#-সেই তুমি
#-পর্ব -১৪
#- সানজিদা সন্ধি
আহনাফ ধমকের সুরে বললো, ” এই যে! কী শুরু করলেন? আমি আপনার বন্ধু নই৷ আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। ” আহনাফকে ভড়কানোর জন্য জাফনা বলেই যাচ্ছে, ” ছিহ তুই আমায় ভুলে গেলি? কেন রে? মাঝখানে কদিন অভিমান করে কথা বলিনি বলে ভুলে গেলি আমায়? তোর শর্ট টাইম মেমোরি লস হয়েছে না কি? না কি ইচ্ছে করেই এমন করছিস! নতুন কাউকে পেয়েছিস বুঝি? আমাদের যে বিয়ে ঠিক হয়েছে তাও ভুলে গিয়েছিস? তাছাড়া আমি তোর বাচ্চার মা হতে চলেছি তো!”
জাফনার প্রলাপ বকা শুনে আহনাফ প্ল্যান ঘোরালো। জাফনাকে তার মতো করেই ট্রিট করতে হবে। শয়তানি হাসি দিয়ে আহনাফ বললো, ” উপস সরি বেবি! তোকে এতক্ষণ কষ্ট দেওয়ার জন্য। কী করবো বল তো! এতোদিন আমার সাথে কথা বলিসনি তাই মনটা খারাপ ছিলো। অভিমান করে ছিলাম। আচ্ছা তোর পেটের বাবুটা কেমন আছে? সেদিন রাতে যে তোকে চুমু খেলাম তাতেই তো বাচ্চাটা এলো তাইনা?”
আহনাফের মুখে চুমুর কথা শুনে জাফনার বুক ছ্যাত করে উঠলো! তবে সে বুঝলোনা আহনাফ কেন তার সাথে তাল মেলাচ্ছে। জাফনা বললো, এটা কী বাংলা সিনেমা পেয়েছিস না কি যে চুমু খেলে বাচ্চা হবে?
আহনাফের মন মেজাজ এমনিতেই খারাপ থাকায় আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে করলোনা তার। ধমকে উঠে সে বললো, ” আর এটা কী হিন্দি সিরিয়াল পেয়েছো তুমি? যে কন্ঠ নকল করে আমার সাথে প্র্যাংক করবে আর আমি বুঝতে পারবোনা? তাও একটা কথা ছিলো যদি ঠিকঠাক মতো কন্ঠ নকল করতে পারতে। জাফনা হোয়াট ইজ দিস? একজন শিক্ষকের সাথে কী ধরনের আচরণ এটা? ”
ধরা পড়ে গেছে বুঝতে পেরেই ফোন খট করে কেটে দিলো জাফনা। নিজেই লজ্জায় কুঁকড়ে উঠলো সে! ইশ! আহনাফ ধরে ফেলেছে তাকে। কী লজ্জার বিষয়! পুরো ঘটনাটা ভাবতেই জাফনা একা একাই পাগলামি করতে লাগলো। জানালার পর্দায় মুখ লুকালো। কিছুক্ষণ আপনমনেই হাত পা ছোড়াছুড়ি করলো৷ তারপর একটু গুণগুণ করে গান গেয়ে বালিশে মুখ গুঁজলো। জাফনা বুঝতেই পারলোনা কেন সে এমন করছে। আহনাফের মুখে চুমুর কথা শুনেই কি তার এই হাল? হুট করে কী যেন ভেবে সে উঠে পড়লো। দুপাশে মাথা ঝাঁকিয়ে নিজেকে বোঝালো৷ তারপর ফোন হাতে নিয়ে পরীকে ফোন করলো সে। পরী জাফনার ছোট বেলার বন্ধু। নিজের থেকেও পরীকে বিশ্বাস, ভরসা করে জাফনা৷ আদর করে নীলপরী বলে ডাকে তাকে। বেশ কদিন থেকে পরীর সাথে কথা বলেনি জাফনা। আজ ফোন করেই কথার ঝুড়ি খুলে বসেছে সে। আহনাফের সাথে দেখা হওয়ার প্রথম দিন থেকে একটু আগ অবধি হওয়া পুরো ঘটনা খুলে বলার পর থেকেই পরী তাকে পঁচানো শুরু করেছে। পরীর মাথায় একটা বিষয় ঘুরছে। জাফনা কী করে একজনকে এতো পাত্তা দিচ্ছে। স্যারের উপর ক্রাশ খেয়েছে কি না জানতে চেয়ে পরী তখন থেকে জাফনাকে খোঁচাচ্ছে। জাফনা খানিকটা বিরক্ত হবার ভং ধরেই বললো বিবাহিত কারো উপর সে আকর্ষিত হবে এটা কখনোই সম্ভব নয়। কিন্তু জাফনা নিজেও বুঝছেনা সে কেন এসব শুনে বিরক্ত হচ্ছে না। আর আহনাফ বিবাহিত জানা স্বত্তেও সে কেন দূর্বল হয়ে পড়ছে আহনাফের প্রতি। পরী ক্রমাগত জাফনার সাথে মজা করছে! একটা সময় পর পরীর কথা শুনে জাফনা হেসে ফেলেছে। শব্দহীন সেই হাসি। হাসির দ্যুতি সারা মুখে ছড়িয়ে পড়েছে জাফনার। কিন্তু ফোনের অপর পাশে থাকা পরীকে বিন্দুমাত্র কিছু বুঝতে না দিয়ে সে কথা শেষ করলো।
পরদিন কলেজে পৌঁছেই প্রিন্সিপালের রুমে হাজির হলো জাফনা এবং আহনাফ। আবির চৌধুরী জাফনাকে জিজ্ঞেস করলো কেন সে আহনাফের ট্রান্সফার চায়। জাফনা তখন আহনাফের ট্রান্সফার আটকাতে বললো সে জেদের বশে এমনটা চেয়েছে। আহনাফের কোনো দোষ নেই। আর এখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সে। জাফনার স্বীকারোক্তি শুনে আবির চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আহনাফ এমন একটা ভাব করলো যেন, ” দেখেছো বাবা! আমি বলেছিলাম না আমার সাথে কিছুই হয়নি জাফনার! তুমি মিছেমিছি ভুল বুঝেছিলে আমাকে।”
আবির চৌধুরী পরবর্তীতে জাফনাকে এরকমটা করতে নিষেধ করে দুজনকে নিজ নিজ কাজে যেতে বলে তার চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লেন। তার সমস্ত চিন্তাভাবনা এখন এক যায়গায়। কোনো মেয়ে আহনাফের ট্রান্সফার চাইলো, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো কিন্তু আহনাফ নিরুত্তর কেন? এখানে নিশ্চয়ই কোনো ঘাপলা আছে। যত যাই হোক না কেন নিজের সন্তানের সম্পর্কে সব বাবা – মা যথেষ্ট ভালো ধারণা পোষণ করে। সন্তান যদি চাপা স্বভাবের হয় তবুও। আর আহনাফের সব কর্মকাণ্ড তো ভালোভাবেই জানা আবির চৌধুরীর। তবে পরবর্তীতে জাফনার সাথে খারাপ কিছু করতে পারে আহনাফ এই ভেবেও আবির চৌধুরী খানিকটা চিন্তায় পড়ে গেলেন।
প্রিন্সিপাল স্যারের রুম থেকে বের হয়ে দুজন মুখোমুখি হতেই জাফনার অস্বস্তি হতে শুরু করলো। কাল রাতের বোকামির কথা ভাবতেই দ্বিগুণ অস্বস্তি জেঁকে ধরলো তাকে। কী বোকামিটাই না করেছিলো সে। আর এদিকে আহনাফ না পারছে হেসে গড়াগড়ি খেতে। প্রথম পিরিয়ড টা আহনাফের সাথেই করতে হবে জাফনার। তিন তলায় ক্লাস জাফনার। সিঁড়ি বেয়ে দুজন উঠতে উঠতেই আহনাফ বলে উঠলো, ” আমার তো বউ নেই। তাই বলছি তুমি যদি আমার সহধর্মিণী হতে তাহলে সিঙ্গেলত্ব ঘুচিয়ে বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতাম আর কি!”
আহনাফের কথা শুনে জাফনার পা সিঁড়িতেই থমকে গেলো। আহনাফ বিবাহিত নয়? তবে যে সে বললো তার বিয়ে হয়েছে এবং বাচ্চার বাবা হতে চলেছে সে? আর জাহিনও তো তাকে সমর্থন করেছিলো। কোনো বিষয় নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা না থেকে দুজনের মতের মিল কীভাবে এতো হতে পারে এটাই মাথায় এলোনা জাফনার। তবে সে যে আহনাফের কৌশলে হেরে গিয়েছে এখন সেটা খুব ভালো করেই অনুভব করতে পারছে। জাফনা চাইলেও এখন আর কলেজের মধ্যে তাকে শায়েস্তা করতে পারবে না। প্রিন্সিপাল স্যার আর তার কথায় ভরসা করবে না। মূহুর্তেই জাফনার মন অসম্ভব খারাপ হয়ে গেলো। আহনাফ পারলো কী করে এমনটা করতে? অবশ্য সে যেমন ছেলে তাতে এটা অস্বাভাবিক নয়৷ জাফনার কেন জানি আহনাফের প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ হতে আর ইচ্ছে করলো না। মন খারাপের ভীড়েও আহনাফ বিবাহিত নয় ভেবে সে মুচকি হাসি দিয়ে উঠলো। কেন তার মন ভালো হলো সেটা তার অজানা। তবে মন ভালো হয়েছে এটাই কথা। জাফনা তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ক্লাসরুমের দিকে এগুলো। আহনাফ ততক্ষণে রুমে ঢুকে গিয়েছে। আহনাফের পরে ক্লাসরুমে আসায় তাকে বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখলো আহনাফ। আর এদিকে জাফনার জীবনে যা অঘটন হচ্ছে সবই প্রথমবার। জাফনা কখনো আগে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকেনি৷
অ্যাটেন্ডনেস নিয়ে জাফনাকে ক্লাসরুমে ঢুকতে দিলো আহনাফ। আর এদিকে অরিন জাফনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। সে মনে মনে ভাবছে জাফনা হয়তো ভীষণ রেগে গিয়েছে। কিন্তু অরিনের সকল ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করে জাফনা শান্ত মতো তার পাশে বসলো। জাফনার হাবভাব দেখে অরিনের যেন চক্ষু ছানাবড়া। এ কি সত্যি দেখছে সে? জাফনা রাগে ফোসফাস করা ছাড়াই তার পাশে বসে আছে? জাফনাকে খোঁচা দিতেই সে অরিনকে ক্লাসে মনযোগ দিতে বললো। এতে অরিনের হাল যেন আরো খারাপ।
এদিকে জাফনাও নিজের আচরণের আগামাথা কিছু বুঝছে না। আহনাফের প্রতি কেন তার রাগ আসছে না? কেন? কেন? আহনাফ লেকচার দেওয়া শুরু করেছে। ক্লাসের প্রায় সব মেয়েই তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। অসাধারণ বাচনভঙ্গি, ফেস এক্সপ্রেশন সবই মনকাড়া। তাদের মধ্যে জাফনাও অন্যতম। আহনাফের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে সে। জাফনাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে এক ধমক দিয়ে উঠলো আহনাফ। বললো,,
চলবে,,,,,
# সেই তুমি
# সানজিদা সন্ধি
#পর্ব _ ১৫
এই মেয়ে! সমস্যাটা কোথায়? তখন থেকে দেখছি ক্লাসে মনযোগ নেই তোমার। আমার দিকে তাকিয়ে কী হ্যাঁ? পড়াশোনায় মনযোগ দাও। ক্লাসভর্তি ছেলেমেয়ের সামনে ভরাট কন্ঠে জাফনাকে ধমকালো আহনাফ। কিন্তু জাফনা নিরুত্তর। সে আহনাফের ঠোঁট নাড়িয়ে কথা বলা দেখছে৷ একপর্যায়ে যখন হুস আসলো তখন মাথা নিচু করে সরি বলে ক্লাসে মন দিলো।
ক্লাস শেষ করে বাসায় এসে জাফনা বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে তার সাথে। নয়তো আহনাফ তাকে এতো অপমান করছে তারপরেও কেন জাফনার খারাপ লাগছে না বা রাগ উঠছে না। এটা কি নিছকই আহনাফ তার শিক্ষক বলে সম্মান প্রদর্শনার্থে জাফনার রাগ উঠছে না? না কি কিশোরী মনের সমস্ত আবেগ একসাথে জড়ো হয়ে আহনাফের সান্নিধ্য পেতে চাইছে। একটু অন্যরকম ভাবে।
জাফনা তার সাথে হওয়া ঘটনা গুলোকে পাত্তা দিতে চাইছে না। কিন্তু সমস্ত ভাবনা গুলো যেন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে তাকে। কী যেন এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার মধ্যে! এই অনুভূতিকে কোন সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করবে বুঝতে পারছে না জাফনা। তবে কিছু ভালোও লাগছে না তার। ছটফট করতে লাগলো জাফনা। হুট করে অলসতা ভর করলো তার মধ্যে। টিউশনের জন্য তৈরি না হয়ে লেপ কাঁথা মুড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো সে। খানিক বাদে জ্বর জ্বর অনুভব করতেই ঘুম ভাঙে জাফনার। অনুভব করে তার শরীর প্রচন্ড গরম। হুট করে এ কি হলো! আবার ঘুমের আবেশ আসে তার মধ্যে চোখগুলো জড়ো হয়ে যায়। ঘুমের অতলে তলিয়ে পড়ে সে।
আহনাফের ইদানীং কিছুই ভালো লাগে না। অদিতির প্রেগনেন্ট হওয়ার ঘটনাটা যেদিন জানতে পারে আহনাফ সেদিন থেকেই তার দুনিয়াদারি আবারো এলোমেলো হয়ে গেছে।
অদিতি! সেই মিষ্টি মেয়েটা! যার চোখে হাজারো মায়া। যে আহনাফকে অসম্ভব ভালোবাসতো।
পুরনো স্মৃতিচারণে মত্ত হলো আহনাফ। কলেজের এক টুরে যাওয়ার সময় অদিতিকে আহনাফের ভালো লাগে এবং সে অদিতিকে নিজের কাছে আনার জন্য ফন্দি আঁটে। দুই দিনের ট্রিপে কক্সবাজারে পৌঁছানোর পরে হোটেলে উঠে সবাই। রাতে বারবিকিউ পার্টিতে অদিতির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আহনাফ গান ধরে। আহনাফের গলা ভালো। গিটারের সুরে ঝড়ও তুলতে পারে সে। আহনাফের ঝনঝনে গলায় গান শুনে অদিতির মাতাল মাতাল লাগে। তবে মালিহার মুখ থেকে আহনাফের ব্যাপারে শোনা কিছু কথা শুনতেই অদিতির মন খারাপ হয়ে যায়। আহনাফের থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে মনযোগ দেয় সে। অদিতির আচরণ দেখে আহনাফের মন ক্ষুণ্ন হয়। তবে অদিতি ইন্ট্রোভার্ট মেয়ে এই ভেবে আহনাফ ধৈর্য ধরে। রাতে যে যার রুমে ঘুমাতে যায়। অদিতির চোখে ঘুম নেই। সমুদ্র গর্জন করে উঠছে। অদিতির ইচ্ছে করছে সমুদ্রের অতলে হারিয়ে যেতে। কিন্তু পরিস্থিতি তো তা হতে দেবে না। ফোনটা হাতে নিয়ে গ্যালারিতে ঢুকলো অদিতি। সেখানে আহনাফের নানান ভঙ্গির ছবি আছে। আহনাফ যখন গান গাচ্ছিলো তখন সুকৌশলে আহনাফের ছবি তুলে নেয় অদিতি। এটা করা থেকে সে নিজেকে আটকাতে পারছিলো না। আহনাফের ছবি দেখতে দেখতেই একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ে অদিতি। টুরে আর সুবিধা করতে পারিনি আহনাফ। অদিতি তার কাছাকাছি খুব কমই এসেছিলো। যতটা সম্ভব এড়িয়ে গিয়েছে তাকে। এদিকে আহনাফের প্রতি খুব বেশি দূর্বল হতে চায়নি অদিতি। তাই দূরত্ব বজায় রেখেছিলো আহনাফের থেকে। কিন্তু আড়াল থেকে আহনাফের গতিবিধি ভালো ভাবেই লক্ষ্য করতো আহনাফ। ফলাফল স্বরূপ আহনাফের প্রতি দূর্বল হয়েই গেলো সে। কলেজে ফিরে নানান ব্যাস্ততায় যখন অদিতির কথা ভুলতে বসেছিলো আহনাফ তখনই একদিন করিডোরে দুজনের ধাক্কা লাগে। বিষয়টা সিনেমাটিক ছিলো না বরং বড্ড বেশি ভয়ানক ছিলো।
টিফিন পিরিয়ডে ক্যান্টিন থেকে খাবার নিয়ে ফিরছিলো অদিতি। সিঁড়ি দিয়ে অনেক স্টুডেন্ট একসাথে ওঠায় ছোটখাটো জ্যামের মতো অবস্থা। পেছন থেকে অদিতিকে কেউ একজন ধাক্কা দিলে করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকা আহনাফের গায়ে পড়ে অদিতি। আহনাফ বন্ধুদের সাথে ডিসকাশন করছিলো এমন সময় গায়ের উপর কিছু একটা অনুভব করতেই আহনাফ কিছু না ভেবে ঝটকা মেরে সেটাকে সরিয়ে দিতে যায়। আহনাফের ঝটকায় অদিতির মাথা গিয়ে লাগে পিলারের সাথে। এরপর পড়ে গলগল করে রক্ত। আহনাফ ঘটনার আকস্মিকতায় থ হয়ে যায়। এদিকে অদিতির মাথা দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। কজন ধরাধরি করে অদিতিকে কলেজের এমআই রুমে নিয়ে যায়। অদিতির তখনো হুস ছিলো। এমআই রুমে যাওয়ার আগে আহনাফের চোখে চোখ পড়তে অদিতি কেমন যেন ঘৃণার একটা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আহনাফের দিকে। আহনাফের বুকটা কেমন করে উঠলো! অদিতি সুস্থ হতেই আহনাফের সাথে দেখা করলো সে। প্রচন্ড রাগ নিয়ে বললো, “আপনি কলেজে পড়ুয়া একজন ছাত্র, দেশের ভবিষ্যৎ, সেই আপনি কি না এতো ইরেসপন্সিবল? আপনার উপর কী আছে সেটা ভালো মতো না দেখেই ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলেন? এতো কেয়ারলেস কেন আপনি? ” সমবয়সী হলেও প্রথম দেখায় আহনাফকে আপনি বলে ডেকেছিলো আহনাফ।
অদিতির কথা শুনে আহনাফ ছিলো চুপচাপ, নিরুত্তর। কারণ দোষটা একদিক থেকে তারই৷ তবে আহনাফের ব্যাপারে জানার পরেও তার মুখের উপরে কথা বলার সাহস দেখানোয় আহনাফের মনে হলো আমার অদিতিকে লাগবে। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও লাগবে। এরপর থেকে অদিতির সমস্ত খোঁজখবর রাখে আহনাফ।
আহনাফকে কথা শুনিয়ে অদিতির মনও ভালো নেই। গায়ের উপর কিছু পড়লে মানুষ বিরক্ত হয়ে তো এমনিতেই সরাতে চাইবে। আহনাফকে এতোটা এভাবে বলা কী ঠিক হয়েছে? অদিতির মনে কেমন যেন অপরাধবোধ জমতে লাগলো। এক বন্ধুকে ফোন করে আহনাফের নম্বর চাইলো সে। চাওয়া মাত্রই পেয়ে গেলো। কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজ লিখলো অদিতি, sorry! sokaler baboharer jonno maf kore diyen,asole mejaj thik chilo na.”
মেসেজ দেওয়ার পরপরই অদিতির বুকের ধুকপুকানি বাড়তে থাকে। আহনাফ কি দেখবে মেসেজটা? আর দেখলেও কি রিপ্লাই দিবে? অদিতির সকল ভাবনা কয়েকমিনিটের মধ্যে উধাও হয়ে গেলো। আহনাফ মেসেজ দিয়েছে, ” It’s ok. kemon acho akhon?”
মেসেজের শব্দে ফোন হাতে নিয়ে চেক করতেই আহনাফ দেখে আননোন একটা নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে। কিন্তু মেসেজ পড়ে আহনাফ বুঝে যায় এটা অদিতি।
এভাবে তাদের কথোকপথন চলতে থাকে। সেদিনের পর থেকে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে যায় দুজনের। অদিতির সংস্পর্শে আসার পরপরই আহনাফের ভেতরে বেশ কিছু চেঞ্জ আসতে থাকে। বাকিসব গার্লফ্রেণ্ডদের সাথে ব্রেকাপ করে নেয় সে। খারাপ সঙ্গও কিছুটা কমায়। অদিতির প্রতি অনেক কেয়ারিং হয় আহনাফ। তবে অদিতির সাথে সম্পর্ক কয়েকমাস অতিক্রমের পরপরই আহনাফ আগের অবস্থায় ফিরে আসে। গার্লফ্রেন্ড, বন্ধুবান্ধব নিয়ে মস্তি। কিন্তু অদিতিকেও ছাড়ে না। অদিতি এতো কিছুর পরেও আহনাফকে আগলে রাখতো। ভীষণ ভালোবাসতো। তবে অদিতির প্রতি আহনাফের খুব একটা খেয়াল নেই।
অদিতির পরিবার একপর্যায়ে জেনে যায় অদিতি কারো সাথে সম্পর্কে আছে। শুরুতে সবাই তাকে অনেক বকে,মারে। পরে অবশ্য মেনে নেয়। আহনাফের বাসার সবার সাথেও অদিতির সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো যেখানে আহনাফের বাকি গার্লফ্রেণ্ডদেরকে তার পরিবার ঠিকমতো চেনে না। অদিতি এবং দুই পরিবারের পক্ষ থেকে সব ঠিকঠাকই থাকে। কিন্তু আহনাফ যে কি করতো সে নিজেও জানে না।
এইচএসসি পরীক্ষার দুই তিনমাস আগের কথা। সবাই জোরকদমে পড়াশোনা শুরু করেছে। আহনাফ আর অদিতির মাঝেও সব ঠিক ঠাক চলছিলো। লেখাপড়ার খাতিরে আহনাফের বাসায় অদিতি আসতো প্রায়শই। এমনই এক দিনে ঘটে যায় অদিতির জীবনের সবচেয়ে জঘন্যতম বিষয়। অদিতি আর আহনাফ কাছাকাছি আসে। হুস ফিরতে ফিরতে যা হওয়ার হয়ে গেছে। অদিতির পাগলের মতো কান্না দেখে আহনাফও দিশেহারা। সে প্লে বয় হলেও কখনো কাউকে ফোর্স করে না । আজও অদিতিকে করেনি কিন্তু যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
চলবে,,,