শুধু তোমায় ঘিরে পর্ব-০৭

0
3102

?শুধু তোমায় ঘিরে?

#মেঘা আফরোজ…..?
#পর্ব-৭…..?

?

নিজের রুমে গুটিশুটি মেরে চুপটি করে বসে আছি তিশা ও আমার পাশে বসে এটা সেটা বুঝিয়ে চলেছে। ওর কোনো কথাই যেনো আমার কানে যাচ্ছে না শুধু রেস্টুরেন্টের সেই দৃশ্য চোখে ভেসে উঠছে।
আমরা যখন রেস্টুরেন্টে গিয়ে তাসিনকে দেখলাম উনি তখন একটি মেয়ের সাথে পাশাপাশি চেয়ারে বসে ছিলেন,এমনকি তাসিন নিজের হাতের বাহুতে মেয়েটিকে জড়িয়ে রেখেছিলেন,মেয়েটির হাত ধরে কিছু একটা বুঝাতে ব্যস্ত ছিলেন উনি। ওমন দৃশ্য দেখে যতোটা অবাক হয়েছিলাম তার থেকে বেশি অবাক হয়েছি ওই মেয়েকে দেখে সে আর কেউ নয় রিশা ছিলো। যাকে তাসিন বলেছিলো উনার ফ্রেন্ড এর গার্লফ্রেন্ড।
আচ্ছা তাসিন কি সত্যিই এমনটা করতে পারে? উনি তো আমাকে খুব ভালোবাসে উনার আচরনে কখনো মনে হয়নি যে উনি আমাকে ঠকাবেন।
এরকম আরো নানা ধরনের কথা ভেবে চলেছি আমি। তিশা আমার কাধ ঝাকিয়ে বললো
..এই মেঘা আমি কি বলছি শুনতে পাচ্ছিস?
আমি কিছুটা নড়েচড়ে উঠলাম….হ্যা তিশা বল।
..দেখ মেঘা হয়তো আমাদের দেখার কোনো ভুল হয়েছে তাসিন ভাইয়া এমন সেটা আমি মানতে পারছি না।
..আমিও তো মানতে পারছি না তিশা কিন্তু নিজের চোখেই তো দেখলাম।
..তুই নিজেকে স্বাভাবিক রাখ এখনি ভেঙে পড়লে চলবে না। আচ্ছা আঙ্কেল আন্টি কোথায়?
..বাবা মা আমাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে। রাতেই ফিরে আসবে।

. ?

আমার ফোনের রিংটন বেজে উঠলো হাতে নিয়ে তাসিনের নাম্বার দেখে কেটে দিয়ে ফোনটা অফ করে রাখলাম। হ্যা এখনো উনার প্রতি আমার বিশ্বাসটা আছে মন বলছে আমার দেখার পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য কোনো কারন। কিন্তু প্রবলেম একটাই আমার মনের মেঘটা যে সড়াতে পারছি না রাগ নয় অভিমান কাজ করছে তাসিনের উপর। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো আমার চোখ থেকে আজ এক ফোটাও পানি ঝড়ছে না। শুধু বুকের ভিতরে বয়ে চলেছে তাসিনের প্রতি অভিমানের ঝড়।
..মেঘা তাসিন ভাইয়া ফোন দিয়েছিলো তাইনা?
..হুম
..তো কেটে দিলি কেনো আমার মনে হয় ভাইয়ার সাথে তোর কথা বলা উচিৎ আসল ব্যাপারটা কি সেটা জানা দরকার তোর।
..আমার এখন কথা বলতে ভালো লাগছে না তিশা।
..ঠিকআছে আমাকে দে আমি কথা বলে দেখছি।
..না তুই কিছুই বলবি না তোকে যদি তাসিন ফোন দেয় ধরবি না। আমিও কোনো যোগাযোগ করবো না দেখতে চাই উনি সত্যিই আমাকে ভালোবাসে,,,নাকি ওই রিশাকে।

. ?

আজ ৪ দিন হলো তাসিনের সাথে একটি বারো যোগাযোগ করিনি খুব কষ্ট হচ্ছে কথা না বলে থাকতে। তবে এই ৪ দিনে তাসিনও এতোটুকু যোগাযোগের চেষ্টা করে নি আমার সাথে আমার ফোনটা না হয় অফ রেখেছি উনি কি পারতো না তিশাকে ফোন দিতে বা আমাদের বাড়িতে আসতে। কিন্তু উনি কিছুই করেনি।
তাহলে আমার দেখাটা কি সেদিন সত্যি ছিলো!আমার বিশ্বাসটাকে এভাবে ভেঙে দিলো তাসিন!!!
কষ্ট আর অভিমান গুলো যেনো আজ চোখের পানি হয়ে বয়ে চলেছে কিছুতেই চোখের পানি আটকাতে পারছি না। আমি যে তাসিনকে অনেক ভালোবাসি কি করে থাকবো আমি ওকে ছেড়ে। নাহ আমাকে তাসিনের সাথে কথা বলতেই হবে আমার জানতে হবে উনি কেনো করলেন আমার সাথে এমন।

ফোনটা অন করতেই পরাপর তাসিনে কয়েকটা ম্যাসেজ আসলো ওপেন করতেই দেখলাম,,,,১ম ম্যাসেজে লেখা,,,,এই মেঘা পাখি কি হয়েছে তোমার ফোন কেটে দিয়ে অফ করলে কেনো? ২য় ম্যাসেজে লেখা,,,,আমি ভালো নেই গো তোমার ভয়েসটাকে খুব মিস করছি তোমার সাথে খুনশুটি পূর্ণ ঝগড়াগুলোকে অনেক বেশি মনে পড়ছে। ৩য় ম্যাসেজটি দেখে আমি চমকে উঠলাম আজ সকালের ম্যাসেজ এটা ওটাতে লেখা ছিলো,,,,, মেঘা তুমি কিভাবে পারলে আমার এমন অবস্থার কথা শুনে দুরে থাকতে একটি বারো কি মনে হয়নি আমাকে দেখতে আসার কথা? আল্লাহ কেনো বাচিয়ে রাখলো আমাকে।আমি যে তোমার অবহেলা গুলো আর নিতে পারছি না।

.?

আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না তাসিন এমন ম্যাসেজ কেনো করেছে উনার কিছু হয়নি তো? মুহুর্তেই আমার আত্তাটা কেপে উঠলো। তাসিনের নাম্বারে ডায়েল করলাম বারবার নেটওয়ার্ক বিজি দেখাচ্ছে। কিছু না ভেবেই খালামনির নাম্বারে ফোন দিলাম ২ বার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে কিছু বলার আগেই আমি বললাম…..খালামনি তাসিন ভাইয়া কোথায়? কি হয়েছে উনার?
..মেঘা তুই! কেনো তুই জানিস না কিছু?
..নাতো কি হয়েছে বলোনা?
..৩দিন আগে তাসিনের এক্সিডেন্ট হয়েছে অবস্থা ভালো ছিলো না তবে আল্লাহর রহমতে এখন ও ভালো আছে আজি হসপিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যাবো ওকে। তোর মা বাবা ও এসে দেখে গিয়েছে আর তুই একটিবারো আসলি না তাসিন অনেক বার খোজ করেছে তোর।

আমার কানে যেনো আর কোনো কথা ঢুকছে না ফোনটা হাত থেকে ছিটকে পড়লো। চিৎকার করে মাকে ডাকতে লাগলাম। মা দৌড়ে রুমে এসে আমার পাশে বসে বললো
..কি হয়েছে মেঘা ডাকছিস কেনো? এমন অস্থির দেখাচ্ছে কেনো তোকে?
..আমি শান্ত কন্ঠেই বললাম মা তাসিন ভাইয়ার যে এক্সিডেন্ট হয়েছে আমাকে বলো নি কেনো?
..কি করে বলবো তোর দুদিন পর পর কি হয় কে জানে সারাক্ষণ দরজা লাগিয়ে বসে থাকিস। তাসিনের যেদিন এক্সিডেন্ট হলো সেদিনি তোকে বলতে এসেছিলাম তুই কি বলেছিলি,,,,,মা আমার সাথে কোনো বিষয়ে কোনো কথা বলবে না আমাকে একা থাকতে দাও তখন আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে জোর করে বের করে দিয়ে দরজাটা আটকে দিয়েছিলি।

. ?

তাসিনের সামনে বসে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছি উনি ঘুমাচ্ছিলেন। মুখটা শুকিয়ে গেছে কপালে আর পায়ে ব্যান্ডেজ তাসিনের এমন অবস্থা দেখে আমার ভেতরটা কেপে উঠছে বার বার মনে হচ্ছে উনার এমন অবস্থার জন্য আমি দায়ী। আমার সেদিনি উচিৎ ছিলো তাসিনের মুখোমুখি হয়ে সবটা ক্লিয়ার করা।
আজ বুঝতে পারছি তাসিন কেনো আবিরের সাথে কথা বলতে না করেছিলো।
তাসিনের মুখের দিকে চেয়ে আছি চোখ থেকে নিরবে পানি পরছে উনার হাতের উপর পানি পড়তেই হাতটি কিছুটা নড়ে উঠলো। চোখ মেলে তাকালো আমার দিকে। আস্তে করে বলে উঠলো
..কি দেখতে এসেছো আমি মরে গিয়েছি কিনা?

উনি যে অভিমান থেকে কথাটা বলেছে এটা বেশ বুঝতে পারছি। অভিমান হওয়ারি কথা সবটা না জেনে শুধু নিজের দিকটা ভেবে উনার থেকে দুরে ছিলাম এমনকি এই খারাপ মুহুর্তেও উনি আমাকে পাশে পায়নি। আমি ভাঙা কন্ঠে বললাম
..এমন কথা বলবেন না প্লিজ আমি সত্যি আপনার এক্সিডেন্টের কথা জানতাম না।
..ও আচ্ছা তাই জানতে না তুমি?বাহ খুব ভালো কথা বললে!! বলেই উনি মুখ ঘুড়িয়ে নিলেন।
আমার বুকের ভেতরে মোচর দিয়ে উঠলো,,,,তখনি রিশা তাসিনের ফ্রেন্ড রোহান আর তিশা আসলো। তিশা আমার কাছে এসে দাড়াতেই ওকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলাম।
তাসিনের ফ্রেন্ড রোহান তাসিনের পাশে গিয়ে বসে ওর কাধে হাত রেখে বললো
..তাসিন মেঘাকে ভুল বুঝিস না ওর জায়গায় তুই থাকলে হয়তো তুইও এমনটাই করতি।
..মানে?তাসিন প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো রোহানের দিকে।
..তখন রিশা বললো মানেটা আমি বলছি ভাইয়া। সেদিন রেস্টুরেন্টে আপনি যে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন মেঘা ওটা দেখে নিয়েছিলো কিন্তু কি হয়েছিলো কেনো মেঘা এসব না জেনেই ভুল বুঝেছিলো আপনাকে।

তাসিন বললো…তাহলে এখন কেনো এসেছে চলে যেতে বলো ওকে এখান থেকে।
তিশা বললো ভাইয়া দুজনেই যদি এমন করেন কিভাবে সব ঠিক হবে বলুন তো। আজকে সকালে রিশা আপুর সাথে আমার দেখা হয়েছিলো সেদিন আমিও দেখেছিলাম আপনাদেরকে একসাথে। আজ যখন রিশা আপুর সাথে দেখা হলো ওনাকে মেঘার ভুল বোঝার কথাটা বলেছি। পরে রিশা আপুর থেকেই জানতে পারলাম রিশা আপুকে আপনি ছোট বোনের মতো জানেন আর রোহান ভাইয়া কোনো কারনে কথা,বলছিলো না তাই রিশা আপু খুব ভেঙে পড়েছিলো। আপনি হয়তো রিশা আপুকে নিজের বোন মনে করে ওনাকে ওভাবে শান্তনা দিচ্ছিলেন।
আর ওই সময়টার সুযোগ নিয়ে অন্য কেউ মেঘাকে ভুল বুঝালো।
আমি এসব জানার আগেও আপনাকে অবিশ্বাস করিনি এমন কি মেঘারও বিশ্বাস ছিলো আপনার উপর। মেঘাকে কিছুক্ষণ আগে আমি সবটা বলেছি। ভাইয়া,ওকে আপনি ভুল বুঝবেন না ও যে অনেক ভালোবাসে আপনাকে। আর ও সত্যিই জানতো না আপনার এক্সিডেন্টের কথা।

..তিশা কি বললে তুমি কে সুযোগ নিয়েছিলো?
তারপর তিশা আবিরের বলা সবকিছু বললো। তাসিন খুব রেগে গিয়েছিলো এসব শুনে। রোহান বললো
..তাসিন এখন রাগার সময় নয় আমরা বাইরে যাচ্ছি তুই মেঘার সাথে কথা বল।
আমি চুপচাপ মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছি
ওরা বেড়িয়ে যাওয়ার সময় রিশা আমার কাছে এসে বললো
..মেঘা নিজেরটা বুঝে নিতে শেখো সেদিনি যদি সামনে গিয়ে সবটা শুনতে তাহলে আজ তোমাদের এমন ভুল বুঝাবুঝি হতো না। তোমাদের রিলেশন তো বেশি দিনের নয় এখনি যদি এমন হয় তাহলে সামনে এগোবে কি করে হুম। আর শোনো তাসিন ভাইয়ার মতো মানুষ হয় না আমি ওনাকে নিজের ভাইয়ের মতোই জানি বুঝেছো। এখন কথা বলো তোমরা আসছি আমি।

. ?

আমি এখনো মাথা নিচু করে বসে আছি তাসিন শোয়া থেকে উঠতে চেষ্টা করছে পায়ে ব্যাথা পেয়ে আহ শব্দ করে উঠলো। আমি উঠে গিয়ে ওনাকে ধরে বসালাম তারপর সরে আসতে নিলে উনি আমার হাত ধরে পাশে বসালেন। আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন
..এই পাগলি এমন কাজ কেউ করে হ্যা? জানো কতোটা কষ্ট হয়েছিলো আমার। সেদিন আমার সামনে গিয়ে সবটা জানতে চাইতে তা না করে কোনো যোগাযোগ না করেই নিজের ফোনটাই অফ করে রেখে দিয়েছিলে।
সেদিন তোমার বাবা মা ও দেখতে এসেছিলো তুমি আসোনি তখন মনে হয়েছিলো আল্লাহ কেনো বাচিয়ে রাখলো আমাকে।
..চুপ এমন কথা আর বলবেন না আমি আর কখনো ভুল বুঝবো না আপনাকে।
..দেখাই যাবে কি করো,,,,,,তবে একটা কথা আমি সুস্থ হই তারপর আবিরকে দেখে নিবো।

. ?

তাসিনের খুব কাছেই বসে আছি আমার হাত তাসিনের হাতের মুঠোয় হঠাৎই খালামনি রুমে ঢুকলো আমি তাড়াতাড়ি সরে আসতে নিলে খালামনি ধমকের স্বরে বললেন
..একদম আমার ছেলের হাত ছাড়বি না ওখানেই বসে থাক চুপ করে।
খালামনির কথায় আমি আর তাসিন দুজনেই শকড। খালামনি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
..আর যদি আমার ছেলের থেকে দুরে থাকিস তাহলে তোর খবর আছে।
তাসিন বললো….মা তুৃমি কি বলছো!!!
..কি বলেছি হুম শোন তোকেও বলি আমার মেয়েটাকে আগলে রাখবি সবসময়।
আমি আর তাসিন বোকার মতো চেয়ে আছি খালামনি বুঝতে পেরে বললো
..এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই আমি সব জানি রোহান আমাকে একটু আগে সবটা বলেছে।
..মা তুমি আমাদের বিষয়টা মেনে নিয়েছো।
..শুধু আমি না তোর বাবাও মেনে নিয়েছে এখন মেঘার বাবা মাকে বলতে হবে।
আমি কিছুই বলছি না দেখে খালামনি আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে বললেন
..ইসস আমার বাচ্চা মেয়েটা এখন আমার ছেলের বউ হবে ভাবা যায়!!হেসে বললো।
তাসিন বাকা হেসে বললো মা আমার মনে হয় কি জানো তোমার এই বাচ্চা মেয়েটিকে আমার বিয়ে করা ঠিক হবে না।
আমি তাসিনের দিকে তাকালাম খালামনি বললো
..তাসিন এ কি বলছিস তুই!!
..কেনো বলবো না বলোতো এতো বোকা কেউ হয় কি না কি দেখে নিজে তো কষ্ট পেলো আমাকেও কষ্ট দিলো,,,,
..হয়েছে এসব আর বলিস না দেখছিস না ও মন খারাপ করে আছে।
..মা একটা কাজ করো টিভিটা অন করে মটু পাতলু দেখতে দাও ওকে মন এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে।
আমি রাগি চোখে তাসিনের দিকে তাকাতেই তাসিন জোরে হেসে উঠলো।

?

#চলবে. . . ?