লালগোলাপ❤ Part-48-49

0
3124

লালগোলাপ❤
Part-48-49
Writer-Moon Hossain

লাল গোলাপে যেমন কাঁটাযুক্ত থাকে ঠিক তেমনি ভালোবাসার মধ্যেও অদৃশ্য এক কাঁটাযুক্ত থাকে।
ভালোবাসা লাল গোলাপের মতো। গোলাপে যেমন কাঁটা থাকে ভালোবাসাও কাঁটা থাকে অজস্র।
শীতল আর রাজের ভালোবাসাও লাল গোলাপের মতোই। অজস্র কাঁটা দিয়ে তাদের ভালোবাসা ঘেরা। যখনই ভালোবাসা অনুভব হয় তখনই অদৃশ্য কাঁটা হৃদয়ে গেঁথে যায়।
শীতল রাজের বুকে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো সেটা সে জানেনা৷
ঘুম ভাঙলো বিকট আওয়াজে।
কেউ চিৎকার করছে৷
শীতল চোখ মেলে দেখে রাজ শুয়ে থেকেই চিৎকার করছে।
রাজ বলল- কে আপনি? আমার রুমে কি করেন?
আমাকে জরিয়ে ধরেছেন কেন? বেগানা নারী হাউ ডেয়ার ইউ?
শীতল হতভম্ব!!
শীতল দেখলো সত্যি সত্যি ও রাজকে জরিয়ে ধরেছে।।
শীতল রাজকে ছেড়ে দিলো।
রাজ সাথে সাথে বিছানা থেকে নেমে গেলো।
তারপর বলল- লজ্জা করেনা আপনার? আন্স মিঃ?
কেন আপনি আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়েছেন?
আমাকে স্পর্শ করার সাহস কোথা থেকে পেলেন?
শীতল বলল- আমি আপনার বউ! আপনি আমার স্বামী!
সেজন্য আপনার রুমে, আপনার বেডে আপনাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়েছিলাম।
এবং ঘুমুব।
রাজ বলল- চুপ করুন লায়ার! মিথ্যেবাদী! আমাকে পাগল মনে হয়?
আপনি বলবেন আমাদের বিয়ে হয়েছে আর আমি মেনে নেব সব?
নো, নেভার!
– পাগল বলে তাকে পাগল মনে হয় নাকি?
জ্বি সবাই ঠিক বলে। পাগল কখনো বলেনা সে পাগল।
-কি বললেন?
-নাথিং।
-আপনি এখনও বেডে কি করেন?
বের হন?
-আমি আমার বাড়ি থেকে বের হব কেন? এটা আমার বাড়ি।
-ওহ! তাইতো।
এটা তো আপনার বাড়ি।
আমার তো কোন বাড়ি নেই।
আমি বরং চলে যাই। আল্লাহ হাফেজ!
রাজ দরজার সামনে যেতেই শীতল এক লাফে বিছানা থেকে উঠে তাকে আটকালো।
-আরে, আরে কোথায় যান?
বউ রেখে? আমিও যাব।
-এই ছাড়ুন আমাকে! আমি বিয়ে করিনি তাহলে বউ আসবে কোথা থেকে?
আমার কোন বাড়ি নেই। আপনার বাড়িতে আমি কেন থাকব?
শীতল রাজের ঠোঁট চেপে ধরলো।
-আর একটাও বাজে কথা বললে ঠোঁট সেলাই করে দেব। কি ভাবেন নিজেকে?
এসব নাটক বন্ধ করুন প্লিজ।
-শুনুন, আমি হিরো নয় যে নাটক করব। নাটক আপনি করছেন। আপনি কে বলুন তো?
-বললাম তো আপনার বউ! ইংরেজিতে ওয়াই। সহধর্মিণী, অর্ধাঙ্গিনী!
-আমার মনে হয় আপনি পাগল। সরি পাগলী।
পাগলামি বন্ধ করুন। নইলে পাবনায় রেখে আসব।
-পাগলামি আপনি বন্ধ করুন। পাগল হলেন আপনি! আমি নই।
-আরে বাবা, কি ঝামেলায় পড়লাম৷ আমি সিঙ্গেল ছেলে।
এই মেয়ো বলে কি? এই পাগলীর হাত থেকে আমাকে বাঁচাও মহান আল্লাহ তায়ালা।
রাজ দরজা খুলতেই ডক্টর দেখতে পেলো।
ধপাস করে দরজা বন্ধ করে বলল- ডক্টর কি করছে এখানে?
শীতল রাজকে বারান্দায় ইশারা করলো যেতে।
রাজ বারান্দায় গিয়ে দেখে নিচে কয়েকটা গার্ড।
-আপনাকে গার্ড দিচ্ছে।
-এর মানে কি?
শীতল সোফায় বসতে বসতে বলল- আপনি বের হতে পারবেন না এই বাড়ি থেকে।
-এটা কি জেলখানা? আমি কয়েদি?
-তেমনটা ভাবতে পারেন।
আপনার কারাবাস হয়েছে। বিনাশ্রমে কারাবাস।
-হাউ রুঢ! সবাই পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে এসেছে।
কয়েক দিন হয়ে গেলো রাজের কিছু মনে হচ্ছে না।
সে ফন্দি আঁটছে কিভাবে বের হবে এখান থেকে।
শীতল নামের মেয়ের থেকে কবে ছাড়া পাবে এই আাশায় আছে।
শীতল এদিকে রাজের সাথে সেঁটে থাকে সারাক্ষণ।
রাজ বারান্দায় গেলে সেও যাচ্ছে, নিচে গেলে সেও নিচে যাচ্ছে। রাজ যেই রুমে ঘুমুতে যাবে সেও সেই রুমে ঘুমুতে যায়। রাজ বিছানায় ঘুমুলে শীতলও সেখানে ঘুমুবে।
রাজের ঘুম ভাঙলে শীতলকে দেখতে পায়। শীতল রাজকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকে।
রাজ নানা ভাবে শীতলকে কথাবার্তা বলে।। শীতলকে দারুণ লজ্জায় পড়তে হয়।
তবুও শীতলের এতে কোন কিছু মনে হয় না।
কিছু যায় আসেনা।
সে রাজের সাথে সেঁটে সেঁটে থাকে।
রাজ শীতলকে বলল- আপনি একটা পাগলী।
আই থিংক আমার আশেপাশে যারা আছে তারা সবাই পাগল!
-জ্বি। শুধু আপনি ভালো।
রাজকে শীতল খাইয়ে দিচ্ছে।
রাজ রেগেমেগে খাচ্ছে।
-আমি খাব না আপনার হাতে।
-আমার হাতে না খেলে না খেয়ে থাকতে হবে।
খেলে আমার হাতে।
-তাই হবে।
রাজ কিছুক্ষণ পরে এসে পেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকলো শীতলের সামনে।
-সেই এলেন।
বসুন। ভালো ছেলের মতো হা করুন।
রাজ শীতলের হাতে খেতে খেতে অবাক হয়ে যায়। মনে হচ্ছে আগেও এই হাতে খেয়েছে। রাজ কিছু বলেনা।
টেবিলের খাবারের আইটেম দেখে মনে হচ্ছে এগুলো সে খুন পছন্দ করে। মানুষ সব ভুলে গেলেও পছন্দ অপছন্দ ভুলে না।
রাজ খেতে খেতে বলল- হাতে খাচ্ছি ঠেকায় পড়ে।
ভাববেন না আপনাকে মেনে নিয়েছি। আমি সিঙ্গেল।
-আপনি না মানার কে?
আমি মানছি এটাই যথেষ্ট। দুটো ডোজ দিলে সুর সুর করে সব পাগলামো ছুটে যাবে আপনার।
নেহাত আপনার মাথায় সমস্যা! ঔষধপত্র খেতে হচ্ছে।
তাই কোন চাপ দিচ্ছি না।
রাজ খাওয়ার সময় শীতলের হাতে জোরে জোরে কামড় দেয়।
-আমাকে খাওয়ানোর শখ আপনি বুঝবেন হারে হারে।
শীতল রাজের কামড়ের প্রতিক্রিয়া স্বরুপ মিষ্টি হাসি দেয়।
শাকিলার বিকট চিৎকার শোনা গেলো সকালে।
হাই হিল, হাই হিল বলে সে চিৎকার করছে।
-এই কাজ কে করেছে?
আমার হাই হিল গুলো কে চুরি করেছে? নিশ্চয়ই এই শীতল নামের ওল্ড মডেল মেয়েটা করেছে।
বাড়িতে শাকিলা হুলুস্থুল বাধিয়েছে জুতো, জুতো করে।। কাজের লোকেরা সব এক জায়গায় জোর সরো হয়েছে। বিশাল বাড়ি থেকে বিকট আওয়াজ গুলো বাহিরে বের হচ্ছে না৷
শীতল চ্যাক করে দেখলো শাকিলার হাই হিল গুলো নেই। তার বদলে শীতলের চটি দুই জোড়া রাখা।
শীতল বুঝতে পারলো এটা কার কাজ!
গার্ড জানালো রাজ গেইটের সামনে ফেরিওয়ালা কে কি যেন দিচ্ছিল রাজ। আসল কথা রাজকে ফেরিওয়ালার সাথে দেখা গিয়েছে।
শাকিলার সামনে রাজ মাথানিচু করে দাড়িয়ে আছে।
-এটা তুই কেন করলি?
-মাফ করবেন! জুতো গুলো ফেরিওয়ালা কে দেওয়ার জন্য। আপনি হাই হিল পড়ে বিকট বিকট আওয়াজ করে হাটেন। যেটা ঠিক না। মেয়েরা চলবে নিশ্বব্দ ভাবে।
-এজন্য আমার এতো এক্সপেন্সিভ সু গুলো ফেরিওয়ালা কে দিয়ে দিতে হবে? বুঝিয়ে বললে কি হতো না? তোকে আমি খুন করবো রাজ!
রাজের সাথে শাকিলার তুমুল ঝগড়া হলো। ঝগড়াঝাটি তে রাজ জিতলো।
শাকিলার হাতে প্রচন্ড লেভেলের কামড় দেওয়া হয়েছে। তাকে ক্লিনিকে নেওয়া হয়েছে।
শীতল রাজের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকালো।
রাজ আবারও আগের মতো পাগল হয়ে গেলো নাকি!
শীতল নিজের ভুল গুলোর জন্য অনুতপ্ত।
সে তওবা করেছে।
শীতলের সকল দোয়াতে রাজের সুস্থতার কামনা থাকে মনে মনে।
দোয়া একটি স্বতন্ত্র ইবাদত!
সৎ চরিত্রবান ও মুমিন মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দোয়া করা। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে নানান বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন। তিনি বান্দার দোয়াকে স্বাগত জানান। সাহায্য-সহযোগিতার অনুকম্পায় সিক্ত করেন।

বান্দা যদি তার প্রতিপালককে যথাযোগ্যভাবে ডাকার মতো ডাকে আদবের সাথে কাকুতি-মিনতিসহ আল্লাহর নিকট চায়, তাহলে তিনি তাতে সাড়া দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো।’ (সুরা মু’মিন-৬০)
.
আমাদের একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহ তাআলার নিকটই দোয়া করতে হবে। তার কাছে চাইতে হবে। তিনিই সবাইকে সব ধরনের দুশ্চিন্তা ও পেরেশানিমুক্ত করতে পারেন। দোয়া আমাদের জন্য সবসময় উপাদেয় ও উপকারী।
.
দোয়া একটি স্বতন্ত্র ইবাদতও বটে। দোয়ার মাধ্যমে ইবাদতে নিমগ্ন হলে আত্মা প্রশান্তি লাভ করে। প্রশস্ত হয়। মনের ভার কমে যায়। পেরেশানি দূর হয়। জীবনের সব কাজ আল্লাহর নামে এবং দোয়ার মাধ্যমে শুরু করলে তা অত্যন্ত সফলতা ও স্বার্থকতা লাভ করে। তাই আমাদের উচিত সর্বদা দোয়ার মাধ্যমে কাজ শুরু ও শেষ করা।
.
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদতের মগজ।’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ৩২৯৩)
.
তিনি আরো বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ৩৩৭০)
.
ইবাদত একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। দোয়া যে ইবাদত তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দোয়া সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নিকট বান্দার দোয়া অপেক্ষা অধিক মূল্যবান জিনিস আর কিছু নেই।’ তিরমিজি, হাদিস নং: ৩২৯২)
.
অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘যার জন্য দোয়ার দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে (অর্থাৎ যাকে দোয়া করার তাওফিক দান করা হয়েছে) তার জন্য রহমতের দরজা খুলে দেয়া হয়েছে।’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ৩৫৪৮)
.
আল্লাহর দরবারে একাগ্রচিত্তে কাকুতি-মিনতিসহ দোয়া করলে কবুল হয়। কায়মনোবাক্যে বিনয়ের সঙ্গে দোয়া না করলে তা কবুল হয় না।
.
রাসুল (সা.) বলেন, ‘উদাসীন ও অমনোযোগী ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না।’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ৩৪৭৯)
.
কাজেই দোয়া করার সময় এদিকে খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন।
.
♥দোয়া কবুলের বিশেষ কিছু শর্ত ও আদব,
.
* হারাম পানাহার থেকে বেঁচে থাকা।
* পোশাক ও উপার্জন হালাল হওয়া।
* দোয়ায় আন্তরিক হওয়া, উদাসীন না হওয়া।
* আল্লাহর করুণার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখা, নিরাশ না হওয়া। তাড়াহুড়া না করা।
* মিথ্যা, গীবত, হিংসা-বিদ্বেষের অভ্যাস দূর করা।
* পর্দাপালন ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন না করা।
* মাতা-পিতার অবাধ্য না হওয়া।
.
♥দোয়া কবুলের সহায়ক ভূমিকা পালন করে এমন কিছু বিষয়,
.
* বিনয় ও নম্রতার সঙ্গে দোয়া করা।
* দোয়ার শুরু ও শেষে দুরুদ শরীফ পড়া।
* হামদ ও সানা দ্বারা আরম্ভ করা।
* দোয়ার আগে কোনো নেক কাজ করা। নেক কাজের কথা স্মরণ করা।
* পাক-পবিত্র হয়ে দোয়া করা।
* মুমিন ব্যক্তি খাঁটি দিলে দোয়া করলে তা সবসময়ই কবুল হয়। একনিষ্ঠভাবে কায়মনোবাক্যে দোয়া করলে, তা কবুল হওয়ার আশা করা যায়।

তবে কিছু লোক এমন আছেন যাদের দোয়া আল্লাহ তাআলা বিশেষ করে কবুল করেন।
তাদের মধ্যে পীড়িত, বিপদগ্রস্ত ও নির্যাতিতের দোয়া অন্যতম। সন্তানের জন্য মা-বাবার এবং যে সন্তান মা-বাবার তাবেদারি ও খেদমত করে। অনুপস্থিত ব্যক্তির দু’আ। নেক ব্যক্তি, মুসাফির ও রোজাদারদের দোয়া।
.
অবশ্যই মনে রাখা চাই যে, কোনো দোয়াই বিফল হয় না ‌। খালিসভাবে দোয়া করলে তা অবশ্যই কবুল হয়। ত
.
বে এর সুরত তিনটি :
.
এক. বান্দা যখন কোনো কিছুর দোয়া করে, তা কল্যাণকর হলে আল্লাহ তাকে দুনিয়ার জীবনেই দান করেন।
.
দুই. কোনো সময় ওই দোয়ার দ্বারা অন্য কোনো বালা-মুসিবত দূর করেন।
.
তিন. আবার কখনো এর বদলা আখেরাতের জন্য সঞ্চিত রাখেন।
.
সর্বোত্তম দোয়া হলো যা কুরআনে কারীমে আল্লাহ পাক আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন। আর আমাদেরকে দুযখের আযাব থেকে রক্ষা করুন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২০১)
.
আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) অধিকাংশ সময় এ দোয়া পড়তেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ বিষয়ে আনন্দিত যে, আল্লাহ দুঃখ-কষ্ট, দুর্দশা ও দূরাবস্হার সময় তার দোয়া কবুল করেন, তার উচিত স্বাভাবিক অবস্থায় অধিকহারে দোয়া করা।’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ৩৩০৪)
.
দোয়া সকল বেদনার উপশম। যে দোয়া করতে জানে, সে কোনো কিছুতেই আটকে থাকে না। আল্লাহ তাআলাই উত্তম সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর নিকট তাওফিক চাই। যেনো দোয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের ইহতিমাম করতে পারি।
.
তাই আসুন নামায পড়ে বা নামায ছাড়াও আপদে-বিপদে সব সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করি। আল্লাহ যেন আমাদের সকলের মনের আশা পুরন করুক। আমিন।
.
রাজ মাথানিচু করে শীতলের সামনে দাড়িয়ে আছে।
-একটা মেয়েকে কামড় দিলেন কেন?
-ও আমাকে থাপ্পড় মারলো যে!
-সেজন্য একটা মেয়েকে আঘাত করবেন?
-তার জন্য অনুতপ্ত। কি করব আমার মাথা তখন কাজ করছিলো না।
রাজ মাথা চুলকাতে লাগলো!!
-কাজটা ঠিক হয়নি।
আল্লাহ তায়ালা আপনার উপর রেগে আছেন বলে দিলাম।
-আমি জানি।
আমার পাপ হয়েছে।
আরও হবে যদি না আপনারা এখান থেকে আমাকে যেতে না দিন। আমি চলে যেতে চাই।
দয়া করে আমাকে যেতে দিন।
শীতল চুপ করে রাজের দিকে তাকিয়ে রইলো।
.
❤মহান আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি নামের একটি নাম (আরবি,বাংলা)
৯৪. ﺍﻟْﺒَﺪِﻳﻊُ আল-বাদী’ অতুলনীয়, অনিধগম্য (Unattainable) ❤
.
.
চলবে……..

.
.
.
#লালগোলাপ❤
Writer-Moon Hossain
Part-49
শাকিলার হাত দেখে ডক্টর বলল- খুব কি ব্যথা লাগছে?
-ইয়েস!
-ভয় পাবেন না। ইনজেকশন দিয়ে দেব। ঔষধ খেলেই দুই দিনে ঠিক হয়ে যাবে।
-ওরে বাবা ইনজেকশন! নো নো।
শাকিলা কে নার্সরা শক্ত করে ধরেছে ইনজেকশন দেওয়ার জন্য।
ডক্টর ইনজেকশন নিয়ে নরম গলায় বলল- ভয় নেই। আমি আছি তো।
শাকিলা এই কথা শুনে কেমন যেন ফিলিং হলো।
ডক্টর ইয়াং।
ছয় ফিটের মতো লম্বা।
ইয়া লম্বা দাঁড়ি।ঠোঁটে অলওয়েজ মুচকি হাসি।
চেহেরাটা নূরানী নূরানী!!
ব্যাবহার অমায়িক।
একবার দেখলে শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
শাকিলা রুমে বসে বসে সারাদিন ভাবলো ডক্টরের কথা।
ক্লিনিক থেকে আসার সময় ডক্টর একটা ভিজিটিং কার্ড দিয়েছিলো তাকে।
শাকিলা তখন রেগে তাকিয়ে বলেছিলো- আমাকে আপনার কোন ধরনের মেয়ে মনে হয়?
আপনার পার্সোনাল কার্ড দিয়ে আমি কি করব? হাউ ডেয়ার ইউ?
কায়দা করে ডক্টর বলেছিলো- আসতে বলিনি। এড্রেস দিয়ে রাখলাম যদি কোন দরকার পড়ে।
হাত ব্যথা করলে কষ্ট করে ক্লিনিকে আসতে হবেনা।
কার্ডে ফোন নাম্বার আছে। একটা মিসড কল দিলেই আমি চলে আসব।
চাঁচি বলল- কি ব্যাপার! তুমি হাসছো কেন?
শাকিলা মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার হাসি!
-এই বাড়িটা একটা পাগল খানা! সবাই পাগল!
তুইও পাগল হয়েছিস। আমিও পাগল হব আজকালের মধ্যে।
রাজ একটু আগেই শীতলের সাথে ঝগড়াঝাটি করেছে।
এখন ক্লান্ত হয়ে ঘুমুচ্ছো।
কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরছে।
শীতল ঘাম গুলো আঁচল দিয়ে মুছে দিলো।
এসি টা অন করে রাজের পাশে বসলো।
রাজের গালে হাত বুলালো।
মাথায় চুলে বিলি কাটলো।
কপালে একটা চুমু দিতে ইচ্ছে করছে শীতলের।
রাজ জেগে থাকলে কখনো এতো কাছে আসতে দিতো না শীতলকে। গায়ে হাত দিতো না।
গায়ে হাত দিলেই রাজ বেহায়া মেয়ে বলে বকাবকি করে। নির্লজ্জ বলে!
পাগলী বলে!
শীতল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।তারপর রাজের কপালে চুমু খেলো।
অমনি রাজ চোখ মেলে তাকালো।
শীতল হতভম্ব!!
রাজ তুলকালাম কান্ড ঘটালো। পুরো বাড়ি সে মাথায় তুললো।
খাওয়ার সময় রাজ মুখ ভেজার করে বসে রইলো।
-কি হলো?
হাসি মুখ খানায় অমাবস্যা কেন?
-বিনাশ্রমে আপনার কারাদন্ড হলে বুঝতেন হাসি মুখ খানা কেন অমাবস্যা!!
-কোন অসুবিধে হচ্ছে?
আপনার সব ধরনের সুবিধের ব্যবস্থা করা হয়েছে এখানে।
-বললাম তো আপনি আমার জায়গায় থাকলে বুঝতেন।
দিনের পর দিন একটা মানুষকে বাড়িতে আঁটকে রাখলে তার কেমন ফিলিং হয় তা বুঝতেন।
-আমার আদর-যত্ন কি ভালো লাগছেনা আপনার?
-মোটেও না।
আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
আমি মারা যাব এভাবে থাকলে।
স্বর্ণের খাঁচায় পাখিকে বন্দি করে আদর-যত্ন করলেও তার ততটা সুখ হবেনা যতটা না স্বাধীনতায় হবে।
পাখি চায় মুক্ত আকাশে উড়তে।
আমি নিশ্বাস নিতে পাচ্ছিনা।
খোলা আকাশে, খোলা মাঠে বুক ভরে নিশ্বাস নিতে চাই।
শীতল আহত দৃষ্টি নিয়ে রাজের দিকে তাকালো।
তার চোখ থেকে পানি পড়ছে অনবরত!!
রাজ নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছে। সাথে গার্ডও আছে।
শীতল বাড়িতে আছে একা। সে পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। কত সৃতি চারদিকে রাজ আর ওর।
শীতল নামাজ পড়ে অনবরত চোখের পানি ফেললো।
দোয়া-দরুদ পড়লো।
তাদের সাংসারিক জীবনটা কেন যে এমন হলো কে জানে।
শীতল মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করলো তাদের জন্য!!
পবিত্র কুরআনুল কারীমের ৫টি দোআ:

১।দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যান চাওয়ার দোআ

رَبَّنَا آتِنَا فِيْ الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِيْ الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ
[রব্বানা আ-তিনা-ফিদ্ দুন্ইয়া-হাসানাতাওঁ অফিল্ আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ অক্বিনা-‘আযা-বান্না-র।]
হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন। আর আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন।
[২নং সূরা আল বাকারার ২০১ নং আয়াত]

২।পিতামাতার জন্য দোআ„
رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْرًا
[রব্বির হাম্হুমা-কামা-রব্বাইয়া-নী ছগীরা।]

হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন
[১৭নং সূরা আল-ইসরার,২৪ নং আয়াত]

৩।পাপ করার পর ক্ষমা প্রার্থনার দোআ„

رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
[রব্বানা- জলাম্না- আন্ফুসানা- অইল্লাম্ তাগ্ফিরলানা-অতারহাম্না-লানাকূনান্না মিনাল্ খা-সিরীন্।]
হে আমাদের রব, আমরা নিজদের উপর যুল্‌ম করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব
[৭নং সূরা আল আরাফ এর ২৩ নং আয়াত]

৪।ক্ষমা এবং জাহান্নাম হতে মুক্তি চাওয়ার দোআ„
رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
[রব্বানা ইন্নানা আ-মান্না-ফার্গ্ফিলানা- যুনূবানা- অক্বিনা- ‘আযা-বান্ নার্-।]

হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমরা ঈমান আনলাম। অতএব, আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন।
[৩নং সূরা আলে ইমরান এর ১৬ নং আয়াত]

৫।ধৈর্য লাভ এবং মুসলমান হিসেবে মৃত্যু চাওয়ার দোআ„
رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّتَوَفَّنَا مُسْلِمِيْنَ
[রব্বানা আফ্রিগ্ ‘আলাইনা- ছব্বাওঁ অতাওয়াফ্ফানা-মুস্লিমীন্।]

হে আমাদের রব, আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন।
[৭নং সূরা আল আরাফ এর ১২৬ আয়াত]।

আমাদের জন্য দো’আ গুলো মুখস্থ করে সবসময় আমল করা অতিব জরুরী।
.
শীতলরা আছে ২য় গাড়িতে।
তাদের সামনে পেছনে দুটো গাড়ি নিয়ে আছে গার্ডরা।
গার্ড ছাড়া রাজকে বাহিরে নেওয়া অসম্ভব!!
শীতল যদিও রাজকে একাই হ্যান্ডেল করতে পারে।
রাজ টাই খোলার চেষ্টা করছে। কোর্টের বোতাম খুলে ফেলেছে।
-আহা! চুপ করে বসুন তো।
এরকম নড়ছেন কেন? পোশাক-আশাক খোলার কি হলো?
-ছেলে হলে বুঝতেন কোর্ট, টাই পড়া কি ঝামেলা।
আমার মনে হচ্ছে গলায় ফাঁস লাগবে।
উফফ, কি গরম। এই গরমে কোর্ট পড়া থাকা যায়না।
কোর্টটা নির্ঘাত গন্ডারের চামড়া দিয়ে তৈরি।
এতো মোটা!!
-ওআচ্ছা, আমার দিকে একটু তাকিয়ে দেখুন তো?
-আপনার দিকে কিভাবে তাকাবো? লাভ নেই তো।
আপনার তো এক ইঞ্চিও দেখা যাচ্ছে না।
সব সময় মনে হয় চার-পাঁচটা পোশাক পড়ে থাকেন ।।
-তাহলেই বুঝুন। আমি কিভাবে থাকি।
আপনি তো ফরমাল ড্রেস পড়েছেন। আগে আমরা ঘুরতে গেলে মাঝে মধ্যে ফরমাল ড্রেস পড়তেন।
-মোটেও না।
আমি এই জীবনে কোথাও ঘুরতে গিয়েছি বলে মনে হচ্ছে না। আপনি একাই গিয়েছেন।
-এদিকে আসুন তো।
-হোয়াই?
-টাই বেঁধে বাধব। বোতাম লাগাবো।
-আমি বেগানা নারীর হাতে টাই বাধি না। বোতাম লাগায় না।
শীতল রাজকে উপেক্ষা করে বোতাম লাগিয়ে দিলো। টাই বেঁধে দিলো।
শীতল রাজের খুব কাছে এসে পড়েছে বিধায় রাজ চোখ বন্ধ করলো শক্ত করে।
সে এমন একটা ভাব করলো যেন কাছে কোন ছোঁয়াছো রোগী।
শীতল রাজের টাই শক্ত করে বেঁধে গলায় ফাঁসের মতো করলো।
রাজ চোখ মেলে তাকিয়ে জিহ্বা বের করলো।
-আরেকবার বেগানা নারী বললে টাই দিয়ে ফাঁস দেব গলায়। সোজা উপরে চলে যেতে হবে।
রাজ মাথা হ্যাঁ সূচক নাড়ালো।চোখ মিটমিট করলো।
শীতল টাই ঢিলে করে রাজের মাথার চুলে বিলি কেটে বলল- গুড বয়।
রাজ হতভম্ব!
রাজ ছাড়া পেয়ে বলল- আপনি শুধু পাগলী না, একটা খুনি মেয়ে।
রাজের জন্য খুব সুন্দর দেখে পাঞ্জাবি সিলেক্ট করলো শীতল।
প্রতিটা পাঞ্জাবি রাজের গায়ে জরিয়ে দুচোখ ভরে রাজকে দেখলো।
কোনটা তে ভালো লাগে রাজকে।
রাজ বলল -একটা কথা বলব?
-একশত টা বলুন।
-দাড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার পা ব্যথা করছে।
ঘুম পেয়েছে। আমি ঘুমুব।
-একদম না। ব্যথা করুক। মালিশ করে দেব।
চুপচাপ দাড়িয়ে থাকবেন।
সব গুলো পাঞ্জাবি আমি আপনার গায়ে জরিয়ে দেখব। কোন গুলোতে আমার হ্যান্ডসাম স্বামীকে মানায়।
-তো দেখবেন আপনার স্বামীকে। যত খুশি দাড় করিয়ে রেখে পাঞ্জাবি নিন।
আমাকে যেতে দিন। আমি ঘুমুব।
শীতল সাদা একটা পাঞ্জাবি রাজের গায়ে ধরে বলল- এটা ঠিক আছে। সুন্দর লাগছে আপনাকে। মাশাআল্লাহ!!!
শপিং শেষে রেস্টুরেন্ট খেতে যাওয়া হলো।
তারা সব সময় যে রেস্টুরেন্ট যায় সে রেস্টুরেন্টে।
রেস্টুরেন্টের গার্ড ম্যানেজার সবাই রাজকে সালাম দিলো।
সবাই একে একে বলল- আসসালামু আলাইকুম ভাইজান! অনেক দিন পর ভাবিকে নিয়ে এলেন।
শরীর ভালো তো আপনার?
রাজ সালামের উওর দিয়ে শীতলকে বলল- যাক বাবা, আমি আবার অনেক দিন পর আসতে যাব কেন? আমি তো এখানে আসিনি কখনো!
-ও কিছু না। চলুন ঐ ফাঁকা নীরব টেবিলে বসি। যেখানে কেউ থাকবে না। আমি আর আপনি শুধু!!
শীতল রাজের গা ঘেঁষে বসলো। রাজ একটু সরে বসলো। শীতল আবারও ঘেঁষে বসলো।
রাজ জানে সে শীতলের সাথে পেরে উঠবে না।
রাজ শীতলের দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকালো।
-হচ্ছে টা কি?
-ও কিছুনা। আপনি মেনু কার্ড দেখুন।
-এসব ন্যাকামি আমার ভালো লাগে না একদম৷
-কেন কেন?
-কেমন যেন ফিলিং হয়।
-কেমন কেমন? শুনি?
-রাগ হয়।। রাগ ফিলিং হয়।।
শীতল হেঁসে রাজের নাক ধরে টান দিলো।
রাজ মেনু দেখে আগের মতোই সব অর্ডার করলো তার এবং শীতলের পছন্দ অনুযায়ী।
শীতল অবাক হয়নি।
শীতল যখন রাজকে খাইয়ে দিচ্ছিল তখন সে বেশ অবাক হয়েছে।
খাবার গুলো তার এতো পছন্দের হলো কি করে আর সে অর্ডার কিভাবে দিলো গড়গড় করে সেটাই ভাবলো।
রাজ বারবার নড়ছিলো বিধায় মুখে, গায়ে এখানে সেখানে খাবার লেগে গেলো।
শীতল হাসলো!
রাজ হঠাৎ শীতলের নেকাবে হাত দিলো।
নিজের গাল শীতলের গালে ঘষে দিলো।
শীতলের নিঃশ্বাস আঁটকে গেলো।
শীতল অস্ফুটে কন্ঠে বলল- কতবার যে আপনি এই কান্ড করেছেন বলার বাহিরে।
ঝোল লাগা গাল আমার গালে ঘষতেন।
রাজ কিছু বলল না। অস্বস্তি ফিল করলো এমন ভাব ধরে থাকলো । শীতলকে বুঝতে দিলে চলবে না এই কান্ড করতে তার অনেক ভালো লেগেছে।
রাজ নিজে নিজে পানি খেতে নিলে শীতল বাধা দিয়ে সে খাওয়ালো।
রাজ টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে চাইলে শীতল এতেও বাধা দিলো।
-এখন কি মুখ মুছতেও পারব না?
-মানা করেছি কখন?
-তো?
-টিস্যু দিয়ে নয় এটা দিয়ে আমি মুছে দেব।
ভ্যানিটিব্যাগ থেকে শীতল নিজের রুমাল বের করে মুছে দিলো রাজের মুখ।
-খাবার গুলো খুব মজা ছিলো।
-খাবার মজা ছিলো শুধু? আমি যে হাত দিয়ে খাওয়ালাম সেটা মজা ছিলো না?
-আমি ওভাবে মিন করিনি।
বাসায় যাব। চলুন। ঘুমুবো।
– আমাকে তো একটিবারও খেতে বললেন না। আমার বুঝি ক্ষিদে লাগেনি।।
-সরি, মাফ করবেন। ভুলে গিয়েছিলাম। আসলে খাবার গুলো এতো মজা লেগেছে।
-বরাবরই আপনার কাছে খাবার মজা লাগে এই রেস্টুরেন্টে আমার হাতে খেতে। এটা আপনার ফেবারিট রেস্টুরেন্ট।এবং..
-এবং?
-আমার হাতও ফেবারিট।
রাজ এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল-খেয়ে নিন কিছু।
-না।
আপনি খেয়েছেন এতেই খাওয়া হয়েছে আমার৷
রাজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল হা করুন।
শীতল হা করলো।
খাবার মুখে নিয়ে তার চোখে পানি চলে এলো।
-আপনার চোখে পানি কেন? চোখে প্রবলেম হচ্ছে নাকি?
-হ্যাঁ।
-ডক্টর ডাকব?
শীতল কিছু বলল না।।
গাড়িতে উঠার সময় শীতল বলল- আপনি একবারও আমাকে কিছু নিতে বলেন নি শপিংয়ে।
রাজ কি বলবে ভেবে পেলো না৷
-বলুন কি কিনবেন? কি নেবেন?
-আমি আপনাকে কিনব। আপনাকে নেব আমার জন্য।
-ধ্যাত! এটা কি করে হয়।
-হয়। ভালোবাসলে সব হয়।
শীতল রাজকে অস্বস্তিতে ফেলতে চায়না৷।
শীতল বলল- আপনি বসুন ভেতরে।
বাড়ি যেতে যেতে রাজ ঘুমিয়ে পড়েছে শীতলের কোলে।
শীতল রাজের মাথায় বিলি কাটতে কাটতে ভাবলো কিছুদিন আগের কথা।
সে কিভাবে রাজকে ইগনোর করেছে।।
রাজ তো ক্ষমা চেয়েছে।। অনুতপ্ত হয়েছে। রাজের মাথায় সমস্যা আছে এটা জেনেও সে কি করে রাগ করতে পারলো রাজের উপর।
রাজকে কতটা অবহেলা, কষ্ট, ঘৃণা দিয়েছে সে এটা ভাবতেই নিজের উপর খুব রাগ লাগছে।
আজ তার জেদের জন্যই রাজের এই অবস্থা। সৃতি হারিয়ে সে কিছুই চিনতে পাচ্ছেনা। বেচারা!!
বিছানায় রাজ গা এলিয়ে শুয়ে পড়েছে এসেই৷
শীতল রাজের পাঞ্জাবির প্যাকেট গুলো আলমারিতে রাখতেই দেখে অন্য একটা প্যাকেট।
খুলে দেখে একটা শাড়ি।
শাড়িতে হাত বুলিয়ে শীতল দারুণ খুশি হলো।
শাড়িটা তার খুব পছন্দ হয়েছিলো শপিংমলে।
কিন্তু কেনা হয়নি।
এটা এখানে কি করে এলো!
রাজ চোখ বন্ধ করেই বলল- যেভাবে তাকিয়ে ছিলেন শাড়িটার দিকে। অন্য কেউ নিলে গায়ে হজম করতে পারতো না।
তাই নিয়ে এলাম। ভাববেন না আমার টাকা দিয়ে নিয়েছি। ওটা আপনাদের টাকায় কিনা। গার্ডের কাছ থেকে নিয়েছিলাম।
শীতল খুব খুশি হলো।
শাড়িটা থেকে সুন্দর সুভাস পাওয়া যাচ্ছে।
আচ্ছা রাজ তো সারাক্ষণ ওর সামনে দাঁড়ানো ছিলো।
তাহলে কখন কিনলো?
মনে পড়েছে একবার রাজ শীতলের কানে কানে বলেছিলো ওয়াশরুম যাবে। তখনই কেনা হয়েছিলো সুন্দর শাড়িটা।
রাজ এখনো শীতলের সাথে অচেনা মানুষের মতো ব্যবহার করে। শীতল রাজকে চাপ দিতেও পাচ্ছেনা। রাজের মাথায় সমস্যার জন্য। দেখা যাবে একটা অঘটন ঘটে যাবে।
কিছুদিন পর শীতল এই শাড়িটা পড়ে রাজের সামনে গোলাপ বাগানে দাঁড়ালো সে।
রাজ শীতলকে দেখে চমকে গেলো। তাকিয়ে রইলো পলকহীন ভাবে।রাজের চোখ গুলো কেমন যেন রোমান্টিক লুক হয়ে গেলো নিমিষেই।
শীতল লজ্জা পেয়ে শাড়ির আঁচল পেচানো শুরু করেছে আঙুলে।
রাজ শীতলের খুব কাছে চলে এলো। দুজনের নিশ্বাস দুজনের মুখে পড়েছে।
দু’জনের হৃদয় স্পন্দ বাড়ছে ক্রমশ!!
রাজ শীতলের গালে হাত রাখলো। রাজ আর শীতল দু’জনেই চোখ বন্ধ করলো।
রাজ ডাইনিংয়ে বসে বসে পেপার পড়ছে ।
শীতল রান্না ঘরে।
শীতল আজ দুপুরে বাড়ির সবাইকে একসাথে খেতে বলেছে। তাই নিজ হাতে সকল রান্না করবে বলে ঠিক করেছে।
গোশতের ঝোলের জন্য গরম পানি বিশাল গামলায় রাখা হয়েছে। কড়াইয়ে মশলা-লবন ভাজা হচ্ছে। দারুণ গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
শীতল দারচিনির বয়াম উপর থেকে নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই রাজ বয়ামটা হাতে নিলো।
-একি আপনি এখানে?
-আপনাকে সাহায্য করব!

-তেল ছিটে যাবে গায়ে।
বের হন। দয়া করে বের হন।
রান্না হলে ডাইনিংয়ে সার্ভ করে দেব।
-আমি যাব না।
একবার কাছে আসতে বলেন, আরেকবার দূরে যেতে বলেন। “হে আল্লাহ তায়ালা কোন দিকে যাব আমি? তুমি বলো? পাগলীর হাত থেকে বাচাও!
শীতল হাসলো।
রাজও হাসলো।
শীতল হাসতে হাসতে হঠাৎ করে অন্যমনস্ক হওয়ায় তেল ছিটকে হাতে গলায় পড়লো।
আহ! করে উঠলো সে।
রাজ হন্তদন্ত হয়ে রান্না ঘরের ফ্রিজ থেকে বরফ এনে দিলো গলায়। ফু দিতে থাকলো।
রাজ কি করবে না করবে ভেবে পেলো না।
-তোমার কি খুব জ্বালা করছে? খুব কষ্ট হচ্ছে?
তুমি আর কখনো রান্না ঘরে আসবে না। বলে দিলাম।
শীতল কিছু বললো না।
রাজের দিকে তাকিয়ে তাকে দেখছে, রাজ তার জন্য কতোটা ডেস্পারেট হয়েছে সেটাই দেখছে।
রাজ গলায় চুমু দিয়ে বলল-এখন আসল ঔষধ দিয়েছি। ব্যথা এখুনি দূর হবে। আমি তোমাকে হেল্প করব রান্নায়। তোমার কথা শুনব না।
শ্রেয়সী তুমি রান্না করবে আর আমি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকব?
নো নেভার। কয়েক দিন আগেও দেখলাম রান্না করতে গিয়ে তেল ছিটে তোমার হাতে পড়েছে। কি যে কষ্ট পেয়েছিলাম তোমার জন্য। কিন্তু কিছু করতে পাচ্ছিলাম না। কি যে যন্ত্রণা!
ভুলে গেলে আমি আগে কিভাবে তোমাকে রান্নায় হেল্প করতাম? যদিও রান্না করা ডিফিকাল্ট তবুও নো প্রবলেম।তোমার স্বামী সব পারে।
শীতল বেশ চমকে গেলো।
-আপনি এতোদিন নাটক করেছেন?
রাজ ভ্যাবাচেকা খেলো।
শীতলের কাছ থেকে একটু সরে গেলো।
-অভিনয় করলেন সৃতি ভুলে যাওয়ার? আপনি পুরোপুরি সুস্থ?
-কি বলছো তুমি? শান্ত হও আল্লাহর দোহাই!!
-এখন সবকিছু পরিষ্কার আমার কাছে। আপনি একটা ভন্ড, মিথ্যেবাদী লোক।
আমাকে নিয়ে আবারও খেলা করলেন? আবারও কষ্ট দিলেন? আপনার অসুস্থতার জন্য কতটা কষ্ট পেয়েছি এই ভেবে যে আপনি কতটা যন্ত্রণায় আছেন। দিনরাত আল্লাহর কাছে আপনার সুস্থতার দোয়া করেছি।
আর আপনি কিনা বরাবরের মতোই আমাকে নিয়ে মজা করলেন। !
আমি নিজেকে দায়ী ভেবেছি আপনার অবস্থার জন্য।
আর কত কষ্ট দেবেন আমাকে? আর কত খেলা করবেন?
-লেট মি এক্সপ্লেইন।
আমাকে সবটা বলার সুযোগ দাও শ্রেয়সী! আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পাচ্ছিলাম না। মরে যাচ্ছিলাম কষ্টে। আমার ইহকাল, পরকালে আমি শুধু তোমাকে চাই।
আমার প্রতিটা সেকেন্ডে হৃদয় রক্তাক্ত হয়ে বের হয়ে পড়ছিলো বার বার। তোমার ইগনোর, অভিমান নিতে পাচ্ছিলাম না।
মাথায় আর বুকে খুব ব্যাথা হতো। আমি তো সত্যি একটা পাগল। তুমি নেই তো কে আমাকে সামলাবে? তাই মনে হয় তোমাকে পাওয়ার জন্য তোমার সাথেই পাগলামি করেছি ভুল করে।
-ছেলে হারা, বাবা হারা অসহায় মেয়ের সাথে এমন করার শাস্তি পেতে হবে আপনাকে।
শীতল চলে যাচ্ছে। রাজ শীতলকে আটকাতে পাচ্ছেনা।
রাজ হঠাৎ গরম পানির গামলাটা নিয়ে চিৎকার করে বলল- তুমি এক পা বাড়ালে আমি গরম পানি মাথায় ঢেলে দেব, আগে একবার তোমার গায়ে ঢেলে ছিলাম না বুঝে এখন জেনে-বুঝে নিজের গায়ে ঢালব।
শীতল স্তব্ধ হয়ে গেলো।

.

❤মহান আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি নামের একটি নাম (আরবি,বাংলা)
৯৫. ﺍﻟْﺒَﺎﻗِﻲ আল-বাকী অপরিবর্তনীয়, অনন্ত, অসীম, অক্ষয়❤
.
.
চলবে………..