রঙীন ফানুস পর্ব-০৯

0
1638

#রঙীন ফানুস
#পর্ব-০৯
#আফরিন ইভা

—-“পরীর অস্থিরতার শেষ নেই।
পরী সকল অস্থিরতার গ্লানি মুছে দিয়ে সামনে থাকা লোকটাকে বললো আপনি এখানে, তাও আমার বেডে?”

“হুম আমি এখানে থাকবো নাতো কোথায় থাকবো পরী?
তাহলে কী তোমার বুকে?আমি তো চাই তোমার বুকে সাঁতরাতে। ”

“ছিহ!”

“পরী ঘৃন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে সামনে থাকা মানুষটিকে বললো,মানুষ কিভাবে যে এতোটা জগন্যতম হয় আপনাকে না দেখলে জানতামই না রাফি।”

“হ্যাঁ সামনে থাকা লোকটা আর কেউ নয়, রাফিই ছিলো।”
রাফি পা উঠিয়ে বেডে আধশোয়া হয়ে কথাগুলো বলছে,আর কেমন কেমন দৃষ্টিতে পরীর পা থেকে মাথা অবধি দেখছে।”
.
.
.
“পরীর ইচ্ছে করছে লোকটা কে ঠাটিয়ে চড় মারতে। কিন্তু কোনো রকম ঝামেলা করতে পরী চায় না।
পরী ভেতরে ভেতরে ভয় পাচ্ছে।ভয়ে হাত পা শীতল হয়ে যাচ্ছে। একটাই ভয় এখন যদি কেউ চলে আসে কি হবে, কি জবাব দিবে পরী। আর রাফি ও যদি কিছু করে বসে তখন তো সব শেষ।
পরী কিছু বললেও তো কেউ বিশ্বাস করবে না। আর রাজ, রাজের কথা মনে পড়ে পরীর বুক ভয়ে কাঁপতে লাগলো।
পুরো শরীর ঘেমে যেনো বন্যা বয়ে গেলো।
দু-চোখ ভিজে আসছে নোনা জলে, চাইলেও যেনো বাঁধ মানছেনা চোখ দু’টি। শ্রাবণের ধারার বৃষ্টির মতো জল গড়িয়ে পড়ছে পরীর।”
.
.
.
“পরীর অস্থিরতা দেখে রাফি শোয়া থেকে উঠে হা হা হা করে হাসতে লাগলো।
রাফির হাসিতে যোনো চার দেয়াল কেঁপে উঠলো।”

“রাফির হাসির আওয়াজে পরীর লোমশ দাঁড়িয়ে গেলো।একটাই ভয় রাফি কে পরীর সাথে যদি কেউ দেখে ফেলে।”

—-“রাফি পরীর কাছে এসে হাত ধরে, রাফির এমন হাত ধরাতে পরীর পুরো শরীর ভারী হয়ে গেলো।পরী অনেক্ষণ চেষ্টা করলো হাত ছাড়াতে কিন্তু রাফি অনেক শক্ত করে ধরে রেখেছে।
রাফি চিৎকার করে বললো, পরী এমন ছোটাছুটি করোনা এতে তোমারই বিপদ।
রাজ যদি জানতে পারে আমি তুমি এই বদ্ধ ঘরে বুঝতেই তো পারছো ব্যাপারটা কি হবে?”

“কথাটা কানে যাওয়ার সাথে সাথে পরীর মস্তিষ্ক জানান দিলো আসলেই তো রাজ জানলে সত্যি সত্যি ভুল বুঝবে? আর বদ্ধ রুম মানে?
পরী দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করা। যদি এ অবস্থায় কেউ আসে শুধু রাজ নয় যে কেউ সন্দেহ করবে।”

–” রাফি পরীর হাত ছেড়ে পায়ে ধরলো।
পরী অস্থিরতা সত্বেও কিছুই করার নেই, পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রাফির দিকে।
প্লিজ পরী আমি কিসে কমতি বলো?
তুমি আমাকে বিয়ে করো।
রাজ থেকে আমি কম কিসে? রাজ থেকে তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসবো। তোমাকে অনেক বেশি সুখে রাখবো। ”

–” রাফির কথা শুনে পরীর ভীষণ খারাপ লাগছে। চোখ গুলো যেনো ঝাপসা হয়ে আসছে। ”

— “পরী যতোক্ষণ তুমি কিছু বলবে না ততোক্ষণ আমি তোমার পা ছাড়বোনা ।”

–“পরী আর সহ্য করতে না পেরে রাফি কে সজোরে ধাক্কা দিলো।
রাফি নিচে ছিটকে পরলো।”

— “রাফি রাগে গর্জন দিয়ে উঠলো।
রাফির চোখে যেনো আগুন জ্বলছে।
রাফি পরীর কাছে এসে হাত ঝাকিয়ে বললো,খুব তেজ না তোমার এই রূপের। এই রূপের আগুনে সবাই কে পোড়াচ্ছ।
রাজ কেও মায়া জালে ফাঁসিয়েছ সেই অনেক বছর আগে।
তোমার এই রূপে আমিও ডুবতে চাই। ডুবে ডুবে মরে যাবো বুঁজলে তুমি?
রাফি কিছুক্ষণ থেমে আবার বলতে শুরু করলো, রাজ কে ছোট বেলা থেকেই সবাই বেশি বেশি আদর করে।
রাজ জীবনে চাওয়ার চাইতেও সব কিছু বেশি পেয়েছে। সবসময় সেরা টা-ই পেয়েছে । কিন্তু আমি রাজের পেছনে, সবসময় রাজের পেছনেই থাকতাম।
এখন না হয় রাজের ব্যাবহৃত ভালোবাসাটাও আমার ভালোবাসায় পূর্ণতা পাক।
এখন শুধু তুমি রাজি হওয়ারই অপেক্ষা। ”

–“কথাগুলো যেনো পরীর মাথার উপর দিয়ে গেলো।
আর অনেক বছর আগ মানে?
পরী রাফি কে জিজ্ঞেস করলো, “রাজ কে আমি বিয়ের পর থেকে চিনি। রাফি আপনি কিছুক্ষণ আগেই বললেন না যে,রাজ আমাকে অনেক আগ থেকেই চিনে? এ বিষয় টা কী একটু ক্লিয়ার করবেন।
রাজ আমাকে কিভাবেই বা চিনবে তাও অনেক বছর আগে ?”

” রাফি মুখটা অন্ধকার করে জবাব দিলো,”সেটা না হয় তুমি রাজ থেকেই জেনে নিলে।”
“এখন এটা বলো তুমি আমার সাথে লন্ডন যাবে কি-না? ”
“আমি তোমার জন্য এ দেশ ছেড়ে এমনকি মা-বাবা সবাইকে ছেড়ে দিতে পারবো। শুধু একটি বার রাজি হও পরী। ”
রাফি আস্তে আস্তে পরীর কাছাকাছি আসতে লাগলোএকদম কাছে।”

“এদিকে কোনো হুঁশ নেই পরীর।
পরীর একটাই ভাবনা রাজ কিভাবে পরী কে চিনে? রাজ কী তাহলে অনেক আগ থেকেই পরী কে ভালোবাসে।
কিছুতেই আর ভাবতে পারছে না পরী। ”
“পরী সামনে তাকিয়ে দেখলো রাফি পরীর একদম কাছাকাছি ঘাড়ের সাথে লেপ্টে আছে। রাফি এতো কাছাকাছি থাকাতে পরী দু’পা পিছিয়ে গেলো।”

“পরীর পিছিয়ে যাওয়া দেখে রাফি একটু একটু করে পরীর কাছে এগোচ্ছে।”

“পরী পিছাতে পিছাতে একসময় দেয়ালে গিয়ে গাঁ ঠেকলো।পরী ভয় পেয়ে দু’হাতে দেয়াল চেপে ধরলো।
রাফি পরীর মুখ চেপে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো গভীর ভাবে। পরী ছোটাছুটি করছে, হাত দিয়ে রাফির হাতে খামছি দিচ্ছে কিন্তু রাফি ছাড়ছেই না। ”

“পরী মনে মনে আল্লাহ কে স্মরণ করছে।
পরী নিজেকে বাঁচাতে মহান আল্লাহর কাছে হৃদয় দিয়ে প্রার্থনা করছে।
পরী জানে রাজ অফিসে, পরীর শ্বাশুড়ি হয়তো বাহিরে গেছে। ফাঁকা বাড়ি পেয়ে রাফি ইচ্ছে করেই পরীর রুমে ঢুকেছে।
পরী দরদরিয়ে ঘেমে একাকার। কেউ আর রক্ষা করবেনা পরী কে আজ।
দু-চোখ বেয়ে অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ছে পরীর। ”
.
.
.
“ধমকা বাতাসের স্পর্শে পরীর চুলগুলো উড়তে শুরু করলো। বাতাসের স্পর্শে পুরো শরীর নাড়া দিলো। পরীর চোখ যেনো ঝাপসা হয়ে আসছে। নিভু নিভু চোখে পরী সামনে তাকালো। সামনে এমন কাউকে দেখে পরীর কলিজায় পানি আসলো। মহান আল্লাহর কাছে পরী শুকরিয়া জানালো।”

—” রাফি পরী কে ছেড়ে দূরে দাঁড়ালো।
রাফি ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

“সবকিছুতে যেনো ফিনফিনে নিরবতা বিরাজ করছে। ”

“যাকে দেখে পরীর কলিজায় পানি এসেছে সে আর কেউ নয় স্বয়ং রাজ। রাজ রুমে প্রবেশ করেছে।
রাজের চোখগুলো ভীষণ রকম লাল হয়ে আছে। রাজের ভয়ার্ত চোখগুলো রাগে লাল হয়ে আছে। রাজ হাত দু’টো মুষ্টিবদ্ধ করে দেয়ালে সজোরে বারি মারলো।
নিজের হাত দিয়ে টেনে টেনে চুলগুলো ছিঁড়তে লাগলো। ”

“রাজের এমন রাগ দেখে পরীর কলিজা ডিপ ডিপ করে কাঁপতে লাগলো”

“রাজ এক নজর পরীর দিকে তাকালো।
চোখে চোখ রেখে সরিয়ে নিলো। ”

“রাফি রাজের কাছে এগিয়ে আসলো।”

“রাজ মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো।”

“রাফি দম নিয়ে বলতে শুরু করলো।
রাজ বিশ্বাস কর আমি কিছুই করি নি।
যা করার পরী করেছে।
বাসা খালি দেখে পরী আমাকে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে এসেছে।
আমি অনেকবার নিষেধ করা সত্বেও জোর করে নিয়ে এসেছে।”

“পরী নির্বিকার দৃষ্টিতে রাফির দিকে এক নজর তাকিয়ে রাজের দিকে তাকালো।”

“রাফি রাজের হাত টা ধরে আবেগ মাখা স্বরে বলতে শুরু করলো আবার।
রাজ তুই তো আমার ভাই তাই না?
তুই তো আমার কথা বিশ্বাস করছিস।
পরী আমাকে ডেকে এনে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।
রাফি কথাটা বলে পরীর দিকে তাকিয়ে আবার বলা শুরু করলো।”

“রাফির কথাগুলো শুনে রাজে নিস্তব্ধ হয়ে রইলো কোনো সাড়া দিলো না। ”

“রাফি রাজের দিকে দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো, রাজ জানিস, আমি কতোবার পরী কে বলেছি রাজ জানতে পারলে খুব কষ্ট পাবে।
ও কি বলে জানিস, রাজ কে দিয়ে আমার তৃষ্ণা মেটে না, আমার আরো চাই, আমার খুব পিপাসা, যে পিপাসা রাফি আপনি ছাড়া কেউ মেটাতে পারবে না।
আমাকে জড়িয়ে ধরে পরী কি যে নোংরামো করতে শুরু করলো? আমি তো চাইছিলাম এই সময় কেউ আসুক।
যাক শেষপর্যন্ত তুই আসলি আমার সতীত্ব টাও রক্ষা পেলো।
বাকিটা তো তুই দেখলিই?”

–“রাজ পরীর দিকে আবার তাকালো খুব গভীরভাবে। এই তাকানো তে পরীর ভীষণ ভয় লাগলো। বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। ভয়ে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। রাজের মনের ভেতর কি চলছে পরী কিছুই বুঝতে পারছে না। তাহলে কী রাজ পরী কে ছেড়ে দিবে?
তাহলে কী পরী রাজের ভালোবাসা টা পেয়েও হারাবে।
পুরনো সর্বনাশটা আবার হতে চললো।
পরী নিস্তব্ধ হয়ে দু’পা পেছনে গেলো।”

“রাজ পরীর দিকে এগোচ্ছে।
রাজের এগোনো দেখে পরী ভয় পেতে থাকলো।”

“আর এ দিকে রাজের এগোনো দেখে রাফি মুচকি হাসতে লাগলো। আজ রাফির খুশির দিন। রাফি তো ভেবে রেখেছে, রাজ পরী কে তাড়িয়ে দিলে রাফি পরী কে নিয়ে উধাও হয়ে যাবে।
রাফির খুশি যেনো আজ বাঁধ মানছে না। বাঁধন হারা পাখির মতো উড়ে বেড়াচ্ছে। পরী কে তাহলে রাফি পেতে যাচ্ছে। ”

—“রাজ পরীর হাত টা খুব শক্ত করে ধরলো। এতো টা শক্ত করে ধরলো পরীর খুব ব্যাথা লাগলো। ব্যাথায় পরী আহ বলে উঠলো। ঐ দিকে রাজের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
পরীর দুচোখ নোনা জলে ভরে গেলো।”

চলবে—