সাত পাকে বাঁধা পর্ব-১১

0
1981

#সাত_পাকে_বাঁধা
#পর্ব_১১
#অধির_রায়

নির্বণ অফিসে ঢুকেই সব কিছু ভিন্ন দেখতে পায়৷এখানে ওখানে জিনিস পত্র ছিটানো ছড়ানো। সবকিছু দুই ভাগে বিভক্ত করা৷

— নির্বণ ক্ষেপে বলে এসব কি? এখানে সব কিছু দুই ভাগে বিভক্ত কেন?

— পিছন থেকে অফিসের এক স্টাফ বলে উঠে স্যার এখানে যা কিছু হচ্ছে সব কিছু মি. এসএন এর হুকুমে হচ্ছে।

— এস এন কে? অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে

— স্যার আমরাও জানি না৷ তিনি মাক্স পড়ে আছেন। যার জন্য আমরা তাকে চিনতে পারছি না৷

— একজন অচেনা লোক যা বলবে তোমরা তাই করে যাবে৷ কে সেই অচেনা লোকটি?

— স্যার আমাদের কোন দোষ নেই৷ তিনি এই অফিসের ৭০% মালিক। আমরা তার কথা শুনতে বাদ্য৷

নির্বণ থমকে দাঁড়ায় তার অফিসে একজন ৭০% দাবী করছে অথচও সে নিজে জানে না৷ পুরো অফিস তার নামে।এটা কিভাবে সম্ভব? কে এদের বোকা বানাচ্ছে?

— নির্বণ ক্ষেপে স্টাফের শার্টের কলার ধরে কি বললি তুই? আজ তোর,,

প্লিজ স্যার আমার সাথে কিছু করবেন না৷ আমরা এই অফিসের কর্মচারী। মালিকের কথা আমরা শুনতে বাদ্য।

নির্বণ স্টাফের কলার ছেড়ে দেয়। তারা হুকুম মানতে বাদ্য। তাদের এই কাজের জন্য রাখা হয়েছে।

— তাই বলে কেউ নিজেকে ৭০% মালিক দাবি করলেই সে এই কোম্পানির মালিক হয়ে গেল।

— স্যার আমরাও বিশ্বাস করিনি প্রথম। কিন্তু উনার সাথে বড় মালিকও ছিল।তিনিই বলে দিয়েছেন এই কোম্পানির ৭০% মালিক এসএন।

— এসএন কোথায়? উঁচু গলায় বলে

— তুনি উনার কেবিনে আছে৷ তার সাথে এখন কেউ দেখা করতে পারবে না৷

— কোন কেবিনে আছে? আমি নিজেই যাচ্ছি। ওই বটপারের কেবিন কোথায়?

— উঁনি আপনার কেবিন দখল করে নিয়েছে। আমরা বাঁধা দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি বলে দিয়েছেন ৭০% ভাগের মাঝে এই কেবিন পড়ে। তাই আজ থেকে এই কেবিন তার৷ ৩০% ভাগ নিয়ে যেন আপনি ওই কেবিন দাবি না করেন৷

— সব গুলোই এক এক অকর্মা ঢেঁকি।

নির্বণ ক্ষেপে কিছু জিনিসপত্রে লাথি দিয়ে সোজা নিজের কেবিনে প্রবেশ করে।

দ্বার খোলার আওয়াজে এস এন বলে উঠে কারো কেবিনে প্রবেশ করতে হলে আগে তার পারমিশন নিতে হয়৷

নির্বণ এস এনকে নিজের চেয়ারে বসা দেখে আরও ক্ষেপে যায়। যাকে বলে বিপি বেড়ে যাওয়া। এমন ভাবে তেড়ে আসে মনে হয় এস এনকে এখনই মেরে ফেলবে।

— তোর সাহস কি হলো আমার কেবিনে বসার৷ তাও আবার আমার চেয়ারে।

–গলা নামিয়ে কথা বলেন মি. চৌধুরী। আমি আপনাকে ভয় পায় না৷ এই কোম্পানির ৭০% শেয়ার হোল্ডার আমার৷

— আমি মানি না তুই এসব চিট করে আমাদের সাথে এমন করেছিস৷ সাহস থাকলে সামনে আয়। মুখ লুকিয়ে চেয়ার ঘুরিয়ে বসে আছিস কেন?

— কোল্ড মি. চৌধুরী। আমি সব কিছু এত তারাতাড়ি বলে দিতে চায় না৷ মি. চৌধুরী আগে অনুমতি নিয়ে আসেন। তার পর আপনার সাথে আমার কথা হবে। না হলে আমি সিকিউরিটি ডেকে আপনাকে এখান থেকে বের করে দিতে বাদ্য হবো।

নির্বণ মাথা ঠান্ডা রাখ৷ এখন তার সাথে কথা বলতে হবে। কেন সে আমাদের কোম্পানিকে দখল করতে চায়ছে? তার উদ্দেশ্য কি? আমাকে সব জানতে হবে৷ বরং তার কথা এখন মেনে নেওয়া উচিত।

নির্বণ গুটি গুটি পায়ে কেবিন থেকে পিচ্চি বাচ্চাদের মতো মুখ গোমড়া করে বেরিয়ে আসে৷ তার নক করে কেবিনে প্রবেশ করে।

— মি. চৌধুরী বসেন৷

— কে আপনি? আপনি আমাদের কোম্পানির কেন ক্ষতি করতে চায়ছেন৷

— আমি কে সেটা বড় কথা নয়৷ বড় কথা হলো আমি কি করতে পারি৷

— আপনি কি মিন করতে চাইছেন?

— আমি সোজা প্রশ্নের সোজা উত্তর দিতে পছন্দ করি৷
এখন আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত নয়৷

— আপনি এভাবে গলা হেকিয়ে কথা বলছেন কেন? ভয় পান আমায়।

— আমি ভয় পাব আপনাকে কি করে ভাবলেন? আমি নির্জন চৌধুরী স্বার্থ। কাউকে ভয় পায় না৷

নির্বণ বসা থেকে উঠে দাঁড়াল নির্জন চৌধুরী স্বার্থ নামটা শুনে৷ নামটা শুনে নির্বণের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷ অপ্রস্তুতভাবে আমতা আমতা করে বলে

— আপনার নামটা আবার বলেন? কে আপনি? প্লিজ একটু ঘুরে তাকান৷

— ওঁকে মি. চৌধুরী

স্বার্থ ঘুরে বির্বণের দিকে ফিরে তাকাতেই নির্বণ নিজের দেহের শক্তি হারিয়ে আবার পুনরায় চেয়ারে বসে পড়ে।

— মি. চৌধুরী আপনি ঠিক আছেন তো? কি হলো আপনার?

— স্বার্থ তুই আমাদের সাথে এমন করতে পারলি। তুই আমার এই চেয়ারে বসে পড়লি।

— হ্যালো মি. চৌধুরী আমাকে এস এন বলে ডাকতে পারেন৷ আর হ্যাঁ আমাকে স্বার্থ বলে ডেকে ভুল করবেন না৷ অতীত সব ভুলে যান৷ অতীতে আপনি আমার কি ছিলেন সেটা আমার জানা কোন বিষয় নয়৷ আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করি।

— স্বার্থ তুই তো আমার বাবাকে নিজের বাবা বলে মানতিস৷ তাহলে তার এত বড় ক্ষতি কিভাবে করতে পারলি।

— বাবার মতো মানলেই বাবা হওয়া যায় না৷ এখন আপনি যেতে পারেন৷ আমার অনেক কাজ আছে। আপনার সাথে কথা বলে আমি সময় নষ্ট করতে চায় না৷

— আজ তোর অনেক কাজ তাই তো দেখতে পাচ্ছি। আমরা এতদিন দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পালছিলাম।

— মি. চৌধুরী বের হয়ে যান৷ আমি চায়না আপনাকে ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে। এই কোম্পানিতে আমি ৭০% ইনভেস্ট করব৷ সেজন্য আমার কথা মেনে চলাটায় শ্রেয়। আপনার ৩০% নিয়ে আপনি কাজ করে যান।

— স্বার্থ কথায় আছে অতি বার ভেড় না ঝড়ে ভেঙে যাবে।

— মি. চৌধুরী পরের লাইন আমি জানি৷ এত ছোট হতে নেই ছাগলে খাবে৷ সেজন্য আর কোথায় ছোট হবো না৷ আর যারা ভেড়ে গেছে তাদের নিচু করার জন্যই এমন করেছি৷

— স্বার্থ৷ চিৎকার করে।

— এটা তো বাড়ির ডাইনিং রুম না। এভাবে চিৎকার করবি৷ আমার সামনে সব সময় নিচু গলায় কথা বলবি৷ বের হু আমার কেবিন থেকে৷ আমি চায় না তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করো দিতে৷

— স্বার্থ তুই যে পাতে খাস সেই পাতে ফুটো করিস৷ তোকে কথা দিচ্ছি আমি এই ৩০% দিয়ে তোর সমস্ত অহংকার ভেঙে দিব৷

— I say just get out. উঁচু গলায় বলে।

— কথা গুলো মনে রাখিস৷

— সিকিউরিটি সিকিউরিটি,,,

সঙ্গে সঙ্গে দু”জন ছেলে রুমে আসে।

— Yes sir. any problem.

Yeah, তোমাদের বলে দিচ্ছি এর পর নির্বণের মতো বাজে লোক আমার কেবিনে যেন না ঢুকতে পারে। তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দাও।

সিকিউরিটি দুই জন নির্বণের দিকে তাকিয়ে ঘাড় নিচু করে ফেলে। নির্বণ তাদের অবস্থা বুঝতে পেয়ে নির্বণ বলে উঠে

— এমন অপমানিত আমি কোনদিন হয়নি। এখন চলে যাচ্ছি ঠিকই কিন্তু এর জবার সময় হলে দিয়ে দিব৷

নির্বণ আর কোন কথা না বাড়িয়ে হন হন করে চলে যায় রুম থেকে।

— স্বার্থ রাগি গলায় বলে উঠে তোমাদের চাকরি করার ইচ্ছা আছে৷ আজ যদি তোমাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে চাকরি থেকে বের করে দেয় তাহলে কাল তোমাদের পরিবার নিয়ে পথে পথে ভিক্ষা করতে হবে৷ এর পর কোন ভাবেই যেন নির্বণ বা মামু আমার কেবিনে না আসতে পারে। আমার অনুমতি পেলে তখনই কেবিনে নিয়ে আসবে৷

— Okay Sir..

— Now leave me

সিকিউরিটি দুই জন চলে যায়। রুমে বসে বসে পরবর্তী প্রদক্ষেপের কথা ভেবে যাচ্ছে স্বার্থ। কিভাবে নির্বণকে পথে নামিয়ে আনবে৷ পথে নামিয়ে দুনিয়া ছাড়া করবে নাকি এখনই দুনিয়া ছাড়া করে দিবে সেটা ভেবে যাচ্ছে।

নির্বণ অফিসে আর এক মুহুর্তও দেরি না করে হন হন করে নিজের বাড়িতে চলে আসে৷ নিজের বাড়িতে এসে ডাইনিং রুমে একুরিয়াম, ফুলের টপ, বাহারী রকমের ঘর সাজানোর তৈজসপত্র ভেঙে ফেলে।

আসবাবপত্র ভেঙে ফেলার শব্দে সবাই ডাইনিং রুমে চলে এসেছে৷ নির্বণের হাত থেকে রক্ত ঝড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ নির্বণের সামনে আসতে সাহস পাচ্ছে না৷ রক্তিম দৃষ্টিতে চারিদিকে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে।

আর কিছু না ভেবে নির্বণের মা নির্বণের কাছে এসে নির্বণের গালে ঠাসস করে দু”টা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷

— এসব কি? রাগি বলায় বলে উঠে নির্বণের মা

— এসব কি? এই প্রশ্ন আমি করব তোমাদের? বাবা কোথায়? তাঁকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না কেন?

— তোমাদের বাবা আমাদের পুরাতন ফেক্টরিতে গেছে৷

— পুরাতন ফেক্টরি। অবাক হয়ে

— হুম পুরাতন ফেক্টরি৷ যা তুমি জান না৷ সেই ফেক্টরির কথা স্বার্থ জানে৷ ওই ফেক্টরি আমাদের অনেক আগের৷ তোমার বাবা নিজ হাতে ওই ফেক্টরির সব কাজ করে যাচ্ছে।

— সে ফেক্টরিও কথা স্বার্থ জানে অথচও আমি জানি না৷ ওকে আমি খোঁজে নিচ্ছি।

নির্বণ হাতে রক্ত নিয়ে বের হতে নিলেই নির্বণের বাবা রুমে প্রবেশ করে।

নির্বণ পকেট থেকে একটা এগ্রিমেন্ট ছুঁড়ে মারে তার বাবার সামনে৷

— এসব কি? ৭০% তুমি বিক্রি করে দিয়েছো৷

— What. তোমার মাথা ঠিক আছে৷ আমি ৭০% বিক্রি করতে যাব কিসের জন্য?

— তাহলে এখানে তোমার সাইন কেন? আর সেই ৭০% কার নামে জানো?

— কার নামে?

— সে ৭০% হলো স্বার্থের নামে৷

— স্বার্থ আমাদের পুরাতন ফেক্টরিও নিজের নামে করে নিয়েছে৷ আজ সেই ফেক্টরি থেকে আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে৷ নিজের হাতে তৈরি করা কোম্পানি থেকে এভাবে অপমানিত হতে হবে আমি জীবনেও ভাবি নাই৷ সে আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে৷

— মা নিয়তি কোথায়?

— কেন? ভুলে গেলি নাকি নিয়তিকে অফিসে যাওয়ার সময় তার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে গেছিস।

— এসব কিছু যেন নিয়তি জানতে না পারে। যা করার আমাদের করতে হবে। স্বার্থকে বুঝিয়ে দিব। ঠিল ছুরলে পাটকেল খেতে হয়৷ অরিন।

— জি দাদাবাবু?

— তোর বউদি যেন এসবের কিছু জানতে না পারে৷

— ওঁকে দাদাবাবু।

— হাতের ব্যান্ডেজ করে নাও। রাতে ভাবা যাবে তার সাথে কিভাবে মোকাবেলা করব? নির্বণের বাবা কথাটা বলে চোখ থেকে দু ফোঁটা জল ফেলে নিজের রুমে চলে যায়।

কে মেনে নিতে পারে এত বড় শক। নিজের হাতে তৈরি করা কোম্পানি থেকে যখন নিজেকে অপমানিত করে বের করে দেওয়া হয়। তখন মৃত্যু বরণ করা ছাড়া কোন উপায় খোলা থাকে না৷ কিন্তু নির্বণ & নির্বণের বাবা খুব শক্ত হয়ে এই ধাক্কা সামলে নিয়েছে৷

নির্বণ হাতে ব্যান্ডেজ করে নিজ রুমে পায়েচারী করছে৷ এটা কি করল স্বার্থ। যাকে এতদিন নিজের ভাই ভেবে আসলাম সেই আমাদের পিছনে ছুরি মারল কিভাবে করতে পারল৷ স্বার্থ কি চায়? তার উদ্দেশ্য কি?

— রাতের বেলা নির্বণ আর নির্বনের বাবা বসে কিছু পরামর্শ করে কিভাবে ৩০% দিয়ে স্বার্থের সাথে মোকাবেলা করে যাবে।

সকাল বেলা বিপদ নিজ বাড়িতে এসে হাজির

চলবে।