবই কম সময়।পূনরায় সব কিছু ম্যানেজ করে। আমরা সবায় যার যার পোঁটলাপুটলি নিয়ে এক প্রকার ছুটলাম কুমিলায়। রাস্তা তেমন একটা যানজট না থাকায় রাত সাড়ে এগোরাটা দিকেই আমার পৌঁছালাম। গাড়ি ঠিক নানুজানের বাসায় থেকে দশ মিনিট দূরে বাজারের সামনে থামানো হল।গাড়ির ড্রাইভার আমাদের জানালো সে এর থেকে আর বেশি সামনে যেতে পারবে না। কি আর করা সবায় গাড়ি থেকে এক এক করে নেমে পরলাম। যার যার ল্যাকেজ নিয়ে। সামনে চিকন সরু রাস্তা ধরে খুব সাবধানে সহকারে সবাই ধীর পায়ে হাঁটতে লাগলাম। একে তো কাচা রাস্তা দ্বিতীয় তো মাটি বেশ ভিজা। পরে যাওয়ার আশংকা অনেক আছে।চারপাশ ভারি নিঃশব্দ অন্ধকার গ্রাস করেছে পরিবেশ কে। ঝোনাকি ও আর কত না নাম জানা পোকামাকড় আওয়াজ করছে।রাস্তায় তেমন কোনো যানজট বা কোলাহল নেই বললেই চলে।থাকবে বা কি করে! এখানে রাত দশটা মানেই অনেক গবির রাত হয়ে যাওয়া। আর এখনতো বাজে বারোটা ছুঁই ছুঁই। আমি রিয়ার হাত ধরে সামনে টিপে টিপে আগাতে লাগলাম।ওহ্ বলতে তো আপনাদের ভুলেই গিয়েছি আমিই।রিয়াও আমাদের সাথে এসেছে।এর আগে রিয়া আর আমার তেমন একটা গ্রাম দেখা হয়নি। কিন্তু দুইজনের বেশ ইচ্ছে ছিলো গ্রাম দেখার।আজ যেহেতু হাতে সুযোগ আর সময় পেয়েছি, গ্রামে যখন ঘুরবই তাহলে দুই বান্ধুপি কেনো একসাথে নয়।রিয়া জায়ান আর আমার বিয়ে নিউস নিয়ে যতোটা না হতাশ হয়েছে। তার থেকে বেশি অবাক হয়েছে আবরারকে আমাদের বাসায় দেখে। যার থেকে নিজেকে এতদূর পালানোর চেষ্টা ঘুরেফিরে আজ তার কাছেই হাতেনাতে এভাবে ধরা পরতে হল তাকে! রিয়া আর আবরার ভাইয়ার সোসিয়াল মিডিয়াতে পরিচয় হয়। তার পর নাকি তাদের মাঝে ছয় মাসের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে। যাহ্ রিয়া আবরার ভাইয়ার পাগলামিতে বারি অতিষ্ঠ হয়ে দুই মাস আগেই তার সাথে ব্রেক আপ করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু আবরার ভাইয়া নাকি কোনো ভাবেই তার সাথে করতে চাইনি। আবরার ভাইয়া পরে তার যাতে কোনো ভাবেই খোঁচ খবর আর না খুঁজে পায়। তাই সে নারায়ণগঞ্জ এসেছিলো মূলত তার খালার বাড়ি থেকে পড়াশুনো করতে।কিন্তু কথা হল,, ঘুরেফিরে এখন তার সাথেই মুখামুখি দেখা হয়ে গেলো তার।এই ছয় মাসে তাদের একবারো জন্য ও সামনাসামনি আর দেখা হয়ে উঠেনি। তার কারন রিয়া তখন চ্রটগ্রাম থাকতো আর ভাইয়া ঢাকায়।ভার্সিটিতে একদিন অবশ্যই দূর থেকে দেখে ছিলো কিন্তু এর পর আর কখনই দেখেনি। আবরার ভাইয়াকে দেখার পর থেকেই সে ভয়ে এক প্রকার থতমত হয়ে চুপসে গিয়েছে।

নানুবাসায় এসে যে আমি এতোটা সারপ্রাইজড হবো, সেটা আমি ভাবতেও পারিনি। নানু বাসাটা বিশাল বড় কাঠের দোতালা ভবন। দেখতে বাহির থেকে অসম্ভব সুন্দর। রাতের আধারে ও বাহির থেকে বেশ নজরকরার মত। সব থেকে বড় কথা বাহির থেকে একটা সেগুন গাছের ঢাল বাসার নিচ তালায় থেকে ঠিক ভিতরে দিকে প্রবেশ করেছে । যেটা দোতালা একটা রুম এর বারান্দা থেকে আবার বের হয়ে এসেছে।গাছটার কারনে বাসার ডিজাইনটা আরো সুন্দর বেশ নজরকরা লাগছে।এমন বাসা আমি শুধু বইয়ে আর মুভিতে দেখেছি। বাস্তবে জীবনে যে দেখতে এত সুন্দর হবে আমার জানা ছিলো না। আমরা বাসাই ঢুকতেই একদল মহিলারা কোথা থেকে জেনো ছুটে এসে আমাদের ঝেকে ধরলো।বাবাই আর দাদি সবার সাথে হাসিমুখে কুশল বিনিময় করতে লাগলো। আর আমি সবার দিকে মিষ্টি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছি । আর আশেপাশে তাকিয়ে বাসাটা খুঁটিয়ে দেখছি।


বাসায় ভিতরে প্রবেশ করতে নিতেই আমাকে আর জায়ানকে এক প্রকার থামিয়ে দেওয়া হল।সবায় ভিতরে প্রবেশ করে শান্তিতে ক্লান্তির শরীল চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছে। আর আমরা দুইজন অপরাধীদের মত বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি।জায়ান আর আমি একে উপরের দিকে তাকাচ্ছি ব্যাপারটা ঠিক বুঝার জন্য। জায়ানের বড় মামি ভিতর থেকে হাতে একটা ঢালা নিয়ে আসলেন।যার মধ্যে ছিলো একটা জ্বলন্ত প্রদীপ আর এক বাটিতে চিনি সাথে কিছু শুকনা মরিচ ও ছিলো । আমাদের মাথার চারপাশে নিয়ে বেশ কয়েকবার গুরিয়ে বরণ করলেন জায়ানের একমাত্ররো মামি। আমাদের দুইজনকে অল্প অল্প করে সাথে চামচ দিয়ে কিছুটা চিনি ও খায়িয়ে দিলেন।মামির এক পাশেই হাসিমুখে নানুজান লাঠিতে দুই হাত ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন । দেখতে ওনি অসম্ভব সুন্দর। ঠিক দাদিমার মত। আসার সময় দাদিমার থেকে জানতে পেরেছি তারা নাকি দুই বান্ধুপি ছিলেন। তাইতো দুই সখি মিলে বাবাই সাথে মামনির বিয়ে দিয়েছিলেন । এত সময় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে জায়ানের এতে বেশ বিরক্তি হচ্ছে। যাহ্ তার সাদা চেহারাতে স্পষ্ট আভা দেখতে পাচ্ছি আমি।কিন্তু আমার কাছে এসব নিয়মকানুন দেখতে বেশ ভালই লাগছে।

যাইহোক, সব নিয়মকানুন মেনে অবশেষে আমরা বাসায় ভিতর আসতে পারলাম।কিন্ত আসতে না আসতে, এক বড় ধাক্কার শিকার হলাম আমি আর জায়ান। যার জন্য মোটেও আমরা মেন্টালিটি ভাবে প্রস্তুত ছিলাম না।

নানুজান বাবাইকে আর দাদিকে বলে বসলেন।

___আমাকে না জানিয়ে তো তোমরা আমার একমাত্ররো নাতিকে চুপিচুপি বিয়ে দিয়েই দিলে ।(নানুজান)

__তোকে না জানিয়ে কখন করলাম! তোকে তো আমরা সবটাই জানিয়েছি। কোন পরিস্থিতে পরে এদের বিয়ে দিতে হয়েছে। তাহলে এভাবে বলছিস কেন!(দাদিমা)

___সেই যাইহোক, এখন আমিই ও কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাহ্ তোদের সবায়কে মানতে হবে সেই আমি কিছুই জানি না।(নানুজান)

__কি মা আপনি শুধু একবার মুখ ফুটে বলে দেখুন আমরা অবশ্যই তা মেনে নিব(বাবাই)

এর পর নানুজান যাহ্ বললেন তা শুনে সবায় খুশি হলেও। আমার আর জায়ানের মুহূর্তে মধ্যে মাথা সাত আসমান যেমন ভেঙে পরলো। আমাদেরকে নাকি আবারও বিয়ে দেওয়া হবে! এটাও কাল। জায়ান সাথে সাথেই বিপরীতে বিরক্ত নিয়ে অমত প্রকাশ করে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন নানুজানের উদ্দেশ্য,,,

_সেই দ্বিতীয় বারের মত কোনো ভাবেই আবার বিয়ে করতে পারবে না।একবার যেহেতু হয়েই গিয়েছে তাহলে বার বার করার মানে কি!এমনে আব্বু আর বাবাই আগে থেকেই মিলে ঠিক করে বসে আছেন। দুই মাস পর আমার মাস্টার্স এর ফাইনাল এক্সাম শেষ হলে, নাকি আবার ও ধুমধাম ভাবে বড় করে অনুষ্ঠান করবেন। তার কাছে এইসব কোলাহল ভির বাট্টা কোনো কালেই ভালো লাগে না।সব ভারি অসহ্যকর লাগে।তাই সেই এইসব করতে অতি নারাজ। না এখন করবে আর না পরে।

নানুজান তার কথায় দ্বিগুণ রেগে বোম হয়ে বললেন। নারাজ হলেও কিছু করার নেই। নানুভাই তোকে কাল বিয়ে করতেই হবে। তুই না করলে সেই তোর ঘাড় করবে।একবার যেহেতু করতে পারছিস, তাহলে সে জায়গায় দ্বিতীয় বার মত সেই একই ব্যক্তিকে করতে সমস্যা কি তোর!আর এমনেও আমার আশেপাশে সবায়কে নিমন্ত্রণ করা হয়ে গিয়েছে। তাই না বলার প্রশ্নই উঠে না এর মধ্যে আর।তার পর বাবাই আর আব্বুর উদ্দেশ্য বলে উঠলেন।তোমাদের কোনো কিছু নিয়ে চিন্তে নেই। আমি সব ব্যবস্থা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছি। তোমাদের কিছু নিয়ে আর ভাবতে হবে না। জায়ান এতে ও রাজি হলেন না।শেষে নানুজান আর দাদিমা মিলে তাদের অসুস্থতার নানা দিক বুঝিয়ে সুঝিয়ে বলে এক প্রকার তাকে রাজি করিয়েছেন।

________________________
সকাল সকাল দিকে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান করা হলো। আমাকে একটা কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি পরিয়ে দিলেন আম্মু। আর সাথে কাঁচা গাঁদাফুল আর গোলাপ মিশিত কিছু গহনা পরিয়ে দিলো রিয়া আর এনি মিলে। আর ঠোঁটে আমি লাল লিপিস্টিক দিলাম ব্যাস আপাতত জন্য আমি রেডি। গ্রামের সাজ বলতে আহামরি তেমন কিছু নেই। এই হাল্কা সাজই তাদের কাছে অনেক। তাদের এই নিয়মটা আমার অনেক ভাল লাগলো। এমনেই মাত্ররো নয়টা বাজে এত সকালে এত সাজার মানেই কি! এমনেই আবার বিকালের দিকে বিয়ে আছে। তখন তো না চাইতেও আমাকে সাজতে হবেই। রিয়া,ভাবি,এনি, তারা ও আজ হলুদ শাড়ি পরেছে। আর নিজেদের মন মত বেশ সাজুগুজু করেছে।দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে তাদের। বাহিরে উঠানের দিকে এসে দেখি, জায়ানকে একটা সবুজরং এর পাঞ্জাবি আর সাদা পা’জামা পড়েছেন। ওনাকে এই ঢিলাঢালা পোশাকে দেখতে এই মুহূর্তে বেশ অদ্ভুত সদ্ভুত লাগছে।আমি হাসতে চেয়েও আশেপাশে মানুষজন দেখে আর হাসতে পারলাম নাহ্। আমাকে আর ওনাকে এক সাথেই উঠানের একটা চকিতে বসিয়ে সবায় এক এক করে হলুদ লাগাচ্ছে। আর ওনি নাকমুখ কুঁচকিয়ে সবার উদ্দেশ্য বার বার বলে উঠছে,,, প্লিজ অল্প বেশি দিবেন না আমাকে। সবার শেষে আবরার ভাইয়া এসে বাটিতে যাহ্ ছিলো সব হাতে পুরে নিয়ে ওনার সাদা বিলাতি বিড়াল মুখকে হলদে বিড়াল করে দিয়ে বললেন।

____অল্প কেন! বিয়ে যেহেতু দ্বিতীয় বার মত করার সাহস রাখছিস তাহলে সেই ভালো করেই কর।
বলেই দাঁত কেলালেন ভাইয়া,,,
চলবে,,,,,

#মুগ্ধতার___ভিরে🥀
!! শেষাংশ!!
#লেখিকাঃ ফাতেমা জোহরা নাভিলা

__এই শুনুন,,

আবরারকে বিপরীতে কিছু বলতে যাবে এমন সময় নাভিলা কন্ঠ স্বর শুনে থেমে গেলো জায়ান।তার দিকে তাকিয়ে কুঞ্চিত ভ্রু বাকিয়ে বলল,,

__হুম বলুন,,

__ আমার প্রতি তো আপনার আবার তেমন কোনো ইনর্টারেস্ট নেই। নেই নেই করে কিন্তু সেই দ্বিতীয় বারের মত ভুল করে আবার ও ঠুস করে বিয়ে করেই ফেলছেন।এটাই কিন্তু সঠিক সুযোগ আপনি চাইলে এখন সময়টাকে কাজে লাগাতে পারেন ম্রিস্টার আহান্ত থুক্কু নিহান্ত ।আই মিন একটা দৌড়ের উপর দৌড় রেইস দিতে পারেন।যদি এই ব্যাপারে আপনার কোনো এক্সপ্রিএন্স না থাকে তাহলে সেই ব্যাপারে ধার সার ও নিতে পারেন।
বেশ রসিকতা নিতে জায়ানে কানে ফিসফিসে বলল নাভিলা,,

___মানেহ্!

___ কোনো মানে টানে না, এখন কিন্তু আমাকে আর কোনো ভাবেই বলতে পারবেন না। আপনার হাতে যে কোনো সেকেন্ড অফসেন ছিলো না।আপনি চাইলে কিন্তু এখন এই মুহূর্তে সদরদরজা দিয়ে পালাতে ও পারেন।আর যদি দুশ্চিন্তা ভোগতে থাকেন কিভাবে কি করে এই ভরা বিয়ে বাড়ি আসর থেকে পালাবেন। তাহলে এক কাজ করুন ফটাফট সময় আর নষ্ট না করে।আমার সেই কাঙক্ষিত হতে হতে হতে না পারা জামাই। আই মিন ণয়ন ভাইয়ার সাথে দ্রুত কন্ট্রাক্ট করে সব ইনফোরমেশন হাশিল করে নিন। তাকে ও তো সেই সময় কেউ না কেউ কোনো ভাবে হেল্প করেছিলো। আই অ্যাম ডেম সিউর ।আপনি আজ তাকে মুখ ফুটে একবার বললে সে ও আর কোনো ভাবে আপনাকে না করবে না।

জায়ান হতাশ ভরা নিশ্বাস ত্যাগ করে বলে উঠল,,,,
____ ইসসসসস আইডিয়াটা জোস ছিলো কিন্তু মিশন শুরু হওয়ার আগেই ফল্প হয়ে গেল,,,
কি বলতো এখন তো দেখছি আমি মহা সমস্যা পরে গিয়েছি । আমি যে চাইলেও একা আর কোনো ভাবেই পালাতে পারবো না।
যদিও পালাই তাহলে তো কষ্ট করে সেই আমাকে ঘুরেফিরে এই তোমার কাছেই আসতে হবে।

___কেন আসতে হবে!

___ বারেহ্ ম্যাডাম দেখছি এগেইন সব ভুলে টুলে গিলে খেয়ে ফেলেছেন । ডোন্ট ওয়ারি আমি আছি তো আপনাকে সব পূনরায় আবার রিভাইস করিয়ে দেওয়ার জন্য।

“নাভিলা জায়ানের দিকে এভার কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে।জায়ান নাভিলার কানের কাছে এসে এভার তার মত করে ফিসফিসিয়ে বলল”

__আপনি যে আমার রেজেস্ট্রি কৃত একমাত্ররো ওয়াইফ।যাকে আমি এক সাপ্তাহ আগে নিজের নামে করেছিলাম।আমি এখান থেকে যেতে চাইলেও যে কোথাও আর যেতে পারবো না। আজ বিয়েটা আমাদের ঠিকই হচ্ছে ইসলামিক সব বিধি নিয়মনীতি মেনে দ্বিতীয় বারের মত।ধর্ম্য অনুসারে কবুল বলে এখন শুধু আবার ও সেই স্বামী স্ত্রী সম্পর্কে আবব্ধ হওয়া বাকি।যদি ও বা এখান থেকে একা পালাই সেই দিন শেষে কিন্তু ঘুরেফিরে আপনার কাছেই আমাকে ধরা দিতে হবে। তাহলে এত কষ্ট করে আর পালাতে যাব কেন।
আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, ‘চুপ করুন তো সবায় দেখছে আমাদের। এই দূরে যান বলছি।’

জায়ান আমার অব্যস্থা দেখে মিটমিট করে হেসে দিলেন। বারি অসভ্য লোক ওনি। কে বলবে এই ছেলে কথা বলতে পারেন না।সুযোগ পেলেই খালি আমাকে বিভ্রান্ত ফেলে। দেখাচ্ছি মজা ওনাকে একবার শুধু হাতে নাতে পাই।
_____________________________
সন্ধার দিকে আমাদের বিয়ে। কিন্তু আমার আম্মাজানের দেখা নেই সেই সকাল থেকে। মেয়ে বিয়ে বলে কথা সে কি আর এক জায়গায় স্থির ভাবে বসে থাকবে।শত শত কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে শুধু আমাকে একবার দূর থেকে চোখের দেখা দেখে চলে যাচ্ছে।হয়ত নিজের কষ্টগুলো আমার থেকে আড়াল করার জন্য আমার থেকে দূরে সরে আছে ।

একটা গাঢ় লাল রঙের ভারী বেনারসি শাড়ি আমার গায়ে। অহনা ভাবি, এনি মিলে আমাকে সাজিয়েছে তাদের ইচ্ছে অনুযায়ীই। আমি অবশ্য আয়না দিয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবটাই দেখেছি। অতোও আমাকে খারাপ লাগছে না।দুই আর্টিস্ট মিলে সাজিয়েছে খারাপ লাগবেই বা কি কিরে। সাজানোর প্রায় শেষে মামিমনি হাতে নানুজান আমার জন্য বেশ কিছু গহনাগাঁটি কিছুক্ষন আগে পাঠিয়েছে।সেই সব এনি আমাকে এক এক করে পরিয়ে দিতে সাহায্য করছে।রিয়া আপাতত মহা ব্যস্ত আমার দুই হাত আর পা আলতা দিয়ে রাঙানোর জন্য।
এর মধ্যে ভাইয়া রুমে প্রবেশ করে বলে উঠল,,,

__কিরে তুই চুপ কেন! আমরা কাজ করতে করতে মরি আর তুই চুপচাপ বসে আছিস। কাঁদিস না কেন! বাত্তমিজ্

ভাইয়ার কথা শুনে কি রিয়েকশন করা উচিৎ বুঝলাম না। ভাইয়ার বিপরীতে বলে উঠলাম,,,

__কাঁদবো কেন!
__বারে তোর না আজ বিয়ে তো তুই কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাই বিনা। আহ্ মানুষ শুনলে কি বলবে।নাফিজের বইন কাঁদতে ও জানে না।ছেঃ মানিজ্জত পাঞ্চার।

__মানে!

___কাউকে দেখেছিস এভাবে বিয়ের দিনে এত রিলেক্স মুডে বসে থাকতে!

__ এখন তুমি কি চাও! আমি বসে বসে কাঁদি
ভাইয়া!🙄
__আলবাদ,,, কান্নার জন্য কোনো মোটিভেট লাগলে বলিস আমি আছিই তো ,,,

“কি ভাই আমার ভাবা যায়! দুনিয়ার মধ্যে মনে হয় ওয়ান পিসই আমার ভাই আছে।বোনকে একটু শান্তনা দেওয়ার জায়গায় কান্না করার জন্য এসে মোটিভেট করছে😒”

ভাইয়ার পিছু থেকে আব্বু এসে ভাইয়া কান টেনে বলে উঠলেন,,,

__এই আমার আম্মাকে জ্বালাচ্ছিস কেন নাফিজ। তোর এমন দূর সাহস কি করে হল আমার আম্মাকে বিরক্তি করার।

__কই জ্বালালাম আব্বু কান ছাড়ো সবায় দেখছে তো।

” ভাইয়ার কথা আব্বু কান ছেড়ে হেসে দিলেন তার সাথে রুমের উপস্থিত সবায় ও হেসে দিল।আব্বু ভাইয়াকে ছেড়ে আমার কাছে এসে মাথা হাত বুলিয়ে কপালে গবির চুমো দিয়ে বলল,,,”

__আজ আমার আম্মাজানকে অনেক সুন্দর লাগছে।পুরো অন্যরকম আজ যে আমার ছোট আম্মাজানের বিয়ে।
আমি বিপরীতে কিছু না বলে আব্বুকে কিছু সময় জন্য শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।তার সাথে সাথেই বুক ভার হয়ে আসলো আর চোখ থেকে টপটপিয়ে গুরিয়ে পরতে শুরু করলো নোনাজল।
_________________________________
কিছু সময় পর রুমে আম্মু, ভাইয়া, আবির ভাইয়া এসে আমাকে নিচে নিয়ে গেলো বিয়ের আসরে। জায়ানের ঠিক পাশে বসানো হলে আমাকে। জায়ান বিরক্তি নিয়ে বসে ছিলো এতক্ষন। আমাকে আসতে দেখে বেশ নড়েচড়ে আমার দিকে তাকিয়ে বসল ওনি।বসার সাথে সাথে একদল ছুটে এসে ফটাফট ছবিটবি তোলার অত্যাচার শুরু করলো। মনে হচ্ছে আমরা দুজন আপাতত চিড়িয়াখানায় কোনো আজিব প্রানী ।যাদের সাথে সবার ছবি তুলতে হবেই।একে একে ফ্যামিলির সবাই, নানুজান,দাদিমা, মামিমনি, গ্রামের লোকজন সহ আমার আর জায়ানের সাথে নানা ছবি তোলা হলো। কতক্ষন এইভাবে বসে, আবার সেইভাবে তাকিয়ে,কোলে অন্যের বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে, আবার দাঁড়িয়ে এতো এতো ছবি তুলতে তুলতে অবস্থা বেশ কাহিল। ওনার দিকে তাকিয়ে দেখি, আমার কুমড়াপটাশ রাগে বেশ গজগজ করছেন। যেকোনো সময় এ্যাটম বোমা ফাটাতে ওনি প্রস্তুত। হঠাৎ আমাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাগে কটমট করে বলে উঠলেন,,,’ এভাবে স্টুপিড দের মত ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছ কেন!এটা আদৌ কোনো বিয়ে! না বিয়ে নামক একদল লোকের অত্যাচার যতসব,,। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে মনে হচ্ছে আমি এক্ষুনি মারাটারা যাব’

একসময় বিয়ের পর্ব শেষ হলো। আত্নীয়-স্বজন যেতেই খাওয়াদাওয়া করানো হলো বাসার সবায়কে। সবশেষে আমাদের জন্য সাজিয়ে রাখা দ্বিতীয় তালায় এই বাসার বাহির থেকে সেই নজরকরা সেগুন গাছের ঢাল দিয়ে ডিজাইন রুমে বাসর ঘরে পাঠানো হলো। তখন ঘড়িতে রাত এগোরাটা হয়তো বাজছে ঘরে কোনো ঘড়ি ছিলো না তাই সময়টা আমার অনুমানিক ভাবে জানা নেই। কিন্তু মনে হচ্ছে রাত দুইটে কিংবা তিনটে বাজে। আমি রুমে এসে গা থেকে আগে সব গহনাগাঁটি খুলে এক প্রকার খাটে সব ছুড়ে ফেললাম। এতক্ষনে জেনো মন খুলে শ্বাস নিতে পারছি। রুম থেকে বের হয়ে চট করে সেই বারান্দা চলে আসলাম। আর জায়ান ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।ঠিক কতক্ষন বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম তা জানা নেই। আজ আকাশে কোনো চাঁদ নেই, নেই কোনো তারা।আছে শুভ্র জমে থাকা এক গুচ্ছো তুলোর মত মেঘ। আর চারদিকে হিম শিতল ঠান্ডা বাতাস। আবহাওয়া খুব গম্ভীর কিছু সময় ব্যবধানে হয়ত তুমুল ঝুম বৃষ্টি আসবে। এই ঠান্ডা বাতাসের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ লাগছে।জায়ান বারান্দা এসে আমার ঠিক দুই পাশে তার দুই হাত রেখে ঝুকে আমার পিছে দাঁড়ালেন। তার হুটহাট এত কাছে আসায় আমার হৃদ যন্ত্রটা সাথে সাথেই ক্রমশয় ধুকপুকানি করে লাফাতে শুরু করলো । আমি আপাতত সেই যন্ত্র তাকে পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ চোখ বুঝে সময়টাকে অনুভব করতে লাগলাম।আমার দৃষ্টি আপাতত জায়ানের দিকে নয়। কিন্তু ওনার দৃষ্টি ঠিক আমার দিকেই তা আমি ওনার দিকে না তাকিয়ে এই মুহূর্তে ঠিকই বুঝতে পারছি। বেশ কিছু সময় সেইভাবে পার করার পর উনি আমার ঘাড়ের সামনে আরো ঝুকে কানের সামনে মুখে এনে মিনমিনে স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাইরে যাবা?’

আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘এতো রাতে?’ বৃষ্টি আসবে তো!

__হুম, আসবে না আর যদি আসেও তাহলে ও সমস্যা নেই।এক সাথে নাহয় একটু বৃষ্টিবিলাস করলাম।

আমি গুরে উনার চোখের দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মত বললাম, ‘ যদি কেউ কিছু বলে তাহলে ?’

ওনি আমার কথায় হেসে জবাব দিলেন।
—” বলবে না!”

আমি উনার এক হাত ধরে সামনে ট্যাগ করে দেখিয়ে আবধারে স্বরে বললাম।

—“তাহলে আমাকে অই ঝিলটার পাশে নিয়ে যাবেন। আমার না খুব ইচ্ছে রাত্রের আধারে এমন আবহাওয়া ঝিলের পানিতে কিছুসময় জন্য পা ডুবিয়ে বসবো।নিয়ে যাবেন!”

ওনি বিপরীতে আমার এক হাত ধরে বললেন ‘চল যাওয়া যাক’।রাত্রের আধারে পাশাপাশি দুইজন হাঁটছি। চোরা চোখে দৃষ্টির অগোচরে একে উপরকে দুইজনই দেখছি। কিন্তু কাউকেই ব্যাপারটা বুঝতে দিচ্ছিনা।বুঝলেই জেনো আমাদের অনেক বড় সমস্যা হয়ে যাবে। হাতের বাজে হাত না থাকলেও দূরত্ব কম থাকায় দুইজনের হাঁটার ফলে একে উপরের হাতের সাথে বেশ কয়েকবার স্পর্শ করছে। সেই স্পর্শ অনুভূতিটা এক অদ্ভুত ভাবে মনের মধ্যে এক আলাদা কম্পন সৃষ্টি করছে। যাহ্ বলে দুই এক লাইনে প্রকাশ করার মত নয়।খুব ইচ্ছে করছে ওনার হাতের বাজে নিজের হাতের পাঁচ আঙুল ঢুকিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে। কিন্তু কোথাও জেনো আমাদের মাঝে এক কিন্তু থেকে যায়। মন মরা করে সামনে হাঁটতে লাগলাম।মিনিট দুই এক পর জায়ান পিছু থেকে আমার হাত জোরে টেনে ধরে বলে উঠলেন,,,অইদিকে কই যাচ্ছো?’ ঝিলত এইদিকে ‘এই বলে নিয়ে এলেন ঝিলের পানির কাছে।

এখন প্রায় অনেক রাত। ঢাকা যানজট ভিরে মাঝে থাকলে এই সময়কে হয়ত অনেক বলে আর গণ্য হত না।গ্রামে আছি বলেই সময়টা এত গভীর রাত বলে মনে হচ্ছে।আকাশে তার গবির ভাবটা আগের ন্যায় আরো গম্ভিরতম করে আসছে। চারদিকে শো শো করে হাল্কা বাতাস বয়ছে। বিদ্যুৎ গুলো চমকাচ্ছে হয়ত বৃষ্টি আসলো আসলো বলে।পানি মধ্যে পা ডুবিয়ে উঠানামা ফকে ছলাৎছলাৎ শব্দ তুলে রাতের নীরবতাকে গ্রাস করছে। দূরের গাছগাছালি হিম বাতাসে দুলছে, নিজ গতিতে। আমি এক অদ্ভুত মুগ্ধতা নিয়ে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছিলাম। নীরবতা ভেঙে আমিই বলে উঠলাম,,,

“আজ অবেলা অসময়ের এক পশলা বৃষ্টি করেছে বড্ডো হতাশ আমায়। জানো তো?”

ভেবেছিলাম প্রচণ্ড বজ্র বেড়াবে দাপিয়ে ঐ উদার আকাশটায়।

সেই প্রিয় অচেনা অনুভূতির অনুভবে বৃষ্টির ফোঁটা নাচবে মনের গৃহিনী আবডালে

আনাচে কানাচে ধরণীয় মায়াবী স্পর্শে উথাল পাতালে।

দেবে ভিজিয়ে আমায় আবেগের সতেজতার তরে,যাবে উল্লাসে মিশে।

আজ এমন অসাধারন মেঘলার দিনে,

কাটবে কেমনে প্রতিটি মুহূর্তে এই এক রাশ #মুগ্ধতার__ভিরে তুমি বিহীনে আমায়”

বলতে কি পারো?

জায়ান তখন ফোনে কিজানি করছিলেন হঠাৎ আমার কথায় সে হতম্ভব হয়ে আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। মুখে তার এক বিস্মিত ছাপ। ঠিক হাতে নাতে চোর ধরলে চোর যেভাবে তাকিয়ে থাকে।আমি তার দিকে তাকিয়ে আবার ও বলে উঠলাম,,,’ভালবাসেন আমায়’ জায়ান কোনো উওর দিলো না আগের ন্যায় চুপ করে তাকিয়ে রইলেন।আমি তার দৃষ্টির দিকেই তাকিয়ে বললাম । এখন নিশ্চয় এটাই বলবেন আমাকে, আহ হাসালে আমাকে মিসেস জোহরা আমিই এই নিহান্ত রহমান জায়ান তোমাকে ভালোবাসবো হুহ। জোকসটা ভালোই ছিলো তোমার নোট বেড।
কিন্তু কি বলুন তো প্রশ্ন কোথাও একটা থেকেই যায়।আমাকে ভালো যদি নাই বাসেন তাহলে ণয়ন ভাইয়াকে পালাতে সাহায্য কেনো করেছেন? ণয়ন ভাইয়া ত্রিনয়না আপুকে শুধু ভালোবাসে বলে কি তাই!

জায়ান বেশ অবাকতা নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, আমি তার দিকে বেশ বিরক্তি নিয়ে বললাম।
আমি সবই জানি ণয়ন ভাইয়া আর ত্রিনয়না আপু ব্যাপারে । তাই আসা করবো এখন আর কোনো মিথ্যে বলবেন না আমাকে। ওনি কিছুই বললেন না মাথা নত করে বসে আছেন।আমার এখন খুব কান্না পাচ্ছে। নিজেকে যত সম্ভব স্বাভাবিক করে তার হাত থেকে এক ছো মেরে তার ফোন নিয়ে নিলাম। অন্য সময় হলে নিশ্চয় এর জন্য আমাকে বকা দিতেন। কিন্তু আজ কিছুই বললেন না। শুধু আস্তে করে বলে উঠলেন ‘পানিতে ফেলে দিবা’ আমার মেজাজ গেলো আরো চটে। আমিই তাকে জিগ্যেস করি কি তার সাক্ষেপে বেটা আমাকে বলে কি!আমি দাঁতে দাঁত চেপে উনার দিকে ফোন দেখিয়ে বলে উঠলাম এইসব কি!উনি বিপরীতে বললেন ‘কোন সব’।

শহর জুড়ে তোমার মত

বিকেল,অবাধ্যতার নীল;

শরীর ঘিরে রঙ – তুলির আঁচড়

কী ভীষণ সাবলীল।

আজ নাহয় থেমে গেল এই

একরাশ লুকোচুরি সেই স্নিগ্ধ
#মুগ্ধতার_ভিরে সময়

আইভি লতার বুকে;

পরাজিত মেঘ হতে রাজি,

তোমার স্পর্শসুখে(সংগ্রহীত+ঢালাই দেওয়া😑🙃)

ওনি মাথা চুল্কে অপরাধী স্বরে বলে উঠলেন,,
__অহ্ এইসব

_জ্বী, আমাকে এইসব দেওয়ার মানে কি!

ওনি বিপরীতে কিছুই বলছে নাহ্। আমার এখন নিজের উপর নিজেরই খুব রাগ লাগছে।রিতিমত ধৈর্যবোধ সব হারিয়ে ফেলছি ।আমি কার সাথে এতক্ষন ধরে কথা বলছি!এই অসহ্য লোক তো মুখ ফুটে কিছুই বলছে না।আমি রেগে উঠে যেতে নিলেই উনি আমার হাত খোপ করে ধরে ফেললেন। এর মধ্যে ঝুম বৃষ্টি নেমে দিলো,,।আমি রুঢ় কন্ঠে আবার
ও বললাম,,

__ছাড়ুন যেতে দিন আমাকে।

__উহু।
ওনি উঠে আমার গালের দুইপাশে তার শিতল ঠান্ডা হাত রেখে বললেন,,
ভালোবাসি তা মুখে বললেই কি ভালোবাসা প্রকাশ পেয়ে যায়?

আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বিরক্তি চাহনিতে বললাম,,আজিব নাহ্ বললে বুঝবো বা কি করে!
ওনি আমার জবাবে শুধু হাসলেন।
আমি বিরক্তি নিয়ে আমার গাল থেকে ওনার হাত সরানোর চেষ্টা করে বললাম,,,
আপনি কি জানেন! আপনি যে ভারি অদ্ভুত সদ্ভুত লোক।

__ একটু আকটু তা জানি আমি যে অদ্ভুত। আর এই অদ্ভুত সদ্ভুত হওয়ার পিছনে আপনারই যে সব থেকে বেশি অবধান মিস জোহু। তা কি আপনি জানেন!

আমি ওনাকে রাগানোর জন্য বললাম, ‘আপনি এত অসহ্য কেন জাস্ট সহ্য করা আমার পক্ষে ইম্পসিবল ‘

ওনি গম্ভীর গলায় বললেন, ‘ ভালোবাসা একটা অদ্ভুত অনুভূতি। যাহ্ হুট করেই মনের অগোচরে তার সেচ্ছায় সূচনার বিচ রোপণ করতে শুরু করে দেয়। ভালোবাসা এমন একটা ধাতু যাহ্ নিচ ইচ্ছায় মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কাউর উপর কখন হয় না। জাস্ট অ্যাক্সিডেন্টলি হয়ে যায়। একে এক অদ্ভুত ছোঁয়াচে রোগ বলা যায় বটে।যার ছুঁয়াচে মানুষ সেই কাঙক্ষিত ব্যক্তির উপর ক্রমশ দিন দিন আসাক্ত হয়ে পরে। যার থেকে বের হয়ে আসা তার পক্ষে জাস্ট ইম্পসিবল।

আমি অস্পষ্ট স্বরে বললাম, ‘ তা আপনি পরেছেন!’

“ওনি অদ্ভুত ভাবে হাসলেন যে হাসি আমি এই অন্ধকারে মধ্যে ও আকাশে আবছা বিদ্যুৎ চমকানো আলোতে দেখতে পেলাম ”

সুনশান নীরবতা ভেঙ্গে জায়ান আমার দিকে তার শিতল চাহনি নিক্ষেপ করে আবার ও বললেন,
ভালবাসো হৃদয়ের একটা সুপ্ত অনুভূতি।ভালোবাসা মানে দূরে থেকে ও কাছে থাকার তীব্র ভাবে অনুভব করে উঠা।সুখেদুঃখে একে উপরের সব সময় পাশে থাকা।ভালবাসা মানেই একে উপরের কাছে কমিটমেন্ট । সারাজীবন এর জন্য একজন এর কাছে আর একজন দায়বদ্ধতা থাকা।খালি ভালোবাসি মুখ ফুটে শুধু বললেই ভালোবাসা প্রকাশ পায় না। কিছু কিছু ভালবাসা প্রকাশটা পায় একটু অন্যরকম ভাবে ,,,

আমি মুগ্ধতা নিয়ে এতক্ষন জায়ানের এক একটা বলা তার কথা শুনছিলাম।হঠাৎ জায়ান আচমকা আমার দুই বাহু চেপে ধরে নিজের অনেক কাছে টেনে নিয়ে এসেছে।আমি চোখ তুলে তার দিকে তাকাতে পারছিনা।কিছু বলতেও পারছিনা।শুধু বুক ধড়ফড় করছে অসহনীয় আনন্দ এবং উত্তেজনায়।
যেখানে থাকবেনা কোনো সংস্পর্শ। সব ভালোবাসা যে শুধু একে উপরের সংস্পর্শ থেকে এসেই প্রকাশ পায় এমন টা কিন্তু নও।কিছু কিছু ভালবাসা আছে যাহ্, দূর থেকে দৃষ্টির অগোচরে আড়ালে থেকেও একরাশ #মুগ্ধতার__ভিরে ও প্রকাশ পায়।আমার মতে একদিনে কেউ কাউর উপর প্রেমে কখনই পরেনা।ধীরে ধীরে সেই ব্যক্তির মুগ্ধতার তলে ডবে প্রেমে পরতে বাধ্য হয়। আমি হয়েছি না চাইতেও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রুপে বাধ্য হয়েছি এই #মুগ্ধতার__ভিরে ডুবতে। যার দেখা আমার আদৌ শেষ নেই।
জায়ান আমার কপালে তার ওষ্ঠদ্বয় দিয়ে গবির চুমু দিয়ে বললেন ‘ বাকি সবাইদের মত ভালোবাসি এই কথাটা কখনই আমি হয়ত মুখ ফুটে তোমাকে বলবো না।বা কোনদিন জিগ্যেস ও করবো না তোমাকে যে কতটুকু বা আমাকে ভালোবাস। শুধু বলবো সবটা অনুভবে বুঝে নাও।আমার কাছে ভালোবাসি শব্দটা বলার চেয়ে একে উপরের মনের অনুভূতিকে অনুভব করে বুঝে নিতে পারা অনেক । হয়ত আমি তোমার কাছে ভারি অদ্ভুত হতে পারি। কিন্তু এই অদ্ভুতকেই গুছিয়ে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব এখন থেকে এই তোমার। আমি জায়ানকে কিছুনা বলে বিপরীতে শক্ত করে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। চোখ থেকে গড়িয়ে পরছে কয়েক ফোঁটা সুখের জল।ওনাকে এতই শক্ত করে আজ ধরলাম জেনো আমি ছাড়লেই ওনি কোথাও হারিয়ে যাবে।
ওনি গুনগুন করে আমাকে জড়িয়ে ধরে গেয়ে উঠলেন,,

তোমার সাথে এই পথটি যেন আজ শেষ না হয়

এমন করে তোমার নরম হাতের ঐ ছোঁয়ার ইচ্ছে করে

জমা চায়ের কাপে বৃষ্টি নামুক

হোক সন্ধা রাত

তবু এই সময় থেমে থাকুক

বুলিয়ে দাও রাঙিয়ে ঐ মায়া যাদুহাতে

কি যে সুখ লাগে

এক শহর ভালবাসা দিতে চাই

“জায়ান ‘ভালোবাসি খুব খুব খুব ভালোবাসি আপনাকে। কতটা ঠিক ভালোবাসলে মুখ ফুটে সেই কথাটা কোনো দ্বিধা ছাড়া একজনকে বলা যায়। তা আমার জানা নেই।আজ শুধু এতটুকু বলে চাই দৃষ্টির অগোচরে শুধু আপনি একা আমাকে নয়। আমিও এই রুঢ়,ইত্তর, অসভ্য, ম্রিস্টার অভদ্রকে কোনো এক ভাবে ভালবাসতে বাধ্য হয়েছি।

এই বলে জায়ানের বুক থেকে মাথা তুলে উনার কপালে গবির ভাবে ওষ্ঠদ্বয় স্পর্শ করলাম।সাথে সাথে লজ্জায় ওনার বুকে আবার ও মুখ লুকালাম।

কিছু কিছু গল্পের সূচনা অদ্ভুত ভাবে হয় কিন্তু পূর্ণতা পায় পরিপূরণতা এসে।

~সমাপ্ত ~
আসসালামু আলাইকুম, এই বার আমি আপাদের বলি, আমি কেনো এতটা ন্যাচারাল রিয়েলিটি লিখেছি এই গল্পটায়।একটা গল্প খুব লিখার ইচ্ছে ছিলো।যেখানে থাকবে দৃষ্টির অগোচরে দুইজনের প্রতি দুইজনেরই প্রেম,অভিমান, সম্মান, এক রাশ মুগ্ধতা। কিন্তু একে উপরকে তা কোনো ভাবেই তারা আর বুঝতে দিবেনা। থাকবেনা তেমন কোনো সংস্পর্শ। শুধু থাকবে মনের দৃষ্টিতে স্পর্শ। শুরু থেকেই এই পর্যন্ত সব কথা মিলিয়ে নিতে পারেন।কেমন ছিলো জানিনা ঠিক কতটা মুগ্ধতা দিতে পেরেছি আপনাদের তাও জানিনা🙂।আজ অত্যন্ত সাইলেন্ট, জাগ্রত রিডার্স রা কিছু হলে মন্তব্য হিসেবে দুই এক লাইন বলে জান। গল্পটা আসলেই আপনাদের ঠিক কেমন লেগেছে?😶