রঙীন ফানুস পর্ব-০৮

0
1510

#রঙীন ফানুস
#পর্ব-০৮
#আফরিন ইভা

–” ভয়ে পরীর হাত -পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
পরী ভয়ার্ত মনে ভাবছে হয়তো ঐ নরপিশাচ’টা পরী কে এভাবে চেপে ধরেছে। পরীর বুক টা ডীপ ডীপ করছে। ভয়ার্ত চোখে পরী সামনে তাকালো।
মূহুর্তে পরীর ভয় কেটে গেলো।
উজ্জ্বল দীপ্তময় চেহারা, যার চোখে হাজারো আকুতি,এলোপাতাড়ি চুলে মাদকতার ছোঁয়া,যার ছোঁয়ার আছে অস্হিরতা। এ যে আর কেউ নয়, স্বয়ং রাজ।

—” কী ব্যাপার আমার স্বপ্নের পরী সেই কখন গেলে আর এখন আসলে। এতোক্ষণ দূরে রেখে কী মেরে ফেলবার প্লেন করছো?
সত্যি পরী আমি মরে যাবো তোমাকে ছেড়ে। কতোটা কষ্ট পেয়েছি বুঝতে পারছো?”

— “কথাগুলো শুনে পরীর বুক টা আভিমানে ছেয়ে গেলো। পরী অভিমানী চোখে রাজের দিকে তাকিয়ে বললো,এজন্য বুঝি ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবেন? যান আর কথা নেই। ”

—“রাজ পরী কে নিচে নামিয়ে, কানে ধরে ওঠবস করতে লাগলো।সরি বউ আর বলবো না এই কানে ধরেছি, দরকার হলে তোমার কানে ধরবো।”

–” পরী কানে ধরার কথা শুনে পরী লাফিয়ে উঠলো।
এই না না আমার কানে ধরতে হবে না। আমি মাফ করে দিলাম। কিন্তু হ্যাঁ আর যেনো না শুনি বলে পরী রুমে হাঁটা ধরলো।”

— “রাজও পরীর পেছন পেছন চলতে লাগলো। পরী মাঝখানে কোলবালিশ রেখে শোয়ার প্রস্তুতি নিলো।
কোলবালিশ’ মাঝখানে থাকাটা রাজের পছন্দ হলো না।
রাজ কোলবালিশ টা দূরে ফেলে দিলো।”

—” পরী অবাক চোখে তাকিয়ে রাজের কান্ড দেখছে। পরী রাজের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠল।
রাজ রাগান্বিত ভাব নিয়ে পরীর চোখে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে যেনো যে কাউকে ঝলসে দিবে। ”

” রাজ চেঁচিয়ে উঠলো হয়েছে’টা কি?
কোলবালিশটা দিলে তুমি আস্ত থাকবে, আর কোলবালিশ না থাকলে বুঝি আমি তোমাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবো।”
তুমি কী খাবার জিনিস যে খেয়ে ফেলবো?”

” পরী কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
পরী নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে জবাব দিলো আসলে আপনি যা ভাবছেন তা নয়।
ঘুমে আমি ঠিক থাকি না, কখন আপনার উপর পা উঠিয়ে দেই।”

–“স্টপ পরী!
তুমি আমার বিবাহিত স্ত্রী , হাত উঠিয়ে দাও, না পা উঠিয়ে দাও এতে প্রবলেম টা কোথায়? ”
আচ্ছা তুমি কী আমাকে পর ভাবো?”

— “এই না না আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন! ”

— তোমাকে ভুল বুঝছি তাই না?
রাজ আস্তে করে পরীর কাছে আসতে লাগলো। কাছে এমন কাছে একদম কাছাকাছি। লজ্জায় পরী লাল হতে লাগলো। রাজ পরীর হাতটা আলতো করে পরম স্পর্শে নিজের হাতে নিলো। রাজ আহ্লাদি স্বরে বলতে লাগলো, কাছে আসতে দিবে না, তা ঠিক আছে কিন্তু একটু তো আপন ভাবো। এতটা পর ভাবো কেনো পরী। আমাকে কী তোমার পছন্দ হয় নি?”

–” এই না না আপনি কী বলছেন,?
আপনি তো চাঁদের চেয়েও সুন্দর।”

—“সুন্দর না ছাঁই। সে জন্যই তো আমাকে দূরে রাখো।
আচ্ছা পরী বলো তো তুমি এতো লজ্জাবতী কেন?
লজ্জা নারীর ভূষণ তা ঠিক আছে কিন্তু তাই বলে এতো লজ্জা পেতে হবে?
রাজ পরীর কানে মুখ বাড়িয়ে চুপিচুপি বলতে লাগলো, লজ্জাবতী বউ কে আদর দিতে কিন্তু ভারী মজা।”

—” রাজ পরীর এতো কাছে যে, রাজের স্পন্দনে পরীর লোমশে শিহরন বেয়ে যাচ্ছে,রাজের চুলের ঘ্রাণে পরীর মন পাগল পাগল হচ্ছে, রাজের ঠোঁটের উপরের কালো তিল টা চকচক করছে।
পরীর ইচ্ছে করছে খুব ইচ্ছে করছে রাজের তিলকায় ঠোঁটের স্পর্শ দিতে।”
“পরী আজ নিজের মধ্যে নেই, স্বপ্নের হাওয়ায় যেনো ভেসে ভেড়াচ্ছে।”

–” রাজও চাইছে পরী নিজ থেকে নিজেকে ধরা দিক, রাজ চায়না পরী কে কষ্ট দিতে।
পরীর নেশাভরা চাহনিতে রাজ চোখ বুঁজে অপেক্ষা করছে কখন পরী নিজ থেকে রাজের ঠোঁট ছুয়ে দিবে।
রাজ যেভাবে আছে ঐভাবেই রইলো।”

—” আর এদিকে পরী নিজেকে রাজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলো।
রাজের চোখ বন্ধ দেখে পরী ভেবেছিলো রাজ হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে। তাই পরীও অন্যদিকে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পরেছে।”

” ঘুম বললে ভুল হবে। রাজতো ঘুমের অভিনয় করেছে। রাগে হাত -পা থরথর করে কাঁপছে রাজের। রাজের ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে দিতে। রাজ কিছুতেই বুঝতে পারছেনা পরীর হয়েছে কী।
পরী কেনো রাজের কাছে ধরা দিচ্ছে না।
এসব ভাবতে ভাবতে রাজের চোখ লাল হয়ে আসছে। রাজ শোয়া থেকে উঠে বারান্দায় চলে গেলো। কারণ এখন পরীর কাছে থাকলে যে কোনো অঘটন ঘটে যাবে।
বারান্দায় বসে বসে সিগারেট ফুঁসছে।
পেয়ে না পাওয়ার ব্যাথাটা আজ সিগারেটের কালো ধোঁয়ায় উড়িয়ে দেবে রাজ। এই পণ করেই এসেছে বারান্দায় ”

“” এদিকে পরী সব দেখছে, সব বুঝেও না বোঝার ভানে আছে। তাঁর একটাই কারণ সবকিছু জানলে যদি পরী কে বের করে দেয়। রাজ যদি পরী কে আর ভালো না বাসে। কি করবে পরী কিছুই বুঝতে পারছেনা। পরীরও তো মন আছে, পরী ও মানুষ,পরীরও কষ্ট হয়, ভীষণ কষ্ট, কিন্তু পরীর কষ্ট টা চাপা কষ্ট।
দাদীর কথা মনে পড়ছে ভীষণ মনে পড়ছে। দাদী সব সময় বলতো পতী হলো ভালোবাসার স্পন্দন। যাকে ভালোবাসতে কারণ লাগে না। যাকে হাজারো বাহানায় ভালোবাসা যায়।
দাদীর কোলে মাথা রেখে আজ বলতে ইচ্ছে করছে, দাদী আমি যে চাইলেও আমার ভালোবাসার মানুষটি কে ভালোবাসতে পারি না।”

–“দাদী আমার হাজারো উপায়ের দরকার নেই একটা উপায় বলে যাও? ”
আমি যে আর পারছিনা উনার কষ্ট সহ্য করতে। পরী কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরলো।”

–” রাজ রুমে প্রবেশ করে লাইট অফ করে পরীর পাশে এসে বসলো।
পরীর চোখে পানিগুলো চিকচিক করছে, যা রাজের চোখ এড়ালো না। পরীর চোখের পানি দেখে রাজের বুক টা ধুক করে উঠলো। রাজ নিজের চাইতেও পরী কে ভালোবাসে, কারণ পরী কে একবার হারিয়েছে আর হারাতে চায় না রাজ। ”
রাজ পরীর চোখের জলগুলো মুছে দিয়ে কপালে চুমু খেলো।

–“রাজের স্পর্শে পরী গুটিসুটি মেরে নড়ে উঠলো।”

—“অনেক রাত হলো, রাজ পরীর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে এক সময় ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলো।”

—” পরী খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে নিলো।
ফ্রেশ হয়ে সবাই একসাথে খেতে বসলো।”

— খাওয়ার মাঝখানে কে যেনো পরীর পায়ে পা দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো।
পরী ভেবেছে হয়তো রাজ।
কিন্তু মূহুর্তেই পরীর মুখ কালো হয়ে মেঘে ঢেকে গেলো।
রাফি পরীর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।
—” পরীর রাগ উঠে গেলো।বহুকষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রাজের দিকে তাকালো পরী। রাজের মনোমুগ্ধকর চেহারা দেখে পরীর রাগ উধাও হলো। রাজ পরীর দিকে একবার তাকিয়ে নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
পরী আর খেতে পারে নি, উঠে রুমে চলে গেলো।

—“রাজ আজ অফিস যাবে, পরী সব গুছিয়ে রাখছে। এমন সময় রাজ এসে পরীর কোমর জড়িয়ে দাঁড়ালো।
পরী আঁতকে উঠল।

“এই পরী এতো চমকাও কেনো?
রাজ পরীর ঠোঁটের দিকে এগোচ্ছে, আরো কাছাকাছি, পরীর চোখে চোখ রেখে অপলক দৃষ্টিতে বলতে লাগলো যখন ইচ্ছে তখন জড়িয়ে ধরবো, কোলে নিবো আর, আরও কতো কি।”

— “কথাগুলো শুনে পরীর নিশ্বাস আঁটকে যাচ্ছে বুকে। বুকে যেনো বিশাল পাথর গেঁথে আছে। পরী অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কোনো সাড়া দেয়নি।”

—” রাজ পরীর কাছ থেকে সরে গিয়ে অফিসের জন্য রেডি হতে লাগলো।
রাজের প্রয়োজনীয় সবকিছু এগিয়ে দিলো পরী।”

—” যাওয়ার আগে পরী কে কাছে টেনে ললাটে ভালোবাসার ঠোঁট ছোঁয়াল রাজ।পরী কে নিজের খেয়াল রাখতে বলে গেলো রাজ।”

—“পরী দরজার আড়ালে এসে নিজের ললাট খানা হাত দিয়ে স্পর্শ করে মিষ্টি হাসি হাসলো।পরী বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।
নিচে তাকিয়ে দেখলো রাজ এখনো যায়নি, ড্রাইভারের সাথে কি নিয়ে গভীর মনোযোগে কথা বলছে।
পরী অপেক্ষা করছে কখন রাজ উপরে তাকাবে। কিন্তু না রাজ তাকাচ্ছেই না। পরী মন খারাপ করে অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
আর এদিকে রাজ অপেক্ষা করছে পরী কখন তাকিয়ে রাজ কে মিষ্টি হাসি দিয়ে বিদায় জানাবে?

রাজ মনে মনে পরী কে ডাকতে লাগলো,পরী প্লিজ তাকাও,তাকাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে রাজ।

পরী রাজের দিকে অপলক নয়ন ভরে তাকিয়ে আছে।
মৃদু বাতাসে পরীর চুল গুলো দোলা দিচ্ছে। যা রাজের মনকেও নাড়া দিচ্ছে।
রাজ কে দেখে পরীর বিমর্ষ মন ক্ষান্ত হয়েছে। রাজ কাছে থাকলে পরীর যেমন অস্হিরতা লাগে, তাঁর চেয়ে ভীষণ কষ্ট হয় দূরে গেলে। রাজ ব্ল্যাক একটা গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। পরীর মনটা কেমন যেনো হাতাশায় ছেয়ে গেলো।যেনো কিছু একটা নেই। বুকের ভেতরটা অস্হিরতায় পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। এতো কেনো কষ্ট হচ্ছে পরীর বুঝতে পারছেনা।

“পরী ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে-মুখে পানির ঝাঁপটা দিলো।”

–” ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে পরী কাউকে দেখে আঁতকে উঠল। দরদরিয়ে ঘামতে লাগলো,এ প্রাণ যেনো প্রাণে নেই।

চলবে——