লালগোলাপ? Part-31

0
2930

লালগোলাপ?
Part-31
Writer-Moon Hossain

[আমার আইডিতে একেকজন তিনশত বারের বেশি নাকি চ্যাক করছে গল্প পড়ার জন্য, দুঃখিত ]
রাফিয়ার সামনে তার স্বামী আর হাসান দাঁড়িয়ে আছে।
তার স্বামী অঝোরে কাঁদছে।
হাসান চুপচাপ মাথানিচু করে নিচে তাকিয়ে রয়েছে।
রাফিয়া মারা যাওয়ার পরদিন শীতলের জ্ঞান ফিরলো। শীতল বেশ অসুস্থ। গায়ে এক ফোঁটা শক্তি নেই, দুই দিনে মনে হচ্ছে শীতল কয়েক বছর যাবৎ হসপিটালে আছে।
শীতল চারপাশে কি হচ্ছে তা দিব্যি বুঝতে পাচ্ছে। তবুও কেন যেন একটা কথাও বললো না এপর্যন্ত। না রাফিয়ার কথা, আর না সন্তানের কথা, প্রতি সেকেন্ডে যে স্বামীকে চোখে না দেখলে বুকের ভেতর অজস্র তীর বিধ্বস্ত হতো সে স্বামীর দিকে একবারও তাকায়নি।
রাজ খুব চিন্তিত হয়ে পড়লো।
শীতল এমন করছে কেন?
একবারও তাকাচ্ছেনা কেন তার দিকে?
কিছু জিজ্ঞেসও করছেনা।
ডক্টর বলল- মিস্টার রাজ আপনার উনাকে জানানো উচিৎ।
উনি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে তাই আতংকে চুপচাপ হয়ে আছে।
সত্যিটা জানালে আতংকে কেটে যাবে।
স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে তিনি।
-বাট ডক্টর। কিভাবে ও সহ্য করবে এগুলো?
ও জীবনে কম কিছু সহ্য করেনি। সহ্য করার মতো কিছু কি বাকি আছে ওর কাছে?
-তবুও আপনার ওয়াইফের ভালোর জন্য জানাতে হবে।।
-আমি হেরে গিয়েছি ডক্টর।
হেরে গিয়েছি।
-বোনের মৃত্যুতে কষ্ট পেয়েছেন বুঝতে পাচ্ছি। আপনি ভাই হিসেবে যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। চিকিৎসার ত্রুটি রাখেন নি।
আপনার ওয়াইফ সুস্থ হলে আবার কনসিভ করতে পারবে। আপনি বাবা হতে পারবেন।
মরা বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর অনেকেই বাবা মা হচ্ছে। আপনারাও হবেন। ইনশাআল্লাহ।
রাজ রাফিয়া আর তার মরা সন্তানকে মাটির নিচে রেখে এলো।
বাসায় গিয়ে ফ্লোরে গা এলিয়ে শুয়ে পড়লো।
পৃথিবীর সবচেয়ে অভাগা সে এমন মনে হতে লাগলো তার।
সুখের সংসারটা কিভাবে যেন অন্ধকারে তলিয়ে গেলো। এতো শোক, এতো বিপদ, এতো অসুস্থতা, এতো
মৃত্যু যন্ত্রণা, এসবকিছু তাকে ঘিরে ধরেছে। আল্লাহ তায়ালা তাকে সব দিয়েছিলো। আবার সব কেড়েও নিচ্ছে।
রাজ অনেক্ক্ষণ চুপচাপ থেকে কি যেন ভাবলো। তারপর অজু করে নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ কোরআন তেলওয়াত করলো।
যা কিছু হয়েছে তার অনেকটাই নিজের অসুস্থতার জন্য ৷
আল্লাহ তায়ালা তাকে সকল কিছু দিয়েছিলো। আর আজ তার অনেকটুকু নেই। সবকিছু হারিয়ে এখন শেষ আশা শীতলকেও হারাতে বসেছে সে। শীতল একেবারে পাথর হয়ে পড়েছে। শরীর থেকে সব রক্ত ঝরে পড়েছে ডেলিভারির সময়। শারীরিক যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েছিলো। [ আমি দুঃখীত এবং অনুতপ্ত, মিস ক্যারেজ এবং মরা বাচ্চা দুটো আলাদা বিষয় মেবি, কিছু পাঠিকারা এই নিয়ে কমেন্ট করেছিলো, শীতলের এই সময় নাকি মিস ক্যারেজ হওবার নয়,আমি এসব গুলিয়ে ফেলেছি, উল্টো পাল্টা দিয়েছি, আপনারা সঠিক টা ভেবে নেবেন, মরা বাবু অথবা মিস ক্যারেজ। মোটকথা ওদের সন্তান মারা গেছে] শীতলের গ্রুপ এর রক্ত খুঁজতে খুব সমস্যা হচ্ছে রাজের। রাজের সব ছিলো। এখন বাকিটুকু হারাতে বসেছে। অফিসেও কিসব ঝামেলা হয়েছে। ব্যাংকের কাছে সমস্ত প্রোপার্টি বন্ধক দেওয়া। বড় একটা এমাউন্ট আঁটকে আছে। এই এমাউন্টের উপর নির্ভর করছে রাজের সবকিছু।
আল্লাহর তায়ালার কাছে যা কিছু হারিয়েছে তা ফিরে পাওয়ার জন্য রাজও হযরত আইউব নবীর মতো সমস্ত বিপদ, অসুস্থতা দূর করণের দোয়াটি বার বার পড়তে থাকলো। সে যেন আবার সবকিছু ফিরে পায় সে আশায়। চারপাশে তার এতো বিপদ। কোথা থেকে এলো তার এতো বিপদ!
অসুস্থতা ও বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া
_______________
হযরত আইউব আলাইহিস সালাম দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হলে তাঁর বন্ধু-বান্ধব, সন্তান-সন্তুতি সবাই দূরে সরে যায়। অসুস্থতার পূর্বে আল্লাহ তাঁকে অগাধ ধন-সম্পদ, সহায়-সম্পত্তি, দালান-কোঠা, যানবাহন, চাকর-নকর সবাই দান করেছিলেন।
.
অসুস্থ হওয়ার পর সবকিছুই তার শেষ হয়ে যায়। এ অসহায় অবস্থায় তিনি এ দোয়া করেছিলেন। ফলে আল্লাহ তাআলা তাঁকে পূর্বের ন্যায় সব কিছুই ফিরিয়ে দেন।
.
দোয়াটি- [[শুদ্ধ করে কারো কাছ থেকে উচ্চারনটা শিখে নিবেন, ]]
.
ﺭَﺏِّ ﺃَﻧِّﻲ ﻣَﺴَّﻨِﻲَ ﺍﻟﻀُّﺮُّ ﻭَﺃَﻧﺖَ ﺃَﺭْﺣَﻢُ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ
.
উচ্চারণ- রাব্বি আন্নি মাসসানিয়ায যুররু ওয়া আনতা আরহামুর রাহিমিন।
.
অর্থ- হে আমার প্রভু! আমি দুঃখে কষ্টে পতিত হয়েছি, তুমিইতো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৩)
.
এ ঘটনাটি আল্লাহ কুরআনে এভাবে তুলে ধরেন-

ﻭَﺃَﻳُّﻮﺏَ ﺇِﺫْ ﻧَﺎﺩَﻯ ﺭَﺑَّﻪُ ﺃَﻧِّﻲ ﻣَﺴَّﻨِﻲَ ﺍﻟﻀُّﺮُّ ﻭَﺃَﻧﺖَ ﺃَﺭْﺣَﻢُ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ – ﻓَﺎﺳْﺘَﺠَﺒْﻨَﺎ ﻟَﻪُ ﻓَﻜَﺸَﻔْﻨَﺎ ﻣَﺎ ﺑِﻪِ ﻣِﻦ ﺿُﺮٍّ ﻭَﺁﺗَﻴْﻨَﺎﻩُ ﺃَﻫْﻠَﻪُ ﻭَﻣِﺜْﻠَﻬُﻢ ﻣَّﻌَﻬُﻢْ ﺭَﺣْﻤَﺔً ﻣِّﻦْ ﻋِﻨﺪِﻧَﺎ ﻭَﺫِﻛْﺮَﻯ ﻟِﻠْﻌَﺎﺑِﺪِﻳﻦَ
.
অর্থাৎ এবং স্মরণ করুন আইউবের কথা, যখন তিনি তাঁর পালনকর্তাকে আহবান করে বলেছিলেনঃ আমি দুঃখকষ্টে পতিত হয়েছি এবং আপনি দয়াবানদের চাইতেও সর্বশ্রেষ্ট দয়াবান। অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁর দুঃখকষ্ট দূর করে দিলাম এবং তাঁর পরিবরাবর্গ ফিরিয়ে দিলাম, আর তাদের সঙ্গে তাদের সমপরিমাণ আরও দিলাম আমার পক্ষ থেকে কৃপাবশতঃ আর এটা ইবাদত কারীদের জন্যে উপদেশ স্বরূপ। (সূরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৩-৮৪)
.
পরিশেষে…
.
আল্লাহ তাআলা সবাইকে কুরআনের আমল করে সুস্থ থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
রাতে শীতলের হাত ধরে বসে রইলো সে।
শীতল এখনো চুপচাপ।
-জানো আমাদের বেবিটার চেহেরা অনেকটা বাবার মতো ছিলো।
বাবার মতো অমন গোলগাল চেহেরা ছিলো তার।
গায়ের রংটা অবশ্য তোমার মতো। অবশ্য বড় হলে আমার মতো হতো।
শীতল এখনো চুপ।
রাফিয়া মৃত্যু বা মরা বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্য বিন্দু মাত্র দুঃখ নেই তার মাঝে।
এক ফোঁটাও কাঁদেনি সে।
রাজ শীতলের পেটের মাঝখানে হাত রেখে বলল- তুমি কি আমাকে মাফ করে দেবে? যা হয়েছে সব ভুলে যাও।
আমরা নতুন করে সবকিছু শুরু করবে।
ডিসিশন চেঞ্জ করেছি।
ডিভোর্স হবেনা। তুমি
ছাড়া কেউ নেই আমার। আমরা একসাথে থাকব।
আমাদের আবার সন্তান হবে, তুমি দেখে নিয়ো।
কিছুদিন হয়ে গেলো তবুও শীতলের মাঝে পরিবর্তন হলো না।
অধীক শোকে সে পাথর হয়েছে। সারাক্ষণ চুপচাপ থেকে কি যেন ভাবে।
রাজের মাঝে পরিবর্তন হয়েছে। সে একা থাকতে পাচ্ছেনা। সারাক্ষণ শীতলের পাশে থাকছে। শীতল ছাড়া এই দুনিয়ায় আপন বলতে কেউ নেই এরা সে টের পাচ্ছে। তাছাড়া রাজের সারাক্ষণ শীতলের সাথে থাকতে ইচ্ছে করে। কি যেন শীতলের কাছে আসতে বাধ্য করে রাজকে।
চোখ খোলা বা বন্ধ করে সে শীতলকে দেখতে পায়। চারদিকে যেন শীতল।
একদিন রাতে সে শীতলকে দেখে এসে গা এলিয়ে ঘুমিয়েছে নিজের কামরায়।
হঠাৎ কামরায় কারও হাসির শব্দ পেলো। ঘুম ভেঙে গেলো। কড়া একটা গন্ধও পেলো। গন্ধটা বেশ পরিচিত এবং খুব ভালো লাগছে।
পায়ে কারও ঠোঁটের স্পর্শ পেলো। কোমরেও পেলো। মনে হলো কেউ চিমটি দিচ্ছে। গলায়ও পেলো ঠোঁটের স্পর্শ। কি হচ্ছে তার সাথে। সে নড়তে পাচ্ছে না।
গালে কেউ নাক ঘষছে। চুলে কেউ বিলি কেটে দিচ্ছে।
মনে হচ্ছে কেউ রাজকে আদর করছে।
পরম আবেশে কেউ তাকে জরিয়ে রেখেছে।
রাজের মনে প্রশান্তি বইছে।
স্পষ্ট ভাবে সে তার শরীরে অন্য কারও শরীরের স্পর্শ অনুভব করলো।
রাজ হঠাৎ উঠ পড়লো।
লাইট অন করলো।
কোথাও কেউ নেই।
তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে নিলো সে।
পর পর সাতদিন সে এরকম অন্য কারও স্পর্শ পেলো।
মাঝে একদিন শীতলের কেবিনে থাকতে হয়েছিলো। তখন শীতলের অবস্থা একটু খারাপ হয়েছিলো।
আশ্চর্য সেদিন এমন হলো না।
এরপর একদিন সে কেবিনের বাহিরে বেঞ্চে রাত কাটিয়ে ছিলো।
সেদিনও কারও পরম আদরের স্পর্শ পেলো।
চোখ খুলে শীতলের কেবিনে দৌড়ে চলে গেলো।
শীতলের দিকে তাকিয়ে সে বুঝতে পারলো ব্যপারটা কি।
শীতলকে ছেড়ে সে থাকতে পারবে কিন্তু তার মন, আত্মা, সমস্ত জুড়ে শীতল। ময়মনসিংহের গীতিকায় ভালোবাসা সম্পর্কে অনেক গুলো ধারণা আছে।
গোলাপের পাপড়ি ছিড়ে ফেললে তার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু সুবাসটা থাকে। বরং আরও গাঢ় হয়। তেমনি শীতলকে ত্যাগ করলেও তার মায়াটা গাঢ় হয়েছে আরও।
শীতলের মায়ায় রাজকে বারবার কাছে টানছে শীতলের।
রাজের বুকের বামপাশে তীব্র ব্যথা শুরু হলো। মনে হচ্ছে আজরাইল এসে জান কবজ করছে। খুব ভয় করছে তার।
সে কোথায় গেলে এর থেকে মুক্তি পাবে। তখনই শীতলের কাছে গেলো সে। আশ্চর্য ব্যাথাটা আর করছে না। এসব কিছু একসাথে মিলিয়ে রাজ আসল ব্যাপার বুঝতে পারলো।
রাজের মস্তিষ্ক এবং সমস্ত ইন্দ্রয়ে শীতল গেঁথে রয়েছে। যার জন্য শীতলের সৃতি গুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।
শীতল সব সময় হাসতো, তার গায়ে আলাদা একটা সুগন্ধি ছিলো। প্রতিটা মেয়ের গায়ে এমন সুগন্ধি থাকে। এটা মেয়েদের একটি আলাদা নিজস্ব সুগন্ধি। যার জন্য পারফিউম ব্যবহার করতে হয়না।
রাজ শুয়ে থাকলে শীতল পায়ে চুমু দিতো। কোমরে চিমটি কাটতো। গলায় চুমু দিতো। গালে, নাকে নাক ঘষে দিতো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো। পরম আবেশে জরিয়ে ধরতো। যেগুলো রাজের সৃতিতে জমা হয়েছিলো। শীতল নেই তবুও শীতলের আচরণ গুলো সৃতিতে রয়ে গিয়েছে। একা থাকলেই ইন্দ্রয় গুলোতে শীতলের সৃতিচারণ হয়।
রাজ শীতলের কপালে একটা চুমু দিলো।
শীতল চোখ মেলে রাজের দিকে তাকালো।
স্বাভাবিক গলায় বলল- আমি ঠিক আছি।
হসপিটালে থাকতে ভালো লাগছেনা। বাড়ি যাব।
রাজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তার জীবন যেন সে ফিরে পেয়েছে।
শীতলের জ্ঞান ফিরেছে। কতদিন পর সে কথা বলল।
রাজ শীতলের গলায় চুমু দিয়ে বলল- তুমি পুরোপুরি সুস্থ নও। শরীরের কন্ডিশন ভালো না। আরকিছুদিন থাকতে হবে। আমিও তোমার সাথে থাকব। তারপর বাড়ি যাব একসাথে। নতুন জীবন শুরু করবো।
-ওআচ্ছা।
-একটা ডিসিশন নিলাম।
-ওহ।
-আমাদের ডিভোর্স হবে না। আমি বাঁচতে চাই। তোমাকে নিয়ে জীবন কাটাতে চাই।
তোমার সাথে থেকে বাকিটা জীবন আল্লাহর ইবাদত করে কাটিয়ে দেব।
-ওহ।
-আমাদের বেবির জন্য দুঃখ করোনা। তুমি সুস্থ হলে তোমাকে এতো আদর-সোহাগ করব যে তুমি ভাবতেও পারবেনা।
অনেক গুলো বেবি হবে আমাদের। আমাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বেবি হতেই থাকবে, হতেই থাকবে, হতেই থাকবে। নো থামা থামি। অনলি চলবে!
-ওআচ্ছা।
তুমি সেই স্ত্রী যে স্বামীকে জান্নাতে নিয়ে যেতে পারে। যে ইহকালকেও সুখের করে দিতে পারে। তোমাকে দেখলে খুশির জোয়ার বয়ে যায় আমার মনে। মন শান্তিতে ভরে উঠে।তুমি এক সেকেন্ডও দূরে থাকলে মন হয় জাহান্নামে আছি। ছটফট করতে করতে প্রাণ বেরিয়ে যায় আমার।
-ওহ।
-তোমাকে আমি পুরোনো আমার করে ভালোবাসতে শুরু করেছি কিছুদিন থেকেই। তারপর রাজ রাতের অদ্ভুত ঘটনা গুলো খুলে বলল।
শীতল চোখ বন্ধ করলো।
রাজ শীতলের মাথায় হাত দিয়ে বলল-কিছু গোপন কথা তোমাকে আজ বলব। তুমি অনেক বার জিজ্ঞেস করেছিলে কেন আমি তোমার সাথে অমন বিহেভিয়ার করেছিলাম। আজ না বলে শান্তি পাচ্ছি না।
আসলে আমার মধ্যে ভেবেচিন্তে, সুস্থ মস্তিষ্কে মৃত্যুর কথা ঘুরছিলো। নিজেকে নগন্য লাগছিলো। আমার কোন মূল্য নেই। আমি যেন অতি ক্ষুদ্র। জীবনকে ঘৃণা করতে শুরু করেছিলাম। তোমার আমার ভালোবাসার কথা একবারও মনে হচ্ছিলো না। বরং ঘৃণা হচ্ছিলো আমাদের ভালোবাসার উপর।
ডিসিশন নেওয়া ইজি বাট বাস্তবায়ন করা ততটাই হার্ড।
ভেবেছিলাম একা থাকতে পারব৷ কাউকে প্রয়োজন নেই।
তোমাকেও না। তোমাকে ভালোবাসি না,এমনটা নয়৷ খুব ভালোবাসি তোমায়। আমি পাগলাটে টাইপ। কখন কি করে বসি। তার নেই ঠিক। হসপিটালে সম্পূর্ণ জ্ঞান যেদিন আল্লাহ তায়ালা আমাকে দান করেন তখন নিজেকে প্রচন্ড ঘৃণিত মানুষ বলে মনে হয়েছিলো৷ মনে হচ্ছিলো পেট্রোল দিয়ে গায়ে আগুন লাগিয়ে গায়ের জ্বালা মেটায়। তখন থেকেই আমার মাথায় মৃত্যুর বিষয়টা ঢুকে গিয়েছিলো৷ প্রতিটা সেকেন্ড বেঁচে থাকতে কষ্ট হচ্ছিলো। কারণ আমি একজন হেরে যাওয়া মানুষ। ঐ সময় আমি শয়তানের প্ররোচনায় পড়ি৷ কোন মেয়েকে দেখতে পাচ্ছিলাম না।বেঁচে থাকলে মেয়েদের সহ্য করতে হবে। সেজন্য সহজ পথ বেছে দিয়েছে শয়তান আমাকে।এদিকে তোমাকে ভালোবাসতাম।আমার বুকের বামপাশে তোমার জন্য ভালোবাসা ছিলো। তুমি একজন মেয়ে। তোমাকে ভালোবাসি আমি। এটা কিছুতেই আমি মেনে নিতে পাচ্ছিলাম না। আমি জীবনে মা আর তোমাকে সবথেকে বেশি ভালোবেসেছি। মা আমাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি আমাকে অবাক করে দিয়ে চলে গেলেন। হঠাৎ ভয় হতে শুরু করলো তুমিও যদি চলে যাও আমার পাগলামির জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে। এটা তো আমি আরও মেনে নিতে পারতাম না। তাই তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে আমি তোমাকে ছেড়ে দিয়েছিলাম এক প্রকার৷
তোমার কথা মনে পড়বেনা কখনো, অভ্যাস হয়ে যাবে আমার৷তোমাকে একদিন ভুলে যাব। একাই থাকতে পারব তোমাকে হারানোর টেনশন ছাড়া।এগুলো ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।বাট আই এম রং। কিছুদিন আগে পর্যন্ত আমি মারা যেতে চাইতাম। নিজেকে ঘৃণা করতাম৷ মনে হতো । জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা ছিলো। বাঁচতে চাইতাম না। এদিকে তোমার ভালোবাসা ছিলো। আমি খুব করে তোমাকে এবং মৃত্যুকে চেয়েছিলাম। দুটো চয়েস ছিলো।
তারমধ্যে তোমাকে বাদ দিয়ে মৃত্যুকে বেছে নিয়েছিলাম। সুস্থ হওয়ার পর থেকেই ভীষণ রকম আফসোস করতো কেন সুস্থ হলাম। পাগল থেকে ভীষণ রকম অবুঝ ছিলাম। বাস্তবটা বুঝতাম না। শুধু তোমাকে বুঝতাম তোমার ভালোবাসা বুঝতাম।
তুমি কি সেটা বুঝতাম। সপ্নে ভেসে বেড়াতাম তোমার সাথে।
কিন্তু সুস্থ হয়েই সকল কিছু বুঝতে পারি।
বাস্তবটা সহ্য করতে পাচ্ছিলামনা। বেঁচে থাকার ইচ্ছে মরে গিয়েছিলো।
মরে গেলেই বাস্তবতার কষ্ট হতে রেহাই পাব,মুক্তি পাব। এজন্য ডিসিশন নিয়েছিলাম একা থাকার, একা থাকতে থাকতে একদিন তো মরেই যাব।মরে না গেলেও সুইসাইড করে ফেলতাম।এই জীবন ভালো লাগছিলো না। যেদিন সুস্থ হলাম। আমার ভেতর আমি জন্ম হলাম তখন-ই আমি ডিসিশন নিয়েছিলাম।তেমাকে ছেড়ে দিলে আমি কিছুটা শান্তি পেতাম, হাফ ছেড়ে কিছুদিন বাঁচতাম। তোমার কথা ভাবিনি তা নয়৷ ভেবেছি আর ভালো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তুমি মেয়ে বলে তোমাকে সহ্য করতে পারতামনা, বাট তোমার প্রতি পুরোনো ভালোবাসার টান ছিলো। মায়া হচ্ছিলো ডিভোর্স দিতে। তোমাকে ডিভোর্স দিলে তোমার জীবন নষ্ট হয়ে যেত। তোমার জন্য খুব মায়া হচ্ছিলো।
তুমি আমার স্ত্রী থাকাকালীন আমার কিছু হলে বেশি কষ্ট পেতে। কোথায় যেতে তুমি। তাই তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে আবার বিয়ে দিয়ে সুখী করতে চেয়েছিলাম। আমি কখনো তোমাকে সুখ দিতে পারিনি, আর কখনো পারবনা এভাবে জীবন যুদ্ধে হেরে সুইসাইড করার ভাবনা নিয়ে। অন্য সংসারে তুমি তোমার প্রাপ্য পেতে। সুখী হতে। তখন আমার কিছু হলে এতোটুকুও যায় আসতো না তোমার। হয়ত অনেক দিন একসাথে থেকেছো তাই একটু মায়া লাগতো।
মোটকথা, আমি এই জীবন নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলাম। তার উপর আমি তো আবার পাগল ছিলাম। কিছুটা পাগলামি রয়ে গিয়েছিলো মাথায়। বাঁচার কোন ইচ্ছে ছিলো না। তোমার ভালোবাসা বুঝতে পারিনি।
ভাবিনি আমার এই অশান্ত, ক্ষতবিক্ষত হৃদয় কে তুমি শান্ত করতে পারো। বলে না বেশি পেলে সেটার মূল্য বোঝা যায়না। তুমি আমাকে সব সময় বেশি দিয়েছো। তাই তোমার কদর বুঝতে পারিনি।
চোখের সামনে অনেক গুলো মৃত্যু দেখেছি। মৃত্যু খুব ভয়ানক ব্যাপার।যখন পাগল ছিলাম পুরোপুরি তখনও মৃত্যুর কথা ভাবতাম। সুস্থ হয়ে ঠান্ডা মাথায়ও মৃত্যুর কথা ভেবেছি। এখন আমি জীবনের মুল্য বুঝেছি।জীবন কতটা মুল্যবান। কতটা সুন্দর হতে পারে জীবন৷ কতটা রঙিন হতে পারে জীবন।
তোমার কথা একবারও ভাবিনি, তোমাকে বুঝতে পারিনি।তুমি-ই তো আমার জীবনের ঔষধ। তোমাকে কিছু বলিনি, বললে তুমি আমার মাথা থেকে এসব ঝেড়ে ফেলে দিতে। বাঁচার অনুপ্রেরণা যোগাতে। এতোকিছু হতো না। আমাদের ভালোবাসার সন্তানকে হারাতে হতো না।
তুমি জ্ঞান হারানোর পর পর রাফিয়া মারা গেলো। আমাদের মৃত সন্তানের জন্ম হলো। এর আগে বাবা, রাফাও চলে গেলো। হঠাৎ করেই আমার মনের মধ্যে একাকীত্বের ভয় ঢুকে পড়েছে। মানুষের সবচেয়ে ভয়ংকর সময়টুকু হচ্ছে একাকীত্ব।
আমি একা থাকতে পারব না এক মূহুর্ত।
সুইসাইড করার সাহসও আমার নেই। আমি বাঁচতে চাই। জীবনের মূল্য আল্লাহ তায়ালা আমাকে বুঝিয়েছে।
মৃত্যু কতটা ভয়ানক তা বুঝেছি। আমার মাথায় বেঁচে থাকার আকুলতা জন্ম নিয়েছে। মানুষের বেঁচে থাকার অর্থ হলো নিরাপদ আশ্রয়। কিছু মুখ আছে যা দেখলে সকল কষ্ট, ক্লান্তি, একাকীত্ব দূর হয়ে যায়। হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছে করে। সুখী হতে ইচ্ছে করে।
তুমি হলে সেই মুখ গুলোর মতো।
তুমি ছাড়া আমার কোন আশ্রয় নেই। তুমি আমার সব। চোখ বন্ধ করে আমি কোলে মাথা রেখে সারাজীবন ঘুমুতে চাই। আমার কথা গুলো এলোমেলো লাগছে তোমার কাছে। আমার নিজের কাছেও লাগছে। কোথা থেকে কি শুরু করব বুঝতে না পেরে মনে যেসব কথা চলছিলো তা সব এলোমেলো ভাবে বের করে দিলাম। আমি মানুষ টাই এলোমেলো। কখন কি চাই বা কি করি নিজেও জানিনা৷সবকিছু এলোমেলো করে ফেলেছিলাম। এখন ঠিক করব৷ আমি আমার মূল চাওয়াটা বুঝেছি, জেনেছি। আমি সমস্ত জুড়ে তুমি। আমার ইন্দ্রয় জুড়ে তুমি । আমার আত্মা, মন , ধ্যান, জ্ঞান জুড়ে তুমি। আমি বাঁচতে চাই শ্রেয়সী। আমি বাঁচতে চাই।
আমার বেঁচে থাকা হলো আল্লাহর ইবাদত করা এবং তুমি।
এই দুটো ছাড়া আরকিছু লাগবে না এই জীবনে।
কিছু বলো শীতল?
-জ্বি!
-আমি জানি তুমি আমার এতোদিনের বিহেভিয়ারে কিছু মনে করবেনা। আমি তোমার কাছে ছোট শিশুর সমান শিশরা তো ভুল করবেই। তুমি তো কিছুই মনে করবেনা।
আগের মতোই আমাকে ভালোবাসবে, স্নেহ করবে, একসাথে থাকবে।
আমি জানি সব।
চলো দুজন মিলে তাহাজ্জুদ পড়ি।
-জ্বি
রাজ শীতলকে চুমু খেয়ে জরিয়ে ধরলো শিশুদের মতো।
-জানতাম।
-মাঝরাত হয়েছে। কতদিন হলো যে নামাজ পড়িনা।
আমি নামাজ পড়ব।
-পড়বে।সাথে আমিও। আগের মতো তোমার সাথে ঘেঁষে ঘেঁষে জায়নামাজে বসে থাকব আর ঘুমুব। হা! হা! হা!।
-একটু পর পড়ব।
-ঠিক আছে। তাহলে আমি বরং এশারের নামাজ পড়ে নিই। কেবিনেই রাজ এশারের নামাজ পড়ে নিলো। কিছু দোয়া-দরুদ পড়লো।
রাজ শীতলের পাশে বসতেই। শীতল সরে গেলো।
– আমি ঘুমুব। শুভরাত্রি।
-বাট আমি তো কথা বলব তোমার সাথে। অনেক কথা জমা আছে। অসুস্থতার সময়ও ভালো করে কথা হয়নি আমাদের, সুস্থ ছিলাম তখন আমার ভাবনা গুলোর জন্য কথা হয়নি আমাদের।
এতোক্ষণ যেন রাজ কি বলল তা শীতল শুনতেই পেলো না। রাজ নামের মানুষটা কেবিনে তার পাশে বসে আছে সেটাও যেন খেয়াল নেই।
কিছুক্ষণ এর মধ্যে শীতল বেঘোরে ঘুমিয়ে পড়লো।
রাজ হতভম্ব!
রাতটা সে শীতলের পাশে শীতলকে দেখে দেখে কাটালো। একসাথে ঘুমুতে সংকোচ লাগছিলো।
সকালে চোখ লেগে গিয়েছিলো।
ঘুম ভাঙলো নার্সের ডাকে।
-শীতল কোথায়?
ওর জিনিসপত্র কোথায়?
-উনি চলে গিয়েছেন সকালে।
-ওর ডিসচার্জ দিলো কে? আমি ওর গার্ডিয়ান। ওর হাসব্যান্ড। এরজন্য মেডিকেল কে পস্তাতে হবে। কাউকে ছাড় দেবেনা রাজ।
-উনি একজন এডাল্ট। পারমিশন দিতে আমরা বাধ্য।
-আচ্ছা কিছু বলেছে? আমার কথা?
বাসায় একা ও কিভাবে যাবে? রাজ বাসায় ফোন করলো, শীতল যায়নি। এমনকি গ্রামে মায়ের কাছেও যায়নি। ও কোথায়? ওর শরীর দূর্বল। এখনো ব্লিডিং হয় মাঝে মধ্যে।যেকোনো কিছু হতে পারে। কোথায় গেলো ও?
রাজের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। বুক ছটফট করছে।
আজরাইল মনে হয় জান কবজ করছে। শীতল কোথায় তুমি?
.
.
❤মহান আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি নামের তিনটি নাম (আরবি, বাংলা)
৫০. ﺍﻟﺸَّﻬِﻴﺪُ আশ-শাহীদ সাক্ষ্যদানকারী
৫১. ﺍﻟْﺤَﻖُّ আল-হাক্ক্ব প্রকৃত সত্য,
৫২. ﺍﻟْﻮَﻛِﻴﻞُ আল-ওয়াকীল সহায় প্রদানকারী,আস্থ
াভাজন, উকিল❤
.
চলবে………..