#সাত_পাকে_বাঁধা
#পর্ব_১৩
#অধির_রায়
কিছু গুটা টাইপের লোক নির্বণের পথ আটকে দাঁড়ায়৷ সকলের মুখ কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা৷ নির্বণকে গাড়ি থেকে নামতে বললে নির্বণ কিছুতেই গাড়ি থেকে নামে না৷ তাদের মাঝে প্রধান যে লাইন নির্বণের গাড়ির গ্লাসে ভেঙে ফেলে। গ্লাস ভাঙার পর নির্বণকে দেখে
— “নির্বণ তুই ” ভুত দেখার মতো করে বলে।
— নির্বণ শুকনো ঢুক গিলে ” কে আপনি? আপনাদের আমি কি ক্ষতি করেছি৷”
–লোকটি মুখের কালো কাপড় সরিয়ে আমি প্রার্থ।
প্রার্থ নাম শুনে নির্বণের মনে কিছুটা সাহস আসে৷ নির্বণের ভালো বন্ধু প্রার্থ৷ সব সময় নির্বণকে সাহায্য করে এসেছে।
— প্রার্থ তুই আমাকে
নির্বণ কিছু বলতে নিবে তার আগেই প্রার্থ বলে উঠে “তুই কিছু বলবি না আমি তোকে বলছি”
— ওঁকে তুই বল।
— তুই নিশ্চয় জানিস আমরা টাকার জন্য এসব কাজ করি৷ আমি যদি আগে জানতাম তোকে মারার জন্য আমাদের টাকা দেওয়া হয়েছে তাহলে আমরা কোনদিন টাকা নিতাম না৷ বরং তাকেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতাম।
— তাহলে বল কে আমাকে মারার জন্য তোদেরকে হায়ার করেছে?
— তোকে মারার জন্য আমাদের টাকা দিয়েছে স্বার্থ।
স্বার্থ নামটা শুনে নির্বণ দুই কদম পিছিয়ে যায়। স্বার্থ এত নিচে নামতে পারে এটা নির্বণ কোনদিন বিশ্বাস করে নি৷ শেষে কিনা আমাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছে৷
প্রার্থ নির্বণের হাত ধরে ” ঠিক আছিস তুই? কি হলো তোর? তুই এভাবে ভেঙে পড়লি কেন?”
— জানিস প্রার্থ আমাকে যে মারতে চেয়েছে সে আর কেউ না৷ আমারই ভাই৷
— প্রার্থ চোখ বড় করে “কি!”
— হ্যাঁ স্বার্থ আমার পিসি মনির ছেলে। ছোটবেলায় সে আমাকে খুব ভালোবসতো। কিন্তু সে এটা কিভাবে করতে পারে? আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না৷
— পর মানুষ কখনো নিজের ক্ষতি করে না৷ ক্ষতি করলে নিজের মানুষই করে৷ তার মানে বের হলো ঘরের শত্রু বিভীষণ।
— হুম ঠিক বলছিস প্রার্থ৷ তবে তোকে একটা কাজ করে দিতে হবে?
— কি কাজ? তুই বললে এখনই ওই স্বার্থ কে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিব৷
— না থাম এমন কাজ করিস না৷ স্বার্থকে শাস্তি দিবে আইন৷ তুই শুধু আমার কাজটা করে দে।
— বল কি কাজ? তোর জন্য নিজের জীবনও দিতে পারি৷
–নির্বণ প্রার্থের কাঁধে হাত রেখে ” তুই কেন মরতে যাবি৷ তুই বরং আমাকে মেরে ফেল?”
— এক কদম পিছিয়ে “কি!” “আমার জীবন থাকতে তোর কোনদিন কোন ক্ষতি হতে দিব না৷ আর তুই বলছিস আমি তোকে মেরে ফেলি৷ ”
— আরে আমাকে মৃত ঘোষণা করবি তুই৷ মেরে ফেলতে বলি নি৷ আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি মা, বাবা, নিয়তিকে আমি দুই দিন বাড়ি ফিরতে পারব না৷ দোল উৎসবে একেবারে বাড়ি ফিরব৷
— দোল উৎসবে কেন?
— দোল উৎসবে স্বার্থের মুখোস খোলে ফেলব৷ স্বার্থ আমাদের চিট করে আমাদের সমস্ত প্রপার্টি নিজের নামে করে নিয়েছে৷
— তুই চিন্তা করিস না৷ সব প্রপার্টি তোর নামে আমরা করে নিব৷ এখন বল আমাদের কি করতে হবে।
— তুই স্বার্থকে ফোন করে জানিয়ে দে নির্বণ কে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিছি।তাকে মেরে গঙ্গার বুকে ফেলে দিয়েছি।
— ওঁকে
নির্বণ যেমটা শিখিয়ে দেয় প্রার্থ ফোন করে স্বার্থকে ঠিক তেমনটা বলে উঠে। স্বার্থ নির্বণের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে একটা পার্টির ব্যবস্থা করে৷ সারা রাত ভর পার্টি করে। মধ্যে রাতে বাড়ি ফিরে আসে।
,
,
— নির্বণ আমি একটা ভয়ের আশংকা পাচ্ছি।
— কিসের ভয়৷
— আমি জানি স্বার্থ ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়৷ যদি তোর মা বাবার কোন ক্ষতি করে দেয়।
— না তেমনটা কিছুতেই করবে না৷ তার উদ্দেশ্য ছিলাম আমি৷ সে এখন জানে আমি মৃত৷ আমাদের যা করার এই দুই দিনের মাঝেই করতে হবে৷ স্বার্থের বিরুদ্ধে সকল প্রমাণ বের করে তাকে আইনের হাতে তুলে দিব৷
— সবই বুঝলাম। এখন তুই একটু ঘুমিয়ে নে। যা বাকি আছে কাল করব৷
এই দিকে নিয়তি একা একা রাতের তারার দিকে তাকিয়ে তাদের সাথে গল্প করছে। কিছুতেই নির্বণকে ছাড়া নিয়তির ঘুম আসছে না। নির্বণও বিছানার এক পাশ ওপাশ করছে। কিছুতেই নিজের মনকে শান্ত করতে পারছে না৷
অবশেষে নিয়তিকে ফোন করে বসে৷ নিয়তি তাড়াতাড়ি করে ফোন তুলে৷ কে ফোন দিয়েছে সেটা দেখার কোন টাইম নেই৷ ফোন রিসিভ করেই ” আপনি ঠিক আছেন? রাতে খেয়েছেন?” হাজারটা প্রশ্ন ছুঁড়ে মারল নির্বণের কাছে।
— নির্বণ বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে “একটু সময় দাও৷ আমি তোমাকে সব বলছি৷ আর এতগুলো প্রশ্ন কেউ এক সাথে করে। একটা একটা করে প্রশ্ন কর?”
— এখনো ঘুম আসেননি কেন?
— তোমাকে ছাড়া ঘুম আসছিল না৷ তুমি কেন ঘুম আসো নি?
— আমি আপনার জন্য ঘুমাতে পারি নি। আপনি খুব পঁচা আমাকে রেখে একা একা ঘুরতে চলে গেছেন৷
— প্লিজ রাগ করো না৷ আমি একটা কাজের জনয় এখানে এসেছি। আমি কি করে এখানে আসতে পারি আমার কিউট স্ত্রীকে রেখে৷
প্রত্যেকটা স্ত্রী তার স্বামীর কাছে নিজের প্রশংসা শুনলে সব কিছু ভুলে যায়। নিজেকে ধন্য মনে করে৷ স্ত্রীরা অল্পেই তিপ্তি পায়। কিন্তু আমাদের সমাজ মেয়েদের ছোট চোখে দেখে৷ তাদের এই অল্প চাওয়া পূরণ করতে পারে না।
— লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে হয়েছে আর কিছু বলতে হবে না৷ আমি জানি আমি কেমন?
— হুম আমিও জানে আমার বউটা খুব সুন্দর একটা মেয়ে। যাকে দেখলে চোখ জোড়া ভরে যায়।
— আপনি একটা পাগল সেটা জানেন৷
— হুম আমি পাগল৷ আমি তোমার প্রেমে পাগল। তোমার ভেজা চুলের পাগল। তোমার মুখের টুল পড়া মিষ্টি হাসির পাগল।
— আপনি যদি বিজনেস না করে কবিতা লিখতেন তাহলে এতদিন কবিতা লেখক হিসেবে সবাই আপনাকে চিনত?
— আমাকে কেউ চিনতে হবে না৷ শুধু আমার বউ আমাকে চিনলেই হলো।
— ডং বুইড়া এখন প্রেম জাগছে৷
— কি আমি এখন বুইড়া৷ এখন একটা ছেলের বাপ হতে পারলাম না তুমি আমাকে বুইটা বানিয়ে দিলে।
— হুম বানিয়ে দিয়েছি বেশ করেছি। আপনি বুইড়া, হুনুমান একজন মানুষ৷
— দোল উৎসবে দেখাবো এই বুইড়া কি করে তোমার।
— কচু করতে পারবেন৷ আমি আপনাকে ভয় পায় আমি হলাম এনএনএন৷
— এন এন এন মানে কি?
— প্রথম এনতে নির্বণ৷ দ্বিতীয় এনতে নিয়তি৷ তার পরেরটা বলবো না৷ সময় হলে বলবো
— তৃতীয় এন আমি বলছি৷ তৃতীয় এন আমার অংশ৷
— হুসস রোহিঙ্গা। তৃতীয় এন নাথিং নাথিং।
— কি আমি রোহিঙ্গা৷
–হুম৷ আপনি রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা না হলে আমাকে রেখে চলে যেতেন না৷
— চলে এসেছি বেশ করেছি আর ফিরে যাব না৷
— দোল উৎসবে আপনি যদি আমাকে প্রথম রং না লাগান তাহলে আমি আমি আমি
— আমি আমি কি করছো?
— আমি আপনার মাথার সব চুল তুলে টাককো বানিয়ে দিব৷
— হাহা
— “হাসেন কেন?” ক্ষেপে বলে
— তখন সবাই তোমাকে টাককো ওয়ালার বউ ডাকবে৷ বেশ হবে টাককো ওয়ালার বউ।
— আপনার সাথে আর কোন কথা নেই৷ এখনই ফোন রাখবেন। না হলে আপনার মাথা ফাটাবো।
— তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না৷
— ভালো বাসবো কেন? কে হন আপনি আমার৷
— আমি তোমার। থাক বলবো না যেদিন তারা হয়ে যাব সেদিন বুঝবে আমি মানে কি?
— এমন কথা আর কখনো মুখে আনবেন না৷
— ওঁকে কান ধরেছি আর আনবো না৷ তবে একটা কথা বল স্বার্থ কোথায়?
— কিছুক্ষণ আগে বাসায় ফিরেছে।
— দোল উৎসবের আগে স্বার্থের সামনে যাবে না৷
— আমি কথা দিচ্ছি দোল উৎসবের আগে আমি স্বার্থের সামনে যাব না৷ তবে যদি স্বার্থ,,
— স্বার্থ তোমাদের কিছু করতে পারবে না।
— স্বার্থ কি করবে আমাদের? সে কেন আমাদের ক্ষতি করবে?
নির্বণ জিহ্বায় কামড় দিয়ে একি বলে ফেললাম আমি৷ নিয়তিকে কিছুতেই জানতে দেওয়া যাবে না৷(মনে মনে)
— কি হলো কথা বলছেন না কেন?
— আসলে তোমাকে ছেড়ে আছি তাই চিন্তা হচ্ছে।
— এখন আর কোন চিন্তা নয়৷ একটু ঘুমিয়ে নেন৷ কাল কাজ করতে হবে আপনাকে। মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে তো?
— হুম। সাবধানে থাকবে৷
ফোন কেটে দিয়ে তারা দুই জন ঘুমিয়ে যায়।
চলবে,,