সিনিয়র লাভ বার্ড পর্ব-১১+১২

0
274

#সিনিয়র_লাভ_বার্ড(১১)
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা

সেলাইন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরে রাহেলা বেগমের জ্ঞান ফিরে। মা ছেলের সে কি কান্না, রাহেলা বেগম হয়তো কখনো ভাবতেও পারেন নি আরেক ছেলেকে ফিরে পাবেন। রাহেলা বেগমকে ঘুমের ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে, তাই তিনি ঘুমাচ্ছেন। জেসিকে রাহেলা বেগমের খেয়াল রাখতে বলে, রূপককে নিয়ে বেরিয়ে যায় বাকিরা। উদ্দেশ্য রাইসুর ও রূপককে মুখোমুখি করানো। রূপকও ভীষণ এক্সাইটেড, নিজের ভাইকে দেখবে, আবার নিজের চেহারার মতো দেখতে। আধাঘন্টার মধ্যে গোয়েন্দা অফিসে পৌছায় সবাই, রাইসুরসহ বাকিদেরকে রিমান্ডে রাখা হয়েছে। আর কিছু সময় তারপরই নিজের চেহারার মতো আরেকজনকে দেখবে রূপক, ভাবতেই রূপকের কেমন এডভেঞ্চার লাগছে। নিয়াজ ও সিয়াম রাইসুরকে আনতে গেলো। রূপককে একটি চেয়ারে বসানো হয়েছে, সামনাসামনি আরেকটি চেয়ার যেটাতে রাইসুরকে বসানো হবে।

অন্ধকার কারাগারে শুয়ে আছে রাইসুর, নিজের প্রতি ঘৃণা জন্মেছে তার। নিজেকে কুলাঙ্গার সন্তান মনে হচ্ছে, সত্যিই তো সে কুলাঙ্গার! নেশাদ্রব্যের জন্য মায়ের গায়ে পর্যন্ত হাত তুলতে বাঁধ রাখেনি সে। অথচ কয়েকমাস আগেই এই রাইসুর নিজের হাতে রান্না করে মাকে খাওয়াতো, মায়ের কাপড় ধুয়ে দিতো। মাঝে মধ্যে টিউশনির টাকার থেকে যেগুলো খরচ করে বেঁচে যেতো সেই টাকাগুলো দিয়ে মাকে নিয়ে ফুচকা খেতো। আশেপাশের মানুষ এসব দেখে চোখ জোড়াতো আর বলতো ‘ এরকম সন্তান যেনো প্রতিটি ঘরে জন্মায়! আজ লোকে থু থু দেয়, সবাই মনে মনে রাইসুরের মৃত্যু কামনা করে। কিন্তু সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলেও মায়ের রাজপুত্র রাইসুর জানে ‘ তার মা কখনো তাকে অভিশাপ দিবেনা, তাকে ছেড়ে যাবেনা। মায়েরা বুঝি এমনই হয়? সন্তান শত অন্যায় করলেও ক্ষমা করে দেয়।

-‘রাইসুর তোমার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে।

মুখ তুলে তাকায় রাইসুর, তার সাথে দেখা করার মতো শুধু তার মা’ই আছে। তবে কি তার মা এলেন? রাইসুরের বুকটা হাহাকার করে উঠলো, তার মনে হলো কতোদিন তার মাকে দুচোখ ভরে দেখা হয়নি, অথচ কয়েকঘন্টা আগেও তিনি রাইসুরের সাথে দেখা করে গেছেন। কিন্তু রাইসুর অপরাধবোধ, লজ্জায় মায়ের দিকে চোখ তুলেও তাকায়নি।

রাইসুরের ভাবনার মাঝেই সিয়াম গিয়ে হাতকড়া পড়িয়ে দিলো, নিয়াজ ও সিয়াম দুইদিক থেকে রাইসুরকে ধরে বের করে আনলো। রাইসুরকে এনে বসানো হলো রূপকের সামনের চেয়ারে, রূপক অপলক দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। রাইসুর এখনো মাথা তুলে তাকায় নি, সে ভেবেছে তার মা দেখা করতে এসেছেন তাই মাথা নিচু করে রেখেছে।

-‘ভাই’

চোখ তুলে সামনে বসে থাকা ব্যক্তির দিকে তাকালো রাইসুর। কয়েক সেকেন্ড এভাবেই তাকিয়ে থাকলো, আস্তে আস্তে রাইসুরের মুখে হাসি ফুটে উঠে।

-‘ভাই’

আবারো রূপকের সেই সম্মোধন, যা রাইসুরের হাসিকে আরো গাঢ় করলো। রূপক দুইহাত দিয়ে ঝাপটে ধরে রাইসুরকে, কিন্তু দূর্ভাগা রাইসুর হাতকড়া পড়ানো হাতের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মলিন হাসলো, চাইলেও ভাইয়ের পিঠে স্নেহের হাত রাখতে পারলো না।
রাইসুর নিজের কাঁধে তরল জাতীয় কিছু অনুভব করলো, ঘাড় নড়াতে লাগলো বারবার। চোখের পানি মুছে রাইসুরকে ছেড়ে দেয় রূপক, আবারো চেয়ারে বসে।

-তুমি আমাকে দেখে অবাক হওনি ভাই?

রূপকের প্রশ্নে কিঞ্চিত হেসে রাইসুর বলে- অবাক হয়েছি, তবে কিছুটা। আমি তোর সম্পর্কে আগে থেকেই জানতাম, মা আমাকে বুঝতে শিখার পরই তোর কথা বলেছিলেন, কিভাবে তোর থেকে আমরা আলাদা হলাম সব। আমি তোকে ভার্সিটির পাশেও কয়েকবার দেখেছি, ভাবছিলাম তোর পিছু নিবো। তোকে সব বলে মায়ের কাছে নিয়ে আসবো, কিন্তু!

-কিন্তু?

মলিন হেসে রাইসুর বলে- তার আগেই তো আমি খারাপ হয়ে গেলাম, বাজে আড্ডা,বাজে বন্ধু, বাজে নেশায় জড়িয়ে গেলাম।

রূপক রাইসুরের দুই কাধে হাত রেখে বললো- তুমি চিন্তা করো না ভাই, খুব শীগ্রই তোমাকে মুক্ত করে নিয়ে যাবো। যে বা যারা তোমাকে এই পথে নিয়ে এসেছিলো, এই সবকিছুর মোলে যারা, তাদের কাউকে আমি ছাড়বো না। আমি কাল থেকে এই অফিসারদের কথা মতো কাজ করা শুরু করবো। আসল অপরাধীকে ধরিয়ে দিয়ে তোমাকে নিয়ে যাবো মায়ের কাছে। আমি তুমি মা বাবা মিলে খুব সুন্দর একটা পরিবার হবো। বাবা তোমাদের কথা জানতে পারলে কতো যে খুশি হবে তা বলার মতো না। কিন্তু আমি বাবাকে এখন কিছুই বলবো না, আগে তোমাকে মুক্ত করবো তারপর বাবাকে জানাবো। ওই রামিম হাওলাদারকে ( রূপকের দাদু) ও আমি ছাড়বো না, ওই ব্যক্তিটার জন্য আজ আমরা আলাদা, যতি সেদিন মাকে বাড়ি থেকে বের করে না দিতো তাহলে আজ আমরা সুখী পরিবার হতাম। না তুমি এসব বাজে নেশায় জড়াতে না আমাদের মাকে এতো কষ্ট সহ্য করতে হতো।

চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে রাইসুরের, কথা বলতে বলতে রূপকের ও চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। ভাইয়ে ভাইয়ে সন্ধি হচ্ছে, তা দেখছে গোটা গোয়েন্দা অফিসে উপস্থিত সবাই।

.
রূপক আবারো তার মায়ের কাছে চলে গেছে, মাকে ছাড়া এখন সে থাকতেই পারবে না। যাওয়ার আগে পূরবি বলেছে- ভার্সিটির কেউ যেনো তার আসল পরিচয় না জানে,
রূপক নিশ্চিত করেছে, সে কখনোই পূরবির আসল পরিচয় কাউকে বলবে না।

.
রাত আনুমানিক নয়টার কাছাকাছি হবে, সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছে পূরবির। লেপটপ বন্ধ করে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো, তখনই তার ফোন বিকট শব্দে বেজে উঠে। আকস্মিক শব্দের কারণে পূরবি ভড়কে যায়, ঘুম ছুটে পালায় তার। ফোন হাতে নিয়ে স্কিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

– হ্যালো!

ওপাশ থেকে কোনো উত্তর এলোনা, শুধু শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শুনা যাচ্ছে। পূরবি কিঞ্চিত হেসে বললো- কথা বলবে না?

ওপাশ থেকে অস্পষ্ট ভাবে কারো ফুঁপানোর আওয়াজ আসছে, ব্যস্ত হয়ে পূরবি জিজ্ঞেস করে- কি হয়েছে কল্প? কাঁদছো কেনো?

– তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না সিনিয়র, একটুও না।

-কে বলেছে আমি তোমাকে ভালোবাসি না?

– তুমি যদি আমাকে ভালোই বাসতে তবে কখনো আমাকে অবহেলা করতে পারতে না, আমার কল রিসিভ করতে।

– স্যরি কল্প, তখন আমি জরুরি কাজে ছিলাম। তখন ফোন রিসিভ করার অবস্থায় ছিলাম না আমি।

– কাজ! আমার বেলাতেই তোমার সব কাজের কথা। বাকি সবার বেলায় ঠিকই আছে।

– কি বলতে চাইছো তুমি কল্প?

– কেনো! তুমি আজ রূপকের সাথে ঘুরাঘুরি করো নি?

– আমি রূপকের সাথে ঘুরাঘুরি করেছি? হোয়াট কি বলছো তুমি এসব?

– আমি বলছিনা, তবে বলতে হচ্ছে।

– কি দেখে তুমি এমন কথা বলছো কল্প?

– রূপকের সাথে তোমার আজকের ছবি দেখে, রূপকের ফেসবুক আইডিতে গিয়ে দেখো। তোমার আর ওর কি সুন্দর একটা ফটো পোস্ট করেছে। ক্যাপশন ছিলো- মনের মানুষ! বলেই তাছিল্য হাসলো কল্প।

কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে যায় পূরবি, কল্পের ফোন কেটে ফেসবুকে ডুকে রূপকের আইডি সার্চ করে, কল্প যা বলেছে তাই ঠিক। কিন্তু রূপক কখন তার সাথে ছবি তুললো? ছবিতে দেখা যাচ্ছে পূরবি আরেক দিকে তাকিয়ে আছে, পূরবির মুখের একপাশ দেখা যাচ্ছে শুধু, আর রূপক তার দিকে তাকিয়ে একটা হাত উপরের দিকে, মানে রূপক পূরবিকে না বলে সেলফি তুলেছে। রাগে শিরশির করতে থাকে পূরবির শরীর। তার শুধু বারবার কল্পের ফুঁপানোর শব্দ কানে বাজছে।

লেপটপ নিয়ে কল্পকে ভিডিও কল করে পূরবি, কয়েক সেকেন্ডেই কল্প রিসিভ করে। স্কিনে ভেসে উঠে কল্পের লাল হয়ে যাওয়া বিষন্ন মুখ। যা দেখে পূরবির বুক ধক করে উঠে। কল্প মলিন হেসে পূরবির দিকে তাকিয়ে আছে। যা দেখে পূরবির বুক কেঁপে উঠে, এই গুলোমুলো বাচ্চার মতো দেখতে কল্পকে সে ভীষণ ভালোবাসে, শুধু প্রকাশ করেনা। কল্পকে দেখে পূরবির কান্না পাচ্ছে, নিজেকে সামলিয়ে পূরবি বলে- বোকাদের মতো কিছু না বুঝেই কান্না করো কেনো? ওই রূপক আমার সাথে ছবি কিভাবে তুলেছে আমি জানিনা, তুমি ছবিতে দেখোনি আমি অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলাম?

– দেখেছি,

তাহলে? তুমি শুধু শুধু কান্না করেছো কেনো? আর কখনো যেনো অহেতুক কোনো বিষয় নিয়ে মন খারাপ বা কান্না করতে না দেখি, তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা। তুমি আমায় বিশ্বাস করো তো কল্প?

– নিজের চেয়েও বেশি।

– সেই বিশ্বাসটাই রেখো, আমি শুধু তোমার। পূরবি শুধু তার জুনিয়র রাজকুমারের, আর কারো না। যাও ঘুমিয়ে পড়ো পড়াশোনায় মন দাও। কোনো বেকার ছেলেকে আমি বিয়ে করবো না, পড়াশোনা শেষ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করো, আমার দায়িত্ব নিতে পারবে যেদিন আমি বুঝবো সেদিনই তোমাকে বিয়ে করবো। আমি জানি তোমার বাবার টাকা আছে, কিন্তু আমি সেটা চাই না। আমি আমার স্বামীর টাকায় খাবো পড়বো। সব আজাইরা চিন্তা মাথা থেকে বের করে ফেলে দাও। গুড নাইট,

কল্পের মুখে প্রাণ খুলা হাসি ফুটে উঠে, যা দেখে পূরবিও হাসে।

চলবে, ইনশাআল্লাহ,,

#সিনিয়র_লাভ_বার্ড(১২)
#এমএ_তাহিনা

সকাল সাড়ে নয়টার কাছাকাছি সময়, বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসের মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো রূপক। সবাই মূলত পূরবিকে নিয়ে আলোচনা করছে, রূপকের পোস্ট টা সবাই দেখছে। তা নিয়ে রূপককে কতোশতো কথা বলছে। একপর্যায়ে রূপকের বন্ধু বাদল বললো- আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না রূপক, তুই পূরবির সাথে রিলেশনে আছিস!

বাদলের পিঠে ঠাস করে একটা মেরে রূপক বলে- কখন বললাম আমরা রিলেশনে আছি?

পিঠে হাত ভুলাতে ভুলাতে বাদল উত্তর দেয়- তাহলে ফেসবুকে পোস্ট দিলি কেনো?

বাঁকা হাসে রূপক, রূপকের হাসি দেখে সবাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রয়। শান সন্দেহ দৃষ্টি তাক করে বলে- সত্যি করে বলতো, ব্যাপারটা কি?

এবার শব্দ করে হাসে রূপক, হাসি থামিয়ে বলে- কাউকে জেলাসি ফিল করানোর জন্য ওই পোস্টটা করেছিলাম। পূরবিকে কখনো আমি সেই নজরে দেখিনি, তবে ওর প্রথম ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলাম আমার ওকে লাগবে। কিন্তু আসলে তো পূরবিকে আমি কখনো সেই নজরে দেখিইনি।

সন্দেহটা আরো প্রবল হয় শানের, সেভাবেই তাকিয়ে বলে- তুই কি কারো প্রেমে পড়েছিস?

সোজা হয়ে বসে রূপক বলে- তোর কেনো মনে হচ্ছে আমি কারো প্রেমে পড়েছি?

না হলে কাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য তুই ফেসবুকে পোস্ট করেছিস?(শান)

ঠোঁট কামড়ে হেসে রূপক বলে- প্রেমে পড়িনি পড়বো পড়বো ভাব। ধরেনে দুইজনকে জেলাস করানোর জন্য পোস্ট টা করা।

দুইজনটা কে কে?(বাদল)

একটা ছেলে আর একটা মেয়ে, বলেই হাসলো রূপক।

শানের কাঁধে মাথা রেখে বাদল আহাজারি করে বলে- হায় হায়, শেষ পর্যন্ত আমাদের বন্ধু কোনো ছেলের প্রেমে পড়লো, যে ওই ছেলেকে জেলাস ফিল করানোর জন্য অন্য মেয়ের সাথে ফেসবুকে পোস্ট দিলো! সত্যি করে বলতো রূপক তুই কি গ… না মানে এভাবে তাকাস কেন? আমি তো সন্দেহ হলো তাই বললাম।

ব্যাগ নিয়ে বাদলের মাথায় এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করলো রূপক, রাগে সহ্য হচ্ছে না তার। এরকম বন্ধু থাকলে কি শত্রুর প্রয়োজন হয়? সবকটা হারামির দল।

-‘মিস্টার রূপক?

কারো সম্মোধনে থেমে যায় রূপক, রূপকসহ সবার দৃষ্টি সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটির দিকে।

কলার ঝেড়ে রূপক বলে- ইয়েস মিস্টার কল্প?

কল্প মুচকি হেসে একটা কার্ড বাড়িয়ে দেয় রূপকের দিকে, ভ্রু কুঁচকে যায় রূপকের জিজ্ঞেস করে- কিসের কার্ড এটা মিস্টার কল্প?

ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে কল্প বলে- খুলেই দেখুন না হয় কিসের কার্ড।

রূপক দেরি না করে কার্ড খুলে, পড়া শেষ করে রূপকের মুখে হাসি ফুটে উঠে। রূপক বুঝতে পারলো কল্প তাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য কার্ডটা দিয়েছে।

কি হলো মিস্টার রূপক কিছু তো বলুন। আসবেন তো আগামীকাল? আমার আর পূরবির এনগেজমেন্টে! বলে কল্প।

নিশ্চয়ই কেন নয়? আমি কেনো আমার পুরো ফ্রেন্ড সার্কেল আসবো একসাথে। শতো হোক আমার ওয়ান এন্ড অনলি ক্রাশের এনগেজমেন্ট বলে কথা। বলে রূপক।

চোখ মুখ শক্ত করে কল্প বলে- তো সেই কথাই রইলো, আমি কিন্তু কাল আপনার জন্য অপেক্ষা করবো। বলেই কল্প চলে গেলো।

কিছুক্ষণ পরেই পূরবি ভার্সিটির গেইট দিয়ে বাইক নিয়ে এন্ট্রি করলো। কল্প ও সূর্য বসা থেকে দাড়িয়ে যায়। কল্প বুকে হাত রেখে বলে- আমি শেষ ভাই! বলেই পিছনের দিকে হেলে পড়ে যেতে নেয় সূর্য দুইহাত দিয়ে কল্পকে ধরে রাখে। তার বন্ধু পাগল হয়ে যাচ্ছে, না এবার যতো শিগগিরই সম্ভব পূরবি ও কল্পকে এক করতে হবে। যতোই হোক সে তো আর বন্ধুর কষ্ট সহ্য করতে পারে না? কল্পকে সোজা করে সূর্য পূরবির সামনে এগিয়ে যায়। পূরবি সূর্যকে দেখে বলে- কি?

দাঁত কেলিয়ে হেঁসে সূর্য বলে- কেমন আছেন সিনিয়র ভাবি?

ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকিয়ে পূরবি বলে- এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি ও আপনার বন্ধু কেমন আছেন মিস্টার জুনিয়র দেবর?

হায়… বলেই পড়ে যাওয়ার বান করে সূর্য, পূরবি হেসে বলে কি হলো?

জুনিয়র দেবর! সো কিউট নেইম- বলেই হাসে সূর্য।

ততোক্ষণে কল্পও এগিয়ে এসে দাড়িয়েছে সূর্যের পাশে, নিজের পাশে কল্পকে দেখে কপট রাগ দেখিয়ে সূর্য বলে- আমার পাশে কি তোর? যা সিনিয়র ভাবির পাশে গিয়ে দাড়া।

বিনাবাক্যে কল্প পূরবির পাশে গা ঘেঁষে দাড়ায়, একহাত দিয়ে পূরবিকে জড়িয়ে ধরে সূর্যের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে- সুন্দর লাগছে না?

হাত দিয়ে দেখিয়ে সূর্য বলে- কিউট কাপল!

এতোক্ষণ নিশ্চুপ ছিলো পূরবি, জোরে শ্বাস নিয়ে বলে- তোমাদের ক্লাস নেই?

আছে তো ভাবি, কল্প আপনার জন্য ওয়েট করছিলো। আপনাকে দেখেছে এখন ও ক্লাসে যাবে। বলে সূর্য।

পূরবি কল্পের দিকে তাকিয়ে বলে- যাও ক্লাসে যাও, এরকম পাগলামি করবেনা কখনো। পাগলামি করার আরো টাইম পাবে। ক্লাস মিস গেলে আর পাবেনা।

মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে কল্প বলে- যাচ্ছি। বলেই পূরবির দিকে তাকিয়ে রয়।

পূরবি মুচকি হেসে কল্পের চুলে হাত ভুলিয়ে বলে- যাও।

প্রাপ্তির হাসি দিয়ে কল্প সূর্যকে নিয়ে চলে যায়।

পূরবি নিজের ক্লাসের দিকে হাঁটা ধরে, তখনই তার সামনে রূপক এসে দাড়ায়। রূপককে দেখে পূরবির পোস্ট টার কথা মনে পরে যায়। রাগী স্বরে বলে- আপনি আমাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন কেনো মিস্টার রূপক?

আরে সেটা তো তোমার ভালোর জন্যই করেছিলাম।

এতে আমার কি ভালো হবে মিস্টার রূপক?

কেনো দেখলেনা কল্প জেলাস ফিল করলো?

তো?

আরে জেলাস ফিল করেছে তার মানে বুঝতে পারছো কল্প তোমাকে কতোটুকু ভালোবাসে?বলে রূপক।

পূরবি বলে- শুনোন মিস্টার রূপক, আপনি পোস্ট টা করে কল্পকে জেলাস ফিল করাতে চেয়েছেন। কল্প জেলাসি হয়েছে ও। কিন্তু তাতে লাভ কি হলো? বরং লস হলো, আমার কল্প চোখের পানি ঝড়িয়েছে শুধুু মাত্র আপনার কাল করা মিথ্যা পোস্টের জন্য। আমার প্রতি কল্পের ভালোবাসা বোঝার জন্য কোনো জেলাস ফিল করানোর প্রয়োজন নেই৷ আমি জানি কল্প আমাকে কতোটুকু ভালোবাসে। প্রথমবার বলে আপনাকে ক্ষমা করে দিলাম। আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতোক্ষণে নিজের পায়ে দাড়িয়ে থাকতে পারতো না। আমার কল্পের চোখের জলের মূল্য আমার কাছে অনেক। নেক্সট টাইম এমন কাজ কখনো করবেন না। বলেই চলে গেলো পূরবি।

রূপক সেই দিকে তাকিয়ে বলে- বাপরে কতো ভালোবাসা, উফফ আমাকেও যদি কেউ এমন করে ভালোবাসতো! আরে পোস্ট টা তো রুশাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য করলাম। কিন্তু ওই রুশারই তো কোনো খবর নেই। রূপক তুই আর মেয়ে পেলিনা? দূর বলেই রূপক প্রস্থান করে।

.
বিকাল সাড়ে পাঁচটা, ভার্সিটির পিছনের রাস্তায় দাড়িয়ে আছে রূপক ও রূশা। পূরবির টিম থেকে রুশাই রূপককের সাথে মিলে কাজ করবে। আজ ওরা দুজন মাদকদ্রব্য সেবন করা ছেলেমেয়েদের সাথে মেশার চেষ্টা করবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েকজন ছেলে মেয়েদের এদিকে এগিয়ে আসতে দেখা গেলো। রূপক রুশাকে টেনে নিয়ে একটা গাছের পিছে লুকিয়ে রইলো।

ছেলে মেয়ে গুলো গোল হয়ে বসলো, তারপর একে একে ড্রাগস বের করলো। সাথে সিরিজও আছে। ইনসুলিন নিবে মেবি। ওরা নিজ মনে সেগুলো সেবন করতে লাগলো। হা হয়ে আড়ালে থেকে সেসব দেখতে লাগলো রূপক ও রুশা। আজ ওরা শুধু দেখবে কাল থেকে মেশার চেষ্টা করবে। সাথে প্রটেকশন নিয়ে আসবে, যাতে এসব খেলে তাদের শরীরে প্রবেশ করতে না পারে। কি প্রটেকশন নিবে সেটা এখনো ভাবা হয়নি, তবে যা করার পূরবিই ব্যবস্থা করবে। আজ তাদের কাজ হলো শুধু ওদের পর্যবেক্ষণ করা ও দেখা।

চলবে, ইনশাআল্লাহ,,