শুভ্রতা তোমার জন্য পর্ব-১৩ এবং শেষ পর্ব

0
662

#শুভ্রতা_তোমার_জন্য ( ১৩)
কলমে ✍️ #রেহানা_পুতুল
তোর ভাইয়ের জন্য আমরা জেল খেটেছি। আমাদের আড্ডার আসর শেষ হয়ে গিয়েছে। আমরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ছোট ভাইয়ের বউকে বিয়ে করলো তোর ভাই। শখ কি তার। সেতো আমাদের চেয়েও খারাপ। গ্রেট নাম্বার লুইচ্চা। তোরা দুই ননদ ভাবির থেকে আজ এর বদলা নিবো সুদে আসলে। আমাদের ধরার সুযোগ নেই। দুদিন পর ফ্লাইট। বিদেশ চলে যাচ্ছি। যাওয়ার আগে তোদের থেকে মজা নিয়ে নিই। কি বলিস। আর তোর ভাবিতো এখন কাউকেই চিনেনা।সুবর্ণ সুযোগ।

উপমা নিজের হাত দিয়ে সেই হাত সরিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করছে। পারছেনা। একজন, উপমার মুখ চেপে ধরে আছে। আরেকজন তার সেলোয়ার খোলার চেষ্টা করছে। আরেকজন শুভ্রতাকে শুইয়ে মুখ চেপে ধরে আছে। শুভ্রতা তার হাতে সজোরে কামড় বসিয়ে দিলো। সে কুঁকিয়ে উঠে ফিসফিসিয়ে অন্যদের বলল,

” এই এদিকে আয়। আগে এরে বানাই। এই শালী করলডা কি আমারে।”

বাকি দুজন উপমাকে ছেড়ে শুভ্রতাকে চেপে ধরলো। সেই সুযোগে উপমা উঠে দৌড়ে লুকিয়ে গেলো একটি প্রকান্ড আমগাছের আড়ালে। তারা শুভ্রতাকে নিয়ে মশগুল। শুভ্রতার জামার বুকের বোতাম সব খুলে ফেললো একে একে। তিনজনেই শুভ্রতার শরীর থেকে হাতের সুখ করে নেওয়ায় মত্ত।একজন চুড়ান্ত কিছু করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুরোদমে। তাদের চোখমুখে কামুকতার নগ্ন উল্লাস। লোলুপতার দৃষ্টি ঝরে পড়ছে শুভ্রতার সারাদেহে। দূর্বল নারীশক্তি পরাভূত হচ্ছে তিন পুরুষের পেশীশক্তির কাছে।

অমনি পিছন থেকে একজনের মাথায় সজোরে আঘাত পড়লো গাছের শক্ত মোটা কাঁচা ডালের। নিমিষেই সে মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে দপ করে বসে পড়লো। বাকি দুজন হকচকিয়ে গেলো উপমার দুঃসাহস দেখে। তারা কি বুঝে যেনো পা চালিয়ে পালিয়ে গেলো। শুভ্রতা ও উপমা সাহস করে আঘাত করা ছেলেটাকে বেঁধে ফেললো গাছের সাথে পিছমোড়া করে।

ঠিক তার আগ মুহূর্তে প্রাকৃতিক কাজ সারতে এক কিশোর ছেলে সেই বাগানের ভিতরে যায়। কারো ধস্তাধস্তির আওয়াজ কানে যেতেই ভয়ে চুপসে যায় সে। আড়ি পেতে বুঝতে পারে এখানে কারা এবং কি হচ্ছে। সে লুকিয়ে বের হয়ে পড়ে। প্রায় দৌড়ে কাতচিৎ হয়ে আয়মানদের ঘরের সামনে গিয়ে পড়ে। আয়মানকে তাদের পাশের বাড়ির সেই ছেলে হাঁফাতে হাঁফাতে পুরো ঘটনা খুলে বললো।

আয়মান বিষ্ফোরিত চোখে,

” কিহ বলিস তুই! ওহ নো! ”

পাশের ঘরের চাচাতো ভাইয়ের সাইকেল নিয়ে সেই ছেলেসহ সেখানে পৌঁছে গেলো দশ মিনিটের ব্যবধানেই। সাইকেল রাস্তার পাশে রেখে বাগানের ভিতরে ঢুকলো দুজন। মোবাইলের আলো ফেলে দেখতে পেলো শুভ্রতা ও উপমা থরথর করে কাঁপছে প্রচন্ড ঝড়ে ভেজা পাখির ছানার মতো। এই শীতেও তারা দুজন ঘেমে একাকার। আয়মান বুকের দুপাশে বোন ও বউকে জড়িয়ে নিলো।

আয়মান বাঁধা ছেলেটির মুখ থেকে একটানে রুমালটা টেনে সরিয়ে ফেলল। সে বিস্মিত হলো অতি চেনা মুখটি দেখেই।

“রাকিব তুই? এত জঘন্য কবে থেকে হলি? চল তোর বাবা মায়ের কাছে৷ ওরাই তোর বিচার করবে এই নোংরামির। ”

“ভাইয়া তুমি একে চেনো?”

” ভালো করেই চিনি। কিন্তু ওকে ভালো জানতাম আমি। প্রায়ই তাকে হেল্প করতাম টাকা দিয়ে।”

“দেখলেতো এবার উপকারের নামে থাপ্পড়?”

হুম দেখছি বলেই আয়মান ক্রোধান্বিত হয়ে রাকিবের শার্টের কলার টেনে ধরে দাঁড় করালো।

রাকিব আয়মানের পা ধরে ভেউভেউ করে কেঁদে ফেলল মাথা চেপে ধরে। বলল,

” আয়মান ভাই। আল্লার কসম আমি যদি জানতাম এনারা আপনার বোন ও স্ত্রী। তাহলে ভুলেও লিপ্ত হতামনা এই হীনকর্মে। আপনিতো জানেন। আমি গরীব মানুষ। এখন বিদেশ যাচ্ছি ধারদেনা করে। তারা দুজন আমাকে দশহাজার টাকা দিয়ে বলল,

আমরা জরুরী এককাজে যাবো। তুই শুধু পাহারা দিবি চারপাশ আর সহযোগীতা করবি আমাদের।

আমি বারবার জানতে চেয়েছি। আপনার নাম বলেনাই। শুধু বলছে প্রতিশোধ নিবো একজনের উপর। নয়তো এমন কাজ আমরাও এর আগে কখনো করিনি। এজন্যইতো আমাকে আঘাত করার পর তারা পালিয়ে গেলো।”

” তারা কিভাবে জানলো আমার স্ত্রী ও বোন এখন বাজারে যাচ্ছে? ”

” সেটাতো আমি জানিনা ভাই। তারা আমাকে নিয়ে পথের পাশে লুকিয়েছিলো ঘাপটি মেরে।”

আয়মান কষে লাথি মারলো রাকিবের কোমর বরাবর। বলল,

আমার ইচ্ছে করছে তোদের তিনজনের হাত কেটে কিমা করে ফেলি। যেই হাত দিয়ে আমার স্ত্রী ও বোনের গায়ে হাত দিয়েছিস। জা’নো’ য়া’ র কোথাকার।
রাকিব ওমাগো! বলে চাপা আর্তনাদ করে উঠলো।
আয়মান বোনের দিকে চেয়ে রুক্ষস্বরে,

” তোর মোবাইল কই?”

” ভাইয়া ফোন আমার হাতেই ছিলো। কিন্তু মেসেজ দিতে গিয়েও থেমে গিয়েছি ভয়ে। কারণ আলো জ্বলে উঠলেইতো তারা আমার অবস্থান নির্ণয় করে নিতে পারতো। ভাবিকে সেইফ করার জন্য আমি গাছের একটা ডাল কুড়িয়ে নিয়েছি।”

” তোরা বাড়িতে যা৷ আমি এই ইতরকে নিয়ে তাদের বাড়ি যাচ্ছি। ফিরতে লেট হবে আমার। বাকিদের বাড়িতেও যাবো। থানাপুলিশ নয় এবার। পরিবার দিয়েই তাদের পানিশমেন্টের উপযুক্ত ব্যবস্থা করে আসবো। যেনো ভুলেও কোনো মেয়ের দিকে তাদের চোখ না যায়।”

শুভ্রতা ও উপমা আর বাজারে গেলনা। বাড়ি ফিরে গেলো।

সেই ছেলেদের শায়েস্তা করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে আয়মানের গভীর রাত হয়ে গেলো। বাইরে ছিলো হাড় জমে আসা কনকনে শীত ও হিমেল বাতাস। বহুদূর থেকে জনমানবহীন মেঠোপথ মাড়িয়ে আসতে হলো আয়মানের। গায়ে ছিলনা ভারী শীতের পোশাক। আয়মান রুমে ঢুকলো। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এলো। দেখলো শুভ্রতা গাঢ় নিদ্রায় ডুবে আছে ডাবল পার্ট এর কম্বল মুড়ি দিয়ে। আয়মান শীতে উহু আহ করতে করতে শুভ্রতার পাশ ঘেঁষে শুয়ে পড়লো। সযতনে কম্বল টেনে নিতেও শুভ্রতা জেগে গেলো। সে আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসলো। ভূত দেখার মতো চমকে গেলো। আয়মানের দিকে তেজীচোখে চেয়ে আছে অচেনা দৃষ্টিতে।

” অমন করে চেয়ে দেখছো কি বধূ? বাইরের সব শীত আজ আমার শরীরে। তুমি আমার শুভ্রতা, দাওনা কিছু উষ্ণতা।”

রোমাঞ্চকর চাহনিতে দুষ্টমিষ্ট কন্ঠে বলল আয়মান। শুভ্রতা দৃষ্টিতে কাঠিন্যতা এনে ফের আয়মানের দিকে চাইলো। বিছানা থেকে নেমে যেতেই আয়মান তাকে ঝাপটে ধরে বিছানায় ফেলে দিলো। শুভ্রতার গোলাপি তুলতুলে অধরে নিজের শুষ্ক অধরজোড়া ডুবিয়ে দিলো। শুভ্রতা পা দিয়ে আয়মানকে ধাক্কাতে লাগলো। আয়মান ঠোঁট সরিয়ে নিলো। বলল, এখন সত্যিই আমার শরীরটা উষ্ণতায় ভরে গিয়েছে। শীত আর পুরো রাত কাবু করতে পারবেনা। নয়তো ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলাম।

” আপনি না আমার ভাসুর? ঘৃণা করি আপনাকে?”

আয়মান বিছানা থেকে নেমে গেলো। শুভ্রতার দিকে করুণ চোখে চাইলো। ক্ষুব্ধ অভিমানী গলায় বলল,

” আমাকে চিনতে পারনা তুমি নাহ? ঠিকাছে। খুউব সুখ পাচ্ছো এভাবে আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নাহ? এই মুহুর্তে থেকে তোমার অচেনাই হয়ে গেলাম। ভালোথেকো তুমি।”

আয়মান বারান্দায় চলে গেলো। আবার একের পর এক সিগারেট ফুঁকতে শুরু করলো। বাইরে থেকে হুহু করে ঠান্ডা হাওয়া আয়মানের গায়ে এসে লাগছে। আর টিকতে না পেরে রুমের ভিতরে চলে এলো। সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো। গায়ে দেয়ার মতো কিছুই নেই। খুকখুক করে দু একটা কাশি শুরু হলো। কাশির মাত্রা দিগুণ হলো।

কোনরকমে মোবাইল নিয়ে উপমাকে ফোন দিলো তাদের রুমে আসার জন্য।
উপমা ছুটে এলো।

” আরেহ! ভাইয়া তোমার এমন কাশি হচ্ছে কেনো? এর আগেও আমি দেখেছি এমন কাশি হতে। পাত্তা দিইনি। ”

” ড্র‍য়ার থেকে সিরাপটা বের কর। আর একটা কম্বল এনে দে।”

উপমা ভাইকে কম্বল এনে দিলো এবং যা যা করণীয় সবই করলো। কিন্তু কাশি কমছেনা। মুখ দিয়ে রক্তবমি হচ্ছে।

” ভাইয়া প্লিজ বলো তোমার এমন হলো কি করে?”

আয়মান মুখ দিয়ে কথা বলতে পারছেনা। নাক চোখ মরিচলাল হয়ে আছে। হাত তুলে ইশারা দিয়ে ঘুমন্ত শুভ্রতাকে দেখালো। উপমা ঘৃণা ও উপেক্ষা নিয়ে ঘুমন্ত শুভ্রতার দিকে চাইলো। ছুটে গিয়ে মা বাবাকে ডেকে তুললো। তারা হন্তদন্ত পায়ে এগিয়ে এলেন। আয়মানের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। এভাবে প্রায় ভোর হয়ে এলো। শুভ্রতা শিয়রের নিকট গুঞ্জন শুনে উঠে বসলো। সবাই বিরক্তি নিয়ে শুভ্রতার দিকে চাইলো।

লতিফ খান, তার স্ত্রী ও উপমা আয়মানকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো। ডাক্তার পরিক্ষা নিরিক্ষা করে মেডিসিন দিলো। আদেশ করে শক্ত গলায় বলল,

এই ড্রাগসগুলো পুরোপুরি খাবেন গ্যাপ না দিয়ে। এবং স্মোক করা টোটালি অফ করতে হবে।পাশাপাশি কোনো এলকোহল সেবন করা যাবেনা। নয়তো বড় ধরনের কিছু হবার আশংকা রয়েছে।

অভিজ্ঞ ডাক্তারের মুখে এই বাক্যটি শুনেই আয়মানের মা,বাবা,বোনের মন বেজায় খারাপ হয়ে গেলো এবং শুভ্রতার উপরে বিপুল ক্ষোভ জমলো তাদের।

তারা আয়মানকে নিয়ে বাড়ি চলে গেলো। আয়মান নিজের রুমে গেলনা। বোনের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। নাস্তা খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিলো। রাতে ঘুম হয়নি তাই এখন সহজেই দুচোখে ঘুম নেমে এলো তার। শুভ্রতা নাস্তা খেয়ে নিজের রুমে গেলো। লতিফ খান পুত্রবধূর সামনে গেলেন।

রাশভারি গলায় বললেন,

” দেখো বৌমা। তুমি আমাদের ঘরে এসেছে আজ তিনবছর শেষ হয়ে চার বছরের দিকে পা দিচ্ছে। সংখ্যাটা একেবারেই ছোট নয়। তুমি এখানে নতুন নয়। সব জানো। সব বুঝো। স্বামীকে ভালো রাখা স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য। কথাটা মনে রেখো। আমার ছেলের কিছু হয়ে গেলে তুমি ক্ষমা পাবেনা মনে রেখো।”

শুভ্রতা হা হয়ে চেয়ে রইলো শশুরের দিকে। কিছু বলার আগেই ভারি ভারি পা ফেলে রুম থেকে প্রস্থান নিলো লতিফ খান। তার পিছন দিয়ে রুমে আসলো আমিনা বেগম। ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন,

” বৌমা কান খুলে শুনে রাখো। এক ছেলে হারিয়েছি। এই ছেলে হারালে তোমার রক্ষা নেই। তুমি আমাদের সবাইকে চেনো। স্বামীকে চেননা নাহ?নাকি যেহেতু আগে থেকেই আয়মানকে পছন্দ করোনা,এখন তার বদলা নিচ্ছ না চেনার ভান করে। ফাজলামোর সীমা আছে একটা। কবরে গেলে কি জবাব দিবা? স্বামী সন্তুষ্ট তোমার উপরে? স্বামীকে ভালোবাসা দিয়ে আনন্দ রাখা তোমার উচিত নহে? ”

শুভ্রতা এখনো কিছু বলতে পারলোনা। মেঘমুখে অসহায় ভঙ্গিতে চেয়ে রইলো অপলক। উপমা রুমে ঢুকলো। আঙ্গুল তাক করে ধরলো শুভ্রতার দিকে। বিষকন্ঠ ঝাড়লো ভেজা গলায়।

” অনেক জ্বালিয়েছো। আমার এক ভাই বেঁচে নেই। এই ভাই মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছে। সবই তোমার জন্য। তুমি একটু সজাগ হলেই চিনতে পারো তাকে। এসব তোমার ভান। আমি বুঝিনা? তোমার ভালোবাসা না পেয়ে তোমার ইগনোর সহ্য করতে না পেরে তোমাকে ভোলার জন্য সিগারেটের ধোঁয়া উড়ানোর মাঝে আশ্রয় নিয়েছে আমার ভাইটা। ভালোবাসা অপরাধ? পাপ? ভুল? অন্যায়? আমার ভাইর কিছু হলে সবার আগে আমিই তোমাকে মেরে ফেলব গলা টিপে।”

তারা মা মেয়ে চলে গেলো রাগে গজগজ করতে করতে। উপমা হতবিহ্বল হয়ে গেলো এই প্রথম সবার রুক্ষ আচরণ দেখে তার সাথে। তার দুচোখ ভিজে টইটম্বুর হয়ে গেলো। নিরবে কাঁদলো বুক ভাসিয়ে। বেশ কিছুসময় পরে উপমার রুমে গেলো। আয়মানের শুকনো মুখাবয়বের দিকে চেয়ে রইলো আকুল হয়ে। শুভ্রতার দুচোখ ভর্তি রাজ্যের মায়া আয়মানের জন্য। ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো। আয়মানের পায়ের কাছে বসলো। বিড়বিড় করে বলল,

” ক্ষমা করে দিবেন আমার কোনো ভুল হয়ে থাকলে। আপনাকে কতটা ভালোবাসি তা কেবল এই অন্তর জানে।”

আয়মানের কানে শুভ্রতার কিন্নর কন্ঠ যেতেই চোখের পাতা উল্টিয়ে চাইলো সে।
” শুভ্রতা! আমি তোমার আয়মান। চিনতে পারলে বাবু?”

” হুম। আপনি আয়মান। আমি আপনার অন্ধকার গুহার প্রজ্বলিত আলোকশিখা।”

” তুমি আমার পায়ে কেনো?তোমার স্থান তো আমার বুকে। আমার মন মন্দিরের দেবী তুমি।”
বলে আয়মান শুভ্রতা বুকে জড়িয়ে নিলো।

” আপনি এখন সুস্থবোধ করছেন?”

” হুম। তুমি আছো বলে।”

কুয়াশাজড়ানো অলস রাত। আয়মান শুভ্রতার পাশেই ঘুমালো বুকের গহীনে অনন্ত সুখ নিয়ে। শুভ্রতার চিবুকে চিবুক ঠেকিয়ে ধরলো। নাকে নাক ঢলে গুনগুন করে গাইলো,
কবে তুমি নাম ধরে ডাকবে..
কবে তুমি হাতে হাত রাখবে..”

শুভ্রতা নিস্তরঙ্গ নদীর ঢেউয়ের মতই মৌন রইলো। আয়মানের হাতে হাত রাখলো। বুকে মাথা রাখলো। অফুরন্ত ভালোলাগায়, মমতায়,শিহরণে ভরে গেলো দুটি প্রেমিক হৃদয়।

শুভ্রতা খেয়াল করলো, পরেরদিন তার সাথে কেউই কথা বলছেনা আয়মান ছাড়া। সবাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সবার বলা কথার তীক্ষ্ণ আঘাতগুলো শুভ্রতার হৃদয়টাকে এফোঁড়ওফোঁড় করে দিচ্ছে শাণিত ছুরির ফলার ন্যায়। শুভ্রতার মাথা টনটন করে ব্যথা করছে। ব্যথার জন্য দুপুরে খেতেও পারেনি। বারবার মাথার চুলগুলো খামচি দিয়ে টেনে ধরছে সে। আয়মান দিশেহারা হয়ে পড়লো শুভ্রতার এ অবস্থা দেখে। তার মা বাবা ও উপমা অস্থির হয়ে গেলো। শুভ্রতার পরিবারকে খবর দেয়া হলো। বিকেলের দিকে হাসপাতালে নেয়া হলো তাকে। সিটিস্ক্যান করানো হলো শুভ্রতার। তারপরেই হড়হড় করে বমিও করে ফেলল শুভ্রতা। তার মাথার সার্জারী করতে হবে। অপারেশন রুমে নিয়ে গেলো তাকে।

তার আগে শুভ্রতা তার পরিবারের ও আয়মানের পরিবারের সবাইকে বলল,

” মা,বাবা,উপমা আমি আপনাদের ও আমার পরিবারের সবাইকে অনেক ভালোবাসি। আয়মানকেও জীবন দিয়ে ভালোবাসি। আমাকে মাফ করে দিবেন। আমার খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।”

” তোমার কিচ্ছু হয়নি পাখি। আমাকে বাঁচানোর জন্য হলেও তোমার বাঁচতে হবে।”
আয়মান বলেই শুভ্রতার কপালে ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দিলো। শুভ্রতা ফ্যাসফ্যাসে স্বরে আয়মানের হাত ধরে বললো,

” আপনার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা হয়তো আমার নেই। আপনাকে অনেক ব্যথা দিয়েছি। মাফ করে দিবেন। পরপারেও যেনো সঙ্গী হিসেবে আমি আপনাকে পাই। স্রস্টার কাছে এটাই প্রার্থনা করবেন। ”

কিছুসময় পর সার্জন বেরিয়ে এলো।নিচু মাথায় ব্যথিত কন্ঠে জানালো। খুব সরি। সি ইজ নো মোর। আমরা অপারেশন শুরুই করতে পারিনি। উনার ব্রেনের বেশকিছু রগ শুকিয়ে গিয়েছে। ডাক্তার আর কিছুই বলতে পারলোনা।

আয়মান গগগনবিদারী চিৎকার করে উঠলো। মেঝেতে ছোট বাচ্চার মতো গড়াগড়ি করতে লাগলো পাগলের মতো। আর্তনাদ করতে করতে বলল,

” শুভ্রতা খুউব শীঘ্রই আমাদের দেখা হবে। খুউব শীঘ্রই। তুমি মাটির নিচে। আমি মাটির উপরে। এ অসম্ভব শুভ্রতা। এ অসম্ভব! আমি আসছি পাখি।”

সবার বিলাপের ভিতর দিয়েও উপমার মনে হলো কোনো মনিষীর সেই অমর বানীটি।
” জীবন দেয় যতটুকু কেড়ে নেয় তারচেয়েও বেশিকিছু।”

👉সমাপ্তি ( দয়া করে রাগ করবেন না।আমি এই প্রথম কোনো গল্পের স্যাড এন্ডিং দিলাম।)