মেঘপিওনের চুপকথা পর্ব-০১

0
747

#মেঘপিওনের চুপকথা
#লেখিকা_আলো_ইসলাম

“প্রথম পর্ব”

“”” ঢাকা রেলস্টেশনে বসে আছে সম্রাট। চোখে আবছা ঘুম ঘুম ভাব সাথে প্রচুর বিরক্তি চোখ মুখ জুড়ে। কত শান্তি করে ঘুমাতে ছিলো তার আপন ঘরে নরম তুলতুলে বিছানা’টায়। সে আরামের অবসান ঘটালো সম্রাটের মা রিনা খান। রিনা খানের দূর সম্পর্কের বোনের মেয়ে আসছে তাদের বাড়ি। তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই রিনা খান সকাল সকাল সম্রাটকে ঘুম থেকে তুলে দেয়। সম্রাট বিরক্ত হলেও মায়ের সামনে প্রকাশ করে না। কারণ সম্রাট তার মাকে অনেক ভালবাসা আর সম্মানও করে। তাই যত বিরক্ত আর অস্থিরতা সে রেলস্টেশনে বসে ত্যাগ করছে।

— পাক্কা আধা ঘণ্টা বসে আছে সম্রাট রেলস্টেশনে একটা কাঠের বেঞ্চে। কিন্তু ট্রেন আসার নামই নেই। তাছাড়া সম্রাট যাকে নিতে এসেছে তাকে না আগে কখনো দেখেছে আর না চেনে। শুধু নাম বলে পাঠিয়ে দিয়েছে তাকে রিনা খান।

— সম্রাট বসে বসে ঝিমাই এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠে। ফোন স্ক্রিনে রাহাত নামটা জ্বলজ্বল করছে। রাহাত সম্রাটের বন্ধু। সম্রাট বিরক্ত মনোভাব আপাতত সাইডে রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন রিসিভ করতেই ওইপাশ থেকে রাহাত প্রায় চিৎকার করে বলে, কিরে সমু কই তুই? ১১টা বাজে ভার্সিটি আসবি না? আমরা তো অপেক্ষা করছি তোর জন্য।
– রাহাতের কথা শেষ হতেই সম্রাট একটা হতাশা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে মলিন কন্ঠে বলে, আমার আজ যাওয়া হবে না দোস্ত। সকাল সকাল মা এমন একটা কাজে পাঠিয়েছে মুড টাই নষ্ট সারাদিনের জন্য। সে কখন থেকে বসে আছি স্টেশনে কিন্তু ট্রেন আসার নামগন্ধ নেই। কেমন লাগে একবার ভাব?

– মানে!কোথায় যাবি তুই। কই আগে কিছু বলিস নাই তো? সন্দিহান কন্ঠে বলে রাহাত। রাহাতের কথায় সম্রাটের বিরক্ত মনোভাবটা আরো দ্বিগুণ হয়ে প্রকাশ পায় চোখ মুখে৷
– আমি কোথাও যাচ্ছি না৷ আমি একজন কে নেওয়ার জন্য এসেছি স্টেশনে। মায়ের কোন আত্মীয়ের মেয়ে আসছে নাকি আমাদের বাড়ি। আর তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য মা আমাকে পাঠিয়েছে। চেনা নেই জানা নেই হুট করে পাঠিয়ে দিলো। কখনো দেখিনাই চিনবো কি করে? শুধু নামের উপর ভিত্তি করে মানুষ খোঁজা যায় তুই বল? এখন সারা স্টেশন আমি রাশি রাশি বলে চিৎকার করে বেড়ায়। ডিজকাস্টিং ব্যাপার বিমুঢ় কন্ঠে বলে সম্রাট। সম্রাটের কথায় রাহাত শব্দ করে হেসে উঠে বলে, তুই আজ ফেসে গেছিস দোস্ত। ওকে আন্টি যখন তোকে একটা দায়িত্ব দিয়েছে সেটা মন দিয়ে পালন কর। আমরাই নাহয় কলেজ করি আজ কথাটা বলে রাহাত একটু সময় না নিয়ে ফোনটা কেটে দেয়।

— মিনিট পাঁচের মধ্যে একটা ট্রেন এসে ঢুকে স্টেশনে। যেটা কুষ্টিয়া থেকে আসছে। সম্রাট এতখন এই ট্রেনের জন্যই অপেক্ষা করছিলো। কিন্তু এখন ওই মেয়েটাকে কোথায় পাবে? কেমন দেখতে? কোন বগিতে আছে সম্রাট কিছুই জানে না। নিজেকে বড় অসহায় লাগছে সম্রাটের এই মুহূর্তে। তারপর কিছু করার নেই খুঁজতে হবে তাকে। সম্রাট উঠে দাঁড়ায় এরপর চারিদিকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে নেয়। কোনো মেয়ে নেমেছে নাকি আর কোথাও একা দাঁড়িয়ে আছে নাকি।

–‘ সম্রাট ট্রেনের জানালা দিয়ে প্রতিটি বগি দেখতে দেখতে যায়। একবার ভেতরে তো একবার সামনে দেখে। কিন্তু কোন মেয়ে তার চোখে পড়ে না। সম্রাটের মুডটা এবার সত্যি অনেক খারাপ হয়ে যায়। ভীষণ রাগ হতে থাকে নিজের উপর সাথে তার মায়ের প্রতিও। সম্রাট হতাশ হয়ে একটা বেঞ্চে বসে আবার। মনে মনে ঠিক করে আর খুঁজবে না৷ পারলে মেয়েটাই তাকে খুঁজে নিক। আর যদি না পাই তো ফিরে যাবে৷ আর আধা ঘণ্টা সে দেখবে এখানে থেকে। এমনটাই মনস্থির করে সম্রাট বসে থাকে চুপটি করে ফোন হাতে নিয়ে ।
— এক্সকিউজ মি! আর ইউ সম্রাট রাইট? একটা সুরেলা কন্ঠস্বরে কথাটা ভেসে আসে সম্রাটের কানে৷ কথাটা কর্ণপাত হতেই সম্রাট ফোন হতে চোখ তুলে সেই সুরেলা কন্ঠস্বর অধিকারী রমণীর দিকে চক্ষুদ্বয় রাখতেই থমকে যায় সম্রাটের দৃষ্টি সেখানেই। মুগ্ধ চোখে, আটকে যাওয়া নয়নে বিভোর হয়ে তাকিয়ে থাকে সে রমণীর দিকে। সম্রাট যেনো দিন দুপুরে একটা সাদা পরী দেখছে তার সামনে। পরী কি সত্যি এমন হয় কি-না তার জানা নেই৷ তবে সামনে যে অপ্সরী দাঁড়িয়ে আছে তাকে এই মুহূর্তে পরী ছাড়া আর কোনো উপাধি দেওয়া যায় নাকি এটা আপাতত সম্রাট ভাবতেই চাই না।
– সম্রাট কৌতুহল ভরা চাহনি নিয়ে মুগ্ধতা বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে যায় আস্তে আস্তে। দৃষ্টি তার সেই পরীতেই আবদ্ধ এখনো।

— কি হলো বলুন? এরপর মেয়েটি ব্যাগ থেকে ফোন বের করে সম্রাটের একটা ছবি তার সামনে ধরে। মেয়েটির ফোনে নিজের ছবি দেখে সম্রাটের চোখ তো চড়কগাছ। রসগোল্লার ন্যায় চোখ করে মেয়েটির দিকে তাকাতেই আবার স্বাভাবিক হয়ে যায় সম্রাট। পরোক্ষে তার মনে পড়ে যায় সে! যে মেয়েটাকে নেওয়ার জন্য এসেছে এই হয়তো সেই মেয়ে। সম্রাট একটু সময় ব্যয় না করে কৌতুহলী কন্ঠে বলে, তুমি কি রাশি? সম্রাটের কথায় রাশি মুখের হাসিটা চওড়া করে বলে জ্বি আমি রাশি। সরি আপনাকে অপেক্ষা করতে হলো অনেকখন। আসলে কি হয়েছে বলুন তো! ট্রেন যে এই সময়ে ঢাকা এসে থামবে একদম ভাবিনি৷ আমি বাথরুমে গিয়েছিলাম ঠিক সেই সময়ে দেখি ট্রেন থেমে যায়৷ ভাগ্যিস ট্রেন আমারে নিয়ে আবার ছুট দেয়নি। নাহলে তো আপনাকে সারাদিন এখানে অপেক্ষা করতে আর আমাকে ওই ট্রেনে…. বাকি কথা শেষ করার আগেই সম্রাট হাত উঠিয়ে থামিয়ে দেয় রাশিকে। সম্রাটের ইশারায় রাশি চুপ মেরে যায়।

— সম্রাট একটা দীর্ঘশ্বাস ফুঁকে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে, আমার সাথে এসো। এরপর সম্রাট রাশিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ব্যাগ হাতে হাঁটা দেয়। রাশিও সম্রাটের পিছুপিছু ছুটে যায়।

— এঁরা যেতে যেতে আসুন পরিচয় দিয়ে দিই আপনাদের।

— সম্রাট খান। বাবা মায়ের একটা মাত্রই ছেলে। বুয়েটে পড়াশোনা করছে৷ অত্যন্ত মেধাবী এবং ইন্টেলিজেন্ট পার্সন। সম্রাট দেখতে শ্যামবর্ণ গায়ের রঙ, উচ্চতায় ৫ফুট ৯ ইঞ্চি, বডি ফিটনেস স্বাভাবিক। সুদর্শন পুরুষেদের মধ্যে সম্রাটও একজন। সম্রাট কম কথা বলে, সব সময় চুপচাপ থাকতে ভালোবাসে। তবে মনটা অনেক ভালো তার। আপাতত এইটুকু যথেষ্ট নায়কের। এবার আসি আমাদের গল্পের নায়িকা রাশির গঠনে।

— আয়রা বিনতে রাশি। ডাক নাম রাশি। রাশি,রা দুই বোন৷ রাশি আর একটা ছোট বোন আছে। রাশি ইন্টার পরিক্ষা দিয়ে অনার্স করার জন্য ঢাকা শহরে আসে। তার ইচ্ছে একটা ভালো ভার্সিটিতে এডমিশন নেওয়া। বলতে গেলে তার টার্গেট বুয়েটের দিকে। রাশি দেখতে অনেক সুন্দর। উচ্চতায় ৫ফুট ২ ইঞ্চি। রাশি গলুমুলু কিউট একটা মেয়ে। চটপটে স্বভাবের আর অনেক বকবক করতে ভালবাসে৷ মানে অনেক বেশি কথা বলে।

— বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামায় সম্রাট। সারা রাস্তা বকবক করতে করতে এসেছে রাশি৷ সম্রাট দাঁতে দাঁত চেপে শুধু সহ্য করে গেছে৷ মাঝে মাঝে ধমকে চুপ করেও দিয়েছে সে রাশিকে। কিন্তু রাশি কি আর চুপ থাকার মেয়ে। একটু চুপ থেকে আবার সেই বকবক শুরু করে দেয়। প্রথম দেখায় যতটা মুগ্ধ হয়েছিলো সম্রাট। রাশির বকবকের ঠেলায় সে মুগ্ধতা এখন বিমুগ্ধতা ছেয়ে গেছে। সম্রাট বুঝে গেছে যে এই মেয়ের আশেপাশে থাকলে সে নির্ঘাত পাগল হয়ে যাবে অল্পদিনে।

— কলিং বেজ বাজাতেই রিনা খান হাসি মুখে দরজা খুলে। রাশিকে দেখা মাত্র জড়িয়ে ধরে কৌশল বিনিময় করে। রাশির সাথে রিনা খানের যে বেশ ভাব সেটা সম্রাট এতখনে বুঝে গেছে৷ সম্রাট ওদের একলা ছেড়ে রুমে আসার জন্য অগ্রসর হতে গেলে রিনা খান পিছু ডেকে উঠে। সম্রাট একরাশ বিরক্ত নিয়ে তার মায়ের দিকে ঘুরে তাকায়।

–‘ সমু বাবা একবার বাজার থেকে ঘুরে আয়-না। মেয়েটা আসলো আজ ভাবলাম বিরিয়ানি রান্না করবো৷ রাশি চিকেন বিরিয়ানি খেতে অনেক পছন্দ করে। কিন্তু ফ্রিজে একটু চিকেন নেই। তুই যা না বাবা জলদি করে নিয়ে আয়৷ আমাকে তো আবার রান্না করতে হবে দুপুরের।
– রিনা খানের কথায় সম্রাটের মাথায় ঢপ করে আগুন জ্বলে উঠে যেনো। একটা সেন্টি খাওয়া লুক নিয়ে তাকায় মায়ের দিকে। মনে মনে রাশিকে বকা দিতে থাকে৷ আজ তার জন্য সকাল থেকে একের পর এক কাজ লেগে আছে৷ না জানি আর কি কি করতে হয় এই মেয়ের জন্য তাকে।

–‘ আন্টি থাক না আজ এই সব। যা আছে তাই রান্না করো৷ এমনিতে তোমার হাতের রান্না যা দারুণ হয়না৷ ঠিক আমার মায়ের মতো। রাশির কথায় রিনা খান মিষ্টি হেসে বলে তোর মায়ের থেকে তো রান্না শেখা রে আমার। আমি তো রান্না করতেই পারতাম না৷ তোর মা ছোট থেকে অনেক সুন্দর রান্না করতে পারতো৷ আমি সেখান থেকে একটু একটু করে দেখে শিখেছি।

— রাশির কথায় সম্রাট যেনো একটা সুযোগ পাই। গলা টা একটু ঝেড়ে নিয়ে তার মাকে বলে, মা রাশি তো ঠিকই বলেছে। আজ তুমি অন্য কিছু রান্না করো। বাবা আসলে তুমি বাবাকে দিয়ে মুরগী আনিয়ে নিও৷ এরপর কাল নাহয় বিরিয়ানি করো। রাশি তো এখন থাকবে আমাদের এখানে৷ তো সমস্যা কি?
– সম্রাটের কথায় রিনা খান মৃদু রেগে বলে, আমি যা বলছি তাই কর সমু। তাড়াতাড়ি বাজার যাবি৷ আমি আজ করবো মানে আজই।
– সম্রাট আর কি করবে৷ ফোস করে একটা নিশ্বাস ত্যাগ করে বেরিয়ে যায় বাজারের উদ্দেশ্যে। সম্রাট মুখোভঙ্গি দেখে রাশি ফিক করে হাসি দেয় একটা।

–” বিকালে সম্রাট রেডি হচ্ছে বাইরে যাওয়ার জন্য। সারাদিনটা তার আজ রাশির পেছনে চলে গেলো। মেয়েটা এসে একদিনে এই অবস্থা। সামনে না জানি কত কি করতে হয়৷ সম্রাট এখন আর বাড়ি থাকতে চাই না। আবার কখন কোন কাজ ধরিয়ে দেয় তার মা৷ তাছাড়া বন্ধুরা অপেক্ষা করছে তার জন্য। সম্রাট এবং তার বন্ধুরা প্রতিদিনই এই সময় একটা মাঠে আড্ডা দেয় বসে। আজও তার ব্যতিক্রম করতে চাই না। সম্রাট রেডি হয়ে গাড়ির চাবিটা হাতে নিয়ে পিছু ঘুরতেই দেখে রাশি দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে মুখে সুন্দর একটা হাসি ঝুলিয়ে। রাশিকে দেখে সম্রাট প্রথমে চমকে উঠলেও পরে মোহিত চোখে তাকিয়ে থেকে। সম্রাট এই মেয়েটাকে যত দেখছে তত মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ একটা মানুষের মধ্যে এত সৌন্দর্য থাকতে পারে কি করে সম্রাট বুঝে উঠে না। রাশি সকালে একটা সাদা ড্রেস পড়ে ছিলো। তাই সম্রাটের কাছে রাশিকে সাদা পরী মনে হয়েছিলো সেই সময়। এখন রাশি একটা কালো ড্রেস পড়ে আছে। আচ্ছা তাহলে কি এখন সেটা কালো পরী হবে? নিজের ভাবনায় নিজেই চমকে উঠে সম্রাট। মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিয়ে বলে কালো পরী আবার হয় নাকি কখনো। সমু রে তোর মাথাটা গেছে৷ এই মেয়ের আশেপাশে থাকলে সত্যি তুই পাগল হয়ে যাবি। পালা সমু পালা। মনে মনে বলে সম্রাট কথা গুলো। রাশি এখনো মুখের হাসিটা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

— কি চাই? সম্রাটের কটাক্ষ কন্ঠে বলা কথাটায় রাশির মুখের হাসিটা মলিনতায় প্রকাশ পাই৷ কৌতুহল ভরা লুক নিয়ে বলে, আপনি কি আমার উপর বিরক্ত কোনো ভাবে? রাশির কথায় সম্রাট আঁতকে উঠে কিছুটা৷ ঘাবড়ে যাওয়া চোখে তাকিয়ে মনে মনে বলে ঠিকই ধরেছো। তোমার জন্য সকাল থেকে যা হচ্ছে আমার সাথে৷ আমি তো প্রায় সিক হয়ে উঠছি। কিন্তু মুখে প্রকাশ করে না সম্রাট। মুখে হাসি নিয়ে আসার চেষ্টা করে বলে, তা হবে কেনো? তুমি হঠাৎ আমার ঘরে তাও নক না করে। তাই জিজ্ঞেস করলাম।

— সরি সরি৷ আমি আসলে নক করে আসতে ভুলে গেছি। তাছাড়া আপনার রুমের দরজাটাও খোলে ছিলো তাই আমি.. সম্রাট এবারও রাশিকে থামিয়ে দেয় কথা অসম্পূর্ণ রেখে।
– কেনো এসেছো সেটা বলো জাস্ট। আমি বাইরে যাবো। তাড়া আছে।
– সম্রাটের কথায় রাশি আমতাআমতা করে বলে আসলে আপনার কাছে একটা বই নেওয়ার জন্য এসেছি।
– রাশির কথায় সম্রাট ভ্রু কুচকে বলে কিসের বই?
– আরে আমি তো এডমিশন দেওয়ার জন্য এসেছি জানেন না। তো আমাকে এমন একটা বই থাকলে দিন যেটা আমার এডমিশনে কাজে দেবে। হাসি মুখে ঝটপট বলে উঠে রাশি।

– কেনো তুমি নিয়ে আসো নাই তোমার দরকারী বইপত্র? সম্রাটের কথায় রাশির মুখে মেঘের ছায়া। সম্রাট কৌতুহলী হয়ে তাকিয়ে আছে।
– আসলে আমি না ওই বইটা ব্যাগে নিতেই ভুলে গেছি। এখানে এসে দেখি বইটি ব্যাগে নেই।

– সম্রাট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে এখনই কেয়ারলেস অবস্থা। এই নিয়ে নাকি বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন দেখছে। মন, মেধা দুটোই লাগে বুঝলে। তোমার দ্বারা ওইসব পড়াশোনা হবে না৷ তুমি বরং একটা নরমাল ভার্সিটি দেখে ভর্তি হয়ে যাও৷ এত চাপ থাকবে না৷ টেবিলে বই আছে৷ যেটা লাগবে নিয়ে যাও বলে সম্রাট বেরিয়ে যায় হনহনে পায়ে। সম্রাট যেতেই রাশি একটা ভেংচি কাটে।
– গুমরো মুখো উজবুক বেটা। আমাকে কত গুলো কথা শুনিয়ে গেলো। ভুলে রেখে আসতেই পারি। তাই বলে আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। আমিও দেখিয়ে দিব হুহ৷ আমার নামও রাশি যা বলি সেটাই করি৷

–‘ সময়টা সন্ধ্যা। খোলা আকাশের নিচে বন্ধুদের সাথে বসে আছে সম্রাট। হঠাৎ আকাশ জুড়ে মেঘের ছায়া। মনে হচ্ছে একটু পরেই তুমুলবেগে বৃষ্টি নামবে৷ কিন্তু সময়টা অনেক সুন্দর লাগছে সম্রাটের কাছে৷ ঠান্ডা ঝিরিঝিরি বাতাস সম্রাটের শরীর থেকে শুরু করে মনের মধ্যে সহ স্পর্শ করে যাচ্ছে যেনো৷

— কি রে দোস্ত। এমন ভাবে বসে আছিস যে? মন খারাপ, নাকি কিছু হয়েছে? রাহাতের কথায় সম্রাট ছোট ছোট চোখে তাকায় তার দিকে৷ এরপর একটা ছোট করে নিশ্বাস ছেড়ে বলে, সকালে বললাম না একটা মেয়ে আসছে আমাদের বাড়ি। জানিস মেয়েটা এক দেখায় আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে। অনেক কিউট একটা মেয়ে। কিন্তু আফসোস অনেক কথা বলে। এত বকবক করে যে, একবার শুরু করলে থামার নাম নেই। উফফ। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আবার একটা সম্রাট কথাটা বলে। সম্রাটের কথায় রাহাত খিলখিল করে হেসে উঠে। তাই দেখে সম্রাট রাগী লুকে তাকায় রাহাতের দিকে।

– মানে সিরিয়াসলি দোস্ত। তুই প্রথম কোনো একটা মেয়েকে চয়েস করলি আর সে কি-না বাচাল টাইপের। ওই মেয়েতো একদম তোর বিপরীত দোস্ত। তবে একদিকে ঠিকই আছে৷ তুই চুপ থাকবি আর ওই মেয়ে বকবক করে তোর মাথা খাবে। কথাটা বলে রাহাত আবার হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ে। সম্রাট এবার রাহাতের পিঠের উপর দুম করে একটা মার বসিয়ে দেয়৷ মার খেয়ে রাহাতের হাসি উবে যায়৷ মুখটা মলিন করে সম্রাটের দিকে তাকায়। সেটা দেখে সম্রাট ব্যাঙ্গ করে বলে, থামলি কেনো? হাস-না৷ হাস হাস। এর মধ্যে সম্রাটের ভাইব্রেট থাকা ফোনটা কেঁপে উঠে। ফোন হাতে নিতে দেখে মায়ের নাম্বার। সম্রাট একটুও সময় না নিয়ে সাথে সাথে রিসিভ করে।

–‘ সমু কোথায় বাবা তুই? বাইরে অনেক মেঘ করেছে। হঠাৎ কারেন্টও চলে গেলো। তোকে বললাম জেনেরেটরের কি সমস্যা হয়েছে একটা মিস্ত্রি এনে দেখানোর জন্য শুনলি না৷ এখন তো পুরো বাড়ি অন্ধকার। ঘরে মোমবাতিও নেই। রাশি আবার অন্ধকারে ভয় পাই। তুই তাড়াতাড়ি কিছু মোমবাতি নিয়ে আয় তো বাবা। রিনা খানের কথায় সম্রাটের মুখশ্রী বদলে যায়। আবার একরাশ বিরক্তি এসে জেঁকে বসে।

–‘ আমাকেই কেনো যেতে হবে মা। সারাদিন পর না একটু আগে বের হলাম। বাবাকে বলো না নিয়ে আসবে। আমি এখন বাড়ি ফিরছি না।

– দিন দিন অনেক অবাধ্য হয়ে যাচ্ছো তুমি। রাশি অন্ধকারে ভয় পাই। ও আমাদের বাড়ির গেস্ট। ওর ভালো মন্দ দেখা আমাদের দায়িত্ব। তোমার বাবা যদি পারতো তাহলে নিশ্চয় আমি তোমাকে বলতাম না। রকম গে বলে রিনা খান। সম্রাট অসহায় কন্ঠে বলে আসছি আমি। কারণ সম্রাটের এখন যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। তার মা যে ভীষণ রেগে গেছে বুঝতে পারছে। রিনা খান যখন রেগে যায় তখন তুমি করে বলে সম্রাটকে। তাই সম্রাটের বুঝতে অসুবিধা হয়না কখন তার মা তার উপর সন্তুষ্ট থাকে আর কখন রেগে।
.
–” দোস্ত আমাকে এখনি বাড়ি যেতে হবে। থাক তোরা আমি যায়। সম্রাটের কথায় হাসিব বলে, তুই না একটু আগে আসলি আবার এখনি বাড়ি। কি ব্যাপার দোস্ত! বাড়িতে কি ভাবিকে রেখে এসেছিস হুম। হাসিবের কথায় সম্রাট গরম চোখে তাকালে হাসিব চুপসে যায় (হাসিবও সম্রাটের একটা বন্ধু)

–ওই মেয়েটা সত্যি আমাকে পাগল বানিয়ে দেবে৷ এসে পর্যন্ত ছুটিয়ে মারছে। তার নাকি অন্ধকারে ভয় করে। ন্যাকামি যত্তসব। এরপর সম্রাট উঠে যায়৷ রাহাত আর হাসিব মুচকি হাসে।

–” চলবে…..