#সাত_পাকে_বাঁধা
#পর্ব_১২
#অধির_রায়
সকাল বেলা পিসি মনি আর স্বার্থ চৌধুরী বাড়িতে এসে হাজির৷ স্বার্থকে দেখে নির্বণ খুব রেগে যায়৷ নির্বণ তেড়ে স্বার্থের দিকে যায়৷
— “তুই এখানে কেন? তোরা আবার এই বাড়িতে কেন ফিরে এসেছিস?” চোখ পাকিয়ে বলে উঠে নির্বণ
— স্বার্থ নির্বণের কানে ফিসফিস করে বলে ” ব্রু তোর স্মৃতি শক্তি দিনে দিনে লোপ পাচ্ছে ডাক্তার দেখা৷ ভুলে যাস না এই বাড়িও ৭০% মালিক আমি স্বার্থ”
— “ফিসফিস করে কি বলা হচ্ছে?” রিমোট হাতে নিতে নিতে বলে উঠে নিয়তি৷
— স্বার্থ নির্বণের কাঁধে হাত রেখে ” বউদি ভাবছি দোল উৎসবে আমরা কি করব? ” তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য আমরা একটা প্লান করছিলাম৷
— নির্বণ এসব লাগেক্স এখানে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকব৷ ভিতরে কে নিয়ে যাবে৷ (পিসিমনি)
— স্বার্থ আবার ফিসফিস করে নির্বণের কানের কাছে বলে উঠে ” মা যা বলছে তাই কর? না হলে তোদের এই বাড়ি থেকে বের করে দিব।”
— স্বার্থ মনে হয় ভুলে যাচ্ছিস৷ গোবরে পোকা মরিবার সময় উঠে বেড়ায়। তোর অবস্থা তেমনই হবে৷ নিজের শেষ দিনের হিসাব করতে থাক৷
–
–
–পিসি মনি আমাকে দেন৷ আমি আপনার রুমে রেখে আসছি৷ নির্বণ স্বার্থের সাথে কথা বলছে? নিয়তি লাগেক্স নিয়ে পিসি মনির সাথে রুমে চলে যায়।
নিয়তি পিসি মনির রুম থেকে চলে আসতে নিলেই পিসি মনি নিয়তির হাত ধরে ফেলে। নিয়তি পিছনে ফিরে পিসিমনির দিকে চোখ ছোট করে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে৷
— পিসিমনি কিছু বলবেন?
— পিসি মনি মুচকি হেঁসে ” কেন তোমার সাথে কথা বলতে পারি না? তোমাকে এই তিনদিন খুব নিস করেছি৷ ”
— আমি আপনাদের যে বললাম চলে যেতে হবে না৷ আমাদের সাথেই থাকবেন৷
— “সেটা বললে কি হয় মা? দাদার বাড়িতে আর কতদিন থাকব৷ দাদা কথায় কথায় আমাকে আর স্বার্থকে ঠুংকো প্রমাণ করে৷ জানো নিয়তি উনি যাওয়ার পর আমরা যখন এই বাড়িতে আসি তখন দাদা খুব ভালোই ছিল৷ কিন্তু এক বছর পর৷ দাদা আমাদের সাথে রোড় ব্যবহার করতে শুরু করে। কি করব বল? শ্বশুর বাড়ি গেলে ছোট ঠাকুর, দেবররা আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলতো৷ তাই বাদ্য হয়ে এখানেই থাকতে শুরু করে৷ কিন্তু নির্জনের অভিভাবক হয়ে কোনদিন স্কুলে যায়নি। আর দাদা কোনদিন আমাদের বরণ পোষণের দায়িত্ব নেননি। শুধু খাবারের দায়িত্ব নিয়েছেন৷” পিসিমনি কথাগুলো বলে চোখ থেকে দুই ফোঁটা জল ফেলল।
— নিয়তি পিসিমিনির চোখের জল মুছে দিয়ে “আঁধার কেটে আসে দিনের আলো। তার সাথে ঝরে যায় ঝরা, মুছে যায় গ্লানি। এখন আপনারা আলোর পথ দেখেছেন৷ এখন আর চোখের জল নয়৷”
— হ্যাঁ মা। আর চেখের জল ফেলব না৷ তোমার মতো যদি একটা ছেলের বউ পেতাম৷ তাহলে মরে গিয়েও শান্তি পেতাম।
— ছিঃ পিসি এসব কথা মুখে আনতে নেই! আর কখন মরে যাওয়ার কথা বলবেন না৷
–পিসিমনি মুচকি হেঁসে নিয়তির গালে আলতো করে হাত রেখে ” সুখে থাকো ”
— পিসি মনি আপনি রেস্ট নেন আমি আপনার জন্য ব্রেক ফাস্ট নিয়ে আসছি৷
পিসি মনি চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে দিল। নিয়তি এক মুহুর্তও দেরি না করে রান্না রুমে চলে যায়।
–
–
–পিসি মনি ডাইনিং রুম থেকে চলে যেতেই নির্বণ স্বার্থের শার্টের কলার চেপে ধরে “তোর মতো দু’মুখো সাপ আমি কোনদিন দেখিনি। ”
স্বার্থ নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মুখ দিয়ে শিস বাজিয়ে যাচ্ছে আর নির্বণকে কেন্দ্র করে স্বার্থ চারিদিকে রাউন্ড করছে। যা দেখে নির্বণের আরও রাগ ভেড়ে যায়৷ নির্বণ পা বাজিয়ে স্বার্থকে ফেলে দিতে নিলেই স্বার্থ দাঁড়িয়ে পড়ে।
— নির্বণের সামনে এসে বাম আঁখি সংকোচন করে ব্রু প্রসারিত করে “আমাকে মাটিতে ফেলে দিতে চাস নির্বণ৷ আমি মাটির মানুষ মাটিতেই আছি৷ মাটি থেকে পড়লে আমার তেমন ব্যথা লাগবে না৷ কিন্তু তোরা উপরের তলার মাবুষ৷ যদি তোদের উপর থেকে নিক্ষেপ করা হয়?”
— যখন তুই থুবড়ে পড়বি তখন তোকে তোলার মতো কে থাকে সেটা আমি দেখে নিব৷
— ওঁকে ইয়ার খেলা শুরু৷ দোল উৎসবে একটা টেন্ডার দেখতে পারবি৷ খুব টায়ার্ড লাগছে৷ মামী অরিনকে দিয়ে এক কাপ কফি আমার রুমে পাঠিয়ে দিবেন।
টেট্যাং ট্যাং বলে স্বার্থ নিজের রুমে চলে আসে৷ রুমে এসে নবাব সিরাজউদ্দৌলার মতো ট্রি টেবিলে দুই পা তুলে বসে৷ যা লক্ষ করে বির্বণ৷ নির্বণ ক্ষেপে না খেয়ে অফিসে চলে যায়।
–
–
— নিয়তি পিছন থেকে এসে বলে উঠে “মা কি রান্না করছেন?”
— তেমন কিছু না৷
— মা আমাকে সব রান্না শিখিয়ে দেন৷ কফি নিশ্চয় নির্বণের জন্য?
— নির্বণের মা মুখ গোমড়া করে “না”
— তাহলে। কেউ তো আর কফি খায় না এই বাড়িতে৷ অবশ্য আমি খায়। কিন্তু আমি সকালে খেয়েছি আর খেতে পারব না৷
— আমাদের বাড়িতে বির্বণ ছাড়া আরও একটা ছেলে আছে। সেটা আর কেউ না অন্ন ধ্বংসকারী স্বার্থ।
“নির্বণের মা নিজের নিজের ক্ষোভটা কিছুটা কমানোর জন্য কথাটা বলে। কিন্তু নিয়তির মনে পড়ে যায় পিসিমনির কথা৷ নিয়তি কোন প্রশ্ন না করে পিসি মনি ঠিক বলেছে৷ তাদের প্রতিটি মুহুর্তে এই পরিবার ঠুংকো প্রমাণ করতে চায়৷” মনে মনে
— কি হলো নিয়তি ওই ভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ওখান থেকে সরে দাঁড়াও তেলের ছিঁটা যাবে৷
— না মা৷ আমি তো ভাবলাম আপনি কিভাবে রান্না করেন৷
— নির্বণের মা মুচকি হেঁসে ” পাগলী মেয়ে একটা”। অরিন ছাঁদে গেছে স্বার্থকে কফিটা দিয়ে আসো৷
“নিয়তি বিপদে পড়ে যায়। মা সামনে না বলতেও পারবে না। কিছুতেই সে স্বার্থের সামনে পড়তে চায় না৷ কিন্তু কেউ পিছু ছাড়ে না৷” মনে মনে ভেবে যাচ্ছে
— ওঁকে মা দেন দিয়ে আসি৷
নিয়তি কফি নিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে যাচ্ছে স্বার্থের রুমে৷ দ্বার খোলা থাকায় কিছুটা সুবিধা হলো রুম চেক করার৷ নিয়তি চোখ বুলিয়ে নেয় সারা রুমে। কোথায় স্বার্থকে দেখতে পায় না৷ এই সুযোগ নিয়তি রুমে ঢুকে টুপ করে কফির কাপ রেখে চলে আসতে নিলেই স্বার্থের সাথে ধাক্কা খায়।
নিয়তি পড়ে যেতে নিলেই স্বার্থ নিয়তির কোমরে হাত দিয়ে নিয়তিকে শক্ত করে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ নিয়তির মুখ একদম স্বার্থের মুখের কাছাকাছি। নিয়তির খুব অস্বস্তি বোধ করছে৷ শক্ত করে কোমর চেপে ধরায় কথাও বলতে পারছে না৷ কথা যেন আটকে আটকে আসছে৷
— নিয়তি আমতা আমতা করে ‘” প্লিজ ছেড়ে দেন” এই উগান্ডা কোথায় থেকে আসল।সা* তুই তো রুমে ছিলি না৷
— স্বার্থ নিয়তিকে আরও কাছে নিয়ে এসে ” আমার থেকে কেন পালিয়ে যেতে যাও?”
— নিয়তি রাগি গলায় বলে ” আমাকে ছেড়ে দেন না হলে আমি চিৎকার করে বলে দিব আপনি আমাকে ”
— কোন সমস্যা নেই৷ কারণ তুমি নিজে থেকে আমার রুমে এসেছো৷ এই আজব দুনিয়া তোমার কথা কম বিশ্বাস করবে। আমি কি বলবো জানো তুমি এখানে এসে নিজের কষ্ট ভুলতে আমাকে জড়িয়ে ধরেছো।
নিয়তি স্বার্থকে দুই হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে মুক্ত করে৷
— আপনি কোন দিন ভালো হবেন না৷ এমন আপনি আমার পিছনে কেন লেগে আছেন৷ আপনি বিয়ে করে নিতে পারেন না৷ পিসি মনি আপনার বউয়ের জন্য প্রতিদিন প্রার্থনা করে। আপনি বিয়ে না করে পড়ে আছেন কেন আমার পিছনে?
— মনের মানুষ যখন অন্য কারো হয়ে যায়। তখন বিয়ে করার কথা ভুলে যায় সবাই৷
নিয়তি তুই এখান চলে যা। এই লোকটা একটা মেন্টাল। এখানে থাকলে তোকে অনেক এই মেন্টালের কথা শুনতে হবে৷ তুই পাগল হয়ে যাবি৷
নিয়তি এক পা দুই পা করে পিছিয়ে দ্বারের কাছে এসে দৌড়ে চলে আসে।অন্যদিকে স্বার্থ কথা বলেই যাচ্ছে। স্বার্থ পিছনে ফিরে দেখে নিয়তি উধাও।
স্বার্থ কফি খেয়ে পিসি মনিকে প্রণাম করে অফিসে চলে আসে৷
–
–
–
নির্বণ স্বার্থের কেবিনের সামনে পায়েচারী করছে৷ সময়ের নির্মম পরিহাসে আজ নিজের কেবিন অন্যের কাছে। সে কেবিনে আমার স্বার্থের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে পারছে না৷
স্বার্থ দূর থেকে নির্বণের কার্যকলাপ দেখে যাচ্ছে। নির্বণের এমন অবস্থা দেখে স্বার্থ মহাখুশি। স্বার্থ হাত তালি দিয়ে নির্বণের সামনে আসে৷
— মি. চৌধুরী আপনি আমার কেবিনের সামনে কি করছেন?
নির্বণ রাগী দৃষ্টিতে নিক্ষেপ করে মনে মনে ” পাল্টি খেতে দেখছি এক মুহুর্ত টাইম লাগে না৷ একটু আগে বাড়িতে হাজারটা বাজে কথা বলে গেল। এখনও বাজে কথা বলতেছে৷ মানুষ এত পরিবর্তনশীল তোকে না দেখলে জানতে পারতাম না।”
— কি হলো কথা বলছিস না কেন?
— তুই আমাদের বাড়িতে আবার কেন ফিরে এসেছিস?
— সরি ওই বাড়িতে আপনার ৩০% অধিকার আছে। আমার ৭০% একটু আগেও মনে করিয়ে দিয়েছি আপনাকে৷ সো আপনি আমার পথ থেকে সরে দাঁড়ান আমার এক গেস্ট আসতে চলেছে এখানে৷ আমি চায় না বাহিরের কারো জন্য আমার গেস্টের অপমান হক।
স্বার্থ নির্বণের সাথে কথা না বাড়িয়ে নিজের কেবিনে চলে যায়।নির্বণ পিছু পিছু যেতে নিলেই সিকিউরিটি বাঁধা দেয়।
— সরি স্যার আপনাকে আমরা ভিতরে যেতে দিতে পারব না৷
— কেন?
— আমাদের নতুন স্যারের হুকুম। আমরা তার আদেশ মানতে বাদ্য৷ আমরা আপনাকে তার কেবিনে প্রবেশ করতে দিলে উনি আমাদের চাকরি থেকে বের করে দিবেন।
নির্বণ কথা না বাড়িয়ে নিজের কেবিনে চলে আসে৷ নির্বণের মাথায় কোন চিন্তা আসছে না৷ কিভাবে মোকাবেলা করবে স্বার্থের সাথে? নির্বণ কোন উপায় না পেয়ে তার তার কিছু বিজনেসম্যান বন্ধুদের ডেকে পাঠায়৷
নির্বণের সব কার্যকর্ম দেখে যাচ্ছে স্বার্থ বড় মনিটরের পর্দায়। স্বার্থ নির্বণের কেবিনে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছে সেটা নির্বণ জানে না৷ সে ক্যামেরা কোন ভাবেই নির্বণের চোখে পড়ার মতো নয়৷দেয়াল ছিদ্র করে লাগিয়ে রেখেছে।
স্বার্থ কিছু গুন্ডা টাইপের ছেলেকে হায়ার করে নির্বণকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে। স্বার্থ কিছুতেই নির্বণের কাছে হারতে চায় না৷ যেভাবেই হোক নির্বণকে স্বর্গে পাঠাবে।
রাত ১০ টার দিকে নির্বণ বাড়ি ফিরার পথে কিছু লোক নির্বণের পথ আটকায়৷ নির্বণ গাড়ি থেকে বের না হওয়ায় লোকগুলো ক্ষেপে যা করে বসে। তার জন্য নির্বণ প্রস্তুত ছিল না৷
চলবে
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে