লালগোলাপ?
Part-32
Writer-Moon Hossain
রাজ ময়মনসিংহ তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে। কোথায় শীতল নেই। কোথায় গেলো ও। ওর যদি কিছু হয়।
সুন্দরী অসুস্থ তার উপর একা মেয়ে।
আজকালের রাস্তাঘাট ভালো না। কোন মেয়ে সুস্থ না অসুস্থ এসব ওরা দেখেনা।
রাজ হসপিটাল, ক্লিনিক, ভার্সিটি, স্কুল, কলেজ, পার্ক কিছুই বাদ রাখেনি।
সব জায়গায় খুঁজেছে।
থানায় রিপোর্ট করেছে। স্বয়ং কমিশনার সাহেব শীতলকে খোঁজার জন্য বের হয়েছেন।
বিকেল হয়ে গেলো।
তবুও শীতলের কোন হদিস নেই।
রাজ তাদের কামরায় শার্ট খুলে খালি গায়ে উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁদছে।
বুকের ভেতর যেন, দুমড়ে, মুচড়ে যাচ্ছে। খুব ব্যথা করছে। এই জায়গা টুকু শুধু শীতলকে চাচ্ছে।
শীতলকে না পেলে এখান থেকে রক্তাক্ত হৃদয় বেরিয়ে আসতে বেশি সময় নেই।
রাজ চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
শীতলের কিছু হলে রাজও ঠিক সে সময় প্রাণ ত্যাগ হবে। রাজের কাছে শুধু তার শরীর আছে কিন্তু প্রাণ আছে শীতলের কাছে।
না জানি কোন অবস্থায় আছে ও! কতটা অসুস্থ ও।
রাজ কিছু ভাবতে পাচ্ছে না। শুধু চিৎকার করছে মুখে হাত চেপে।
কষ্টে মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে তার। মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়েছে সেই সকাল থেকেই। সে নিজেও কোন ঔষধ খায়নি।
শীতল ঔষধ খায়নি, রাজও খাবেনা।
রাজ ওয়াশরুমে শালওয়ারের নিচে কিছুক্ষণ বসে রইলো।
হ্যাঁ ঠিক এই জায়গাটায় রাজকে বসিয়ে দিনের পর দিন শীতল গোসল করিয়ে দিয়েছে।
রাজ কত দুষ্টুমি করেছে গোসলের সময়।
শীতল কে ভিজিয়ে দিতো।
শীতল রাগী লুক নিয়ে চোখ গুলো বড় বড় করে তাকাতো।
রাজ ভয়ে ঢোক গিলতে শুরু করতো।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে আবারও একই ভাবে শীতলকে ভিজিয়ে দিতো।
শীতল তখন হেঁসে দিতো।
শীতল কখনো রাজের সেবাযত্নে বিরক্ত হয়নি।
মায়া, মমতা, স্নেহ দিয়ে সেবাযত্ন করতো।
এক সেকেন্ডও চোখের আড়াল হতে দিতো না।
যা আবদার করতো তাই পূরণ করতো শীতল।
শীতল কে রাজের দুষ্টুমির কারণে এক কাজ বার বার করতে হতো। কোনদিনও শীতল রাগ করেনি এ নিয়ে। সে আবারও হাসি মুখে কাজ করতো। রাজ আবারও সেটা নষ্ট করে দিতো। শীতল আবারও সেটা ঠিক করে করতো।
এতোটা ধৈর্য শীতলের। নিজের উপর এতোটা আত্মবিশ্বাস। শীতল আল্লাহর ইবাদত এবং স্বামীর সেবাযত্ন করে সময় কাটাতো। নিজের কোন শখ আহলাদের দিকে ফিরেও তাকায়নি।
শীতল কি কোথাও পড়ে মরো আছে নাকি! নাকি বাজে লোকেদের হাতে পড়েছে।
রাজের কলিজা শুকিয়ে এলো ভয়ে। মুখ চেপে বিকট আওয়াজ করতে লাগলো সে আতংকে।
সে বাসায় থাকতে পারলো না। আবারও বেরিয়ে পড়লো শীতলকে খুঁজতে।
.
রাজ কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলোনা। শেষে সন্ধ্যার দিকে ইস্টিশনে গেলো।
একটা মেয়েকে দেখা যাচ্ছে ট্রেনের সম্মুখে হেঁটে যাচ্ছে।
শীতলের মতো দেখা যাচ্ছে। রাজ চিৎকার করে বলতে লাগলো, সরে যাও শীতল, সরে যাও শীতল। ট্রেন চলছে দ্রুত গতিতে।
রাজের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেলো। মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না।
রাজ এক দৌড়ে মেয়েটির কাছে গেলো। একটানে ট্রেনের সামনে থেকে টেনে অন্যপাশে সরিয়ে আনলো।
-আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেব।
-ঠিক আছে।
-আসলে গত বছর আমার ওয়াইফ মরা বাচ্চা প্রসব করে। তার শোকে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। চারপাশে কি হচ্ছে কিছুই তার খেয়াল নেই।
ওকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ছিলাম। কয়েক মাস রেখে আবার নিজের কাছে নিয়ে আসি। সহ্য হচ্ছিল না ওর এমন সিচুয়েশন।
এসবের জন্য আমি দায়ী।
ওকে একটুও সময় দিইনি। ও একাই আমাদের সংসার করেছে। প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে আরও বিজি হয়ে পড়ি। ও কিছু বললে ওর সাথে রুঢ বিহেভিয়ার করতাম। ও এগুলো নিতে পারতো না। তবুও কোন অভিযোগ করেনি।
আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবেনি।
একদিন বাসায় এসে রক্তাক্ত অবস্থায় ওকে দেখি। ওকে এভাবে দেখেই বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে। ও আমার কতখানি জুড়ে তা বুঝতে পারি।
ততক্ষণে লেট হয়ে গিয়েছে।
ও মরা বাচ্চা প্রসব করে। ওর কন্ডিশন খুব খারাপ। প্রচুর ব্লিডিং হয়েছিলো।
বাঁচা মরার মাঝখানে ছিলো। আমি কখনো ওর কথা শুনিনি। ও খুব ধার্মিক মেয়ে। আমাকে নামাজ পড়ার জন্য তাগিদ করতো। ওর কথা কানেই তুলতাম না।
আল্লাহ তায়ালার কাছে কিছু চাইনি কোনদিন। সেদিন আমি মসজিদে আল্লাহর নাম নিয়ে ঢুকলাম। আল্লাহর দরবারে দয়া ভিক্ষা চাইলাম৷
যতক্ষণ না ওর সুস্থতার খবর পাচ্ছি ততক্ষণ আমি আল্লাহর দরবার থেকে হাত নামাব না। মসজিদ থেকে বের হবো না। কিছু মুখে দেব না, এক ফোঁটা পানিও খাবনা। তিন দিন পর খবর পেলাম ও শারীরিক ভাবে উন্নতি করেছে।
আল্লাহর দয়ায় ও শারীরিক ভাবে সুস্থ হয়েছে বাট মানসিক ভাবে অসুস্থ।
চোখে চোখে রাখতে হয়।
একটু চোখের আড়াল হলেই ও নিজের ক্ষতি করে বসে।
আপনি না থাকলে কি যে হতো।
বলেই লোকটা নিচে হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদতে লাগলো।
উনার ওয়াইফ তখন রেললাইনে পাথর কুড়িয়ে আঁচল ভরছে। বাসায় গিয়ে বাবুর সাথে পাথর দিয়ে এক্কা, দুক্কা খেলবে।
রাজ লোকটির কাঁধে হাত রাখলো।
শান্তনা দেওয়ার ভাষা নেই তার কাছে।
সে তো নিজেও লোকটার চেয়ে হাজার গুন অপরাধী।
লোকের ওয়াইফ মানসিক হাসপাতালে ছিলো মরা বাচ্চা জন্ম দিয়ে। শীতলও কি এই মেয়েটির মতো মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে গেলো।
চোখের আড়াল হতেই শীতল কি নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করার জন্য বের হয়েছে?
রাজের নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। শীতলের কি কিছু হলো? না সে আরকিছু ভাবতে পাচ্ছেনা।
এক দৌড়ে সে খোলা মাঠের দিকে যেতে থাকে।
হাঁটু গেড়ে বসে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে।
শীতল, শীতল করতে করতে সে হাঁপিয়ে উঠে।
শীতলকে খুঁজে পেলে কি মানসিক হসপিটালে রাখতে হবে? না না। এটা রাজ বেঁচে থাকতে হবেনা।
ও জানে মানসিক হসপিটাল কতটা ভয়ানক।
কখনো এটা হবেনা।
শীতল উন্মাদ হয়ে গেলেও ওকে রাজ নিজের বুকে রাখবে। বুক থেকে নামাবেনা।
.
হাসান রাজকে বাসায় নিয়ে এলো। রাত হয়েছে।
হাসান ছাঁদে বসে আছে।
একদম কিনারায়। হাতে রাফিয়ার ডায়েরি।
হাসান যখন রাফিয়াকে দেখতে গিয়েছিলো।
তখন পুরো শরীর ব্যান্ডেজে ছিলো। শুধু অশ্রু ভরা ডাগর ডাগর চোখ দুটো দেখা যাচ্ছিলো।
ঐ চোখ দুটো কি যেন ইশারা করলো।
হাসান হাটু গেড়ে রাফিয়ার কাছে বেডের পাশে নিচে বসলো।
রাফিয়ার স্বামী জানালার পাশে চুপচাপ বসেছিলো।
রাফিয়া অস্ফুট আওয়াজে বলল-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
হাসান চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করছে তবুও পেরে উঠছেনা।
পানি মুছতেই ফের পানি ভরে যাচ্ছে চোখে।
-হাসান ভাই।
-হু।
-অভিমান করেছেন আমার উপর?
-কখনো না।
-আপনার দেশের বাহিরে যাওয়ার কি হলো?
-দেশের বাহিরে যাব না।
দেশ ছেড়ে বিদেশ যাওয়া অসম্ভব।
– দেশে থাকলে কোথায় থাকবেন?
-গ্রামে। নয়ত শহরে। এতো বড় আল্লাহর দুনিয়া।
কোথাও নিশ্চয়ই জায়গা পাব।
-আমাদের বাড়িতে থাকবেন।
-তুমি তো বাড়িতে থাকবেনা।
-ওখানে আমি থাকব সব সময়। আপনি যেদিকে তাকাবেন। সেদিকে শুধু আমি, আমি, আমি।
-খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার?
-না। এখন তো চিরকাল শান্তি আর শান্তি।
-এভাবে বলো না। তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। তারপর স্বামীর সাথে সংসার করবে।
ছেলেমেয়ে হবে।
ওদের বড় করবে।
আমি মাঝে মাঝে তোমাদের বাড়ি যাব। তোমাদের দেখে আসব।
তুমি আমাকে রান্না করে খাওয়াবে, আমার পছন্দের চিংড়ি।
রাফিয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো হাসানের দিকে।
হাসান দৃষ্টি নিচে নামিয়ে রাখলো।
-আপনার কামরায় আমার একটা অতি দামী জিনিস রাখা আছে।
আপনি চলে আসার পরেই আমি রেখেছি সবার থেকে লুকিয়ে।
হাসান মাথা নাড়ালো।
-একটা কথা রাখবেন?
-হু।
-লাল টুক টুকে দেখে একটা মেয়েকে বিয়ে করবেন।
সাজানো গোছানো সংসার হবে। আপনি ফর্সা, বউও ফর্সা। দুধে আলতা সন্তান হবে আপনাদের। বউ কখনো আপনার সাথে রাগ করবেনা। কঠোর ব্যবহার করবেনা।
আপনাকে বুঝবে।
সে খুব ধার্মিক হবে।
সব সময় আপনার মনের মতো হবার চেষ্টা করবে। মিষ্টি মিষ্টি ব্যবহার করবে।
-আমার কঠোর ব্যবহার পছন্দ। তেঁতো কথায় ভালো লাগে, সাথে কাটা কাটা কথা।
আমি কখনো বিয়ে করবো না। এই কথা রাখতে পারলাম না।
রাফিয়া মারা যাওয়ার আগে তার স্বামীর কাছে মাফ চাইলো। তওবা করলো স্বামীর সাহায্যে। হাসান বাহিরে চলে এলো।
সে স্বামী স্ত্রীর মাঝে থাকতে চায়না। ওদেরও কিছু কথা থাকতে পারে।
রাফিয়া এখনো অন্যের স্ত্রী।
হাসান কখনো রাফিয়ার বিয়ের আগেও তাকে পেতে চায়নি, সে শুধু ভালোবেসে ছিলো দূর থেকে।
দূর থেকে রাফিয়ার সুখ চেয়েছিলো।
পাওয়া মানেই ভালোবাসা নয়, ভালোবাসা হলো শুধু দুটি অন্তরের টান।
রাফিয়ার হঠাৎ করেই নিজের স্বামীর উপর খুব মায়া হলো ।
মানুষটা কত সরল।
-খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা?
আল্লাহর নামে বলছি, সম্ভব হলে আমি তোমার সব কষ্ট নিজে নিয়ে নিতাম।
রাফিয়া হাত বাড়িয়ে স্বামীর হাতে রাখলো।
থেঁতলে যাওয়া হাতটাই অনেক গুলো চুমু দিলো।
পাগলদের মতো কপালে অনেক গুলো চুমু দিলো। ক্ষতবিক্ষত জায়গা গুলোতে।
-রাফিয়া, আমার প্রিয়তমা। তুমি ঠিক হয়ে যাবে।
তোমার সাথে ভালো করে কথায় হলো না আমার।
অনেক কথা বাকি ছিলো।
-আমার একটা কথা রাখবেন?
-বলো? সব কথা রাখব জীবন দিয়ে।
-আবার বিয়ে করবেন। সুন্দর সংসার হবে আপনার।
আপনার সুখ আমার সুখ।
আমি আপনাকে সুখী করতে পারিনি আমার ছোট জীবনে।
আমি আপনার যোগ্য নয়।
-তুমি আমার যোগ্য। আর কোন নারী আমার বুকে স্থান পাবেনা। তুমি ছাড়া।
তুমি আমার প্রিয়তমা স্ত্রী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার একটাই স্ত্রী থাকবে।
সেটা তুমি।
তোমার এই কথা রাখার প্রশ্নই আসেনা।
রাফিয়ার স্বামী পুরোপুরি একদিন কবরের পাশে মাটিতে বসে ছিলো।
বার বার কবরের মাটি গুলো স্পর্শ করছিলো।
হাসান কবরের একটু দূরে লুকিয়ে ছিলো। সেও একদিন পুরোপুরি লুকিয়ে রাফিয়ার কবর দেখছিলো।
কবরের কিছু মাটি সে নিজের পাঞ্জাবির পকেটে রেখে দিলো।
হাসান রাফিয়াকে কবর থেকে একদিন পর বাড়িতে এসে নিজের কামরায় ঢুকলো।
অনেক খোঁজাখোজির পর একটা সবুজ রংয়ের ডায়েরি পেলো।
এটাই কি মূল্যবান সেই জিনিস?
হাসান ডায়েরি হাতে ভাবছে, আচ্ছা এখান থেকে লাফ দিলেই কি রাফিয়ার কাছে যাওয়া যাবে?
.
রাজ কে স্লিপিং পিল খাইয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে। চোখ বন্ধ করার আগ পর্যন্ত শ্রেয়সী, শ্রেয়সী বলতে বলতে ঘুমিয়েছে। ঘুমের মধ্যেও তার ঠোঁটে অস্ফুট স্বরে শ্রেয়সী নামটাই শোনা যাচ্ছে।
ডক্টর হাসানকে সাবধানে রাখতে বললো রাজকে।
পায়ে কে যেন হাত বুলাচ্ছে।
হাত বুলাতে বুলাতে পায়ের উপর উঠছে।
কি আশ্চর্য।
আবছা, আবছা মুখশ্রী দেখা যাচ্ছে। হাসির আওয়াজ ভাসছে কামরায়।
জলতরঙ্গের ন্যায় হাসি।
কোমরে হাত রেখে বুকে মাথা রেখে কেউ তাকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে আছে।। গায়ের গন্ধ খুব চেনা চেনা।
মাথায় কেউ পরম আদরে বিলি কাটছে। কপালে গালে কেউ চুমু খেলো। ভারি কিছু একটার অনুভব হচ্ছে তার শরীরে।
রাজ উঠে পড়লো।
লাইট অন করলো না।
শীতলের নাম কয়েকবার নিলো।
রাজ ঘুমুতে গেলেই এরকম হয়।
শীতলের সৃতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে সমস্ত ইন্দ্রয়।
ঘড়িতে রাত নটা বাজছে।
এটা দেখে রাজের বুক যেন শুকিয়ে গেলো।
এতো রাত হলো।
শীতল রাতে বাহিরে আছে। কোন সিচুয়েশনে আছে।
রাতে কতরকম বিপদ হতে পারে।
শীতল বাহিরে অস্বস্তিকর পরিবেশে আর সে কিনা বাড়িতে নরম বেডে ঘুমুচ্ছো।
রাজ এক লাফে পাঞ্জাবি হাতে নিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।। সারা রাত শীতলকে খুজতে লাগলো।
পাগলের মতো বার বার হুংকার বের হচ্ছে তার মুখ থেকে।
সে কি আবার পাগল হয়ে গেলো নাকি!
.
ভোরের দিকে রাজ সোজা মসজিদ চলে গেলো।
ও এক ফোঁটা পানি খাবেনা। মসজিদ থেকে বের হবেনা শীতল কে না পাওয়া গেলো। শীতলকে খুজতে কয়েক যুগ লাগে তবুও সে বের হবেনা।
রাজ সিজদায় গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সিজদা থেকে সে উঠে না সহজে।
আজ তিনদিন হতে চললো।
রাজ নিজের অন্যায় আর গুনাহ গুলোর জন্য বার বার তওবা করছে। শীতলের প্রতি সে অন্যায় করে আল্লাহর কাছে গুনাহ করেছে।
বেশি বেশি ইস্তেগফারের ফজিলতঃ
“মহা নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ-
“যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তিগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দিবেন।
“এবং সব দুশ্চিন্তা আল্লাহ মিটিয়ে দিবেন।
“এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিযিকের ব্যবস্থা করে দিবেন।
–|আবূ দাউদ-১৫২০;ইবনে মাজাহ-৩৮১৯|–
“আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি করে ইস্তেগফারের উপর আমল করার তৌফিক দান করুন,আমিন!!
রাজকে ইমাম সাহেব কি যেন খবর দিলো।
রাজ শোকরানার নামাজ পড়ে সোজা কলেজ গেইটের পাশের গলিতে চলে গেলো।
যেখান রেললাইন রয়েছে।
ট্রেন চলছে দ্রুত গতিতে।
ট্রেন যাওয়ার পরেই সে শীতলকে দেখতে পেলো।
রাজ যেন জীবন ফিরে পেলো।
চোখ বন্ধ করে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানালো।
একটা দীর্ঘ স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।
দৌড়ে শীতলের কাছে গেলো।
শীতল চুপচাপ বসে আছে।
আশেপাশের লোকজন বলল-তিন দিন ধরে এখানে বসে আছে। কিছু জিজ্ঞেস করলে তাকিয়ে থাকে। বাসার ঠিকানা, নাম-ধাম কিছুই বলতে পারেনা।
বোবা হবে হয়ত। তার উপর পাগলও মনে হচ্ছে। ময়মনসিংহে এমন অনেক পাগল থাকে। এটাও নতুন নয়। তাই কারও কিছু যায় আসেনা। সবাই সবার মতো কাজ করছে।
শীতলকে জরিয়ে ধরলো রাজ।
মুখে হাজার বার চুমু দিলো।
শীতলের শাড়ি এলোমেলো হয়ে আছে। কুঁচি গুলো প্রায় খুলে গিয়েছে। লম্বা চুল গুলো ছড়িয়ে ছিটেয়ে আছে চারপাশে।
আশেপাশে বিভিন্ন লোকেরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
কিছু বখেটা ছেলেরা দল বেঁধে পাশেই বসে আছে।
রাজের মাথায় রক্ত চড়ে উঠলো।
শীতল সামনে আছে বলে নিজেকে শান্ত করলো।
নিজের পাঞ্জাবি খুলে শীতলের গায়ে জরিয়ে দিয়ে আষ্টেপৃষ্টে বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখলো সে।
যে মেয়েটা কখনো বেগানা পুরুষদের সামনে যায়নি পর্দা করেও অতি গুরুত্ব কাজ ছাড়া। যার চেহেরা কেউ দেখেনি। ঝিনুকের মুক্তোর ন্যায় যে নিজেকে ঢেকে রেখেছিলো। আজ তাকে সবাই দেখছে।
রাজের বুকে আর্তনাদ শুরু হলো। শীতলের আজকের পরিস্থিতির জন্য সে নিজেই দায়ী। চোখের পানি পড়তে শুরু তার।
রাজের এক হাত নিচে মাটিতে স্পর্শ লাগতেই চটচট কিছু অনুভব করলো।
হাতে কি যেন লেগে আছে৷
চোখ ঘুরিয়ে হাতে টকটকে রক্ত দেখতে পেলো সে।
রক্ত কোথা থেকে এলো।
রাজ নিচে তাকিয়ে চমকে গেলো। নিচে রক্তের স্রোত বইছে। শীতলের শাড়িতে রক্তের মাখামাখি। পা বেয়ে রক্ত পড়ে মাটিতে রক্তের স্রোত বইছে।
রাজের জীবন যেন শরীর থেকে বের হয়ে আসছে! কেউ যেন তার মাথায় হাতুড়ি পেটা করছে জোড়ালো ভাবে।
.
.
❤মহান আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি নামের তিনটি নাম(আরবি, বাংলা)
৫৩. ﺍﻟْﻘَﻮِﻱُّ আল-ক্বউই ক্ষমতাশালী
৫৪. ﺍﻟْﻤَﺘِﻴﻦُ আল মাতীন সুদৃঢ়, সুস্থির
৫৫. ﺍﻟْﻮَﻟِﻲُّ আল-ওয়ালিই বন্ধু, সাহায্যকারী, শুভাকাঙ্ক্ষী❤
.
চলবে…….