শহর জুড়ে আলোর মেলা পর্ব-০১

0
492

#শহর_জুড়ে_আলোর_মেলা
কলমে_ লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১

তিন মাসের অসুস্থ বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে ভোররাতে খালি পায়ে স্বামীর ঘর ছেড়েছি সেখানে ফিরবো বলে না। আমাকে মে*রে ফেলো তবুও ওখানে ফিরতে বলোনা। ওখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে বাবা। ঘুমাতে পারিনা। কি অসহনীয় যন্ত্রণা যদি তোমরা একটু বুঝতে। লোকটা ঘরের স্ত্রী সন্তানকে ভুলে অন্য মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে। মেয়েটা অসুস্থ বলছিলাম ডাক্তার দেখাতে হবে। বিনিময়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গা*লিগা*লাজ করেছে,বেদম পি*টি*য়েছে। আমি কিভাবে ওর সঙ্গে সংসার করবো বলতে পারো?

কথাগুলো বলতে বলতে নীরা শব্দ করে কেঁদে ফেললো। গতকাল সন্ধ্যায় শশুর বাড়ি থেকে ফিরে আসার পর থেকে বাবা মায়ের মুখটা কালো হয়ে আছে। অভাবি সংসার ঋণের শেষ নেই। বাচ্চা সিজারের সময় হাবিব একটা টাকাও দিয়ে পারেনি সবটা বাবার দেওয়া। নীরা ফুঁপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। ওর কান্না দেখে কারো মায়া হলো না। বরং লতিফ সাহেব বিরক্ত হলেন। রাগে শরীর জ্বলছে। নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না। চোখ বন্ধ করে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্ত্রীর বীণার গালে থা*প্প*ড় বসিয়ে দিয়ে বললেন,

> মেয়ের কথা শুনেছিস? আমার বাড়িতে কারো জায়গা হবে না। নিজের পছন্দে বিয়ে করে আমার নাক কান কেঁটে এখন আমার বাড়িতে ফিরে এসেছে। তোর প্রলোভনে আমি ওকে মেনে নিয়েছিলাম কিন্তু এখন আর না। এক একটা শয়*তা*ন জন্ম নিয়েছে আমার ঘরে।

লতিফ সাহেবের এই এক দোষ ছেলেমেয়েদের অন্যায় আচরণ মেনে নিতে না পেরে স্ত্রীর উপরে হাত তুলেন। দ্বিতীয়বার হাত উঠাতে যেতেই ছোট মেয়ে আলো হুঙ্কার ছাড়লো,

> তুমি অকারণে মায়ের গায়ে হাত তুলছো কেনো? বুবু ভুল করেছে তাইবলে তুমি মাকে মারবে? দুলাভাই খারাপ মানুষ। বুবু চলে এসেছে বেশ করেছে। ওরকম খারাপ মানুষের সঙ্গে কেনো থাকবে ?
আলোর শরীর কাঁপছে। বাবার উপরে কথা বলার সাহস ওর কোনো কালেই ছিল না কিন্তু আজ মায়ের মুখটা দেখে চুপ থাকতে পারলো না। বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো। লতিফ সাহেব জ্বলে উঠলেন। ছোট মেয়েটা আজকাল মুখে মুখে তর্ক করছে। উনি এগিয়ে আসলেন। দিব্যজ্ঞান শূন্য হয়ে মেয়ের গালে থা*প্প*ড় বসিয়ে দিয়ে টানপায়ে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন। আলো ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। কোলে থাকা নীরুর বাচ্চা মেয়েটাও ওর সঙ্গে গলা মিলিয়ে অদ্ভুত সুর তুললো। তিনটা মানুষ ঠাই দাঁড়িয়ে আছে কারো মুখে কথা নেই। বীণা এগিয়ে নাতনিকে কোলে নিয়ে ভেজা কণ্ঠে বললেন,

> মানুষটা রেগে আছে তোমার তর্ক করা উচিত হননি।বুবুকে নিয়ে রুমে যাও।

আলো প্রথমবার মায়ের উপরে রাগ দেখালো,
> বাবার ভুলটা তোমার চোখে কখনও পড়েনি আর পড়বেও না। সব দোষ তোমার। তুমি মানা করতে পারোনা বাড়িতে অশান্তি না করতে? সব সময় ঝ*গ*ড়া ঝামেলা মা*রা*মারি আমার ভালো লাগেনা।

আলো কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো। বীণা বেগমের বুকটা ভার হয়ে আছে। উনি কাকে দোষারোপ করবেন? দোষ না করেও আজ উনি অপরাধী। স্বামী সন্তান সকলের চোখে দোষী। বড় মেয়েটা মাধ্যমিক পরীক্ষার পর হাবিবের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিয়ে না দিলে আ*ত্মহ*ত্যা করবে বলে বারবার হুমকি ধামকী দিয়ে আসছিলো। অনেক বোঝানো হয়েছিল কিন্তু কথা শোনেনি। পরে দুই পরিবার বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিয়ে হয়। প্রথম ছয় মাস ভালো চলছিলো। বছর ঘুরতে না ঘুরতে যখন বাচ্চাটা জন্ম নিলো তখন থেকে হাবিবের আচরণ বদলে গেলো। মেয়ের ভবিষ্যতের চিন্তা করে মাথা খারাপ হচ্ছে। অভাবের সংসার একটা মেয়ে বিবাহ উপযুক্ত তার মধ্যে আরেকজন এসে জুটেছে কি করবেন দিশেহারা অবস্থা। হঠাৎ ঘর থেকে আলোর চিৎকার শুনে উনার ধ্যান ভাঙলো।

> মা,বুবু কেমন করছে। তাড়াতাড়ি আসো।

বীণা বেগম দৌড়ে গেলেন মেয়ের ঘরের দিকে। ওঘর থেকে লতিফ সাহেব বের হলেন। নীরা বিছানায় ছটফট করছে। মুখটা নীল হয়ে আছে। খিচুনি দিচ্ছে। লতিফ সাহেব উত্তেজিত হয়ে বললেন,
> আলো ভাইকে ফোন করে বল তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে বাড়িতে ফিরতে। এখুনি হাসপাতালে নিতে হবে।
মূহুর্ত্তের মধ্যে আলো সব রাগ অভিমান ভুলে গেলো। কিছুক্ষণ আগের লতিফ সাহেবের সঙ্গে এই লতিফ সাহেবের কোনো মিল নেই। চোখে সন্তান হারানোর হাহাকার বিরাজ করছে। আলো তাড়াতাড়ি ফোন নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো। ফিরলো কিছুক্ষণ পর। ফারজু পাড়ার দোকানে ছিল ফোন পেয়ে সিএনজি নিয়ে ফিরেছে। কথা না বাড়িয়ে বোনকে তুলে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। আলো বোনের সঙ্গে গাড়িতে গিয়ে বসলো। লতিফ সাহেব স্ত্রীকে যেতে নিষেধ করলেন। বাচ্চাটাকে বাইরে নেওয়া ঠিক হবে না। ওকে দেখাশোনার জন্য রেখে গেলেন। হাসপাতালে পৌঁছাতে আধাঘন্টা পার হলো। গভীর রাত সরকারি হাসপাতালে নিলে ভালো চিকিৎসা হবে না বিধায় ফায়জু বোনকে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করলো। শহরের নামকরা প্রাইভেট ক্লিনিক।খরচ বেশি কিন্তু এই ছেলে কোনদিন বাবার পকেটের চিন্তা করেছে কিনা সন্দেহ আছে। পড়াশোনা শেষ করেছে অথচ চাকরির খোঁজ নেই। বিসিএস দিবে সেই আশাতে টিউশনি পযর্ন্ত করেনা। উচ্চাভিলাষী মনোভাবের জন্য লতিফ সাহেবকে পদে পদে যন্ত্রণা পেতে হচ্ছে। আলো উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে ওর খরচ নিয়ে ভাবতে হয়না। বীণার বাবার বাড়ির সম্পত্তির বিনিময়ে ওর ভাই আলোর পড়াশোনার খরচ দিয়ে সাহায্য করে। যাইহোক ক্লিনিকে দুজন ডাক্তার আছে তাই চিন্তা করতে হলোনা। আলো বোনের হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে। বোনের সঙ্গে ওর হাজারো স্মৃতি আছে। তিন বছরের ছোট বড় হওয়ার দরুন একদম বন্ধুর মতো ভালো সম্পর্ক ওদের। আলো বারবার বলেছিল এই বিয়ে না করতে কিন্তু নীরা শোনেনি। আলো বোনের মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। তখনই মধ্য বয়সী একজন ডাক্তার কেবিনে প্রবেশ করলেন।লোকটা ওর মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাঁকিয়ে নীরার দিকে মনোযোগ দিলেন। চেক করে বললেন,
> কিছু টেস্ট করা জরুরী, অবস্থা ভালো না। র*ক্তশূন্যতা অপুষ্টি জনিত সমস্যা আগে থেকে ছিল এখন অতিরিক্ত টেনশনে হার্ট এট্যাক করেছে। তাড়াতাড়ি চিকিৎসার প্রয়োজন।

লতিফ সাহেব মাথা নিচূ করে আছেন। আফসোস হচ্ছে তখন ওরকম আচরণ না করলেও পারতেন। মেয়েটা কষ্টে ছিল উনি না বুঝে শুধু নিজের চিন্তা করেছেন । সারারাত যমে মানুষে টানাটানির পর ভোররাতে নীরা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলো। আলোর চিৎকারে ক্লিনিকের পরিবেশ থমথমে হয়ে আছে। ছোট মেয়েটা মা হারা হলো। লতিফ সাহেব মেয়ের লা*শের পাশে চুপচাপ বসে আছেন। বিধ্বস্ত অবস্থা। ফায়জুর পর যখন নীরু জন্ম হলো মনে হয়েছিল আল্লাহ জান্নাতের সবটুকু সুখ উনার পরিবারের উপরে ঢেলে দিয়েছেন। মেয়ের মুখ দেখে মন শান্ত হয়ে গিয়েছিল। মৃত মা ফিরে এসেছে বলে কতবার যে মেয়েটার মুখে চুমু খেয়ে ছিলেন ঠিক নেই। দু’হাতের উপরে সংসার। নিজে না খেয়ে ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন। ইচ্ছে ছিল নীরাকে পড়াশোনা শেখাবেন মেয়েটা তার মধ্যে ওরকম একটা ছেলেকে পছন্দ করে বসে থাকলো। মেয়ের শশুর বাড়িতে দেড় লক্ষ টাকার ফার্নিচার পাঠিয়েছেন সঙ্গে এই সেই খরচ তো আছেই। শুধুমাত্র মেয়ে সুখে থাকবে বলে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করেছেন। আজ সবটা শেষ করে মেয়েটা চোখ বন্ধ করে পড়ে আছে। লতিফ হাসেব ডুকরে কেঁদে উঠলেন,
> মা আমার, তুমিতো আমাকে অপরাধী বানিয়ে চিরতরে চলে গেলে।বাবার দুঃখটা বুঝলে না। আমি কি তোমাদের খারাপ চেয়েছি কখনও? তোমার বিনিময়ে আল্লাহ আমাকে কেনো নিলেন না?

ক্লিনিকের মালিক ইকবাল মাহমুদ দরজা থেকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। হঠাৎ পাশ থেকে ন্যার্সের ডাকে উনার ধ্যান ভাঙলো,

> স্যার উনাদের ছাব্বিশ হাজার টাকা বিল এসেছে । লা*শ এভাবে রাখার নিয়ম নেই। টাকা দিয়ে লা*শ নিয়ে যেতে বলবো? মনে হচ্ছে গরীব মানুষ।যদি টাকা না দিতে পারে?

ইকবাল মাহমুদ নড়েচড়ে বসলেন। কিছু একটা ভেবে বললেন,
> ওদের থেকে টাকা নিতে হবে না। বাচ্চা মেয়েটা মা*রা গেলো অথচ কিছু করতে পারলাম না।তুমি লতিফ সাহেবকে বলো আমার সঙ্গে দেখা করতে।।

নার্স চুপচাপ প্রস্থান করলো। ইকবাল মাহমুদ ভালো মানুষ। এটা উনার জন্য নতুন কিছু না। কথাবার্তা শেষ করে লা*শ নিয়ে বাড়িতে পৌছাতে দশটা বেজে গেলো।
**
চারদিকে নানা মানুষের নানারকম কথাবার্তা ভেসে আসছে। নীরার লা*শ দাফন শেষ হয়েছে। আলো চুপচাপ বারান্দায় বসে আছে। বীণা নাতনিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন।হাবিবের পরিবার এসেছে নীরাকে শেষবারের জন্য দেখতে। এই মানুষগুলোর অত্যাচারে মেয়েটা দুদিন আগে ঘর ছেড়েছিলো। হাবিব বেশ কান্নাকাটি করছে। যাকে নিয়ে সমস্যা ছিল সে দুনিয়ায় নেই তাই অহেতুক ঝামেলা করতে কেউ চাইছে না। লতিফ সাহেব বসে ছিলেন হঠাৎ হাবিবের মা উনার পাশে গিয়ে বসলেন। নীরার নামে বেশ কিছু প্রশংসা ছুড়ে দিয়ে মিনমিন করে বললেন,
> বেয়াই সাহেব যা হওয়ার ছিল হয়েছে। ছোট মেয়েটা মা হারিয়েছে। পুরুষ মানুষ সারা জীবন একা থাকতে পারবে না। হাবিব বাইরের ঘর থেকে বউ আনলে মেয়েটা সৎ মায়ের অত্যাচার সহ্য করতে পারবে না। আমার কি মনে হয় জানেন? আমাদের আলো মাকে হাবিবের সঙ্গে বিয়ে দিলে ভালো হবে। মেয়েটা ভালো করে মানুষ হতে পারবে। জিনিসপত্র,টাকা পয়সা কিছু লাগবে না। যা দিয়েছেন সেসব আলো মায়ের কাছে থাকবে। মেয়ে উপযুক্ত হয়েছে। প্রস্তাবটা ভেবে দেখবেন।

লতিফ সাহেব বিস্ময়কর দৃষ্টিতে ভদ্রমহিলার দিকে চেয়ে থাকলো। মেয়ের দাফন হয়েছে ঘন্টা হয়নি তার মধ্যে এহেন কথা ওই মহিলা কিভাবে বলতে পারে? তাছাড়া হাবিবের কৃতকর্ম জানতে এখনো বাকী নেই। উনি গলা উচু করে আলোকে ডেকে বললেন,
> মাজেদা আপা হাবিবের সঙ্গে তোমার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন তোমার কি কিছু বলার আছে?

আলো কিছু বলতে চাইলো তার আগেই হাবিব সেখানে উপস্থিত হলো। চোখ মুছে বলল,

> আমার ঈসা মায়ের জন্য আলোকে বিয়ে করতে আমার কোনো আপত্তি নেই। নীরাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। ওর রেখে যাওয়া আমানত আমি খুব যত্নে রাখবো।
আলো চুপ থাকতে পারলোনা। বোনের জন্য অন্তর জ্বলেপুড়ে অঙ্গার হচ্ছে। ছুটে গিয়ে রান্নাঘর থেকে বটি নিয়ে তেড়ে আসলো। হাবিবের গলাতে বটি রেখে হুঙ্কার ছাড়লো,

> চুপচাপ এখান থেকে চলে যাবি। দ্বিতীয়বার এদিকে আসলে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবি না। ঈসা নীরার মেয়ে,আমার মেয়ে। তোকে ওর বিষয়ে চিন্তা করতে কে বলেছে? আমার বোন ভোররাতে দশ কিলো রাস্তা পায়ে হেঁটে বাড়িতে ফিরে এসেছিলো তখন তোর ভালোবাসা কোথায় ছিলো? মেয়ে নিয়ে একটা শব্দ উচ্চারণ করবিতো আমার বুবুর খু*নের দায়ে তোকে আমি জেলে পাঠাবো।

আলো দাঁত কিড়মিড় করছে। হাবিব ভয়ে চুপসে আছে। লতিফ সাহেব নির্বাকভাবে চেয়ে আছেন।ফায়জু দৌড়ে এসে আলোকে ছাড়িয়ে নিয়ে ধমক দিলো,
> পাগল হয়েছিস? মাথা ঠান্ডা কর। আমি বলছি ওদের চলে যেতে। তুই ঘরে যা।

আলো ফুঁলতে ফুলতে প্রস্থান করলো। বুবুর মুখটা মনে হলে এদের খু*ন করতে ইচ্ছা করছে। আলো ঘরে এসে বুবু বলে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। কত স্মৃতি এই ঘরটাতে জড়িয়ে আছে।। বুবুর শাড়িটা বিছানার উপরে এলোমেলো ছড়িয়ে আছে। হাবিব মাকে নিয়ে চুপচাপ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। বাড়িতে আত্মীয় থাকার মধ্যে আলোর মামা মামি আর কয়েকজন আছে। আলোর মামা দেশে ফিরেছে সপ্তাহ হতে চলেছে। আলোর মামি উনাকে বুদ্ধি দিয়েছেন। যেহেতু আলোর পেছনে উনাদের বেশ কিছু অর্থ প্রতিমাসে খরচ হচ্ছে সেহেতু উনাদের ছেলের সঙ্গে আলোর বিয়ে দিয়ে নিজেদের বাড়িতে রাখবেন। ছেলে ভীষণ মেধাবী। অনার্স শেষ করেছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সে বছরে তিনমাস পাগল থাকে। ভাদ্র মাস আসলে পাগলামি শুরু করে। কাউকে চিনতে পারেনা। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীষণ চিন্তিত আলোর মামি, তাই এহেন ভাবনা। লতিফ সাহেব চুপচাপ প্রস্তাবটা শুনলেন। উনার কাছে আরও দুখানা প্রস্তাব এসেছে। পাশের গ্রামের নুরুল চাষীর ছেলে মিলন পাঠিয়েছে।ছেলে চাষাবাদ করে, পঞ্চাশ বিঘা জমি আছে। সেখানে আলোর ভাতের অভাব হবে না কিন্তু পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। গৃহস্থালি সংসারের বউদের পড়াশোনা বিলাসিতা বৈকি কিছুই না। দ্বিতীয় প্রস্তাবটা এসেছে ইকবাল মাহমুদের নিকট থেকে। উনার ছেলে শহরের নামকরা বখাটেদের একজন। নামিদামি মানুষ অথচ ছেলেটা মানুষ করতে পারলেন না। উনি বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন। আলোকে ছেলের জন্য চেয়েছেন বিনিময়ে ফাইজুর একটা ভালো চাকরি আর ঈসার দায়িত্ব উনি নিবেন। আলোর পড়াশোনা বন্ধ হবে না বরং সব রকমের সুযোগ সুবিধা পাবে। লতিফ সাহেব আলোর বিয়ে নিয়ে চিন্তিত। ছোট মেয়েটা নীরার মতো ভুল করার আগে উনি পাত্রস্থ করতে চাইছেন। কিন্তু যোগ্য পাত্র হিসেবে কাকে পছন্দ করবেন বুঝতে পারছেন না। কাকে আলোর জন্য বেছে নেওয়া উচিৎ?

চলবে