#সিনিয়র_লাভ_বার্ড(১৩)
#লেখিকা_এমএ_তাহিনা
শুক্রবার সন্ধ্যা! পূরবি ও কল্পের এনগেজমেন্ট। পূরবিকে পার্লারের মেয়েরা সাজাচ্ছে। কল্প অনেক আগেই রেডি হয়েছে। সে আপাতত পার্টিতে উপস্থিত আছে, চারিদিকে চোখ ভুলাচ্ছে বারবার সিড়ির দিকে তাকাচ্ছে। কবে পূরবিকে দেখতে পারবে কল্প? সব অতিথিরাও এসে পড়েছেন। কল্পের বাবা কল্পের মাকে তাড়া দিলেন পূরবিকে নিয়ে আসার জন্য। কথা না বাড়িয়ে পারু শেখ ও আনিকা খান সিড়ি দিয়ে উপরে পূরবি অবস্থানকৃত রুমে চলে গেলেন। কল্পের যেনো আর তর সইছে না। আচমকা লাইট বন্ধ হয়ে গেলো, কিছু সেকেন্ড পরে সিড়িতে দাড়িয়ে থাকা পূরবির উপরে লাইট পড়লো। সবার নজর পূরবির দিকেই। কল্পের উপরে লাইট ফেলা হলো, সিড়ির শেষ প্রান্তে আসতেই কল্প পূরবির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো, লাইট গুল হয়ে তাদের দুজনের উপরে পড়েছে। পূরবি ও কল্প এক দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। কল্প পড়েছে হোয়াইট শার্ট ও কালো কোর্ট, পূরবি পড়েছে হোয়াইট গ্রাউন, মাথায় দোপাট্টা লাগানো যা পিছনে পড়ে রয়েছে তাছাড়াও মাথায় প্রিন্সেস মুকুট লাগানো, যা আরো সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। কল্প খেয়াল করে দেখলো পূরবির চুল হাটুর নিচে, তার সিনিয়রের চুল যে এতো লম্বা সে কখনো ভাবতেই পারেনি। পূরবি সবসময় মস্তবড় একটা কোপা বেঁধে রাখে, যার কারণে কেউ কখনো তার চুল দেখতে পায়নি। অনুষ্ঠানে ইয়াং ছেলেরা পূরবির এমন লাস্যময়ী রূপ দেখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সবার একটাই কথা কল্প সৌভাগ্যবান। যারা পূরবি কল্পের তিন বছরের সিনিয়র বলে কূটনামি করবে ভাবছিলো সেই মহিলাগণও পূরবির রূপ দেখে অবাক।
পূরবির হাত ধরে এনগেজমেন্ট স্ট্রেজে গিয়ে বসলো কল্প, দুজন পাশাপাশি বসে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। কল্প ফিসফিস করে বলে- তোমার রুপ দেখে আমি ধন্য হয়ে গেলাম সিনিয়র, নিজেকে এলোমেলো লাগছে। পার্টির সবার প্রতি হিংসে হচ্ছে, সবাই তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। সেটা আমার সহ্য হচ্ছে না। তুমি কথা দাও তোমার খুলা চুল আমি ছাড়া যেন আর কেউ না দেখতে পারে। তবে ঘরের মধ্যে খুলা চুলে থাকতে পারো সমস্যা নেই। কিন্তু কোনো অনুষ্ঠানে খুলা চুলে আসতে পারবেনা। এমন কি আমাদের বিয়ে বা গায়ে হলুদেও না। কথা দাও সিনিয়র!
পূরবি এতোক্ষণ খুব মনোযোগ দিয়ে কল্পের কথা শুনেছিলো, কল্পের প্রশ্নে হাসি মুখে উত্তর দিলো- আমি এতোদিন যখন অন্য কাউকে নিজের খুলা চুল দেখাইনি, তেমনি দেখাবোও না। আজ পার্লারের মেয়েরা বলছিলো খুলা চুলে সুন্দর লাগবে তাই বাধিনি। আমি চাই আমার সবকিছু তোমার জন্য হোক। তুমি বলেছো আমি শুনেছি, আর কিছু বলতে হবেনা তোমায়। সিনিয়র পূরবি তার জুনিয়র কল্পের কথা কখনো ফেলতে পারবে না, জুনিয়র কল্পের একটু কষ্ট অনুভব হতে পারে এমন কাজ পূরবি কখনো করবে না।
কল্প প্রাপ্তির হাসি হাসে, তা দেখে পূরবি নিজেও হেসে কল্পের হাত জড়িয়ে ধরে বসে রয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাইক হাতে নিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হলো, সব এনাউন্সমেন্ট শেষ করে পারু শেখ কল্প ও পূরবিকে আংটি পড়াতে বললেন। পারু শেখ কল্পকে ধরে দাড় করালেন, আনিকা খান পূরবিকে ধরে কল্পের মুখোমুখি দাড় করালেন। ফাইয়াজ শেখও আজমিন খান দুইজনের দিকে দুইটা বক্স বাড়িয়ে দিলেন। কল্প বক্সটা খুলে আংটি হাতে নেয়, মূহুর্তের মধ্যেই সবার মধ্যে কানাঘুঁষা শুরু হয়ে যায়, এতো টাকা পয়সা থাকা সত্যেও কল্প কেনো নিজের হবু বউকে কমদামী ছোট ডায়মন্ডের রিং পড়াচ্ছে? কারো কথায় কান না দিয়ে কল্প পূরবির হাতে রিং পড়িয়ে দেয়, পূরবি ও বক্স খুলে সোনার আংটি বের করে কল্পকে পড়িয়ে দেয়।
মাইক হাতে নিয়ে রূপক বলে- এটেনশন এটেনশন গাইস, আমাদের আপনাদের সবার আদরের কল্প নিজের টাকায় তার হবু বউয়ের এনগেজমেন্ট রিং কিনেছে, পূরবিও নিজের টাকায় কল্পের জন্য এনগেজমেন্ট রিং কিনেছে। তারা তাদের বাবা বা মায়ের অথবা বন্ধু বান্ধবের কোনো টাকা নেয় নি। ওদের ইচ্ছে ছিলো প্রথম শুরুটা নিজেদের টাকার কিছু দিয়ে শুরু করতে। আর আমি এগুলো কিভাবে জানলাম? আমাকে আঙ্কেল বলেছেন মানে কল্পের বাবা। সবাই কল্প ও পূরবির জন্য দোয়া করবেন। এখন আপনারা খাওয়া দাওয়ায় মন দিন। রাত তো অনেক হচ্ছে সবাইকে তো নিজ নিজ বাড়িতে যেতে হবে তাইনা? ধন্যবাদ।
কল্প অবাক হয়ে রূপকের দিকে তাকিয়ে আছে, রূপক কল্পের পাশে বসে বলে- কি অবাক হলে? আরে এতে অবাক হওয়ার কি আছে? আমি তো তোমার বন্ধুর মতোই। তোমাদের দুজনকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। এগিয়ে যাও তোমরা।
– সিনিয়র ভাবি!
সূর্যের ডাকে মাথা তুলে সামনে তাকালো পূরবি, সূর্য বলে- সিনিয়র ভাবি, তোমার কোনো ফ্রেন্ডস আসে নি পার্টিতে?
কল্প ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে- সেটা জেনে তুই কি করবি?
সূর্য নাক মুখ কুচকে বলে- কেনো তুই জানিস না, আমি সিনিয়র ভাবিকে বলেছিলাম তার কোনো ফ্রেন্ডের সাথে সেটিং করিয়ে দিতে। আমিও তোর মতো সিনিয়র বিয়ে করবো।
পূরবি বলে- ফ্রেন্ডের মতোই শুভাকাঙ্ক্ষী আছে। রুশা, জে..
পূরবিকে আর বলতে না দিয়ে সূর্য বলে- রুশা! নাইস নেইম, এর সাথে সেটিং করিয়ে দাও।
কল্পের পাশে বসা রূপক ফুঁসে উঠে বলে- খবরদার আমার সিনিয়র রুশা জানের দিকে হাত বাড়াবে না, ও শুধু আমার। আমার সিনিয়র বউ।
কপাল চাপড়ে সূূর্য বলে- সিঙ্গেল কেউ নেই সিনিয়র ভাবি?
পূরবি স্মিত হেসে বলে- আছেতো, তবে ওদের কেউ পার্টিতে আসেনি, তবে বিয়েতে আসবে। তুমি চিন্তা করোনা। তোমাকে সিনিয়র বউ আমি এমনিতেই খুজে দিবো, হাজার হোক আমার ওয়ান এন্ড অনলি ‘জুনিয়র দেবর বলে কথা!
ও,, তাংকু তাংকু সিনিয়র ভাবি।
সূর্যের বাচ্চামো দেখে সবাই হেসে দিলো, ওদের হাসতে দেখে সূর্যও হাসতে লাগলো।
আনিকা খান এসে পূরবিকে দাড় করালেন, কল্পের দিকে তাকিয়ে বলেন- তোমার বন্ধুদের নিয়েও আসো।
সবাই আনিকা খানের পিছু পিছু যায়, আনিকা খান পূরবিকে একটা চেয়ার টেনে বসিয়ে দিলেন। কল্পকে পূবির পাশের চেয়ারে বসতে বললেন। কল্প বিনাবাক্যে বসে গেলো, সূর্য ও রূপককে কল্পের পাশের দুইটাতে বসতে বললেন। সবার প্লেটে খাবার দিলেন। সবাই খেতে শুরু করলো। কিন্তু পূরবি খেতে পারছে না, অসস্তি হচ্ছে তার। হাতের বেসলাইট বারবার সামনে চলে আসছে। কল্প এতোক্ষণ পূরবিকে খেয়াল করছিলো, নিজের প্লেটের খাবার হাতে নিয়ে পূরবির মুখের সামনে ধরলো, পূরবি কোনো কথা না বলেই মুচকি হেসে খেয়ে নিলো। কল্প নিজের প্লেটের সব খাবার পূরবিকে খাইয়েছে। পূরবির প্লেটের খাবার নিজে খাচ্ছে এখন। খাওয়া শেষ হলেও পূরবি বসে আছে। এতোক্ষণ এসব দেখছিলো আর মিটিমিটি করে হাসছিলো সূর্য ও রূপক। হঠাৎ দুজন সমস্বরে বলে উঠে- আজ একটা সিনিয়র লাভ বার্ড নেই বলে!
কল্প খেতে খেতেই উত্তর দিলো- পেয়ে যাবি, আমার সিনিয়র বউতো তোদের বলেছেই খুজে দিবে, নো টেনশন।
সূর্য পূরবির দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে- সিনিয়র ভাবি!
পূরবি সূর্যের দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকায়। সূর্য আবারো দাঁত কেলিয়ে বলে- সিনিয়র ভাবিহহহহহহহহ,,,,
এবার রূপকও তাল মিলিয়ে বলে- পূরবিহহহহহ থুরি সিনিয়র ভাবিহহহহহহহহ,,,,,,
এবার রূপক ও সূর্য একসাথে বলে- সিনিয়র ভাবিহহহহহ,,,, বলেই দুইজন হাসতে শুরু করে। পূরবি এতোক্ষণ লজ্জা না পেলেও এবার পাচ্ছে,সে বুঝতে পারছে এরা তার সাথে মজা করছে। কল্পের খাওয়া শেষ ততোক্ষণে সূর্য ও রূপকের দিকে তাকিয়ে বলে- খবরদার আমার বউকে ডিস্টার্ব করবি না, জানে মেরে দিবো একদম।
সূর্য ও রূপক কিছু না বলে আবারো হাসতে শুরু করে, যা দেখে পূরবি লজ্জা পায়। কল্পও হেসে পূরবির একহাত জড়িয়ে ধরে তাকিয়ে থাকে।
চলবে,,ইনশাআল্লাহ,,
#সিনিয়র_লাভ_বার্ড(১৪)
#লেখিকা_এমএ_তাহিনা
চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে, পাশের কোনো মসজিদ থেকে মাগরিবের আযান ভেসে আসছে। রূপক ও রূশা প্রায় আধাঘন্টা ধরে গাছের পিছনে লুকিয়ে আছে, কিন্তু আজ কারো আসার খবর নেই।
অতিষ্ঠ হয়ে রূপক বলে- আজ কি এরা কেউ আসবে না? আর কতো অপেক্ষা করবো?
রুক্ষ গলায় রুশা বলে- এতো অধৈর্য হলে চলবে? ওরা এসে পড়বে। ওরা না আসা পর্যন্ত আমাদের এখানেই অপেক্ষা করতে হবে। আর আমার শরীরে মশা উড়ছে কেনো, আপনি মশা মারতে মনোযোগ দিন। ওরা আসলে আমি আপনাকে বলবো।
রুশার কথা শুনে রূপক আবারো মশা তাড়াতে থাকে। রুশা আবারো রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কারো হেঁটে আসার আওয়াজ কানে আসে রুশার। ফিসফিস করে রূপককে বলে- ওরা এসে গেছে, তাড়াতাড়ি লুকাতে হবে। রুশার বলতে দেরি রূপকের লুকাতে দেরি নেই। রুশার হাত টেনে ধরে বড় একটা গাছের পিছনে গিয়ে লুকায়, আগে যেটার পিছনে ছিলো ওটার পিছনে কেউ তাকালে ধরা পড়ার ভয় ছিলো।
একদল ছেলে মেয়ে রাস্তায় বসে নেশায় মত্ত হয়েছে, একজন আরেকজনকে কি কি যেনো বলছে আর হাসছে। এসব দেখে নাক মুখ কুচকে যায় রুশার, মেয়েরা এতো বেহায়া হয় কি করে? অবশ্য এসব মেয়েদের জন্য এমন করা কমন। এরা বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া সন্তান। রুশা ও রূপক মুখের ভিতরে গলার মাঝামাঝি একটি প্লাস্টিকের মাক্স পড়ে নেয়। এটা পড়ার কারণ হলো এসব নেশাদ্রব্য যদি তাদের সেবন করতে হয় তাহলে যেনো ভিতরে না যায়, পরবর্তীতে তারা এটা বের করে সব ফেলে দিবে।
রূপক ও রূশা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে গাছের পিছন থেকে বের হয়ে আসে। নেশায় মত্ত থাকা ছেলে মেয়েদের দিকে এগিয়ে যায়।
নিজেদের আশেপাশে অন্য কারো অস্তিত্ব অনুভব করতেই ছেলে মেয়ে গুলো চারিদিকে চোখ ভুলায়, রুশা ও রূপককে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে তারা ভয় পেয়ে যায়। পাছে যদি এরা আইনের কোনো লোক হয়? তাদের যদি ধরে নিয়ে যায়? যে ছেলেটি প্রথম ওদের দেখেছে সে বাকিদের বলে এসব। সবাই ভয় পেয়ে দৌড়ানোর প্রস্তুতি নেয়। ওরা দৌড় দিবে তার আগেই রুশা ও রূপক ওদের সামনে এসে দাড়ায়। ছেলে মেয়ে গুলো ভয় পেয়ে রূপক ও রুশার দিকে তাকিয়ে আছে। গলা ঝেড়ে রূপক বলে- ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই, আমরা তোমাদের শত্রু নই,আমরা তোমাদের বন্ধু। আমি রূপক আর ও হলো আমার বান্ধবী রুশা। তোমারা কে?
একে একে ছেলে মেয়ে গুলো নিজের পরিচয় দিতে শুরু করে। একজন বলে- আমি নোমান,,
আরেকজন বলে- আমি কাজল
আমি- সাকিব,
আমি- নোহাশ,
আমি- রিনিয়া।
রূপক মুচকি হেসে বলে- তোমাদের সবার নামই সুন্দর। আমাদের বন্ধু হবে তোমরা?
ছেলেমেয়ে গুলো একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে, তারপর রূপকের দিকে তাকিয়ে কাজল বলে- ওহ সিওর, কেনো নয়। আমরা আজ থেকে বন্ধু।
সাকিব রুশার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলে- তুমি কিন্তু দেখতে খুবই সে*ক্সি ও হ*ট, আমার বে*ড পার্ট*নার হবে রুশা ডার্লিং?
কটমট করে রুশা সাকিবের দিকে তাকিয়ে আছে, যেনো চোখ দিয়েই ভস্ম করে দিবে। এরা কতো বাজে হতে পারে তার ধারণা এখনই পেয়ে গেলো সে। রা*গে ঘৃনা*য় রুশার চোখে পানি টলমল করতে লাগলো।
এদিকে রূপকের চোখ দিয়ে যেনো আগুন বের হচ্ছে, তার সামনে তারই ভালোবাসার মানুষকে কেউ এসব বলছে অথচ সে কিছুই করতে পারছে না। মনে মনে রূপক কিছু একটা ভেবেই বাঁকা হাসে। তারপর সাকিবের কাঁধ জড়িয়ে ধরে বলে- কেনো নয় ম্যান? আমরা সবাই এনজয় করবো, তার আগে চলো সবাই ড্রাগস সেবন করি। আমরা তো তোমাদের বন্ধু আমাদের ভাগ দিবে না?
নোহাশ বলে- কেনো নয়, তবে আজ আমরা তোমাদের দিবো। কিন্তু এরপর থেকে তোমরা নিজেরা কিনে নিবে।
মাথা নাড়িয়ে রূপক বলে- অবশ্যই।
কাজল মেয়েটি রূপকের গালে এক আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে- ও বেবি তুমি দেখতে যা না, আমার তো এখানেই সব শুরু করতে ইচ্ছে করছে। তবে ব্যাপার না আমরা খুব শীগ্রই কাজ শুরু করবো। মজা করবো, তাই না বেবি?
ঘৃণায় রূপকের বমি পেয়ে গেলো, কিন্তু এখন কিছুতেই বমি করা যাবেনা, এদের সাথে তাল মিলাতে হবে। রূপক কিছু না বলে শুধু একটু হাসলো। এতে যেনো মেয়েটি প্রশ্রয় পেলো, ঠোঁট ঘোল করে রূপকের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসে, তৎক্ষনাৎ রূপক তার ঠোঁট ঢেকে ফেলে, যার কারণে মেয়েটির ঠোঁট রূপকের হাতের একটা আঙ্গুল স্পর্শ করে। মেয়েটি যেনো এমনটি আশা করেনি, ন্যাকামি করে বলে- ও বেবি এটা কি করলে?
রূপক তার আঙ্গুল ঘষতে ঘষতে বললো- এখন কিছু হবেনা, আগে আমরা ড্রাগস সেবন করবো, নেশা করে তারপর সব করবো। এতে মজা পাবো বেশি।
মেয়েটি শরীর দুলিয়ে হেসে বলে- ওহহহ বেবি ইউ আর জিনিয়াস, চলো আমরা তাড়াতাড়ি এগুলো সেবন করবো। আমার দেরি সহ্য হচ্ছে না।
রুশার চোখে বিস্ময়, এই ছেলে এতো অভিনয় করতে পারে কি করে? দেখে কেউ বুঝতে পারবে না। রূপক মেয়েটির থেকে সরে এসে রুশার হাত ধরে, রুশার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। তারাও ড্রাগস খেতে থাকে, তবে সেটা তাদের ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেনা, শুধু জিহ্বাতেই লেগে থাকবে। এতে একটু হলেও নেশা হবে তাদের, কিন্তু কিছু করার নেই। এর এন্টিবায়োটিক আছে, কাজ শেষ করেই সেটা নিবে তারা।
খাওয়ার পর ছেলে মেয়েগুলো একে অপরের সাথে গা ঘেঁষে কথা বলতে থাকে, একটা মেয়ে আরেকটা ছেলের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে থাকে, যা দেখে রূপক রুশাকে নিয়ে উঠে দাড়ায়, তারপর ওদের দিকে তাকিয়ে বলে- আজ আমরা তাহলে যাই, কাল আবারো দেখা হবে বাই গাইস। আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রূপক রুশার হাত ধরে গটগট করে প্রস্থান করে। অন্য রাস্তার মোড়ে পূরবিসহ ওর টিমের অফিসার রা দাড়িয়ে ছিলো গাড়ি নিয়ে, রূপক ও রুশাকে আসতে দেখেই পূরবি নিয়াজকে বলে- নিয়াজ পানির বোতল বের করুন তাড়াতাড়ি, জেসি এন্টিবায়োটিক বের করো কুইক।
রূপক পূরবিদের কাছে এসে দাড়ায়, রূশার হাত ছেড়ে দিয়ে মুখের ভেতর থেকে মাক্স বের করে, তারপর হড়বড়িয়ে বমি করে দেয়৷ রুশাও মাক্স খুলে হড়বড়িয়ে বমি করতে শুরু করে। নিয়াজ রূপককে ধরে পানি খাওয়ায়, তারপর এন্টিবায়োটিক খাইয়ে দেয়, যা ওদের মুখ থেকে ড্রাগসের স্বাদ বের করে দিবে। জেসিও রুশাকে পানি খাইয়ে এন্টিবায়োটিক খাইয়ে দেয়।
রূপক একটু জিড়িয়ে নিয়ে নিয়াজকে বলে হাতে পানি ঢালো। নিয়াজ রূপকের কথা মতো পানি ঢালতে শুরু করে, রূপক হাত ঘষতে ঘষতে লাল করে দিচ্ছে, চামড়া উঠে যাবে অবস্থা, বিশেষ করে ওই আঙুলের অবস্থাটা খারাপ চামড়া তুলে তারপরই থেমেছে। রুশা অবাক হয়ে রূপকের দিকে তাকিয়ে আছে, ছেলেটা এমন পাগলামিকে করছে কেনো? পরক্ষণেই মনে হলো ওই মেয়েটি রূপকের হাতে ঠোঁট লাগিয়েছিলো। সবকিছু শেষ করে সবাই একটা রেস্টুরেন্টে যায়, সেখানে খাওয়া দাওয়া করে যে যার বাসার দিকে চলে যায়, রুশা রূপকের বাইকে করে যাচ্ছে, হঠাৎ একটা নির্জন জায়গায় রূপক বাইক থামিয়ে নেমে দাড়ায়, রুশা অবাক হয়ে নিজেও নেমে দাড়ায়। রূপক রুশার দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে – এখানে কয়েকটা চু*মু খাও তো রুশা!
রুশার মুখ বিস্ময়ে হা হয়ে যায়, রুশার মুখ দেখে রূপক বলে- যদি চু*মু না দাও তো হাতের আঙুলে ব্যান্ডেজ করবো না।
রুশা কি করবে ভেবো পেলো না, চারিদিকে একবার চোখ ভুলিয়ে ফট করে- রূপকের আঙ্গুলে বিরতিহীন ভাবে দুটো চু*মু খায়। লজ্জায় রুশা পিছু ফিরে যায়, তা দেখে রূপক মুচকি হেসে বাইক স্টার্ট দিয়ে বলে- তাড়াতাড়ি উঠে বসো, দেরি হয়ে যাচ্ছে। রুশা বিনাবাক্যে উঠে বসে, আবারো বাইক চলতে শুরু করে রাতের নিস্তব্ধ রাস্তা দিয়ে।
চলবে,,ইনশাআল্লাহ